অগোছালো কিছু কথা -০২
এগার. হুজুর, অনেকে বলেন, ইসলামে ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। ইসলাম সব ধর্মের স্বাধীনতা দেয়।
উত্তর: আমার ধর্ম বলে,
فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ
‘মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর। তাদের পাকড়াও কর, অবরোধ কর এবং তাদের (অপহরণ ও গুপ্ত হত্যার) জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে (ওঁৎপেতে) বসে থাক।’- তাওবা: ৫
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ
‘তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর; আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দেবেন, তাদের অপদস্থ করবেন, তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন এবং মুমিন কওমের অন্তর জুড়িয়ে দেবেন।’ –তাওবা: ১৪
এখন যদি আমি কাফেরদের মারতে না পারি, ধরতে না পারি; গুম, গুপ্ত হত্যা, কিডনেপ ও অপহরণ করে অন্তর জুড়াতে না পারি তাহলে তো আমার ধর্মের স্বাধীনতা থাকছে না। ইসলাম তো আমার ধর্মের স্বাধীনতা দিয়েছে।
বার. তাকফির করা না’কি খারেজিদের কাজ?
উত্তর: তাকফির করলেই যদি খারেজি হয়ে যায় তাহলে তো আবু বকর রাদি. সবচেয়ে বড় খারেজি। উম্মতে মুহাম্মাদির মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম তাকফিরের দরজা খোলেছেন। তাকফির করে কিতাল করেছেন। হত্যা করেছেন, বন্দী করেছেন। সম্পদ গনিমত বানিয়েছেন। তাদের বিবি বাচ্চাদের গোলাম বাদি বানিয়েছেন।
দলীলের আলোকে যে কাফের তাকে তাকফির করাই সিদ্দিকি মানহাজ, আহলুস সুন্নাহর মানহাজ।
তের. কোনো কোনো আলেমকে বলতে শুনেছি, তালেবান ঠিক আছে। আলকায়েদা উগ্রপন্থী।
উত্তর: আলকায়েদার হাতে মার খেয়ে যেদিন কুফরি বিশ্ব আলকায়েদাকে মুজাহিদ স্বীকৃতি দেবে কিংবা যেদিন আলকায়েদার হাতে হিন্দুস্তানে খেলাফতের পতাকা উড়বে সেদিন আলকায়েদাও মু’তাদিল হয়ে যাবে। সেদিন আলকায়েদা দেওবন্দের সন্তানে পরিণত হবে, যেমন আজ তালেবানরা দেওবন্দের সন্তানে পরিণত হচ্ছেন।
চৌদ্দ. তালেবান না’কি আলকায়েদার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে?
উত্তর: অনেকে এমন অলিক স্বপ্ন দেখছিলেন। এমন কামনাই করছিলেন। সেটাই উনাদের মুখ দিয়ে বের হচ্ছে। নতুবা এমন কোনো সংবাদ পাইনি। যারা বলছে তারাও পায়নি। তবে মনকে তো মানাতে পারছে না তাই একটা কথা বলছে আর কি। তালেবান আগের মতোই আলকায়েদার বাইয়াত ধরে রেখেছে। আলকায়েদাও আগের মতোই তালেবানের হাতে বাইয়াত হয়ে আছে। কা-লবুনইয়ানিল মারসুস। মাঝখানে কিছু লোক দিবাস্বপ্ন স্বপ্ন দেখে তৃপ্তি নেয়ার চেষ্টা করছে।
পনের. এক মুফতি সাহেব বলেছেন, বাংলাদেশ দারুল হরব হলে তো মুশকিল। দারুল হরব থেকে হিজরত করা তো ফরয।
উত্তর: নামাযে এক লোকের বাতাস বের হয়ে গেল। মুফতি সাহেব ফতোয়া দিচ্ছেন বাতাস বের হয়নি। বের হলে তো নামায নষ্ট হয়ে যাবে, আবার পড়তে হবে। এটা ঝামেলা। এর চেয়ে বরং বের হয়নিটাই সোজা।
এ ফতোয়াও এমনই।
অধিকন্তু দারুল হরব থেকে হিজরত করতে হবে এটা মুফতি সাহেব কোথায় পেলেন? দারুল হরব উদ্ধার করা ফরয। হিজরত করতে হবে যখন হিজরতের মতো কোনো দারুল ইসলাম থাকবে। অন্যথায় যেখানে থাকলে অধিকতর ভালভাবে দ্বীনের কাজ করা যায় সেখানেই থাকবে। বর্তমানে হিজরত করে যাওয়ার মতো রাষ্ট্র পাওয়া যাচ্ছে না। আর পাওয়া গেলেও সম্ভব হচ্ছে না সকলের জন্য। এর চেয়ে বরং নিজের দেশে থেকে জিহাদ করাই ভাল। জিহাদ ফরয হয়ে যাবে ভয়ে দারুল হরবই হয়নি ফতোয়া দেয়ার সুযোগ নেই।
তাছাড়া যদি ধরি দারুল হরব হয়নি তাহলেও জিহাদ মাফ নেই। কাফেররা যখন দারুল ইসলামে দখলদারিত্ব কায়েম করে তখন এ দখলদার শত্রু হটানো ফরয। এ ব্যাপারে উম্মাহর কোনো ইমামের মাঝে কোনো দ্বিমত নেই। আসলি কাফের আর মুরতাদ কাফেরের মাঝেও কোনো ব্যবধান নেই। জিহাদ সকলের বিরুদ্ধেই ফরয। তবে বেশকম এতটুকু যে, মুরতাদদেরকে ছাড়া যাবে না। হয় মুসলমান হবে নইলে হত্যা করে দেয়া হবে।
অতএব, দারুল হরব হলেও জিহাদ মাফ নেই না হলেও মাফ নেই।
ষোল. এত কাফের কাফের কর কেন তোমরা? সবাইকে তোমরা কাফের বানিয়ে ফেলবে না’কি?
উত্তর: লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। কাফের বানাতে যাব কেন? যারা কাফের হয়ে গেছে আমরা তো কেবল তাদের ব্যাপারে সতর্ক করে যাচ্ছি। যেন সাধারণ মুসলিমরা এদের থেকে এবং এদের কুফর থেকে বেঁচে থাকে। এদের সাথে যেন বিবাহশাদি না হয়। এদের জবাইকৃত পশু যেন না খায়। এদেরকে যেন সমাজ ও রাষ্ট্রের কোনো পদে না বসায়। কোনো পদে বসে থাকলে যেন অপসারণ করে। সর্বোপরি কুফর থেকে ফিরে না আসলে যেন এদের উপর মুরতাদের শাস্তি প্রয়োগ করে। এগুলো যেগুলো কুরআন সুন্নাহর বিধান আমরা সেগুলো শুধু বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা কাফের বানাতে যাব কেন?
সতের. আলকায়েদা তালেবান আমেরিকার তৈরি।
উত্তর: তাহলে আমরাও বলতে পারি, আপনারা আমেরিকার তৈরি। আপনারা আমেরিকার দালাল।
যদি বলেন, না, আমরা এমন নই; তাহলে আমরাও বলবো, আমরাও আমেরিকার তৈরি নই। বিশ্বাস না হলে আমেরিকার দিকে তাকান, আলকায়েদা তালেবানের মুগুড় খেয়ে শিয়াল মশাইয়ের কি হাল!
আঠার. জিহাদিরা নেট থেকে ইলম নেয়।
উত্তর: নেট থেকে সবাই নেয়, দোষ শুধু মুজাহিদদের। করোনার সময় বাংলাদেশের মুফতি সাহেবরা যে ফতোয়াগুলো দিয়েছেন সেগুলো তাকি উসমানী সাহেবদের এবং দেওবন্দের ফতোয়ার হুবহু অনুবাদ বলা চলে। সেগুলো তারা কোত্থেকে নিয়েছেন? কে গিয়েছিল পাকিস্তানে আর কে গিয়েছিল দেওবন্দে ফতোয়া আনতে?
হয়তো বলবেন, আমরা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের থেকে নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে নিই।
আমাদেরও একই কথা। নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এবং নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট থেকেই নিই। আজেবাজে সাইট ব্রাউজ করা, আজেবাজে কারো লেখা পড়া জিহাদি মানহাজে নিষিদ্ধ। তাহলে আমাদের দোষ হল কোথায়?
অধিকন্তু মুজাহিদ আলেমরা যারা ফতোয়া দেন, তারা নেট পড়ে আলেম হননি, নেট পড়ে ফতোয়াও দেন না। উস্তাদের দরবারে হাঁটু গেড়ে সবক পড়েই তারা আলেম হয়েছেন। কিতাব পড়েই ফতোয়া দিচ্ছেন। নেট একটা সহায়ক মাধ্যম, যেমন আপনাদের জন্যও সেটি সহায়ক মাধ্যম।
উনিশ. তানজিমের মাসুলদের আনুগত্য কি ফরয?
উত্তর: জি ভাই, ফরয। আপনিই বলুন, যদি আপনি এ শর্তে তানজিমে ঢুকতে চাইতেন যে, মাসুলদের আপনি আনুগত্য করবেন না, নিজের মতো চলবেন: তাহলে কি আপনাকে তানজিম কোনো দিন নিতো? আপনাকে নেয়াই হয়েছে এ শর্তে যে, তানজিমের নিয়ম কানুন মেনে চলবেন। নয়তো আপনাকে নিয়ে ভেজাল কে বাড়াতো? আল্লাহ তাআলা অঙ্গীকার পূরণের আদেশ দিয়েছেন। গাদ্দারি হারাম করেছেন।
তবে আনুগত্যের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো, যেসব বিষয়ে যতটুকু কর্তৃত্ব এর বাহিরে চাপ দিতে পারবেন না মাসুল ভাই।
তানজিমের স্বার্থ বিরোধী কিংবা আমনিয়ার খেলাফ কোনো কাজ করার অধিকার কোনো সাথীর নেই। দ্বিতীয়ত যে মাসুলকে যতটুকু কর্তৃত্ব তানজিমের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ততটুকুতে তার আনুগত্য করতে হবে। এর বিপরীত করলে নাফরমানির গুনাহ হবে। আর তানজিমও পড়বে হুমকির মুখে। কোনো ভাইয়ের জন্য এমন কাজ করা কখনই জায়েয হবে না।
তবে তানজিম সকল সাথীর জন্য মাশওয়ারা ও রায় দেয়ার দরজা খোলা রেখেছে। বরং সাথীদের যোগ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তানজিম অনেক সময় সাথীরা না চাইলেও তাদের থেকে রায় তলব করে। সেখানে আমাদের কোনো খটকা থাকলে বা কোনো ভাল খেয়াল আসলে পেশ করতে পারি। তানজিমের উদ্দেশ্য, সাথীরা যেন বুঝে শুনে কাজ করে। জি হুজুর জি হুজুর তানজিমের মানহাজের খেলাফ। নিজের নজর ও ফিকির বাড়াতে চেষ্টা করুন। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার যোগ্যতা গড়ে তুলুন। আমাদের কোনো ভাই গ্রেফতার হলে বা শহীদ হলে যেন আমাদের কাজ স্থবির না হয়ে পড়ে। এটাই তানজিম চায়। তাই আদব ইহতিরামের সাথে আপনার রায় দিন। আপনার রায় গ্রহণ না হলে কষ্ট নেবেন না। বিদ্রোহ করবেন না। আনুগত্য করুন। পাশাপাশি নিজের যোগ্যতা বাড়াতে চেষ্টা করুন। অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তারের লক্ষে নয়, আল্লাহর দ্বীনের স্বার্থে। হাদিসে এসেছে,
المؤمن القوي خير من المؤمن الضعيف
দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক ভাল।
দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক ভাল।
এ সবলতা ঈমানী, আমলী, ইলমী, শারীরিক ও ফিকরি: সব দিককে শামিল করে।
বিশ. আমাকে শুধু কিতাব পড়তে বলে, লিখতে বলে। আমি বলেছি আমাকে আসকারিতে নিন। নিলো না।
উত্তর: মুহতারাম ভাই, আমাদের কাজের গণ্ডি অনেক বিশাল। একজন সব শাখায় কাজ করতে পারে না। যাকে যে কাজে তানজিম যোগ্য মনে করে তাকে সে কাজেই লাগায়। আপনার মাঝে হয়তো তারা ইলমী যোগ্যতা দেখেছেন। তাই এ কাজ আপনাকে দিয়েছেন। সবরের সাথে করে যান। মা’রেকার সওয়াবও পাবেন ইনশাআল্লাহ।
আজকের মজলিসে এ দশটিই। সামনের মজলিসে ইনশাআল্লাহ ….।
Comment