Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির)- ০৪

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির)- ০৪

    ২. কযফ তথা যিনার অপবাদ আরোপ
    কোন পূত-পবিত্র স্বাধীন মুসলমান নারী বা পুরুষের উপর যিনার অপবাদ আরোপ করলে অপবাদ আরোপকারীকে আশি বেত্রাঘাত করা হবে। অপবাদ আরোপকারীকে চার জন আদেল সাক্ষী দিয়ে যিনা প্রমাণ করতে বলা হবে। যদি প্রমাণ না করতে পারে তাহলে সে অপবাদ আরোপকারী সাব্যস্ত হবে এবং তাকে আশি বেত্রাঘাত করা হবে। আর হানাফি মাযহাব মতে ভবিষ্যতে সারা জীবনের জন্য তার সাক্ষ্য প্রদানের যোগ্যতা বাতিল হয়ে যাবে। তাই আর কখনোও তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    {وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ○ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ}

    “যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসতে পারে না: তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসেক। তবে যারা এরপরে তাওবা করে এবং নিজদের সংশোধন করে, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” নূর: ৪-৫

    মুনাফিকরা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার উপর যিনার অপবাদ আরোপ করেছিল। তিন জন সরল-সহজ মুসলমানও তাদের ফাঁদে পড়ে তাদের সাথে তাল মিলিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে সূরা নূরের শুরুর দিকে দশটি আয়াত নাযিল করে উম্মুল মু’মিনীনের পবিত্রতা ঘোষণা করেন। সেখানে অপবাদ আরোপকারীদেরকে মিথ্যাবাদি সাব্যস্ত করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    {لَوْلَا جَاءُوا عَلَيْهِ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَإِذْ لَمْ يَأْتُوا بِالشُّهَدَاءِ فَأُولَئِكَ عِنْدَ اللَّهِ هُمُ الْكَاذِبُونَ}

    “তারা এ বিষয়ে কেন চার জন সাক্ষী উপস্থিত করল না? যখন তারা সাক্ষী উপস্থিত করতে পারল না, তখন আল্লাহ তাআলার নিকট তারা নিজেরাই মিথ্যাবাদি।” নূর: ১৩

    আয়াত নাযিল হওয়ার পর যেসব মুসলমান অপবাদে শরীক ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে হদ্দে কযফস্বরূফ আশি করে বেত্রাঘাত লাগান। [আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্: কিতাবুল হুদুদ, বাব: হদ্দুল কযফ।]


    হযরত হেলাল ইবনে উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী যিনায় লিপ্ত হয়। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যিনার অভিযোগ উত্থাপন করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
    أربعة شهداء وإلا فحد في ظهرك.
    “চার সাক্ষী উপস্থিত কর, অন্যথায় তোমার পিঠে হদ বর্তাবে।” [নাসায়ী, বাব: কাইফাল লিআন। আরও দেখুন- তিরমিযি: তাফসীরে সূরা নূর; আবু দাউদ, বাব: ফিল-লিআন।]


    কযফ কিভাবে প্রমাণ হবে?
    সাক্ষী বা অপবাদ আরোপকারীর নিজ স্বীকারোক্তির দ্বারা প্রমাণ হবে। তবে এ ক্ষেত্রে যিনার মতো চার পুরুষ বা চার বার স্বীকারোক্তির প্রয়োজন নেই। দুই জন আদেল পুরুষের সাক্ষ্য কিংবা অপবাদ আরোপকারীর এক বার স্বীকারোক্তিই যথেষ্ট। অর্থাৎ দুই জন আদেল পুরুষ যদি কারো ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় যে, সে অমুক পূত-পবিত্র মুসলমানকে যিনাকারী বলেছে কিংবা ব্যক্তি যদি নিজেই কাযির কাছে স্বীকার করে যে, সে অমুক পূত-পবিত্র মুসলমানকে যিনাকারী বলেছে তাহলেই সে অপবাদ আরোপকারী সাব্যস্ত হয়ে যাবে। এখন যদি সে চার জন সাক্ষী দিয়ে যিনা প্রমাণ না করতে পারে, তাহলে হদ্দে কযফরূপে তাকে আশিটি বেত লাগানো হবে। উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রেও মহিলাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।


    ৩-৪. মদ পান ও মাদক সেবন
    এ উভয়টির শাস্তি আশি বেত্রাঘাত। তবে মদের ক্ষেত্রে কম পান করুক কি বেশি পান করুক, নেশা আসুক বা না আসুক- সর্বাবস্থায় হদ লাগানো হবে। আর মদ ব্যতীত অন্যান্য মাদক দ্রব্যের ক্ষেত্রে যদি এ পরিমাণ সেবন করে যে, যার কারণে নেশা এসে গেছে- তাহলে হদ লাগানো হবে, অন্যথায় নয়। তবে হদ না লাগানোর অর্থ এই নয় যে, তা সেবন করা জায়েয। সেবন সর্বাবস্থায়ই নাজায়েয। তবে হদ কায়েমের জন্য নেশা আসা শর্ত। কিন্তু মদের ক্ষেত্রে নেশা আসা শর্ত নয়। মদ পান করাই হদ কায়েমের জন্য যথেষ্ট, নেশা আসুক বা না আসুক।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ পানকারীকে চল্লিশ বেত লাগাতেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও এর উপরই আমল করেছেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর যামানায় যখন লোকজনের মাঝে মদ পানের পরিমাণ বেড়ে গেল, তখন তিনি সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে পরামর্শে বসলেন- কি করা যায়? সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শক্রমে আশি বেত্রাঘাত শাস্তি হিসেবে নির্ধারিত হয়।

    হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পক্ষে এই যুক্তি দেন যে, হদের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল- আশি বেত্রাঘাত। কেননা, যিনার শাস্তি একশো দোররা আর হদ্দে কযফের শাস্তি আশি দোররা। এর নিচে কোন হদ নেই। তিনি বলেন, এ সর্বনিম্ন হদকেই মদ পানের শাস্তি নির্ধারণ করা হোক।

    হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কোন ব্যক্তি মদ পান করলে মাতাল হয়ে যায়। মাতাল হলে বেহুদা কথা-বার্তা ও গালি-গালাজ শুরু করে। গালি-গালাজের এক পর্যায়ে কাউকে যিনার অপবাদও আরোপ করতে পারে। আর এর শাস্তি আশি দোররা। অতএব, মদ পান যেহেতু কযফ তথা অপবাদ পর্যন্ত গড়াতে পারে, তাই এর শাস্তি কযফের শাস্তির অনুরূপ হতে পারে। এ পরামর্শদ্বয় উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পছন্দ হল। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও তাতে সম্মতি দিলেন। এভাবে সাহাবায়ে কেরামের সম্মতির ভিত্তিতে মদ্য পানের শাস্তি নির্ধারিত হয় আশি বেত্রাঘাত। [সহীহ বুখারী, কিতাবুল হুদুদ, বাব: হদ্দুল খমর, বাব: আয-যারবু বিলজারিদি ওয়াননিআল; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হুদুদ, বাব: হদ্দুল খমর; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, বাব: আলহদ্দু ফিলখমর।]


    মদ্যপান কিভাবে প্রমাণ হবে?
    হদ্দে কযফের মতোই দুই জন আদেল পুরুষের সাক্ষ্য কিংবা মদ্যপানকারী নিজের স্বীকারোক্তির দ্বারা প্রমাণ হবে। তবে স্বীকারোক্তির ক্ষেত্রে শর্ত হলো- তা স্বাভাবিক হুঁশ থাকা অবস্থায় হতে হবে। মাতাল অবস্থায় যদি স্বীকার করে যে, সে মদপান করেছে তাহলে তা ধর্তব্য নয়।

    এ দুই ত্বরীকা ভিন্ন মদ্যপান প্রমাণিত হওয়ার আর কোন ত্বরীকা নেই। কাজেই কারো ঘরে বা দোকানে বা কারো সাথে যদি মদ পাওয়া যায়, তাহলে তার উপর মদ্যপানের হদ কায়েম করা যাবে না। তবে তার কাছে মদ পাওয়া যাওয়ার কারণে মুনাসিব মতো অন্য শাস্তি দেয়া হবে।



  • #2
    জাযাকুমুল্লাহ

    Comment


    • #3
      جزاكم اﷲ خيرا

      Comment

      Working...
      X