Announcement

Collapse
No announcement yet.

সাবিলুল্লাহ এবং জুমআর ফজিলত: একটি সংশয়

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সাবিলুল্লাহ এবং জুমআর ফজিলত: একটি সংশয়

    সাবিলুল্লাহ এবং জুমআর ফজিলত


    একটি সংশয়


    =========================
    পিডিএফ: https://mega.nz/file/JmY0UTwK#Jd4KAS...IHgG96b6Qdeols


    এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

    من اغبرت قدماه في سبيل الله حرمه الله على النار. صحيح البخاري : 865

    যার পদযুগল ফি সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। -সহীহ বুখারি: ৮৬৫


    হাদিসটি ইমাম বুখারি রহ. কিতাবুল জুমআতে এনে জুমআয় হেঁটে চলার ফজিলত বর্ণনা করেছেন, কিতাবুল জিহাদে এনে জিহাদের ময়দানে ধূলি ধূসরিত হওয়ার ফজিলত বর্ণনা করেছেন।


    হাদিসটি ব্যাপক। সাহাবায়ে কেরাম হাদিসটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। সাহাবি আবু আবস রাদি. এ হাদিস দিয়ে জুমআয় হেঁটে চলার ফজিলত বর্ণনা করেছেন।

    যেমন ইমাম বুখারি রহ. আবায়া বিন রিফায়া রহ. থেকে বর্ণনা করেন,
    أدركني أبو عبس وأنا أذهب إلى الجمعة فقال سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( من اغبرت قدماه في سبيل الله حرمه الله على النار ) .صحيح البخاري : 865
    আমি (পায়ে হেঁটে) জুমআয় যাচ্ছিলাম। তখন আবু আবস রাদি. এর সাথে সাক্ষাত হয়। (আমাকে হেঁটে চলতে দেখে) তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যার পদযুগল ফি সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। -সহীহ বুখারি: ৮৬৫


    সাহাবি জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদি. এ হাদিস দিয়ে জিহাদের ময়দানে পায়ে হেঁটে চলার ফজিলত বর্ণনা করেছেন।

    আবুল মুসাব্বিহ আলমাকরায়ি রহ. থেকে ইবনে হিব্বান রহ. (৩৫৪হি.) বর্ণনা করেন,
    عن حصين بن حرملة المهري حدثنا أبو المصبح المقرائي، قال: بينما نحن نسير بأرض الروم في طائفة عليها مالك بن عبد الله الخثعمي إذ مر مالك بجابر بن عبد الله وهو يمشي يقود بغلا له فقال له مالك: أي أبا عبد الله اركب، فقد حملك الله، فقال جابر: أصلح دابتي، وأستغني عن قومي، وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "من اغبرت قدماه في سبيل الله، حرمه الله على النار" فأعجب مالكا قوله، فسار حتى إذا كان حيث يسمعه الصوت ناداه بأعلى صوته يا أبا عبد الله اركب، فقد حملك الله، فعرف جابر الذي أراد برفع صوته، وقال: أصلح دابتي، وأستغني عن قومي، وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "من اغبرت قدماه في سبيل الله، حرمه الله على النار" فوثب الناس عن دوابهم، فما رأينا يوما أكثر ماشيا منه. –صحيح إبن حبان: 4604، قال الشيخ الأرنؤوط رحمه الله تعالى: حديث صحيح. اهـ
    আমরা একটি জিহাদি কাফেলা রোম ভূমিতে চলছিলাম। কাফেলার আমির ছিলেন মালেক বিন আব্দুল্লাহ আলখাসআমি রহ.। চলতে চলতে মালেক রহ. এক সময় সাহাবি জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদি.র পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। জাবের রাদি. তখন তাঁর একটি খচ্চর টেনে নিয়ে হেঁটে চলছিলেন। মালেক রহ. জাবের রাদি.কে বললেন, ‘হে আবু আব্দুল্লাহ! আপনি তো সওয়ার হতে পারেন। আল্লাহ তাআলা তো আপনাকে সওয়ারি দান করেছেন’। তখন জাবের রাদি. উত্তর দেন, … আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যার পদযুগল ফি সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। ... এ কথা শুনতেই লোকজন লাফালাফি করে বাহন থেকে নামতে শুরু করে। আমরা সেদিনের চেয়ে অধিক লোককে কখনও পায়ে হেঁটে চলতে দেখিনি। -সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৬০৪ (হাদিসটি সহীহ)।


    হাফেজ ইবনে হাজার রহ. (৮৫২হি.) বলেন,
    فإذا كان مجرد مس الغبار للقدم يحرم عليها النار فكيف بمن سعى وبذل جهده واستنفد وسعه؟. -فتح الباري لابن حجر (6/ 30)
    (যুদ্ধের ময়দানে) কেবল পায়ে ধূলা বালি লাগলেই যদি তা জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যায়, তাহলে যে ব্যক্তি দৌড় ঝাঁপ করবে, নিজের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দেবে তার ফজিলত কত হবে?! –ফাতহুল বারি: ৬/৩০


    তাবলিগি ভাইদের বিভ্রান্তি

    আমরা দেখলাম, হাদিসে ফি সাবিলিল্লাহ ধূলি ধূসরিত হওয়ার ফজিলতের কথা এসেছে আর সাহাবায়ে কেরাম কেউ একে জুমআয় ব্যবহার করেছেন কেউ জিহাদে ব্যবহার করেছেন। এ থেকে কেউ কেউ সংশয় সৃষ্টি করেছেন যে, বুঝা গেল

    জিহাদের আয়াত-হাদিস প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলিগে ব্যবহার করা যাবে।

    বরং আরো আগে বেড়ে গিয়ে প্রচলিত তাবলিগকে জিহাদে রূপান্তর করেছেন।

    বরং আরো আগে বেড়ে জিহাদকে প্রচলিত তাবলিগের মধ্যেই সীমিত করে ফেলেছেন।

    বরং আরো আগে বেড়ে তাবলিগ ফরয এবং জিহাদ হারাম সাব্যস্ত করেছেন।

    এখন তাদের আকিদা: জিহাদ হারাম, তাবলিগ ফরয। তাবলিগের কাজ করলে জিহাদের সকল ফজিলত বরং আরো বেশি পাওয়া যাবে। আর জিহাদ করলে সওয়াব তো হবেই না, উল্টো গোনাহ হবে।


    অনেক তাবলিগি ভাইয়ের আকিদাই এমন। নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক।



    তিলকে তাল বানিয়ে এভাবে ফজিলত সাব্যস্ত করা জাহালত বৈ কিছু নয়। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন।



    ফি সাবিলিল্লাহ
    আসলে ফি সাবিলিল্লাহ একটি ব্যাপক শব্দ। সাধারণত ফি সাবিলিল্লাহ বলতে জিহাদ বুঝালেও এটি ব্যাপক অর্থেও ব্যবহার হয়।

    ‘সাবিল’ অর্থ পথ, রাস্তা। ‘সাবিলুল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর পথ, আল্লাহর রাস্তা। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার দ্বীন এবং দ্বীনের বিধানাবলী উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। যেসকল আয়াতে বলা হয়েছে যে কাফেররা সাবিলুল্লাহ থেকে লোকজনকে ফিরায় সেগুলোতে এ অর্থই উদ্দেশ্য।

    যেমন কয়েকটি আয়াত-

    {قُلْ يَاأَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ مَنْ آمَنَ تَبْغُونَهَا عِوَجًا وَأَنْتُمْ شُهَدَاءُ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ (99)} [آل عمران: 99]
    {إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ قَدْ ضَلُّوا ضَلَالًا بَعِيدًا (167)} [النساء: 167]
    {وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ (116)} [الأنعام: 116]
    {إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ فَسَيُنْفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ (36)} [الأنفال: 36]
    {وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَاللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ (47) } [الأنفال: 47، 48]


    সাবিলুল্লাহর বিপরীতে আসে সাবিলুশ শাইতান/সাবিলুত তাগুত তথা শয়তানের রাস্তা, শয়তানের পথ।

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    { الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا (76)} [النساء: 76]
    যারা ঈমানদার তারা লড়াই করে আল্লাহর পথে। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। সুতরাং (হে ঈমানদারগণ!) তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। (আর) শয়তানের চক্রান্ত তো নিতান্তই দুর্বল। –নিসা ৭৬



    ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর রাস্তায়। অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনের জন্য বা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য; গাইরুল্লাহর জন্য নয় বা লোক দেখানোর জন্য নয়।


    যেমন হাদিসে এসেছে,
    جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: الرجل يقاتل للمغنم، والرجل يقاتل للذكر، والرجل يقاتل ليرى مكانه، فمن في سبيل الله؟ قال: من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا فهو في سبيل الله.
    এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাজির হয়ে আরজ করলো- কেউ যুদ্ধ করে গনিমতের লোভে, কেউ যুদ্ধ করে প্রশংসা লাভের জন্য আর কেউ যুদ্ধ করে তার বাহাদুরী ও বীরত্ব প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে। এদের কার যুদ্ধ ফি সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর রাস্তায় গণ্য হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দেন, আল্লাহর কালিমা বুলন্দীর জন্য যে যুদ্ধ করে, তারটাই কেবল আল্লাহর রাস্তায় গণ্য হবে। -সহীহ বুখারী: ২৮১০, সহীহ মুসলিম: ৫০২৮


    অতএব, লোক দেখানোর জন্য কোনো দ্বীনের কাজ করলে সেটা ফি সাবিলিল্লাহ হবে না তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হবে না, আল্লাহর দ্বীনের জন্য হবে না। এটাতে কোনো সওয়াব পাওয়া যাবে না। অতএব, লোক দেখানো দান, লোক দেখানো নামায, লোক দেখানো ওয়াজ, লোক দেখানো যুদ্ধ, লোক দেখানো হিজরত কোনোটাই ফি সাবিলিল্লাহ নয়। এগুলো ফি সাবিলিল্লাহ তখনই হবে যখন সেগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং আল্লাহর দ্বীনের উপকারের জন্য করা হবে। উপরোক্ত হাদিসে এ অর্থই উদ্দেশ্য। কুরআন ও সুন্নাহয় ফি সাবিলিল্লাহ বলতে অনেক ক্ষেত্রে এ অর্থই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ দ্বীনের কাজ দ্বীনের জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। যেমন কয়েকটি আয়াত লক্ষ করুন-


    দান সংক্রান্ত
    {مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ (261) الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ } [البقرة: 261، 262]
    যাকাত সংক্রান্ত
    {وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ (34)} [التوبة: 34]
    হিজরত সংক্রান্ত
    { وَمَنْ يُهَاجِرْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا (100)} [النساء: 100]
    {وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ (58)} [الحج: 58]
    {وَلَا يَأْتَلِ أُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ أَنْ يُؤْتُوا أُولِي الْقُرْبَى وَالْمَسَاكِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ (22)} [النور: 22]
    জিহাদে দান সংক্রান্ত
    {وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ (195)} [البقرة: 195]
    {وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ (60)} [الأنفال: 60]

    আর জিহাদ সংক্রান্ত আয়াত অসংখ্য তাই উল্লেখ করা হলো না।


    এ সকল আয়াতে দান সাদাকা, হিজরত ইত্যাদি ফি সাবিলিল্লাহ করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং দ্বীনের উপকারের জন্য করা। লোক দেখানোর জন্য না করা বা শরীয়ত বহির্ভুত শয়তানের পথে না করা।



    ফি সাবিলিল্লাহ হওয়ার শর্ত

    ফি সাবিলিল্লাহ হওয়ার জন্য দু’টি শর্ত:

    এক. কাজটি দ্বীনের কাজ হতে হবে। শয়তানি তরিকার বা শরীয়ত বহির্ভুত হতে পারবে না। অতএব, কুফরি সংবিধান রক্ষার্থে জীবন দিলে সেটা ফি সাবিলিল্লাহ হবে না, ফি সাবিলিত তাগুত হবে। পতিতালয়ের জন্য অর্থ দান করলে তা ফি সাবিলিল্লাহ হবে না, ফি সাবিলিশ শাইতান হবে।

    দুই. দ্বীনের উক্ত কাজটি ইখলাসের সাথে করতে হবে। অতএব, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, জিহাদ, হিজরত যা কিছুই করি সব ইখলাসের সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করতে হবে। লোক দেখানোর জন্য বা সুনাম কুড়ানোর জন্য হলে ফি সাবিলিল্লাহ হবে না।



    ফি সাবিলিল্লাহ জিহাদের সাথে খাস নয়
    বুঝতে পারলাম, সাবিলুল্লাহ অর্থ আল্লাহর পথ। অর্থাৎ যে পথ আল্লাহ তাআলা দেখিয়েছেন। যে পথে চললে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট। এ হিসেবে গোটা দ্বীন এবং দ্বীনের বিধি বিধান সবগুলোই সাবিলুল্লাহ। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, দান, সাদাকা, হিজরত, জিহাদ সব সাবিলুল্লাহ।

    আর ফি সাবিলিল্লাহ অর্থ আল্লাহর পথে। তথা দ্বীনের পথে, দ্বীনের জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। দ্বীনের উপকারের জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করাকে ফি সাবিলিল্লাহ করা বলা হয়।


    অতএব, যে কাজ শরীয়ত সমর্থিত নয়; কিংবা দ্বীনের যে কাজ দ্বীনের স্বার্থে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয় না তা ফি সাবিলিল্লাহ হবে না।


    উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ফি সাবিলিল্লাহ জিহাদের সাথে খাস নয়। বরং ফি সাবিলিল্লাহর অংসখ্য কাজের মধ্যে জিহাদ একটা কাজ। অবশ্য ফি সাবিলিল্লাহ কথাটি বলা হলে দ্বীনের অসংখ্য কাজের মধ্য থেকে অনেক সময় শুধু জিহাদই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।


    অতএব, কোনো আয়াত বা হাদিসে ফি সাবিলিল্লাহ কথাটি আসলে আগে পরের আলোচনা দেখে বুঝতে হবে যে, এখানে শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হয়েছে (যার মাঝে জিহাদও শামিল আছে), না’কি শুধু জিহাদ উদ্দেশ্য।



    আলোচ্য হাদিসে ফি সাবিলিল্লাহ শব্দটি ব্যাপক
    আমরা শুরুতে যে হাদিস নিয়ে কথা বলছিলাম, সে হাদিসটিতে ফি সাবিলিল্লাহ শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মধ্যে জিহাদও আছে। এ কারণেই সাহাবায়ে কেরাম এ ফজিলত জিহাদেও ব্যবহার করেছেন, জুমআতেও ব্যবহার করেছেন।

    হাফেজ ইবনে হাজার রহ. (৮৫২হি.) বলেন,
    قال ابن بطال: ... والمراد في سبيل الله جميع طاعاته ا هـ. وهو كما قال، إلا أن المتبادر عند الإطلاق من لفظ سبيل الله الجهاد، وقد أورده المصنف في "فضل المشي إلى الجمعة" استعمالا للفظ في عمومه. -فتح الباري لابن حجر (6/ 29)
    ইবনে বাত্তাল রহ. বলেন, ‘(এ হাদিসে) ফি সাবিলিল্লাহ দ্বারা সকল নেক কাজ উদ্দেশ্য’। তিনি যেমন বলেছেন বিষয়টা এমনই। অবশ্য সাবিলুল্লাহ বলতে সাধারণত জিহাদই উদ্দেশ্য হয়। ইমাম বুখারি রহ. হেঁটে জুমআয় গমনের ফজিলত বুঝাতে হাদিসটি এনেছেন সাবিলুল্লাহ শব্দটির ব্যাপক অর্থ হিসেবে। -ফাতহুল বারি: ৬/২৯

    উপরোক্ত হাদিসে সাবিলুল্লাহ শব্দটি যেহেতু ব্যাপকার্থে এসেছে, সুনির্দিষ্টভাবে শুধু জিহাদের জন্য আসেনি, তাই এর ফজিলত যেমন জিহাদে ব্যবহার করা যাবে তেমনি জুমআ, হজ্ব, ইলমের জন্য সফর ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যাবে। তবে যার আমলে যত বেশি কষ্ট তার উপর তত বেশি ফিট খাবে।


    যেমনটা ইবনে হাজার রহ. বলেছেন,
    فإذا كان مجرد مس الغبار للقدم يحرم عليها النار فكيف بمن سعى وبذل جهده واستنفد وسعه؟. -فتح الباري لابن حجر (6/ 30)
    (যুদ্ধের ময়দানে) পায়ে কেবল ধূলা বালি লাগলেই যদি তা জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যায়, তাহলে যে ব্যক্তি দৌড় ঝাঁপ করবে, নিজের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দেবে তার ফজিলত কত বেশি হবে?! –ফাতহুল বারি: ৬/৩০

    ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮হি.) বলেন,
    فهذا في الغبار الذي يصيب الوجه والرجل فكيف بما هو أشق منه؛ كالثلج والبرد والوحل. -مجموع الفتاوى (28/ 419)
    চেহারা ও কদমে লাগা ধূলা বালিরই যদি এ ফজিলত হয়, তাহলে বরফে চলা বা প্রচণ্ড শীত ও কাদা-কর্দমে চলার মতো কাজ, যেগুলো আরও অনেক গুণ কঠিন, সেগুলোর ফজিলত কত বেশি হবে?! –মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৪১৯



    ঢালাওভাবে জিহাদের আয়াত-হাদিস অন্যত্র ব্যবহার করা যাবে না
    উপরোক্ত হাদিসে যেহেতু সাবিলুল্লাহ শব্দটি আম তথা ব্যাপক ছিল তাই তা জিহাদসহ অন্য সকল আমলে ফিট করা যাবে। কিন্তু যে ফজিলত বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো আমলের ব্যাপারে এসেছে তা কি করে অন্য আমলের উপর ফিট করা হবে?? নামাযের ফজিলত কি রোযার উপর কিংবা হজ্বের উপর লাগনো যাবে? তদ্রূপ দান সাদাকার ফজিলত কি বিবাহ শাদির উপর লাগানো যাবে? সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এ ধরনের কথা বলবে না।


    তাবলিগি ভাইয়েরা দু’টি ভুল করেছেন
    এক. জিহাদের ফজিলত ঢালাওভাবে প্রচলিত তাবলিগে ব্যবহার করেছেন।

    দুই. এরপর প্রচলিত তাবলিগকে জিহাদ বানিয়ে ফেলেছেন।


    এভাবে তারা শরীয়তের অকাট্য বিধান জিহাদের তাহরিফ করেছেন। বরং বলতে গেলে শরীয়ত থেকে জিহাদ নামক বিধানটি বাদ দিয়ে দিয়েছেন।



    আচ্ছা আপনিই বলুন, আমাদের আলোচ্য হাদিসটি তো দেখলাম যে, সাহাবায়ে কেরাম জুমআতেও ব্যবহার করেছেন জিহাদেও করেছেন। কিন্তু তাই বলে কি এ কথা বলা যাবে যে, একই ফজিলত যেহেতু দুই আমলে ব্যবহার করা যাচ্ছে কাজেই নামাযের অন্য সকল ফজিলতও জিহাদে ব্যবহার করা যাবে? যদি তা না করা যায় তাহলে কিভাবে জিহাদের সকল ফজিলত নামাযে ব্যবহার করা যাবে?!


    কিংবা এ কথা কি বলা যাবে যে, জিহাদ করলে আর জুমআ পড়তে হবে না??!! এটা তো তাবলিগি ভাইয়েরাও স্বীকার করবেন না। তাহলে এ কথা কিভাবে বলা যাবে যে, জুমআ পড়লে জিহাদ আদায় হয়ে যাবে, জিহাদ করতে হবে না??



    প্রচলিত তাবলিগ তো একটা নব আবিষ্কৃত পন্থা। সাহাবায়ে কেরামের যামানায় তা ছিল না। উপরোক্ত হাদিসের ফজিলত এ কাজে ব্যবহারের কথা সাহাবায়ে কেরাম থেকে নেই। তারপরও না হয় ধরে নিলাম হাদিসের ব্যাপকার্থের মাঝে তাবলিগও পড়ে। কিন্তু তাই বলে কি এ কথা বলা যাবে যে, জিহাদ আর তাবলিগ একই? তাবলিগই জিহাদ? তাবলিগ করলে আর জিহাদ করতে হবে না বা জিহাদ ফরয থাকবে না?



    যদি তাবলিগওয়ালারা এটা বলতে চায় তাহলে এর আগে বলতে হবে, নামায আর জিহাদ একই। জিহাদ করলে আর নামায লাগবে না।







  • #2
    মাশাআল্লাহ, চমৎকারভাবে দালিলীক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মুহতারাম ভাই জবাব দিয়েছেন।
    আল্লাহ ভাইয়ের ইলমে ভরপুর বারাকাহ দান করুন ও মুসলিম উম্মাহকে উপকৃত করুন।
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      আসসালামু আলাইকুম, [[[ ভাইজান ]]] এমন কোন মূলনীতি আছে কি না যার দ্বারা বোঝা যাবে এখানে সাবিলিল্লাহ দ্বারা জিহাদই মুরাদ/ অন্যান্য আমলও মুরাদ।
      আলহামদুলিল্লাহ,, আপনার পোস্টটি খুবই প্রয়োজন ছিলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন আমীন।
      ====[[[[[ ভাইজান ====]]]]] আমার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সিরাতের কিতাবের নাম বললে ভালো হয়।
      নজিবাদী রহ এ-র কিতাবটি নেওয়া যায় কি না?
      আল্লাহ, আমাকে মুজাহিদ হিসেবে কবুল করুন আমীন।

      Comment


      • #4
        আলহামদু লিল্লাহ, উপকারী একটি পোস্ট। বারাকাল্লাহু ফিক।
        আল্লাহ আমাদেরকে লোক দেখানো বা শরীয়ত বহির্ভূত কাজ থেকে হিফাযত করুন। আমীন
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট, আল্লাহ্ ভাইকে উত্তম বিনীময় দান করুন, আমীন।

          Comment


          • #6
            উক্ত হাদীসের জবাবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, হাদীসে সাহাবী রাযি. শুধু হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসের বাস্তবায়ন তার আমলের সাথে সংযুক্ত হবে বলে উল্লেখ নাই. তাই হাদীসের প্রয়োগ আপন জায়গায় বহাল থাকবে. যদিও আগে পরের কথা ও অবস্থার দৃষ্টিতে দেখা যায় যে সাহাবী জুমার সালাতে যাওয়াকে আল্লাহর রাস্তায় যাওয়া তথা জিহাদের সমকক্ষ বলে বুঝাতে চেয়েছেন. কিন্তু এ বুঝাটা হলো, আনুসাঙ্গিক. অপর পক্ষে ফী সবীলিল্লাহ দ্বারা যে কিতাল উদ্দেশ্য তা অন্য বর্ণনায় স্পষ্ট থাকার কারণে আনুসাঙ্গিক ভাবে বুঝাটা এখানে অগ্রাধিকার পাবে না.
            তাই হাদীসে বর্ণিত ফী সাবীলিল্লাহ দ্বারা জিহাদই উদ্দেশ্য হবে.

            আমার বুঝতে ভুল হলে কমেন্ট করে জানাবেন.

            Comment


            • #7
              আস্সালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহি অবারকাতুহ
              আসল কথা হচ্ছে আজ আমরা এমন কিছু অন্ধ ব্যক্তির ন্যায় হয়েছি।যাদের একজন যখন হাতির লেজ ধরছে তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল হাতি কেমন সে বলল বড় সাপের মত। আরেক জন যে কান ধরেছে তাকে জিজ্ঞেস করা হল হাতি কেমন? সে বলল কুলার ন্যায়। ঠিক আজ আমরা দ্বীন থেকে এত এত দুরে(দূরে) সরে গিয়েছি যে দ্বীন কি জিনিস তা নিজেও জানিনা আবার কেহ এবিষয়ে আমাকে বুঝাতে চাইলে সে মানহাজি বা গোমরাহ বলে আখ্যায়িত করি।এবং নিজে দ্বীনের যে ডিপার্টমেন্টে আছে একমাত্র তাকেই দ্বীন বলে বেড়াচ্ছেন ।আল্লাহ্ রহম করুন ।আমীন ।
              এখানে একটি বিষয় উল্যেখ(উল্লেখ) করতে চাচ্ছি আর তা হল ।আমরা যারা জিহাদের পথে হাঁটতেছি ওয়াল্লাহি আমরা কখনো শুধু জিহাদ কে পরিপূর্ণ দ্বীন মনে করিনা যা আমাদের দিকে মিথ্যা আরুপ(আরোপ) করা হয়।
              এথচ(অথচ) আমরা যদি এমন করতাম তাহলে দলিল দিতে পারতাম ।
              1/يأتيها الذين آمنوا من يرتدمنكم....
              এ আয়াতটিতে আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন যারা দ্বীন থেকে ফিরে যাবে ।আর শেষে বলেছেন দ্বীন থেকে কি উদ্দেশ্য এখানে 1/ঈমান 2/জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ
              ●2/حديث:حتي ترجعوا الي دينكم

              Comment

              Working...
              X