সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট |১০ |
||২য় পর্ব||
তাওহিদুল হাকিমিয়্যাহ নিয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অবস্থান |
১. যদি কেউ অন্যকে কুফরে লিপ্ত করে তাহলে সে (লিপ্তকারী) কাফির হয়ে যাবে।
যেমন কেউ যদি আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানবরচিত বিধান দিয়ে বিচার ও শাসনকার্য পরিচালনা করে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। যদিও তাকে এমনটি করতে বাধ্য করা হয়। কারণ ইকরাহ তথা বাধ্যকরণ এখানে তাকফিরের প্রতিবন্ধক নয়। নিজের ক্ষমতা স্থায়ী করার জন্য অন্যায়ভাবে যেমন অপরকে হত্যা করা জায়েজ নয়, ঠিক তেমনি নিজের প্রাণ, দেশ বা ক্ষমতার গদি বাঁচাতে গিয়ে গাইরুল্লাহর বিধান দিয়ে দেশ শাসন করা জায়েজ নয়। বরং কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যার চেয়ে কুফর ও শিরক চাপিয়ে দেওয়া, আরও জঘন্য কাজ। সুতরাং যে ব্যক্তি ক্ষমতার গদিতে বসবে, তার উপর ফরজ হলো সে আল্লাহর নাজিলকৃত শরিয়াহ অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করবে। মানবরচিত সংবিধান দিয়ে বিচার করে নিজেকে এবং জনগণকে শিরকে লিপ্ত করবে না। যদি আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করে অক্ষম হয়, তবে শাসন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবে।
ইমাম হাসান বসরি রহিঃ বলেন-
أخذ الله على الحكام أن لا يتبع الهوى ،ولا يخشي الناس. ولايشتروا بآياتي ثمنا قليلا
'আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শাসকদের থেকে এই ওয়াদা নিয়েছেন যে, তারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে না, লোকদেরকে ভয় করবে না। এবং আল্লাহর আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করবে না। '
তারপর কয়েকটি আয়াতের সঙ্গে এই আয়াতটিও তেলাওয়াত করেন -
ولم يحكم بما أنزل الله فأولئك هم الكافرون
'যারা আল্লাহর নাজিলকৃত শরিয়াহ অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই তো কাফির।' (সূরা মায়িদাহ ৫-৫৪)
২. তাওহিদের খণ্ডিত বিশ্বাস ও খণ্ডিত আমলের কোন সুযোগ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তাওহিদের সকল প্রকারের ওপর পরিপূর্ণভাবে ঈমান না আনছে, তার মুমিন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যে ব্যক্তি কেবল তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহর ওপর আনলো, তাওহিদুল উলুহিয়্যাহর ওপর ঈমান আনলো না সে কাফির। অনুরুপভাবে যে তাওহিদুল উলুহিয়্যাহর সকল প্রকারের ওপর ঈমান আনলো, কিন্তু তাওহিদুল হাকিমিয়্যাহ মানলো না, সে কাফির। এককথায়, তাওহিদের একটি অংশকে অস্বীকার করলে বান্দা কাফির হয়ে যাবে। কারণ খণ্ডিত তাওহিদ মুলত কোন তাওহিদই না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا ادخُلوا فِي السِّلمِ كافَّةً وَلا تَتَّبِعوا خُطُواتِ الشَّيطانِ إِنَّهُ لَكُم عَدُوٌّ مُبينٌ
'হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।'
সূরা আল বাকারা ২০৮
আর মূলনীতি হলো-
إذا افترقا اجتمعا وإذا اجتمعا افترقا
' যখন الإيمان এবং الإسلام শব্দদ্বয় ভিন্ন ভিন্ন স্থানে থাকে তখন উভয়টি থেকে একই উদ্দেশ্য হয় , আর যখন উক্ত শব্দদ্বয় পাশাপাশি থাকে তখন উভয়টির উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। '
সুতরাং পরিপূর্ণভাবে ইসলামে যেভাবে প্রবেশ করতে হবে, তেমনি ঈমানের মাসয়ালায় পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
৩. কুফর, শিরক ও নিফাকে আকবরের যেকোন এক প্রকারে লিপ্ত হলেই বান্দা তাওহিদের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়। যে ব্যক্তি কবরপূজা করে না, কিন্তু আল্লাহর নাজিলকৃত শরিয়াহ বাদ দিয়ে মানবরচিত সংবিধানের আনুগত্য করে, তবে নিঃসন্দেহে সে মুশরিক। যদিও সে মুসলিমদের সালাত আদায় এবং রোজা রাখে। আল্লামা শানকিতি রহিঃ তাঁর তাফসীরে লেখেন -
فالإشراك بالله في حكمه كالإشراك به في عبادته
'' বিধান প্রণয়নে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, ঈবাদতে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করার মতোই। (আদওয়ায়ুল বায়ানঃ ৭/১৭৩)
তিনি আরও বলেন
إن الذين يتبعون القوانين الوضعية التي شرعها الشيطان على ألسنة أوليائه مخالفة لما شرعه الله جل وعلا على ألسنة رسله ﷺ ، أنه لا شك في كفرهم إلا من طمس الله بصره وأعماه عن نور الوحي
''যারা মানবরচিত সংবিধানের আনুগত্য করে, যে সংবিধান শয়তান তার বন্ধুদের মাধ্যমে প্রণয়ন করেছে এবং যা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর উপর আল্লাহ তায়ালার নাজিলকৃত শরিয়াতের বিপরীত; তাদের কুফর ও শিরকের ব্যাপারে কেউ সন্দেহ করতে পারে না। কেবল সেই করতে যার অন্তর্দৃষ্টি আল্লাহ তায়ালা কেড়ে নিয়েছেন এবং যাকে ওহির আলো থেকে বঞ্চিত করেছেন, যেভাবে তিনি বঞ্চিত করেছেন শয়তান ঐ বন্ধুদেরকে।
৪. যেই শাসক আল্লাহর নাজিলকৃত শরিয়াহকে সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তা বাস্তবায়নও করেছেন, তবে কোন বিশেষ মামলায় প্রবৃত্তির চাহিদার কারণে সে স্বজনপ্রীতি করে শরিয়াহর বিপরীত ফায়সালা করেছে, তাহলে সে এক্ষেত্রে ছোট কুফর করেছে এবং এতে সে কাফির হয়ে যাবে না। কারণ সে আল্লাহর নাজিলকৃত শরিয়াহকে সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করেছে, মানবরচিত কোন সংবিধান গ্রহণ করেনি। কেবল কিছু মামলায় কুপ্রবিত্তির ধোঁকায় পড়ে শরিয়াহর বিপরীত বিচার করেছে।
৫. যারা আল্লাহর নাজিলকৃত শরিয়াহকে বাদ দিয়ে নিজেদের নাপাক হাতে সংবিধান প্রণয়ন করে, তারা যেমন কাফির ; যারা এই মানবরচিত সংবিধান দিয়ে বিচার-ফায়সালা ও শাসনকার্য চালায় তারাও কাফির। এদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কারণ যদি সংবিধান প্রণয়নকারীকে কাফির বলা হয় এবং বাস্তবায়নকারীকে কাফির বলা না হয়, তাহলে শয়তান ছাড়া কেউ কাফির হবে না। কারণ কুরআন-সুন্নাহর বক্তব্য অনুযায়ী মানবরচিত সংবিধান প্রণেতা স্বয়ং ইবলিশ শয়তান।
--------------------------
সূত্র
তাওহিদুল হাকিমিয়্যাহ নিয়ে আমাদের অবস্থান | উম্মাহ নেটওয়ার্ক
_____________
যাস্টপেস্ট লিংক https://jpst.it/2Wv2x
|| আগামী পর্ব ||
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট ১০ |
||৩য় পর্ব||
হাকিমিয়্যাহ নিয়ে ফুকাহায়ে কেরামের ফাতওয়া|
চলবে ইনশাআল্লাহ...
বিগত পর্বের লিংক 🔗
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট -১ | তাওহিদের পরিচয় ও প্রকারভেদ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ২ | তাওহিদের শর্তসমূহ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ০৩ | তাওহিদের রুকন সমূহ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ৪ | তাগুতের পরিচয় ও প্রকারভেদ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ৫ | ঈমান ভংগের কারণ সমূহ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ৬ | শিরকের পরিচয় ও প্রকারভেদ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ৭ | কুফরের পরিচয় ও প্রকারভেদ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট ০৮ || কাফিরের পরিচয় ও প্রকারভেদ || ঈদুল আজহার হাদিয়া
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট ০৯ || মুনাফিকের পরিচয়, প্রকারভেদ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট ১০ ||১ম পর্ব|| তাওহিদুল হাকিমিয়্যাহ | পরিচয়, প্রকৃতি ও ধরন
আপনার নেক দোয়ায় ভাইদেরকে স্বরণ রাখুন
=_=_=_=_=_==_=_=
Comment