তা’যিরের পঞ্চম প্রকার: হত্যা
পাঁচ: হত্যাহত্যার মাধ্যমেও তা’যির হতে পারে। সাধারণত একে القتل سياسةً তথা সিয়াসতরূপে হত্যা বলা হয়। কুরআন সুন্নাহয় তা’যিররূপে হত্যার নির্দেশনা এসেছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
{مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا}
“কাউকে হত্যা বা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি ব্যতীতই কেউ কাউকে হত্যা করলে, সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করল।” - মায়েদা:
৩২
এ আয়ত থেকে বুঝা যায়, কেউ কাউকে হত্যা করলে হত্যার বদলে তাকে হত্যা করা যাবে। তদ্রূপ কেউ পৃথিবীতে ফাসাদ ও বিশৃংখলা করে বেড়ালে তাকেও হত্যা করা যাবে।“কাউকে হত্যা বা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি ব্যতীতই কেউ কাউকে হত্যা করলে, সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করল।” - মায়েদা:
৩২
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০হি.) বলেন,
فكان في مضمون الآية إباحة قتل المفسد في الأرض. اهـ
“আয়াত বুঝাচ্ছে- যমিনে বিশৃংখলাকারীকে হত্যা করা বৈধ।” - আহকামুল কুরআন: ২/৫০৫
“আয়াত বুঝাচ্ছে- যমিনে বিশৃংখলাকারীকে হত্যা করা বৈধ।” - আহকামুল কুরআন: ২/৫০৫
ফাসাদ দুনিয়াবিও হতে পারে, দ্বীনিও হতে পারে।
দুনিয়াবি ফাসাদ, যেমন: চুরি, ডাকাতি, রাহজানি, সন্ত্রাসী, খুন, ধর্ষণ, যাদু-টোনা ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজের শান্তি-শৃংখলা নষ্ট করা, জনজীবন অতিষ্ট করে তোলা।
দ্বীনি ফাসাদ, যেমন: ইলহাদ, যান্দাকাহ্, নাস্তিকতা, বিদআত ইত্যাদি ছড়ানো।
এ উভয় ধরণের ফাসাদকারীকেই হত্যা করা যাবে, যদি হত্যা ব্যতীত তার অনিষ্ট দমন সম্ভব না হয়।
এক হাদিসে সমকামীকে হত্যার কথা এসেছে:
(من وجدتموه يعمل عمل قوم لوط فاقتلوا الفاعل والمفعول به)
“কাউকে লূত আলাইহিস সালামের কাওমের মতো কাজ (অর্থাৎ সমকামিতা) করতে দেখলে যে করেছে এবং যার সাথে করেছে, তাদের উভয়কে হত্যা করে দাও।” - আবু দাউদ: ৪৪৬৪ , তিরিমিযি: ১৪৫৬
অর্থাৎ বিবাহিত হলেও হত্যা কর, অবিবাহিত হলেও হত্যা কর। “কাউকে লূত আলাইহিস সালামের কাওমের মতো কাজ (অর্থাৎ সমকামিতা) করতে দেখলে যে করেছে এবং যার সাথে করেছে, তাদের উভয়কে হত্যা করে দাও।” - আবু দাউদ: ৪৪৬৪ , তিরিমিযি: ১৪৫৬
অন্য হাদিসে পশুর সাথে সঙ্গমকারীকে হত্যা করে দিতে বলা হয়েছে:
(من وجدتموه وقع على بهيمة فاقتلوه)
“কাউকে কোন পশুর সাথে সঙ্গম করতে দেখলে হত্যা করে দেবে।” - আবু দাউদ: ৪৪৬৬, তিরিমিযি: ১৪৫৫
“কাউকে কোন পশুর সাথে সঙ্গম করতে দেখলে হত্যা করে দেবে।” - আবু দাউদ: ৪৪৬৬, তিরিমিযি: ১৪৫৫
অন্য হাদিসে মাহরাম মহিলার সাথে যিনাকারীকে হত্যা করে দিতে বলা হয়েছে:
(ومن وقع على ذات محرم فاقتلوه)
“যে ব্যক্তি তার মাহরামের সাথে যিনা করে, তাকে হত্যা করে দাও।” - তিরিমিযি: ১৪৬২
অর্থাৎ বিবাহিত হলেও, না হলেও। “যে ব্যক্তি তার মাহরামের সাথে যিনা করে, তাকে হত্যা করে দাও।” - তিরিমিযি: ১৪৬২
আমাদের আইম্মায়ে কেরামের মতে এসকল হত্যার কোনটাই হদ নয়, বরং তা’যির। কাজেই সর্বাস্থায় এদের হত্যা করা জরুরী নয়। যারা এসব কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে এবং তাদেরকে দমন করতে হত্যার প্রয়োজন পড়বে, তাদেরকে হত্যা করা হবে। আর যাদেরকে হত্যা ছাড়াই দমন করা সম্ভব, তাদেরকে হত্যা করা হবে না।
‘আদদুররুল মুখতার’ গ্রন্থকার (১০৮৮হি.) বলেন,
(ويكون) التعزير (بالقتل). اهـ
“তা’যির হত্যার দ্বারাও হতে পারে।” - আদদুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারের সাথে ছাপা): ৪/৬২
“তা’যির হত্যার দ্বারাও হতে পারে।” - আদদুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারের সাথে ছাপা): ৪/৬২
আল্লামা শামী রহ. (১২৫২হি.) এর ব্যাখ্যায় বলেন,
رأيت في [الصارم المسلول] للحافظ ابن تيمية أن من أصول الحنفية أن ما لا قتل فيه عندهم مثل القتل بالمثقل والجماع في غير القبل إذا تكرر فللإمام أن يقتل فاعله، وكذلك له أن يزيد على الحد المقدر إذا رأى المصلحة في ذلك، ويحملون ما جاء عن النبي - صلى الله عليه وسلم - وأصحابه من القتل في مثل هذه الجرائم على أنه رأى المصلحة في ذلك ويسمونه القتل سياسة، وكان حاصله أن له أن يعزر بالقتل في الجرائم التي تعظمت بالتكرار وشرع القتل في جنسها. اهـ ... ومن ذلك ما سيذكره المصنف من أن للإمام قتل السارق سياسة أي إن تكرر منه. وسيأتي أيضا قبيل كتاب الجهاد أن من تكرر الخنق منه في المصر قتل به سياسة لسعيه بالفساد، وكل من كان كذلك يدفع شره بالقتل، وسيأتي أيضا في باب الردة أن الساحر أو الزنديق الداعي إذا أخذ قبل توبته ثم تاب لم تقبل توبته ويقتل، ولو أخذ بعدها قبلت، وأن الخناق لا توبة له وتقدم كيفية تعزير اللوطي بالقتل. اهـ كلام ابن عابدين رحمه الله
“হাফেয ইবনে তাইমিয়া রহ. এর ‘আসসারিমুল মাসলূল’ গ্রন্থে দেখেছি: [হানাফিদের একটি মূলনীতি হলো- তাদের মতে যেসব অপরাধের শাস্তি হত্যা নয়; যেমন: ভারি বস্তু দ্বারা হত্যা করা, যোনিদ্বার ব্যতীত অন্য পথে সঙ্গম করা; যদি ব্যক্তি থেকে তা একাধিকবার প্রকাশ পায়, তাহলে ইমামুল মুসলিমীন তাকে হত্যা করতে পারবেন। তদ্রূপ মাসলাহাত মনে করলে তিনি নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত শাস্তিও দিতে পারবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ সকল অপরাধের বেলায় বর্ণিত হত্যাকে তারা এর উপর প্রয়োগ করেন যে, এতে তিনি মাসলাহাত রয়েছে মনে করেছেন। একে তারা ‘সিয়াসতরূপে হত্যা’ নাম দিয়ে থাকেন। এর সারকথা: যেসব অপরাধের অনুরূপ অপরাধে হত্যার বিধান রয়েছে, সেগুলো যখন বারংবার সংঘটিত হওয়ার দ্বারা গুরুতর অবস্থা ধারণ করবে, তখন সেগুলোতে তিনি তা’যিররূপে হত্যা করতে পারবেন।] হাফেয ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য শেষ হল। ... (শামী রহ. বলেন,) গ্রন্থকার সামনে যা উল্লেখ করবেন, সেটাও এই শ্রেণীভুক্তই। তা হল- ইমামুল মুসলিমীন সিয়াসতরূপে চোরকে হত্যা করতে পারবেন। অর্থাৎ যখন তার থেকে বারংবার চুরি প্রকাশ পাবে। কিতাবুল জিহাদের একটু আগে আলোচনা আসবে যে, যে ব্যক্তি থেকে শহরের অভ্যন্তরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার ঘটনা বারংবার ঘটবে, তাকে সিয়াসতরূপে হত্যা করে দেয়া হবে। কেননা, সে যমিনে ফাসাদ করে বেড়াচ্ছে। প্রত্যেক ব্যক্তি, যার অবস্থা এমন হবে- তাকে হত্যা করে দিয়ে তার অনিষ্ট দমন করা হবে। বাবুর রিদ্দাহয় আলোচনা আসবে- যাদুকর কিংবা এমন যিন্দিক, যে নিজ কুফরি অভিমতের দিকে লোকজনকে দাওয়াত দেয়: যদি তাওবা করার আগেই ধৃত হয় এরপর তাওবা করে, তাহলে তার তাওবা কবুল হবে না বরং হত্যা করে দেয়া হবে। আর তাওবা করার পর ধৃত হলে তাওবা কবুল হবে। সামনে এও আসবে যে, শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাকারীর কোন তাওবার সুযোগ নেই। আর সমকামিকে তা’যিররূপে কিভাবে হত্যা করা হবে তার আলোচনা আগে গেছে।” - রদ্দুল মুহতার: ৪/৬২-৬৩
সহজ কথা: যাকে হত্যা ছাড়া দমন সম্ভব না, তাকে হত্যা করে দমন করা হবে। এই হত্যা হদ হিসেবে নয়, তা’যির হিসেবে।
Comment