[লেখাটি এক ভাই পাঠিয়েছেন। উনি পাবলিশ করার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না।তাই মূল লেখার এতো পরে এটি পাঠকের মুখ দেখছে আল্লাহর রহমতে।আর না হয় লেখাটি অনেক আগে তৈরি]
[যারা আগে পড়েন নি,তারা উপরের লিংকে ঢুকে ভেতরের লেখাটা পড়ে নিলে নীচেরটুকু বোঝা যাবে।]
ইসলাম ও কুফুরির যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমুসলিমদের সহায়তার বিধান নিয়ে ইবনে তাইমিয়ার ওপর আরোপিত অপবাদের দালিলিক খণ্ডন
হামদ ও সালাতের পর........
10 পর্বে রচিত ওস্তাদতুল্য বড় ভাইয়ের "তাওয়াল্লিল কুফফার" (কুফুরি শক্তিকে সহায়তার বিধান) বিষয়ক লেখাটার আঁচ পাঠক মাত্রই অনুভব করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি 'র ফতোয়া সংক্রান্ত পর্বটি পড়ার আগ পর্যন্ত চিন্তা একভাবে কাজ করছিল। হঠাৎ যখন শাইখের বক্তব্য দিয়ে তিনি (নিজ ধারণায়) প্রমাণ করে ফেললেন যে, সহায়তার বিধান সাধারণভাবে ঈমান ভেঙে যাওয়া নয়, তখন আমার মতো অনেককেই হয়তো বড় রকমের ধাক্কা সামাল দিতে হয়েছে। সত্যি! ভাইয়ের মেধার তারিফ না করলেই নয়!!
এই লেখায় আল্লাহর তৌফিক হলে আমরা সংক্ষেপে দেখানোর চেষ্টা করবো, বড় ভাই যেটা চাচ্ছেন, শাইখুল ইসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি'র ফতোয়া থেকে কখনোই সেটা প্রমাণিত হয়না।
ইবনে তাইমিয়ার ফতোয়া সংক্রান্ত পর্বে শুরুতে বড় ভাই অন্য এক ভাইয়ের পোস্ট উল্লেখ করেছেন। বড় ভাইয়ের নিজস্ব প্রথম বক্তব্যে তিনি বলছেন —ইবনে তাইমিয়ার কোন বক্তব্যই নাকি তাওয়াল্লিল কুফফার ঈমান ভঙ্গকারী হওয়ার পক্ষে দ্ব্যর্থহীন নয়। এই বক্তব্য প্রমাণিত করার জন্য তিনি যেটা করেছেন— রিদ্দা'র পক্ষে ইবনে তাইমিয়ার ফতোয়ার অপব্যাখ্যা করেছেন। কেমন করে? আসুন! সেটাই আমরা দেখি—
★ আমরা সবাই জানি, এ প্রসঙ্গে ইবনে তাইমিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়াগুলোর অন্যতম হচ্ছে—
فمن قفز عنهم إلى التتار كان أحق بالقتال من كثير من التتار ; فإن التتار فيهم المكره وغير المكره وقد استقرت السنة بأن عقوبة المرتد أعظم من عقوبة الكافر الأصلي من وجوه متعددة . منها أن المرتد يقتل بكل حال ولا يضرب عليه جزية ولا تعقد له ذمة ; بخلاف الكافر الأصلي . ومنها أن المرتد يقتل وإن كان عاجزا عن القتال
বড় ভাই এটা মানতে রাজি নন। তাঁর দাবি, শাইখের পরবর্তী এ এবারত, (প্রয়োজন না থাকার কারণে যা সাধারণত উল্লেখ করা হয় না) পূর্বের ইবারতে হাকিকী রিদ্দা'র সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছে। এখানে আমরা তাকে বলব, বাস্তবতা হলো, রিদ্দার পক্ষে শায়েখের ফতোয়া অবশ্যই দ্ব্যর্থহীন।বরঞ্চ যে এবারত উল্লেখ না করার কারণে আপনি ইলমি খেয়ানতের কথা বলেছেন —আপনার সেই পরবর্তী এবারতই দ্ব্যর্থবোধক। পরবর্তী এই এবারত কখনই দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে না "তাওয়াল্লিল কুফফার" হাকিকি রিদ্দা নয়। আর আপনি যেটা বলেছেন —উসূলে দ্বীন সম্পর্কে সামান্য ধারণা আছে, এমন যে কেউ রিদ্দার এই তাকসিম (প্রকারভেদ) সম্পর্কে অবগত— এটা আপনার অন্তঃসারশূন্য দাবী মাত্র।এত গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্টে নিজস্ব এজতেহাদ ছাড়া আর একটাও দলিল আনেননি। কৌশলে কথার মারপ্যাঁচে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন।
আচ্ছা আপনারাই বলুন তো ছোট কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিকে কি কাফের বলা যাবে?এই যুক্তি দেখিয়ে যে, সে ছোট কাফের? এমন কোন পরিভাষা কি উলামায়ে ইসলাম থেকে পাওয়া যায়?? কাফের বললেই বোঝা যাবে, বড় কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তি। এখন তার সেই কুফুরি বিভিন্ন পর্যায়ের হতে পারে। আবু জাহেল এবং আবু তালেবের কুফুরি নিশ্চয়ই এক পর্যায়ের না। একইভাবে উপরোক্ত বক্তব্য শাইখুল ইসলাম কিন্তু মুরতাদ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তার অর্থ হল হাকিকী রিদ্দায় লিপ্ত ব্যক্তি।
এখানে একটু বলি, শায়েখের পরবর্তী ওই এবারতকে দুরভিসন্ধি নিয়ে দেখলে তাতে تقسيم الردة এর একটা ইহতেমাল (সম্ভাবনা) আছে, সেটা মানতেই হবে। কিন্তু এখান থেকে বড় ভাই রিদ্দা'র প্রকার বের করে নিজের মতামত বসাবেন, শাইখুল ইসলাম এমনটি জানলে হয়তো এবারত অন্যভাবে আনতেন।
পাঠক গভীরভাবে আমার বক্তব্যের দলিলগুলো লক্ষ করুন:
এখানে ردة عن اصل الدين কথাটা بيان الحال (অবস্থার বিবরণ) ,قيد المقال (প্রকার বিভাজন) নয়। আমার এই বক্তব্যকে সমর্থন করবে শাইখের বিভিন্ন ইবারত। সেসব জায়গায় তিনি স্পষ্ট কুফুরকে তা'বির করেছেন عدم التزام شرائع الاسلام দ্বারা।
উদাহরণস্বরূপ:
★তাতারীদের কালিমা উচ্চারণকে ব্যক্ত করেছেন مجرد الاعتصام بالاسلام দ্বারা (মাজমুউল ফাতাওয়া- 28/5০2)এবং মানবরচিত সংবিধানের অনুসরণকে ব্যক্ত করেছেন "হাত্তা ইয়ালতাযিমু শারাই'আহু" দ্বারা (28 /505—মাজমুউল ফাতাওয়া)
★ নুসাইরিদের একটি গ্রুপ, যারা এক ব্যক্তিকে নিজেদের নেতা বানিয়েছিল। এদের কেউ কেউ তাকে ইলাহ মনে করত, কেউ কেউ নবী, কেউ কেউ তাকে সেজদা করার কথা বলতো, তাদের সম্পর্কে শায়েখকে জিজ্ঞেস করা হলে ইসলামের অন্যান্য রীতিনীতি মেনে নেয়ার পাশাপাশি এসমস্ত কুফুরি কর্মকাণ্ডে জড়ানোকে তিনি ব্যক্ত করেছেন حتى يلتزموا شرائع الاسلام দ্বারা (28 /553— মাজমুউল ফাতাওয়া) বলেননি- حتى يلتزموا اصل الدين
★বড় ভাইয়ের অনুকরণে বিশেষ পন্থায় একটা দলিলঃ তিনি বলেছেন, তার বক্তব্যের পক্ষে দলিল খোদ ইবারত। সেরকম করে আমরাও বলতে পারি, রিদ্দাহ'র মাঝে হুকুমগত কোন পার্থক্য যে নেই, সেটি বোঝার জন্য শায়েখের কিতাব থেকে খুব বেশি নয়, 28 নাম্বার খণ্ডের 500 থেকে 555 নং পৃষ্ঠা পর্যন্ত একটু দৃষ্টি বুলালেই ব্যাপারটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে। সাথে সাথে শাইখের দ্বিমুখী তা'বিরের রহস্যেরও কিনারা হয়ে যাবে।
শাইখের কিতাব পড়ে আমরা দেখতে পাই, ইসলামের তকমাধারী, সে যত বড় কুফুরই করুক না কেন, শায়খের ইবারতে সে مرتد عن بعض شرائع الاسلام
পক্ষান্তরে, কেউ যদি সরাসরি ইসলামের নামকে ত্যাগ করে বসে, তবে সে مرتد عن اصل الدين
আর ইতিহাসে এমন মুরতাদের সংখ্যা অতি নগণ্য।
# এবার আসি ভাইয়ের আরেকটা দলিল খণ্ডনে। 530 নং পৃষ্ঠার শেষে সাধারণত উল্লেখ করা হয় না এমন একটি ইবারত —
وفيهم من الردة عن شرائع الإسلام بقدر ما ارتد عنه من شرائع الإسلام.
এই ইবারত দ্বারাও ভাই তার পূর্বের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করতে চান। অথচ তা সম্ভব না। কারণ, আমি যদি বলি— في ابي طالب عم النبي صلى الله عليه وسلم من الكفر
بقدر ما كفر من عدم التلفظ بكلمة الاسلام وفي ابي جهل من الكفر بقدر ما كفر من عداوة النبي وغير ذلك
তবে আমারে ইবারত ভুল হবে না আশা করি। কিন্তু এই এবারত দিয়ে নিশ্চয়ই কেউ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে না যে, আবু তালিব জান্নাতি!!
এত নাটকীয়তা করে আমি এটাই বোঝাতে চাচ্ছি,শাইখুল ইসলাম রিদ্দা'র পরিমাণের কথা বলেছেন, তার অর্থ এই নয় যে, মূল রিদ্দা'র অনুপস্থিতি ঘোষণা করেছেন। একটা احتمال কে কেন صراحت মনে করা হয় আমাদের বুঝে আসেনা।
আল্লাহ তায়ালার বাণী :
//ان الذين امنوا ثم كفروا ثم امنوا ثم كفروا ثم ازدادوا كفرا ..الآية//
আর 534 নং পৃষ্ঠার শেষে এবং 535 নং পৃষ্ঠার শুরুতে শায়খ যেসব বলেছেন, সেটা হচ্ছে কুফুরের বিভিন্ন স্তর এর মান নির্ণয়। এর বেশি কিছু নয়।
কেউ যদি ভেবে থাকে, বড় ভাইয়ের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করার জন্য আমি উপরের এ কয়েকটা দলিল ছাড়া আর কিছুই পাইনি, তবে ভুল করা হবে। বরং শায়েখের উপর্যুপরি বক্তব্য বড় ভাইয়ের মতের বিপক্ষে যাবে। পারলে 28 নং খন্ডের এ-সংক্রান্ত পুরো আলোচনাটাই অনুবাদ করে দেই! কিন্তু সংক্ষিপ্ত এ পরিসরে সে কি আর সম্ভব?!
ভাইয়ের একটা দলিল ছিল 535 নং পৃষ্ঠার শেষ দিককার ইবারত—
فإنه لا ينضم إليهم طوعا من المظهرين للإسلام إلا منافق أو زنديق أو فاسق فاجر. ومن أخرجوه معهم مكرها فإنه يبعث على نيته. مجموع الفتاوى ٥٣٥/٢٨
তিনি বলতে চান, শাইখ এখানে ফাসেক বলে বোঝাচ্ছেন তাদের মূল ঈমান নষ্ট হবে না। হায়রে দলিল! কোথায় শাইখ বুঝিয়েছেন কাফের সহযোগিতার পূর্বাবস্থা আর সেটাকে তিনি ধরে নিয়েছেন সহায়তার হুকুম হিসেবে। এসব পণ্ডিতি নয়, যখন কেউ আবু হানিফা-ইবনে তাইমিয়া (রহঃ)দের পদাঙ্ক অনুসারী সত্যনিষ্ঠ কারাবন্দী আলেমদের কথা শুনে সত্যের পথে মানুষকে ডাকতে চায়, তখন তা হয়ে যায় আকাবিরের বুঝ বাদ দিয়ে নস নিয়ে পণ্ডিতি!!
এখানে শাইখুল ইসলাম সাধারণত কারা কারা তাতারীদের দিকে ঝুঁকেছে, তাদের অবস্থা বর্ণনা করছেন। তারা হচ্ছে ব্যক্তিগত জীবনে যারা জিন্দিক, মুনাফিক, কিংবা পাপাচারী মুসলমান ;যারা রাফেজী বাতেনী ও জাহমিয়াসহ বিভিন্ন ভ্রান্ত সম্প্রদায়ভুক্ত বেদাতি। সহায়তার পর তাদের কি হুকুম? সে সম্পর্কে শায়েখের এবারতে কিছু বলা নেই। সামান্য সম্ভাবনা
থাকতে পারে, তাই বলে এই নিয়ে এত আস্ফালন! আমরা জানি না কাদের স্বার্থে এসব হচ্ছে?!
আমার উপরোক্ত বক্তব্যের প্রমাণ মিলবে শাইখের 552নং পৃষ্ঠার এবারতে। এখানেও তিনি সহায়তাকারীদের অবস্থাটাই কেবল বর্ণনা করছেন, তবে হ্যাঁ যে সমস্ত এলেমের দাবিদার লোকেরা সেসময় তাতারীদেরকে সহায়তা করেছিল, শুধু তাদের ব্যাপারে অস্পষ্টভাবে এতোটুকু হুকুম লাগিয়েছেন যে, তারা পূর্বোক্ত শ্রেণীগুলোর চাইতেও নিকৃষ্ট। এর বেশি কিছু না।
ভাই এর সর্বশেষ দলিল ছিল:
রাফেযীদের ব্যাপকহারে তাতারি ও কাফের-সহায়তা সত্ত্বেও শাইখুল ইসলাম তাদের তাকফীর করেননি। এটাও নেহায়েত ঠুনকো যুক্তি। কারণ শায়খের এভাবে তাকফির না করাটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে, যা এখানে আলোচ্য নয়। এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন, শেখ আবু মোহাম্মদ মাকদিসী হাফিজাহুল্লাহ। শাইখ আব্দুল কাদের আব্দুল আজিজ রচিত الجامع في طلب العلم الشريف এর দ্বিতীয় খণ্ডের টিকা সংকলনগ্রন্থ النكت اللوامع في ملحوظات الجامع -তে শাইখ মাকদিসির এসংক্রান্ত পুরো আলোচনা আমি কপি করে দিচ্ছি—
(ص470) قال المصنف: (ومع ذلك فلم يقل أحد بتكفير الرافضة على التعيين) أهـ.
إن أراد عموم الشيعة وأن أحداً لم يكفّر جميعهم على التعيين، فصواب، إذ ليس كل شيعي ممن يتسمون اليوم بالشيعة، وحتى من يتسمى بالجعفرية أو الاثنيْ عشرية والإمامية، ليس جميعهم - خصوصاً عوامهم - يحملون عقيدة الرفض الكفرية، وإنما يحملها غلاتهم الذين اتفق الأئمة على تكفيرهم، فنحن لا نكفّر بالاسم والمذهب لمن كان ينتسب إلى القبلة، بل بحقيقة ما يعتقده أو يفعله أو يقوله من مكفرات نصَّ الشارع عليها.
والرافضة أصلاً لا يتسمّون بهذا الاسم، وإنما سمي أهل السنة بذلك من انتحل تلك العقائد الكفرية، فلا شك عندنا أنه كافر بعينه، إذ فيها ما لا يعذر الجاهل فيه مما هو صريح في الكفر، لا مساغ فيه للتأويل؛ كالقول بتحريف القرآن، ومصحف فاطمة الذي يزعمون أنه ثلاثة أضعاف مصحفنا، ما فيه من مصحفنا حرف، ورِدّة جميع الصحابة، إلا نفر يسير عندهم، وعِلْمُ أئمتهم للغيب، وتفضيلهم على الرسل والملائكة، وعقيدة الرجعة، والبداءة، وغير ذلك مما هو مناقض لصريح القرآن، مثبت في أوثق الكتب عندهم كالكافي للكليني وأمثاله.
এখানে যে বড় ভাই কতটা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন, তার ব্যাপারে সেটা কল্পনাও করা যায় না!! তিনি মাজমুউল ফাতাওয়া'র বিভিন্ন খণ্ড থেকে শাইখুল ইসলামের বক্তব্য কেটে কেটে এনে নিজ মতামত দাঁড় করাতে চেয়েছেন।
লক্ষ করে দেখুন, তিনি 28 নং খণ্ড থেকে 3 নং খণ্ডে গিয়েছেন।সেখান থেকে 18 এবং 22 নং খণ্ডে যাত্রা করেছেন। অথচ একেক খণ্ডে শাইখুল ইসলাম শিয়াদের একেকরকম দোষ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বড় ভাই শিয়াদের লঘু অন্যায়ের হুকুম একখণ্ড থেকে টেনে এনে অন্য খণ্ডে বর্ণিত গুরুতর অন্যায়ের হুকুম হিসাবে সেটাকে চালিয়ে দিয়েছেন। এত বড় খেয়ানত তার থেকে আমরা আশা করিনি।
আর উনার وجه الاستدلال মেনে নিলে বলতে হবে, "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর লজ্জাস্থান কাফের (!) আয়েশার সঙ্গে সহবাসের কারণে কিছুকাল জাহান্নামে জ্বলবে" (নাউজুবিল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক!!)'র মত জঘন্য আরও বহু কথা ও আকিদা কুফরি নয়।( মাজমুউল ফাতাওয়া- 28/ 481)
এ পর্যায়ে শায়খের একটা এবারতের কথা এখানে বলবো, (মাজমুউল ফাতাওয়া- 28 /518) খুলুন। পৃষ্ঠার শেষ দিকে শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন :
فكلام علي وغيره في الخوارج يقتضي أنهم ليسوا كفارا كالمرتدّين عن أصل الإسلام ،وهذا هو المنصوص عن الأئمة كأحمد وغيره،ليسوا مع ذلك حكمهم كحكم أهل الجمل و صفين،بل هم نوع ثالث،وهذا أصحّ الأقوال الثلاثة فيهم،
এ এবারত পড়ে আমি থমকে গিয়েছিলাম। কারণ বাহ্যত মনে হবে এই এবারত مرتد عن أصل الدين এবং مرتد عن بعض الشرائع এর মাঝে সর্বদিক থেকে পার্থক্য নির্দেশ করছে— যেমনটি বড় ভাইয়ের দাবি। কিন্তু যখন আবিষ্কার করলাম এই এবারতে সবচাইতে সুস্পষ্টভাবে বড় ভাইয়ের বিভ্রান্তির জবাব দেয়া হয়েছে,তখন হতবাক হয়ে যাই।লক্ষ্য করুন, 518 নং পৃষ্ঠায় উল্লেখিত বক্তব্যের কিছু আগে শাইখের বক্তব্যে আমরা দেখতে পাই যে, হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে যাকাতের অপব্যাখ্যাকারী এবং খারেজীদেরকে তাকফির করার ব্যাপারে ইমামদের মতভেদ রয়েছে। তো এই মতভেদটাকে যদি তাদের সঙ্গে যুদ্ধের নীতির ক্ষেত্রে মতভেদ না ধরা হয়, তাহলে বলতে হবে যে, যাকাত অস্বীকারকারীদের অস্বীকার এবং খারিজীদের এই আকিদা— নবীজী সাঃ এর ইন্তেকালের পর গুটি কয়েক সাহাবা ছাড়া বাকি সবাই মুরতাদ হয়ে গেছে; এজাতীয় আকিদা সাধারণভাবে ঈমান ভঙ্গের কারণ নয়। (খারেজী সম্প্রদায় এবং সিদ্দিকে আজমের যুগে যাকাত অস্বীকারকারীদের কর্মকাণ্ড সাধারণভাবে কুফুরী— তার প্রমাণ পেতে খুলুন আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি রচিত "ইকফারুল মুলহীদীন" -'র ২৪-৩১,৯১-৯৩,১০১ এ পৃষ্ঠাগুলো।)
অতএব বুঝা গেল ইবনে তাইমিয়ার 518 নং পৃষ্ঠা সহ আরো যেসব জায়গায় তিনি রিদ্দাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন,সেসব জায়গার বক্তব্য যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের সঙ্গে আচরণের প্রশ্নে। হুকুম গত কোন পার্থক্য তিনি নির্দেশ করেননি।আর আমরা তো দেখতেই পেলাম যে, যুদ্ধক্ষেত্রের ওই সমস্ত মাসালা ওলামায়ে ইসলামের মাঝে বিরোধপূর্ণ। দেখুন মাজমুউল— ফাতাওয়া -28 /558। নয়তো তিনি تولي الكفار কে যে বাকি সব ক্ষেত্রে মুত্বলাক্ব মুরতাদ মনে করতেন, তা দেখার জন্য খুলুন —মাজমুউল ফাতাওয়া- 28 /531(মানে'ঈনে যাকাত প্রসঙ্গে বক্তব্য)
এছাড়াও শাইখুল ইসলামের اقتضاء الصراط المستقيم
(1/221) এবং মাজমু আল ফাতাওয়া অপর এক খণ্ডে (৭/১৭) تولّي الكفار ঈমান ভঙ্গকারী হওয়ার পক্ষে বক্তব্য আছে।এসবের মধ্যে যে সমস্ত এবারতে قلب এর উল্লেখ আছে সেটা কখনো মুরজিয়া ভাবধারার পক্ষে দলিল হতে পারে না এর উল্লেখ নিতান্তই اتفاقي.
আলোচনার শেষে আমরা খোলাসা এই বলতে পারি, শাইখের ফতোয়া থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, কাফের সহায়তা সাধারণভাবেই ঈমান ভঙ্গকারী এবং এ পাপে লিপ্ত ব্যক্তি প্রকৃত মুরতাদ। যদিও দুনিয়াবী হুকুমের বেলায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে পটবিশেষে অপরাধ ভেদে সুনির্দিষ্ট করে হুকুম প্রয়োগে তাদের সঙ্গে নমনীয়তার ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। এ কারণেই খারিজীদেরকে শাইখুল ইসলাম তৃতীয় প্রকারে ফেলেছেন।
রয়ে গেল ভাইয়ের অন্যান্য পর্ব নিয়ে আলোচনা। সেগুলো নিয়ে সময়-সুযোগমতো পরবর্তীতে আলোচনা করা যাবে ইনশাআল্লাহ! এখন শুধু এতোটুকু বলে রাখি, কাফের সহায়তার হুকুম রিদ্দায়ে হাকীকী হওয়ার পক্ষে এত এত দলিল প্রমাণ রয়েছে যে, তার সামনে বড় ভাইয়ের অপ্রতুল কিছু উদ্ধৃতি কেমন যেন এক আকাশ স্বচ্ছতার মাঝে এক চিলতে কুয়াশা। বিশেষত শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য এ প্রসঙ্গে তো আছেই— যেমনটি পূর্বের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হলো। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সহীহ্ বুঝ দান করুন!
Comment