অনেকদিন আগে কোন এক ভাই নিচের লেখাটি চেয়ে পোষ্ট দিয়েছিলেন। সে সময় লেখাটি পাইনি। আজ পেয়ে পোষ্ট দিলাম।
সংশয়ঃ মুফতি তাকি উসমানির দারুল হারব-দারুল ইসলাম সংক্রান্ত সংশয়
মুফতি আব্দুল ওয়াহহাব (দা. বা.)
ডাউনলোড লিংক
PDF
https://archive.org/download/taqiusm...i%20usmani.pdf
https://www.mediafire.com/file/2k82v...smani.pdf/file
https://www.mediafire.com/file/2k82v...smani.pdf/file
WORD
দারুল ইসলাম ও দারুল হরবের মাসআলা ইসলামী শরীয়তের একটি বুনিয়াদি মাসআলা যার উপর আরো অসংখ্য মাসআলার ভিত্তি। ‘ফিকহ’ তথা ইসলামী আইন শাস্ত্রের সকল কিতাবেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর আলোচনা রয়েছে এবং এর উপর ভিত্তি করে অসংখ্য অগণিত মাসআলা বর্ণিত হয়েছে।
মুফতী শফী রহ. বলেন:
جو لوگ فقه اور فتاوى سے مناسبت ركھتے هیں ان پر يه بات مخفي نہیں كه تقريبا فقه كے تمام ابواب نماز، روزه، نكاح ، طلاق اور بالخصوص بيع وشراء، اجاره و ديگر معملات میں سيكڑو مسائل شرعيه دار الاسلام كے ليئے كچ هے اور دار الحرب كے ليئے دوسرا- اس ليئے اگر يوں كها جائے كه احكام شرعيه كا ايك بهت بڑا حصه اس پر موقوف هے كه ان پر عمل كرنے والے جس ملك میں آباد هے پهلے اسكا دار الاسلام يا دار الحرب هونا متعين كريں تو بالكل صحيح و دورست هے-
“যারা ফিকহ *ও ফতোয়ার সাথে সম্পর্ক রাখেন তাদের নিকট অস্পষ্ট নয় যে, নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত, বিবাহ-তালাক, বিশেষত : ক্রয়-বিক্রয় ও ইজারা এবং অন্যান্য মুআমালা সহ ফিকহের প্রায় সকল অধ্যায়ের অসংখ্য শরয়ী মাসআলা দারুল ইসলামে এক রকম, দারুল হরবে অন্য রকম।
এ কারণে যদি বলা হয়, “শরীয়তের আহকামের একটা বিশাল বড় অংশ এমন রয়েছে যেগুলোর উপর আমল করার জন্য প্রথমে বসবাসরত রাষ্ট্র কি দারুল ইসলাম না দারুল হরব তা নির্ণয় করে নেয়া পূর্বশর্ত” যদি এমন বলা হয় তাহলে তা সম্পূর্ণ সঠিক।”
[জাওয়াহিরুল ফিকহ: ৫/২০৫]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানী খেলাফতের পতনের পর নতুন করে এ মাসআলার আলোচনার প্র্রয়োজন পড়ে। কারণ কাফেররা বিশাল খেলাফতকে ভেঙে টুকরা টুকরা করে একেক অংশে নামধারী একেক মুসলমানকে শাসন ক্ষমতায় বসায়। তারা আল্লাহ তাআলার শরীয়ত প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে মানব রচিত কুফরী আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে থাকে। আর যারা আল্লাহ তাআলার শরীয়ত প্রত্যাখ্যান করে মানব রচিত কুফরী আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আইম্মায়ে কেরামের ইজমা-ঐক্যমতে তারা মুরতাদ। এ ব্যাপারে আইম্মায়ে কেরামের মাঝে কোন দ্বিমত নেই। নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরামের পর্যাপ্ত ফতোয়াও এ ব্যাপারে বিদ্যমান রয়েছে।
তদ্রুপ আইম্মায়ে কেরাম এ ব্যাপারেও একমত যে, ইসলামী শাসনাধীন কোন রাষ্ট্র কাফের বা মুরতাদরা দখল করে নিয়ে তাতে ইসলামী শাসন রহিত করে কুফরী তথা শরীয়ত বিরোধী শাসন চালু করে দিলে এবং মুসলমানরা তাদের থেকে তা উদ্ধার করে ইসলামী শাসন জারি করতে অক্ষম হয়ে পড়লে উক্ত রাষ্ট্র আর ‘দারুল ইসলাম’ তথা ইসলামী রাষ্ট্র থাকে না, বরং ‘দারুল কুফর’ তথা কুফরী রাষ্ট্র হয়ে যায়। এ ব্যাপারে আইম্মায়ে কেরামের মাঝে কোন দ্বিমত নেই।
এ হিসেবে বর্তমানে শরীয়ত বিরোধী কুফরী আইন দ্বারা শাসিত গণতান্ত্রিক মুসলিম রাষ্ট্রগুলো দারুল হরব। নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরামের অনেক লেখা এবং ফতোয়া এ ব্যাপারে বিদ্যমান রয়েছে।
কিন্তু বর্তমান উপমহাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম মুফতী তাকি উসমানী সাহেব দা.বা. এ উভয়টি বিষয়েই ভিন্নমত পোষণ করেন।
প্রথমতঃ তিনি কুফরী আইন দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনাকারী মুসলিম নামধারী মুরতাদ শাসকদেরকে মুরতাদ মানেন না।
দ্বিতীয়তঃ এদের ক্ষমতাধীন কুফরী আইন দ্বারা শাসিত গণতান্ত্রিক মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দারুল হরব মানেন না। বরং তিনি এ সবগুলো রাষ্ট্রকে ‘দারুল ইসলাম’ তথা ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ মনে করেন।
তাঁর এই দুই দাবির কারণে উপমহাদেশে (বিশেষত বাংলাদেশে যেখানে ওলামায়ে কেরামর বিশাল অংশ তাকি উসমানী সাহেব দা.বা. এর মতো ব্যক্তিদের অনুসরণ করে থাকেন) কী পরিমাণ বিভ্রান্তি যে ছড়াচ্ছে অস্পষ্ট নয়।
আপনি আজ ওলামায়ে কেরামের কাছে এই দুই মাসআলা আলোচনা করতে গেলে তাদের অনেকে শুধু এ কথাটাই বলবেন- তাকি উসমানী সাহেব দা.বা. তো এর বিপরীত বলেন! এমতাবস্থায় তাকি উসমানী সাহেব দা.বা. এর উক্ত দাবিদ্বয়ের দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা করে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নির্ধারণ করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই এ ব্যাপারে কলম ধরা। তাকি উসমানী সাহেব দা.বা. এর মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির সমালোচনা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি তার যোগ্যও নই। আর এত কোন ফায়েদাও নেই। তবে –
لكل جواد كبوة، ولكل صارم نبوة
[দ্রুতগামী অশ্ব কখনো মুখ থুবরে পড়ে এবং ধারালো চাপাতি কখনো ভোঁতা হয়ে যায়।]
অতএব, বড়দের ভুল হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আর ভুলকে ভুল হিসেবে ধরিয়ে দিয়ে উম্মাহকে তা থেকে রক্ষার পথ বাতলে দেয়াই প্রকৃত খায়ের খাহী। কিংবা অন্তত যদি আমার বুঝে না আসে তাহলে একজন তালিবে ইলম হিসেবে দাবির পক্ষে দলীলের আবেদন করার অধিকার নিশ্চয়ই আমার রয়েছে।
তবে আমি এ পুস্তিকাতে শাসকগোষ্ঠীর মুরতাদ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি না। তাকি উসমানী সাহেব দা.বা. এসব রাষ্ট্রকে দারুল ইসলাম দাবি করতে গিয়ে ফুকাহায়ে কেরামের যেসব বক্তব্যকে দলীল দলীল হিসেবে পেশ করেছেন সেগুলো পর্যালোচনা করাই এ পুস্তিকার মূল উদ্দেশ্য।
তাকি উসমানী সাহেব দা.বা. তাঁর “ইসলাম আওর সিয়াসী নজরিয়্যাত” নামক কিতাবে এসব রাষ্ট্রকে দারুল ইসলাম বলে দাবি করেছেন। তার এ দাবির পক্ষে তিনি হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট তিন জন ইমামের তিনটি উদ্ধৃতি এনেছেন।
১ম জনঃ শামসুল আইম্মা সারাখসী রহ. (মৃত্যুঃ ৪৯০ হি.)। যিনি ‘আল-মাবসূত’ এবং ‘শরহুস সিয়ারীল কাবীর’ এর প্রণেতা।
২য় জনঃ ‘জামিউর রুমুজ’ এর প্রণেতা আল্লামা কূহুসতানী রহ. (মৃত্যুঃ ৯৫০ হি.)।
৩য় জনঃ ‘ফাতাওয়া শামী’র প্রণেতা আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. (মৃত্যুঃ ১২৫২ হি.)।
তিনি এই তিন ইমামের উদ্ধৃতিত্রয় এনে বুঝাতে চাচ্ছেন-
[বর্তমান মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যেগুলোতে আল্লাহ তাআলার শরীয়ত কায়েম নেই, বরং সেসবের শাসকরা আল্লাহ তাআলার শরীয়তকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে মানব রচিত শরীয়ত বিরোধী কুফরী আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে সেগুলো সব ‘দারুল ইসলাম’ তথা ‘ইসলামী রাষ্ট্র’। আইন কি চলছে সেটা দেখার বিষয় নয়। আইন ইসলামী হোক কুফরী হোক সর্বাবস্থায়ই সেগুলো ‘দারুল ইসলাম’ তথা ইসলামী রাষ্ট্র।]
এই তিন ইমামের উদ্ধৃতিত্রয় এনে তিনি একথাও বুঝাতে চাচ্ছেন-
[এসব রাষ্ট্রকে দারুল ইসলাম তথা ইসলামী রাষ্ট্র বলা নিজস্ব মনগড়া কোন কথা নয়; বরং পূর্বসূরি ইমামগণের মতানুসারেই সেগুলো দারুল ইসলাম। তাঁদের কারো বক্তব্য থেকে তা অস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, আর কারো বক্তব্য থেকে তা সুস্পষ্টই বুঝা যায়।]
অর্থাৎ প্রথম দুইজন ইমাম শামসুল আইম্মা সারাখসী রহ. (মৃত্যুঃ ৪৯০) এবং আল্লামা কূহুসতানী রহ. (মৃত্যুঃ ৯৫০ হি.) এর বক্তব্য থেকে তা অস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। আর আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. (মৃত্যুঃ ১২৫২ হি.) এর বক্তব্য থেকে তা সুস্পষ্ট বুঝা যায়।
অথচ বাস্তবে এই তিন ইমামের কারো বক্তব্য থেকেই এসব রাষ্ট দারুল ইসলাম তথা ইসলামী রাষ্ট্র হওয়া বুঝা যায় বলে মনে হচ্ছে না। ইমামগণের বক্তব্যগুলোর পর্যালোচনা এবং সেগুলোর সঠিক প্রয়োগক্ষেত্র দেখার পর তাঁদের বক্তব্য অনুসারে এসব রাষ্ট্রকে দারুল ইসলাম বলার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
তাকি উসমানী সাহেব দা.বা. এর বক্তব্য এবং তার পর্যালোচনায় যাওয়ার পূর্বে বর্তমান কুফরী শাসনব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং কুফরী আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনাকারী শাসকরা মুরতাদ হওয়ার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য ওলামাদের কয়েকটা ফতোয়া উল্লেখ করবো।
***
কুফরী শাসনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
আল্লাহ তাআলার শরীয়ত প্রত্যাখ্যান করে কুফরী শাসন গ্রহণ করার ফিতনা এই উম্মতের মাঝে দুইবার দেখা গেছে।প্রথমবারঃতাতারীদের যামানায়।
দ্বিতীয়বারঃপ্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানী খেলাফেতের পরাজয়ের পর।
তাতারীদের যামানাঃ
তাতারীরা তুর্কি জাতি। তুর্কিস্তান সংলগ্ন চীনে ছিল তাদের বসবাস । দৈহিক ও সামরিক দিক থেকে তারা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী । সংখ্যায় ছিল অগণিত। তাদের পুরুষ মহিলা সকলেই যুদ্ধে পারদর্শী। প্রথমে তারা কাফের ছিল।
৬১৬ হিজরীর দিকে তারা মুসলিম বিশ্বে আক্রমণ চালায়। প্রথমে খাওয়ারিজম ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে হামলা চালায়। একে একে বুখারা, সমরকন্দ সহ মা ওরাউন নহর ও খোরাসানের দেশগুলো দখল করে নেয়।
৬৫৬ হিজরিতে তৎকালীন আব্বাসী খেলাফতের রাজধানী বাগদাদে প্রবেশ করে। খলীফার শীয়া উজির ইবনে আলক্বামীর প্ররোচনায় তারা খলীফাকে হত্যা করে। এরপর বাগদাদে প্রবেশ করে নজির বিহীন হত্যাযজ্ঞ চালায়।
তৎকালীন শামের অনেকাংশও তারা দখল করে নেয়। এভাবে ক্রমে ক্রমে ইসলামী খেলাফতের বিশাল অংশ তারা দখল করে নেয়।
তবে ইসলামী শাসনকে তারা অবলুপ্ত করেনি। মুসলমানদেরকে তারা শরীয়ত অনুযায়ী শাসন করার সুযোগ দেয়।
তবে তারা নিজেরা তাদের নেতা চেঙ্গিস খানের রচিত ‘ইয়াসিক’ নামক সংবিধান অনুযায়ী চলত। চেঙ্গিস খান তা বিভিন্ন ধর্মের নিয়ম নীতি এবং তার নিজস্ব চিন্তা ধারার সমন্বয়ে রচনা করেছিল। তাদের পারস্পরিক বিচার কার্য এই ‘ইয়াসিক’ দিয়েই চলত।
৬৮০হিজরিতে তাতারীরা মুসলমান হয়ে যায়। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের বিরোদ্ধে যুদ্ব অব্যাহত রাখে।
মুসলমান হওয়ার পরও তারা তাদের পূর্বের সংবিধান ‘ইয়াসিক’ অনুযায়ীই চলতে থাকে। রাষ্ট্রীয় সংবিধান আগের মতো ‘ইয়াসিক’ই রয়ে যায়।
∙ আল্লাহ তাআলার শরীয়ত বাদ দিয়ে কুফরী সংবিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করার কারণে তৎকালীন ওলামায়ে কেরাম তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেন।
∙ যারা ইসলামী আদালতে বিচারের জন্য না গিয়ে তাতারীদের আদালতে বিচারের জন্য যাবে ওলামায়ে কেরাম তাদেরকেও কাফের হয়ে যাবে বলে ফতোয়া দেন।
∙ যারা তাতারীদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করবে তারাও কাফের হয়ে গেছে বলে ফতোয়া দেন।
এদের মধ্যে প্রখ্যাত মুফাসসির, তাফসীরে ইবনে কাসীরের প্রণেতা হাফেয ইবনে কাসীর রহ. (মৃত্যু-৭৭৪হি.) এর ফতোয়া এবং ইবনে কাসীর রহ. এর উস্তাদ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (মৃত্যু-৭২৮হি.) এর ফতোয়া সর্বজন প্রসিদ্ধ।
হাফেয ইবনে কাসীর রহ. (মৃত্যু-৭৭৪হি.) এর ফতোয়াঃ
হাফেয ইবনে কাসীর রহ. এর এ ব্যাপারে দু’টি ফতোয়া রয়েছে।
একটি– তাফসীরে ইবনে কাসীরে সূরা মায়েদার ৫০ নং আয়াত-
أفحكم الجاهلية يبغون ومن أحسن من الله حكما لقوم يوقنون
“তারা কি জাহিলিয়্যাতের শাসন ব্যবস্থা কামনা করে! বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কে আছে?” এর ব্যাখ্যায়।
অপরটি – তাঁর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ তে ৬২৪ হিজরীর ইতিহাস লিখতে গিয়ে যেখানে চেঙ্গিস খানের আলোচনা এসেছে সেখানে।
চেঙ্গিস খান ৬২৪ হিজরিতে মারা যায়। এজন্য ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ তে তার প্রসঙ্গ ৬২৪ হিজরির আলোচনায় এসেছে।
প্রথম ফতোয়াঃ
أفحكم الجاهلية يبغون ومن أحسن من الله حكما لقوم يوقنون
“তারা কি জাহিলিয়্যাতের শাসন ব্যবস্থা কামনা করে! বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কে আছে?” [সূরা মায়েদা :৫০]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন:
ينكر تعالى على من خرج عن حكم الله المحكم المشتمل على كل خير الناهي عن كل شر وعدل إلى ما سواه من الآراء والاهواء والاصطلاحات التي وضعها الرجال بلا مستند من شريعة الله كما كان أهل الجاهلية يحكمون به من الضلالات والجهالات مما يضعونها بآرائهم وأهوائهم وكما يحكم به التتار من السياسات الملكية المأخوذة عن ملكهم جنكز خان الذي وضع لهم الياسق وهو عبارة عن كتاب مجموع من أحكام قد اقتبسها عن شرائع شتى من اليهودية والنصرانية والملة الاسلامية وغيرها. وفيها كثير من الاحكام أخذها من مجرد نظره وهواه فصارت في بنيه شرعا متبعا يقدمونها على الحكم بكتاب الله وسنة رسول الله – صلى الله عليه وسلم – فمن فعل ذلك فهو كافر يجب قتاله حتى يرجع إلى حكم الله ورسوله فلا يحكِّم سواه في قليل ولا كثير
“আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তির নিন্দা করছেন যে আল্লাহর দৃঢ় বিধানকে ছেড়ে দেয়। অথচ তা সকল কল্যাণকে সমন্বিত করে, সকল ক্ষতিকারক বস্তুকে নিষিদ্ধ করে। আল্লাহর বিধান ছেড়ে দিয়ে সে ফিরে যায় এমন কিছু মতামত, রীতিনীতি ও প্রথার দিকে, যা প্রণয়ন করেছে মানুষেরাই। আল্লাহর শরীয়াতের সাথে যার নেই কোন সম্পর্ক।
যেমনটা করতো জাহিলী যুগের মানুষেরা। তারা তাদের চিন্তা প্রসূত মতামত থেকে প্রণীত জাহিলী ভ্রান্ত বিধান দ্বারা ফয়সালা প্রদান করতো।
এবং যেমন তাতাররা তাদের ঐসব রাষ্ট্রীয় আইন কানুন দিয়ে বিচার ফয়সালা করছে, যা তারা গ্রহণ করেছে তাদের বাদশাহ চেঙ্গিস খান থেকে। যে চেঙ্গিস খান তাদের জন্য “ইয়াসিক” নামক সংবিধান প্রণয়ন করেছে।
ইয়াসিক হলো ইসলামী, নাসরানি, ইহুদীসহ বিভিন্ন শরীয়তের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংবিধান। তাতে এমন অনেক বিধানও আছে, যা সে শুধুমাত্র নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা থেকেই গ্রহণ করেছে। অত:পর তা তার অনুসারিদের নিকট পরিণত হয়েছে অনুসরণীয় একটি সংবিধানরূপে। একে তারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ অনুযায়ী ফায়সালা করার উপর অগ্রাদিকার দেয়।
যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে সে কাফের । তার বিরুদ্ধে কিতাল করা ওয়াজিব, যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিধানের দিকে ফিরে আসে, এবং কম হোক বেশি হোক কোন কিছুর ক্ষেত্রেই আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কিছুকে বিচারকরূপে গ্রহণ না করে।”
[তাফসীর ইবনে কাসীর, খন্ড:৩, পৃ: ১৩১]
একটি লক্ষ্যনীয় বিষয়ঃ আইন প্রণেতা এবং তার বাস্তবায়নকারী উভয়ই কাফেরঃ
ইবনে কাসীর রহ. যেসব তাতারীকে কাফের ফতোয়া দিয়েছিলেন তারা তাদের কুফরী সংবিধান ইয়াসিকের রচয়িতা ছিল না। ইয়াসিক রচনা করে ছিল তাতারীদের নেতা চেঙ্গিস খান, যে ৬২৪ হিজরিতে মারা যায়। আর ইবনে কাসীর রহ. ইন্তেকাল করেন ৭৭৪ হিজরিতে। তাঁর মাঝে এবং চেঙ্গিস খানের মাঝে দেড়শো বছরের ব্যবধান।
ইবনে কাসীর রহ. এর যামানার তাতারীরা কুফরী সংবিধান প্রণয়ন করেনি । পূর্বের সংবিধান অনুসরণ করে চলেছে মাত্র।
এ থেকে স্পষ্ট , কুফরী সংবিধানের প্রণেতারা যেমন কাফের, এর দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরাও তেমনি কাফের।
অতএব, আমাদের সমাজের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী যদি নিজেরা শরীয়ত বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন নাও করে তবুও পূর্বের কুফরী সংবিধান অনুসরণের কারণে তারা মুরতাদ।
যেমন, কুফর যারা আবিষ্কার করে আর যারা তাতে লিপ্ত হয় উভয়ই কাফের।
বিদআত যারা আবিষ্কার করে আর যারা তার অুনুসরণ করে উভয়ই বিদআতী। এখানে শাসকদের ক্ষেত্রেও তাই।
দ্বিতীয় ফতোয়াঃ
‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’ তে চেঙ্গিস খানের জীবনী আলোচনায় নমুনা স্বরুপ ইয়াসিকের কতগুলো শরীয়ত বিরোধী আইন উল্লেখ করার পর বলেন-
وفي كله مخالفة لشرائع الله المنزلة على عباده الأنبياء عليهم الصلاة والسلام، فمن ترك الشرع المحكم المنزل على محمد بن عبد الله خاتم الأنبياء وتحاكم إلى غيره من الشرائع المنسوخة كفر، فكيف بمن تحاكم إلى الياسا وقدمها عليه؟ من فعل ذلك كفر بإجماع المسلمين
“এই সবগুলোর মধ্যেই রয়েছে আল্লাহ তাআলার বান্দা নবীগণ – আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম – এর উপর আল্লাহ তায়ালার অবতীর্ণ শরীয়তের বিরোধিতা। যে ব্যক্তি সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ সুদৃঢ় শরীয়াতকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন রহিত শরীয়ত অনুযায়ী বিচারের জন্য যাবে সে কাফের হয়ে যাবে। তাহলে ঐ ব্যক্তির বিধান কী হতে পারে যে ইয়াসিক অনুযায়ী বিচার প্রার্থনা করে এবং তাকে শরীয়তের উপর অগ্রাধিকার দেয়? যে ব্যক্তি এমনটি করবে সে মুসলমানদের ইজমা-ঐকমতে কাফের হয়ে যাবে।”
[আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খন্ড:১৩, পৃষ্ঠা:১৩৯]
নির্দেশনাঃ বর্তমান সংবিধান ইয়াসিকের চেয়েও নিকৃষ্টঃ
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, তাতারদের ইয়াসিক নামক সংবিধানের চেয়ে বর্তমান সংবিধানগুলো আরো নিকৃষ্ট ও জঘন্য। কেননা ইয়াসিকের মাঝে তো অপরাধগুলোকে অপরাধ বলে স্বীকার করা হয়েছে এবং তার শাস্তিও বিধান করা হয়েছে, যদিও তা ছিল কুরআন সুন্নাহর বিপরীত। কিন্তু আমাদের বর্তমান সংবিধানগুলো তো অপরাধগুলোকে অপরাধ বলেই আখ্যায়িত করে না বরং অনেক অপরাধকে ভাল কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করে। ইয়াসিকের অনুসারীদের বিধানই যদি এই হয় তাহলে তার চেয়ে নিকৃষ্ট সংবিধানের অনুসারীদের বিধান কী হবে ?
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (মৃত্যু-৭২৮হি.) এর ফতোয়াঃ
যে সমস্ত ব্যক্তি মুসলমান ও তাতারদের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধে তাতারদের পক্ষ গ্রহণ করেছিল, তাদেরকে সাহায্য করেছিল – তাদের মুরতাদ হওয়ার ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) নিম্নোক্ত ফতোয়া প্রদান করেন:
وكل من قفز إليهم من أمراء العسكر وغير الامراء فحكمه حكمهم، وفيهم من الردة عن شرائع الإسلام بقدر ما ارتد عنه من شرائع الإسلام ، وإذ كان السلف قد سموا مانعي الزكاة مرتدين مع كونهم يصومون ويصلون ولم يكونوا يقاتلون جماعة المسلمين، فكيف بمن صار مع أعداء الله ورسوله قاتلاً للمسلمين؟؟
(الفتاوى الكبرى)
“সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্য থেকে অথবা অন্যদের মধ্য থেকে যে কেউ তাতারদের পক্ষ নিবে, তাতারদের বিধান ও তার বিধান একই বলে গণ্য হবে। চেঙ্গিস খান ইসলামী শরীয়াত থেকে যে পরিমাণ দূরে সরে গেছে তাদের মাঝেও ঐ একই পরিমাণ ইরতিদাদ বিদ্যমান। যেখানে সালাফগণ যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারিদেরকে নামাজ, রোজা আদায় করা এবং মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ না করা সত্ত্বেও মুরতাদ বলে আখ্যায়িত করেছেন, তাহলে ঐ ব্যক্তির বিধান কী হতে পারে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রুদের পক্ষ নিয়ে মুসলমানদেরকে হত্যা করে?”
[আল-ফাতাওয়াল কুবরা, খন্ড:৪, পৃষ্ঠা:৩৩২]
***
বাকি অংশ কমেন্টে দেখুন-
Comment