করোনা মহামারি ০১. সংক্রামক ব্যাধি- ০২
গত পর্বে আমরা রোগের সংক্রমণ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমরা দেখেছি যে, সংক্রমণ ইসলামী আকীদার পরিপন্থী নয়। আর ইসলাম যে সংক্রমণ অস্বীকার করেছে সেটা হলো জাহিলি আকিদার সংক্রমণ, যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়াই রোগ বিস্তারের শক্তি আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। ইসলাম এটি অস্বীকার করেছে। ইসলামের আকীদা হলো, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুই হতে পারে না। রোগের সংক্রমণও আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়ে থাকে।
সংক্রমণ নিয়ে ইনশাআল্লাহ এ পর্বে আরেকটু আলোচনা করবো। এ প্রসঙ্গে আমরা আজ দু’টি হাদিস নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
হাদিস ০১
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
اقتلوا الحيات واقتلوا ذا الطفيتين والأبتر فإنهما يطمسان البصر ويستسقطان الحبل
“সাপ মেরে ফেলবে। বিশেষত পিঠে শুভ্র দুই রেখাবিশিষ্ট সাপ এবং লেজকাটা সাপ মেরে ফেলবে। কেননা, এ দু’টি দৃষ্টি শক্তি নষ্ট করে দেয় এবং গর্ভপাত করে দেয়।” –সহীহ বুখারি ৩১২৩এ দু’টি সাপ এমনই বিষাক্ত যে, এদের দিকে তাকালে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং অনেক সময় গর্ভবতী মহিলার গর্ভস্থ বাচ্চা তৎক্ষণাৎ ভূমিষ্ঠ হয়ে পড়ে।
দেখার বিষয় যে, সাপে কামড় দেয়নি। দূরে থেকে শুধু তাকিয়েছে। এতেই এমন প্রভাব পড়েছে যে, চোখ অন্ধ হয়ে গেছে এবং গর্ভপাত হয়ে গেছে।
হাদিস ০২
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
العين حق
“চোখ লাগা বাস্তব ও সত্য।” –সহীহ বুখারি ৫৪০৮
“চোখ লাগা বাস্তব ও সত্য।” –সহীহ বুখারি ৫৪০৮
কিছু মানুষ এমন আছে যে, এরা যদি কোনো সুন্দর ব্যক্তি বা জিনিসের দিকে তাকায় তাহলে নজর লেগে যায়। নজর লাগা ব্যক্তি তৎক্ষণাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে এমনকি কোনো কোনো সময় মারাও যায়।
দেখার বিষয়, ব্যক্তি কিন্তু তাকে কিছু করেনি। তাকিয়েছে শুধু। ব্যস, এতটুকুই।
সাপ এবং চোখের যে তা’ছির যা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং বাস্তবতাও এর সাক্ষী- এটি দুইভাবের কোনো একভাবে হতে পারে,
১. হয়তো সাপ বা ব্যক্তির চোখ থেকে কোনো বিষ বেড়িয়ে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির উপর পড়েছে;
২. কিংবা কোনো কিছুই বেড়োয়নি, তাকানোর দ্বারাই আল্লাহ তাআলা তার মাঝে রোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
হাফেয ইবনে হাজার রহ. (৮৫২হি.) বলেন,
التأثير بإرادة الله تعالى وخلقه ليس مقصورا على الاتصال الجسماني بل يكون تارة به وتارة بالمقابلة وأخرى بمجرد الرؤية –فتح الباري 10\201
“তা’ছির হয়ে থাকে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায়। তা শুধু শারীরিক সংস্পর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কখনও এভাবেও হতে পারে আবার কখনও মুখোমুখী হওয়া এবং কখনও শুধু তাকানোর দ্বারাও হতে পারে।” –ফাতহুল বারি ১০/২০১বুঝা গেল, একজন দ্বারা আরেকজনে আক্রান্ত হওয়ার জন্য শারীরিক সংস্পর্শও অনেক সময় দরকার পড়ে না। অনেক সময় শুধু সামনা সামনি হওয়া এবং অনেক সময় শুধু তাকানোর দ্বারাই হয়ে যেতে পারে। ইবনে হাজার রহ. বিষয়টি আরো কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়েছেন। বিস্তারিত সেখানে দেখা যেতে পারে।
আমাদের গত পর্বে এ হাদিসটি গিয়েছে,
لا تديموا النظر إلى المجذومين
“কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে না।” –সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৫৪৩
“কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে না।” –সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৫৪৩
তাদের দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকাও আক্রান্ত হওয়ার কারণ হতে পারে। তবে সকল রোগই যে তাকানোর দ্বারা বা সংস্পর্শের দ্বারা সংক্রমিত হয় তা না। কিছু কিছু রোগে এমন হতে পারে।
যাহোক, সব মিলিয়ে বুঝা গেল, একজনের সংস্পর্শে, চলাফেরায় ও উঠা-বসায় আরেকজন আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটি ইসলামী আকিদার পরিপন্থী নয়, যখন আমার বিশ্বাস থাকবে যে, এ আক্রান্ত হওয়াও আল্লাহর ইচ্ছায়। আল্লাহর ইচ্ছা না হলে হবে না। যাদের বেলায় হচ্ছে না তাদের বেলায় আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা নেই। ওয়াল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আ’লাম।
***
Comment