শরিয়াহ! কি ভয়ংকর! -
ডঃ আইয়াদ কুনাইবি
শরিয়াহ বাস্তবায়ন সম্পর্কে মানুষের শোনা কথা এবং এর ফলে অহেতুক ভয়ের কারনে তা প্রত্যাখ্যানের প্রেক্ষিতে বলা যায়, কেউ ভাবতে পারে যেদিন শরিয়াহ ‘প্রয়োগ’ (Enforced) করা হবে সেই ভয়ানক দিনের সকালে, ‘প্রয়োগকারিরা’ (Enforcers) মানুষদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে উত্তপ্ত লোহার শলাকা দিয়ে খুঁচিয়ে চোখ উপড়ে ফেলবে, তাদের হাত কেটে ফেলবে এবং পশ্চাৎদেশে চাবুক মারবে।
যেন ‘সুলতান’-এর সৈন্যরা প্রতিটি জানালার আড়ালে লুকিয়ে আছে, দেখছে কে এক ওয়াক্ত সালাত মিস করেছে আর ওমনি বাসায় ঢুকে পড়বে, জোর করে তওবা করাবে আর রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবে!
যেন পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশির কোর্ট বসবে যেখানে মানুষের বুক চিরে দেখা হবে গোপনভাবে সে শরিয়াহ লঙ্ঘন করেছে কি না এবং প্রয়োগকারিদের প্রতি তাদের ভালবাসা, বিশ্বাস ও আনুগত্য আছে কি না।
যেদিন শরিয়াহ প্রয়োগ করা হবে সেদিন যেন মানুষজন তাদের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়বে আর মহিলারা তাদের শিশুসহ শরিয়াহ’র এই প্লাবনে ভেসে যাবে।
আমি বলতে পারব না! এগুলো বোধ হয় শরিয়াহ’র এমন গোপন বিষয় যার ব্যাপারে আমরা জানিই না! অথবা তারা ভাবে আমরা শরিয়াহ বলতে বোধ হয় চেঙ্গিশ খানের শরিয়াহ বুঝাই!
এটাই যদি বুঝে থাকেন, তাহলে আপনার কাছে মাফ চাই! স্পষ্ট করে বলতে চাইঃ আমরা যে শরিয়াহ’র কথা বলছি তা হচ্ছে অসীম দয়ালু, পরম করুণাময়, সদাশয় ও দয়াময় স্বত্বার যিনি বলেছেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্নজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত।” [৬৭:১৪]
আমরা সেই শরিয়াহ’র আলোচনা করছি যা প্রকাশ করেছেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ যিনি আদেশ করেছেন {ন্যায়বিচার, অন্যের কল্যান করা ও নিকটাত্মীয়দের দান করা এবং নিষেধ করেছেন ব্যাভিচার, পাপ কাজ ও নিপীড়ন} [১৬:৯০] । আমরা সেই শরিয়াহ’র আলোচনা করছি যা সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর বান্দার সুবিধার জন্যই প্রকাশ করেছেন কারন তিনি তাদের দূর্বলতা সম্পর্কে জানেন, তিনি বলেছেন, “আল্লাহ তোমাদের বোঝা হালকা করতে চান, কারন মানুষকে দূর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে।” [৪:২৮]
আমরা সেই শরিয়াহ’র কথা বলছি যা একজন বাবাকে বলে তার সন্তানদের প্রতি দয়ালু হতে, সন্তানদের বলে তার পিতা-মাতা’র সাথে ভাল আচরন করতে এবং মায়ের পায়ের তলায় পড়ে থাকতে এবং শাসককে বলে তার প্রজাদের ব্যাপারে নম্র হতে ও তাদের শাসনের পূর্বে নিজের উপর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে।
আমরা সেই শরিয়াহ’র কথা বলছি মুসলিমরা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যাতে অংশ নেয়, যা তাদেরকে রক্ষা করতে উদগ্রীব এবং যার দাওয়াত তারা মানুষকে দেয়, কারন এটাই তাদের উদ্দেশ্য, তাদের আত্মা এবং আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার উপায়। এটা সেই শরিয়াহ যাতে উম্মাহ হবে একটি একক দেহের মত, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার শিকল থেকে স্বাধীন যে শিকল মর্যাদা থেকে তাকে দাসে পরিণত করে, সম্মানহানী করে এবং হরণ করে।
এটা রাষ্ট্রের সেই শরিয়াহ যা ‘একজন’ মুসলিমের ব্যক্তিস্বত্বাকে অন্য যেকোন রাষ্ট্রের তুলনায় অপরিসীম মর্যাদা দেয়; ইসলামি রাষ্ট্র ‘একজন’ ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং তার অধিকারের জন্য সেনাবাহিনী পাঠায়, তাঁকে বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করে এবং তার রক্তের প্রতিশোধ নেয় যেমনটি আল্লাহর রাসূল (সা) করেছিলেন মু’তার যুদ্ধে সেনা সমাবেশ করে, বনু কাইনুকা’কে বিতাড়িত করার মাধ্যমে, ‘বাইয়াতে রিদওয়ান’-এ তাঁর সাহাবিদের কাছ থেকে মৃত্যুর বাইয়াত নিয়ে এবং উসামাকে অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলে…. সবকিছুই ছিল ‘একজন’ মুসলিমের জন্য।
আমরা সেই শরিয়াহ’র কথা বলি যা দুর্বৃত্তদের বাধা দেয় মুসলিমদের তহবিল লুট করতে এবং তা সুইজারল্যান্ডে জমা করতে যখন তাদের প্রতিবেশীরা আবর্জনা থেকে খাবার খুঁজছে! এটা খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও শিক্ষা নিশ্চিত করবে নারী, পুরুষ, তরুন, বৃদ্ধ, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের জন্য এবং পাশাপাশি শরিয়াহ’র তত্ত্বাবধায়কদের জন্যও।
এটা সেই শরিয়াহ যার আচরন তরুনদের প্রতি ক্ষমাশীল ও নারীদের প্রতি সম্মান; তাদের দেহকে সস্তা পন্যের মত দোকানের জানালায় ও ম্যাগাজিনে প্রদর্শনে বাধা দেয় এবং বাধা দেয় সমাজের নারী ও পুরুষের মধ্যকার প্রতিযোগিতার অপপ্রচারকে যা দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বাস ও সহযোগিতা, ন্যায়পরায়নতা ও ধার্মিকতার বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কের ভিত্তির উপর এবং উম্মাহ’র মহিমাকে অসংযত উন্মত্ততায় যেতে বাধা দেয় …..এই শরিয়াহ একটা নামহীন লেখককে থামায় যে আল্লাহর কিতাবকে উপহাস করে বা রাসূল (সা)-কে অপমান করে খ্যাতি পেতে চায়।
এই শরিয়াহ সমাজকে রক্ষা করে মাতালদের হাত থেকে, তাদের অপরাধ থেকে, সম্পদের ক্ষতি সাধন করা থেকে এবং অন্যদের প্রতি তাদের সীমা লঙ্ঘন থেকে। এটা সেই শরিয়াহ যা হৃদয়কে সুরক্ষা দেয় এবং প্রতিভার কদর করে যাতে পৃথিবীকে গড়ে তোলা যায়, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সীমা অতিক্রম করা যায় এবং মানবজাতির মঙ্গল সাধন করা যায়।
এটাই শরিয়াহ! একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মানুষ বসবাস করবে, সন্তান প্রতিপালন করবে এবং সুরক্ষায় অবদান রাখবে।
এটাই শরিয়াহ…….পবিত্রতা, সতীত্ব, সম্মান, চমত্কারিত্ব, কোমলতা, নম্রতা এবং উদারতা।
যদি রাসূল (সা)-এর সমাজ যা শরিয়াহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ছিল সর্বোচ্চ সীমায়, আব্দুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল এর মত লোকের উপস্থিতি মেনে নিতে পারে যে ছিল মুনাফিকদের নেতা, যে রাসূল (সা)-কে কষ্ট দিয়েছিল এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল.....শরিয়াহ তাকে স্থান দিয়েছিল কারন সে প্রকাশ্যে তার অবিশ্বাসের কথা ঘোষনা করেনি, বরং বাহ্যিক ভাবে শরিয়াহ’র প্রতি মিথ্যা আনুগত্য দেখিয়েছিল..... আমাদের শরিয়াহ দুষ্কর্মে সহযোগী হবে না বরং তা গুনাহগার মুসলিম যাদের নাকের ধুলা ইবনে সালুলের চেয়ে উত্তম, তাদের অবস্থান কি মেনে নিবে না, গুনাহ’র পরিমান যাই হোক না কেন?
যখন শিষ্টাচারহীন,লোভী লোকগুলো যারা নিজের ন্যায্য অংশের চেয়ে বেশী কামনা করেছিল, তারা যখন রাসূল (সা)-কে বলল, “ন্যায় বিচার করুন হে মুহাম্মাদ, কারন আপনি তা করছেন না” , তখন রাসূল (সা) ধৈর্য্যের সাথে বলেছিলেন, “আল্লাহ মুসা (আ)-এর প্রতি রহম করুন, কারন তাঁকে এর চেয়েও নিষ্ঠুর কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি সহ্য করেছিলেন”, ….. যে শরিয়াহ নিয়ে আমরা কথা বলছি সেই শরিয়াহ-তে মূর্খরা হয়ত মুসলিমদের নেতাকে নিয়ে প্রকাশ্যে অপমান করতে পারতো, কিন্তু তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং সহনশীলতার সাথে বিষয়টার মোকাবিলা করেছিলেন কারন তিনি নিজের জন্য প্রতিশোধ নেননি। তিনি তখনই শাস্তি দিতেন যখন আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমা অতিক্রম করা হত এবং পবিত্রতা লঙ্ঘন করা হত।
এই শরিয়াহ’র কথাই আমরা বলছি …… এরপরও কেউ যদি থাকে যার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে দম আটকে আসে, যার নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং শরিয়াহ’র আলোতে চোখ অন্ধ হয়ে যায়, লুত (আ)-এর উম্মতের মত পবিত্রতাকে যে উৎপীড়ন মনে করে কারন ব্যাভিচার ছাড়া সে বেঁচে থাকতে পারে না যা চার জন সাক্ষীর মাধ্যমে যাচাইযোগ্য, মদ ছাড়া যে বাঁচতে পারে না যা তার মুখের দূর্গন্ধ থেকে টের পাওয়া যায়, বাঁচতে পারে না কর্মের উন্মত্ততা এবং তার পোশাকের অপবিত্রতা থেকে, বাঁচতে পারে না চুরি থেকে যদিও শরিয়াহ তার ক্ষুদাকে প্রশমিত করেছে …… তাহলে তার জন্য শরিয়াহ’কে ভয় পাওয়া ঠিকই আছে! আর যদি সে তার বাসার ছাদ থেকে এক কদম আগাতে চায় তাহলে এগিয়ে যাও! কিন্তু তাকে এটা করতে হবে গোপনে, আর্তনাদ করা যাবে না, চেঁচামেচি যাবে না এবং মানুষকে শরিয়াহ থেকে দূরে সরানো যাবে না, কারন সে এমনকি গুনাহগার মুসলিমদের মধ্যেও পড়ে না, যারা অন্তরের গভীরে শরিয়াহ’কে শুধু ভালই বাসে না, যখন প্রয়োগ করা হবে তখন তার জন্য সর্বোচ্চ অবদান রাখবে।
সে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে উপস্থাপন করে না!
ইংরেজি বক্তব্যের লিঙ্কঃ
Allah, onubadok ke uttom zaja dan korun....
ডঃ আইয়াদ কুনাইবি
শরিয়াহ বাস্তবায়ন সম্পর্কে মানুষের শোনা কথা এবং এর ফলে অহেতুক ভয়ের কারনে তা প্রত্যাখ্যানের প্রেক্ষিতে বলা যায়, কেউ ভাবতে পারে যেদিন শরিয়াহ ‘প্রয়োগ’ (Enforced) করা হবে সেই ভয়ানক দিনের সকালে, ‘প্রয়োগকারিরা’ (Enforcers) মানুষদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে উত্তপ্ত লোহার শলাকা দিয়ে খুঁচিয়ে চোখ উপড়ে ফেলবে, তাদের হাত কেটে ফেলবে এবং পশ্চাৎদেশে চাবুক মারবে।
যেন ‘সুলতান’-এর সৈন্যরা প্রতিটি জানালার আড়ালে লুকিয়ে আছে, দেখছে কে এক ওয়াক্ত সালাত মিস করেছে আর ওমনি বাসায় ঢুকে পড়বে, জোর করে তওবা করাবে আর রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবে!
যেন পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশির কোর্ট বসবে যেখানে মানুষের বুক চিরে দেখা হবে গোপনভাবে সে শরিয়াহ লঙ্ঘন করেছে কি না এবং প্রয়োগকারিদের প্রতি তাদের ভালবাসা, বিশ্বাস ও আনুগত্য আছে কি না।
যেদিন শরিয়াহ প্রয়োগ করা হবে সেদিন যেন মানুষজন তাদের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়বে আর মহিলারা তাদের শিশুসহ শরিয়াহ’র এই প্লাবনে ভেসে যাবে।
আমি বলতে পারব না! এগুলো বোধ হয় শরিয়াহ’র এমন গোপন বিষয় যার ব্যাপারে আমরা জানিই না! অথবা তারা ভাবে আমরা শরিয়াহ বলতে বোধ হয় চেঙ্গিশ খানের শরিয়াহ বুঝাই!
এটাই যদি বুঝে থাকেন, তাহলে আপনার কাছে মাফ চাই! স্পষ্ট করে বলতে চাইঃ আমরা যে শরিয়াহ’র কথা বলছি তা হচ্ছে অসীম দয়ালু, পরম করুণাময়, সদাশয় ও দয়াময় স্বত্বার যিনি বলেছেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্নজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত।” [৬৭:১৪]
আমরা সেই শরিয়াহ’র আলোচনা করছি যা প্রকাশ করেছেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ যিনি আদেশ করেছেন {ন্যায়বিচার, অন্যের কল্যান করা ও নিকটাত্মীয়দের দান করা এবং নিষেধ করেছেন ব্যাভিচার, পাপ কাজ ও নিপীড়ন} [১৬:৯০] । আমরা সেই শরিয়াহ’র আলোচনা করছি যা সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর বান্দার সুবিধার জন্যই প্রকাশ করেছেন কারন তিনি তাদের দূর্বলতা সম্পর্কে জানেন, তিনি বলেছেন, “আল্লাহ তোমাদের বোঝা হালকা করতে চান, কারন মানুষকে দূর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে।” [৪:২৮]
আমরা সেই শরিয়াহ’র কথা বলছি যা একজন বাবাকে বলে তার সন্তানদের প্রতি দয়ালু হতে, সন্তানদের বলে তার পিতা-মাতা’র সাথে ভাল আচরন করতে এবং মায়ের পায়ের তলায় পড়ে থাকতে এবং শাসককে বলে তার প্রজাদের ব্যাপারে নম্র হতে ও তাদের শাসনের পূর্বে নিজের উপর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে।
আমরা সেই শরিয়াহ’র কথা বলছি মুসলিমরা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যাতে অংশ নেয়, যা তাদেরকে রক্ষা করতে উদগ্রীব এবং যার দাওয়াত তারা মানুষকে দেয়, কারন এটাই তাদের উদ্দেশ্য, তাদের আত্মা এবং আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার উপায়। এটা সেই শরিয়াহ যাতে উম্মাহ হবে একটি একক দেহের মত, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার শিকল থেকে স্বাধীন যে শিকল মর্যাদা থেকে তাকে দাসে পরিণত করে, সম্মানহানী করে এবং হরণ করে।
এটা রাষ্ট্রের সেই শরিয়াহ যা ‘একজন’ মুসলিমের ব্যক্তিস্বত্বাকে অন্য যেকোন রাষ্ট্রের তুলনায় অপরিসীম মর্যাদা দেয়; ইসলামি রাষ্ট্র ‘একজন’ ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং তার অধিকারের জন্য সেনাবাহিনী পাঠায়, তাঁকে বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করে এবং তার রক্তের প্রতিশোধ নেয় যেমনটি আল্লাহর রাসূল (সা) করেছিলেন মু’তার যুদ্ধে সেনা সমাবেশ করে, বনু কাইনুকা’কে বিতাড়িত করার মাধ্যমে, ‘বাইয়াতে রিদওয়ান’-এ তাঁর সাহাবিদের কাছ থেকে মৃত্যুর বাইয়াত নিয়ে এবং উসামাকে অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলে…. সবকিছুই ছিল ‘একজন’ মুসলিমের জন্য।
আমরা সেই শরিয়াহ’র কথা বলি যা দুর্বৃত্তদের বাধা দেয় মুসলিমদের তহবিল লুট করতে এবং তা সুইজারল্যান্ডে জমা করতে যখন তাদের প্রতিবেশীরা আবর্জনা থেকে খাবার খুঁজছে! এটা খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও শিক্ষা নিশ্চিত করবে নারী, পুরুষ, তরুন, বৃদ্ধ, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের জন্য এবং পাশাপাশি শরিয়াহ’র তত্ত্বাবধায়কদের জন্যও।
এটা সেই শরিয়াহ যার আচরন তরুনদের প্রতি ক্ষমাশীল ও নারীদের প্রতি সম্মান; তাদের দেহকে সস্তা পন্যের মত দোকানের জানালায় ও ম্যাগাজিনে প্রদর্শনে বাধা দেয় এবং বাধা দেয় সমাজের নারী ও পুরুষের মধ্যকার প্রতিযোগিতার অপপ্রচারকে যা দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বাস ও সহযোগিতা, ন্যায়পরায়নতা ও ধার্মিকতার বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কের ভিত্তির উপর এবং উম্মাহ’র মহিমাকে অসংযত উন্মত্ততায় যেতে বাধা দেয় …..এই শরিয়াহ একটা নামহীন লেখককে থামায় যে আল্লাহর কিতাবকে উপহাস করে বা রাসূল (সা)-কে অপমান করে খ্যাতি পেতে চায়।
এই শরিয়াহ সমাজকে রক্ষা করে মাতালদের হাত থেকে, তাদের অপরাধ থেকে, সম্পদের ক্ষতি সাধন করা থেকে এবং অন্যদের প্রতি তাদের সীমা লঙ্ঘন থেকে। এটা সেই শরিয়াহ যা হৃদয়কে সুরক্ষা দেয় এবং প্রতিভার কদর করে যাতে পৃথিবীকে গড়ে তোলা যায়, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সীমা অতিক্রম করা যায় এবং মানবজাতির মঙ্গল সাধন করা যায়।
এটাই শরিয়াহ! একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মানুষ বসবাস করবে, সন্তান প্রতিপালন করবে এবং সুরক্ষায় অবদান রাখবে।
এটাই শরিয়াহ…….পবিত্রতা, সতীত্ব, সম্মান, চমত্কারিত্ব, কোমলতা, নম্রতা এবং উদারতা।
যদি রাসূল (সা)-এর সমাজ যা শরিয়াহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ছিল সর্বোচ্চ সীমায়, আব্দুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল এর মত লোকের উপস্থিতি মেনে নিতে পারে যে ছিল মুনাফিকদের নেতা, যে রাসূল (সা)-কে কষ্ট দিয়েছিল এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল.....শরিয়াহ তাকে স্থান দিয়েছিল কারন সে প্রকাশ্যে তার অবিশ্বাসের কথা ঘোষনা করেনি, বরং বাহ্যিক ভাবে শরিয়াহ’র প্রতি মিথ্যা আনুগত্য দেখিয়েছিল..... আমাদের শরিয়াহ দুষ্কর্মে সহযোগী হবে না বরং তা গুনাহগার মুসলিম যাদের নাকের ধুলা ইবনে সালুলের চেয়ে উত্তম, তাদের অবস্থান কি মেনে নিবে না, গুনাহ’র পরিমান যাই হোক না কেন?
যখন শিষ্টাচারহীন,লোভী লোকগুলো যারা নিজের ন্যায্য অংশের চেয়ে বেশী কামনা করেছিল, তারা যখন রাসূল (সা)-কে বলল, “ন্যায় বিচার করুন হে মুহাম্মাদ, কারন আপনি তা করছেন না” , তখন রাসূল (সা) ধৈর্য্যের সাথে বলেছিলেন, “আল্লাহ মুসা (আ)-এর প্রতি রহম করুন, কারন তাঁকে এর চেয়েও নিষ্ঠুর কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি সহ্য করেছিলেন”, ….. যে শরিয়াহ নিয়ে আমরা কথা বলছি সেই শরিয়াহ-তে মূর্খরা হয়ত মুসলিমদের নেতাকে নিয়ে প্রকাশ্যে অপমান করতে পারতো, কিন্তু তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং সহনশীলতার সাথে বিষয়টার মোকাবিলা করেছিলেন কারন তিনি নিজের জন্য প্রতিশোধ নেননি। তিনি তখনই শাস্তি দিতেন যখন আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমা অতিক্রম করা হত এবং পবিত্রতা লঙ্ঘন করা হত।
এই শরিয়াহ’র কথাই আমরা বলছি …… এরপরও কেউ যদি থাকে যার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে দম আটকে আসে, যার নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং শরিয়াহ’র আলোতে চোখ অন্ধ হয়ে যায়, লুত (আ)-এর উম্মতের মত পবিত্রতাকে যে উৎপীড়ন মনে করে কারন ব্যাভিচার ছাড়া সে বেঁচে থাকতে পারে না যা চার জন সাক্ষীর মাধ্যমে যাচাইযোগ্য, মদ ছাড়া যে বাঁচতে পারে না যা তার মুখের দূর্গন্ধ থেকে টের পাওয়া যায়, বাঁচতে পারে না কর্মের উন্মত্ততা এবং তার পোশাকের অপবিত্রতা থেকে, বাঁচতে পারে না চুরি থেকে যদিও শরিয়াহ তার ক্ষুদাকে প্রশমিত করেছে …… তাহলে তার জন্য শরিয়াহ’কে ভয় পাওয়া ঠিকই আছে! আর যদি সে তার বাসার ছাদ থেকে এক কদম আগাতে চায় তাহলে এগিয়ে যাও! কিন্তু তাকে এটা করতে হবে গোপনে, আর্তনাদ করা যাবে না, চেঁচামেচি যাবে না এবং মানুষকে শরিয়াহ থেকে দূরে সরানো যাবে না, কারন সে এমনকি গুনাহগার মুসলিমদের মধ্যেও পড়ে না, যারা অন্তরের গভীরে শরিয়াহ’কে শুধু ভালই বাসে না, যখন প্রয়োগ করা হবে তখন তার জন্য সর্বোচ্চ অবদান রাখবে।
সে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে উপস্থাপন করে না!
ইংরেজি বক্তব্যের লিঙ্কঃ
Allah, onubadok ke uttom zaja dan korun....
Comment