রাসুলুল্লাহ সা. আল্লাহ তাআলার কাছে দুয়া করেছিলেন :
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فَنَاءَ أُمَّتِي فِي سَبِيلِكَ بِالطَّعْنِ وَالطَّاعُونِ
হে আল্লাহ, আপনি আমার উম্মাহর মৃত্যু নির্ধারণ করুন আপনার পথে (তির, তরবারি বা বর্শার) আঘাত বা প্লেগের (মহামারি) মাধ্যমে। [মুসনাদু আহমাদ : ১৫৬০৮, ১৮০৮০]
আল্লাহ তাআলা তার দুয়া কবুল করেছেন। রাসুলুল্লাহ সা. সেই সংবাদও উম্মাহকে জানিয়েছেন। আবু মুসা আশআরি রা. বর্ণনা করেন :
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” فَنَاءُ أُمَّتِي بِالطَّعْنِ وَالطَّاعُونِ “. قَالَ : فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَذَا الطَّعْنُ قَدْ عَرَفْنَاهُ، فَمَا الطَّاعُونُ ؟ قَالَ : ” طَعْنُ أَعْدَائِكُمْ مِنَ الْجِنِّ، وَفِي كُلٍّ شَهَادَةٌ “.
রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘আমার উম্মাহর মৃত্যু হবে আঘাতে ও মহামারিতে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আঘাতের বিষয়টা তো চিনলাম। মহামারিটা আবার কী জিনিস?’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের জিন দুশমনদের আঘাত। আর প্রতিটিতেই রয়েছে শাহাদাত।’ [মুসনাদু আহমাদ : ১৯৭৪৩]
অন্য বর্ণনায় শেষোক্ত বাক্যটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে :
وَخْزُ أَعْدَائِكُمْ مِنَ الْجِنِّ، وَفِي كُلٍّ شُهَدَاءُ
তোমাদের জিন দুশমনদের আঘাত এবং প্রতিটিতেই রয়েছে কিছু শহিদ। [প্রাগুক্ত : ১৯৫২৮]
এসব হাদিসের আলোকে অনুমিত হয়, উম্মাহর মৃত্যু হবে জিহাদের ময়দানে – এটাই রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাম্য ও প্রার্থনা ছিল। উম্মাহর সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাঁর এই প্রার্থনা কবুলও করেছেন। জিহাদ দু-প্রকার : (ক) প্রত্যক্ষ, (খ) পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ জিহাদে মৃত্যু ঘটে তির, তরবারি, বর্শা, বুলেট ও বোমার আঘাতে। এই জিহাদ হয় মানব দুশমনদের সাথে। পক্ষান্তরে পরোক্ষ জিহাদ হয় জিন দুশমনদের সাথে। সেক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে অদৃশ্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও মহামারির আঘাতে। এ কারণেই এই প্রকার জিহাদে প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হয় অদৃশ্য শক্তির দ্বারা। তাওহিদ ও ইমান বিশুদ্ধিকরণ এবং হেফাজতের দুয়া, ইসতিগফার, রুকইয়াহ ও সুন্নাহর চর্চা ইত্যাদি দ্বারা বান্দা জিন দুশমনদের আঘাত থেকে সুরক্ষা পায়। যেহেতু উভয়টিই জিহাদ, তাই উভয় প্রকার জিহাদে যারা মৃত্যুবরণ করে, তারা শহিদ হিসেবে বিবেচিত হয়; শাহাদাতের মর্যাদা তাদের ভাগ্যে লেখা হয়।
ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর রা. শামে বাহিনী পাঠানোর সময় এই দুয়া করে দিয়েছিলেন :
اللهم اقبضهم بما قبضت به بني إسرائيل بالطعن والطاعون
হে আল্লাহ, আপনি তাদের প্রাণ নিন আঘাত ও মহামারি দ্বারা, যা দ্বারা আপনি বনি ইসরাইলেরও প্রাণ নিয়েছিলেন। [আস-সিয়ারুল কাবির, বাবু ওসায়াল উমারা, ইমাম মুহাম্মাদ রহ. রচিত]
এই দুয়া দ্বারা তিনি মূলত তাদের অন্তর থেকে ঘরে ফেরার প্রত্যাশা দূর করতে চেয়েছিলেন। শামে মহামারির বেশ প্রসার ছিল। তাই তিনি আল্লাহর কাছে দুয়া করে দিলেন, এই মুজাহিদ বাহিনীর মৃত্যু যেন হয় হয়তো মানব শত্রুদের হাতে কিংবা জিন শত্রুদের হাতে। শত্রুর প্রত্যক্ষ আঘাত বা পরোক্ষ আঘাতই যেন তাদের মৃত্যুর কারণ হয়; অন্যকিছু নয়।
যেহেতু মহামারিবেষ্টিত অঞ্চলও এক ধরনের রণাঙ্গন, তাই তা থেকে পালাতে বারণ করা হয়েছে। বর্ণিত আছে :
مَا الطَّاعُونُ ؟ قَالَ : ” غُدَّةٌ كَغُدَّةِ الْإِبِلِ، الْمُقِيمُ فِيهَا كَالشَّهِيدِ، وَالْفَارُّ مِنْهَا كَالْفَارِّ مِنَ الزَّحْفِ “.
জিজ্ঞেস করা হলো, প্লেগ কী? রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, উটের মহামারির মতো এক ধরনের মহামারি। তাতে অবস্থানকারী ব্যক্তি শহিদের মতো এবং তা থেকে পলায়নকারী ব্যক্তি জিহাদ থেকে পলায়নকারী ব্যক্তির মতো। [মুসনাদু আহমাদ : ২৬১৮২]
উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে এ-ও অনুমিত হয় যে, আমাদেরকে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমরা যেহেতু প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে শহিদ হতে চাই না, এ জন্য আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে পরোক্ষ লড়াইয়ে আমাদের শাহাদাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আর এই অদৃশ্য লড়াইয়ে জিন দুশমনদের মোকাবিলা করতে চাইলে আমাদেরকে অদৃশ্য শক্তি ব্যবহার করতে হবে। সেই শক্তি কী, এ উত্তর না হয় আপনিই খুঁজে বের করুন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামি গবেষক, দা'ঈ।
(সংগৃহিত)
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فَنَاءَ أُمَّتِي فِي سَبِيلِكَ بِالطَّعْنِ وَالطَّاعُونِ
হে আল্লাহ, আপনি আমার উম্মাহর মৃত্যু নির্ধারণ করুন আপনার পথে (তির, তরবারি বা বর্শার) আঘাত বা প্লেগের (মহামারি) মাধ্যমে। [মুসনাদু আহমাদ : ১৫৬০৮, ১৮০৮০]
আল্লাহ তাআলা তার দুয়া কবুল করেছেন। রাসুলুল্লাহ সা. সেই সংবাদও উম্মাহকে জানিয়েছেন। আবু মুসা আশআরি রা. বর্ণনা করেন :
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” فَنَاءُ أُمَّتِي بِالطَّعْنِ وَالطَّاعُونِ “. قَالَ : فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَذَا الطَّعْنُ قَدْ عَرَفْنَاهُ، فَمَا الطَّاعُونُ ؟ قَالَ : ” طَعْنُ أَعْدَائِكُمْ مِنَ الْجِنِّ، وَفِي كُلٍّ شَهَادَةٌ “.
রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘আমার উম্মাহর মৃত্যু হবে আঘাতে ও মহামারিতে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আঘাতের বিষয়টা তো চিনলাম। মহামারিটা আবার কী জিনিস?’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের জিন দুশমনদের আঘাত। আর প্রতিটিতেই রয়েছে শাহাদাত।’ [মুসনাদু আহমাদ : ১৯৭৪৩]
অন্য বর্ণনায় শেষোক্ত বাক্যটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে :
وَخْزُ أَعْدَائِكُمْ مِنَ الْجِنِّ، وَفِي كُلٍّ شُهَدَاءُ
তোমাদের জিন দুশমনদের আঘাত এবং প্রতিটিতেই রয়েছে কিছু শহিদ। [প্রাগুক্ত : ১৯৫২৮]
এসব হাদিসের আলোকে অনুমিত হয়, উম্মাহর মৃত্যু হবে জিহাদের ময়দানে – এটাই রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাম্য ও প্রার্থনা ছিল। উম্মাহর সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাঁর এই প্রার্থনা কবুলও করেছেন। জিহাদ দু-প্রকার : (ক) প্রত্যক্ষ, (খ) পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ জিহাদে মৃত্যু ঘটে তির, তরবারি, বর্শা, বুলেট ও বোমার আঘাতে। এই জিহাদ হয় মানব দুশমনদের সাথে। পক্ষান্তরে পরোক্ষ জিহাদ হয় জিন দুশমনদের সাথে। সেক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে অদৃশ্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও মহামারির আঘাতে। এ কারণেই এই প্রকার জিহাদে প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হয় অদৃশ্য শক্তির দ্বারা। তাওহিদ ও ইমান বিশুদ্ধিকরণ এবং হেফাজতের দুয়া, ইসতিগফার, রুকইয়াহ ও সুন্নাহর চর্চা ইত্যাদি দ্বারা বান্দা জিন দুশমনদের আঘাত থেকে সুরক্ষা পায়। যেহেতু উভয়টিই জিহাদ, তাই উভয় প্রকার জিহাদে যারা মৃত্যুবরণ করে, তারা শহিদ হিসেবে বিবেচিত হয়; শাহাদাতের মর্যাদা তাদের ভাগ্যে লেখা হয়।
ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর রা. শামে বাহিনী পাঠানোর সময় এই দুয়া করে দিয়েছিলেন :
اللهم اقبضهم بما قبضت به بني إسرائيل بالطعن والطاعون
হে আল্লাহ, আপনি তাদের প্রাণ নিন আঘাত ও মহামারি দ্বারা, যা দ্বারা আপনি বনি ইসরাইলেরও প্রাণ নিয়েছিলেন। [আস-সিয়ারুল কাবির, বাবু ওসায়াল উমারা, ইমাম মুহাম্মাদ রহ. রচিত]
এই দুয়া দ্বারা তিনি মূলত তাদের অন্তর থেকে ঘরে ফেরার প্রত্যাশা দূর করতে চেয়েছিলেন। শামে মহামারির বেশ প্রসার ছিল। তাই তিনি আল্লাহর কাছে দুয়া করে দিলেন, এই মুজাহিদ বাহিনীর মৃত্যু যেন হয় হয়তো মানব শত্রুদের হাতে কিংবা জিন শত্রুদের হাতে। শত্রুর প্রত্যক্ষ আঘাত বা পরোক্ষ আঘাতই যেন তাদের মৃত্যুর কারণ হয়; অন্যকিছু নয়।
যেহেতু মহামারিবেষ্টিত অঞ্চলও এক ধরনের রণাঙ্গন, তাই তা থেকে পালাতে বারণ করা হয়েছে। বর্ণিত আছে :
مَا الطَّاعُونُ ؟ قَالَ : ” غُدَّةٌ كَغُدَّةِ الْإِبِلِ، الْمُقِيمُ فِيهَا كَالشَّهِيدِ، وَالْفَارُّ مِنْهَا كَالْفَارِّ مِنَ الزَّحْفِ “.
জিজ্ঞেস করা হলো, প্লেগ কী? রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, উটের মহামারির মতো এক ধরনের মহামারি। তাতে অবস্থানকারী ব্যক্তি শহিদের মতো এবং তা থেকে পলায়নকারী ব্যক্তি জিহাদ থেকে পলায়নকারী ব্যক্তির মতো। [মুসনাদু আহমাদ : ২৬১৮২]
উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে এ-ও অনুমিত হয় যে, আমাদেরকে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমরা যেহেতু প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে শহিদ হতে চাই না, এ জন্য আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে পরোক্ষ লড়াইয়ে আমাদের শাহাদাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আর এই অদৃশ্য লড়াইয়ে জিন দুশমনদের মোকাবিলা করতে চাইলে আমাদেরকে অদৃশ্য শক্তি ব্যবহার করতে হবে। সেই শক্তি কী, এ উত্তর না হয় আপনিই খুঁজে বের করুন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামি গবেষক, দা'ঈ।
(সংগৃহিত)
Comment