জিহাদে দানের নিয়তে খতম তারাবীহর বিনিময় গ্রহণের ব্যাপারে অনেক ভাই জানতে চেয়েছিলেন, ইলম ও জিহাদ ভাই সংক্ষেপে সুন্দর উত্তরও দিয়েছেন, আমি এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করতে চাচ্ছি, যা দ্বারা মাসয়ালাটি আরো স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ,
এক. হারাম সম্পদ দান করার নিয়তেও গ্রহণ করা বৈধ নয়; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
দুই. যেহেতু জিহাদ ও মুজাহিদদের বিপক্ষে উলামায়ে সূয়ের প্রপাগান্ডার সয়লাব চলছে, তাই আমাদের এমন সবকিছু হতে বিরত থাকতে হবে যাকে পুজি করে ওরা আমাদের বিপক্ষে প্রপাগান্ডা করতে পারে। প্রপাগান্ডা হতে বাঁচার জন্য জায়েয কাজ হতে বিরত থাকার নযীরও শরিয়তে রয়েছে, মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে উমর রাযিআল্লাহু আনহু হত্যা করতে চাইলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন,
আমাদের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে,
জামা’আত প্রত্যেক ঐসব পন্থায় অর্থ-সম্পদ নেওয়া থেকে বিরত রাখে যার কারণে জিহাদ ও মুজাহিদদের বদনাম হয়।
তিন. জিহাদের জন্য হারাম বা সংশয়যুক্ত সম্পদ উপার্জন করার কোন নযির শরিয়তে নেই, বরং শরিয়ত জিহাদের জন্য দান করার উদ্দেশ্যে উপার্জনের যে পদ্ধতি আমাদের শিখিয়েছে তা হলো,
ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন আমাদেরকে সদকার আদেশ করেন, তখন আমরা কুলিগিরি করে সদকা করতাম, একদিন আবু আকীল আধা সা’ পরিমান খেজুর নিয়ে আসেন, অপর ব্যক্তি অনেক সদকা নিয়ে আসে, তখন মুনাফিকরা বলে, আল্লাহ তায়ালার আবু আকীলের (সামান্য) সদকার প্রয়োজন নেই, আর এ তো লোক দেখানোর জন্য (অনেক) সদকা করেছে, তখন এই আয়াত নাযিল হয়, মুমিনদের মধ্যে হতে যারা (বেশি পরিমাণে) নফল সদকা করে, এবং যারা নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সামান্য দান করে, (মুনাফিকরা তাদের সমালোচনা করে, তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে ঠাট্টা করেন, এবং তাদের জন্য রয়েছে, কঠোর শাস্তি)। -সহিহ বুখারী, ৪৬৬৮ সহিহ মুসলিম, ১০১৮
সুতরাং আমরা জিহাদের জন্য দান করতে চাইলে আমাদের কর্তব্য হলো কোন হালাল পেশার মাধ্যমে সম্পদ উপার্জন করে তা দান করা। যদি এতে দানের পরিমাণ কম হয় তবে তাই ভালো। কেননা বিজয় তো শুধু আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত, ১২৭) আর জিহাদের জন্য আমাদের জানমাল ব্যয় হচ্ছে আসবাব, যা আল্লাহ তায়ালার কুদরতের আবরণমাত্র, যেহেতু আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে আসবাব ছাড়া কিছু দেন না, তাই আমাদের আসবাবগ্রহণ করতে হবে, যদি আমরা শরিয়ত অনুমোদিত গন্ডির মধ্য থেকে আমাদের সাধ্যের সবটুকু ঢেলে জিহাদের জন্য প্রস্তুতিগ্রহণ করি তাহলে বাকী সবকিছুর ব্যবস্থা আল্লাহই করে দিবেন।
আর মনে রাখতে হবে ইসলামে মর্যাদার ভিত্তি একমাত্র তাকওয়া। তাই ইসলাম কোন হালাল পেশাকে অবজ্ঞা করে না এবং পেশাকে মর্যাদার মাপকাঠিও বানায় না। দাউদ আলাইহিস সালাম বর্ম তৈরী করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। (সূরা আম্বিয়া, ৮০, সূরা সাবা, ১০-১১; সহিহ বুখারী, ২০৭২) যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন কাঠমিস্ত্রী। (সহিহ মুসলিম, ২৩৭৯) মুসা আলাইহিস সালাম দশবছর ছাগল চড়িয়েছেন, (সূরা কাসাস, আয়াত, ২৭) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ছাগল চরিয়েছেন, বরং রাসূলের পূর্বে যত নবী এসেছেন, সবাই ছাগল চড়িয়েছেন। সহিহ বুখারী, ২২৬২
চার. যদিও প্রয়োজনের কারণে এখন ইমামতি, কুরআন শিক্ষা ও অন্যান্য দ্বীনী কাজের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয হওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারপরও দ্বীনী কাজ যথাসম্ভব বিনিময় ছাড়া করা এবং জীবীকার জন্য মানুষের হাদিয়ার মুখাপেক্ষী না হয়ে অন্য কোন হালাল পেশা অবলম্বন করাই উত্তম। এতে দ্বীনী কাজের সওয়াব পুরোপুরিভাবে পাওয়া যায়। এমনকি জিহাদে গণীমত পেলেও জিহাদের সওয়াব দুই-তৃতীয়াংশ কমে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
কোন ব্যক্তি নিজের হাতের কামাইয়ের চেয়ে উত্তম খাদ্যগ্রহণ করেনি। আল্লাহর নবী দাউদও নিজের হাতের উপার্জন দ্বারাই জীবিকা নির্বাহ করতেন। -সহিহ বুখারী, ২০৭২
আব্দুল্লাহ বিন আমর রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে বাহিনী আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে গণীমত পেল তারা তাদের সওয়াবের দুই তৃতীয়াংশ দুনিয়াতেই নিয়ে নিল, আর তাদের জন্য আখেরাতে শুধু একতৃতীয়াংশই বাকী থাকবে। আর যারা গণীমত পাবে না তারা আখেরাতে পূর্ণ প্রতিদান পাবে। সহিহ মুসলিম, ১৯০৬
পাচ. খতম তারাবী খালেস একটি ইবাদত, যা নামায-রোযার মতো ইবাদতে মাকসূদার অন্তর্ভুক্ত। আর এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় বা বেতন দেওয়া-নেওয়া উম্মতে মুসলিমার ঐক্যমতের ভিত্তিতে নাজায়েয। এতে না কোনো মাযহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকীহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে।
ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েয। কিন্তু খতম তারাবীর বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না। বরং তা মূলত কুরআন খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল ফকীহের নিকট হারাম এবং হাদিসেও তিলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ করো। তাতে সীমালঙ্ঘন করো না, তা থেকে দূরে থেকো না, তা দ্বারা ভক্ষণ করো না এবং তার মাধ্যমে প্রাচুর্য কামনা করো না। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৫২৯ হাফেয ইবনে হাযার হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। -ফাতহুল বারী, ৯/১০১ দারুল ফিকর।
আবু ইসহাক সাবীয়ী রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মা‘কিল রাহ. রমযান মাসে তারাবীহর নামায পড়ালেন। ঈদুল ফিতরের দিন উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তাকে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম হাদিয়া দিলে তিনি তা এই বলে ফিরিয়ে দিলেন যে, আমরা কুরআন তিলাওয়াতের কোনো বিনিময় গ্রহণ করি না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮২১
মুয়াবিয়া বিন কুররাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আমর বিন নোমান বিন মুকরিন রহিমাহুল্লাহুর নিকট অবস্থান করছিলাম, রমযানে (কুফা-বসরার গভর্ণর) মুসয়াব বিন যোবায়েরের পক্ষ থেকে একব্যক্তি তার নিকট দুই হাজার দিরহাম হাদিয়া নিয়ে এসে বললো, আমির আপনাকে সালাম জানাচ্ছেন এবং বলছেন, সকল সম্মানিত কারীকেই আমরা হাদিয়া দিয়েছি, আপনিও এই টাকা দিয়ে আপনার এই মাসের প্রয়োজন পূরো করুন। তখন আমর সেই টাকা এ কথা বলে ফিরিয়ে দিলেন যে, আমরা দুনিয়া উপার্জনের জন্য কুরআন পড়িনি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ৭৮২০
ছয়, যদিও বর্তমানে কোন কোন আলেম খতম তারাবীহর বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ বলছেন, তবে অধিকাংশ মুহাক্কিক আলেম যেহেতু তা নাজায়েয বলছেন, তাই এটি কমপক্ষে মুশতাবিহ বা সংশয়যুক্ত বিষয়ের আওতায় অবশ্যই পড়বে, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
সুতরাং এ সবকিছুর দিকে লক্ষ্য করে সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, জিহাদের জন্য দান করার নিয়তে খতম তারাবীহর বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ হবে না। বরং হাফেয সাহেবগণ যদি জিহাদের জন্য দান করতে চান তাহলে রমযানে তারাবীহর পাশাপাশি তারা কোন হালাল পেশা অবলম্বন করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
এক. হারাম সম্পদ দান করার নিয়তেও গ্রহণ করা বৈধ নয়; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من جمع مالا حراما، ثم تصدق به، لم يكن له فيه أجر، وكان إصره عليه. أخرجه ابن حبان في صحيحه: (3216) وقال الشيخ شعيب: إسناده حسن ... وأخرجه الحاكم ... وصححه، ووافقه الذهبي.
যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করে তা সদকা করলো, সে কোন সওয়াব পাবে না; বরং এর গুনাহ তার উপরই বর্তাবে। -সহীহ ইবনে হিব্বান, ৩২১৬ শায়েখ শুয়াইব আরনাউত বলেন, হাদিসটির সনদ হাসান পর্যায়ের, হাকেম রহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী তা সমর্থণ করেছেন। দুই. যেহেতু জিহাদ ও মুজাহিদদের বিপক্ষে উলামায়ে সূয়ের প্রপাগান্ডার সয়লাব চলছে, তাই আমাদের এমন সবকিছু হতে বিরত থাকতে হবে যাকে পুজি করে ওরা আমাদের বিপক্ষে প্রপাগান্ডা করতে পারে। প্রপাগান্ডা হতে বাঁচার জন্য জায়েয কাজ হতে বিরত থাকার নযীরও শরিয়তে রয়েছে, মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে উমর রাযিআল্লাহু আনহু হত্যা করতে চাইলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন,
«دعه، لا يتحدث الناس أن محمدا يقتل أصحابه»
ওকে ছেড়ে দাও, মানুষ যেন বলতে না পারে যে, মুহাম্মদ তার সাথীদের হত্যা করে। সহিহ বুখারী, ৪৯০৫ সহিহ মুসলিম, ২৫৮৪ আমাদের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে,
জামা’আত প্রত্যেক ঐসব পন্থায় অর্থ-সম্পদ নেওয়া থেকে বিরত রাখে যার কারণে জিহাদ ও মুজাহিদদের বদনাম হয়।
তিন. জিহাদের জন্য হারাম বা সংশয়যুক্ত সম্পদ উপার্জন করার কোন নযির শরিয়তে নেই, বরং শরিয়ত জিহাদের জন্য দান করার উদ্দেশ্যে উপার্জনের যে পদ্ধতি আমাদের শিখিয়েছে তা হলো,
لما أمرنا بالصدقة كنا نتحامل، فجاء أبو عقيل بنصف صاع، وجاء إنسان بأكثر منه، فقال المنافقون: إن الله لغني عن صدقة هذا، وما فعل هذا الآخر إلا رئاء، فنزلت: {الذين يلمزون المطوعين من المؤمنين في الصدقات، والذين لا يجدون إلا جهدهم}. صحيح البخاري: (4668) صحيح مسلم: (1018)
ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন আমাদেরকে সদকার আদেশ করেন, তখন আমরা কুলিগিরি করে সদকা করতাম, একদিন আবু আকীল আধা সা’ পরিমান খেজুর নিয়ে আসেন, অপর ব্যক্তি অনেক সদকা নিয়ে আসে, তখন মুনাফিকরা বলে, আল্লাহ তায়ালার আবু আকীলের (সামান্য) সদকার প্রয়োজন নেই, আর এ তো লোক দেখানোর জন্য (অনেক) সদকা করেছে, তখন এই আয়াত নাযিল হয়, মুমিনদের মধ্যে হতে যারা (বেশি পরিমাণে) নফল সদকা করে, এবং যারা নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সামান্য দান করে, (মুনাফিকরা তাদের সমালোচনা করে, তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে ঠাট্টা করেন, এবং তাদের জন্য রয়েছে, কঠোর শাস্তি)। -সহিহ বুখারী, ৪৬৬৮ সহিহ মুসলিম, ১০১৮
সুতরাং আমরা জিহাদের জন্য দান করতে চাইলে আমাদের কর্তব্য হলো কোন হালাল পেশার মাধ্যমে সম্পদ উপার্জন করে তা দান করা। যদি এতে দানের পরিমাণ কম হয় তবে তাই ভালো। কেননা বিজয় তো শুধু আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত, ১২৭) আর জিহাদের জন্য আমাদের জানমাল ব্যয় হচ্ছে আসবাব, যা আল্লাহ তায়ালার কুদরতের আবরণমাত্র, যেহেতু আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে আসবাব ছাড়া কিছু দেন না, তাই আমাদের আসবাবগ্রহণ করতে হবে, যদি আমরা শরিয়ত অনুমোদিত গন্ডির মধ্য থেকে আমাদের সাধ্যের সবটুকু ঢেলে জিহাদের জন্য প্রস্তুতিগ্রহণ করি তাহলে বাকী সবকিছুর ব্যবস্থা আল্লাহই করে দিবেন।
আর মনে রাখতে হবে ইসলামে মর্যাদার ভিত্তি একমাত্র তাকওয়া। তাই ইসলাম কোন হালাল পেশাকে অবজ্ঞা করে না এবং পেশাকে মর্যাদার মাপকাঠিও বানায় না। দাউদ আলাইহিস সালাম বর্ম তৈরী করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। (সূরা আম্বিয়া, ৮০, সূরা সাবা, ১০-১১; সহিহ বুখারী, ২০৭২) যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন কাঠমিস্ত্রী। (সহিহ মুসলিম, ২৩৭৯) মুসা আলাইহিস সালাম দশবছর ছাগল চড়িয়েছেন, (সূরা কাসাস, আয়াত, ২৭) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ছাগল চরিয়েছেন, বরং রাসূলের পূর্বে যত নবী এসেছেন, সবাই ছাগল চড়িয়েছেন। সহিহ বুখারী, ২২৬২
চার. যদিও প্রয়োজনের কারণে এখন ইমামতি, কুরআন শিক্ষা ও অন্যান্য দ্বীনী কাজের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয হওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারপরও দ্বীনী কাজ যথাসম্ভব বিনিময় ছাড়া করা এবং জীবীকার জন্য মানুষের হাদিয়ার মুখাপেক্ষী না হয়ে অন্য কোন হালাল পেশা অবলম্বন করাই উত্তম। এতে দ্বীনী কাজের সওয়াব পুরোপুরিভাবে পাওয়া যায়। এমনকি জিহাদে গণীমত পেলেও জিহাদের সওয়াব দুই-তৃতীয়াংশ কমে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما أكل أحد طعاما قط، خيرا من أن يأكل من عمل يده، وإن نبي الله داود عليه السلام، كان يأكل من عمل يده». صحيح البخاري: (2072)
কোন ব্যক্তি নিজের হাতের কামাইয়ের চেয়ে উত্তম খাদ্যগ্রহণ করেনি। আল্লাহর নবী দাউদও নিজের হাতের উপার্জন দ্বারাই জীবিকা নির্বাহ করতেন। -সহিহ বুখারী, ২০৭২
عن عبد الله بن عمرو، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ما من غازية تغزو في سبيل الله فيصيبون الغنيمة، إلا تعجلوا ثلثي أجرهم من الآخرة، ويبقى لهم الثلث، وإن لم يصيبوا غنيمة، تم لهم أجرهم». صحيح مسلم: (1906)
আব্দুল্লাহ বিন আমর রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে বাহিনী আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে গণীমত পেল তারা তাদের সওয়াবের দুই তৃতীয়াংশ দুনিয়াতেই নিয়ে নিল, আর তাদের জন্য আখেরাতে শুধু একতৃতীয়াংশই বাকী থাকবে। আর যারা গণীমত পাবে না তারা আখেরাতে পূর্ণ প্রতিদান পাবে। সহিহ মুসলিম, ১৯০৬
পাচ. খতম তারাবী খালেস একটি ইবাদত, যা নামায-রোযার মতো ইবাদতে মাকসূদার অন্তর্ভুক্ত। আর এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় বা বেতন দেওয়া-নেওয়া উম্মতে মুসলিমার ঐক্যমতের ভিত্তিতে নাজায়েয। এতে না কোনো মাযহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকীহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে।
ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েয। কিন্তু খতম তারাবীর বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না। বরং তা মূলত কুরআন খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল ফকীহের নিকট হারাম এবং হাদিসেও তিলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
عن عبد الرحمن بن شبل الأنصاري، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "اقرؤوا القرآن، ولا تغلوا فيه، ولا تجفوا عنه، ولا تأكلوا به، ولا تستكثروا به" قال الحافظ في الفتح (9/101) : وإسناده قوي.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ করো। তাতে সীমালঙ্ঘন করো না, তা থেকে দূরে থেকো না, তা দ্বারা ভক্ষণ করো না এবং তার মাধ্যমে প্রাচুর্য কামনা করো না। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৫২৯ হাফেয ইবনে হাযার হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। -ফাতহুল বারী, ৯/১০১ দারুল ফিকর।
عن أبي إسحاق ، عن عبد الله بن معقل : أنه صلى بالناس في شهر رمضان، فلما كان يوم الفطر بعث إليه عبيد الله بن زياد بحلة وبخمسمئة درهم فردها وقال : أخبرنا لا نأخذ على القرآن أجرا. رواه ابن أبي شيبة: 7821
আবু ইসহাক সাবীয়ী রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মা‘কিল রাহ. রমযান মাসে তারাবীহর নামায পড়ালেন। ঈদুল ফিতরের দিন উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তাকে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম হাদিয়া দিলে তিনি তা এই বলে ফিরিয়ে দিলেন যে, আমরা কুরআন তিলাওয়াতের কোনো বিনিময় গ্রহণ করি না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮২১
حدثنا محمد بن بشر ، قال : حدثنا عبد الله بن الوليد ، قال : أخبرني عمر بن أيوب ، قال : أخبرني أبو إياس معاوية بن قرة، قال : كنت نازلا على عمرو بن النعمان بن مقرن ، فلما حضر رمضان جاءه رجل بألفي درهم من قبل مصعب بن الزبير ، فقال : إن الأمير يقرئك السلام ويقول : إنا لم ندع قارئا شريفا إلا قد وصل إليه منا معروف فاستعن بهذين على نفقة شهرك هذا ، فقال عمرو : اقرأ على الأمير السلام وقل والله ما قرأنا القرآن نريد به الدنيا ورده عليه. رواه ابن أبي شيبة: 7820
মুয়াবিয়া বিন কুররাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আমর বিন নোমান বিন মুকরিন রহিমাহুল্লাহুর নিকট অবস্থান করছিলাম, রমযানে (কুফা-বসরার গভর্ণর) মুসয়াব বিন যোবায়েরের পক্ষ থেকে একব্যক্তি তার নিকট দুই হাজার দিরহাম হাদিয়া নিয়ে এসে বললো, আমির আপনাকে সালাম জানাচ্ছেন এবং বলছেন, সকল সম্মানিত কারীকেই আমরা হাদিয়া দিয়েছি, আপনিও এই টাকা দিয়ে আপনার এই মাসের প্রয়োজন পূরো করুন। তখন আমর সেই টাকা এ কথা বলে ফিরিয়ে দিলেন যে, আমরা দুনিয়া উপার্জনের জন্য কুরআন পড়িনি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ৭৮২০
ছয়, যদিও বর্তমানে কোন কোন আলেম খতম তারাবীহর বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ বলছেন, তবে অধিকাংশ মুহাক্কিক আলেম যেহেতু তা নাজায়েয বলছেন, তাই এটি কমপক্ষে মুশতাবিহ বা সংশয়যুক্ত বিষয়ের আওতায় অবশ্যই পড়বে, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
فمن اتقى المشبهات استبرأ لدينه وعرضه، ومن وقع في الشبهات: كراع يرعى حول الحمى، يوشك أن يواقعه صحيح البخاري: (52) صحيح مسلم: (1599)
যে ব্যক্তি (এমন) সংশয়পূর্ণ বিষয় বেঁচে থাকবে সে তার দ্বীন ও সম্মান নিয়ে বাঁচলো। আর যে এমন সংশয়পূর্ণ বিষয়ে নিপতিত হলো সে অচিরেই হারামে নিপতিত হবে। -সহিহ বুখারী, ৫২ সহিহ মুসলিম, ১৫৯৯সুতরাং এ সবকিছুর দিকে লক্ষ্য করে সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, জিহাদের জন্য দান করার নিয়তে খতম তারাবীহর বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ হবে না। বরং হাফেয সাহেবগণ যদি জিহাদের জন্য দান করতে চান তাহলে রমযানে তারাবীহর পাশাপাশি তারা কোন হালাল পেশা অবলম্বন করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
Comment