Announcement

Collapse
No announcement yet.

কয় স্তরে কালামে পাকের তিলওয়াত করব?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কয় স্তরে কালামে পাকের তিলওয়াত করব?

    ফজীলতের বিচারে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ ভাগে কালামে পাকের তিলওয়াত করা উচিত।

    ১. খতমের নিয়তে প্রতিদিন তিলওয়াত
    ২. হেফজের নিয়তে প্রতিদিন কিছু অংশ মুখস্ত করা
    ৩. মাসনুন সুরা ও আয়াতের দৈনিক তিলওয়াত
    ৪. অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝার জন্য তাফসীরসহ দৈনিক তিলওয়াত


    ১. খতমের নিয়তে প্রতিদিন তিলওয়াতঃ
    ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে, কেউ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন: “সর্বোত্তম আমল কোনটি?” রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তর দিলেনঃ “আল হাল ওয়াল মুরতাহিল”। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল: "আল হাল ওয়াল মুর্তাহিল কি?" রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তর দিলেনঃ “সেই কুরআন পাঠকারী, যে শুরু থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত পৌঁছায় এবং শেষের পর শুরু থেকে শুরু করে। যেখানে থামে, সেখান থেকে চলতে থাকে।"
    "আল-হালেম" যে লক্ষ্যে আসে, আর "মুরতাহিল" যে চলে যায় তার নাম। অর্থাৎ কোরান শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবার শুরু থেকে শুরু করে। "কানযুল" উম্মাল "এ এটিকে আল-খাতিমুল-মুফাত্তিহু হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে - সমাপ্তি এবং অবিলম্বে শুরু। অর্থাৎ শেষ হওয়ার পর কোরান পড়া অবিলম্বে আবার শুরু করে।
    সম্ভবত এই অভ্যাসের উত্স যা আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ হওয়ার পরে তারা শুরু থেকে শুরু করে এবং "মুফলিহুন" পর্যন্ত পাঠ করে। কিন্তু আজ মানুষ এটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয় এবং আবার পড়া শেষ করার এহতেমাম করে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এটি হওয়া উচিত নয়। আসলে, স্পষ্টতই এর মানে হল যে আপনাকে দ্বিতীয় পড়া শুরু করতে হবে এবং এটি শেষ করতে হবে।
    "শরহে ইহিয়া" এবং "ইতকান" গ্রন্থে 'আল্লামা সুয়ূতি দারমী থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সূরা "আন-নাস" পড়তেন, তখন তিনি "বাকা্রা" থেকে "মুফলিহুন" পর্যন্ত পড়তেন এবং তার পরে তিনি কুরআনের সমাপ্তি সম্পর্কে দো'আ পড়তেন।


    ২. হেফজের নিয়াতে প্রতিদিন কিছু অংশ মুখস্ত করাঃ

    আবু মূসা আশআরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “কুরআনকে অনুসরণ কর। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, উট যত দ্রুত তার লাগাম থেকে ছুটে যায় তার চেয়েও দ্রুত অন্তর থেকে কোরআন বের হয়।
    যদি কোনও ব্যক্তি কোনও প্রাণীর দেখাশোনা বন্ধ করে দেয়, তবে এটি নিজেকে খুলতে পারে এবং পালিয়ে যেতে পারে। একইভাবে কুরআন অনুসরণ না করলে তা স্মৃতিতে থাকবে না এবং বিস্মৃত হয়ে যাবে। কোরান মুখস্থ হওয়া সত্যই, কোরানেরই একটি সুস্পষ্ট স্বতন্ত্র অলৌকিক ঘটনা। অন্যথায়, কোরানের আকারের অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ বই মুখস্থ করা কেবল কঠিনই নয়, কার্যত অসম্ভব। অতএব, কুরআন যে সহজে মনে রাখা যায়, আল্লাহ সূরা আল কামারে বিশেষ রহমত হিসাবে উল্লেখ করেছেন:
    "এবং আমি কুরআনকে মুখস্থ করার জন্য সহজ করে দিয়েছি, সুতরাং কেউ আছে কি স্মরণকারী।" (54:17)
    জালালায়েন (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) গ্রন্থের লেখক লিখেছেন যে এই আয়াতে মুখস্ত করার অনুরোধের অর্থ একটি আদেশের। তাই আল্লাহ তায়ালা বারবার যে গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন, তাকে আমরা অকেজো, লক্ষ্যহীন এবং সময়ের অপচয় মনে করি। এত বোকামির পরেও কি আমাদের মৃত্যুর জন্য কিছু অপেক্ষা করা উচিত?
    এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, যখন উযায়র (‘আলাইহিস সালাম) স্মৃতি থেকে তৌরাত লিখেছিলেন, তখন তাকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হয়েছিল এবং মুসলমানদের জন্য, আল্লাহ তা’আলা এই রহমতকে সর্বজনীন করে দিয়েছিলেন।
    এক কথায়, কুরআন যা স্মরণ করা হয় তা হল আল্লাহ তায়ালার দয়া ও কল্যাণ, এরপর কেউ যদি তা অবহেলা করে, তবে তা থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। কুরআন মুখস্থ করার পর ভুলে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে তাকে তার সম্প্রদায়ের পাপ দেখানো হয়েছিল এবং তিনি কুরআন মুখস্থ করার পর ভুলে যাওয়ার চেয়ে বড় কোন পাপ করেননি। অন্য জায়গায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করেও তা ভুলে গেল, সে বিচারের দিন আল্লাহর দরবারে কুষ্ঠরোগী হয়ে হাজির হবে। "জামাউল ফাওয়াইদে" রাযীন (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) নিম্নোক্ত আয়াতে দালিল (প্রমাণ) দিয়েছেন;
    “আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে সংকীর্ণ। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধের কাছে সমবেত করব।" তিনি বলেন: "প্রভু, কেন আপনি আমাকে অন্ধ করে তুলেছেন, কারণ আমি দেখতে পাচ্ছিলাম?" তিনি তাকে বলবেন: "এভাবে আমার নিদর্শনগুলি তোমার কাছে এসেছিল, এবং তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে - সুতরাং আজ তোমাকে বিস্মৃত করা হবে।" (20 ত্বহা: 124-126)

    চেষ্টা অব্যাহত রেখে হাফেজ না হতে পারলেও আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন হাফেজদের কাতারে উঠাবেন ইনশাআল্লাহ।

    ৩. মাসনুন সুরা ও আয়াতের দৈনিক তিলওয়াতঃ

    সুরা ইয়াসিনঃ সূরা ইয়াসিনকে বলা হয় পবিত্র কুরআনের হৃদয়। সুরাটিতে রয়েছে ৮৩টি আয়াত, পাঁচটি রুকু এবং ৭টি মুবিন। কেন সূরা ইয়াসিনকে কুরআনের হৃদয় বলা হয় এ নিয়ে তাফসীরকারকরা বিভিন্ন বিশ্লেষণ করেছেন। সুরাটি ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের অনেক বর্ণনা রয়েছে।
    হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুরই একটা হৃদয় থাকে আর কুরআনের হৃদয় হল সুরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন একবার পড়বে, মহান আল্লাহ তাকে দশবার পুরো কুরআন পড়ার সওয়াব দান করবেন।’ (তিরমিজি)
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘সুরা ইয়াসিন কুরআনের রূহ বা হৃৎপিণ্ড। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের কল্যাণ লাভের জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে তার জন্য রয়েছে মাগফিরাত বা ক্ষমা।
    সুরা ইয়াসিন বুঝে পড়ায় রয়েছে অনেক উপকারিতা। এ সুরায় মানুষকে পরকালের প্রস্তুতির দিকে আহ্বান করে। আর পরকালভীতিই মানুষকে সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করে এবং অবৈধ বাসনা ও হারাম কাজ থেকে বিরত রাখে।
    সুতরাং দেহের সুস্থতা যেমন অন্তরের সুস্থতার ওপর নির্ভরশীল তেমনি ঈমানের সুস্থতা পরকালের চিন্তার ওপর নির্ভরশীল। এ সুরার নিয়মিত আমলকারীর প্রতি থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকারীর কোনো গোনাহ থাকে না। সে দিক থেকে পরকালীন কল্যাণের জন্য সুরা ইয়াসিন বুঝে পড়া খুবই জরুরি।
    গোনাহ মাফের মাধ্যম সূরা ইয়াসিন
    প্রতিদিনের কাজ-কর্মে মানুষ অনেক ভুল-ত্রুটি করে থাকে। আর এসব ভুল-ত্রুটি করা গোনাহের কাজ। গোনাহ মানুষকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। আর জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেক আমল করা।
    হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রাতে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তার ওই রাতের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (দারেমি)
    হজরত ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাআলা তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বায়হাকি,আবু দাউদ)
    দুনিয়ার জীবনে সূরা ইয়াসিন পড়লে যে উপকার
    হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি অভাব-অনটনের সময় সুরা ইয়াসিন পাঠ করে তাহলে তার অভাব দূর হয়, সংসারে শান্তি আসে এবং রিজিকে বরকত হয় ‘ (মাজহারি)
    হজরত আতা বিন আবি রাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আমি শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, তার সব হাজত (প্রয়োজন) পূর্ণ করা হবে।’ (দারেমি)
    হজরত ইয়াহইয়া ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে।’ (মাজহারি)
    মৃত্যুর যন্ত্রণা মুক্ত থাকার মাধ্যম সুরা ইয়াসিন
    তাফসিরে জালালাইনের হাশিয়ায় এসেছে, ‘যদি কোনো মুসলমানের মৃত্যুর সময় হয়, আর সে সময় তার পাশে কেউ সুরা ইয়াসিন পাঠ করে, তবে বেহেশত থেকে রেদওয়ান ফেরেশতা জান্নাতের সুসংবাদ না দেয়া পর্যন্ত রূহ কবজকারী ফেরেশতা (মালাকুল মাউত) ওই ব্যক্তির রূহ কবজ করেন না। রূহ কবজের সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তি অবস্থান হয় রাইয়্যান নামক জান্নাতে।
    হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুশয্যা ব্যক্তির কাছে সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে তার মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ হয়ে যায়। (মাজহারি)
    হযরত ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এটা (সুরা ইয়াসিন) তোমাদের মুমূর্ষু (মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে) ব্যক্তিদের কাছে পাঠ কর।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
    সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত প্রতিদিন সকালে অন্তত একবার এ সুরাটি তেলাওয়াত করা। কেননা এ সুরার তেলাওয়াতকারীকে ইহকাল ও পরকালে ব্যাপক কল্যাণ ও শান্তি দান করা হবে।
    অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘এ সুরা কেয়ামতের দিন অধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সুপারিশকারী হবে আর আল্লাহ তাআলা তা অবশ্যই কবুল করবেন।
    সুরা মুলকঃ হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি হাদিস শুনাব, যাহা শুনে তুমি খুশি হবে? উত্তরে সে বলল, হ্যাঁ শুনান। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি নিজে সুরা মুলক পড় এবং পরিবারের সবাইকে ও প্রতিবেশীকে উহা শিক্ষা দাও।কারণ উহা মুক্তিদানকারী ও ঝগড়াকারী। কেয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে ঝগড়া করে উহার পাঠকারীকে সে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করবে এবং কবরের আজাব থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার একান্ত কামনা যে, এই সুরাটি আমার প্রত্যেক উম্মতের অন্তরে গেঁথে (মুখস্ত) থাকুক।’ (ইবনে কাসির)
    - হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুরআন মাজিদে ৩০ (ত্রিশ) আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা রয়েছে, যা তার তেলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার আগ পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। আর সুরাটি হলো تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ অর্থাৎ সুরা মুলক।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
    - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার মন চায় প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে যেন সুরা মুলক মুখস্ত থাকে।’ (বাইহাকি)
    - হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘তোমরা সুরা মুলক শিখে নাও এবং নিজেদের স্ত্রী-সন্তানদের শেখাও। এটা কবরের আজাব হতে রক্ষা করবে এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে এই সুরা পাঠকারীর পক্ষে কথা বলে তাকে মুক্ত করবে।’
    - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা মুলক তেলাওয়াতের আমল করবে সে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে।’ (তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)
    সুরা মুলক তেলাওয়াতের সময়
    সুরা মুলক রাতের বেলা পড়া উত্তম, তবে অন্য যেকোনো সময়ও পড়া যাবে। সুরাটি অর্থ বুঝে নিয়মিত পড়ায় রয়েছে অত্যন্ত তাতপর্য। এই সুরা নামাজের সঙ্গে পড়াও উত্তম। মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-
    - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা মুলক তেলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না।’ (তিরমিজি)

    উল্লেখ্য যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা মুলক না পড়ে ঘুমাতে যেতেন না মর্মে বর্ণনার উপর ভিত্তি করেই আলেম-ওলামা ও বুজুর্গানে দ্বীনগণ ইশার নামাজের পর সুরা মুলকের তেলাওয়াতের আমল করার কথা বলেন। সুতরাং রাতে ঘুমানোর আগে কিংবা ইশার নামাজের পরে বুঝে বুঝে সুরা মুলক পড়া যেতে পারে। সুরা মূলক ৪১ বার (একচল্লিশ) তেলাওয়াত করলে সব বিপদ-আপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায় এবং ঋণ পরিশোধ হয়। এ সুরা পাঠে কবরের আজাব থেকেও বাঁচা যায়।
    আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা মুলকের আমল নিয়মিত করার তাওফিক দান করুন

    সুরা সিজদাহঃ - হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলিফ লাম মীম তানযিল ও তাবারাকাল্লাজি না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না।’
    হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
    সুরা কাহাফঃ জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমা হতে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাত ২১৭৫)।
    জরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সবধরনের ফেৎনা থেকে নিরাপদ থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফিৎনা থেকেও নিরাপদ থাকবে।
    হজরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। - সহিহ মুসলিম : ৮০৯, আবু দাউদ : ৪৩২৩
    হজরত বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাতে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করছিল। তার কাছে দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এরই মধ্যে একটি মেঘখণ্ড এসে তাকে ঢেকে ফেলল। এরপর যখন মেঘখণ্ডটি তার কাছে চলে আসছিল, তখন তার ঘোড়া ছোটাছুটি করতে লাগল। অতঃপর সকালে ওই ব্যক্তি নবীজি সা. - এর কাছে গিয়ে রাতের ঘটনা বললেন। তিনি বললেন, ওটা ছিল সাকিনা (রহমত), যা কোরআন তেলাওয়াতের বরকতে নাজিল হয়েছিল। -সহিহ বোখারি: ৫০১১, ৩৬১৪; সহিহ মুসলিম: ৭৯৫
    হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত থাকবে। সহিহ মুসলিম: ৮০৯, আবু দাউদ: ৪৩২৩
    সুরা ওয়াকিয়াঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা ওয়াক্বিয়াহ পাঠ করবে, সে কখনো ক্ষুধায় কষ্ট ভোগ করবে না।’
    এই সূরা পাঠ করলে দরিদ্রতা গ্রাস করতে পারেনা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) তার মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সূরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন। (বাইহাকি:শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)
    হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) মৃত্যুর আগে বলেন, ‘তাদের (ইবনে মাসউদের সন্তানদের) জন্য আমি সূরা ওয়াকিয়াহ রেখে গেলাম।’
    এই সূরা পাঠ করলে কেউ কখনো গরীব হবে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিরাত্রে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তিলাওয়াত করবে সে কখনো অভাবগ্রস্ত থাকবে না।’
    হাদিসে নারীদের এ সূরা শিক্ষা দেয়ার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। মা আয়েশা (রাঃ)-কে এ সূরা পাঠের জন্য নির্দেশ করা হয়েছিলো। সূরা ওয়াক্বিয়াহ জুমাবার পড়া যেতে পারে। এছাড়া রাতে পড়ার জন্যে হাদিসে বলা আছে।
    সুরা দুখানঃ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন- যে ব্যক্তি জুমার রাত্রিতে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে) সুরা দুখান পাঠ করবে সকাল হওয়ার আগেই তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
    হজরত উমামা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন- যে ব্যক্তি জুমার রাত্রিতে অথবা জুমার দিন সুরা দুখান পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। (কুরতুবী)

    ৪।
    অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝার জন্য তাফসীরসহ দৈনিক তিলওয়াতঃ
    আল-কোরআন বিশ্বে সর্বাধিক পঠিত বই, আবার অর্থ না বুঝে পঠিত বইয়ের তালিকায়ও এটি এক নাম্বারে ! আলহামদুলিল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌ রাহমানির রাহিম (পরম করুণাময় , অসীম দয়ালু), অর্থ না বুঝে পড়লেও এই কিতাব পড়ার পুরস্কার থেকে আমাদের বঞ্চিত করেন না । কিন্তু, অর্থ বুঝে কোরআন পড়া আর না বুঝে পড়া কি এক হল ? আল্লাহ্‌, কোরআন অনুধাবনের গুরুত্ব আরোপ করে বলেন
    এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকতহিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াত সমুহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে । (ছোয়াদ ৩৮:২৯)
    তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না ? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ ? (মুহাম্মদ ৪৭:২৪)
    আল্লাহ্‌ কোরআন আরবি ভাষায় নাযিল করেছেন । যদিও বাংলা ভাষায় অনেক অনুবাদ পাওয়া যায় কিন্তু কোন অনুবাদকেও মূল কোরআনের সমতুল্য বলা যাবে না । জসীম উদ্দীনের “নকশী কাঁথার মাঠ” এর ইংরেজী অনুবাদ (The Field of Embroidered Quilt) পড়ে কি কখনও মূল বাংলা ভাষার মাধুর্য অনুধাবন করা যাবে ? অনুরূপ ভাবে কোরআনের ভাষার মাধুর্য অনুধাবন করতে হলে কোরআনের ভাষাতেই কোরআন বুঝা উচিত । আর বোঝার জন্যে আল্লাহ্‌তো কোরআনকে সহজ করে নাযিল করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ্‌ । সূরা কামার এ এই কথাটি আল্লাহ্‌ ৪ বার বলেছেন
    আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে ।অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি ? (কামার ৫৪:১৭, ২২, ৩২, ৪০)
    তাই চলুন কোরআনকে কোরআনের ভাষাতেই বুঝার চেষ্ঠা করি । সেটা শুরু হোক আজ থেকেই । চিন্তা করে দেখুনতো ইংলিশ ভাষা শিখার জন্য স্কুল জীবন থেকে শুরু করে আজ অবধি আমরা কত সময়, কত শ্রম দিয়েছি । আর যে ভাষা হবে আখিরাতের অনন্ত জীবনের ভাষা, যে ভাষায় আল্লাহ্‌ আমাদেরকে নবীর মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছেন সেই কোরআনের ভাষার জন্য কতটুকু শ্রম ও সময় দিয়েছি ? কোন মুখ নিয়ে আমরা আল্লাহ্‌র সামনে দাঁড়াব ?
    আল্লাহ্‌ কোরআন আরবি ভাষায় নাযিল করেছেন এবং বলেছেন এটি সহজ ভাষায় নাযিল করেছেন যাতে আমরা বুঝতে পারি । কিন্তু আরবি কি আসলেই সহজ ভাষা ? আল্লাহ্‌ যেহেতু বলেছেন তাহলে অবশ্যই এটি সহজ ভাষা । তবে ভাষা হিসাবে আরবি যেমনই হোক না কেন কোরআনে আল্লাহ্‌ যে আরবি ভাষা ব্যবহার করেছেন তা অবশ্যই সহজ । যেমন দেখুন, পুরু কোরআনে আল্লাহ্‌ কোরআন আরবি ভাষায় নাযিল করেছেন এবং বলেছেন এটি সহজ ভাষায় নাযিল করেছেন যাতে আমরা বুঝতে পারি । কিন্তু আরবি কি আসলেই সহজ ভাষা ? আল্লাহ্‌ যেহেতু বলেছেন তাহলে অবশ্যই এটি সহজ ভাষা । তবে ভাষা হিসাবে আরবি যেমনই হোক না কেন কোরআনে আল্লাহ্‌ যে আরবি ভাষা ব্যবহার করেছেন তা অবশ্যই সহজ । যেমন দেখুন, পুরু কোরআনে মোট শব্দ আছে ৭৭,৪২৯ টি । কিন্তু পুনারাবৃত্তি আর একই শব্দের বিভিন্ন ব্যাবহারগুলো বাদ দিলে শব্দ সংখ্যা দাড়ায় মাত্র ৪৮৪৫ টি । এর মধ্যে বেশিবার ব্যবহৃত মাত্র ৬০টি শব্দের অর্থ জানলেই পুরু কোরআনের মোট শব্দের অর্ধেক (৫০%) শব্দের সাথে আমাদের পরিচয় হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ্ । আরও ২৫% শব্দের অর্থ জানতে আর মাত্র ২৬০ টি শব্দের সাথে পরিচিত হতে হবে । অর্থাৎ মাত্র ৩২০টি শব্দ শিখে আমরা কোরআনের ৭৫% অংশের শাব্দিক অর্থ বুঝতে পারবো । সুবহানাল্লাহ ! বিস্ময়কর ভাবে কত অল্প সংখ্যক শব্দ ব্যবহার করে আল্লাহ এই বিশাল কোরআনের বেশির ভাগ অংশ সাজিয়েছেন ! অল্প কিছু আরবি শব্দের অর্থ জানলেই কোরআনের বেশির ভাগ অংশের শাব্দিক অর্থ বুঝা যাবে ইনশা আল্লাহ্ । আমাদের বুঝার জন্য কোরআনকে আল্লাহ কত সহজ করে নাজিল করেছেন !
    হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. সূরা নিসার (৪) ৮২ নম্বর আয়াতের আলোচনায় লেখেন, ‘প্রতিটি মানুষ কুরআনের অর্থ ও মর্ম সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করুক এটিই কুরআনের দাবি। সুতরাং একথা মনে করা ঠিক নয় যে, কুরআন মজীদের আয়াতসমূহে চিন্তা-ভাবনা করা শুধু ইমাম ও মুজতাহিদ (বা বড় বড় আলিমের) কাজ। অবশ্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পর্যায়ের মতোই চিন্তা-ভাবনারও বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। ...

    সাধারণ মানুষ যখন নিজের ভাষায় কুরআন মজীদের তরজমা ও তাফসীর পড়বে এবং চিন্তা-ভাবনা করবে তখন তাদের অন্তরে আল্লাহ তাআলার মহত্ম ও ভালবাসা এবং আখিরাতের ফিকির ও চিন্তা সৃষ্টি হবে। আর এটিই হচ্ছে সকল সফলতার চাবিকাঠি। তবে ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তি থেকে বাঁচার জন্য সাধারণ মানুষের উচিত কোনো আলিমের কাছে অল্প অল্প করে পাঠ করা। এর সুযোগ না থাকলে কোনো নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব পাঠ করবে এবং যেখানেই কোনো প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দেয় নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি দ্বারা উত্তর না খুঁজে বিজ্ঞ আলিমের সাহায্য নিবে।-মাআরিফুল কুরআন ২/৪৮৮
    আল্লাহ পাক আমাদের আমাল করার তৌফিক দান করুন।



  • #2
    মাশা- আল্লাহ অনেক সুন্দর সাজানো গুছানো তথ্যবহুল মূল্যবান একটি পোস্ট।আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত পোস্ট থেকে উপকৃত করুন।
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 01-23-2022, 01:27 PM.

    Comment

    Working...
    X