আজকের মজলিসের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের এ প্রবন্ধের আলোচনা শেষ করবো। সাধারণ নাগরিক হত্যার বিষয়টিকে আমরা আরও তিনটা দিক থেকে দেখবো।
এক.যদি বলেন, শুধু আগ্রাসীকে এবং শুধু অস্ত্রধারীকে হত্যা করা যাবে, সাধারণদের না, তাহলে আপনি এক্ষেত্রে মুমিন কাফেরে কোনো ব্যবধান করলেন না। অস্ত্রধারী আগ্রাসী মুমিন হলেও তাকে দমন করা আবশ্যক। হত্যা ছাড়া দমন সম্ভব না হলে হত্যা করাও জায়েয। এ কারণে বাগিদের বিরুদ্ধে কিতাল ফরয করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
মুমিনদের একদল অন্যদলের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অস্ত্র ধরলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদেশ এসেছে এ আয়াতে।
হাদিসে এসেছে,
অর্থাৎ সে যদি বিরত না হয় তাহলে শেষে হত্যা করে দাও।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
তো এক খলিফা থাকাকালে অন্য কেউ খলিফা দাবি করলে এবং সে তার দাবিতে অনড় থাকলে তাকে হত্যা করে দিতে বলা হয়েছে, যাতে তার কারণে মুসলিমদের মাঝে দলাদলি না হয়, রক্তারক্তি না হয়।
এমনকি পিতা যদি পুত্রের মাথায় তরবারি ধরে আর পিতাকে হত্যা ব্যতীত পুত্রের জান রক্ষার কোনো সূরত না থাকে, তাহলে পিতাকে হত্যা করে দেয়াও জায়েয।
হিদায়াতে বলা হয়েছে,
আমরা দেখতে পাচ্ছি: আগ্রাসী যেই হোক, প্রতিহত করা আবশ্যক। মুমিন হলেও, কাফের হলেও। এমনকি আপন পিতা হলেও।
মুমিন কাফেরে ব্যবধানটা তাহলে কখন হবে? মুমিন কাফেরে ব্যবধান হবে যখন আগ্রাসান হচ্ছে না তখন। মুমিনের বিরুদ্ধে কতল ও কিতাল কেবল তখনই জায়েয, যখন সে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। পক্ষান্তরে কাফেরের বিরুদ্ধে কিতাল উভয় অবস্থায় জায়েয; আগ্রাসী হোক না হোক।
জাওহারা গ্রন্থকার বলেন,
অর্থাৎ তারা আগ্রাসান না চালালেও আগে বেড়ে কিতাল করা ফরয।
সুবহানাল্লাহ! ফুকাহায়ে কেরামকে আল্লাহ তাআলা রহম করুন। দ্বীনকে তারা কতো গভীর থেকে বুঝেছিলেন।
দুই.আচ্ছা আমরা আপাতত মেনে নিলাম যে, সাধারণ কাফেরকে হত্যা করবো না, শুধু সামরিকদের হত্যা করবো। ঠিক আছে। আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করলাম। এলাকা দখল করলাম। কাফেররা এখন আমাদের হাতে বন্দী। তাদের ব্যাপারে ইমামুল মুসলিমীনের কয়েক রকম পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে।
মারগিনানি রহ. (৫৯৩ হি.) বলেন,
দেখতে পাচ্ছি, বন্দীদের হত্যা করার একটা অপশন আছে। যাদের হত্যা জায়েয বলা হচ্ছে তারা কিন্তু সবাই সামরিক বা আগ্রাসী না। সাধারণ কাফেরও আছে। এখন প্রশ্ন: বন্দী করে আনার পর যাকে হত্যা করা যাবে, যুদ্ধের সময় কেন তাকে হত্যা করা যাবে না? বরং তখন তো এর আগেই হত্যা জায়েয হওয়ার কথা। যুদ্ধের সময় এত বাছবিচারের সময় থাকে না, যেটা বন্দী করে আনার পর সম্ভব। তো বন্দী করে এনে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা জায়েয, তখন যুদ্ধের বেলায় হত্যা করা নাজায়েয হওয়ার কি কারণ থাকতে পারে?
তিন. শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যত আলোচনা গেছে সব বাদ দিলাম। আপনি শুধু এদিকটা বিবেচনা করুন যে, প্রত্যেকটা কাফের আল্লাহর দুশমন। এরা আল্লাহর যমিনে আল্লাহদ্রোহী। আল্লাহকে স্বীকার করে না। স্বীকার করলেও শুধু এক আল্লাহর ইবাদাতে বিশ্বাস করে না, শরীক করে। এক আল্লাহয় বিশ্বাস করলেও আল্লাহর দ্বীন-জীবনব্যবস্থা কবুল করে না। আল্লাহর যমিনে আল্লাহর শাসন মানে না। আপনি দুনিয়ার যেকোনো রাষ্ট্রে যাবেন: এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তো দুনিয়ার সাধারণ একটা শাসক, একটা সামান্য ভূমি: একে স্বীকার না করলে, মেনে না নিলে তার শাস্তি যদি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড, তাহলে রাব্বুল আলামীনকে অস্বীকার করলে, তার শাসনকে মেনে না নিলে এই অপরাধের শাস্তি কি মৃত্যুদণ্ড হওয়া আশ্চর্যের কিছু?
এজন্য জিযিয়া ও সাইফের আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কুরআনের সর্বশেষ ফায়সালা: কাফেররা হয় ঈমানদার হবে, নইলে অন্তত আমার যমিনে আমার শাসন মেনে নিবে। তাদের কোনো শাসন থাকবে না, আমার কুরআনের শাসনের অধীনে যিম্মি হয়ে জিযিয়া দিয়ে বসবাস করবে। নইলে এদের জান মাল হালাল। যেখানে পাবে, যখন পাবে হত্যা করে দিবে। ধরে বেঁধে নিয়ে আসবে।
এই হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ ফায়সালা। আল্লাহদ্রোহীদের আল্লাহর যমিনে কোন স্থান নেই। বেঁচে থাকার অধিকার শুধু এ শর্তেই পাবে: হয় মুসলমান হবে, নয় মুসলমানদের অধীনে যিম্মি হয়ে বাস করবে। সামরিক বেসামরিক সবার হুকুম একটাই। যে-ই এর ব্যতিক্রম করবে তার জানমাল মুসলমানদের জন্য হালাল। সামরিক বেসামরিক সবাই এক্ষেত্রে সমান। আশাকরি বিষয়টা বুঝার জন্য এতটুকু যথেষ্ট।
আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। অপব্যাখ্যাকারীদের অপব্যাখ্যা থেকে রক্ষা করুন। পশ্চিমা অপপ্রচারে প্রভাবিত পরাজিত মানসিকতার শিকার দীনদরদিদের ভুল ব্যাখ্যা থেকে মুক্ত রাখেন। আমীন।
এক.যদি বলেন, শুধু আগ্রাসীকে এবং শুধু অস্ত্রধারীকে হত্যা করা যাবে, সাধারণদের না, তাহলে আপনি এক্ষেত্রে মুমিন কাফেরে কোনো ব্যবধান করলেন না। অস্ত্রধারী আগ্রাসী মুমিন হলেও তাকে দমন করা আবশ্যক। হত্যা ছাড়া দমন সম্ভব না হলে হত্যা করাও জায়েয। এ কারণে বাগিদের বিরুদ্ধে কিতাল ফরয করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
{وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ}. -الحجرات: ٩
“মুমিনদের দুটি দল পরস্পর আত্মকলহে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিও। অতঃপর তাদের একটি দল যদি অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দল বাড়াবাড়ি করছে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যাবত না সে আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে।” -হুজুরাত: ৯মুমিনদের একদল অন্যদলের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অস্ত্র ধরলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদেশ এসেছে এ আয়াতে।
হাদিসে এসেছে,
من أتاكم وأمركم جميع على رجل واحد يريد أن يشق عصاكم أو يفرق جماعتكم فاقتلوه. صحيح مسلم: ٤٩٠٤
“তোমরা এক ব্যক্তির (অর্থাৎ এক খলিফার) হাতে ঐক্যবদ্ধ থাকাবস্থায় যদি অন্য কোন ব্যক্তি (খেলাফতের দাবিদার হয়ে) তোমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে আসে বা জামাতে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে আসে, তাহলে তাকে হত্যা করে দাও।” -মুসলিম: ৪৯০৪অর্থাৎ সে যদি বিরত না হয় তাহলে শেষে হত্যা করে দাও।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
ومن لم يندفع فساده فى الأرض الا بالقتل قتل، مثل المفرق لجماعة المسلمين. -مجموع الفتاوى: ٢٨\١٠٨-١٠٩
“হত্যা করা ব্যতীত যার ফিতনা দমন হচ্ছে না তাকে হত্যা করে দেয়া হবে। যেমন, ঐক্যবদ্ধ মুসলিম সমাজে যে (নিজেকে খলিফা দাবি করে) বিভেদ ঘটাতে চায়।” –মাজমুউল ফাতাওয়া:২৮/১০৮-১০৯তো এক খলিফা থাকাকালে অন্য কেউ খলিফা দাবি করলে এবং সে তার দাবিতে অনড় থাকলে তাকে হত্যা করে দিতে বলা হয়েছে, যাতে তার কারণে মুসলিমদের মাঝে দলাদলি না হয়, রক্তারক্তি না হয়।
এমনকি পিতা যদি পুত্রের মাথায় তরবারি ধরে আর পিতাকে হত্যা ব্যতীত পুত্রের জান রক্ষার কোনো সূরত না থাকে, তাহলে পিতাকে হত্যা করে দেয়াও জায়েয।
হিদায়াতে বলা হয়েছে,
لو شهر الأب المسلم سيفه على ابنه ولا يمكنه دفعه إلا بقلته يقتله. -الهداية ٢\٣٨١
“মুসলিম পিতা যদি আপন পুত্রের মাথায় তরবারি কোষমুক্ত করে, আর হত্যা ব্যতীত পিতাকে প্রতিহত করা সম্ভব না হয়, তাহলে পুত্র পিতাকে হত্যা করে দেবে।” -হিদায়া: ২/৩৮১আমরা দেখতে পাচ্ছি: আগ্রাসী যেই হোক, প্রতিহত করা আবশ্যক। মুমিন হলেও, কাফের হলেও। এমনকি আপন পিতা হলেও।
মুমিন কাফেরে ব্যবধানটা তাহলে কখন হবে? মুমিন কাফেরে ব্যবধান হবে যখন আগ্রাসান হচ্ছে না তখন। মুমিনের বিরুদ্ধে কতল ও কিতাল কেবল তখনই জায়েয, যখন সে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। পক্ষান্তরে কাফেরের বিরুদ্ধে কিতাল উভয় অবস্থায় জায়েয; আগ্রাসী হোক না হোক।
জাওহারা গ্রন্থকার বলেন,
قوله (وقتال الكفار واجب علينا وإن لم يبدءونا) لأن قتالهم لو وقف على مبادأتهم لنا لكان على وجه الدفع. وهذا المعنى يوجد في المسلمين إذا حصل من بعضهم لبعض الأذية. وقتال المشركين مخالف لقتال المسلمين. -الجوهرة النيرة على مختصر القدوري (2/ 257)
কুদুরি রহ. বলেছেন: কাফেররা আগ্রাসন না চালালেও আগে বেড়ে কিতাল করা ফরয। কারণ, আগ্রাসন চালানোর উপর যদি কিতাল মাওকুফ থাকে, তাহলে তো তাদের বিরুদ্ধ কিতালটা হয়ে যাবে শুধু প্রতিরোধমূলক কিতাল। এ দৃষ্টিকোণ থেকে কিতাল তো মুসলিমদের বিরুদ্ধেও বিদ্যমান, যদি তাদের কতক কতককে কষ্ট দেয়। মুশরিকদের বিরুদ্ধে কিতাল মুমিনদের বিরুদ্ধে কিতাল থেকে ভিন্ন হবে। -আলজাওহারাতুন নাইয়িরা: ২/২৫৭ অর্থাৎ তারা আগ্রাসান না চালালেও আগে বেড়ে কিতাল করা ফরয।
সুবহানাল্লাহ! ফুকাহায়ে কেরামকে আল্লাহ তাআলা রহম করুন। দ্বীনকে তারা কতো গভীর থেকে বুঝেছিলেন।
×××
দুই.আচ্ছা আমরা আপাতত মেনে নিলাম যে, সাধারণ কাফেরকে হত্যা করবো না, শুধু সামরিকদের হত্যা করবো। ঠিক আছে। আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করলাম। এলাকা দখল করলাম। কাফেররা এখন আমাদের হাতে বন্দী। তাদের ব্যাপারে ইমামুল মুসলিমীনের কয়েক রকম পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে।
মারগিনানি রহ. (৫৯৩ হি.) বলেন,
"وإذا فتح الإمام بلدة عنوة" أي قهرا " فهو بالخيار إن شاء قسمه بين المسلمين " كما فعل رسول الله عليه الصلاة والسلام بخيبر " وإن شاء أقر أهله عليه ووضع عليهم الجزية وعلى أراضيهم الخراج " كذلك فعل عمر رضي الله عنه بسواد العراق بموافقة من الصحابة رضي الله عنهم ... " وهو في الأسارى بالخيار إن شاء قتلهم ... وإن شاء استرقهم … وإن شاء تركهم أحرارا ذمة للمسلمين ... إلا مشركي العرب والمرتدين " على ما نبين إن شاء الله تعالى. " ولا يجوز أن يردهم إلى دار الحرب " لأن فيه تفويتهم على المسلمين. -الهداية في شرح بداية المبتدي (2/ 384)
ইমামুল মুসলিমীন শক্তিবলে কোনো এলাকা জয় করলে উক্ত ভূমির ব্যাপারে তাঁর দু’টি অপশন: ভাল মনে করলে (বিজয়কারী) মুসলিম (মুজাহিদদের) মাঝে তা বণ্টন করে দিতে পারেন, যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওাাসাল্লাম খায়বার বণ্টন করে দিয়েছিলেন। ভাল মনে করলে অধিবাসীদেরকে (যিম্মি হিসেবে) আপন মালিকানায় বহাল রাখতে পারে। তখন মাথাপিছু জিযিয়া লাগবেন, জমিপ্রতি খারাজ লাগাবেন; যেমনটা উমার রাদি. সাহাবিদের সহমতের ভিত্তিতে সাওয়াদে ইরাকে করেছিলেন। … বন্দীদের ব্যাপারে কয়েক অপশন: হত্যা করতে পারেন, আরবের মুশরিক বা মুরতাদ না হলে গোলাম বানাতে পারেন বা যিম্মি হিসাবে বহাল রাখতে পারেন। তবে দারুল হারবে ফিরিয়ে দেয়া জায়েয হবে না। কারণ, এটি হারবিদেরকে মুসলিমদের বিরদ্ধে শক্তিশালী করার নামান্তর। -হিদায়া: ২/৩৮৪দেখতে পাচ্ছি, বন্দীদের হত্যা করার একটা অপশন আছে। যাদের হত্যা জায়েয বলা হচ্ছে তারা কিন্তু সবাই সামরিক বা আগ্রাসী না। সাধারণ কাফেরও আছে। এখন প্রশ্ন: বন্দী করে আনার পর যাকে হত্যা করা যাবে, যুদ্ধের সময় কেন তাকে হত্যা করা যাবে না? বরং তখন তো এর আগেই হত্যা জায়েয হওয়ার কথা। যুদ্ধের সময় এত বাছবিচারের সময় থাকে না, যেটা বন্দী করে আনার পর সম্ভব। তো বন্দী করে এনে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা জায়েয, তখন যুদ্ধের বেলায় হত্যা করা নাজায়েয হওয়ার কি কারণ থাকতে পারে?
×××
তিন. শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যত আলোচনা গেছে সব বাদ দিলাম। আপনি শুধু এদিকটা বিবেচনা করুন যে, প্রত্যেকটা কাফের আল্লাহর দুশমন। এরা আল্লাহর যমিনে আল্লাহদ্রোহী। আল্লাহকে স্বীকার করে না। স্বীকার করলেও শুধু এক আল্লাহর ইবাদাতে বিশ্বাস করে না, শরীক করে। এক আল্লাহয় বিশ্বাস করলেও আল্লাহর দ্বীন-জীবনব্যবস্থা কবুল করে না। আল্লাহর যমিনে আল্লাহর শাসন মানে না। আপনি দুনিয়ার যেকোনো রাষ্ট্রে যাবেন: এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তো দুনিয়ার সাধারণ একটা শাসক, একটা সামান্য ভূমি: একে স্বীকার না করলে, মেনে না নিলে তার শাস্তি যদি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড, তাহলে রাব্বুল আলামীনকে অস্বীকার করলে, তার শাসনকে মেনে না নিলে এই অপরাধের শাস্তি কি মৃত্যুদণ্ড হওয়া আশ্চর্যের কিছু?
এজন্য জিযিয়া ও সাইফের আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কুরআনের সর্বশেষ ফায়সালা: কাফেররা হয় ঈমানদার হবে, নইলে অন্তত আমার যমিনে আমার শাসন মেনে নিবে। তাদের কোনো শাসন থাকবে না, আমার কুরআনের শাসনের অধীনে যিম্মি হয়ে জিযিয়া দিয়ে বসবাস করবে। নইলে এদের জান মাল হালাল। যেখানে পাবে, যখন পাবে হত্যা করে দিবে। ধরে বেঁধে নিয়ে আসবে।
فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ. -التوبة: ٥
মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর, বন্দী কর, অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে ওৎপেতে বসে থাক। তবে তারা যদি তাওবা করে – মুসলমান হয়ে যায় – এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -তাওবা: ৫قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ. -التوبة: ٢٩
কিতাল কর আহলে কিতাবের সেসব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম করে না এবং সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিযিয়া প্রদান করে। -তাওবা: ২৯ এই হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ ফায়সালা। আল্লাহদ্রোহীদের আল্লাহর যমিনে কোন স্থান নেই। বেঁচে থাকার অধিকার শুধু এ শর্তেই পাবে: হয় মুসলমান হবে, নয় মুসলমানদের অধীনে যিম্মি হয়ে বাস করবে। সামরিক বেসামরিক সবার হুকুম একটাই। যে-ই এর ব্যতিক্রম করবে তার জানমাল মুসলমানদের জন্য হালাল। সামরিক বেসামরিক সবাই এক্ষেত্রে সমান। আশাকরি বিষয়টা বুঝার জন্য এতটুকু যথেষ্ট।
আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। অপব্যাখ্যাকারীদের অপব্যাখ্যা থেকে রক্ষা করুন। পশ্চিমা অপপ্রচারে প্রভাবিত পরাজিত মানসিকতার শিকার দীনদরদিদের ভুল ব্যাখ্যা থেকে মুক্ত রাখেন। আমীন।
والحمد لله رب العلمين. وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه أجمعين
Comment