জিহাদ নিয়ে সবাই অনেক কিছুই বলে থাকেন।
আসুন আমরা একটু জানার চেষ্টা করি “কি এই ‘জিহাদ’”। আসমান জমীনের মালিক রাব্বুল আলামীন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর নিজ প্রদত্ত এই বিধানের ব্যাপারে কি বলেছেনঃ
“মুশরিকদের যেখানে পাবে হত্যা করবে, তাদের বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”
[সূরা আত তাওবাহ,০৯#০৫]
“এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করতে থাকবে যতক্ষন না ফিৎনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়..।”
[সূরা আনফাল, ০৮#৩৯]
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ্ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।
[সূরা আত তাওবাহ,০৯#২৯]
“অভিযানে বেড়িয়ে পড় হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারী এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে।”
[সূরা আত তাওবা,০৯#আয়াত, ৪১]
“যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দান করবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবেনা। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।”
[সূরা আত তাওবা,০৯#আয়াত,৩৯]
“এবং তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্নকভাবে যুদ্ধ করবে যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্নকভাবে যুদ্ধ করে থাকে এবং জেনে রাখ আল্লাহ তো মুত্তাকীদের সাথে আছেন।”
[সূরা আত তাওবা,০৯#আয়াত,৩৬]
এছাড়াও আল কুরআনে ছয়শতেরও বেশী আয়াত আছে জিহাদ সম্পর্কে।
এবার আসুন জানার চেষ্টা করি শরীয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকেঃ
জিহাদ কি?
জিহাদের আভিধানিক অর্থ হল কোন কাজ সম্পাদনের জন্য স্বীয় শক্তি এবং পূর্ণ চেষ্টা ব্যয় করা।
শারীয়াতের পরিভাষায়- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কালিমাকে সমুন্নত করার জন্য দুশমনদের মোকাবেলায় নিজের জান, মাল, যবান কলম ইত্যাদির পূর্ণ শক্তি ব্যয় করা।
জিহাদ ইসলামের ফরয আমলসমূহ যথা নামায, রোযা, হাজ্জ, যাকাতের ন্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফারয আমল, যখন জিহাদ ফারয হয়।
“ঈমান আনার পরে সর্ব প্রথম ফারদ কর্তব্য হচ্ছে আগ্রাসী শত্রু বাহিনীকে মুসলিম ভূমি থেকে বিতারিত করা, যারা মুসলিমদের দ্বীন এবং দুনিয়াবী কোন বিষয়ের উপর আক্রমন চালায়।”
ইবন তাইমিয়্যাহ (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন)
আল ফাতওয়া আল কুবরা-৬/৬০৮
“যদি মুসলিমদের ভূমির এক বিঘত পরিমাণ জায়গাও কাফিররা দখল করে নেয়, তখন প্রত্যেক মুসলিম নর – নারীর উপর জিহাদ করা ফারদ আইন (সবার জন্য ফারয) হয়ে যায়। ঐ মুহুর্তে জিহাদে বের হওয়ার জন্য সন্তানের প্রয়োজন হয় না তার পিতা-মাতার কাছ থেকে অনুমতি নেয়া এবং স্ত্রীরও তার স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না।”
শহীদ শাইখ ডঃ আব্দিল্লাহ আযযাম (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন)
জিহাদের প্রকারভেদ
কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ ২ প্রকারেরঃ
১.জিহাদ আত তালাব (আক্রমনাত্নক জিহাদ)
যখন শত্রুকে তাড়া করে তাদেরই দেশে তাদের সাথে যুদ্ধ করা হয় তখন সেই জিহাদকে বলা হয় জিহাদ আত তালাব।
“মুশরিকদের যেখানে পাবে হত্যা করবে, তাদের বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”
[সূরা আত তাওবাহ,০৯#০৫]
এছাড়াও কুরআনের আরো অনেক জায়গায় এব্যাপারে অনেক আয়াত আছে।
২.জিহাদ আদ-দিফা’য় (আত্নরক্ষামূলক জিহাদ)
জিহাদ আদ-দিফা’য় হলো সেই জিহাদ যেখানে শত্রুরা আগে মুসলিমদের আক্রমণ করেছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
“যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর. . . ।”
[সূরা আলা বাক্বারা,০২#১৯০]
অন্য এক জায়গায় বলেন,
“যে কেউ তোমাদের আক্রমণ করবে তোমরাও তাকে অনুরুপ আক্রমন করবে।”
[সূরা আল বাক্বারা,০২#১৯৪]
ফারদুল আইন ও ফারদুল কিফায়া
ফারদুল আইন হল যা প্রত্যেক মুসলমানের পালন করা বাধ্যতামূলক। যেমনঃ সালাত, রোযা।
ফারদুল কিফায়া হল এমন এক দায়িত্ব, যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তি তা পালন করে তবে সবাই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়। আর যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তি দায়িত্ব পালনে সাড়া দেয়, তাহলে বাকি সবাই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। যেমনঃ নামাযে জানাযা।
জিহাদ কখন ফরয?
জিহাদ ৪ ক্ষেত্রে ফারয হয়ঃ
১. যদি কাফিররা মুসলিমদের ভূমিতে প্রবেশ করে।
২. যদি ২টি বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে মুখোমুখি এসে দাড়ায় এবং একে অপরকে আহবান করতে শুরু করে।
৩. যদি খলিফা বা আমীর কোন ব্যক্তিকে অথবা জনগনকে আহবান জানায় তাহলে অবশ্যই তাকে বেরিয়ে পরতে হবে।
৪. যদি কাফিররা মুসলিমদের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে বন্দী করে ফেলে।
বর্তমানে কি জিহাদ ফারয
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের কিয়ামাত পর্যন্ত জিহাদ করার জন্য বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“জিহাদ কিয়ামাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।”
“আমাকে উথ্থিত করা হয়েছে কিয়ামাতের আগে তলোয়ার সহকারে যতক্ষন পর্যন্ত শিরকমুক্ত অবস্থায় এক আল্লাহর ইবাদাত করা হয়। তিনি আমার রিযিক্ব রেখেছেন বর্শার ছায়ার নীচে এবং যারা আমার আদেশ প্রত্যাখ্যান করবে তাদের জন্য রয়েছে অবমাননা ও লাঞ্চনা, যা নির্ধারিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে। এবং যে তাদের (কাফিরদের) অনুসরণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”
মুসনাদে আহমাদ, তাফসীর তাবাসানী, সহীহ আল জামিয়া আল-সাগীরঃ ২৮২৮-আলবানী
মানুষ বর্তমানে জিহাদের হুকুম নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে, কেউ মনে করে এখনকার যুগে জিহাদ রহিত হয়ে গেছে অথবা কিছু কিছু জায়গায় ফারযুল কিফায়া (যদি কিছু ব্যক্তি দায়িত্বটি পালন করে তাহলে বাকি সবাই দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাবে) সব জায়গায় নয়।
কিন্তু শারীয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা জানতে পারি, যখন কোন মুসলিম ভূমিতে কাফিররা আক্রমণ করে বা মুসলমানদের বন্দী করে তখন জিহাদ ফারদু্ল আইন হয়ে যায়। অর্থাৎ সবার উপরই ফারয হয়ে যায়। এখন আপনিই বলুন, দুনিয়াতে এমন কোন দেশ আছে যেখানে মুসলমানরা দ্বীনের সকল আহকাম-আরকান মেনে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করছে??? যদি কোথাও এমন থাকে তবে তারা কি কাফিরদের থেকে নিরাপদ আছে???
মুসলিম মা-বোনদের ইজ্জাত নিয়ে কেমন খেল খেলছে সবাই!!!
তাদের হিজাব টেনে নিচ্ছে!
নিকাব এ নিষেধাজ্ঞা লাগাচ্ছে! এমন কি বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও বোরকা পরে কলেজ-ভার্সিটিতে মেয়েরা আসলে তাদেরকে অসম্মানীত করা হয়, ক্লাস থেকে বের করে দেয়া হয়!!!
অথচ ইতহাসে পাতা খুললেই দেখতে পাই সেই সব গর্বিত মুসলমানদের কাহিনী। আমাদেরই এক মুসলিম নারীর চাদর খুলার অপরাধে আফগানিস্থানের গজনীর সুলতান মেহমুদ প্লেন বা কার নয়, ঘোড়ার সফর করে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এসে কাফির ভুমি এখনকার আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডার মত কাফির সমৃদ্ধ দেশে হামলা করেন এবং সেই কাফির কে নির্যাতিত বোনের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন, পরে হত্যা করেন!
সুবহানাল্লাহ! এরাও মুসলমান ছিলেন
আর
আমরাও নিজেকে মুসলমান দাবী করি!
আমরা কি তাদের মত মুসলমান?
যখন জিহাদ ফরয হয় তখন কি অভিভাবকের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন?
জিহাদ যখন ফারদুল আইন হয় তখন নারী-পুরুষ সবার উপরই জিহাদ ফারয হয়। তখন অনুমতির প্রয়োজন হয়না স্ত্রীর জন্য স্বামীর, সন্তানের জন্য পিতামাতার, ঋণগ্রহীতার জন্য ঋণদাতার।
যেমনঃ ৫ ওয়াক্ত সলাত বালিগ সবার উপরই ফারয। যদি কোন ছেলে ফজরের সলাতের সময় ঘুম থেকে ওঠে যায় আর তার পিতা ঘুমিয়ে থাকে। তখন ছেলের প্রয়োজন হয়না পিতার কাছ থেকে সলাতের অনুমতি নেয়ার, ঠিক তেমনি জিহাদ যখন সবার উপর ফারয হয়ে যায়, তখন প্রয়োজন হয়না সন্তানের জন্য পিতা-মাতার অনুমতির আর স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতির।
বাংলাদেশে কি জিহাদ ফরয?
এর জবাব আপনারাই দেন!!!
বাংলাদেশে ইসলাম কি পরিপূর্ণ ভাবে কায়িম আছে?
আমরা কি দ্বীনের সকল আহকাম – আরকাম সঠিভাবে পালন করছি বা করতে পারছি?
আমাদের দেশে কি আল্লাহর দেয়া আল কুরআনের বিধানের অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা হয়?
আমাদের দেশে যারা দ্বীনকে সঠিক ভাবে পালন করে, তাদের সন্ত্রাসী, জঙ্গী সহ আরো কিছু নাম লাগিয়ে জেলে ভরে!!!
আর যখন ইসলামের দুশমনরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে তামাশা করে, দ্বীন ইসলামকে নিয়ে তামাশা করে, তখন সব কাপুরুষের মধ্য থেকে গুটা কয়েক সাহসী মুসলমান তাদের প্রতিবাদ করে বা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান মেনে মৃত্যুদন্ড সাজা দেয়, তখন তাদের বাহবা দেয়ার বদলে উল্টো জেলে ভরে, আর বেহায়ার মত কথা বলে, নিজেদের মুরতাদ (মুসলমান হবার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়া) হওয়ার প্রমাণ সবার সামনে পেশ করে!!!
আসুন আমরা একটু জানার চেষ্টা করি “কি এই ‘জিহাদ’”। আসমান জমীনের মালিক রাব্বুল আলামীন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর নিজ প্রদত্ত এই বিধানের ব্যাপারে কি বলেছেনঃ
“মুশরিকদের যেখানে পাবে হত্যা করবে, তাদের বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”
[সূরা আত তাওবাহ,০৯#০৫]
“এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করতে থাকবে যতক্ষন না ফিৎনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়..।”
[সূরা আনফাল, ০৮#৩৯]
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ্ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।
[সূরা আত তাওবাহ,০৯#২৯]
“অভিযানে বেড়িয়ে পড় হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারী এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে।”
[সূরা আত তাওবা,০৯#আয়াত, ৪১]
“যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দান করবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবেনা। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।”
[সূরা আত তাওবা,০৯#আয়াত,৩৯]
“এবং তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্নকভাবে যুদ্ধ করবে যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্নকভাবে যুদ্ধ করে থাকে এবং জেনে রাখ আল্লাহ তো মুত্তাকীদের সাথে আছেন।”
[সূরা আত তাওবা,০৯#আয়াত,৩৬]
এছাড়াও আল কুরআনে ছয়শতেরও বেশী আয়াত আছে জিহাদ সম্পর্কে।
এবার আসুন জানার চেষ্টা করি শরীয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকেঃ
জিহাদ কি?
জিহাদের আভিধানিক অর্থ হল কোন কাজ সম্পাদনের জন্য স্বীয় শক্তি এবং পূর্ণ চেষ্টা ব্যয় করা।
শারীয়াতের পরিভাষায়- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কালিমাকে সমুন্নত করার জন্য দুশমনদের মোকাবেলায় নিজের জান, মাল, যবান কলম ইত্যাদির পূর্ণ শক্তি ব্যয় করা।
জিহাদ ইসলামের ফরয আমলসমূহ যথা নামায, রোযা, হাজ্জ, যাকাতের ন্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফারয আমল, যখন জিহাদ ফারয হয়।
“ঈমান আনার পরে সর্ব প্রথম ফারদ কর্তব্য হচ্ছে আগ্রাসী শত্রু বাহিনীকে মুসলিম ভূমি থেকে বিতারিত করা, যারা মুসলিমদের দ্বীন এবং দুনিয়াবী কোন বিষয়ের উপর আক্রমন চালায়।”
ইবন তাইমিয়্যাহ (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন)
আল ফাতওয়া আল কুবরা-৬/৬০৮
“যদি মুসলিমদের ভূমির এক বিঘত পরিমাণ জায়গাও কাফিররা দখল করে নেয়, তখন প্রত্যেক মুসলিম নর – নারীর উপর জিহাদ করা ফারদ আইন (সবার জন্য ফারয) হয়ে যায়। ঐ মুহুর্তে জিহাদে বের হওয়ার জন্য সন্তানের প্রয়োজন হয় না তার পিতা-মাতার কাছ থেকে অনুমতি নেয়া এবং স্ত্রীরও তার স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না।”
শহীদ শাইখ ডঃ আব্দিল্লাহ আযযাম (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন)
জিহাদের প্রকারভেদ
কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ ২ প্রকারেরঃ
১.জিহাদ আত তালাব (আক্রমনাত্নক জিহাদ)
যখন শত্রুকে তাড়া করে তাদেরই দেশে তাদের সাথে যুদ্ধ করা হয় তখন সেই জিহাদকে বলা হয় জিহাদ আত তালাব।
“মুশরিকদের যেখানে পাবে হত্যা করবে, তাদের বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”
[সূরা আত তাওবাহ,০৯#০৫]
এছাড়াও কুরআনের আরো অনেক জায়গায় এব্যাপারে অনেক আয়াত আছে।
২.জিহাদ আদ-দিফা’য় (আত্নরক্ষামূলক জিহাদ)
জিহাদ আদ-দিফা’য় হলো সেই জিহাদ যেখানে শত্রুরা আগে মুসলিমদের আক্রমণ করেছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
“যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর. . . ।”
[সূরা আলা বাক্বারা,০২#১৯০]
অন্য এক জায়গায় বলেন,
“যে কেউ তোমাদের আক্রমণ করবে তোমরাও তাকে অনুরুপ আক্রমন করবে।”
[সূরা আল বাক্বারা,০২#১৯৪]
ফারদুল আইন ও ফারদুল কিফায়া
ফারদুল আইন হল যা প্রত্যেক মুসলমানের পালন করা বাধ্যতামূলক। যেমনঃ সালাত, রোযা।
ফারদুল কিফায়া হল এমন এক দায়িত্ব, যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তি তা পালন করে তবে সবাই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়। আর যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তি দায়িত্ব পালনে সাড়া দেয়, তাহলে বাকি সবাই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। যেমনঃ নামাযে জানাযা।
জিহাদ কখন ফরয?
জিহাদ ৪ ক্ষেত্রে ফারয হয়ঃ
১. যদি কাফিররা মুসলিমদের ভূমিতে প্রবেশ করে।
২. যদি ২টি বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে মুখোমুখি এসে দাড়ায় এবং একে অপরকে আহবান করতে শুরু করে।
৩. যদি খলিফা বা আমীর কোন ব্যক্তিকে অথবা জনগনকে আহবান জানায় তাহলে অবশ্যই তাকে বেরিয়ে পরতে হবে।
৪. যদি কাফিররা মুসলিমদের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে বন্দী করে ফেলে।
বর্তমানে কি জিহাদ ফারয
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের কিয়ামাত পর্যন্ত জিহাদ করার জন্য বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“জিহাদ কিয়ামাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।”
“আমাকে উথ্থিত করা হয়েছে কিয়ামাতের আগে তলোয়ার সহকারে যতক্ষন পর্যন্ত শিরকমুক্ত অবস্থায় এক আল্লাহর ইবাদাত করা হয়। তিনি আমার রিযিক্ব রেখেছেন বর্শার ছায়ার নীচে এবং যারা আমার আদেশ প্রত্যাখ্যান করবে তাদের জন্য রয়েছে অবমাননা ও লাঞ্চনা, যা নির্ধারিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে। এবং যে তাদের (কাফিরদের) অনুসরণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”
মুসনাদে আহমাদ, তাফসীর তাবাসানী, সহীহ আল জামিয়া আল-সাগীরঃ ২৮২৮-আলবানী
মানুষ বর্তমানে জিহাদের হুকুম নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে, কেউ মনে করে এখনকার যুগে জিহাদ রহিত হয়ে গেছে অথবা কিছু কিছু জায়গায় ফারযুল কিফায়া (যদি কিছু ব্যক্তি দায়িত্বটি পালন করে তাহলে বাকি সবাই দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাবে) সব জায়গায় নয়।
কিন্তু শারীয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা জানতে পারি, যখন কোন মুসলিম ভূমিতে কাফিররা আক্রমণ করে বা মুসলমানদের বন্দী করে তখন জিহাদ ফারদু্ল আইন হয়ে যায়। অর্থাৎ সবার উপরই ফারয হয়ে যায়। এখন আপনিই বলুন, দুনিয়াতে এমন কোন দেশ আছে যেখানে মুসলমানরা দ্বীনের সকল আহকাম-আরকান মেনে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করছে??? যদি কোথাও এমন থাকে তবে তারা কি কাফিরদের থেকে নিরাপদ আছে???
মুসলিম মা-বোনদের ইজ্জাত নিয়ে কেমন খেল খেলছে সবাই!!!
তাদের হিজাব টেনে নিচ্ছে!
নিকাব এ নিষেধাজ্ঞা লাগাচ্ছে! এমন কি বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও বোরকা পরে কলেজ-ভার্সিটিতে মেয়েরা আসলে তাদেরকে অসম্মানীত করা হয়, ক্লাস থেকে বের করে দেয়া হয়!!!
অথচ ইতহাসে পাতা খুললেই দেখতে পাই সেই সব গর্বিত মুসলমানদের কাহিনী। আমাদেরই এক মুসলিম নারীর চাদর খুলার অপরাধে আফগানিস্থানের গজনীর সুলতান মেহমুদ প্লেন বা কার নয়, ঘোড়ার সফর করে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এসে কাফির ভুমি এখনকার আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডার মত কাফির সমৃদ্ধ দেশে হামলা করেন এবং সেই কাফির কে নির্যাতিত বোনের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন, পরে হত্যা করেন!
সুবহানাল্লাহ! এরাও মুসলমান ছিলেন
আর
আমরাও নিজেকে মুসলমান দাবী করি!
আমরা কি তাদের মত মুসলমান?
যখন জিহাদ ফরয হয় তখন কি অভিভাবকের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন?
জিহাদ যখন ফারদুল আইন হয় তখন নারী-পুরুষ সবার উপরই জিহাদ ফারয হয়। তখন অনুমতির প্রয়োজন হয়না স্ত্রীর জন্য স্বামীর, সন্তানের জন্য পিতামাতার, ঋণগ্রহীতার জন্য ঋণদাতার।
যেমনঃ ৫ ওয়াক্ত সলাত বালিগ সবার উপরই ফারয। যদি কোন ছেলে ফজরের সলাতের সময় ঘুম থেকে ওঠে যায় আর তার পিতা ঘুমিয়ে থাকে। তখন ছেলের প্রয়োজন হয়না পিতার কাছ থেকে সলাতের অনুমতি নেয়ার, ঠিক তেমনি জিহাদ যখন সবার উপর ফারয হয়ে যায়, তখন প্রয়োজন হয়না সন্তানের জন্য পিতা-মাতার অনুমতির আর স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতির।
বাংলাদেশে কি জিহাদ ফরয?
এর জবাব আপনারাই দেন!!!
বাংলাদেশে ইসলাম কি পরিপূর্ণ ভাবে কায়িম আছে?
আমরা কি দ্বীনের সকল আহকাম – আরকাম সঠিভাবে পালন করছি বা করতে পারছি?
আমাদের দেশে কি আল্লাহর দেয়া আল কুরআনের বিধানের অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা হয়?
আমাদের দেশে যারা দ্বীনকে সঠিক ভাবে পালন করে, তাদের সন্ত্রাসী, জঙ্গী সহ আরো কিছু নাম লাগিয়ে জেলে ভরে!!!
আর যখন ইসলামের দুশমনরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে তামাশা করে, দ্বীন ইসলামকে নিয়ে তামাশা করে, তখন সব কাপুরুষের মধ্য থেকে গুটা কয়েক সাহসী মুসলমান তাদের প্রতিবাদ করে বা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান মেনে মৃত্যুদন্ড সাজা দেয়, তখন তাদের বাহবা দেয়ার বদলে উল্টো জেলে ভরে, আর বেহায়ার মত কথা বলে, নিজেদের মুরতাদ (মুসলমান হবার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়া) হওয়ার প্রমাণ সবার সামনে পেশ করে!!!
Comment