এক ভাই জানতে চেয়েছেন, হানাফি মাযহাব মতে জুমআর নামায সহীহ হওয়ার জন্য ইমাম বা তার নায়েব থাকা শর্ত। আমাদের উপমহাদেশ তো দারুল হরব। ইমাম নেই, নায়েবও নেই। তাহলে আমরা জুমআ আদায় করছি কোন দলীলের ভিতিতে?
উত্তর:
জুমআর জন্য ইমাম বা তার নায়েব থাকা শর্ত- কথাটা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এখানে ব্যাখ্যা আছে। মূল কথা হলো, জুমআ আল্লাহ তাআলা সকলের উপর ফরয করেছেন। ইমাম থাকার কোন শর্ত কোথাও নেই। তবে ইমাম থাকলে ইমামের হক হিসেবে তাকে অগ্রগামী রাখতে হবে। ইমাম না থাকলে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরকেই আদায় করতে হবে। ফিকহের ইবারত থেকে বিষয়টা ইনশাআল্লাহ পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি।
ইমাম মুহাম্মাদ রহ. (১৮৯হি.) আবু হানিফা রহ. এর বক্তব্য বর্ণনা করেন,
لا تكون جمعة إلا بإمام. اهـ
“ইমাম ছাড়া জুমআ হবে না।”- কিতাবুল আছল: ১/৩৬০
“ইমাম ছাড়া জুমআ হবে না।”- কিতাবুল আছল: ১/৩৬০
মুহাম্মাদ রহ. আরোও বলেন,
قلت: أرأيت رجلا صلى بالناس يوم الجمعة ركعتين من غير أن يأمره الأمير؟ قال: لا يجزيهم، وعليهم أن يستقبلوا الظهر. قلت فإن كان الأمير أمره بذلك أو كان خليفة الأمير أو صاحب شرطة أو القاضي؟ قال تجزيهم صلاتهم. اهـ
“আমি আবু হানিফা রহ. কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কি অভিমত, যদি কোন ব্যক্তি আমীরের আদেশ ছাড়াই লোকদের নিয়ে জুমআর দিন দুই রাকাআত পড়ে নেয়? তিনি জওয়াব দিলেন, ‘তাদের নামায হবে না। তাদেরকে নতুন করে জোহর পড়তে হবে।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি আমীর তাকে নির্দেশ দিয়ে থাকে, কিংবা ঐ ব্যক্তি (অর্থাৎ যে লোকদের নিয়ে জুমআ পড়েছে) সে আমীরের নায়েব, আইনশৃংখলারক্ষীবাহিনীর প্রধান কিংবা কাযি হয়- তাহলে আপনার কি অভিমত? তিনি জওয়াব দিলেন, তাহলে তাদের নামায হয়ে যাবে।”- কিতাবুল আছল: ১/৩৬০ইমাম মুহাম্মাদ রহ. এর বক্তব্য সুস্পষ্ট যে, জুমআ সহী হওয়ার জন্য হয়তো স্বয়ং ইমাম লাগবে, নতুবা তার আদেশকৃত কিংবা নিয়োগকৃত ব্যক্তি লাগবে।
আরোও দেখুন:
- মুখতাসারুত তহাবী [ইমাম তহাবী রহ. (৩২১হি.): পৃ ৩৪
- মুখতাসারুল কুদূরী [ইমাম কুদূরী রহ. (৪২৮হি.): পৃ. ৫১
- মাবসূতে সারাখসী [শামসুল আইম্মা সারাখসী রহ. (৪৯০হি.)]: ২/৪১
এ বিধান হলো, যখন ইমাম থাকবেন। পক্ষান্তরে যদি কোন কারণে ইমাম না থাকেন– যেমন মুসলমানদের পারস্পরিক ফিতনা ও মারামারি কাটাকাটির কারণে কিংবা দেশ কাফেরদের করতলগত হয়ে যাওয়ার কারণে- তাহলে জুমআর দায়িত্ব মুসলমানদের নিজেদের উপর বর্তাবে। তাদের জন্য আবশ্যক, জুমআর জন্য ইমাম নিয়োগ দিয়ে জুমআ আদায় করা। পাশাপাশি ইমাম নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালানো।
তদ্রূপ ইমাম থাকাবস্থায় যদি ইমাম জুমআ আদায় করতে নিষেধ করেন, তাহলে তার কথা মানা যাবে না। জুমআর সময় হয়ে গেলে মুসলমানরা নিজেরা একজনকে ইমাম নির্ধারণ করে জুমআ আদায় করে নেবে।
ইবনে আবিদিন রহ. (১২৫২ হি.) বলেন,
لو مات الوالي أو لم يحضر لفتنة ولم يوجد أحد ممن له حق إقامة الجمعة نصب العامة لهم خطيبا للضرورة كما سيأتي مع أنه لا أمير ولا قاضي ثمة أصلا وبهذا ظهر جهل من يقول لا تصح الجمعة في أيام الفتنة مع أنها تصح في البلاد التي استولى عليها الكفار. اهـ
“যদি শাসনকর্তা মৃত্যুবরণ করেন অথবা ফিতনার কারণে উপস্থিত না হতে পারেন এবং এমন কাউকে না পাওয়া যায়, যার জুমআ কায়েমের অধিকার রয়েছে, তাহলে জরূরতের কারণে সাধারণ মানুষ নিজেদের জন্য একজন খতীব নির্ধারণ করে নেবে। ... এ থেকে ঐ ব্যক্তির অজ্ঞতা স্পষ্ট হয়ে গেছে, যে বলে, ফেতনার যামানায় জুমআ সহীহ হবে না, অথচ ঐ সমস্ত দেশেও জুমআ সহীহ, যেগুলো কাফেররা দখল করে নিয়েছে।”- রদ্দুল মুহতার: ২/১৩৮সামনে গিয়ে বলেন,
فلو الولاة كفارا يجوز للمسلمين إقامة الجمعة ويصير القاضي قاضيا بتراضي المسلمين ويجب عليهم أن يلتمسوا واليا مسلما. اهـ
“যদি প্রশাসকরা কাফের হয় তাহলেও মুসলমানদের জন্য জুমআ কায়েম করা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে মুসলমানদের সন্তুষ্টিক্রমে নিয়োগপ্রাপ্ত কাযী শরঈ কাযী গণ্য হবেন। তবে মুসলমানদের উপর ফরয, একজন মুসলমান প্রশাসক তালাশ করা।” - রদ্দুল মুহতার: ২/১৪৪আরো বলেন,
لو منع السلطان أهل مصر أن يجمعوا إضرارا وتعنتا فلهم أن يجمعوا على رجل يصلي بهم الجمعة. اهـ
“সুলতান যদি কেবল একগুঁয়েমি করে কোন এলাকার লোকজনকে জুমআ আদায়ে বাধা দেন, আর এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য তাদের ক্ষতিসাধন ব্যতীত কিছু নয়, তাহলে তারা নিজেরা সম্মতিক্রমে একজনকে জুমআর জন্য নির্ধারণ করে নিয়ে তার পেছনে জুমআ পড়তে পারবে।”- রদ্দুল মুহতার: ২/১৪৩সারকথা দাঁড়াল,
- হানাফি মাযহাব মতে ইমাম থাকলে ইমাম বা নায়েব জুমআ পড়াবেন। কোন কারণে ইমাম না থাকলেও জুমআ বাদ যাবে না। মুসলমানরা নিজেরা একজনকে ইমাম বানিয়ে জুমআ আদায় করবে। যেসব রাষ্ট্র কাফেরদের দখলে সেগুলোতেও জুমআর ইমাম নিয়োগ দিয়ে জুমআ আদায় করতে হবে।
- ইমাম থাকাবস্থায় যদি কোন শরয়ী উজর ব্যতীত তিনি জু্মআ আদায় করতে নিষেধ করেন, তাহলে তার আনুগত্য করা যাবে না। সাধারণ জনগণ নিজেরা জুমআর ইমাম নিয়োগ দিয়ে জুমআ আদায় করে নেবে।
বি.দ্র.
জিহাদও জুমআর মতো। যদি ইমাম থাকেন, তাহলে তিনি জিহাদের ডাক দেবেন। ইমাম যদি জিহাদের ডাক না দেন বা জিহাদে যেতে বাধা দেন, তাহলে জনসাধারণ নিজেরা জিহাদের আমীর ঠিক করে জিহাদ করবে। আর যখন ইমাম না থাকবে, তখনও জিহাদ মাফ নেই। জিহাদের আমীর ঠিক করে শক্তি অর্জন করত জিহাদ করতে হবে। ওয়াল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলা আ’লাম। *
Comment