Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির); ১২- তা’যিরের সর্বোচ্চ পরিমাণ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির); ১২- তা’যিরের সর্বোচ্চ পরিমাণ

    তা’যিরের সর্বোচ্চ পরিমাণ
    আমরা দেখেছি, তা’যিরের ভিত্তি কাযির ইজতিহাদের উপর, খাহেশাতের উপর নয়। তিনি ইজতিহাদের ভিত্তিতে যাকে যে ধরণের ও যে পরিমাণ তা’যির করা প্রয়োজন মনে করেন ততটুকুই করবেন। এর চেয়ে কমও না, এর চেয়ে বেশিও না। কমও জায়েয হবে না, বেশিও জায়েয হবে না। কারণ, বেশি লাগালে সীমালঙ্গন হবে আবার কম লাগালে অপরাধী দমন হবে না। সীমালঙ্গনও জায়েয নয়, অপরাধীকে দমন না করে ছেড়ে দেয়াও জায়েয নয়। অতএব, কমও জায়েয নয়, বেশিও জায়েয নয়। এ হিসেবে তা’যিরের সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ কোন পরিমাণ নেই। অর্থাৎ এমন কোন পরিমাণ নেই যে, অপরাধী বিরত হয়ে গেলেও এর চেয়ে কম করা যাবে না; আবার এমন কোন পরিমাণও নেই যে, অপরাধী ঐ পরিমাণ শাস্তির পর বিরত হবে না বলে মনে হলেও তাকে এর অধিক শাস্তি দেয়া যাবে না।


    হানাফি মাযহাবের অনেক কিতাবে আছে, তা’যিরের সর্বনিম্ন পরিমাণ তিন বেত। তবে আমাদের আইম্মায়ে কেরাম স্পষ্ট বলেছেন, এই বক্তব্য সহীহ নয়। যে ধমকে বিরত হয়ে যাবে, তাকে বেত্রাঘাত করা যাবে না। আবার যাকে এক বেত্রাঘাতে বিরত রাখা যাবে মনে হয়, এর বেশি দরকার হবে না- তাকে এর বেশি লাগানো যাবে না। অতএব, তিন বেত্রাঘাতের বক্তব্য সহীহ নয়।


    তবে যাকে দশ বেতের কমে বিরত রাখা যাবে না, তার তা’যিরের সর্বনিম্ন পরিমাণ- দশ বেত্রাঘাত। যাকে বিশটা দরকার, তার জন্য বিশটাই সর্বনিম্ন। যার ত্রিশটা দরকার, তার ত্রিশটা। এর চেয়ে কম লাগানো জায়েয হবে না।
    তদ্রূপ, যাকে দুই দিন বন্দী করে রাখলেই বিরত হয়ে যাবে, তাকে এর বেশি সময় বন্দী রাখা জায়েয হবে না। আবার যাকে এক বৎসরের কমে দমন সম্ভব নয়, তার সর্বনিম্ন তা’যির এক বৎসর। তাকে এক বৎসরের আগে ছেড়ে দেয়া জায়েয হবে না। অতএব, যাকে যে পরিমাণ বন্দী রাখা দরকার, কাযি সাহেব তাকে সে পরিমাণই বন্দী রাখবেন। অন্যান্য সকল তা’যিরের ক্ষেত্রেও একই কথা।


    তবে বিশেষভাবে বেত্রাঘাতের দ্বারা তা’যিরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কতটি বেত লাগানো যাবে এ নিয়ে আইম্মায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ আছে। ইমাম মালেক রহ. এর মতে এর কোন সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত নেই। যাকে বিরত রাখতে যত পরিমাণ বেত লাগানো দরকার তাকে সে পরিমাণই লাগানো যাবে। একশো দরকার হলে একশো, দু’শো দরকার হলে দু’শো, চারশো দরকার হলে চারশো।


    তবে অন্যান্য আইম্মায়ে কেরামের মতে বেত্রাঘাতের একটা সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত আছে। আবু হানিফা রহ. এর মতে এর পরিমাণ ঊনচল্লিশ (৩৯)। অতএব, তা’যিররূপে কাউকে ঊনচল্লিশ বেতের অধিক লাগানো যাবে না।



    এখন প্রশ্ন হতে পারে, যদি কেউ ঊনচল্লিশ বেতে বিরত না হয়, তাহলে তার ব্যাপারে কি করা হবে? ঊনচল্লিশ লাগানোর পর কি ছেড়ে দেয়া হবে?


    উত্তর:
    না ছেড়ে দেয়া হবে না। বরং তাকে বিরত রাখতে বেত্রাঘাতের পরিবর্তে অন্য কোন শাস্তি বেছে নেয়া হবে। যেমন- বেত্রাঘাতের পর জেলে ভরে রাখা হবে কিংবা নির্বাসন দিয়ে দেয়া হবে কিংবা লোকজনকে তাকে বয়কট করার আদেশ দেয়া হবে, যাতে সংকীর্ণতার শিকার হয়ে সে সংশোধন হয়ে যায়। অতএব, বেত্রাঘাতের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৩৯ হওয়ার অর্থ এই নয়- এর অতিরিক্ত কোন শাস্তি দেয়া যাবে না। বরং এর অর্থ: বেত্রাঘাত ৩৯- এর অধিক লাগানো যাবে না, তবে ৩৯- এ বিরত না হলে আর বেত্রাঘাত না করে বরং অন্য কোন শাস্তি বেছে নেয়া হবে।


    দ্বিতীয়ত: কারো অপরাধ যদি অনেক হয়, আর প্রত্যেকটা অপরাধের কারণে তা’যিরের প্রয়োজন পড়ে, যার ফলে সবগুলো বেত্রাঘাতের পরিমাণ সমষ্টিগতভাবে ৩৯- এর অধিক হয়ে যায়: তাহলে তাতেও কোন অসুবিধা নেই। বর্ণিত আছে, হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকালে তার আংটির নকশা নকল করে বাইতুল মাল থেকে সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার কারণে মা’ন ইবনে যায়েদাকে তিনি দু’শো বেত্রাঘাত করেছেন, সাথে বন্দীও করেছেন এবং নির্বাসনও দিয়েছেন। কারণ, তার এই অপরাধ অনেকগুলো অপরাধের রূপ নিয়েছে। যেমন:

    - আংটির নকশা নকল করা।
    - অন্যায়ভাবে বাইতুল মালের সম্পদ হাতিয়ে নেয়া।
    - অপরাধীদের জন্য এই অপরাধের রাস্তা খোলে দেয়া। কেননা, তার দেখাদেখি অন্যরাও বাইতুল মালের সম্পদ হাতিয়ে নিতে দায়িত্বশীলদের আংটির নকশা নকল করার পথ ধরতে পারে ইত্যাদি।
    যেহেতু তার অপরাধ অনেকগুলো অপরাধের রূপ নিয়েছে এ কারণে সবগুলোর তা’যিররূপে দু’শো লাগানো হয়েছে। [বিস্তারিত ফাতহুল কাদীর ও রদ্দুল মুহতার, বাবুত তা’যির দেখুন।]


    অতএব, ৩৯- এর অধিক লাগানো যাবে না ঐ সময়, যখন অপরাধ একটা হবে। যেমন- কোন অবিবাহিত পুরুষ কোন অবিবাহিত মহিলার সাথে সঙ্গম ব্যতীত অন্যান্য কুকর্ম করলো (যেমন- জড়িয়ে ধরা, চুমু খাওয়া ইত্যাদি)। তার শাস্তি কি তা শরীয়তে নির্ধারিত নেই। এখানে তা’যির করতে হবে। তবে এই তা’যিরের পরিমাণ হানাফি মাযহাব মতে ৩৯ বেতের অধিক হতে পারবে না। তবে যদি এর দ্বারা সে পরবর্তীতে এসব কুকর্ম থেকে বিরত হবে না বলে মনে হয়, তাহলে তাকে জেলে দেয়া যেতে পারে কিংবা মুনাসিব মতো অন্য কোন শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
    পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তির অপরাধ যদি অনেকগুলো হয়, যেমন:

    - কাউকে গালি দিয়েছে,
    - কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে,
    - কাউকে অন্যায়ভাবে প্রহার করেছে,
    - কোন মহিলার সাথে সঙ্গম ব্যতীত অন্যান্য কুকর্ম করেছে,
    - অন্যায়ভাবে কারো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে,
    - জুয়া খেলেছে ইত্যাদি;


    এমতাবস্থায় তাকে সবগুলোর বিপরীতে যদি বেত্রাঘাত করা হয়, তাহলে তার সংখ্যা ৩৯- এর চেয়ে অনেক বেশি হবে। এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা, এখানে এক অপরাধের বিপরীতে বেত্রাঘাত হচ্ছে না, অনেকগুলো অপরাধের বিপরীতে হচ্ছে। তবে বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে- যেন তার মৃত্যু না ঘটে যায় কিংবা কোন অঙ্গ নষ্ট না হয়ে যায়।


    সারকথা এই দাঁড়ালো:
     তা’যির কাযির ইজতিহাদের উপর নির্ভরশীল। তিনি খাহেশাতের বশবর্তী না হয়ে ইজতিহাদের ভিত্তিতে যাকে যেমন মুনাসিব মনে করেন তা’যির করবেন।

     তা’যিরের সর্বনিম্ন কোন পরিমাণ নির্ধারিত নেই। যাকে দমন করতে যে পরিমাণ শাস্তি দরকার, সেটাই তার জন্য সর্বনিম্ন তা’যির। এর চেয়ে কম শাস্তি জায়েয হবে না। তদ্রূপ, যে পরিমাণ শাস্তির মাধ্যমে অপরাধী দমন হয়ে যাবে, এর বেশি লাগবে না মনে হয়- সেটা তার জন্য সর্বোচ্চ তা’যির। এর অধিক শাস্তি দেয়া যাবে না।

     হানাফি মাযহাব মতে তা’যিরে বেত্রাঘাতের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৩৯। এর বেশি বৈধ নয়। তবে অপরাধ যদি অনেক হয় এবং প্রত্যেকটার জন্য তা’যিরের দরকার পড়ে, তাহলে সবগুলোর সমষ্টি ৩৯- এর অধিক হতে কোন সমস্যা নেই। তদ্রূপ, যেক্ষেত্রে ৩৯- এর অধিক বৈধ নয়, সেক্ষেত্রেও যদি অপরাধী বিরত হবে না বলে মনে হয়, তাহলে বেত্রাঘাতের সাথে অন্য শাস্তি যোগ করা হবে।



Working...
X