হদ (الحد)-তা’যির (التعزير)
শরীয়তে শাস্তি ও দণ্ড দুই ভাগে বিভক্ত:
১. কিছু শাস্তি শরীয়ত কতৃক সুনির্ধারিত, যাতে কোন ধরণের কম-বেশ করা যাবে না। এগুলোকে হদ বলে। আর কিছু শাস্তির সুনির্ধারিত কোন পরিমাণ নেই। অপরাধের ধরণ ও পরিমাণ, অপরাধীর অবস্থা, যার হক নষ্ট করা হয়েছে বা যার অনিষ্ট সাধন করা হয়েছে তার অবস্থা- ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ভিন্নতায় সেগুলো বিভিন্ন রকম ও পরিমাণের হয়ে থাকে। শরয়ী ইমাম, সুলতান বা কাযি যেখানে শরীয়ত সম্মত যে ধরণের ও যে পরিমাণের শাস্তি দেয়া মুনাসিব মনে করেন, ইজতিহাদের ভিত্তিতে সে রকম শাস্তি প্রয়োগ করবেন। যেখানে যে শাস্তি প্রয়োগ করলে অপরাধ দমন হবে বলে মনে হয়, সেখানে সে শাস্তিই প্রয়োগ করবেন। অবশ্য তা শরীয়ত কতৃক সুনির্ধারিত শাস্তি তথা হদের কম হতে হবে। এ ধরণের শাস্তিকে তা’যির বলে। নিচে আভিধানিক ও পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হদ ও তা’যির নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।
হদ (الحد)
আভিধানিকভাবে الحد অর্থ- المنع তথা বাধা দেয়া। এসব শাস্তিকে হদ বলা হয়, কারণ- এগুলো লোকজনকে অপরাধে লিপ্ত হওয়া থেকে বাধা প্রদান করে। লোকজন যখন জানবে যে- যিনা, কযফ (তথা কোন পূত-পবিত্র স্বাধীন মুসলমানকে যিনার অপবাদ দেয়া), চুরি ইত্যাদির ব্যাপারে শরীয়তে নির্ধারিত শাস্তি রয়েছে, তখন সচরাচর তারা এসব অপরাধে লিপ্ত হতে সাহস করবে না। কেউ এসব অপরাধের কোন একটাতে লিপ্ত হলে যখন তার উপর এর শাস্তি কায়েম করা হবে তখন সে আর পুনর্বার তাতে লিপ্ত হতে সাহস করবে না। তদ্রূপ জনসাধারণ যখন অপরাধীর উপর এসব শাস্তি কায়েম হচ্ছে দেখবে, তখন তারাও এগুলোতে লিপ্ত হওয়ার সাহস করবে না। মোটকথা- এসব শাস্তি লোকজনকে এসব অপরাধে লিপ্ত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ কারণে এগুলোকে হদ বলা হয়।
আল্লামা কাসানী রহ. (৫৮৭হি.) বলেন,
ইবনে নুজাইম রহ. (৯৭০হি.) বলেন,
ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১হি.) বলেন,
হদের সংজ্ঞায় মৌলিকভাবে তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে:
১. عقوبة তথা শাস্তি।
২. مقدرة তথা সুনির্ধারিত।
৩. حقا لله تعالى তথা আল্লাহ তাআলার হক।
অতএব, হদের মধ্যে নিম্নোক্ত তিনটি জিনিস থাকবে-
প্রথমত তা শাস্তি হবে। কাজেই নামায, রোযা- ইত্যাদির কাফফারা সুনির্ধারিত হলেও সেগুলো হদ নয়। কেননা সেগুলো খালেস শাস্তি নয়। সেগুলোতে ইবাদত ও শাস্তি উভয় দিকই রয়েছে।
দ্বিতীয়ত শরীয়ত কতৃক সুনির্ধারিত হবে। এ শর্তের দ্বারা তা’যিরসমূহ হদের সংজ্ঞা থেকে বেরিয়ে যাবে। কেননা, সেগুলো শাস্তি হলেও শরীয়ত কতৃক সেগুলোর ধরণ ও পরিমাণ সুনির্ধারিত নয়। বরং অবস্থাভেদে তা বিভিন্ন রকম হয়।
তৃতীয়ত তা আল্লাহ তাআলার হক হবে। আল্লাহ তাআলার হক হওয়ার অর্থবান্দাদের কেউ সেগুলো মাফ করতে পারবে না। অর্থাৎ উপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পর কেউ সেগুলো মাফ করতে পারবে না। ইমামুল *মুসলিমীনেরও সে অধিকার, নেইঅন্য কারও সে অধিকার নেই। যেমন- চার সাক্ষী দিয়ে কাযির দরবারে যিনা প্রমাণ হওয়ার পর যিনাকারকে মাফ করার কোন সুযোগ নেই। বিবাহিত হলে রজম করতে হবে আর অবিবাহিত হলে একশো দোররা লাগাতে হবে।
এ শর্তের দ্বারা হদের সংজ্ঞা থেকে কেসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা বেরিয়ে যাবে। কেননা হত্যার বদলে হত্যা যদিও সুনির্ধারিত, কিন্তু সেটা বান্দার হক। নিহত ব্যক্তির অভিবাবকগণ ইচ্ছা করলে হত্যাকারীকে হত্যা না করে বা দিয়াত না নিয়ে মাফও করে দিতে পারেন। কিন্তু হদ তার ব্যতিক্রম। প্রমাণ হওয়ার পর তা মাফ করার কোন সুযোগ নেই।
কাসানী রহ. (৫৮৭হি.) বলেন,
মুহাম্মাদ থানবী হানাফী রহ. (১১৫৮হি.) বলেন,
শরীয়তে শাস্তি ও দণ্ড দুই ভাগে বিভক্ত:
১. কিছু শাস্তি শরীয়ত কতৃক সুনির্ধারিত, যাতে কোন ধরণের কম-বেশ করা যাবে না। এগুলোকে হদ বলে। আর কিছু শাস্তির সুনির্ধারিত কোন পরিমাণ নেই। অপরাধের ধরণ ও পরিমাণ, অপরাধীর অবস্থা, যার হক নষ্ট করা হয়েছে বা যার অনিষ্ট সাধন করা হয়েছে তার অবস্থা- ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ভিন্নতায় সেগুলো বিভিন্ন রকম ও পরিমাণের হয়ে থাকে। শরয়ী ইমাম, সুলতান বা কাযি যেখানে শরীয়ত সম্মত যে ধরণের ও যে পরিমাণের শাস্তি দেয়া মুনাসিব মনে করেন, ইজতিহাদের ভিত্তিতে সে রকম শাস্তি প্রয়োগ করবেন। যেখানে যে শাস্তি প্রয়োগ করলে অপরাধ দমন হবে বলে মনে হয়, সেখানে সে শাস্তিই প্রয়োগ করবেন। অবশ্য তা শরীয়ত কতৃক সুনির্ধারিত শাস্তি তথা হদের কম হতে হবে। এ ধরণের শাস্তিকে তা’যির বলে। নিচে আভিধানিক ও পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হদ ও তা’যির নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।
হদ (الحد)
আভিধানিকভাবে الحد অর্থ- المنع তথা বাধা দেয়া। এসব শাস্তিকে হদ বলা হয়, কারণ- এগুলো লোকজনকে অপরাধে লিপ্ত হওয়া থেকে বাধা প্রদান করে। লোকজন যখন জানবে যে- যিনা, কযফ (তথা কোন পূত-পবিত্র স্বাধীন মুসলমানকে যিনার অপবাদ দেয়া), চুরি ইত্যাদির ব্যাপারে শরীয়তে নির্ধারিত শাস্তি রয়েছে, তখন সচরাচর তারা এসব অপরাধে লিপ্ত হতে সাহস করবে না। কেউ এসব অপরাধের কোন একটাতে লিপ্ত হলে যখন তার উপর এর শাস্তি কায়েম করা হবে তখন সে আর পুনর্বার তাতে লিপ্ত হতে সাহস করবে না। তদ্রূপ জনসাধারণ যখন অপরাধীর উপর এসব শাস্তি কায়েম হচ্ছে দেখবে, তখন তারাও এগুলোতে লিপ্ত হওয়ার সাহস করবে না। মোটকথা- এসব শাস্তি লোকজনকে এসব অপরাধে লিপ্ত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ কারণে এগুলোকে হদ বলা হয়।
আল্লামা কাসানী রহ. (৫৮৭হি.) বলেন,
الحد في اللغة : عبارة عن المنع ... وفي الشرع : عبارة عن عقوبة مقدرة واجبة حقا لله تعالى - عز شأنه . اهـ
“অভিধানে হদ অর্থ- বাধা দেয়া। ... আর শরীয়তের পরিভাষায় হদ হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার হক হিসেবে ফরযকৃত সুনির্ধারিত শাস্তি।” [বাদায়িউস সানায়ে’: ৫/৪৮৬]ইবনে নুজাইম রহ. (৯৭০হি.) বলেন,
الحد في اللغة المنع ... وسميت العقوبات الخالصة حدودا لأنها موانع من ارتكاب أسبابها معاودة. اهـ
“অভিধানে হদ অর্থ- বাধা দেয়া। ... খালেস শাস্তিসমূহকে হদ বলা হয় কারণ, যেসব কারণে এসব শাস্তি বর্তায়, এগুলো পুনর্বার সেগুলোতে লিপ্ত হওয়া থেকে বাধা প্রদান করে।” [আলবাহরুর রায়েক: ৫/৩]ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১হি.) বলেন,
تحقيق العبارة ما قال بعض المشايخ: إنها موانع قبل الفعل زواجر بعده. أي: العلم بشرعيتها يمنع الإقدام على الفعل، وإيقاعها بعده يمنع من العود إليه. اهـ
“তাহকিকি কথা হচ্ছে যা কোন কোন মাশায়িখ বলেছেন যে, ‘লিপ্ত হওয়ার পূর্বে এগুলো (লিপ্ত হওয়া থেকে) বাধা দান করে আর লিপ্ত হওয়ার পর (পুনর্বার লিপ্ত হওয়া থেকে) বারণ রাখে।’ অর্থাৎ শরীয়তে এসব শাস্তির বিধান রয়েছে বলে জানা থাকাটা সেগুলোতে লিপ্ত হতে বাধা দেয়, আর লিপ্ত হওয়ার পর এগুলো প্রয়োগ করাটা সেগুলোতে পুনর্বার লিপ্ত হওয়া থেকে বারণ রাখে।” [ফাতহুল কাদির: ৫/১৯৬] হদের সংজ্ঞায় মৌলিকভাবে তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে:
১. عقوبة তথা শাস্তি।
২. مقدرة তথা সুনির্ধারিত।
৩. حقا لله تعالى তথা আল্লাহ তাআলার হক।
অতএব, হদের মধ্যে নিম্নোক্ত তিনটি জিনিস থাকবে-
প্রথমত তা শাস্তি হবে। কাজেই নামায, রোযা- ইত্যাদির কাফফারা সুনির্ধারিত হলেও সেগুলো হদ নয়। কেননা সেগুলো খালেস শাস্তি নয়। সেগুলোতে ইবাদত ও শাস্তি উভয় দিকই রয়েছে।
দ্বিতীয়ত শরীয়ত কতৃক সুনির্ধারিত হবে। এ শর্তের দ্বারা তা’যিরসমূহ হদের সংজ্ঞা থেকে বেরিয়ে যাবে। কেননা, সেগুলো শাস্তি হলেও শরীয়ত কতৃক সেগুলোর ধরণ ও পরিমাণ সুনির্ধারিত নয়। বরং অবস্থাভেদে তা বিভিন্ন রকম হয়।
তৃতীয়ত তা আল্লাহ তাআলার হক হবে। আল্লাহ তাআলার হক হওয়ার অর্থবান্দাদের কেউ সেগুলো মাফ করতে পারবে না। অর্থাৎ উপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পর কেউ সেগুলো মাফ করতে পারবে না। ইমামুল *মুসলিমীনেরও সে অধিকার, নেইঅন্য কারও সে অধিকার নেই। যেমন- চার সাক্ষী দিয়ে কাযির দরবারে যিনা প্রমাণ হওয়ার পর যিনাকারকে মাফ করার কোন সুযোগ নেই। বিবাহিত হলে রজম করতে হবে আর অবিবাহিত হলে একশো দোররা লাগাতে হবে।
(আল্লাহর হক ও বান্দার হক নিয়ে সামনে ইনশাআল্লাহ আলোচনা আসবে।)
এ শর্তের দ্বারা হদের সংজ্ঞা থেকে কেসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা বেরিয়ে যাবে। কেননা হত্যার বদলে হত্যা যদিও সুনির্ধারিত, কিন্তু সেটা বান্দার হক। নিহত ব্যক্তির অভিবাবকগণ ইচ্ছা করলে হত্যাকারীকে হত্যা না করে বা দিয়াত না নিয়ে মাফও করে দিতে পারেন। কিন্তু হদ তার ব্যতিক্রম। প্রমাণ হওয়ার পর তা মাফ করার কোন সুযোগ নেই।
কাসানী রহ. (৫৮৭হি.) বলেন,
وفي الشرع : عبارة عن عقوبة مقدرة واجبة حقا لله تعالى - عز شأنه - بخلاف التعزير فإنه ليس بمقدر ، قد يكون بالضرب وقد يكون بالحبس وقد يكون بغيرهما ، وبخلاف القصاص فإنه وإن كان عقوبة مقدرة لكنه يجب حقا للعبد ، حتى يجري فيه العفو والصلح. اهـ
“শরীয়তের পরিভাষায় হদ হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার হক হিসেবে ফরযকৃত সুনির্ধারিত শাস্তি। কিন্তু তা’যির এমন নয়। কেননা, সেটা সুনির্ধারিত না। কখনো প্রহারের দ্বারা হয়, কখনো বন্দী করে রাখার দ্বারা হয় আবার কখনো অন্য কিছু দিয়ে হয়। তদ্রূপ কেসাসও এর ব্যতিক্রম। কেননা, সেটা সুনির্ধারিত শাস্তি হলেও তা বান্দার হক হিসেবে ফরয হয়। ফলে তাতে মাফ করে দেয়া কিংবা (বিনিময় নিয়ে) চুক্তি করা চলে।” [বাদায়িউস সানায়ে’: ৫/৪৮৬]মুহাম্মাদ থানবী হানাফী রহ. (১১৫৮হি.) বলেন,
وعند الفقهاء: عقوبة مقدرة تجب حقّا لله تعالى. فلا يسمّى القصاص حدّا لأنه حق العبد، ولا التعزير لعدم التقدير. والمراد بالعقوبة هاهنا ما يكون بالضرب أو القتل أو القطع فخرج عنه الكفّارات، فإنّ فيها معنى العبادة والعقوبة. اهـ
“ফুকাহায়ে কেরামে পরিভাষায় হদ হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার হক হিসেবে ফরযকৃত সুনির্ধারিত শাস্তি। কাজেই কেসাসকে হদ বলা হয় না। কেননা, সেটা বান্দার হক। তা’যিরকেও না। কারণ, সেটা সুনির্ধারিত নয়। এখানে শাস্তির দ্বারা উদ্দেশ্য- যা প্রহার, হত্যা বা কর্তনের মাধ্যমে হবে। কাজেই কাফফারাসমূহ এ থেকে বেরিয়ে যাবে। কেননা, সেগুলোতে ইবাদত-শাস্তি উভয় দিকই রয়েছে।” [কাশশাফু ইসতিলাহাতিল ফুনুনি ওয়াল উলূম: ১/৬২৩]
Comment