একটি প্রশ্নের উত্তর:- নারীদের জন্য পুরুষদের ছবি-ভিডিও দেখার বিধান
কিছুদিন আগে এক বোন প্রশ্ন করেছিলেন, আমাদের বিভিন্ন প্রকাশনা ও ভিডিওতে নারীদের যে ছবি আসে সেগুলো ঢেকে অস্পষ্ট করে দেয়া হয়, কিন্তু পুরুষের ছবি ঢাকা হয় না। অথচ ভিডিও তো নারীরাও দেখেন, তাহলে কি তাদের গুনাহ হবে না?
তো এর উত্তর হলো:- নারীদের জন্য পুরুষদের দেখার ব্যাপারে আলেমদের দুটি মত রয়েছে,
১. নারীদের জন্য পুরুষকে দেখা হারাম, যেমনিভাবে পুরুষদের জন্য নারীদের দেখা হারাম।
২. যদি ফেতনার আশংকা না থাকে তাহলে নারীদের জন্য পুরুষদের দেখা বৈধ।
যেহেতু উভয় মতের স্বপক্ষেই দলিল রয়েছে তাই সাধারণ অবস্থায় নারীদের জন্য সতর্কতার ভিত্তিতে পুরুষদের থেকে দৃষ্টি অবনত রাখাই বাঞ্ছনীয়। তবে আমরা পুরুষদের যে ছবি-ভিডিও প্রচার করি তা জিহাদের প্রয়োজনেই করে থাকি। এক্ষেত্রে পুরুষদের ছবিও ঢেকে দিলে ছবি-ভিডিওর কোন আবেদন বাকী থাকবে না। আর এসব ছবি-ভিডিওতে সাধারণত আকর্ষণীয় কোন পুরুষের দৃশ্যও না থাকায় ফিতনার আশংকা থাকে না। তাই আশা করি আমাদের বোনেরা শুধু জিহাদের প্রয়োজনে এসব ভিডিও দেখলে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি কারো ক্ষেত্রে এসব ভিডিও দেখলেও ফিতনার আশংকা থাকে তবে তার জন্য তা দেখা বৈধ হবে না। আর বিনা প্রয়োজনে এমনিতেই পুরুষদের ছবি-ভিডিও দেখা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
এবার মূল মাসয়ালা উভয় পক্ষের দলিল সহ পেশ করছি:-
সহিহ মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে কয়েস রাযি. কে অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম রাযি. এর ঘরে ইদ্দত পালন করতে বলেন। -সহিহ মুসলিম, ১৪৮০
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা. বলেন,
قوله: «فإنه رجل أعمى» قال النووي: «احتج بعض الناس بهذا على جواز نظر المرأة إلى الأجنبي، بخلاف نظره إليها، وهذا قول ضعيف، بل الصحيح الذي عليه جمهور العلماء وأكثر الصحابة أنه يحرم على المرأة النظر إلى الأجنبي كما يحرم عليه النظر إليها لقوله تعالى: {قل للمؤمنين يغضوا من أبصارهم} {وقل للمؤمنات يغضضن من أبصارهن} ولأن الفتنة مشتركة وكما يخاف الافتتان بها، تخاف الافتتان به»
ثم احتج النووي بقوله عليه السلام لأم سلمة وميمونة: «أفعمياوان أنتما»؟. ثم قال: «وأما حديث فاطمة بنت قيس مع ابن أم مكتوم فليس فيه إذن لها في النظر إليه بل فيه أنها تأمن عنده من نظر غيرها وهي مأمورة بغض بصرها فيمكنها الاحتراز من النظر بلا مشقة بخلاف بيت أم شريك».
قال العبد الضعيف عفا الله عنه : وأما من قال بجواز نظر المرأة إلى الرجل فاستدل بما أخرجه البخاري في باب نظر المرأة إلى الحبش ونحوهم عن عائشة قالت: "رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يسترني بردائه، وأنا أنظر إلى الحبشة يلعبون في المسجد، حتى أكون أنا التي أسأم". وقال الحافظ تحته: «وظاهر الترجمة أن المصنف كان يذهب إلى جواز نظر المرأة إلى الأجنبي، بخلاف عكسه، وهي مسألة شهيرة، واختلف الترجيح فيها عند الشافعية، وحديث الباب يساعد من أجاز، وقد تقدم في أبواب العيدين جواب النووي عن ذلك، بأن عائشة كانت صغيرة السن دون البلوغ، أو كان قبل الحجاب ...... ولكن تقدم ما يعكر عليه، وأن في بعض طرقه أن ذلك كان بعد قدوم وفد الحبشة، وأن قدومهم كان سنة سبع، ولعائشة يومئذ ست عشرة سنة فكانت بالغة، وكان ذلك بعد الحجاب».
«وحجة من منع حديث أم سلمة المشهور: «أفعمياوان أنتما؟» وهو حديث أخرجه أصحاب السنن، وإسناده قوي. والجمع بين الحديثين احتمال تقدم الواقعة، أو أن يكون في قصة الحديث الذي ذكره نبهان (مولى أم سلمة) شيء يمنع النساء من رؤيته، لكون ابن أم مكتوم أعمى، فلعله كان منه شيء ينكشف ولا يشعر به».
ثم قال الحافظ: «ويقوي الجواز استمرار العمل على جواز خروج النساء إلى المساجد والأسواق والأسفار منتقبات، لئلا يراهن الرجال، ولم يؤمر الرجال قط بالانتقاب لئلا يراهم النساء، فدل على تغاير الحكم بين الطائفتين. وبهذا احتج الغزالي على الجواز، فقال: لسنا نقول إن وجه الرجل في حقها عورة كوجه المرأة في حقه، بل هو كوجه الأمرد في حق الرجل، فيحرم النظر عنه خوف الفتنة فقط، وإن لم تكن فتنة فلا» راجع فتح الباري تكملة فتح الملهم بشرح صحيح الإمام مسلم - المجلد الأول (ص: 137)
“ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘কেউ কেউ এ হাদিস দিয়ে মহিলাদের জন্য বেগানা পুরুষের দিকে তাকানো বৈধ হওয়ার পক্ষে দলিল দিয়েছেন। এ মতটি দূর্বল। বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম ও অধিকাংশ সাহাবীর মতে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একে অপরের দিকে তাকানো হারাম। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘(হে নবী!) আপনি মুমিনদের বলে দিন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে, …. এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারাও যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে।’ (সুরা নূর, ২৯-৩০) তাছাড়া ফিতনার আশংকা তো উভয় পক্ষেই রয়েছে।’
এরপর ইমাম নববী রহ. তার বক্তব্যের স্বপক্ষে উম্মে সালামা ও মাইমুনাহ রাযি. এর হাদিস দিয়ে দলিল দেন, তারা একদিন রাসূলের কাছে বসা ছিলেন। তখন অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম রাযি. রাসূলের নিকট আসলে রাসূল তাদেরকে ভিতরে যেতে বলেন। তারা বললেন, তিনি তো অন্ধ, আমাদের দেখবেন না? রাসূল বললেন, ‘তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাবে না?’ (সুনানে তিরমিযি, ২৭৭৮ ইমাম তিরমিযি রহ. সহিহ বলেছেন)
আর যারা জায়েয হওয়ার মত অবলম্বন করেছেন, তারা সহিহ বুখারীতে বর্ণিত আয়েশা রাযি. এর হাদিস দিয়ে দলিল দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি একদিন হাবশীদের খেলা দেখছিলাম। তারা মসজিদের আঙ্গিনায় খেলছিল। আমি খেলা দেখে বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত দেখছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর চাদর দিয়ে আড়াল করে রেখেছিলেন।’ )সহিহ বুখারী, ৫২৩৬)
হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন, ‘ইমাম বুখারী হাদিসের যে শিরোনাম দিয়েছেন তা থেকে বুঝে আসে, তিনি মহিলাদের জন্য বেগানা পুরুষকে দেখা জায়েয হওয়ার পক্ষে। এটি একটি প্রসিদ্ধ মাসয়ালা। এ ব্যাপারে শাফেয়ী মাযহাবের আলেমদের মধ্যে কোন মতটি অগ্রগণ্য তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। উল্লিখিত হাদিসটি বৈধতাকে প্রমাণ করে। ইমাম নববী রহ. এর উত্তরে বলেছেন, আয়েশা তখন ছোট ছিলেন, কিংবা তখনোও পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়নি। কিন্তু হাদিসটির কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, এ ঘটনাটি ঘটেছে হাবশার লোকেরা রাসূলের নিকট প্রতিনিধিরূপে আসার সময়ে। আর তারা এসেছিলেন নবম হিজরীতে। তখন আয়েশা রাযি. এর বয়স ছিল ষোল বছর, সুতরাং তিনি বালেগাই ছিলেন। আর তখন পর্দার বিধানও অবতীর্ণ হয়ে গিয়েছিল।’ ……
এরপর হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন, মুসলমানদের নিরবিচ্ছিন আমল হলো, মহিলারা নেকাব পড়ে মসজিদ, বাজার ও সফরে বের হয়, যেন পুরুষরা তাদের দেখতে না পায়। কিন্তু মহিলারা যেন পুরুষদের দেখতে না পায় এজন্য পুরুষদের কখনো নেকাব পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। এটা পুরুষ-মহিলা দুই শ্রেণীর হুকুম ভিন্ন হওয়ার দলিল। এর আলোকেই ইমাম গাযালী রহ. জায়েয হওয়ার মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মহিলার জন্য পুরুষের চেহারা দেখা পুরুষের জন্য দাড়িবিহীন বালকের চেহারা দেখার মতো। যদি ফিতনার আশংকা থাকে তবে দেখা হারাম হবে। আর যদি ফিতনার আশংকা না থাকে তাহলে বৈধ হবে।” -তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, ১/১৩৭
উল্লেখ্য, এ মাসয়ালা ব্যাপকভাবে প্রচার করা কাম্য নয়, কেননা বর্তমান যমানা হিসেবে মহিলারাও পুরুষকে দেখতে পারবে না- এ ফতোয়াই মুনাসিব। শরিয়তের সব মাসয়ালা সবসময় প্রকাশ করা ঠিক না। অনেক সময় জাহেল সুবিধাবাদীরা কিছু কিছু মাসয়ালার অপব্যবহার করে থাকে। তাই ফতোয়া দেয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রচলন, প্রশ্নকারীর অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের বিবেচনা করা জরুরী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক বৃদ্ধ এসে রোযা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে স্ত্রীসুলভ আচরণ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন? রাসূল তাকে অনুমতি দিলেন। এরপর এক যুবক এসে হুবহু একই প্রশ্ন করলে, তিনি তাকে নিষেধ করে দিলেন। –সুনানে আবু দাউদ, ২৩৮৭
অথচ একাধিক সহিহ হাদিসে খোদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক রোযা অবস্থায় স্ত্রীদের চুমো দেওয়ার বিষয়টি সুপ্রমানিত। -সহিহ বুখারী, ১৯২৭-১৯২৯ সহিহ মুসলিম, ১১০৬-১১০৮ কিন্তু যেহেতু যুবক স্ত্রীসুলভ আচরণ শুরু করলে নিজেকে এর উপরই সীমাবদ্ধ রাখতে পারবে না। সে আরো আগে বেড়ে যাবে, যা তার রোযা ভাঙ্গার কারণ হতে পারে, কিন্তু বৃদ্ধের অবস্থা ভিন্ন। তাই রাসূল দুজনকে ভিন্ন ভিন্ন ফতোয়া দিয়েছেন।
তো ফিতনা-ফাসাদের বর্তমান যুগে পর্দার ব্যাপারে শিথিলতামূলক কোন ফতোয়া প্রচার করা উচিত নয়। মিযানুর রহমান আযহারী নারীদের চেহারায় নেকাব ব্যবহারের ব্যাপারে দলিলের আলোকে যে মতভেদ উল্লেখ করেছেন তা সঠিক হলেও এর প্রচার করাটা ঠিক হয়নি। কারণ এখন এমনিতেই নারীরা নেকাব পড়তে চায় না। আবার যদি তারা শুনে যে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে এবং চেহারা খোলা রাখার পক্ষেও দলিল রয়েছে, তো যারা এখন নেকার পড়ে না তারা তো কখনো নেকাব পড়তে চাইবেই না, বরং যারা নেকাব পড়ে তাদের অনেকেই হয়তো নেকাব খুলে ফেলবে। আযহারী সাহেব যতই বলেন, “চেহারা সৌন্দর্যের রাজধানী, তাই আমার নিকট চেহারা ঢেকে রাখার মতটিই রাজেহ-অগ্রগণ্য”- এতে হয়তো খুব বেশি কাজ হবে না।
যেহেতু প্রশ্ন এসেই গেছে, তাই বাধ্য হয়ে উত্তর দিতে হলো। তাছাড়া আশা করি জিহাদের প্রতি আগ্রহী বোনেরা এ ফতোয়ার অপব্যবহারও করবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
কিছুদিন আগে এক বোন প্রশ্ন করেছিলেন, আমাদের বিভিন্ন প্রকাশনা ও ভিডিওতে নারীদের যে ছবি আসে সেগুলো ঢেকে অস্পষ্ট করে দেয়া হয়, কিন্তু পুরুষের ছবি ঢাকা হয় না। অথচ ভিডিও তো নারীরাও দেখেন, তাহলে কি তাদের গুনাহ হবে না?
তো এর উত্তর হলো:- নারীদের জন্য পুরুষদের দেখার ব্যাপারে আলেমদের দুটি মত রয়েছে,
১. নারীদের জন্য পুরুষকে দেখা হারাম, যেমনিভাবে পুরুষদের জন্য নারীদের দেখা হারাম।
২. যদি ফেতনার আশংকা না থাকে তাহলে নারীদের জন্য পুরুষদের দেখা বৈধ।
যেহেতু উভয় মতের স্বপক্ষেই দলিল রয়েছে তাই সাধারণ অবস্থায় নারীদের জন্য সতর্কতার ভিত্তিতে পুরুষদের থেকে দৃষ্টি অবনত রাখাই বাঞ্ছনীয়। তবে আমরা পুরুষদের যে ছবি-ভিডিও প্রচার করি তা জিহাদের প্রয়োজনেই করে থাকি। এক্ষেত্রে পুরুষদের ছবিও ঢেকে দিলে ছবি-ভিডিওর কোন আবেদন বাকী থাকবে না। আর এসব ছবি-ভিডিওতে সাধারণত আকর্ষণীয় কোন পুরুষের দৃশ্যও না থাকায় ফিতনার আশংকা থাকে না। তাই আশা করি আমাদের বোনেরা শুধু জিহাদের প্রয়োজনে এসব ভিডিও দেখলে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি কারো ক্ষেত্রে এসব ভিডিও দেখলেও ফিতনার আশংকা থাকে তবে তার জন্য তা দেখা বৈধ হবে না। আর বিনা প্রয়োজনে এমনিতেই পুরুষদের ছবি-ভিডিও দেখা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
এবার মূল মাসয়ালা উভয় পক্ষের দলিল সহ পেশ করছি:-
সহিহ মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে কয়েস রাযি. কে অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম রাযি. এর ঘরে ইদ্দত পালন করতে বলেন। -সহিহ মুসলিম, ১৪৮০
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা. বলেন,
قوله: «فإنه رجل أعمى» قال النووي: «احتج بعض الناس بهذا على جواز نظر المرأة إلى الأجنبي، بخلاف نظره إليها، وهذا قول ضعيف، بل الصحيح الذي عليه جمهور العلماء وأكثر الصحابة أنه يحرم على المرأة النظر إلى الأجنبي كما يحرم عليه النظر إليها لقوله تعالى: {قل للمؤمنين يغضوا من أبصارهم} {وقل للمؤمنات يغضضن من أبصارهن} ولأن الفتنة مشتركة وكما يخاف الافتتان بها، تخاف الافتتان به»
ثم احتج النووي بقوله عليه السلام لأم سلمة وميمونة: «أفعمياوان أنتما»؟. ثم قال: «وأما حديث فاطمة بنت قيس مع ابن أم مكتوم فليس فيه إذن لها في النظر إليه بل فيه أنها تأمن عنده من نظر غيرها وهي مأمورة بغض بصرها فيمكنها الاحتراز من النظر بلا مشقة بخلاف بيت أم شريك».
قال العبد الضعيف عفا الله عنه : وأما من قال بجواز نظر المرأة إلى الرجل فاستدل بما أخرجه البخاري في باب نظر المرأة إلى الحبش ونحوهم عن عائشة قالت: "رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يسترني بردائه، وأنا أنظر إلى الحبشة يلعبون في المسجد، حتى أكون أنا التي أسأم". وقال الحافظ تحته: «وظاهر الترجمة أن المصنف كان يذهب إلى جواز نظر المرأة إلى الأجنبي، بخلاف عكسه، وهي مسألة شهيرة، واختلف الترجيح فيها عند الشافعية، وحديث الباب يساعد من أجاز، وقد تقدم في أبواب العيدين جواب النووي عن ذلك، بأن عائشة كانت صغيرة السن دون البلوغ، أو كان قبل الحجاب ...... ولكن تقدم ما يعكر عليه، وأن في بعض طرقه أن ذلك كان بعد قدوم وفد الحبشة، وأن قدومهم كان سنة سبع، ولعائشة يومئذ ست عشرة سنة فكانت بالغة، وكان ذلك بعد الحجاب».
«وحجة من منع حديث أم سلمة المشهور: «أفعمياوان أنتما؟» وهو حديث أخرجه أصحاب السنن، وإسناده قوي. والجمع بين الحديثين احتمال تقدم الواقعة، أو أن يكون في قصة الحديث الذي ذكره نبهان (مولى أم سلمة) شيء يمنع النساء من رؤيته، لكون ابن أم مكتوم أعمى، فلعله كان منه شيء ينكشف ولا يشعر به».
ثم قال الحافظ: «ويقوي الجواز استمرار العمل على جواز خروج النساء إلى المساجد والأسواق والأسفار منتقبات، لئلا يراهن الرجال، ولم يؤمر الرجال قط بالانتقاب لئلا يراهم النساء، فدل على تغاير الحكم بين الطائفتين. وبهذا احتج الغزالي على الجواز، فقال: لسنا نقول إن وجه الرجل في حقها عورة كوجه المرأة في حقه، بل هو كوجه الأمرد في حق الرجل، فيحرم النظر عنه خوف الفتنة فقط، وإن لم تكن فتنة فلا» راجع فتح الباري تكملة فتح الملهم بشرح صحيح الإمام مسلم - المجلد الأول (ص: 137)
“ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘কেউ কেউ এ হাদিস দিয়ে মহিলাদের জন্য বেগানা পুরুষের দিকে তাকানো বৈধ হওয়ার পক্ষে দলিল দিয়েছেন। এ মতটি দূর্বল। বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম ও অধিকাংশ সাহাবীর মতে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একে অপরের দিকে তাকানো হারাম। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘(হে নবী!) আপনি মুমিনদের বলে দিন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে, …. এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারাও যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে।’ (সুরা নূর, ২৯-৩০) তাছাড়া ফিতনার আশংকা তো উভয় পক্ষেই রয়েছে।’
এরপর ইমাম নববী রহ. তার বক্তব্যের স্বপক্ষে উম্মে সালামা ও মাইমুনাহ রাযি. এর হাদিস দিয়ে দলিল দেন, তারা একদিন রাসূলের কাছে বসা ছিলেন। তখন অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম রাযি. রাসূলের নিকট আসলে রাসূল তাদেরকে ভিতরে যেতে বলেন। তারা বললেন, তিনি তো অন্ধ, আমাদের দেখবেন না? রাসূল বললেন, ‘তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাবে না?’ (সুনানে তিরমিযি, ২৭৭৮ ইমাম তিরমিযি রহ. সহিহ বলেছেন)
আর যারা জায়েয হওয়ার মত অবলম্বন করেছেন, তারা সহিহ বুখারীতে বর্ণিত আয়েশা রাযি. এর হাদিস দিয়ে দলিল দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি একদিন হাবশীদের খেলা দেখছিলাম। তারা মসজিদের আঙ্গিনায় খেলছিল। আমি খেলা দেখে বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত দেখছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর চাদর দিয়ে আড়াল করে রেখেছিলেন।’ )সহিহ বুখারী, ৫২৩৬)
হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন, ‘ইমাম বুখারী হাদিসের যে শিরোনাম দিয়েছেন তা থেকে বুঝে আসে, তিনি মহিলাদের জন্য বেগানা পুরুষকে দেখা জায়েয হওয়ার পক্ষে। এটি একটি প্রসিদ্ধ মাসয়ালা। এ ব্যাপারে শাফেয়ী মাযহাবের আলেমদের মধ্যে কোন মতটি অগ্রগণ্য তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। উল্লিখিত হাদিসটি বৈধতাকে প্রমাণ করে। ইমাম নববী রহ. এর উত্তরে বলেছেন, আয়েশা তখন ছোট ছিলেন, কিংবা তখনোও পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়নি। কিন্তু হাদিসটির কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, এ ঘটনাটি ঘটেছে হাবশার লোকেরা রাসূলের নিকট প্রতিনিধিরূপে আসার সময়ে। আর তারা এসেছিলেন নবম হিজরীতে। তখন আয়েশা রাযি. এর বয়স ছিল ষোল বছর, সুতরাং তিনি বালেগাই ছিলেন। আর তখন পর্দার বিধানও অবতীর্ণ হয়ে গিয়েছিল।’ ……
এরপর হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন, মুসলমানদের নিরবিচ্ছিন আমল হলো, মহিলারা নেকাব পড়ে মসজিদ, বাজার ও সফরে বের হয়, যেন পুরুষরা তাদের দেখতে না পায়। কিন্তু মহিলারা যেন পুরুষদের দেখতে না পায় এজন্য পুরুষদের কখনো নেকাব পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। এটা পুরুষ-মহিলা দুই শ্রেণীর হুকুম ভিন্ন হওয়ার দলিল। এর আলোকেই ইমাম গাযালী রহ. জায়েয হওয়ার মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মহিলার জন্য পুরুষের চেহারা দেখা পুরুষের জন্য দাড়িবিহীন বালকের চেহারা দেখার মতো। যদি ফিতনার আশংকা থাকে তবে দেখা হারাম হবে। আর যদি ফিতনার আশংকা না থাকে তাহলে বৈধ হবে।” -তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, ১/১৩৭
উল্লেখ্য, এ মাসয়ালা ব্যাপকভাবে প্রচার করা কাম্য নয়, কেননা বর্তমান যমানা হিসেবে মহিলারাও পুরুষকে দেখতে পারবে না- এ ফতোয়াই মুনাসিব। শরিয়তের সব মাসয়ালা সবসময় প্রকাশ করা ঠিক না। অনেক সময় জাহেল সুবিধাবাদীরা কিছু কিছু মাসয়ালার অপব্যবহার করে থাকে। তাই ফতোয়া দেয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রচলন, প্রশ্নকারীর অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের বিবেচনা করা জরুরী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক বৃদ্ধ এসে রোযা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে স্ত্রীসুলভ আচরণ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন? রাসূল তাকে অনুমতি দিলেন। এরপর এক যুবক এসে হুবহু একই প্রশ্ন করলে, তিনি তাকে নিষেধ করে দিলেন। –সুনানে আবু দাউদ, ২৩৮৭
অথচ একাধিক সহিহ হাদিসে খোদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক রোযা অবস্থায় স্ত্রীদের চুমো দেওয়ার বিষয়টি সুপ্রমানিত। -সহিহ বুখারী, ১৯২৭-১৯২৯ সহিহ মুসলিম, ১১০৬-১১০৮ কিন্তু যেহেতু যুবক স্ত্রীসুলভ আচরণ শুরু করলে নিজেকে এর উপরই সীমাবদ্ধ রাখতে পারবে না। সে আরো আগে বেড়ে যাবে, যা তার রোযা ভাঙ্গার কারণ হতে পারে, কিন্তু বৃদ্ধের অবস্থা ভিন্ন। তাই রাসূল দুজনকে ভিন্ন ভিন্ন ফতোয়া দিয়েছেন।
তো ফিতনা-ফাসাদের বর্তমান যুগে পর্দার ব্যাপারে শিথিলতামূলক কোন ফতোয়া প্রচার করা উচিত নয়। মিযানুর রহমান আযহারী নারীদের চেহারায় নেকাব ব্যবহারের ব্যাপারে দলিলের আলোকে যে মতভেদ উল্লেখ করেছেন তা সঠিক হলেও এর প্রচার করাটা ঠিক হয়নি। কারণ এখন এমনিতেই নারীরা নেকাব পড়তে চায় না। আবার যদি তারা শুনে যে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে এবং চেহারা খোলা রাখার পক্ষেও দলিল রয়েছে, তো যারা এখন নেকার পড়ে না তারা তো কখনো নেকাব পড়তে চাইবেই না, বরং যারা নেকাব পড়ে তাদের অনেকেই হয়তো নেকাব খুলে ফেলবে। আযহারী সাহেব যতই বলেন, “চেহারা সৌন্দর্যের রাজধানী, তাই আমার নিকট চেহারা ঢেকে রাখার মতটিই রাজেহ-অগ্রগণ্য”- এতে হয়তো খুব বেশি কাজ হবে না।
যেহেতু প্রশ্ন এসেই গেছে, তাই বাধ্য হয়ে উত্তর দিতে হলো। তাছাড়া আশা করি জিহাদের প্রতি আগ্রহী বোনেরা এ ফতোয়ার অপব্যবহারও করবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
Comment