ইফতারি ও সাহরির সময় : ভুল ও তার সংশোধন
আমাদের বর্তমান প্রজন্ম সম্ভবত সুবহে সাদিক ও সূর্যাস্ত দেখে রোজা ও ইফতারি শুরুর বিষয়টি ভুলেই গেছে। অথচ এটা ছিল মুতাওয়ারিস একটি সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ সা.-এর সময় থেকে এভাবেই চলে আসছে রোজা শুরু ও শেষের সময় নির্ধারণ। কিন্তু ক্যালেন্ডার, গ্রিনিচ টাইম, জোতির্বিজ্ঞানের ১৫ ডিগ্রী, ১৮ ডিগ্রীর হিসাব ইত্যাদির মারপ্যাঁচে এ সুন্নাহটি আমাদের থেকে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনও কিছু বিদগ্ধ আলিম আছেন, যারা এ সুন্নাহ অনুযায়ী আমল এখনও বহাল রেখেছেন।
আজ বেশি দালিলিক আলোচনায় যাচ্ছি না। শুধু মোটাদাগে কয়েকটি ইঙ্গিত দিয়ে যাব। বিস্তারিতভাবে প্রামাণ্য আর্টিকেলের কাজ চলছে। শীঘ্রই সেটা প্রকাশ করব ইনশাআল্লাহ। বস্তুত আমাদের সতর্কবার্তার কারণ হলো, মুতাওয়ারিস এ সুন্নাহকে পরিত্যাগ করার কারণে আমরা অতিরিক্ত আরও দুটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এক হলো, ইফতার দেরিতে হওয়া। আমি একবার, দুবার নয়; অসংখ্যবার চাক্ষুষ দেখেছি যে, ইফতারির প্রচলিত সময়ের প্রায় দশ থেকে পনেরো মিনিট আগে সূর্য ডুবে যায়। গতপরশুও দেখেছি এবং আমার এক সহপাঠীকে ডেকে তা দেখিয়েছি। অবিশ্বাস করলে আপনি নিজেও কয়েকদিন যাচাই করে দেখতে পারেন। এ হিসেবে ইফতারি আমাদের বেশ দেরিতেই হয়ে থাকে, যা হাদিসের ভাষ্যনুসারে নিষিদ্ধ কাজ এবং এটাকে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে। দ্বিতীয় হলো, ফজরের নামাজ। আমাদের দেখামতে বর্তমানের প্রচলিত সাহরির শেষ সময়ের তুলনায় আরও পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর সুবহে সাদিক হয়। এটাও অনেকবার একাধিক জায়গায় গিয়ে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। সুতরাং এ হিসেবে রোজা সহিহ হলেও যারা এর দশ মিনিট পরেই ফজরের নামাজ পড়ে ফেলে তাদের নামাজ হয় সুবহে কাজিবের সময়ে। এটা বুঝতে হলে আপনাকে গ্রামে যেতে হবে। নতুনদের জন্য প্রথম প্রথম শহরে অবস্থান করে সুবহে সাদিকের সময় বোঝা একটু মুশকিল হতে পারে।
বাকি থেকে যায়, বিজ্ঞানের হিসাব। তো এখানে রাসুল সা.-এর ওই কথাটি স্মরণ করুন, যা বুখারির বর্ণনায় এসেছে যে, "আমরা হলাম নিরক্ষর জাতি। আমরা হিসাব-কিতাব করে মাস-সময় নির্ধারণ করি না।" এজন্যই ফুকাহায়ে কিরাম জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথার ওপর ভিত্তি করে শরিয়ার ইবাদতসংক্রান্ত কোনো ফয়সালা করাকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। এসব ক্ষেত্রে হিসাব-কিতাব হবে স্বচক্ষে দেখার মাধ্যমে। সীমার মধ্যে থাকলে ক্যালেন্ডার, ঘড়ি ইত্যাদির সাহায্যও নেওয়া যাবে। কিন্তু শরিয়ার অন্য মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে, কিংবা কোথাও সাংঘর্ষিক হলে সেক্ষেত্রে সেটার ওপর আমল করা ঠিক হবে না।
এখন কথা হলো, আমাদের কী করা উচিত! এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হলো, আপনি সরাসরি সূর্যাস্ত দেখে ইফতার করবেন। মেঘ বা পাহাড় বা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে কখনো সূর্যাস্ত না দেখতে পারলে সেক্ষেত্রে জন্নে গালিব বা প্রবল ধারণার ওপর ভিত্তি করে ইফতার করা যাবে। সূর্যাস্ত না দেখা যাওয়ায় সূর্যাস্তের ব্যাপারে বেশি সন্দেহ থাকলে ক্যালেন্ডারের টাইমের ওপরও নির্ভর করার সুযোগ আছে। কেননা, ক্যালেন্ডারের টাইম প্রকৃত হিসেবে সূর্যাস্তের অনেক পরে হওয়ায় তখন সূর্য নিশ্চিতই ডুবে যায়। আর সুবহে সাদিকের বিষয়টি যদি আপনি বুঝতে পারেন, তাহলে ক্যালেন্ডারের হিসাব দেখার কোনোই প্রয়োজন নেই। আর নতুন হওয়ায় এবং সুবহে সাদিক দেখে অভ্যস্ত না হওয়ায় বিষয়টি দুর্বোধ্য মনে হলে সেক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হলো, আপনি প্রচলিত সাহরির শেষ সময়ের মধ্যেই খানা খাওয়া শেষ করবেন। তবে ফজরের নামাজের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচলিত শেষ সময়ের দশ মিনিট পর না পড়ে ন্যূনতম আধা ঘণ্টা পর নামাজ পড়বেন। তাহলে রোজা ও নামাজ দুটোই নিশ্চিতভাবে আদায় হবে।
মোটকথা, ইফতারির সময় নিয়ে গড়িমসি না করে স্বচক্ষে সূর্যাস্ত দেখে ইফতার করা। এটা খুবই স্পষ্ট একটি বিষয়। আর সুবহে সাদিক বুঝতে পারলে সে অনুসারে সাহরি ও ফজরের নামাজ আদায় করা। আর সুবহে সাদিক দেখে অভ্যস্ত না হওয়ায় এটা মুশকিল মনে হলে খাওয়া প্রচলিত সময়ের মধ্যেই শেষ করে নামাজ দেরিতে আদায় করা। যেন নামাজ ও রোজা দুটোই সহিহ হয়। কুরআন, হাদিস ও আসারের আলোকে এ ব্যাপারে শীঘ্রই বিস্তারিত আর্টিকেল নিয়ে আসছি ইনশাআল্লাহ।
সংগৃহীত
আমাদের বর্তমান প্রজন্ম সম্ভবত সুবহে সাদিক ও সূর্যাস্ত দেখে রোজা ও ইফতারি শুরুর বিষয়টি ভুলেই গেছে। অথচ এটা ছিল মুতাওয়ারিস একটি সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ সা.-এর সময় থেকে এভাবেই চলে আসছে রোজা শুরু ও শেষের সময় নির্ধারণ। কিন্তু ক্যালেন্ডার, গ্রিনিচ টাইম, জোতির্বিজ্ঞানের ১৫ ডিগ্রী, ১৮ ডিগ্রীর হিসাব ইত্যাদির মারপ্যাঁচে এ সুন্নাহটি আমাদের থেকে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনও কিছু বিদগ্ধ আলিম আছেন, যারা এ সুন্নাহ অনুযায়ী আমল এখনও বহাল রেখেছেন।
আজ বেশি দালিলিক আলোচনায় যাচ্ছি না। শুধু মোটাদাগে কয়েকটি ইঙ্গিত দিয়ে যাব। বিস্তারিতভাবে প্রামাণ্য আর্টিকেলের কাজ চলছে। শীঘ্রই সেটা প্রকাশ করব ইনশাআল্লাহ। বস্তুত আমাদের সতর্কবার্তার কারণ হলো, মুতাওয়ারিস এ সুন্নাহকে পরিত্যাগ করার কারণে আমরা অতিরিক্ত আরও দুটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এক হলো, ইফতার দেরিতে হওয়া। আমি একবার, দুবার নয়; অসংখ্যবার চাক্ষুষ দেখেছি যে, ইফতারির প্রচলিত সময়ের প্রায় দশ থেকে পনেরো মিনিট আগে সূর্য ডুবে যায়। গতপরশুও দেখেছি এবং আমার এক সহপাঠীকে ডেকে তা দেখিয়েছি। অবিশ্বাস করলে আপনি নিজেও কয়েকদিন যাচাই করে দেখতে পারেন। এ হিসেবে ইফতারি আমাদের বেশ দেরিতেই হয়ে থাকে, যা হাদিসের ভাষ্যনুসারে নিষিদ্ধ কাজ এবং এটাকে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে। দ্বিতীয় হলো, ফজরের নামাজ। আমাদের দেখামতে বর্তমানের প্রচলিত সাহরির শেষ সময়ের তুলনায় আরও পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর সুবহে সাদিক হয়। এটাও অনেকবার একাধিক জায়গায় গিয়ে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। সুতরাং এ হিসেবে রোজা সহিহ হলেও যারা এর দশ মিনিট পরেই ফজরের নামাজ পড়ে ফেলে তাদের নামাজ হয় সুবহে কাজিবের সময়ে। এটা বুঝতে হলে আপনাকে গ্রামে যেতে হবে। নতুনদের জন্য প্রথম প্রথম শহরে অবস্থান করে সুবহে সাদিকের সময় বোঝা একটু মুশকিল হতে পারে।
বাকি থেকে যায়, বিজ্ঞানের হিসাব। তো এখানে রাসুল সা.-এর ওই কথাটি স্মরণ করুন, যা বুখারির বর্ণনায় এসেছে যে, "আমরা হলাম নিরক্ষর জাতি। আমরা হিসাব-কিতাব করে মাস-সময় নির্ধারণ করি না।" এজন্যই ফুকাহায়ে কিরাম জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথার ওপর ভিত্তি করে শরিয়ার ইবাদতসংক্রান্ত কোনো ফয়সালা করাকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। এসব ক্ষেত্রে হিসাব-কিতাব হবে স্বচক্ষে দেখার মাধ্যমে। সীমার মধ্যে থাকলে ক্যালেন্ডার, ঘড়ি ইত্যাদির সাহায্যও নেওয়া যাবে। কিন্তু শরিয়ার অন্য মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে, কিংবা কোথাও সাংঘর্ষিক হলে সেক্ষেত্রে সেটার ওপর আমল করা ঠিক হবে না।
এখন কথা হলো, আমাদের কী করা উচিত! এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হলো, আপনি সরাসরি সূর্যাস্ত দেখে ইফতার করবেন। মেঘ বা পাহাড় বা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে কখনো সূর্যাস্ত না দেখতে পারলে সেক্ষেত্রে জন্নে গালিব বা প্রবল ধারণার ওপর ভিত্তি করে ইফতার করা যাবে। সূর্যাস্ত না দেখা যাওয়ায় সূর্যাস্তের ব্যাপারে বেশি সন্দেহ থাকলে ক্যালেন্ডারের টাইমের ওপরও নির্ভর করার সুযোগ আছে। কেননা, ক্যালেন্ডারের টাইম প্রকৃত হিসেবে সূর্যাস্তের অনেক পরে হওয়ায় তখন সূর্য নিশ্চিতই ডুবে যায়। আর সুবহে সাদিকের বিষয়টি যদি আপনি বুঝতে পারেন, তাহলে ক্যালেন্ডারের হিসাব দেখার কোনোই প্রয়োজন নেই। আর নতুন হওয়ায় এবং সুবহে সাদিক দেখে অভ্যস্ত না হওয়ায় বিষয়টি দুর্বোধ্য মনে হলে সেক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হলো, আপনি প্রচলিত সাহরির শেষ সময়ের মধ্যেই খানা খাওয়া শেষ করবেন। তবে ফজরের নামাজের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচলিত শেষ সময়ের দশ মিনিট পর না পড়ে ন্যূনতম আধা ঘণ্টা পর নামাজ পড়বেন। তাহলে রোজা ও নামাজ দুটোই নিশ্চিতভাবে আদায় হবে।
মোটকথা, ইফতারির সময় নিয়ে গড়িমসি না করে স্বচক্ষে সূর্যাস্ত দেখে ইফতার করা। এটা খুবই স্পষ্ট একটি বিষয়। আর সুবহে সাদিক বুঝতে পারলে সে অনুসারে সাহরি ও ফজরের নামাজ আদায় করা। আর সুবহে সাদিক দেখে অভ্যস্ত না হওয়ায় এটা মুশকিল মনে হলে খাওয়া প্রচলিত সময়ের মধ্যেই শেষ করে নামাজ দেরিতে আদায় করা। যেন নামাজ ও রোজা দুটোই সহিহ হয়। কুরআন, হাদিস ও আসারের আলোকে এ ব্যাপারে শীঘ্রই বিস্তারিত আর্টিকেল নিয়ে আসছি ইনশাআল্লাহ।
সংগৃহীত
Comment