সাত. চোর
চোরের স্বাভাবিক শাস্তি হল প্রথমবারে চুরি করলে ডান হাত কেটে দেয়া, দ্বিতীয়বারে বাম পা কেটে দেয়া। হাত কাটা কুরআনে কারীম দ্বারা আর পা কাটা সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। (দেখুন: ফাতহুল কাদির ৫/৩৯৭-৩৯৮) তৃতীয় ও চতুর্থবারে চুরি করলে কি করা হবে তা মতভেদপূর্ণ। কোনো কোনো জয়িফ হাদিসে তৃতীয়বারে বাম হাত এবং চতুর্থবারে ডান পা কেটে দেয়ার কথা এসেছে এবং পঞ্চমবারে হত্যা করে দেয়ার কথা এসেছে। তবে হাদিস নিতান্তই দুর্বল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে এর বিপরীত আমল প্রমাণিত আছে।
যেমন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে প্রমাণিত যে, দুইবারের বেশি চুরি করলে হাত-পা না কেটে বা হত্যা না করে জেলে ভরে রেখেছেন। এ কারণে হানাফিদের মত হলো, দুইবারের বেশি চুরি করলে জেলে ভরে রাখা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে। তাওবা করে ভাল হলে তো ভালোই অন্যথায় মরণ পর্যন্ত জেলেই থাকতে হবে। তবে ইমামুল মুসলিমিন বা কাযি সাহেব যদি মুনাসিব মনে করেন তাহলে ফাসাদ ফিল আরদের কারণে তৃতীয়-চতুর্থবারে হাত পা কাটতে পারবেন বা হত্যা করতে পারবেন। তবে প্রথম বা দ্বিতীয়বারে হত্যা করতে পারবেন না। কারণ, দুইবারের শাস্তি শরীয়তে সুনির্ধারিত।
ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১হি.) বলেন,
فامتناع علي بعد ذلك إما لضعف الروايات المذكورة في الإتيان على أربعته وإما لعلمه أن ذلك ليس حدا مستمرا بل من رأى الإمام قتله لما شاهد فيه من السعي بالفساد في الأرض وبعد الطباع عن الرجوع فله قتله سياسة فيفعل ذلك القتل المعنوي. اهـ
“হাদিস বর্ণিত হওয়ার পরও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উপর আমল করেননি। হয়তো এ কারণে যে, চারো হাত-পা কেটে দেয়ার উপরোক্ত বর্ণনাগুলো দুর্বল; নয়তো এ কারণে যে, তিনি জানেন, তা শরীয়ত নির্ধারিত হদ হিসেবে নয়, বরং ইমামের রায় হিসেবে। দেখলেন যে, এ লোক ফাসাদ ফিল আরদ করে বেড়াচ্ছে এবং তা থেকে ফিরে আসার মতো মানসিকতা তার নেই। এমতাবস্থায় তাকে হত্যা করা জায়েয। তাই হতা-পা কেটে দিতে পারেন, যা হত্যারই নামান্তর।” –ফাতহুল কাদির ৫/৩৯৭ইবনে আবিদিন রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
وفي حاشية السيد أبي السعود: رأيت بخط الحموي عن السراجية ما نصه: إذا سرق ثالثا ورابعا للإمام أن يقتله سياسة لسعيه في الأرض بالفساد. اهـ. قال الحموي: فما يقع من حكام زماننا من قتله أول مرة زاعمين أن ذلك سياسة جور وظلم وجهل. اهـ
“সায়্যিদ আবুস সাউদ রহ. তার প্রণীত হাশিয়াতে বলেন, হামাবি রহ. এর নিজ হাতের লেখা দেখেছি যে, (ফাতাওয়া) সিরাজিয়া থেকে নিম্নোক্ত কথাটি বর্ণনা করেছেন: ‘তৃতীয় ও চতুর্থবারে চুরি করলে যমিনে ফাসাদ করে বেড়ানোর অপরাধে সিয়াসতরূপে ইমামুল মুসলিমিন তাকে হত্যা করতে পারবেন’। হামাবি রহ. বলেন, সিয়াসতের দাবি তুলে আমাদের বর্তমান যামানায় প্রথমবারেই যে হত্যা করে দেয়া হচ্ছে তা অন্যায়-অবিচার, জুলুম ও অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়।” –রদ্দুল মুহতার ৪/১০৩ অতএব, প্রথম বা দ্বিতীয়বারে হত্যা করা যাবে না। তৃতীয়-চতুর্থবারে জেলে ভরে রাখবে। তবে একান্ত দুষ্ট প্রকৃতির লোক হলে এবং তাকে হত্যা করে দেয়াই সমাজের জন্য উপকারী সাব্যস্ত হলে হত্যা করতে পারবেন।
***
Comment