স্যার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. এর চার শর্ত
স্যার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর; তিনি মারা গেছেন, আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিন। তবে ভুল তো ভুলই। ভুলের সমালোচনা ব্যক্তির সমালোচনা নয়। ‘খুতবাতুল ইসলাম’ –কিতাবে তিনি জিহাদ জায়েয হওয়ার জন্য চারটি শর্ত আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, “পারিভাষিক জিহাদ বা সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য ইসলামে চারটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
প্রথম শর্ত হলো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে ইসলামে জিহাদের অনুমতি প্রদান করে নি।
… দ্বিতীয় শর্ত … আক্রান্ত বা অত্যাচারিত হওয়া। যখন মুসলিম রাষ্ট্র বা তার নাগরিকগণ অন্য কোনো রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত বা অত্যাচারিত হবেন, অথবা এরূপ হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা প্রকাশিত হবে তখনই কিতাল বৈধ হবে।
জিহাদের তৃতীয় শর্ত হলো রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি ও নেতৃত্ব। কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জিহাদের ঘোষণা বা অনুমতি প্রদান করতে পারে না।
… জিহাদের চতুর্থ শর্ত হলো, শুধু সশস্ত্র শত্রুযোদ্ধাদের সাথেই যুদ্ধ করতে হবে। … এ নির্দেশের মাধ্যমে ইসলাম যুদ্ধের নামে অযোদ্ধা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা, অযোদ্ধা মানুষদেরকে হত্যা করা ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় বা গোষ্ঠীয় সকল সন্ত্রাসের পথ রোধ করেছে।” –খুতবাতুল ইসলাম: ৩৩৫, ৩৩৬
“ইসলাম এরূপ সন্ত্রাসের সকল পথ রুদ্ধ করেছে। যুদ্ধের জন্য রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি শর্ত করেছে। এছাড়া অযোদ্ধা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম করেছে।” –খুতবাতুল ইসলাম: ৩৩৯
নাইন-এলিভেন সম্পর্কে বলেন,
“কিছু মুসলমান বিভিন্ন দেশে অযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষ হত্যা করছে বা সন্ত্রাসের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানা যায়। এগুলিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রমাণিত নয়। সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী ঘটনা আমেরকিার টুইন টাওয়ার ধ্বংস। বিন লাদেন বা তার বাহিনি তা করেছে বলে দাবি করে আমেরিকা এ দাবির ভিত্তিতে আফগানিস্তানের ও ইরাকের লক্ষ লক্ষ নিরীহ নিরস্ত্র অযোদ্ধা নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনোভাবেই বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেনি।” –খুতবাতুল ইসলাম: ৩৩৯
তাহলে উনার দৃষ্টিতে নাইন এলিভেনের হামলা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নিষিদ্ধ, হারাম ও কঠিনতম পাপ। তিনি আজ বেঁচে থাকলে ইয়াহুদিদের উপর হামাসের হামলাকেও সন্ত্রাস বলতেন কি’না আল্লাহ মা’লুম। কারণ, এ হামলায় সেনা মরেছে মাত্র তিনশো আর বাকি এগারোশোই অযোদ্ধা।
তিনি কি তাহলে ইকদামি জিহাদ অস্বীকার করলেন?
তবে উনার বক্তব্য পরিষ্কার যে, আগে বেড়ে কাফেরদের উপর হামলা তথা জিহাদুত তালাব বা ইকদামি জিহাদকে তিনি অস্বীকার করছেন। কারণ, তিনি জিহাদ জায়েয হওয়ার জন্য আক্রান্ত হওয়া বা আক্রান্ত হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা শর্ত করেছেন। এর দাবি এটাই যে, কাফেররা মুসলিমদের উপর এসে আক্রমণ না করলে তাদের দেশে গিয়ে আক্রমণ করা হারাম। ইকদামি জিহাদ এটিরই নাম। বিশেষত যখন তিনি একথাটিও বলেছেন,
“ইসলামে শুধু রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্যই জিহাদ বৈধ করা হয়েছে, ধর্ম প্রচারের জন্য নয়।” –খুতবাতুল ইসলাম: ৩৩৮
অতএব, ইসলাম প্রচারের জন্য বহিঃরাষ্ট্রে হামলা করা ইসলামে সমর্থিত নয় এবং এটি জিহাদ নয়, বরং কঠিনতম পাপ।
উনার এ বক্তব্য কুরআন, সুন্নাহ, সীরাতে রাসূল, সাহাবায়ে কেরামের আজীবনের আমল ও আদর্শ এবং গোটা ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সালাফ-খালাফ সকল উলামার আকিদা বিশ্বাস ও আমলের পরিপন্থী। যেহেতু কিতাবটি তিনি প্রশাসনের অনুরোধে লিখেছেন এবং কিতাবটি দেখে প্রশাসন খুশি হয়ে ছাপার পথে সহযোগিতাও করেছে, তখন এ ধরনের কথাবার্তা কিতাবটির জায়গায় জায়গায় থেকে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপারই বটে। যদি নিজে থেকে স্বাধীনভাবে লিখতেন, তাহলে হয়তো এ ধরনের ইসলামবিরোধী এবং মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস-ঐতিহ্যকে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী ঈমানবিধ্বংসী কথাগুলো থাকতো না।
উপরোক্ত চার শর্ত পাওয়া গেলে জিহাদ কি ফরয হবে?
উনার বক্তব্য থেকে বুঝে আসছে: উপরোক্ত চার শর্ত পূরণ হলেও ফরয হবে না, শুধু জায়েয হবে। তিনি বলেন,
“জিহাদের শর্তগুলো পূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ জিহাদের নামে অস্ত্র ধারণ করে বা হত্যা করে তবে সে ব্যক্তি কঠিনতম পাপে লিপ্ত হলো। আর জিহাদের সকল শর্ত পূরণ হওয়ার পরেও যদি কেউ জীবনেও জিহাদ না করে তাহলে তার কোনো গোনাহ হবে না, শুধু জিহাদের মহান সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।” –খুতবাতুল ইসলাম: ৩৩৬
এ বক্তব্যটির দাবি এটিই যে, যখন উম্মতে মুসলিমার উপর আক্রমণ হবে, কাফেররা মুসলিমদের হত্যা করতে থাকবে, মুসলিমদের নারী-শিশুদের বন্দী করে নিয়ে যেতে থাকবে, পাশাপাশি মুসলিমদের বৈধ রাষ্ট্রপ্রধান জিহাদের ডাকও দিয়েছেন, মোটকথা জিহাদের চারোটি শর্ত পূর্ণ হয়েছে: তারপরও জিহাদ ফরয নয়, শুধু জায়েয। এ অবস্থায়ও জিহাদ না করে বসে থাকলে কোনো গোনাহ হবে না, শুধু জিহাদের মহান সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।
উনার উদ্দেশ্য কি তা আল্লাহই ভালো জানেন, তবে বক্তব্যের দাবি এটিই। আর এটি এমন একটি ভয়ানক কথা যার উপর আইম্মায়ে কেরাম কুফরের হুকুম লাগিয়েছেন।
মাওসিলি রহ. (৬৮৩ হি.) বলেন,
والجهاد فريضة محكمة يكفر جاحدها، ثبتت فرضيته بالكتاب والسنة وإجماع الأمة. -الاختيار لتعليل المختار (4/ 117)، كتاب السير
“জিহাদ একটি মুহকাম ফরিজা। এর অস্বীকারকারী কাফের হয়ে যাবে। কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমায়ে উম্মতের দ্বারা এটি ফরয হওয়া সাব্যস্ত।” –আলইখতিয়ার: ৪/১১৭ইকদামি জিহাদ তথা কাফেরদের উপর আগে বেড়ে আক্রমণ করা ফরয বরং জায়েয হওয়াই তিনি অস্বীকার করলেন। আর জিহাদের যে চার শর্ত আরোপ করেছেন এবং এরপর তিনি শর্ত পূরণ হওয়ার পরও জিহাদ না করাকে গোনাহের কাজ বলছেন না, এর দাবি এটিই যে, উম্মাহর উপর শত্রু আক্রমণ করে বসলেও জিহাদ ফরয নয়। আর এ ব্যাপারেই হাসকাফি রহ. (১০৮৮ হি.) বলেন,
فإن هجم العدو أي غلب ففرض عين يكفر جاحده كما فى الاختيار وغيره. –الدر المنتقى (مطبوع مع مجمع الأنهر): 1\633
“শত্রু যদি অকস্মাৎ আক্রমণ করে বসে তাহলে জিহাদ ফরযে আইন, এর অস্বীকারকারী কাফের হয়ে যাবে। যেমনটা ইখতিয়ার ও অন্যান্য কিতাবে আছে।” –আদদুররুল মুনতাকা (মাজমাউল আনহুরের সাথে মুদ্রিত): ১/৬৩৩যাহোক, এটি উনার বক্তব্যের উপর মন্তব্য, ব্যক্তির উপর নয়। কেউ এমনটা মনে করবেন না যে, আমি স্যার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরকে কাফের আখ্যায়িত করেছি। আমি শুধু আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে উনার বক্তব্যের স্বাভাবিক যে অর্থ সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছি। হতে পারে এমনটা উনার উদ্দেশ্য না। আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক। এমনও হতে পারে প্রশাসনের চাপে তিনি কথাগুলো বলতে বাধ্য হয়েছে। তবে যাই হোক, যেহেতু বক্তব্যটি কুরআন সুন্নাহ এবং ইজমায়ে উম্মতের বিপরীত এবং এ বক্তব্য থেকে ভুল আকিদা বিশ্বাস ছড়াতে পারে, তাই একটু সতর্ক করা উদ্দেশ্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করেন। হিদায়াতের রাস্তায় অটল অবিচল রাখেন। আমীন। ইয়া রাব্বাল আলামীন।
***
উনার চার শর্তের প্রত্যেকটিই কুরআন সুন্নাহ এবং আইম্মায়ে কেরামের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিপরীত। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। এখানে চতুর্থ শর্তটি উদ্দেশ্য যে, অযোদ্ধা তথা সশস্ত্র নয় এমন কাউকে আক্রমণ করা যাবে না এবং বেসামরিক কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা যাবে না। অবশ্য এটিও একটি আশ্চর্যের কথা যে, যখন স্বয়ং কাফেররা এসে আমাদের উপর আক্রমণ করছে, তখন অযোদ্ধা কাফের বা অযোদ্ধা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের প্রসঙ্গটি কিভাবে আসছে? এটি তো তখন সম্ভব হতো যখন ইকদামি জিহাদ জায়েয হবে আর আমরা তাদের দেশ দখল করার জন্য অভিযান চালাবো। যাহোক, সম্ভবত তিনি বুঝাতে চেয়েছেন মার্কেট, বাড়িঘর অন্যান্য স্থাপনা ও ফল-ফসলে বোম্বিং করা যাবে না বা কোনো আঘাত করা যাবে না। এটির পর্যালোচনায়ও আমি যাচ্ছি না। কুরআনে কারীমের একটি আয়াত আর ফুকাহায়ে কেরামের দুয়েকটি বক্তব্য শুধু উল্লেখ করছি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ. –الحشر 5
“তোমরা যে কিছু কিছু খেজুরবৃক্ষ কেটে দিয়েছ, আর কিছু না কেটে মূলের উপর খাড়া রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই আদেশে এবং যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন।” -সূরাহাশর: ৫ইয়াহুদি গোত্র বনু নজিরের খেজুর বাগান সাহাবায়ে কেরাম কাটতে শুরু করেছিলেন। তখন ইয়াহুদিরা শান্তিবাদি (!!) স্লোগান শুরু করে যে, মুহাম্মাদ, এভাবে বাগান কেটে ফেলা তো সন্ত্রাস! তখন কোনো কোনো সাহাবি এমনটা মনে করেন যে, কাটার দরকার নাই, এগুলো তো গনিমতই হবে। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করে তার বৈধতা দেন এবং উভয়শ্রেণীর সাহাবীদের সমর্থন করেন। অর্থাৎ কাফেরদের দুর্বল করতে যদি ধ্বংস করা দরকার মনে হয় করবে, যদি প্রয়োজন না থাকে এবং আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হই আর এগুলো আমাদের গনিমত হওয়ার অপেক্ষায় থাকে মাত্র, তাহলে ধ্বংস করার দরকার নাই। এটি মুজাহিদদের ইজতিহাদ এবং মুসলিমদের স্বার্থের উপর নির্ভর করবে। এমন নয় যে, সর্বাবস্থায় বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা নিষেধ।
সারাখসি রহ. (৪৯০ হি.) বলেন,
ثم استدل محمد - رحمه الله - على جواز قطع النخيل وتخريب البيوت في دار الحرب بقوله تعالى: {ما قطعتم من لينة} [الحشر: 5] الآية ... ونزول الآية في قصة بني النضير. -شرح السير الكبير (ص: 52)
“এরপর ইমাম মুহাম্মাদ রহ. দারুল হারবে খর্জুরবৃক্ষ কর্তন এবং বাড়িঘর ধ্বংস করা জায়েয হওয়ার পক্ষে আল্লাহ তাআলার এ বাণী দিয়ে দলীল দিয়েছেন ‘তোমরা যে কিছু কিছু খেজুর গাছ কেটে দিয়েছো …’। … আয়াতটি বনু নজিরের ঘটনায় নাযিল হয়।” –শারহুস সিয়ারিল কাবীর: ৫২জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
وأما جيش المسلمين إذا غزوا أرض الحرب وأرادوا الخروج فإن الأولى أن يحرقوا شجرهم وزروعهم وديارهم. وكذلك قال أصحابنا في مواشيهم: "إذا لم يمكنهم إخراجها ذبحت ثم أحرقت". وأما ما رجوا أن يصير فيئا للمسلمين فإنهم إن تركوه ليصير للمسلمين جاز، وإن أحرقوه غيظا للمشركين جاز، استدلالا بالآية وبما فعله النبي صلى الله عليه وسلم في أموال بني النضير. -أحكام القرآن للجصاص ط العلمية (3/ 574)
“মুসলিমদের সেনাবাহিনি দারুল হারবে যুদ্ধে যাওয়ার পর যখন (এলাকা দখল না করে) ফিরে আসার ইচ্ছা করবে, তখন উত্তম হচ্ছে: তাদের গাছগাছালি, ফসলাদি এবং বাড়িঘর-স্থাপনা জ্বালিয়ে দিয়ে আসা। চতুষ্পদ জন্তুর ক্ষেত্রেও আমাদের আইম্মাগণ এমনটিই বলেছেন যে, যদি তা বের করে নিয়ে আসা সম্ভব না হয়, তাহলে জবাই করে জ্বালিয়ে দিয়ে আসবে। পক্ষান্তরে যে সম্পদের ব্যাপারে তারা মনে করছেন যে, তা অচিরেই মুসলিমদের গনিমত হতে যাচ্ছে, তাহলে যদি তা ছেড়ে আসেন যেন তা পরবর্তীতে মুসলিমদের গনিমতে পরিণত হয় তাহলেও জায়েয, যদি মুশরিকদের মনে ক্ষোভ সঞ্চারের জন্য জ্বালিয়ে দিয়ে আসেন তাহলেও জায়েয। দলীল: উপরোক্ত আয়াত এবং বনু নজিরের সম্পদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গৃহীত পদক্ষেপ।” –আহকামুল কুরআন: ৩/৫৭৪আসল বিষয় হচ্ছে শরীয়ত যখন বেসামরিক কাফেরদের জান হালাল করেছে, তাদের হত্যা জায়েয করেছে, বন্দী করে গোলাম বানানো জায়েয করেছে: তখন তাদের অর্থসম্পদ, স্থাপনা ও ফল-ফসলে আঘাত হানা নাজায়েয হওয়ার তো কোনো কারণ নাই। সম্পদের মূল্য তো আর জীবনের চেয়ে বেশি না। জানের প্রয়োজন পূরণের জন্যই তো সম্পদ। যখন সরাসরি কাফেরদের জান আমাদের জন্য হালাল তখন মাল হালাল না হওয়ার কোনো কারণ নাই। তবে যেটি ধ্বংস করার দরকার নাই বিলকুল, অনর্থক সেটি ধ্বংস না করে গনিমত বানিয়ে নিলেই মুসলিমদের উপকার। পক্ষান্তরে যেটি গনিমত বানানোর সুযোগ নাই, সেটি ছেড়ে এসে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের পথ করে দেয়ার চেয়ে অন্তত ধ্বংস করে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ। কুরআন এটিই বলেছে। সাহাবায়ে কেরাম এমনটাই বুঝেছেন। এটিই উম্মাহর বিশ্বাস ও মুতাওয়ারাস আমল। কিন্তু চিন্তা-চেতনায় যদি আপনি পশ্চিমা প্রোপাগাণ্ডার সামনে নতজানু হয়ে পড়েন, তাহলে আপনার কাছে ভিন্ন কিছু মনে হতে পারে।
যাহোক, আমার মূল উদ্দেশ্য বেসামরিক কাফের হত্যার বিষয়টি। প্রসঙ্গক্রমে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর আলোচনা এসে গেল।
ইস্তিদলালের তরিকার ব্যাপারে একটু সতর্কীকরণ
স্যার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. তার আরোপিত এ চারটি শর্তের পক্ষে চারটি আয়াত হাদিস উল্লেখ করেছেন। তো এটি অবশ্যই ইস্তিদলালের কোনো সহীহ তরিকা না। কোনো আয়াত বা হাদিস পড়ে দেয়াই যথেষ্ট নয়। এমনটি হলে আমরা খারিজিদের সমালোচনা করি কেন? এ আয়াতে কারীমা ও হাদিস শরীফটির উপর চৌদ্দশত বছর অতিক্রম করে গেছে। হাজারো হাজারো ইমাম এ আয়াত হাদিসটি নিয়ে গবেষণা করেছেন। আহকাম বের করেছেন। উম্মাহর জন্য সেগুলোই যথেষ্ট। আজ যদি কেউ কোনো আয়াত বা হাদিস দিয়ে দলীল দিতে চান, তাহলে অবশ্যই তাকে চৌদ্দশত বছরের সেই রত্নভাণ্ডারের বরাত দিয়ে কথা বলতে হবে, নইলে এই ইলম হবে লেজকাটা ইলম।
***
Comment