Announcement

Collapse
No announcement yet.

🔑ফুক্কুল আসির || উম্মাহর ভূলে যাওয়া এক অবহেলিত দায়িত্বঃ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • 🔑ফুক্কুল আসির || উম্মাহর ভূলে যাওয়া এক অবহেলিত দায়িত্বঃ

    পর্ব—২

    সকল প্রশংসা এক আল্লাহ তাআলার জন্য, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, যার পর আর কোন নবী নেই।

    বর্তমানে অবহেলিত যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুসলিম জাতির জাগ্রত ও উদ্বিগ্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরী, তা হলো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বন্দী মুসলিমদের বিষয়।

    বিশেষত তাদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন দায়ী ও সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম যারা সত্যকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে মিথ্যা ও বাতিলদের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন। আজ তাদের অধিকাংশই মুসলিম কান্ট্রি গুলোতে বিশ্বাসঘাতক মুরতাদ শাসকের কারাগারে বন্দী অথবা আমেরিকা ও পশ্চিমা কারাগারে বন্দী, সেই ভয়াবহ অন্ধকার কারাগারের প্রকোষ্ঠে চলছে তাদের উপর পাশবিক নির্যাতন ও অপমান।

    বিশেষভাবে আমি ঐসব মুসলিম যুবকদের কথা উল্লেখ করবো যাদের উপর বিভিন্ন অত্যাচার ও সীমালংঘন চলছে গোয়েন্তানামো কারাগারে এবং হৃদয়ের স্পন্দন বয়োবৃদ্ধ অন্ধ শায়েখ উমর বিন আবদুর রহমান, তিনিও আজ কারাবন্দি এবং তার উপরও চলছে হরেক রকমের নির্যাতন, অথচ তার বার্ধক্যেতা, দুর্বলতা ও উম্মাহর মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতার কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না, বাস্তবতা হলো; তারা এসবের আড়ালে ইসলাম ও মুসলমানদেরই লাঞ্ছিত করছে, আল্লাহ তায়ালা সায়েখ সহ পৃথিবীর সকল মুসলিমদের মুক্তি দান করুন, আমীন।

    এমনকি আমাদের এই বাংলাদেশের বিভিন্ন (তাগুত) বাহিনীদের কুখ্যাত গুমখানা গুলোর অবস্থা তো এতটাই ভয়াবহ যে, বছরের বছর ধরে আমাদের মজলুম মুসলিম মুজাহিদ ভাইদের চোখে পট্টি লাগিয়ে দুহাতে হাত কড়া লাগিয়ে অন্ধকারের ছোট্ট একটি প্রকোষ্ঠে ফেলে রাখা হয়...! এমনকি অনেক সময় পা পর্যন্ত শিকলে আবদ্ধ থাকে! আর মাঝে মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চলে বিভিন্ন ধরনের টর্চার..!

    -যাদের চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে..! আল্লাহ পাকের অসংখ্য সৃষ্টিজীব শুনতে পায় তাদের আহাজারি-কান্না -কিন্তু আমাদের মত নরাধম বধিরদের কর্ণকুহরে পৌছেনা তাদের আওয়াজ! হায় আফসোস! সেদিন কি জবাব দিবো রবের সামনে যদি আমাদের ভাইয়েরা আমাদের বিরুদ্ধে রবের দরবারে মামলা দায়ের করে বসে!??

    হে মুসলিম উম্মাহ!! তোমরা কি মনে করো যে, মুসলিমদের কারাগারে অন্যান্য জাতির কিছু লোক বন্দি, যেমনি আমাদের কতক তাদের কারাগারে বন্দি?? (এমনটা নয়), অতএব তুমি কি চুপচাপ থাকবে এবং সুখী জীবনযাপন ও মনোরম দিন কাটাবে??

    এরূপ কাফের মুরতাদদের কারাগারে হাজার হাজার মুসলিম যুবক ও আলেম-ওলামা বন্দি, তাদের একমাত্র অন্যায় হলো, তারা একথার স্বীকৃতি দেয় যে, আমাদের (সত্তিকারের) রব আল্লাহ তায়ালা,

    যেমনটা তিনি সু. নিজেই বর্ণনা করেনঃ-
    {وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلَّا أَنْ يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ}

    "তারা তাদের (মুমিনদের) থেকে প্রতিশোধ নিয়েছিল শুধুমাত্র এই অপরাধে যে, তারা অসীম ক্ষমতাবান প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল। (সূরা বুরুজঃ ৮)

    এত কিছুর পরও মুসলিম উম্মাহ ঐসব (বন্দী) লোকদের ব্যাপারে উদাসীন এবং তাদের উপর আপতিত জুলুম নির্যাতনের ব্যাপারে একেবারেই অমনোযোগী, (তবে খাস কিছু বান্দা ছাড়া যাদের উপর আল্লাহর বিশেষ রহম করেছেন)।

    অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যেন ঐসব বন্দী মুসলিম যুবক ও ওলামাগণ এই উম্মাহর সন্তান নন এবং মুসলিম ভাইদের উপর তাদের কোনো অধিকার নেই!!

    হে মুসলিম উম্মাহ!! কিভাবে তোমরা স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছো, আর মজলুম বন্দীদের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছো??, এটা কিভাবে বৈধ হতে পারে?? অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-
    {إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ}،

    "নিশ্চয় সকল মুমিন একে অপরের ভাই। (সূরা হুজরাতঃ ১০)

    তিনি আরো বলেনঃ-
    {وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ}

    "মুমিনগণ একে অপরের বন্ধু/অভিভাবক। (সূরা তাওবাঃ ৭১)

    হে মুসলিম উম্মাহ!! কিভাবে তোমরা স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছো, আর মজলুম বন্দীদের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছো??, এটা কিভাবে বৈধ হতে পারে?? অথচ তোমাদের নবী বলেছেনঃ- أطعموا الجائعَ، وعُودوا المريضَ، وفُكُّوا العَاني

    "তোমরা ক্ষুধার্তদেরকে পানাহার দাও, রোগীকে চিকিৎসা দাও, আর বন্দীদের মুক্ত কর। (সহিহ বুখারী)

    হাদিসের العَاني (আল আনি) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো أسير তথা বন্দী।

    রাসূল (সঃ) আরো বলেনঃ-
    (إنَّ على المسلمين من فيئهم أن يُفادوا أسيرهم، ويؤدوا عن غارِمهم).

    "মুসলিমদের উপর অর্পিত দায়িত্ব হলো, ১.তাদের বন্দী ভাইকে মুক্ত করা, ২.তাদের ঋণ পরিশোধের ব্যাবস্তা করা। (সুনানে সাঈদ ইবনে মানসুর)

    তিনি (সঃ) আরো বলেনঃ-
    (ما من امرئٍ يَخذُلُ امرءاً مُسلماً في موطنٍ يُنتقصُ فيه عِرضهِ، ويُنتهكُ فيه من حُرمَتِه، إلا خذَلَه اللهُ تعالى في موطنٍ يُحبُّ فيه نصرَتَهُ، وما مِن أحدٍ ينصرُ مُسلماً في موطنٍ يُنتقَصُ فيه من عِرضهِ، ويُنتهكُ فيه من حُرمتِه، إلا نصرَهُ اللهُ في موطنٍ يُحبُّ فيه نصرتَهُ).

    "যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইকে এমন স্থানে পরিত্যাগ করল, যেখানে তার সম্মান হরণ করা হচ্ছে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকেও এমন স্থানে পরিত্যাগ করবেন যেখানে সে সাহায্যর মুখাপেক্ষী হবে, আর যে তার মুসলিম ভাইকে এমন স্থানে সাহায্য করল, যেখানে তাঁর হুরমত নষ্ট করা হচ্ছে,— তাহলে আল্লাহ তায়ালাও তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন যেখানে তার সাহায্যের প্রয়োজন হবে।
    (আহমদ, ১৬৪১৫ আবু দাউদ, ৪৮৮৪)

    আর এর চেয়ে সর্বোচ্চ خذلان তথা পরিত্যাগ আর কি হতে পারে যে, উম্মাহ তার ক্লান্তিলগ্নে ও সংকটে তার সন্তানদের আন্তরিকতা থেকে বঞ্চিত হয়, যারা তাদের দ্বীন ও তার হুরমত রক্ষার্থে প্রস্তুত হওয়ার প্রয়োজন ছিল??..।

    রাসূল (সঃ) বলেনঃ-
    (مَنْ نصَرَ أخاهُ بالغيبِ نصَرَهُ اللهُ في الدنيا والآخرة).

    "যে ব্যাক্তি তার মুসলিম ভাইকে তার অনুপস্থিতিতে সাহায্য করবে, আল্লাহ তা'লাও তাকে দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানে সাহায্য করবেন। (বাইহাকি)

    হে মুসলিম উম্মাহ!! কিভাবে তোমরা স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছো, আর মজলুম বন্দীদের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছো??, এটা কিভাবে বৈধ হতে পারে??

    অথচ তোমাদের নবী বলেছেনঃ-
    (المؤمنُ من أهلِ الإيمان بمنزلة الرأسِ من الجسد، يألَمُ المؤمنُ لما يُصيبُ أهلَ الإيمان، كما يألَمُ الرأسُ لما يصيبُ الجسدَ).

    "ঈমানদার সকল মুমিন একটি দেহের মস্তকের নেয়, তাদের কোন এক ভাই যদি ব্যথা পায় তাহলে তারাও তার ব্যথায় ব্যথিত হয়, যেমনিভাবে শরীরের কোন অংশে আঘাত পেলে তার মস্তকও সেটা অনুভব করে। (মুসনদে আহমদ, ৫/৩৪০ আস-সিলসিলাতুস সহিহা, ১১৩৭)

    তিনি (সঃ) আরো বলেনঃ-
    (المؤمنون كرجلٍ واحدٍ، إذا اشتكى رأسَهُ اشتكى كلُّه، وإن اشتكى عينَهُ اشتكى كلُّه)

    "সকল মুমিন একটি দেহের ন্যায়, (শরীরের) মাথার অংশ যদি ব্যথা পায়, তাহলে পুরো শরীর তা অনুভব করে অথবা তার চোখে যদি ব্যথা পায়, তো পুরো শরীর ব্যথিত হয়। (সহিহ বোখারী)

    রাসুলের বাণী المؤمنون (আল মুমিনুন) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো; বর্ণ, গোত্র জন্মভূমি নির্বিশেষে সকল মুমিন তারা পরস্পরের সহযোগী ও সহানুভূতিশীল হবে, তারা এমন একটি দেহের ন্যায়, যার কিছু অংশে কষ্ট পাবার দ্বারা অন্য অংশ ব্যাথিত হয় এবং এক অংশ অন্য অংশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়, অথচ আমরা কি (পরস্পরে) এমন??

    হে মুসলিম উম্মাহ!! কিভাবে তোমরা স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছো, আর মজলুম বন্দীদের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছো??, এটা কিভাবে বৈধ হতে পারে??

    অথচ তোমাদের নবী বলেছেনঃ-
    (ترى المؤمنين في تراحُمِهم وتوادِّهم، وتعاطُفِهم، كمثلِ الجسدِ إذا اشتكى عضواً تداعى لهُ سائرُ الجسدِ بالسَّهرِ والحُمَّى).

    "তুমি মুমিনদেরকে দেখবে যে তারা পরস্পরে বন্ধুত্বতা ও সহানুভূতিশীলতার
    ক্ষেত্রে এমন একটি শরীরের নেয়, যার কোন অঙ্গ ব্যাথা পাওয়া মাত্রই পুরো শরীর অনিদ্রা ও জ্বরে ভোগে। (সহিহ বুখারী)।

    হে উম্মাহ তোমরা কিভাবে নিজেদের পাক্কা মুমিন বলে দাবী কর! অথচ তুমি কোন দিন একজন মুসলিম বন্দী ভাইয়ের মুখে এক লোকমা আহার তোলে দেওনি! এমনকি তার অসহায় পরিবার ও অবুঝ শিশুগুলো'কে পর্যন্ত কোন দিন দেখতে যাওনি!?? ধিক্কার এমন কপাল পোড়া জাতির জন্য যারা নিজেদের জাতি ভাইদের'কে ভূলে গিয়ে বিজাতীদের গোলামী করছে -এমনকি কাফের-মুশরীকদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে সাম্প্রদায়িকতার স্লোগান দিয়ে নিজের (আপন) বন্দী ভাইয়ের সাথে গাদ্দারী করছে!!

    অথচ রব্বে কারিম স্পষ্ট ঘোষণা করেছেনঃ-
    وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا ، إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا

    "তারা আল্লাহর ভালবাসায় অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। (সূরা আল-ইনসান : ৮-৯)

    অতএব আমাদের উচিত প্রত্যেকে নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করা———(যাতে তার ঈমানের সত্যতা সম্পর্কে জানা যায় যে, সে ইসলাম ও মুমিনদের কাতারে রয়েছে কিনা)——— সে কি ঐ সব লোকদের একজন, যারা মুসলিমদের শহরগুলোতে বিপদ-দুর্দশা নেমে আসতে দেখে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ হয়?? নাকি সে তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা এসবের কোনো পরোয়াই করেনা, বরং নিজের প্রভৃতি ও স্বার্থের পেছনে দৌড়ায়??।

    হে মুসলিম উম্মাহ!! কিভাবে তোমরা স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছো, আর মজলুম বন্দীদের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছো??, এটা কিভাবে বৈধ হতে পারে??

    অথচ তোমাদের নবী বলেছেনঃ-
    (مَن نَفَّسَ عن مُسلِمٍ كُربَةً من كُرَب الدنيا، نفَّسَ اللهُ عنه كُربةً من كُرَبِ الآخرةِ، واللهُ في عونِ العبدِ ما كان العبدُ في عونِ أخيه).

    "যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাই থেকে দুনিয়াবী একটি কষ্ট/বিপদ দূর করবে, আল্লাহ-তালা তার থেকে আখেরাতের একটি কষ্টকে দূর করে দেবেন, আর আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাকে ততক্ষণ সাহায্য করেন, যতক্ষণ সে তার ভাইকে সাহায্য করে। (সহিহ মুসলিম)।

    বন্দীদের দুর্দশা ও কষ্ট দূর করার প্রচেষ্টার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এমন কোন দুর্দশা ও কষ্ট রয়েছে যে, তার মুসলিম ভাই থেকে দূর করবে?? তার বন্দিত্বের তো কষ্ট কতইনা তীব্র যে অত্যাচারী পাপিষ্ঠের অন্ধকার কারাগারে একাকী জীবন যাপন করছে।

    রাসূল (সঃ) বলেনঃ-
    (المسلمُ أخو المسلمِ لا يَظلِمْهُ ولا يُسْلِمه، ومن كان في حاجةِ أخيه، كان اللهُ في حاجته، ومن فرَّج عن مسلمٍٍ كُربةً فرَّجَ اللهُ عنه كُربةً من كُرَبِ يومِ القيامة).

    "এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার প্রতি জুলুম করবে না এবং (কোনো জালিমের হাতেও) তাকে সোপর্দ করবেনা, যে ব্যাক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন মিটানোর চেষ্টা করবে, আল্লাহ তা'আলাও তার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন, আর যে তার মুসলিম ভাই থেকে একটি কষ্টকে দূর করার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাআলাও কেয়ামতের দিন তার থেকে একটি কষ্টকে দূর করে দিবেন। (সহিহ মুসলিম)

    রাসূল (সঃ) এর এই বাক্য (لا يَظلِمهُ ولا يُسْلِمه)؛দ্বারা উদ্দেশ্য হলো; কোন মুসলিম তার ভাইকে অত্যাচারীর হাতে সোপর্দ করতে পারে না বরং সে সর্বদা এই প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকবে যে, কিভাবে জালিমদের হাত থেকে তার (দ্বীনি) ভাইদের উদ্ধার করা যায়।

    হে ইলমে দ্বীনের ধারক-বাহক তালাবা ও ওলামায়ে কেরাম!! আপনারা তো সালাফদের অসংখ্য কিতাবাদী মুতা'আলা করেন অসংখ্য ফাতাওয়ার কিতাব মুতা'আলা করেন -কিন্তু কখনো কি সালাফদের নিম্নোক্ত ফতোয়াগুলি নজরে পড়েনা?? নাকি দেখিও না দেখার ভান করেন!

    ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, আমাদের আলিমগণ এই মত প্রকাশ করেছেন যে, মুক্তিপণ দিয়ে বন্দীদের মুক্ত করা হচ্ছে ওয়াজিব, যদিওবা ইসলামী কোষাগারে এক দিরহাম পরিমাণ সঞ্চয় অবশিষ্ট না থাকে। ইব্ন খুওয়াইয মিনদাদ বন্দী মুক্তির আবশ্যকতা বিষয়ক কুরআনে বর্ণিত দিক নির্দেশনা থেকে এটি নিশ্চিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং বন্দী মুক্তি করেছেন এবং অপরকেও অনুরূপ করতে আদেশ করেছেন, পরবর্তী কালের মুসলিমগণও তদ্রুপ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এ বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে যে, ইসলামী কোষাগার হতে মুক্তিপণের অর্থ নিয়ে হলেও বন্দীদের মুক্ত করা হচ্ছে একটি আবশ্যক দায়িত্ব, যদি তা সম্ভবপর না হয়, তবে সকলের উপর তা ফরযে কিফায়া হয়ে দাঁড়ায়; অর্থাৎ কেউ আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে এবং সকলে গুনাহ মুক্ত হবে। (কুরতুবী, ২/২৩)

    ইমাম ইবন আল আরাবী (রহ.) বলেন, ইমাম মালিক বলেছেন সমস্ত মুসলিমের উপর ওয়াজিব হচ্ছে তাদের বন্দিদের মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করা যদিও এতে সকল অর্থ ব্যয় হয়। (আহকামুল কুরআন, ১/১০৭)
    ইমাম আল হাফিয ইবন হাযর আল আসকালানী (রহ.) বলেন, ‘বন্দী মুক্তির অধ্যায়’-এ ইমাম বুখারির আলোচনা ও বক্তব্য কাফিরদের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তিপণ বা যেকোন উপায়ে মুক্তির ব্যবস্থার কথা নির্দেশ করে..। ইবনে বাত্তাল বলেন যে, বন্দী মুক্ত করা সমষ্টিগত ভাবে ফরয। অধিকাংশ আলেমগণ অনুরূপ মত পোষণ করেন। (ফাতহুল বারী, ৬/১৬৭)

    ইমাম আবু বকর আল জাসসাস (রহ.) বলেন, আমাদের উপর অর্পিত ওয়াজিব দায়িত্ব সমূহের মধ্যে অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে, মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করা। আল হাজ্জাজ বিন আরতাহ্ এ বিধান সম্পর্কে তার পিতামহ হতে বর্ণনা করেছেন যে, “রাসূলুল্লাহ্ ﷺ মুহাজিরীন ও আনসারদের উদ্দেশ্যে রচিত একটি চিঠিতে শত্রু সৈন্যদের বন্দী করতে এবং মুসলিমদের জন্য উপযুক্ত সম্মান বিবেচনা ও শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে মুক্তিপণের বিনিময়ে বন্দী মুক্ত করতে আদেশ করেন।”

    হে মুসলিম জাতি!! তোমরা নিজেরাই তো এটা কামনা করো যে, ওলামা ও দায়ীগন প্রকাশ্যে সত্য প্রচার করুক উম্মাহর নিকট এবং পালন করুক তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব, অতঃপর তারা যখন তাদের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করে তখন তাদের উপর আপতিত হয় হাজারো বালা-মুসিবত পরিশেষে তাদের আবদ্ধ করা হয় তাগুত শাসকের গহীন অন্ধকার কারাগারে -আর ঐ অবস্থায় তোমরা তাদের থেকে পৃথক হয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো, এমনকি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতেও অস্বীকৃতি জানাও, কেমন যেন তোমরা তাদেরকে চিনইনা এবং তোমাদের উপর তাদের কোন অধিকারও নেই।
    تلك قسمة ضيزى

    "এটা তো অসম বন্টন/অন্যায়।
    (সূরা নাজমঃ ২২)

    অতএব ইসলামকে যে কোন প্রকারের সাহায্য করতে সকল মুসলমান ও সক্রিয় আলেম সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে, পৃথকভাবে আসলে হবে না।

    হে আল্লাহর বান্দা!! তোমার সামনে কল্যাণের একটি দরজা উন্মুক্ত হয়ে আছে, অতএব সেটা বন্ধ হবার পূর্বেই মূল্যায়ন করো, অন্যথায় বহু কল্যাণ হতে বঞ্চিত হবে, আর সেই উন্মুক্ত দরজা কি হলো বন্দীদের প্রয়োজন পূরণ এবং তাদের পরিবার পরিজন সন্তানাদির প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকা,
    অতএব যে তা বন্ধ হওয়ার পূর্বেই তার মূল্যায়ন করে তাকে অভিনন্দন, আর যে তার মূল্যায়ন করলো না সে অচিরেই অনুশোচনা করবে (কিন্তু কোন কাজে আসবে না)।

    বিশেষভাবে আমি আমার মুজাহিদ ভাইদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করবো যে, এটা একটা মোক্ষম সুযোগ যথাসম্ভব কাফেরদের সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের করার এবং (সাথে সাথে এটাও স্মরণ রাখা চাই) যে, এই সুযোগে তাদের পক্ষ থেকে ব্যাপক দাবিদাওয়া আসতে পারে,—— তা গ্রহণ করা যাবে না বরং তাদের ঐসকল দাবি গ্রহণ করতে হবে যেগুলোতে নির্দিষ্ট, সীমাবদ্ধ হয় এবং সম্ভাব্যপর হয়, (সেদিকে খেয়াল রাখবে)।

    ইমরান বিন হোসাইন হতে সহিহ সূত্রে বর্ণিতঃ-
    (أنَّ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم فدى رجلين من المسلمين برجلٍ مشرك)

    "রাসুল সাঃ একজন মুশরিকের মোকাবেলায় দুজন মুসলিম কে বন্দী মুক্ত করেছিলেন।(তিরমিজি)

    পরিশেষে আমরা প্রার্থনা করবো হে আল্লাহ, হে চিরঞ্জিত, হে শক্তিধর, হে মহিমাময় ও সম্মানের অধিকারী, আমরা আপনার কুদরত ও রহমতের ওসিলায় আপনার নিকট কামনা করি যে, আপনি সকল ভূখণ্ডের মুসলিম বন্দীদের উদ্ধার করে দিন, তাদের কষ্টকে লাঘব করুন, এবং অবিলম্বে তাদেরকে স্বপরিবার, সন্তানাদি ও প্রিয়জনদের সাথে পুনরায় একত্রিত করে দিন, তাদেরকে হকের উপর অটল রাখুন এবং তাদের অন্তরে প্রশান্তি দান করুন, আর জালিমদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন, তাদের মধ্যে আমাদের জন্য অলৌকিক নিদর্শন দেখিয়ে দিন।
    হে আমাদের রব!! নিশ্চয়ই আপনিই সর্বশ্রোতা, অতিনিকটবর্তী ও উত্তরদাতা।

    সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক উম্মি নবী মোহাম্মদ (সঃ) এর উপর, এবং তার সাথীবর্গ ও পরিবার পরিজনের উপর।
    এবং আমাদের সর্বশেষ দাবি হলো, সকল প্রশংসা শুধুমাত্র জগতের রব আল্লাহর জন্য।

    সমাপ্ত।



    অনুদিত ও পরিমার্জিত

  • #2
    থ্রেড একটু ছোট করে দিবেন ভাইসাব,,। এতো বড় পড়তে ও তো সময় লাগে, ফোরামে তো আরও পোস্ট আছে সেগুলো ও তো পড়ার চেষ্টা করি "।।
    সর্বোত্তম আমল হলো
    আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং মহান মহীয়ান
    আল্লাহর পথে জিহাদ করা।নাসায়ী,শরীফ

    Comment


    • #3
      ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, আমাদের আলিমগণ এই মত প্রকাশ করেছেন যে, মুক্তিপণ দিয়ে বন্দীদের মুক্ত করা হচ্ছে ওয়াজিব, যদিওবা ইসলামী কোষাগারে এক দিরহাম পরিমাণ সঞ্চয় অবশিষ্ট না থাকে। ইব্ন খুওয়াইয মিনদাদ বন্দী মুক্তির আবশ্যকতা বিষয়ক কুরআনে বর্ণিত দিক নির্দেশনা থেকে এটি নিশ্চিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং বন্দী মুক্তি করেছেন এবং অপরকেও অনুরূপ করতে আদেশ করেছেন, পরবর্তী কালের মুসলিমগণও তদ্রুপ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এ বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে যে, ইসলামী কোষাগার হতে মুক্তিপণের অর্থ নিয়ে হলেও বন্দীদের মুক্ত করা হচ্ছে একটি আবশ্যক দায়িত্ব, যদি তা সম্ভবপর না হয়, তবে সকলের উপর তা ফরযে কিফায়া হয়ে দাঁড়ায়; অর্থাৎ কেউ আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে এবং সকলে গুনাহ মুক্ত হবে। (কুরতুবী, ২/২৩)

      Comment


      • #4
        প্রিয় #media jihad ভাই! আপনাকে অসংখ্য মোবারক বাদ,, আমার তখন ফোরামে লেখালেখির একেবারে শুরুর দিক ছিল -তাই বুঝতে পারিনি! -বাকি এখন আপনার কথার উপর আমল করছি আলহামদুলিল্লাহ। জাযাকাল্লাহ।

        Comment

        Working...
        X