নবী রাসুল (আঃ) দের প্রকৃত উত্তরাধিকারী আলেম কারা????
আলেম এর সংজ্ঞা :
“আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলােঃ আলেমদের কি কোন আলামত আছে, যা দিয়ে
তাদেরকে চেনা যাবে? তিনি বললেনঃ “আলেমদের চিহ্ন হচ্ছেঃ যে নিজের ইলম অনুযায়ী আমল করেন,
নিজের অনেক ইলম ও আমলকে তিনি অল্প মনে করেন, অন্যের ইলমের দিকে আকৃষ্ট থাকেন, হত্ব যেই নিয়ে
আসুক না কেন, তা কবুল করেন, যেখানেই ইলম পাওয়া যায়, সেখান থেকেই তিনি তা গ্রহণ করেন। এগুলাে
হচ্ছে আলেমের চিহ্ন ও বৈশিষ্ট্য।" (ত্ববকাত হানাবিলাহ, ২/১৫০-১৫১)।
আলেম তিনিই, যিনি আল্লাহকে ভয় করেন।
আল্লাহ রাব্বল আলামীন বলেন :
وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَ لْوَانُهٗ كَذٰلِكَ ؕ اِنَّمَا يَخْشَى اللّٰهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمٰٓؤُا ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তারাই তাঁকে ভয় করে যারা আলেম। (সূরা ফাত্বির ৩৫ : ২৮)
العلماء ) قال: الذين يعلمون أن الله على كل شيء قدير . [ تفسير الطبري -
و اتق لي عبالله قولهن عواد
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “(তারা ঐ সকল লােক) যারা জানে যে নিশ্চয়ই আল্লাহ
সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।" (তাফসির তাবারী ২০/৪৬২, তাফসীর ইবনে কাসীর ৬/৫৪৪)।
وعن ابن مسعود رضي الله عنه، أنه قال: ليسي العلم عن كثرة الحديث، ولكن العلم عن كثرة الحشية.[ تفسير ابن كثير - |
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, “সত্যিকার ইলমূকে মুখস্ত এবং বর্ণনা করার পরিমাণ দিয়ে পরিমাপ
করা হয় না বরং সত্যিকার ইলম হলাে তাকওয়ার (আল্লাহ ভীতি) বহিঃপ্রকাশ।” (আবু নাঈম হতে বর্ণিত,
তাফসীর ইবনে কাসীর ৬/৫৪৫)
وقال الربيع بن أنس: من لم يخش الله تعالى فلپس بعالم. ( تفسير القرطبي)
রবী ইবনে আনাস (রা.) বলেন, “যে আল্লাহকে ভয় করে না, সে আলেম নয়।" (তাফসীর কুরতুবী -
১৪/৩৪৩)
وقال مجاهد: إنما العالم من خشي الله عزوجل. ( تفسير القرطي)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর সুযােগ্য ছাত্র, মুজাহিদ (র.) বলেন : “কেবল সেই আলেম, যে আল্লাহকে
ভয় করে।” (তাফসীর কুরতুবী - ১৪/৩৪৩)।
শায়খ সােহরাওয়ার্দি (র.) বলেন।
كلما كانت المعرفة به أتم والعلم به أكمل، كانت الخشبية له أعظم وأكثر
এ আয়াতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যার মধ্যে আল্লাহ ভীতি নেই, সে
আলেম নয়।" (তাফসীর মাজহারী)
ইমাম ইবনে কাসীর (র.) বলেন : “আল্লাহর পরিচয় ও তাঁর ব্যাপারে ইলম যত গভীর হবে, ততবেশী আল্লাহ
ভীতি হবে।” (তাফসীর ইবনে কাসীর, ৬/৫৪৪)
সুতরাং, আলেম তিনিই, যিনি আল্লাহকে ভয় করেন।
ইবনে রজব হাম্বালী (র) ওয়ারাসাতুল আম্বিয়াতে বলেনঃ ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রঃ) সহ অধিকাংশ পূর্বসূরী
সৎকর্মশীলগণ আলেমদেরকে তিনভাগে ভাগ করেছেন।
(১) আলেম যিনি আল্লাহ সম্পর্কে এবং তাঁর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। অর্থাৎ
আল্লাহকে ভয় করেন এবং তার হুকুম আহকাম সম্পর্কে জানেন। তারা এখন সর্বোত্তম পর্যায়ের।
এই আয়াতে আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন।
(২) আলেম যিনি আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন কিন্তু তাঁর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন
তারা আল্লাহকে ভয় করেন কিন্তু হুকুম আহকাম সম্পর্কে তাদের তেমন জ্ঞান নেই।
(৩) আলেম যিনি আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না কিন্তু তাঁর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানি
রাখেন। এরা হচ্ছে মন্দ আলেম। এদের শরয়ী জ্ঞান আছে কিন্তু সেই জ্ঞান তাদেরকে অন্তরে প্রবেশ
করতে পারেনি। তাদের আত্নহভীতি নেই, খুশু নেই, পূর্বসুরী সতকর্মশীলদের দৃষ্টিতে তারা নিন্দলাভের যােগ্য
কেউ কেউ বলেছেন এরা হচ্ছে আলিমুল ফাজির বা পাপাচারী আলেম। (দেখুন মাহমু আর-রাসাইল, পৃঃ ১৯,
অধ্যায়ঃ ওয়ারাসাতুল র, শারহু হাদিস আবি দারদা, তাফসীর ইবনে কাসীর, ৬/৫৪৫)
আলেম তিনিই যিনি ইলম অনুযায়ী আমল করেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “সত্যিকার ইলম হলাে, অধ্যয়ন করা এবং সে অনুযায়ী
কাজ করা।" (আবু নাঈম)।
عن علي ، رضي الله عنه ، قال : « قال رجل : يا رسول الله ، ما ينفي علي ححة الجهل ؟ قال : » العلم ، قال : فما ينفي علي حجة
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললােঃ “আমার অজ্ঞতা দূরীভূত
হওয়ার প্রমাণ কি হবে?" তিনি বললেন, “ইলম।" সে বললােঃ “আমার ইলমের প্রমাণ কি হবে?" তিনি
বললেন, “আমল।" (জামি আখলাকুর রাওয়ী ওয়া আদাৰীস সামী ২৯)।
عن الضحك بن مزاحم ، قال : « أول باب من العلم : الصمت ، والثاني : استماعه ، والثالث : العمل به ، والرابع : نشره وتعليمه »
الجامع لأخلاق الراوي وآداب الامع للخطيب البغدادي-
ইমাম পাহহাক (রঃ) হতে বর্ণিতঃ “ইলমের প্রথম কথা হলােঃ চুপ থাকা, দ্বিতীয়ঃ শুনা, তৃতীয়ঃ সে অনুয়ায়ী
আমল করা, চতুর্থতঃ এর প্রচার ও শিক্ষা প্রদান।” (জামি আখলাকুর রাওয়ী ওয়া আলাৰীস সামী ৩২৬)।
وعن سفيان أن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال لكعب : من أرباب العلم ؟ قال : التي يعملون بما يعلمون . قال : فما أحرج العلم
من قلوب العلماء ؟ قال الملمع . ( رواه الدارمي قال حسين سليم أسد : رجاله ثقات وإسناده صحيح)
ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র) থেকে বর্ণিত : উমর বিন খাত্তাব (রা.), হজরত কাব বিন আহরকে জিজ্ঞেস
করলেন, (প্রকৃত) “আলেম কারা?” তিনি বললেন : “যারা ইলম অনুযায়ী আমল করে। উমর (রা.) পুণরায়
জিজ্ঞেস করলেন । “কিসে আলেমদের অন্তর হতে ইলমকে বের করে দিবে?” তিনি বললেন : “(সম্মান ও
অর্থ) লােভ।" (সুনান দাৱেমী-৫৭৫, হুসাইন সালিম আসাদের মতে এর বর্ণনাকারীগণ সিকাহ এবং বর্ণনাটি
সহীহ)
ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র.) বলেন : “ইলমের (জ্ঞানের) মহত্ব এখানেই যে, এটা একজন মানুষকে আল্লাহকে
ভয় পেতে এবং তাকে মেনে চলতে শিক্ষা দেয়, অন্যথায় এটা অন্যান্য সকল সাধারণ ব্যাপারের মতােই।"
(ইবনে রজব (র.) হতে বর্ণিত)।
আলেম তিনিই যার কথাবার্তা, চাল-চলন ও জীবন-পদ্ধতিতে ইলমের যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
ইমাম হাসান বসরী (র.) হতে বর্ণিত : “কোন মানুষ যখন ইলম অন্বেষণ করে, তখন এর বহিঃপ্রকাশ দেখতে
পাওয়া যায়, তার বিনয়ে, তার চোখে, তার কথাবার্তায়, তার কাজকর্মে, তার ইবাদাতে এবং জুহুদ (পার্থিব
ভােগ-বিলাস ত্যাগ করা) এর মাঝে।” (জুহুদ ওয়ার রাকাইক - আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক (র.); জামি লি
আখলাকির রাওয়ী ওয়া আদাৰীস সামী (১/১৮৫); জামি বায়ানিল ইলম ১/১৫৬)।
সুতরাং, আলেম হচ্ছেন তিনিই যার কথাবার্তা, চাল-চলন ও জীবন-পদ্ধতিতে ইলমের যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
একজন আলেম উপকারী ইলম সম্পন্ন হবেন, অপ্রয়ােজনীয়-অপকারী ইলমসম্পন্ন হবেন না।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন,
اللهم إني أسألك علما نافعا وأعوذ بك من علم لا ينفع
“হে আল্লাহ, আমাকে উপকারী ইলম দান করুন এবং আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করছি এমন জ্ঞান থেকে যা কোন উপকারে আসে না।” (সহীহ ইবনে হিব্বান - ৮২ এবং তাবরানী ৯০৫০, নাসায়ী কাবির - ৭৮৬৭)
وعن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بمثل
علم بشع ، كمثل كتوفي منه في سبيل الله
( رواه الدارمی)
“যে ইলম কোন উপকারে আসে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ সম্পত্তির মতাে যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহৃত
হয়নি।” (সুনান দারেমী ৫৫৬)।
সুতরাং একজন আলেম উপকারী ইলম সম্পন্ন হবেন, অপ্রয়ােজনীয়, অপকারী ইলমসম্পন্ন হবেন না। তিনি
শুধু ইলম অর্জনের জন্য ইলম অর্জন করবেন না।
আলেম তিনিই যিনি মানুষকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ করেন না, আবার তাদেরকে গুনাহ করার
অনুমতিও দেন না।
وعن علي رضي الله عنه قال: إن الفقيه حق الفقيه من لم يقنطا الناس من رحمة الله، ولم يرخصلهم في معاصي الله تعالى، ولم يؤمنهم من
عذاب الله، ولم يدع القرآن رغبة عنه إلى غيره، إنه لا
خير في عبادة لا علم فيها، ولا علم لا فقه فيه، ولا قراءة لا ندير فيها
আলী (রা.) বলেন, “পূর্ণ ফকীহ সে ব্যক্তি, যে মানুষকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ করে না, তাদেরকে
গুনাহ করার অনুমতি দেয় না, আল্লাহ আযাব হতে নিশ্চিন্ত করে না এবং কুরআন পরিত্যাগ করে অন্য বিষয়ের
প্রতি উৎসাহিত করে না।” (ইমাম আজুরী (র.) রচিত ‘আখলাকুল উলামা পৃ. ৪৫, খতীব বাগদাদী (র.)
রচিত ‘ফাকিহ ওয়াল মুতাফাকিহ ২/৩৩৮-৩৯৪, জামি বায়ানিল ইলম ৯৫৮, ৩/১৬)।
আলেম এর সংজ্ঞা :
“আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলােঃ আলেমদের কি কোন আলামত আছে, যা দিয়ে
তাদেরকে চেনা যাবে? তিনি বললেনঃ “আলেমদের চিহ্ন হচ্ছেঃ যে নিজের ইলম অনুযায়ী আমল করেন,
নিজের অনেক ইলম ও আমলকে তিনি অল্প মনে করেন, অন্যের ইলমের দিকে আকৃষ্ট থাকেন, হত্ব যেই নিয়ে
আসুক না কেন, তা কবুল করেন, যেখানেই ইলম পাওয়া যায়, সেখান থেকেই তিনি তা গ্রহণ করেন। এগুলাে
হচ্ছে আলেমের চিহ্ন ও বৈশিষ্ট্য।" (ত্ববকাত হানাবিলাহ, ২/১৫০-১৫১)।
আলেম তিনিই, যিনি আল্লাহকে ভয় করেন।
আল্লাহ রাব্বল আলামীন বলেন :
وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَ لْوَانُهٗ كَذٰلِكَ ؕ اِنَّمَا يَخْشَى اللّٰهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمٰٓؤُا ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তারাই তাঁকে ভয় করে যারা আলেম। (সূরা ফাত্বির ৩৫ : ২৮)
العلماء ) قال: الذين يعلمون أن الله على كل شيء قدير . [ تفسير الطبري -
و اتق لي عبالله قولهن عواد
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “(তারা ঐ সকল লােক) যারা জানে যে নিশ্চয়ই আল্লাহ
সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।" (তাফসির তাবারী ২০/৪৬২, তাফসীর ইবনে কাসীর ৬/৫৪৪)।
وعن ابن مسعود رضي الله عنه، أنه قال: ليسي العلم عن كثرة الحديث، ولكن العلم عن كثرة الحشية.[ تفسير ابن كثير - |
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, “সত্যিকার ইলমূকে মুখস্ত এবং বর্ণনা করার পরিমাণ দিয়ে পরিমাপ
করা হয় না বরং সত্যিকার ইলম হলাে তাকওয়ার (আল্লাহ ভীতি) বহিঃপ্রকাশ।” (আবু নাঈম হতে বর্ণিত,
তাফসীর ইবনে কাসীর ৬/৫৪৫)
وقال الربيع بن أنس: من لم يخش الله تعالى فلپس بعالم. ( تفسير القرطبي)
রবী ইবনে আনাস (রা.) বলেন, “যে আল্লাহকে ভয় করে না, সে আলেম নয়।" (তাফসীর কুরতুবী -
১৪/৩৪৩)
وقال مجاهد: إنما العالم من خشي الله عزوجل. ( تفسير القرطي)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর সুযােগ্য ছাত্র, মুজাহিদ (র.) বলেন : “কেবল সেই আলেম, যে আল্লাহকে
ভয় করে।” (তাফসীর কুরতুবী - ১৪/৩৪৩)।
শায়খ সােহরাওয়ার্দি (র.) বলেন।
كلما كانت المعرفة به أتم والعلم به أكمل، كانت الخشبية له أعظم وأكثر
এ আয়াতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যার মধ্যে আল্লাহ ভীতি নেই, সে
আলেম নয়।" (তাফসীর মাজহারী)
ইমাম ইবনে কাসীর (র.) বলেন : “আল্লাহর পরিচয় ও তাঁর ব্যাপারে ইলম যত গভীর হবে, ততবেশী আল্লাহ
ভীতি হবে।” (তাফসীর ইবনে কাসীর, ৬/৫৪৪)
সুতরাং, আলেম তিনিই, যিনি আল্লাহকে ভয় করেন।
ইবনে রজব হাম্বালী (র) ওয়ারাসাতুল আম্বিয়াতে বলেনঃ ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রঃ) সহ অধিকাংশ পূর্বসূরী
সৎকর্মশীলগণ আলেমদেরকে তিনভাগে ভাগ করেছেন।
(১) আলেম যিনি আল্লাহ সম্পর্কে এবং তাঁর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। অর্থাৎ
আল্লাহকে ভয় করেন এবং তার হুকুম আহকাম সম্পর্কে জানেন। তারা এখন সর্বোত্তম পর্যায়ের।
এই আয়াতে আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন।
(২) আলেম যিনি আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন কিন্তু তাঁর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন
তারা আল্লাহকে ভয় করেন কিন্তু হুকুম আহকাম সম্পর্কে তাদের তেমন জ্ঞান নেই।
(৩) আলেম যিনি আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না কিন্তু তাঁর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানি
রাখেন। এরা হচ্ছে মন্দ আলেম। এদের শরয়ী জ্ঞান আছে কিন্তু সেই জ্ঞান তাদেরকে অন্তরে প্রবেশ
করতে পারেনি। তাদের আত্নহভীতি নেই, খুশু নেই, পূর্বসুরী সতকর্মশীলদের দৃষ্টিতে তারা নিন্দলাভের যােগ্য
কেউ কেউ বলেছেন এরা হচ্ছে আলিমুল ফাজির বা পাপাচারী আলেম। (দেখুন মাহমু আর-রাসাইল, পৃঃ ১৯,
অধ্যায়ঃ ওয়ারাসাতুল র, শারহু হাদিস আবি দারদা, তাফসীর ইবনে কাসীর, ৬/৫৪৫)
আলেম তিনিই যিনি ইলম অনুযায়ী আমল করেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “সত্যিকার ইলম হলাে, অধ্যয়ন করা এবং সে অনুযায়ী
কাজ করা।" (আবু নাঈম)।
عن علي ، رضي الله عنه ، قال : « قال رجل : يا رسول الله ، ما ينفي علي ححة الجهل ؟ قال : » العلم ، قال : فما ينفي علي حجة
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললােঃ “আমার অজ্ঞতা দূরীভূত
হওয়ার প্রমাণ কি হবে?" তিনি বললেন, “ইলম।" সে বললােঃ “আমার ইলমের প্রমাণ কি হবে?" তিনি
বললেন, “আমল।" (জামি আখলাকুর রাওয়ী ওয়া আদাৰীস সামী ২৯)।
عن الضحك بن مزاحم ، قال : « أول باب من العلم : الصمت ، والثاني : استماعه ، والثالث : العمل به ، والرابع : نشره وتعليمه »
الجامع لأخلاق الراوي وآداب الامع للخطيب البغدادي-
ইমাম পাহহাক (রঃ) হতে বর্ণিতঃ “ইলমের প্রথম কথা হলােঃ চুপ থাকা, দ্বিতীয়ঃ শুনা, তৃতীয়ঃ সে অনুয়ায়ী
আমল করা, চতুর্থতঃ এর প্রচার ও শিক্ষা প্রদান।” (জামি আখলাকুর রাওয়ী ওয়া আলাৰীস সামী ৩২৬)।
وعن سفيان أن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال لكعب : من أرباب العلم ؟ قال : التي يعملون بما يعلمون . قال : فما أحرج العلم
من قلوب العلماء ؟ قال الملمع . ( رواه الدارمي قال حسين سليم أسد : رجاله ثقات وإسناده صحيح)
ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র) থেকে বর্ণিত : উমর বিন খাত্তাব (রা.), হজরত কাব বিন আহরকে জিজ্ঞেস
করলেন, (প্রকৃত) “আলেম কারা?” তিনি বললেন : “যারা ইলম অনুযায়ী আমল করে। উমর (রা.) পুণরায়
জিজ্ঞেস করলেন । “কিসে আলেমদের অন্তর হতে ইলমকে বের করে দিবে?” তিনি বললেন : “(সম্মান ও
অর্থ) লােভ।" (সুনান দাৱেমী-৫৭৫, হুসাইন সালিম আসাদের মতে এর বর্ণনাকারীগণ সিকাহ এবং বর্ণনাটি
সহীহ)
ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র.) বলেন : “ইলমের (জ্ঞানের) মহত্ব এখানেই যে, এটা একজন মানুষকে আল্লাহকে
ভয় পেতে এবং তাকে মেনে চলতে শিক্ষা দেয়, অন্যথায় এটা অন্যান্য সকল সাধারণ ব্যাপারের মতােই।"
(ইবনে রজব (র.) হতে বর্ণিত)।
আলেম তিনিই যার কথাবার্তা, চাল-চলন ও জীবন-পদ্ধতিতে ইলমের যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
ইমাম হাসান বসরী (র.) হতে বর্ণিত : “কোন মানুষ যখন ইলম অন্বেষণ করে, তখন এর বহিঃপ্রকাশ দেখতে
পাওয়া যায়, তার বিনয়ে, তার চোখে, তার কথাবার্তায়, তার কাজকর্মে, তার ইবাদাতে এবং জুহুদ (পার্থিব
ভােগ-বিলাস ত্যাগ করা) এর মাঝে।” (জুহুদ ওয়ার রাকাইক - আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক (র.); জামি লি
আখলাকির রাওয়ী ওয়া আদাৰীস সামী (১/১৮৫); জামি বায়ানিল ইলম ১/১৫৬)।
সুতরাং, আলেম হচ্ছেন তিনিই যার কথাবার্তা, চাল-চলন ও জীবন-পদ্ধতিতে ইলমের যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
একজন আলেম উপকারী ইলম সম্পন্ন হবেন, অপ্রয়ােজনীয়-অপকারী ইলমসম্পন্ন হবেন না।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন,
اللهم إني أسألك علما نافعا وأعوذ بك من علم لا ينفع
“হে আল্লাহ, আমাকে উপকারী ইলম দান করুন এবং আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করছি এমন জ্ঞান থেকে যা কোন উপকারে আসে না।” (সহীহ ইবনে হিব্বান - ৮২ এবং তাবরানী ৯০৫০, নাসায়ী কাবির - ৭৮৬৭)
وعن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بمثل
علم بشع ، كمثل كتوفي منه في سبيل الله
( رواه الدارمی)
“যে ইলম কোন উপকারে আসে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ সম্পত্তির মতাে যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহৃত
হয়নি।” (সুনান দারেমী ৫৫৬)।
সুতরাং একজন আলেম উপকারী ইলম সম্পন্ন হবেন, অপ্রয়ােজনীয়, অপকারী ইলমসম্পন্ন হবেন না। তিনি
শুধু ইলম অর্জনের জন্য ইলম অর্জন করবেন না।
আলেম তিনিই যিনি মানুষকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ করেন না, আবার তাদেরকে গুনাহ করার
অনুমতিও দেন না।
وعن علي رضي الله عنه قال: إن الفقيه حق الفقيه من لم يقنطا الناس من رحمة الله، ولم يرخصلهم في معاصي الله تعالى، ولم يؤمنهم من
عذاب الله، ولم يدع القرآن رغبة عنه إلى غيره، إنه لا
خير في عبادة لا علم فيها، ولا علم لا فقه فيه، ولا قراءة لا ندير فيها
আলী (রা.) বলেন, “পূর্ণ ফকীহ সে ব্যক্তি, যে মানুষকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ করে না, তাদেরকে
গুনাহ করার অনুমতি দেয় না, আল্লাহ আযাব হতে নিশ্চিন্ত করে না এবং কুরআন পরিত্যাগ করে অন্য বিষয়ের
প্রতি উৎসাহিত করে না।” (ইমাম আজুরী (র.) রচিত ‘আখলাকুল উলামা পৃ. ৪৫, খতীব বাগদাদী (র.)
রচিত ‘ফাকিহ ওয়াল মুতাফাকিহ ২/৩৩৮-৩৯৪, জামি বায়ানিল ইলম ৯৫৮, ৩/১৬)।
Comment