প্রশ্ন- জিহাদ কয় প্রকার? কুরআন সুন্নাহয় এর দলীল কি? এর স্বপক্ষে আকলী-যুক্তিগত দলীল কি?
উত্তর:
জিহাদ দুই প্রকার:
এক. ইকদামি তথা আক্রমণাত্ম জিহাদ; দুই. দিফায়ি তথা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ।
ইকদামি জিহাদ
ইকদামি জিহাদ করা হয় কাফেরদের দেশে গিয়ে। এর উদ্দেশ্য হল, কাফেরদের শক্তি-সামর্থ্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তি চূর্ণ করে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করা। ইসলামের প্রতাপ ও সৌন্দর্য তাদের সামনে তুলে ধরা, যাতে তারা অনায়াসে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য লাভে ধন্য হয়। তা না হলে জিযিয়া প্রদান করত দারুল ইসলামে মুসলমানদের অধীনস্থ যিম্মি হয়ে বসবাস করতে বাধ্য হয়।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
“অত:পর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা করা এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে তারা যদি তাওবা করে – মুসলমান হয়ে যায় – এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”- তাওবা ৫
আরো ইরশাদ করেন,
“হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। আর তারা যেন তোমাদের মাঝে কঠোরতা দেখতে পায়।”- তাওবা ১২৩
আরো ইরশাদ করেন,
“তোমরা কিতাল কর আহলে কিতাবের সেসব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম করে না এবং সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিযিয়া প্রদান করে।”- তাওবা ২৯
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ইকদামি জিহাদের বিধান
ইকদামি জিহাদ ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক মুসলমান আদায় করলে বাকিদের থেকে এর দায়িত্ব রহিত হয়ে যাবে। আর কেউই আদায় না করলে সকলেই গুনাহগার হবে। প্রত্যেক বছর একবার/দু’বার অভিযান চালানো ফরয। একবারও না করলে গুনাহগার হবে।
কুরআনে কারীমে এর দলীল: আল্লাহ তাআলার বাণী,
“যে সকল মুমিন কোনও ওজর না থাকা সত্বেও (যুদ্ধে যোগদান না করে ঘরে) বসে থাকে, তারা ও আল্লাহর পথে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদকারীগণ সমান নয়। যারা নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তবে তাদের উভয়কেই আল্লাহ তাআলা উত্তম পুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। কিন্তু যারা বসে থাকে, তাদের তুলনায় মুজাহিদগণকে আল্লাহ তাআলা মহা প্রতিদানে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।”- সূরা নিসা ৯৫
যারা জিহাদ করবে আর যারা না করবে তাদের উভয়কেই আল্লাহ তাআলা উত্তম পুরস্কার দান করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। তাহলে যারা জিহাদ না করবে তারা কোন শাস্তির সম্মুখীন তো হবেই না, বরং নিজ নিজ নেক আমলের বদৌলতে উত্তম পুরস্কার পাবে। বুঝা গেল, স্বাভাবিক অবস্থায় জিহাদ সকলের উপর ফরযে আইন নয়। যদি ফরযে আইন হতো, তাহলে না করার কোন সুযোগ থাকতো না।
দ্বিতীয়ত আল্লাহ তাআলার বাণী,
আল্লাহ তাআলা কিছু সংখ্যক লোককে জিহাদে যেতে বলেছেন, সকলেই চলে যেতে বারণ করেছেন। বুঝা গেল, সকলের উপর ফরয নয়।
হাদিস থেকে এর দলীল: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরত। অনেক সময় তিনি নিজে জিহাদে বের হতেন, আবার অনেক সময় সারিয়্যা পাঠাতেন, নিজে মদীনায় অবস্থান করতেন। যদি সর্বাবস্থায় জিহাদ ফরযে আইন হতো, তাহলে কখনোও তিনি পিছনে থেকে যেতেন না।
আকলী-যুক্তিগত দলীল
সকলে জিহাদে চলে গেলে দুনিয়াবি বিষয়াশয় বিনষ্টের সম্মুখীন হবে। নারী-শিশু ও দুর্বলদের দেখাশুনা করার কেউ থাকবে না। এমনকি জিহাদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করার মতোও কেউ থাকবে না। অথচ জিহাদের মতো এগুলোও ফরয। এজন্য কেউ জিহাদে যাবে আর কেউ অন্য কাজ করবে। অন্যথায় দ্বীন-দুনিয়া সবই বিনষ্ট হয়ে যাবে।
দিফায়ি জিহাদ
দিফা অর্থ প্রতিরোধ করা। মুসলিমদের জান, মাল, ইজ্জত-আব্রু, ভূমি বা দ্বীন-ধর্ম আগ্রাসনের শিকার হলে প্রতিহত করা ফরয। এ জিহাদকে দিফায়ি তথা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ বলে।
দিফায়ি জিহাদের বিধান
দিফায়ি জিহাদ ফরযে আইন। ফরযে আইন অর্থ সকলকেই শরীক হতে হবে। কেউ পিছিয়ে থাকতে পারবে না- যেমন, নামায রোযা। তবে প্রথমত সকলের উপর ফরযে আইন নয়। যাদের উপর আক্রমণ হয়েছে, তাদের উপর ফরযে আইন। তারা যদি না পারে বা না করে তাহলে পার্শ্ববর্তীদের উপর বর্তাবে। এভাবে বিস্তৃত হতে হতে এক সময় সমগ্র দুনিয়াব্যাপী ফরযে আইন হয়ে যায়।
কুরআনে কারীম থেকে এর দলীল-
ক. আল্লাহ তায়ালার বাণী,
হালকা-ভারী সর্বাবস্থায় জিহাদে বের হতে বলা হয়েছে। বের না হলে আযাব দেবেন বলেছেন। অথচ আমরা দেখেছি যে, জিহাদ সকলের উপর ফরয নয়। বুঝা গেল, এ আয়াত বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন শত্রু আগ্রাসন চালায় এবং সকলে জিহাদে বের হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। এছাড়াও আরো বিভিন্ন আয়াত রয়েছে।
হাদিস থেকে এর দলীল- উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ। কাফেররা মদীনায় আগ্রাসন চালালে তা প্রতিহত করা ফরয ছিল। এ জন্যই যেসব মুনাফিক বাহানা তুলে সরে পড়তে চেয়েছিল, আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল তাদের সমালোচনা করেছেন।
আকলী-যুক্তিগত দলীল
এ সময় যেহেতু সকলে শরীক হওয়া ছাড়া প্রতিরোধ সম্ভব নয়, তাই সকলেকে শরীক হতে হবে। অন্যান্য ফরযের তুলনায় এ ফরয তখন অগ্রগামি। কেননা, অন্যান্য ফরয পরেও আদায় করা যাবে। কিন্তু এ মূহুর্তে প্রতিরোধ ছেড়ে দিলে মুসলমানদের দ্বীন-দুনিয়া উভয়ই বরবাদ হবে। ওয়াল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলা আ’লাম।
pdf: https://archive.org/download/jihader...r%20prokar.pdf
উত্তর:
এক. ইকদামি তথা আক্রমণাত্ম জিহাদ; দুই. দিফায়ি তথা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ।
ইকদামি জিহাদ
ইকদামি জিহাদ করা হয় কাফেরদের দেশে গিয়ে। এর উদ্দেশ্য হল, কাফেরদের শক্তি-সামর্থ্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তি চূর্ণ করে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করা। ইসলামের প্রতাপ ও সৌন্দর্য তাদের সামনে তুলে ধরা, যাতে তারা অনায়াসে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য লাভে ধন্য হয়। তা না হলে জিযিয়া প্রদান করত দারুল ইসলামে মুসলমানদের অধীনস্থ যিম্মি হয়ে বসবাস করতে বাধ্য হয়।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
فَإِذَا انْسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“অত:পর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা করা এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে তারা যদি তাওবা করে – মুসলমান হয়ে যায় – এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”- তাওবা ৫
আরো ইরশাদ করেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُمْ مِنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً
“হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। আর তারা যেন তোমাদের মাঝে কঠোরতা দেখতে পায়।”- তাওবা ১২৩
আরো ইরশাদ করেন,
قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ
“তোমরা কিতাল কর আহলে কিতাবের সেসব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম করে না এবং সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিযিয়া প্রদান করে।”- তাওবা ২৯
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة
“আমি ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা এই স্বাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে।”- সহীহ বুখারী ২৫ইকদামি জিহাদের বিধান
ইকদামি জিহাদ ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক মুসলমান আদায় করলে বাকিদের থেকে এর দায়িত্ব রহিত হয়ে যাবে। আর কেউই আদায় না করলে সকলেই গুনাহগার হবে। প্রত্যেক বছর একবার/দু’বার অভিযান চালানো ফরয। একবারও না করলে গুনাহগার হবে।
কুরআনে কারীমে এর দলীল: আল্লাহ তাআলার বাণী,
لَا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَفَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا
“যে সকল মুমিন কোনও ওজর না থাকা সত্বেও (যুদ্ধে যোগদান না করে ঘরে) বসে থাকে, তারা ও আল্লাহর পথে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদকারীগণ সমান নয়। যারা নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তবে তাদের উভয়কেই আল্লাহ তাআলা উত্তম পুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। কিন্তু যারা বসে থাকে, তাদের তুলনায় মুজাহিদগণকে আল্লাহ তাআলা মহা প্রতিদানে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।”- সূরা নিসা ৯৫
যারা জিহাদ করবে আর যারা না করবে তাদের উভয়কেই আল্লাহ তাআলা উত্তম পুরস্কার দান করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। তাহলে যারা জিহাদ না করবে তারা কোন শাস্তির সম্মুখীন তো হবেই না, বরং নিজ নিজ নেক আমলের বদৌলতে উত্তম পুরস্কার পাবে। বুঝা গেল, স্বাভাবিক অবস্থায় জিহাদ সকলের উপর ফরযে আইন নয়। যদি ফরযে আইন হতো, তাহলে না করার কোন সুযোগ থাকতো না।
দ্বিতীয়ত আল্লাহ তাআলার বাণী,
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ
“মুসলিমদের সকলে এক সঙ্গে (জিহাদে) বেরিয়ে পড়া উচিৎ নয়। তারা এমন করলো না কেন যে, তাদের প্রত্যেক দল থেকে কিছু কিছু লোক বের হতো?” -সূরা তাওবা ১২২আল্লাহ তাআলা কিছু সংখ্যক লোককে জিহাদে যেতে বলেছেন, সকলেই চলে যেতে বারণ করেছেন। বুঝা গেল, সকলের উপর ফরয নয়।
হাদিস থেকে এর দলীল: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরত। অনেক সময় তিনি নিজে জিহাদে বের হতেন, আবার অনেক সময় সারিয়্যা পাঠাতেন, নিজে মদীনায় অবস্থান করতেন। যদি সর্বাবস্থায় জিহাদ ফরযে আইন হতো, তাহলে কখনোও তিনি পিছনে থেকে যেতেন না।
আকলী-যুক্তিগত দলীল
সকলে জিহাদে চলে গেলে দুনিয়াবি বিষয়াশয় বিনষ্টের সম্মুখীন হবে। নারী-শিশু ও দুর্বলদের দেখাশুনা করার কেউ থাকবে না। এমনকি জিহাদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করার মতোও কেউ থাকবে না। অথচ জিহাদের মতো এগুলোও ফরয। এজন্য কেউ জিহাদে যাবে আর কেউ অন্য কাজ করবে। অন্যথায় দ্বীন-দুনিয়া সবই বিনষ্ট হয়ে যাবে।
দিফায়ি জিহাদ
দিফা অর্থ প্রতিরোধ করা। মুসলিমদের জান, মাল, ইজ্জত-আব্রু, ভূমি বা দ্বীন-ধর্ম আগ্রাসনের শিকার হলে প্রতিহত করা ফরয। এ জিহাদকে দিফায়ি তথা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ বলে।
দিফায়ি জিহাদের বিধান
দিফায়ি জিহাদ ফরযে আইন। ফরযে আইন অর্থ সকলকেই শরীক হতে হবে। কেউ পিছিয়ে থাকতে পারবে না- যেমন, নামায রোযা। তবে প্রথমত সকলের উপর ফরযে আইন নয়। যাদের উপর আক্রমণ হয়েছে, তাদের উপর ফরযে আইন। তারা যদি না পারে বা না করে তাহলে পার্শ্ববর্তীদের উপর বর্তাবে। এভাবে বিস্তৃত হতে হতে এক সময় সমগ্র দুনিয়াব্যাপী ফরযে আইন হয়ে যায়।
কুরআনে কারীম থেকে এর দলীল-
ক. আল্লাহ তায়ালার বাণী,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ (38) إِلَّا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (39) إِلَّا تَنْصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا فَأَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ (40) انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (41). التوبة
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হল, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হও, তখন তোমরা যমীনের দিকে প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। যদি তোমরা জিহাদে বের না হও, তিনি তোমাদের বেদনাদায়ক আযাব দেবেন এবং তোমাদের পরিবর্তে অন্য সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন। তোমরা তাঁর কিছুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। বস্তুত আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছেন, যখন কাফেররা তাঁকে বের করে দিয়েছিল; যখন তিনি ছিলেন দু’জনের দ্বিতীয় জন। যখন তাঁরা উভয়ে পাহাড়ের একটি গুহায় অবস্থান করছিলেন। যখন তিনি তাঁর সঙ্গীকে বললেন, ‘তুমি পেরেশান হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন’। অতঃপর আল্লাহ তাঁর উপর তাঁর পক্ষ থেকে প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাঁকে এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা সাহায্য করলেন, যাদেরকে তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফেরদের বাণী অতি নিচু করে দিলেন। আর আল্লাহর বাণীই সুউচ্চ। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান। তোমরা হালকা ও ভারী যে অবস্থায়ই থাক, জিহাদে বের হও এবং তোমাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জান।” -তাওবা: ৩৮-৪১হালকা-ভারী সর্বাবস্থায় জিহাদে বের হতে বলা হয়েছে। বের না হলে আযাব দেবেন বলেছেন। অথচ আমরা দেখেছি যে, জিহাদ সকলের উপর ফরয নয়। বুঝা গেল, এ আয়াত বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন শত্রু আগ্রাসন চালায় এবং সকলে জিহাদে বের হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। এছাড়াও আরো বিভিন্ন আয়াত রয়েছে।
হাদিস থেকে এর দলীল- উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ। কাফেররা মদীনায় আগ্রাসন চালালে তা প্রতিহত করা ফরয ছিল। এ জন্যই যেসব মুনাফিক বাহানা তুলে সরে পড়তে চেয়েছিল, আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল তাদের সমালোচনা করেছেন।
আকলী-যুক্তিগত দলীল
এ সময় যেহেতু সকলে শরীক হওয়া ছাড়া প্রতিরোধ সম্ভব নয়, তাই সকলেকে শরীক হতে হবে। অন্যান্য ফরযের তুলনায় এ ফরয তখন অগ্রগামি। কেননা, অন্যান্য ফরয পরেও আদায় করা যাবে। কিন্তু এ মূহুর্তে প্রতিরোধ ছেড়ে দিলে মুসলমানদের দ্বীন-দুনিয়া উভয়ই বরবাদ হবে। ওয়াল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলা আ’লাম।
pdf: https://archive.org/download/jihader...r%20prokar.pdf
Comment