প্রশ্ন: মুসলিমদের হারানো ভূমিগুলো উদ্ধার করা কি ফরয?
হ্যাঁ। মুসলিমদের হারানো ভূমিগুলো উদ্ধার করা ফরয। আন্দালুস, ভারত, তুর্কিস্তান, কাশ্মির ইত্যাদি ভূমি যেগুলো যুগের পর যুগ ধরে কাফেরদের দখলে আছে, সবগুলো উদ্ধার করা ফরয। পূর্ববর্তী মুসলিম খলিফা ও সুলতানরা যারা এর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন কিন্তু উদ্ধার করতে পারেননি, তারা দায়িত্বমুক্ত হয়ে মারা গেছেন ইনশাআল্লাহ। আর যারা এর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেননি, তারা গুনাহগার হয়ে মারা গেছেন। তবে সর্বাবস্থায় পরবর্তী উম্মাহর উপর এ দায়িত্ব ঋণ হয়ে আছে। ঋণ আদায়ে সক্ষম না হলে যেমন ঋণ মাফ হয় না, বরং চেষ্টা করতে হয়, মুসলিম ভূমিগুলোর ব্যাপারেও একই কথা। শক্তি না থাকার কারণে ফরয মাফ হবে না, যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। যতদিন মুসলিমদের সকল ভূমি কাফেরদের থেকে উদ্ধার না হবে, ততদিন উম্মাহর উপর এ ফরয ঋণ হিসেবে থেকে যাবে।
মাগরিবের ইমাম আল্লামা তুসুলি (১২৫৮হি.) রহ. এ ব্যাপারে সুন্দর আলোচনা করেছেন। এখানে তার কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরছি। তিনি বলেন,
কেননা কাফেরদের দখলকৃত ভূমি পুনরুদ্ধার করা সর্বযুগের সব স্থানের মুসলমানের উপর ফরয, নির্দিষ্ট কোন অঞ্চল বা সময়ের মুসলমানদের সাথে এ বিধান সম্পৃক্ত নয়। তবে আক্রান্ত এলাকার মুসলিমদের উপর এ মূহুর্তে ফরযে আইন। যদি তারা কোন উযরবশত বা উযরব্যতীতই এ ফরয দ্বায়িত্ব পালন না করে তবে তাদের নিকটবর্তী অঞ্চলের ও তাদের পরবর্তী যামানার মুসলিমদের উপর এই দ্বায়িত্ব বর্তাবে।
যেমনটা ইবনে আরাফা (৮০৩হি.) রহ. ইমাম মাযারি (৫৩৬হি.) রহ. এর সূত্রে বলেন, ‘পূর্ববর্তী যেসব শাসক মুসলিমভূমি কাফেরদের হাতে ছেড়ে রেখেছে তারা এর দ্বারা গুনাহের কাজ করেছে। অতএব এক্ষেত্রে তারা অনুসরণীয় নয়। বহুপূর্বেই বলা হয়েছে, তুমি হেদায়েতের পথে চলো, এ পথে চলাব্যক্তিদের সংখ্যাস্বল্পতা তোমার কোন ক্ষতি করবে না। ধ্বংসের পথ পরিহার করো। ধ্বংস হয়ে যাওয়া লোকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তোমার কোন ক্ষতি হবে না’।
ইবনে আরাফা রহ. এর উক্ত বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট যে, বর্তমান যমানার সব শাসকের উপর জিহাদ ফরযে আইন। কারণ, প্রত্যেক শাসকের কিংবা তার পূর্ববর্তীদের শাসনাধীন কিছু ভূমি কাফেররা দখল করে নিয়েছে। দ্বীনের দুশমনরা তার এলাকা কিংবা তার পূর্ববর্তী শাসকদের এলাকায় আগ্রাসন চালিয়েছে। ওরা তার কিংবা তার পূর্ববর্তীদের আয়ত্বাধীন অনেক সীমান্ত দখলে নিয়ে নিয়েছে। সুতরাং ওদের হাত থেকে সেসব ভূমি পুনরুদ্ধার করা প্রত্যেক শাসকের উপর ফরয; যদিও তার পূর্ববর্তী শাসকরা পুনরুদ্ধার করে না থাকে। এ মাসয়ালাটি সহিহ। এতে কারো কোন দ্বিমত নেই।
এ জন্যই সায়্যিদ শাকরুন বিন হিবাহ (৯৮৩হি.) রহ.- যিনি মুতাআখখিরিনদের মধ্যে একজন হাফেয ছিলেন- ফতোয়া দেন, বর্তমান যমানায় জিহাদ ফরযে আইন। … তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জিহাদ ফরযে আইন। কেননা উলামায়ে কেরাম বলেছেন, শত্রু যখন মুসলিমভূমিতে আগ্রাসন চালায় তখন জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আলেমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। আর বর্তমানে শত্রুরা বিভিন্ন মুসলিমভূমিতে আগ্রাসন চালিয়েছে। মুসলমানদের ইজ্জত-সম্মান ভূলুন্ঠিত করেছে। বহু দূর্গ ও কেল্লা দখল করেছে। অনেক গোত্র ও গোষ্ঠীর লোকদের বন্দী করেছে’।
অর্থাৎ যখন কাফেররা বিভিন্ন গোত্রের মুসলমানদের বন্দী করে তখন উক্ত অঞ্চলের শাসক ও প্রজাদের উপর তাদের উদ্ধার করা ফরয। যদি সে উদ্ধার করতে অক্ষম হয় কিংবা আল্লাহর বিধান লঙ্গন করে উদ্ধার না করে, তবে নিকটবর্তী অঞ্চলের শাসকদের উপর সেই শাসককে সাহায্য করা এবং বন্দীদের উদ্ধার করা ফরয। যেমনটা ইতিপূর্বে মাযারি রহ. এর বক্তব্যে গত হয়েছে। তেমনিভাবে যদি সেই অঞ্চলের শাসক মারা যায় তাহলে পরবর্তী যামানার শাসকদের উপর এ ফরয বর্তাবে।” -আজবিবাতুত তুসুলি আন মাসায়িলিল ইমাম আব্দিল কাদির ফিল জিহাদ, পৃ: ২৭৯-২৮১
সামনে গিয়ে বলেন,
“সারকথা: কোন মুসলিম শাসক বা তার প্রজাগণ মুসলিমভূমি হতে কাফেরদের বিতাড়ন এবং যারা তাদেরকে তাড়াতে বা প্রতিহত করতে অক্ষম তাদের সাহায্যের ফরয দ্বায়িত্ব হতে মুক্তি পাবে না, যতক্ষণ না তারা এজন্য নিজেদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং বিজয় লাভ করা পর্যন্ত যখন সম্ভব যতবার সম্ভব কাফেরদের উপর (বার বার) আক্রমণ চালাতে থাকবে। যদি শাসক মৃত্যুবরণ করে তবে তা তার যিম্মায় ঋণ হিসেবে বাকী থাকবে এবং এ দ্বায়িত্ব স্থানান্তর হয়ে পরবর্তী শাসকদের উপর বর্তাবে। পূর্ববর্তী শাসক যারা নাফরমানি করে কাফেরদের হাতে মুসলিম ভূমি ছেড়ে রেখেছে কিংবা কাফেরদের প্রতিহত করতে অক্ষম মুসলিমদের সাহায্য করা পরিত্যাগ করেছে- বর্তমান শাসক এ ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাওয়ার কোন সূরত নেই।
উপরোক্ত আলোচনা হতে আমরা বুঝতে পারলাম, জিহাদ ফরযে কেফায়া হওয়ার বিধান ঐ সময়ে প্রযোজ্য যখন মুসলমানদের কোন একটি ভূমিও কাফেরদের দখলে না থাকে। অন্যথায় জিহাদ ফরযে আইন। কেননা যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম ভূমি ও তাদের সীমান্তগুলো কাফেরদের দখলে থাকবে ততক্ষণ তো কাফেররা মুসলিম ভূমিতে আগ্রাসনরত। তাই সমকালীন শাসকদের উপর, আর তারা অক্ষম হলে কিংবা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে না করলে, পরবর্তী শাসকবর্গের উপর ফরয হবে কাফেরদেরকে দখলকৃত ভূমি হতে বিতাড়িত করা। কাফেরদের শুধু ততটুকু সময়ই ছেড়ে রাখা বৈধ হবে, যতটুকু পরিমাণ প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন পড়ে। এরপর তারা একের পর একের আক্রমণ করতে থাকবে, যতদিন না আল্লাহ তায়ালা বিজয় দান করেন।” -আজবিবাতুত তুসুলি আন মাসায়িলিল ইমাম আব্দিল কাদির ফিল জিহাদ, পৃ: ২৮৪-২৮৫
তুসলি রহ. এর বক্তব্য থেকে আশাকরি পরিষ্কার যে, শত শত বৎসর ধরে কাফেরদের হাতে পড়ে থাকা মুসলিম ভূমিগুলো উদ্ধার করা বর্তমান যামানার এবং পরবর্তীতে আগত সকল মুসলমানের উপর ফরয। যতদিন কোন মুসলিম ভূমি কাফেরদের হাতে থাকবে, ততদিন জিহাদ ফরযে আইন। ই’দাদ ও প্রস্তুতি না নিয়ে অন্য যত নেক আমলই করি না কেনো, ফরযে আইন তরকের গুনাহ থেকে মুক্তি পাবো না। মুসলিমদের সকল ভূমি উদ্ধার হয়ে গেলে তখন জিহাদ ফরযে কিফায়া হবে। এর আগ পর্যন্ত ফরযে আইন। ওয়াল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলা আ’লাম।
উত্তর
হ্যাঁ। মুসলিমদের হারানো ভূমিগুলো উদ্ধার করা ফরয। আন্দালুস, ভারত, তুর্কিস্তান, কাশ্মির ইত্যাদি ভূমি যেগুলো যুগের পর যুগ ধরে কাফেরদের দখলে আছে, সবগুলো উদ্ধার করা ফরয। পূর্ববর্তী মুসলিম খলিফা ও সুলতানরা যারা এর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন কিন্তু উদ্ধার করতে পারেননি, তারা দায়িত্বমুক্ত হয়ে মারা গেছেন ইনশাআল্লাহ। আর যারা এর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেননি, তারা গুনাহগার হয়ে মারা গেছেন। তবে সর্বাবস্থায় পরবর্তী উম্মাহর উপর এ দায়িত্ব ঋণ হয়ে আছে। ঋণ আদায়ে সক্ষম না হলে যেমন ঋণ মাফ হয় না, বরং চেষ্টা করতে হয়, মুসলিম ভূমিগুলোর ব্যাপারেও একই কথা। শক্তি না থাকার কারণে ফরয মাফ হবে না, যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। যতদিন মুসলিমদের সকল ভূমি কাফেরদের থেকে উদ্ধার না হবে, ততদিন উম্মাহর উপর এ ফরয ঋণ হিসেবে থেকে যাবে।
মাগরিবের ইমাম আল্লামা তুসুলি (১২৫৮হি.) রহ. এ ব্যাপারে সুন্দর আলোচনা করেছেন। এখানে তার কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরছি। তিনি বলেন,
(لا يبرأ المسلمون من عهدة المدافعة، ونصرة من عجز، إلاّ إذا استفرغوا الوسع في إزاحة الكفّار من المدائن التي أخذوها للمسلمين، (فلو نازلوها فلم تفتح، وجب عليهم معاودتها كلما أمكنهم ذلك، حتى يفتحها الله عليهم، ولا فرق في ذلك بين المدائن المأخوذة للمسلمين) حديثاً أو قديماً).
لأن الوجوب والتعيين متعلّق بالمسلمين، لا بقيد زمان، ولا مكان، إلاّ أنه: يتعيّن على الحاضر زماناً ومكاناً،- على ما مرّ ترتيبه- فان لم يفعل لعذر، أو لغير عذر، وجب على غيره ممّن يليه.
كما قاله "ابن عرفة"، عن "المازري": (وترك من تقدم من أئمة المسلمين مدائن الإسلام في أيدي الكفّار، هم بذلك في محل العصيان، لا في محل الاقتداء والاستنان، وقديماً قيل: "اسلك سبيل الهدى، ولا يضرّك قلّة السالكين، واترك طريق الردى، ولا يضرّك كثرة الهالكين") اهـ كلامه.
قلت: وهذا منه- رحمه الله- تصريح بأن الجهاد فرض عين، على كل من الأئمة، والحال: أنهم قد أخذوا له، أو لغيره ممّن قبله، بعض أقطار البلدان، لأن عدوّ الدين قد نزل به، أو بمن قبله، وقد أخذ له، أو لمن قبله ثغوراً، فيجب عليه: أن يستنقذ ذلك منهم، وإن ترك ذلك الاستنقاذ من قبله، وهو صحيح لا خلاف فيه.
ولهذا أفتى- سيدي- "شقرون بن هبة" - أحد حفّاظ المتأخرين-: بأن الجهاد في هذا الزمان فرض عين، ونحوه في كتاب "فلك السعادة" قائلاً: (الجهاد اليوم فرض عين، لأنّهم قالوا: "إذ نزل العدوّ ساحة الإسلام، فالجهاد فرض عين" ولا مخالف لهذا القول، واليوم قد نزلوا بساحات، وهتكوا أستاراً وحرمات، وأخذوا معاقل وحصوناً، وسبوا قبائل وبطوناً).
أي: وهم إذا سبوا ذلك، تعيّن على إمام الوقت ورعيّته أن يستنقذوا ذلك، ويجب على من يليه من الأئمة: أن يعينه على ذلك إن هو عجز، أو ترك وعصى- كما تقدّم في نص "المازري"- كما أنه يجب ذلك على من بعده من الأئمة إن هو مات. -أجوبة التسولي (المتوفى: 1258هـ) عن مسائل الأمير عبد القادر في الجهاد، ص: 279-281، الناشر: دار الغرب الإسلامي
“(শাইখুল ইসলাম) ফাসি (১০৫২হি.) রহ. বলেন, ‘মুসলমানরা প্রতিরোধ জিহাদ ও অক্ষমদের সাহায্যের দ্বায়িত্ব হতে মুক্তি পাবে না, যতক্ষণ না তারা কাফেরদের দখলকৃত ভূমিসমূহ হতে ওদের উৎখাত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করে। যদি মুসলমানরা (কাফেরদের দখলকৃত ভূমি উদ্ধার করার জন্য) আক্রমণ করে, কিন্তু বিজয় করতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের উপর ফরয হবে যখনই সম্ভব পুনরায় হামলা করা, যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা বিজয় দান করেন। এক্ষেত্রে বর্তমানে দখলকৃত ও বহুপূর্বে দখলকৃত ভূমির মাঝে কোন পার্থক্য নেই’। لأن الوجوب والتعيين متعلّق بالمسلمين، لا بقيد زمان، ولا مكان، إلاّ أنه: يتعيّن على الحاضر زماناً ومكاناً،- على ما مرّ ترتيبه- فان لم يفعل لعذر، أو لغير عذر، وجب على غيره ممّن يليه.
كما قاله "ابن عرفة"، عن "المازري": (وترك من تقدم من أئمة المسلمين مدائن الإسلام في أيدي الكفّار، هم بذلك في محل العصيان، لا في محل الاقتداء والاستنان، وقديماً قيل: "اسلك سبيل الهدى، ولا يضرّك قلّة السالكين، واترك طريق الردى، ولا يضرّك كثرة الهالكين") اهـ كلامه.
قلت: وهذا منه- رحمه الله- تصريح بأن الجهاد فرض عين، على كل من الأئمة، والحال: أنهم قد أخذوا له، أو لغيره ممّن قبله، بعض أقطار البلدان، لأن عدوّ الدين قد نزل به، أو بمن قبله، وقد أخذ له، أو لمن قبله ثغوراً، فيجب عليه: أن يستنقذ ذلك منهم، وإن ترك ذلك الاستنقاذ من قبله، وهو صحيح لا خلاف فيه.
ولهذا أفتى- سيدي- "شقرون بن هبة" - أحد حفّاظ المتأخرين-: بأن الجهاد في هذا الزمان فرض عين، ونحوه في كتاب "فلك السعادة" قائلاً: (الجهاد اليوم فرض عين، لأنّهم قالوا: "إذ نزل العدوّ ساحة الإسلام، فالجهاد فرض عين" ولا مخالف لهذا القول، واليوم قد نزلوا بساحات، وهتكوا أستاراً وحرمات، وأخذوا معاقل وحصوناً، وسبوا قبائل وبطوناً).
أي: وهم إذا سبوا ذلك، تعيّن على إمام الوقت ورعيّته أن يستنقذوا ذلك، ويجب على من يليه من الأئمة: أن يعينه على ذلك إن هو عجز، أو ترك وعصى- كما تقدّم في نص "المازري"- كما أنه يجب ذلك على من بعده من الأئمة إن هو مات. -أجوبة التسولي (المتوفى: 1258هـ) عن مسائل الأمير عبد القادر في الجهاد، ص: 279-281، الناشر: دار الغرب الإسلامي
কেননা কাফেরদের দখলকৃত ভূমি পুনরুদ্ধার করা সর্বযুগের সব স্থানের মুসলমানের উপর ফরয, নির্দিষ্ট কোন অঞ্চল বা সময়ের মুসলমানদের সাথে এ বিধান সম্পৃক্ত নয়। তবে আক্রান্ত এলাকার মুসলিমদের উপর এ মূহুর্তে ফরযে আইন। যদি তারা কোন উযরবশত বা উযরব্যতীতই এ ফরয দ্বায়িত্ব পালন না করে তবে তাদের নিকটবর্তী অঞ্চলের ও তাদের পরবর্তী যামানার মুসলিমদের উপর এই দ্বায়িত্ব বর্তাবে।
যেমনটা ইবনে আরাফা (৮০৩হি.) রহ. ইমাম মাযারি (৫৩৬হি.) রহ. এর সূত্রে বলেন, ‘পূর্ববর্তী যেসব শাসক মুসলিমভূমি কাফেরদের হাতে ছেড়ে রেখেছে তারা এর দ্বারা গুনাহের কাজ করেছে। অতএব এক্ষেত্রে তারা অনুসরণীয় নয়। বহুপূর্বেই বলা হয়েছে, তুমি হেদায়েতের পথে চলো, এ পথে চলাব্যক্তিদের সংখ্যাস্বল্পতা তোমার কোন ক্ষতি করবে না। ধ্বংসের পথ পরিহার করো। ধ্বংস হয়ে যাওয়া লোকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তোমার কোন ক্ষতি হবে না’।
ইবনে আরাফা রহ. এর উক্ত বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট যে, বর্তমান যমানার সব শাসকের উপর জিহাদ ফরযে আইন। কারণ, প্রত্যেক শাসকের কিংবা তার পূর্ববর্তীদের শাসনাধীন কিছু ভূমি কাফেররা দখল করে নিয়েছে। দ্বীনের দুশমনরা তার এলাকা কিংবা তার পূর্ববর্তী শাসকদের এলাকায় আগ্রাসন চালিয়েছে। ওরা তার কিংবা তার পূর্ববর্তীদের আয়ত্বাধীন অনেক সীমান্ত দখলে নিয়ে নিয়েছে। সুতরাং ওদের হাত থেকে সেসব ভূমি পুনরুদ্ধার করা প্রত্যেক শাসকের উপর ফরয; যদিও তার পূর্ববর্তী শাসকরা পুনরুদ্ধার করে না থাকে। এ মাসয়ালাটি সহিহ। এতে কারো কোন দ্বিমত নেই।
এ জন্যই সায়্যিদ শাকরুন বিন হিবাহ (৯৮৩হি.) রহ.- যিনি মুতাআখখিরিনদের মধ্যে একজন হাফেয ছিলেন- ফতোয়া দেন, বর্তমান যমানায় জিহাদ ফরযে আইন। … তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জিহাদ ফরযে আইন। কেননা উলামায়ে কেরাম বলেছেন, শত্রু যখন মুসলিমভূমিতে আগ্রাসন চালায় তখন জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আলেমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। আর বর্তমানে শত্রুরা বিভিন্ন মুসলিমভূমিতে আগ্রাসন চালিয়েছে। মুসলমানদের ইজ্জত-সম্মান ভূলুন্ঠিত করেছে। বহু দূর্গ ও কেল্লা দখল করেছে। অনেক গোত্র ও গোষ্ঠীর লোকদের বন্দী করেছে’।
অর্থাৎ যখন কাফেররা বিভিন্ন গোত্রের মুসলমানদের বন্দী করে তখন উক্ত অঞ্চলের শাসক ও প্রজাদের উপর তাদের উদ্ধার করা ফরয। যদি সে উদ্ধার করতে অক্ষম হয় কিংবা আল্লাহর বিধান লঙ্গন করে উদ্ধার না করে, তবে নিকটবর্তী অঞ্চলের শাসকদের উপর সেই শাসককে সাহায্য করা এবং বন্দীদের উদ্ধার করা ফরয। যেমনটা ইতিপূর্বে মাযারি রহ. এর বক্তব্যে গত হয়েছে। তেমনিভাবে যদি সেই অঞ্চলের শাসক মারা যায় তাহলে পরবর্তী যামানার শাসকদের উপর এ ফরয বর্তাবে।” -আজবিবাতুত তুসুলি আন মাসায়িলিল ইমাম আব্দিল কাদির ফিল জিহাদ, পৃ: ২৭৯-২৮১
সামনে গিয়ে বলেন,
وبالجملة: فلا يخرج إمام ولا رعيته من عهدة الوجوب، في إزاحة الكفار من مدائن المسلمين ، أو إعانة من عجز عن إخراجهم منها، أو مدافعتهم عنها، إلاّ باستفراغ الوسع، وبذل الطاقة والجهد بالعدّة والاستعداد، ومباشرة الدفع، ومعاودة القتال بحسب الإمكان، أو يموت وهو مدين على ذلك الفعل، فينتقل الوجوب إلى من تولّى بعده، وأما كونه يقتدي بمن عصى من الأئمة، وترك مدائن المسلمين بأيدي الكفار، أو ترك إغاثة من عجز عن الدفع، فذلك غير مخلص.
وبهذا نعلم: أن محل كون الجهاد فرض كفاية: إذا لم يكن العدوّ أخذ شيئاً من بلاد المسلمين، وإلاّ كان فرض عين- على ما مرّ تفصيله قريباً- إذ هو: نازل بهم دائماً ما دام آخذاً لثغورهم وبلادهم، فيجب على أئمة وقته، وعلى من يليهم إن عجزوا، على من بعدهم إن ماتوا أو عصوا وتركوا أن يخرجوهم ممّا استولوا عليه، ولا يحلّ لهم تركهم، إلاّ بقدر ما يتجهّزون، ويعاودون ذلك المرة بعد المرّة، حتى يفتحها الله عليهم. -أجوبة التسولي (المتوفى: 1258هـ) عن مسائل الأمير عبد القادر في الجهاد، ص: 284-285، الناشر: دار الغرب الإسلامي
وبهذا نعلم: أن محل كون الجهاد فرض كفاية: إذا لم يكن العدوّ أخذ شيئاً من بلاد المسلمين، وإلاّ كان فرض عين- على ما مرّ تفصيله قريباً- إذ هو: نازل بهم دائماً ما دام آخذاً لثغورهم وبلادهم، فيجب على أئمة وقته، وعلى من يليهم إن عجزوا، على من بعدهم إن ماتوا أو عصوا وتركوا أن يخرجوهم ممّا استولوا عليه، ولا يحلّ لهم تركهم، إلاّ بقدر ما يتجهّزون، ويعاودون ذلك المرة بعد المرّة، حتى يفتحها الله عليهم. -أجوبة التسولي (المتوفى: 1258هـ) عن مسائل الأمير عبد القادر في الجهاد، ص: 284-285، الناشر: دار الغرب الإسلامي
“সারকথা: কোন মুসলিম শাসক বা তার প্রজাগণ মুসলিমভূমি হতে কাফেরদের বিতাড়ন এবং যারা তাদেরকে তাড়াতে বা প্রতিহত করতে অক্ষম তাদের সাহায্যের ফরয দ্বায়িত্ব হতে মুক্তি পাবে না, যতক্ষণ না তারা এজন্য নিজেদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং বিজয় লাভ করা পর্যন্ত যখন সম্ভব যতবার সম্ভব কাফেরদের উপর (বার বার) আক্রমণ চালাতে থাকবে। যদি শাসক মৃত্যুবরণ করে তবে তা তার যিম্মায় ঋণ হিসেবে বাকী থাকবে এবং এ দ্বায়িত্ব স্থানান্তর হয়ে পরবর্তী শাসকদের উপর বর্তাবে। পূর্ববর্তী শাসক যারা নাফরমানি করে কাফেরদের হাতে মুসলিম ভূমি ছেড়ে রেখেছে কিংবা কাফেরদের প্রতিহত করতে অক্ষম মুসলিমদের সাহায্য করা পরিত্যাগ করেছে- বর্তমান শাসক এ ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাওয়ার কোন সূরত নেই।
উপরোক্ত আলোচনা হতে আমরা বুঝতে পারলাম, জিহাদ ফরযে কেফায়া হওয়ার বিধান ঐ সময়ে প্রযোজ্য যখন মুসলমানদের কোন একটি ভূমিও কাফেরদের দখলে না থাকে। অন্যথায় জিহাদ ফরযে আইন। কেননা যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম ভূমি ও তাদের সীমান্তগুলো কাফেরদের দখলে থাকবে ততক্ষণ তো কাফেররা মুসলিম ভূমিতে আগ্রাসনরত। তাই সমকালীন শাসকদের উপর, আর তারা অক্ষম হলে কিংবা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে না করলে, পরবর্তী শাসকবর্গের উপর ফরয হবে কাফেরদেরকে দখলকৃত ভূমি হতে বিতাড়িত করা। কাফেরদের শুধু ততটুকু সময়ই ছেড়ে রাখা বৈধ হবে, যতটুকু পরিমাণ প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন পড়ে। এরপর তারা একের পর একের আক্রমণ করতে থাকবে, যতদিন না আল্লাহ তায়ালা বিজয় দান করেন।” -আজবিবাতুত তুসুলি আন মাসায়িলিল ইমাম আব্দিল কাদির ফিল জিহাদ, পৃ: ২৮৪-২৮৫
তুসলি রহ. এর বক্তব্য থেকে আশাকরি পরিষ্কার যে, শত শত বৎসর ধরে কাফেরদের হাতে পড়ে থাকা মুসলিম ভূমিগুলো উদ্ধার করা বর্তমান যামানার এবং পরবর্তীতে আগত সকল মুসলমানের উপর ফরয। যতদিন কোন মুসলিম ভূমি কাফেরদের হাতে থাকবে, ততদিন জিহাদ ফরযে আইন। ই’দাদ ও প্রস্তুতি না নিয়ে অন্য যত নেক আমলই করি না কেনো, ফরযে আইন তরকের গুনাহ থেকে মুক্তি পাবো না। মুসলিমদের সকল ভূমি উদ্ধার হয়ে গেলে তখন জিহাদ ফরযে কিফায়া হবে। এর আগ পর্যন্ত ফরযে আইন। ওয়াল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলা আ’লাম।
Comment