তাকফীরের ব্যাপারে প্রচলিত ভুল-৩
শায়খ আবু মুহাম্মদ আসিম আলমাকদিসি
আল্লাম শাওকানী রহ. আস সাইলুল র্জারার কিতাবে বলেন, জানা আবশ্যক, কোন মুসলিমের ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া ও কুফরে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত দেওয়া এমন একটি বিষয়, যাতে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মুসলিম সূর্যের চেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ ব্যতিত কদম ফেলতে পারে না। কেননা একদল সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহে এসেছে,
أن من قال لأخيه: يا كافر فقد باء بها أحدهما …)
“যে তার ভাইকে বলে: “হে কাফের” , এতে তাদের দু’জনের একজন অবশ্যই তাতে পতিত হয়”।
এরপর তিনি আরো হাদীস উল্লেখ করে বলেন, “এ সকল হাদীসগুলো ও এ প্রসঙ্গের অন্যান্য হাদীসগুলো কাফের আখ্যাদানে তাড়াহুড়া করার ব্যাপারে মহা সতর্ককারী ও বড় উপদেশদাতা। (আসসাইলুল র্জারার ৪/৫৭৮)
তিনি আরো বলেন, “কেননা যে স্বীয় ঈমান বাঁচাতে আগ্রহী, সে ঐ স্থানে পা ফেলতে পারে না, যেখানে স্বীয় ঈমানের বিপদ আছে এবং ঐ কাজে লিপ্ত হতে পারে না, যাতে এ বিষয়ে কোন উপকার বা ফলাফল নেই। সে কিভাবে এমন কাজে লিপ্ত হবে, যখন তার নিজের উপরই এ আশংকা আছে যে, যদি সে তাতে ভুল করে, তাহলে নিজেই ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যেতে পারে, যাদেরকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফের বলে উল্লেখ করেছেন। এটি এমন বিষয়, শরীয়ত তো দূরের কথা, সাধারণ বিবেকও এ পথে চলার অনুমোদন দেয় না। (৪/৫৭৯)
ইবনে হাজার আলহাইছামী “আয্ যাওয়াজির আন ইকতিরাফিল কাবায়ির” কিতাবে বলেন: “তিনশত একান্ন ও বায়ান্ন নম্বর কবীরা গুনাহ হল: কোন মুসলিমকে ‘হে কাফের’ বা ‘হে আল্লাহর শত্রু’ বলা, যখন এর দ্বারা মূলত: তাকে কাফের বলা উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ তার ইসলামকে কুফর বলা উদ্দেশ্য নয় বরং শুধু গালি দেয়া উদ্দেশ্য”।
অত:পর তিনি পূর্বোক্ত হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, “এটি ভয়ংকর ধমকি। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে শত্রুতা ও কুফরের বিষয়টি তার উপরই প্রত্যাবর্তন করবে এবং তার গুনাহ হবে হত্যার গুনাহের ন্যায়। একারণে এ শব্দ দু’টি ব্যবহারের হুকুম দু’ধরণের হতে পারে:
এক. হয়ত তা কুফর হবে। এটি হচ্ছে, যখন কোন মুসলিমকে ইসলামের গুণের কারণে ‘হে কাফের’ বা ‘হে আল্লাহর শত্রু’ বলা হবে। তখন বিষয়টি এমন হবে যে, সে ইসলামকে কুফর ও আল্লাহর শত্রুতার কারণ বলল। আর এটি কুফর।
দুই. অথবা তা কবীরা গুনাহ হবে। এটি হচ্ছে, যখন এমনটা উদ্দেশ্য হবে না। তখন বিষয়টি তার দিকে প্রত্যাবর্তন করার কথাটি কঠিন শাস্তি ও গুনাহের দিকে ইঙ্গিত হবে। আর এটাই কবীরা গুনাহের আলামতসমূহের মধ্যে একটি আলামত।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ: ‘ইলামুল মু’আক্কিয়ীন’ কিতাবে (৪/৪০৫) স্পষ্টভাবে বলেন: যাকে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সা. কাফের সাব্যস্ত করেননি তাকে কাফের সাব্যস্ত করা কবীরা গুনাহসমূহের অন্তর্ভূক্ত।
এ ধরণেরই আরেকটি হাদীস ইমাম মুসলিম রহ. জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন,
( قال رجل والله لا يغفر الله لفلان ، فقال الله عز وجل: من ذا الذي يتألى عليّ أن لا أغفر له ؟ إني قد غفرت له وأحبطت عملك ).
-“এক লোক বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ অমুককে ক্ষমা করবেন না। ফলে আল্লাহ বললেন, কে আছে, যে আমার থেকে শপথ নিবে!! যাও, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম আর তোমার সমস্ত আমল বিনষ্ট করে দিলাম”। (নাউযুবিল্লাহ)
এই বিষয়ের প্রাসঙ্গিক আরেকটি হাদীস ইমাম হাকিম রা. মুস্তাদরাকে বর্ণনা করেছেন এবং তার সনদকে হাসান বলেছেন। ইমাম যাহাবী রহ.ও তার অনুসরণ করে হাদীসটি ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হল, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে কোন মুমিনের ব্যাপারে এমন কথা বলে যা তার মাঝে নেই, তাকে জাহান্নামে পুঁজের মধ্যে আটক করে রাখা হবে, যতক্ষণ না সে যা বলেছে তা থেকে পরিত্রাণকারী বিষয় না আনতে পারে”।
শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব রহ. বলেন, “মোটকথা, যে নিজের কল্যাণ কামনা করে তার জন্য আবশ্যক হল, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট প্রমাণ ও ইলম ব্যতিত এ ব্যাপারে মুখ না খোলা এবং শুধু নিজের ধারণা ও যুক্তির আলোকে কোন মুসলিমকে ইসলাম থেকে বের করে দেওয়া থেকে বেঁচে থাকা। কেননা কাউকে ইসলাম থেকে বের করা বা ইসলামের অন্তর্ভূক্ত করা দ্বীনের সবচেয়ে কঠিন বিষয়সমূহের অন্তর্ভূক্ত।
শয়তান অনেক মানুষকে এক্ষেত্রে পদস্খলিত করেছে। একদল থেকে শৈথিল্য ঘটিয়েছে। ফলে তারা এমন লোককে মুসলমান বলে দাবি করে, কিতাব, সুন্নাহ ও ইজমার বর্ণনাসমূহ যার কাফের হওয়া সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। আর আরেক দল থেকে সীমালঙ্ঘন ঘটিয়েছে। ফলে তারা কিতাব-সুন্নাহ ও ইজমা যাকে মুসলিম হওয়া সাব্যস্ত করে, তাকে কাফের আখ্যায়িত করে। (আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ ৮/২১)
তাকফীরের ব্যাপারে প্রচলিত ভুল-২ এর লিংক:
https://dawahilallah.com/showthread....489;-&%232536;
Comment