মানবরচিত বিধান দ্বারা ফয়সালাকারী শাসকদের ব্যাপারে ইমামুল হারামাইন জুওয়াইনী রহ. এর ফতোয়া
ইমামুল হারামাইন আব্দুল মালিক বিন আব্দুল্লাহ আবুল মাআলী আলজুওয়াইনী রহ. (মৃত্যু: ৪৭৮)। শাফেয়ী মাযহাবের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। সালজুকী সালতানাতের বিখ্যাত উযির নেযামুল মুলক তুসীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামের ইতিহাসের সর্বপ্রথম প্রচলিত মাদ্রাসা ‘মাদ্রাসায়ে নেযামিয়া’র প্রধান শিক্ষক। ইমাম আবু ইসহাক সিরাজী তাকে ইমামুল আয়িম্মাহ বা ইমামদের ইমাম বলে সম্বোধন করতেন। শাফেয়ী মাযহাবকে সুবিন্যস্তরুপে পেশ করার ক্ষেত্রে তার অবদান সুস্বীকৃত।(আলবিদায়া ওয়াননিহায়া, ১৬/৯৬ আলমাদখাল ইলা দিরাসাতিল মাযাহিবিল ফিকহিয়্যাহ, *পৃ: ৪১)
তাঁর যুগে মানুষের মাঝে একটা ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই মনে করতে থাকে, শরিয়তের নির্ধারিত শাস্তি মানুষকে অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখার জন্য যথেষ্ট না, তাই অন্যায়ের শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ইমামুল হারামাইন তাদের এই ধারণার তীব্র সমালোচনা করেন, অত্যন্ত জোরালোভাষায় তা খন্ডন করেন। এমনকি একপর্যায়ে তিনি বলেন,
وما أقرب هذا المسلكَ مِن عَقْدِ من يَتَّخِذُ سُنَنَ الأكاسرة والملوك المُنقرِضين عمدةَ الدين، ومن تشبَّث بهذا، فقد انسلَّ عن رِبقة الدين انسلالَ الشعرة عن العجين. (غياث الأمم في التياث الظلم، الناشر: مكتبة إمام الحرمين، الطبعة: الثانية، 1401هـ).
“এই মতবাদটা ঐ লোকদের কাজের কতই না নিকটবর্তী যারা পূর্ববর্তী কায়সার ও অন্যান্য বাদশাদের রীতিনীতি ও আইনকানুনকে দ্বীনের ভিত্তি রুপে গ্রহণ করে। আর যে এরুপ করবে সে তো দ্বীনের গন্ডি থেকেই বের হয়ে যাবে, যেমনিভাবে খামিরা থেকে চুল বের হয়।” (অর্থাৎ যেমনিভাবে খামিরা থেকে বের করা চুলের মাঝে আটার কোন অংশ লেগে থাকে না, তেমনিভাবে তার মাঝেও দ্বীনের কোন অংশ থাকবে না, সে কাফের-মুরতাদ হয়ে যাবে।) -গিয়াসুল উমাম, পৃ: ২২২ আরো দেখুন, পৃ: ২০০
শায়েখ আব্দুর রহমান বিন সালেহ আলমাহমুদ ইমামুল হারামাইনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে এর টীকায় লিখেন,
وما أشبه كلام الجويني هذا بالقوانيين الوضعية التي انتشرت بين المسلمين، فإنها شرائع وقوانيين الغرب الكافر من نصارى وغيرهم، وقد حكم الجويني على من يتخذ سنن الأكاسرة مرجعا وعمدة في الدين بالكفر والخروج من الدين. (الحكم بغير ما أنزل الله : أحواله وأحكامه ص 271
“ইমাম জুওয়াইনীর বক্তব্য মুসলমানদের মাঝে বিস্তার লাভ করা মানবরচিত বিধানের সাথে কতইনা মিলে যায়। কেননা এগুলো পশ্চিমা খৃষ্টান ও অন্যান্য কাফেরদের বিধান, রীতিনীতি ও আইনকানুন। আর যে কায়সারদের রীতিনীতি ও আইনকানুনকে দ্বীনের ভিত্তি বানায় ইমাম জুওয়াইনীর বক্তব্য অনুযায়ী সে কাফের ও মুরতাদ হয়ে যায়।” -আলহুকমু বিগাইরি মা আনযালাল্লাহ ,পৃ: ২৭১
Comment