Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইবাদাতের সুবর্ণকাল শীতকাল

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইবাদাতের সুবর্ণকাল শীতকাল

    ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম, ইসলাম মানুষের স্বভাব ধর্ম। ইসলামের প্রতিটি বিধিবিধান অত্যন্ত সময়োপযোগী। প্রকৃতি আল্লাহর দান; শীতকাল প্রাকৃতিক নেয়ামতের অন্যতম অংশ। শীতকালের জন্য রয়েছে বেশ কিছু স্বতন্ত্র বিধিবিধান। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আল্লাহ দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান, নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।’ (সূরা-২৪ নুর, আয়াত: ৪৪)। আল্লাহ আরও বলেন: ‘আর তিনি দিবা রাত্রিকে পরস্পরের অনুগামী করেছেন, যে উপদেশ গ্রহণ করতে চায় অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায় তার জন্য।’ (সূরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৬২)। হযরত ওমর (রা.) বলেন, ‘শীতকাল হলো ইবাদাতকারীদের জন্য গনীমতস্বরূপ।’ শীত তো এমন গনীমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত কিংবা চেষ্টা ও কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনীমত স্বতস্ফূর্তভাবে লাভ করে এবং কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতীরেকে তা ভোগ করে।
    আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেন: ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল র.)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ (সুনানে বায়হাকী)। সাহাবায়ে কিরাম ও তাদের পরবর্তী আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ শীতকালকে স্বাগত জানাতেন। শতিকাল এলে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন- ‘হে শীতকাল! তোমাকে স্বাগতম! শীতকালে বরকত নাজিল হয়; শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।’ হাসান বসরি (রহ.) বলেন- ‘শীতকাল মুমিনের জন্য কতই না উত্তম! রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ পড়া যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।’
    আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন- ‘শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি: ৭৯৫)। হাদিসটির ব্যাখ্যায় খাত্তাবী বলেন, শীতল গনিমত মানে সহজলভ্য গনীমত। যেহেতু শীতের রোজায় রোজাদার গরমের তৃষ্ণা অনুভব করে না। মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে তাকে তাঁর ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেন- ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে কাঁদছি না; বরং (রোজার কারণে) গ্রীষ্মের দুপুরের তৃষ্ণা, শীতের রাতের নফল নামাজ এবং ইলমের আসরগুলোতে হাজির হয়ে আলেমদের সোহবত হারানোর জন্য আমি কাঁদছি।’
    আবু হুরায়রা (রা.) বলেন- ‘আমি কি তোমাদের শীতল গনীমত কী সেটা বলে দেব না?’ শ্রোতাগণ বললেন অবশ্যই। তিনি বললেন ‘সেটা হচ্ছে, শীতকালে দিনে রোজা রাখা ও রাতে নামাজ পড়া।’ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত আছে, ‘নবী (স.) বলেছেন: যদি কোনো তীব্র ঠান্ডার দিন আল্লাহর কোনো বান্দা বলে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই), আজকের দিনটি কতই না শীতল! হে আল্লাহ! জাহান্নামের জামহারি থেকে আমাকে মুক্তি দিন।’ তখন আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন- নিশ্চয়ই আমার এক বান্দা আমার কাছে তোমার জামহারি থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাকে আশ্রয় দিলাম। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন- জামহারি কী? নবী (স.) বললেন: জামহারি এমন একটি ঘর যাতে অবিশ^াসী অকৃতজ্ঞদের নিক্ষেপ করা হবে এবং এর ভিতরে তীব্র ঠান্ডার কারণে তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে। (আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইল: ৩০৬)।
    শীতকালে সঠিকভাবে অজু করা, অজুর অঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা। প্রতিটি অঙ্গের যতটুকু স্থানে পানি পৌঁছানো দরকার ততটুকু স্থানে পানি পৌঁছানো। রসূল (স.) বলেন: ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে, ‘সঙ্কটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোযা ও শীতের অজু।’ (আদ দোয়া লিত তাবরানী: ১৪১৪)। রসূল (স.) আরো বলেছেন: আমি কি তোমাদের জানাব না? কিসে তোমাদের পাপমোচন করবে! এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবে! সাহাবায়ে কিরাম বললেন- অবশ্যই! হে আল্লাহর রসূল (স.)! তিনি বললেন- শীতের কষ্ট সত্ত্বেও ঠিকভাবে অজু করা। (মুসলিম: ২৫১; তাফসীরে কুরতুবী)।
    শীতের সময় মানুষ হাতে ও পায়ে মোজা পরে থাকে। অজুর ক্ষেত্রে পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করার বিধান রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অজু করে মোজা পরতে হবে। ‘মুসাফির’ (ভ্রমণরত) ব্যক্তি তিন দিন তিন রাত (৭২ ঘণ্টা) পর্যন্ত মাসেহ করে যেতে পারবেন এবং ‘মুকীম’ (সবাসে অবস্থানরত) ব্যক্তি এক দিন এক রাত (২৪ ঘণ্টা) মাসেহ করতে পারবেন। এ সময়সীমার পর অজুর প্রয়োজন হলে মোজা খুলে পা ধুয়ে অজু করতে হবে। অনেক মুজতাহিদ ফকীহ শুধু চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করা অনুমোদন করেন। হযরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) রসূল (স.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি কাপড়ের মোজা (জাওরাবাইন) এবং জুতার উপরও মাসেহ করেছেন। (তিরমিজি: ৯৯; আবু দাউদ: ১৫৯)। এ হাদীসের ভিত্তিতে অন্যান্য মুজতাহিদ ফকীহগণ কাপড়ের মোজা ও পুরো পায়ের পাতা আবৃতকারী জুতার উপর মাসেহ করা অনুমোদন করেন।
    গরম পানি দিয়ে অজু করায়ও কোনো সমস্যা নেই। অজুর পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মুছে ফেলাতেও সমস্যা নেই। শীতের তীব্রতা যদি কারও সহ্যের বাইরে চলে যায়, পানি গরম করে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে এবং ঠা-া পানি ব্যবহারে শারীরিকভাবে ক্ষতি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তিনি অজু বা গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে পারেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- শীতের মধ্যে এক ব্যক্তির উপর গোসল ফরজ হয়েছে, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ অবস্থায় তার জন্য কোনো অবকাশ আছে কি? উত্তরে তাকে গোসল করার নির্দেশ দেওয়া হলো; ফলে লোকটি অসুস্থ হয়ে মারা গেল। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নবী (স.) এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন ‘তাদের কি হয়েছে? তারা লোকটিকে হত্যা করেছে; তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ; আল্লাহ তায়ালা তো মাটিকে (তায়াম্মুমের জন্য) পবিত্র ঘোষণা করেছেন।’ (বায়হাকি, খ-: ১, হাদীস: ২২৬)।
    ওমর (রা.) তাঁর শাসনামলে গভর্নদের উদ্দেশে শীতের আগমন লগ্নে লিখতেন- ‘শীত কিন্তু এসে গেল, এ তোমাদের দেহের শত্রু। অতএব এর প্রতিরোধে পশম, মোজা, হাতমোজা ইত্যাদির প্রস্তুতি নাও। আর পশম দিয়ে গায়ের চামড়ায় এবং শরীরের পোশাকে শীতের আক্রমণ ঠেকাও। কারণ শীত খুব দ্রুত প্রবেশ করে, তবে সহজে বিদায় নেয় না।’
    নেককার ও পুণ্যাত্মাগণ শীতের রাতগুলোয় সালাত ও জিকিরে রত হন। শীতকাল আগমন করলে উবাইদ বিন উমাইর (রা.) বলতেন- ‘হে কুরআনের ধারক! তোমাদের রাতগুলো তিলাওয়াতের জন্য প্রলম্বিত করা হয়েছে, অতএব তা পড়তে থাক। আর রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনগুলো সংক্ষেপিত করা হয়েছে, তাই বেশি বেশি রোজা রাখো।’ তাদের মাঝে কতই না পার্থক্য যারা জিকির, তিলাওয়াত, দোয়া, মুনাজাত, তাহাজ্জুদ ও রোজার মাধ্যমে শীতের ঋতু উদযাপন করে আর যারা গাফেল ও বেখবর হয়ে অনর্থক কাজে এ রাতগুলো অতিবাহিত করে। সে যেন কেয়ামতের হিসাব নিকাশ পুরোপুরি বিস্মৃত হয়েছে। এদের থেকে তাদের পার্থক্য অনেক, যারা আপন রবের সামনে দাঁড়িয়ে ও সিজদাবনত হয়ে রাত যাপন করে। কুরআনের ভাষায়, ‘রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটায়। আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকে।’ (সূরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮)।
    হযরত ওমর (রা.) তাঁর ছেলেকে উদ্দেশ করে বলেন- ‘শীতের দিনে ভালোভাবে অজু করা বড় গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।’ আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেন- ‘আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা বলব না যা দ্বারা গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়?’ সাহাবিরা বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, ‘মন না চাইলেও অজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা।’ (মুসলিম)।
    রোজা কাজা বাকি থাকলে তা আদায় করার জন্য শীতের দিন অতি উপযোগী। নফল রোজা রাখর জন্যও শীলকাল সুবর্ণ সুযোগ। সামর্থবানগণ শীতকালে বস্ত্রহীন, শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। যারা সরাসরি আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেন, তাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে এ আগুন থেকে কোনো অগ্নিকা-ের ঘটনা না ঘটে। ঘুমানোর আগে মনে করে আগুন নিভিয়ে দিতে হবে। নবীজি (স.) বলেছেন: ‘এই আগুন হলো তোমাদের দুশমন, তোমরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এসব নিভিয়ে দেবে।’
    ইলম আমাদের বুঝতে শিখায় এবং জিহাদ আমাদের মানতে শিখায়

  • #2
    ভাই দুই মাস আগে পোষ্টটি করলে, এই শীতটা আরো ভাল যেত। খুব ভাল পোষ্ট।
    জাযাকুমুল্লাহ খায়রান

    Comment


    • #3
      বারাকাল্লা ফী
      ইলম আমাদের বুঝতে শিখায় এবং জিহাদ আমাদের মানতে শিখায়

      Comment

      Working...
      X