প্রথম অধ্যয়
مسئلة الحاكمية
মানব রচিত আইন দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনাকারী শাসকের বিধান
ফতোয়া
যেসব শাসক আল্লাহ তায়ালার শরিয়ত দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনার পরিবর্তে মানবরচিত মতবাদ বা আইন-কানুন দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে কিংবা আল্লাহ তায়ালার শরিয়তে সাব্যস্ত কোন হালালকে রাষ্ট্রীয় আইনে অবৈধ বা কোন হারামকে রাষ্ট্রীয় আইনে বৈধ সাব্যস্ত করে কিংবা কোন বিষয়ে শরিয়তের অকাট্য ও সর্বসম্মত আইনের স্থলে ভিন্ন আইন প্রবর্তন করে- তারা ইসলাম থেকে খারিজ;কাফের ও মুরতাদ । উক্ত মতবাদ বা আইন তারা নিজেরা রচনা করুক কিংবা অন্য কারো রচিত মতবাদ বা আইন গ্রহণ করে তা চালু করুক; পূর্বে জারি থাকা শরয়ী শাসন বা শরয়ী আইন অপসারণ করে কুফরি শাসন বা কুফরি আইন জারি করুক কিংবা পূর্ব থেকে চলে আসা কুফরি আইন বা বা কুফরি শাসনকেই জারি রাখুক- সকল ক্ষেত্রেই তারা কাফের ও মুরতাদ বলে গণ্য হবে।
উল্লেখিত ফতোয়ার সমর্থনে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, ক্বিয়াস ও ইতিহাস থেকে দলিল:
কুরআন থেকে দলিল:
﴿ وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ الله عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ﴾
যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না। এ ভক্ষণ গোনাহ। নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদের নিকট ওহী প্রেরণ করে,যাতে তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো নিশ্চিত তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে|
যে সব জন্তু দেবতার নামে যবেহ করা হয় কিংবা যবেহ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে মারা যায়, সেগুলো খাওয়া হারাম করে আল্লাহ তায়ালা নাজিল করেন-
﴿ وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ الله عَلَيْهِ ﴾
যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না।
তখন মক্কার কাফেররা মুসলমানদের সাথে বিতর্কে জড়ায়।তারা বলে-তোমরা কিভাবে আল্লাহ তায়ালার পছন্দনীয় পথে চলার দাবী কর,অথচ তোমরা নিজ হাতে যা যবাই কর তা খাও, আর আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে যা যবাই করে দেন- অর্থাৎ মৃত জন্তু - তা খাও না?!তাহলে কি তোমরা আল্লাহর চেয়ে উত্তম?!
তখন আল্লাহ তায়ালা নাজিল করেন-
﴿ وَإِنّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ﴾
নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদের নিকট ওহী প্রেরণ করে,যাতে তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো নিশ্চিত তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে|
আল্লামা শাওকানী রহ: (মৃত্যু:১২৫০ হিজরী) বলেন-
وإن أطعتموهم فيما يأمرونكم به وينهونكم عنه إنكم لمشركون مثلهم. اهـ
তারা তোমাদেরকে যা করার আদেশ দেয় এবং যা থেকে বারণ করে,যদি তোমরা সেগুলোতে তাদের আনুগত্য করো, তাহলে তোমরাও তাদের মতো মুশরিক হয়ে যাবে ।
ইবনে কাসীর রহঃ (মৃত্যু:৭৭৪ হিজরী) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:
وقال السدي في تفسير هذه الآية: إن المشركين قالوا للمؤمنين: كيف تزعمون أنكم تتبعون مرضاة الله، وما ذبح الله فلا تأكلونه، وما ذبحتم أنتم أكلتموه؟ فقال الله: {وإن أطعتموهم} فأكلتم الميتة {إنكم لمشركون} وهكذا قاله مجاهد، والضحاك، وغير واحد من علماء السلف، رحمهم الله.
وقوله تعالى: {وإن أطعتموهم إنكم لمشركون} أي: حيث عدلتم عن أمر الله لكم وشرعه إلى قول غيره، فقدمتم عليه غيره فهذا هو الشرك، كما قال تعالى: {اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابا من دون الله [والمسيح ابن مريم وما أمروا إلا ليعبدوا إلها واحدا لا إله إلا هو سبحانه عما يشركون] } [التوبة: 31] . وقد روى الترمذي في تفسيرها، عن عدي بن حاتم أنه قال: يا رسول الله، ما عبدوهم، فقال: "بل إنهم أحلوا لهم الحرام وحرموا عليهم الحلال، فاتبعوهم، فذلك عبادتهم إياهم".اهـ
সুদ্দি রহ: উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন- মুশরিকরা মুমিনদেরকে বলল, তোমরা কিভাবে দাবি করো যে, তোমরা আল্লাহর পছন্দের অনুসরণ করো; অথচ আল্লাহ তায়ালা যা যবাই করেন তা খাও না, আর তোমরা নিজেরা যা যবাই করো তা খাও?! এ প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তায়ালা বলেন: যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর-অর্থাৎ তাদের কথা মতো মৃত প্রাণী খাও- “তাহলে তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে”। মুজাহিদ রহঃ এবং জাহহাক রহঃ-সহ উলামায়ে সালাফের অনেকে- রহিমাহুমুল্লাহ- এমন বলেছেন।
আল্লাহ তায়ালার বাণী- “ যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে”। অর্থাৎ তোমরা যদি আল্লাহর আদেশ ও শরিয়ত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কারো কথার দিকে দৃষ্টি দাও এবং এর উপর অন্য কিছুকে প্রাধান্য দাও তাহলে সেটি হবে শিরক, যেমনটা আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারিয়ামের পুত্র মাসীহকেও, অথচ তাদের প্রতি এই আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা শুধু এক ইলাহের ইবাদাত করবে, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তারা যে শরিক স্থীর করে, তিনি তা থেকে পবিত্র।
ইমাম তিরমিযি রহঃ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আদী ইবনে হাতিম রাদি: থেকে বর্ণনা করেন- তিনি আরজ করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ, তারা (ইহুদি ও খৃস্টানরা) তো তাদের ইবাদাত করত না। তিনি জওয়াব দিলেন: তা ঠিক। কিন্তু তারা (পাদ্রী ও ধর্মগুরুরা) তাদের জন্য হারামকে হালাল করতো; হালালকে হারাম করতো, আর তারা তাদের অনুসরণ করত এটাই তাদের ইবাদাত।
মূল্যায়ন :
এ আয়াতে শরিয়তের একটিমাত্র বিধান- মৃত প্রাণী ভক্ষণ না করার বিপরীতে কাফেরদের বিধান গ্রহণ করাকে শিরক আখ্যায়িত করা হয়েছে; তাহলে আজ যারা গোটা শরিয়ত প্রত্যাখ্যান করে কাফেরদের আনুগত্যে জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাদের বিধান গ্রহণ করেছে এবং অনুরুপ কুফরি বিধান নিজেরাও প্রবর্তন করছে, তাদের বিধান কী হবে???!!!
উল্লেখিত ফতোয়ার সমর্থনে
সুন্নাহ থেকে দলিল:
হযরত আদী ইবনে হাতেম রাদি: এর হাদিস। ইমাম বুখারী রহ: (মৃত্যু:২৫৬ হিজরী) আত- “তারিখুল কাবিরে” বর্ণনা করেন-
عن عدي بن حاتم قال: أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم وفي عنقي صليب، فقال: يا عدي اطرح هذا الوثن من عنقك فطرحته فانتهيت إليه وهو يقرأ في سورة براءة اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابا من دون الله فقلت إنا لسنا نعبدهم قال النبي صلى الله عليه وسلم يحرمون ما أحل الله فتحرمون ويحلون ما حرم الله فتستحلون قلت بلى قال فتلك عبادتهم.اهـ
আদী ইবনে হাতিম রাদি: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসলাম , তখন আমার গলায় একটা ক্রুশ ঝুলছিলো। আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন হে আদী মূর্তিটি তোমার গলা থেকে ছুঁড়ে ফেলো। মূর্তিটি ফেলে দিয়ে আমি আল্লাহর রাসুলের নিকট আসলাম। তখন তিনি সুরা তাওবার এ আয়াতাংশ পড়ছিলেন "তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পাদ্রী ও সংসারবিরাগীদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। আমি আরজ করলাম: আমরা তো তাদের ইবাদাত করিনা । উত্তরে আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বললেন : তারা আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত হালালকে হারাম সাব্যস্ত করে অত:পর তোমরা তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করতে; এবং আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত হারামকে হালাল সাব্যস্ত করে তোমরাও তাকে হালাল হিসেবে মেনে নাও এমনটি কি নয়? আমি বললাম-হ্যাঁ। আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- এটিই তাদের ইবাদাত।
মূল্যায়ন :
উপরোক্ত হাদিসে আমাদের আলোচ্য ফতোয়ার সুস্পষ্ট সমর্থণ পাওয়া যায়। পাদ্রী ও সংসার বিরাগীরা আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত হালালকে হারাম , আর হারামকে হালাল করতো। ফলশ্রুতিতে তারা মিথ্যা রবের স্থানে সমাসীন হয়েছে। আর যারা এ ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করেছে, তারা বাস্তবে তাদেরকেই রব হিসাবে মেনে নিয়েছে। তারা যদিও আল্লাহ্ তায়ালারই ইবাদাত করত, কিন্তু জীবনে নানা ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানকে বাদ দিয়ে পাদ্রী-সংসারবিরাগীদের বিধান গ্রহণ করেছিলো। তাই আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষণা করেছেন: তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করেছে।
আমাদের ব্যাখ্যার সমর্থনে নিম্নে বিশিষ্ট দু জন সাহাবি রা: এর বাণী তুলে ধরলাম:
হুযায়ফা রাদি: এর ব্যাখ্যা-
عن أبي البختري قال: قيل لحذيفة أرأيت قول الله اتخذوا أحبارهم؟ قال: أما إنهم لم يكونوا يصومون لهم ولا يصلون لهم، ولكنهم كانوا إذا أحلوا لهم شيئاً استحلوه، وإذا حرموا عليهم شيئاً أحله الله لهم حرموه، فتلك كانت ربوبيتهم.اهـ
আবুল বুখতারি রহঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- হুজাইফা রাদি: কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর বাণী-তারা তাদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে - সম্পর্কে আপনার মতামত কী? তিনি উত্তর দিলেন- তারা তো পাদ্রী ও ধর্ম যাজকদের উদ্দেশ্যে নামাজ-রোজা করত না, কিন্তু পাদ্রীরা যখন তাদের জন্য কোন কিছু হালাল করতো তারা তাকে হালাল হিসেবে মেনে নিত। আল্লাহ্* কর্তৃক কোন হালালকে যদি হারাম করত ,তারাও তা হারাম হিসেবে মেনে নিত। এটাই ছিল তাদের রব হিসাবে মেনে নেয়া ।
ইবনে আব্বাস রাদি : এর ব্যাখ্যা:
﴿اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ﴾
قال عبد الله بن عباس: لم يأمروهم أن يسجدوا لهم، ولكن أمروهم بمعصية الله فأطاعوهم، فسماهم الله بذلك أرباباً.اهـ
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদি: বলেন- পাদ্রীরা তাদেরকে নিজেদের সিজদা করতে আদেশ করতো না; বরং তাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ দিত, আর তারা তাদের আনুগত্য করত। এ কারণেই আল্লাহ্ তাদেরকে রব হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইজমা থেকে দলিল:
এ বিষয়ে সকল মাজহাব-মাসলাকের আয়িম্মায়ে কেরামের ইজমা আছে আমরা সংক্ষিপ্ততার দিকে তাকিয়ে এখানে শুধু চার মাজহাবের আয়িম্মায়ে কেরামের ফতোয়া উল্লেখ করবো ইনশা আল্লাহ্* । বিস্তারিত জানার জন্য মূল শীটটি পড়া যেতে পারে ।
ফিকহে হানাফি:
আল্লামা জাসসাস রহঃ এর ফতোয়া:
আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বলেন:
فلا وربك لأ يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم حرجا مما فضيت و يسلموا تسليما
না , তোমার রবের শপথ তারা মুমিন হতে পারবে না যে যাবত না তারা তোমাকে তাদের মধ্যকার উদ্ভূত বিষয়ে বিচারক নির্ধারণ করে । অতঃপর তুমি যে ফয়সালা দিবে সে বিষয়ে নিজেদের অন্তরে কোন দ্বিধা- সংকোচ অনুভব না করে এবং পূর্ণরুপে আত্মসমর্পণ করে । (সুরা নিসাঃ৬৫)
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা জাসসাস (রহঃ) বলেন:
وفي هذه الأية دلالة على أن من رد شيئا من أوامر الله تعالى أو أوامر الرسول صلى الله عليه و سلم فهو خارج من الإسلام سواء رده من جهة الشك فيه أو من جهة ترك القبول و الامتناع عن التسليم و ذلك يوجب صحة ما ذهب إليه الصحابة في حكمهم بارتداد من امتنع من أداء الزكاة و قتلهم و سبي ذراريهم لأن الله تعالى حكم بأن من لم يسلم للنبي صلى الله عليه و سلم قضاءه و حكمه فليس من أهل الإيمان أحكام القرآن للجصاص
19
এই আয়াত প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তায়ালা অথবা তাঁর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ-নিষেধসমূহ থেকে কোন একটি বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। চাই সে সন্দেহ বশত প্রত্যাখ্যান করুক; বা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাক ও মেনে নেয়া থেকে বিরত থাকুক। আয়াতটি সাহাবায়ে কেরামগণের মতামতকে সঠিক বলে সাব্যস্ত কর। তারা সে সকল ব্যক্তিকে মুরতাদ আখ্যায়িত করেছেন যারা যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেছিল। তাদের হত্যা ও তাদের পরিবার পরিজনকে বন্দীর বিধান দিয়েছিলেন। কেননা যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধান ও ফয়সালাকে মেনে নিবে না তারা ঈমানদারদের দলভুক্ত নয়।
(আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস: ৩/১৮১)
ফিকহে মালেকি:
আল্লামা শানক্বিতী রহ: (মৃত্যু:১৩৯৩ হিঃ)
তাফসিরুল কুরআন বিল কুরআনের অন্যতম গ্রন্থ আদওয়াউল বয়ান প্রণেতা প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা শানক্বিতী রহ: স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সম্পূর্ণ স্পষ্টরুপে এ সমস্ত শাসকদের হুকুম বর্ণনা করেছেন।
তিনি আল্লাহ্ তায়ালার বাণী-
﴿إِنَّ هذا القرآن يِهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ﴾
নিশ্চয়ই এই কুরআন হিদায়াত করে সেই আদর্শের দিকে যা সুদৃঢ় ।
এর ব্যাখ্যায় বলেন-
ومن هدي القرآن للتي هي أقْوَم: بيانه أنه كل من اتبع تشريعاً غير التشريع الذي جاء به سيد ولد آدم محمد بن عبد الله صلوات الله وسلامه عليه. فاتباعه لذلك التشريع المخالف كفر بواح، مخرج عن الملة الإسلامية. اهـ
কুরআনের নির্দেশিত সুদৃঢ় আদর্শ সমূহের একটি হল- কুরআন বর্ণনা করে দিয়েছে, যে ব্যক্তি আদম সন্তানদের সর্দার মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত বিধান ব্যতিরেকে অন্য কোন বিধান অনুসরণ করে তার এই বিপরীত বিধানের অনুসরণ কুফরে বাওয়াহ- সুস্পষ্ট কুফর, যা মিল্লাতে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় ।
ফিকহে শাফেয়ি:
ইবনে কাসীর রহঃ (মৃত্যু:৭৭৪)
তিনি আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়াতে চেঙ্গিস খানের জীবনী আলোচনায় নমুনাস্বরুপ ইয়াসিকের কতগুলো শরিয়ত বিরোধী আইন উল্লেখ করার পর বলেন-
وفي كله مخالفة لشرائع الله المنزلة على عباده الأنبياء عليهم الصلاة والسلام، فمن ترك الشرع المحكم المنزل على محمد بن عبد الله خاتم الأنبياء وتحاكم إلى غيره من الشرائع المنسوخة كفر، فكيف بمن تحاكم إلى الياسق وقدمها عليه؟ من فعل ذلك كفر بإجماع المسلمين. اهـ
এ সবগুলোর মধ্যেই রয়েছে আল্লাহ্ তায়ালার বান্দা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালামের উপর আল্লাহ্ তায়ালার অবতীর্ণ শরিয়তের বিরোধিতা।যে ব্যক্তি সর্বশেষ নবি মুহাম্মাদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অবতীর্ণ সুদৃঢ় শরিয়ত ছেড়ে অন্য কোন রহিত শরিয়তের নিকট বিচার প্রার্থী হবে, সে কাফের হয়ে যাবে; তাহলে ওই ব্যক্তির বিধান কী হতে পারে,যে ইয়াসিকের নিকট বিচারপ্রার্থী হয়। তাকে শরিয়তের উপর প্রাধান্য দেয়??!!
যে ব্যক্তি এমনটি করবে সে মুসলমানদের ইজমা-ঐক্যমতে কাফের হয়ে যাবে।
(আল-বেদায়া ওয়ান- নেহায়া)
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, তাতারদের ইয়াসিক নামক সংবিধানের চেয়ে বর্তমান সংবিধানগুলো আরো নিকৃষ্ট ও জঘন্য। কারণ ইয়াসিকে অপরাধকে অপরাধ বলে স্বীকার করা হয়েছে এবং তার জন্য শাস্তি বিধান করা হয়েছে; যদিও তা ছিলো কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী। কিন্তু বর্তমান গণতান্ত্রিক সংবিধানগুলো তো অপরাধকে অপরাধ বলেই স্বীকার করেনি। বরং অপরাধকে ভাল ও উত্তম কাজ এবং অনেক ফরজ ,ওয়াজিব ও ভাল কাজকে অপরাধ ও অন্যায় সাব্যস্ত করেছে ।
দ্বিতীয়ত তাতাররা ইয়াসিক দ্বারা নিজেদের মাঝে বিচারাচার করত। নিজেরা ইয়াসিক অনুযায়ী চলত, কিন্তু মুসলমানদের উপর ইয়াসিকের বিধান চাপিয়ে দিত না। মুসলমানদের আলাদা আদালত ছিলো। মুসলমানরা সেগুলোতে নিজেদের বিচারাচার করত। আজ যারা নব্য ইয়াসিক প্রবর্তন করেছে, তারা তা যে শুধু নিজেদেরই জীবন বিধান বানিয়ে নিয়েছে তা নয় বরং সকল মুসলমানকে তা মানতে বাধ্য করছে। শুধু তাই নয়, ইসলামি শরিয়তকে একেবারেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সুতরাং তারা শুধু তাতারদের মতোই কাফের নয় বরং তাদের চেয়েও জঘন্য কাফের ।
ফিকহে হাম্বলিঃ
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহি: (মৃত্যু: ৭৫১) এর ফতোয়া:
وقد جاء القرآن، وصحّ الإجماع بأن دين الإسلام نسخ كل دين كان قبله، وأن من التزم ما جاءت به التوراة والإنجيل، ولم يتبع القرآن، فإنه كافر، وقد أبطل الله كل شريعة كانت في التوراة والإنجيل وسائر الملل، وافترض على الجن والإنس شرائع الإسلام، فلا حرام إلا ما حرمه الإسلام، ولا فرض إلا ما أوجبه الإسلام. اهـ
কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, এবং উম্মাহর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দ্বীনে ইসলাম পূর্ববর্তী সকল দ্বীনকে রহিত করে দিয়েছে এবং যে ব্যক্তি তাওরাত, ইঞ্জিলের বিধি-বিধানকে জীবনবিধান বানিয়ে নিবে আর কুরআনের অনুসরণ ছেড়ে দিবে, সে কাফের। তাওরাত, ইঞ্জিল ও অন্যান্য সকল ধর্মের প্রতিটি বিধান আল্লাহ্ তায়ালা বাতিল করে দিয়েছেন এবং মানুষ ও জ্বীন জাতির উপর ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধানকে ফরজ করেছেন। সুতরাং হারাম শুধু তা-ই যা ইসলাম হারাম করেছে। ফরজ শুধু তা-ই যা ইসলাম করেছে।(আহকামু আহলিয যিম্মাহ: খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৫৩৩)
কিয়াস থেকে দলিল:
সাহাবায়ে কেরামের ইজমার উপর কিয়াস:
সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমতে জাকাত প্রদানে যারা আস্বীকৃতি জানিয়েছিল তাদেরকে মুরতাদ গণ্য করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছিল , তাদের সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজনকে দাস-দাসি বানানো হয়েছিলো অথচ তারা নামাজ পড়ত , রোজা রাখত , তাহাজ্জুদ আদায়সহ ইসলামের অন্যান্য সকল বিধি-বিধান পালন করত ।
তাহলে যারা এক দুইটি নয় পুরা শরিয়তে ইসলামকেই অকার্যকর করেছে রাষ্টীয়ভাবে ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করছে তাদের বিধান কী হতে পারে!?
ফুকাহায়ে কেরামের ইজমার উপর কিয়াস:
আমাদের শরিয়ত নাজিল হওয়ার পর পূর্ববর্তী সকল শরিয়ত রহিত হয়ে গেছে। তবে পূর্ববর্তী শরিয়তের কোন বিধান যদি আমাদের শরিয়তে বহাল রাখা হয়,তার উপরে আমাদের শরিয়তের বিধান হিসাবে আমল করতে হবে। পূর্ববর্তী শরিয়তের বিধান হিসেবে না।
আমাদের শরিয়ত নাজিল হওয়ার পর কেউ যদি আমাদের শরিয়ত ছেড়ে অন্য কোন শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিচারাচার করে, তাহলে আইয়িম্মায়ে কেরাম সকলে একমত, সেই ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।
ক্বিয়াস:
পূর্ববর্তী আসমানি কিতাব দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করলে যদি কাফের হয়ে যায় তাহলে মানব রচিত আইন দ্বরা রাষ্ট্র পরিচালনা করলে কি কাফের হবে না??!!
ইতিহাসে কুফরি শাসন
এক:
ইয়াহুদ-নাসারা কর্তৃক কুফরি শাসন
ইয়াহুদ নাসারার আলেমরা শরিয়তের হালালকে হারাম আর হারামকে হালাল করতো এবং শরিয়তের বিধি-বিধানে রদ-বদল করত। সাধারণ জনগণ আল্লাহর আইন ছেড়ে তাদের বানানো আইন কানুন গ্রহণ করে নিত। আল্লাহ্ তায়ালা এদেরকে কাফের ঘোষণা করেছেন। ইতিপূর্বে বিষয়টি গত হয়েছে।
দুই:
আরবের মুশরিক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক কুফরি শাসন
আরবীয় মুশরিক নেতারা হারাম মাসকে হালাল আর হালাল মাসকে হারাম করত। আল্লাহ্ তায়ালা তাদের এ কাজকে কুফরের উপর কুফর আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-" إنما النسيئ زيادة في الكفر "
আর কুফরের উপর কুফর তখনই হতে পারে যখন উভয় কাজই কুফর হয় ।
তিন:
তাতারদের কুফরি শাসন:
৬০০ হিজরির পরে তাতাররা অনেক মুসলিম ভূ-খন্ড দখল করে নেয়। অতঃপর তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পূর্ণরুপে ইসলামি শরিয়ার অনুসরণ করে না । তাদের প্রণীত ইয়াসিক দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে থাকে।ফলশ্রুতিতে তৎকালীন বিশিষ্ট আলেম দ্বীন আল্লামা ইবনে কাসীর রা: তাদের রিদ্দার ব্যাপারে ফতোয়া জারি করেন।
★সংগৃহীত
مسئلة الحاكمية
মানব রচিত আইন দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনাকারী শাসকের বিধান
ফতোয়া
যেসব শাসক আল্লাহ তায়ালার শরিয়ত দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনার পরিবর্তে মানবরচিত মতবাদ বা আইন-কানুন দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে কিংবা আল্লাহ তায়ালার শরিয়তে সাব্যস্ত কোন হালালকে রাষ্ট্রীয় আইনে অবৈধ বা কোন হারামকে রাষ্ট্রীয় আইনে বৈধ সাব্যস্ত করে কিংবা কোন বিষয়ে শরিয়তের অকাট্য ও সর্বসম্মত আইনের স্থলে ভিন্ন আইন প্রবর্তন করে- তারা ইসলাম থেকে খারিজ;কাফের ও মুরতাদ । উক্ত মতবাদ বা আইন তারা নিজেরা রচনা করুক কিংবা অন্য কারো রচিত মতবাদ বা আইন গ্রহণ করে তা চালু করুক; পূর্বে জারি থাকা শরয়ী শাসন বা শরয়ী আইন অপসারণ করে কুফরি শাসন বা কুফরি আইন জারি করুক কিংবা পূর্ব থেকে চলে আসা কুফরি আইন বা বা কুফরি শাসনকেই জারি রাখুক- সকল ক্ষেত্রেই তারা কাফের ও মুরতাদ বলে গণ্য হবে।
উল্লেখিত ফতোয়ার সমর্থনে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, ক্বিয়াস ও ইতিহাস থেকে দলিল:
কুরআন থেকে দলিল:
﴿ وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ الله عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ﴾
যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না। এ ভক্ষণ গোনাহ। নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদের নিকট ওহী প্রেরণ করে,যাতে তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো নিশ্চিত তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে|
যে সব জন্তু দেবতার নামে যবেহ করা হয় কিংবা যবেহ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে মারা যায়, সেগুলো খাওয়া হারাম করে আল্লাহ তায়ালা নাজিল করেন-
﴿ وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ الله عَلَيْهِ ﴾
যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না।
তখন মক্কার কাফেররা মুসলমানদের সাথে বিতর্কে জড়ায়।তারা বলে-তোমরা কিভাবে আল্লাহ তায়ালার পছন্দনীয় পথে চলার দাবী কর,অথচ তোমরা নিজ হাতে যা যবাই কর তা খাও, আর আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে যা যবাই করে দেন- অর্থাৎ মৃত জন্তু - তা খাও না?!তাহলে কি তোমরা আল্লাহর চেয়ে উত্তম?!
তখন আল্লাহ তায়ালা নাজিল করেন-
﴿ وَإِنّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ﴾
নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদের নিকট ওহী প্রেরণ করে,যাতে তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো নিশ্চিত তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে|
আল্লামা শাওকানী রহ: (মৃত্যু:১২৫০ হিজরী) বলেন-
وإن أطعتموهم فيما يأمرونكم به وينهونكم عنه إنكم لمشركون مثلهم. اهـ
তারা তোমাদেরকে যা করার আদেশ দেয় এবং যা থেকে বারণ করে,যদি তোমরা সেগুলোতে তাদের আনুগত্য করো, তাহলে তোমরাও তাদের মতো মুশরিক হয়ে যাবে ।
ইবনে কাসীর রহঃ (মৃত্যু:৭৭৪ হিজরী) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:
وقال السدي في تفسير هذه الآية: إن المشركين قالوا للمؤمنين: كيف تزعمون أنكم تتبعون مرضاة الله، وما ذبح الله فلا تأكلونه، وما ذبحتم أنتم أكلتموه؟ فقال الله: {وإن أطعتموهم} فأكلتم الميتة {إنكم لمشركون} وهكذا قاله مجاهد، والضحاك، وغير واحد من علماء السلف، رحمهم الله.
وقوله تعالى: {وإن أطعتموهم إنكم لمشركون} أي: حيث عدلتم عن أمر الله لكم وشرعه إلى قول غيره، فقدمتم عليه غيره فهذا هو الشرك، كما قال تعالى: {اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابا من دون الله [والمسيح ابن مريم وما أمروا إلا ليعبدوا إلها واحدا لا إله إلا هو سبحانه عما يشركون] } [التوبة: 31] . وقد روى الترمذي في تفسيرها، عن عدي بن حاتم أنه قال: يا رسول الله، ما عبدوهم، فقال: "بل إنهم أحلوا لهم الحرام وحرموا عليهم الحلال، فاتبعوهم، فذلك عبادتهم إياهم".اهـ
সুদ্দি রহ: উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন- মুশরিকরা মুমিনদেরকে বলল, তোমরা কিভাবে দাবি করো যে, তোমরা আল্লাহর পছন্দের অনুসরণ করো; অথচ আল্লাহ তায়ালা যা যবাই করেন তা খাও না, আর তোমরা নিজেরা যা যবাই করো তা খাও?! এ প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তায়ালা বলেন: যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর-অর্থাৎ তাদের কথা মতো মৃত প্রাণী খাও- “তাহলে তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে”। মুজাহিদ রহঃ এবং জাহহাক রহঃ-সহ উলামায়ে সালাফের অনেকে- রহিমাহুমুল্লাহ- এমন বলেছেন।
আল্লাহ তায়ালার বাণী- “ যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে”। অর্থাৎ তোমরা যদি আল্লাহর আদেশ ও শরিয়ত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কারো কথার দিকে দৃষ্টি দাও এবং এর উপর অন্য কিছুকে প্রাধান্য দাও তাহলে সেটি হবে শিরক, যেমনটা আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারিয়ামের পুত্র মাসীহকেও, অথচ তাদের প্রতি এই আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা শুধু এক ইলাহের ইবাদাত করবে, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তারা যে শরিক স্থীর করে, তিনি তা থেকে পবিত্র।
ইমাম তিরমিযি রহঃ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আদী ইবনে হাতিম রাদি: থেকে বর্ণনা করেন- তিনি আরজ করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ, তারা (ইহুদি ও খৃস্টানরা) তো তাদের ইবাদাত করত না। তিনি জওয়াব দিলেন: তা ঠিক। কিন্তু তারা (পাদ্রী ও ধর্মগুরুরা) তাদের জন্য হারামকে হালাল করতো; হালালকে হারাম করতো, আর তারা তাদের অনুসরণ করত এটাই তাদের ইবাদাত।
মূল্যায়ন :
এ আয়াতে শরিয়তের একটিমাত্র বিধান- মৃত প্রাণী ভক্ষণ না করার বিপরীতে কাফেরদের বিধান গ্রহণ করাকে শিরক আখ্যায়িত করা হয়েছে; তাহলে আজ যারা গোটা শরিয়ত প্রত্যাখ্যান করে কাফেরদের আনুগত্যে জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাদের বিধান গ্রহণ করেছে এবং অনুরুপ কুফরি বিধান নিজেরাও প্রবর্তন করছে, তাদের বিধান কী হবে???!!!
উল্লেখিত ফতোয়ার সমর্থনে
সুন্নাহ থেকে দলিল:
হযরত আদী ইবনে হাতেম রাদি: এর হাদিস। ইমাম বুখারী রহ: (মৃত্যু:২৫৬ হিজরী) আত- “তারিখুল কাবিরে” বর্ণনা করেন-
عن عدي بن حاتم قال: أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم وفي عنقي صليب، فقال: يا عدي اطرح هذا الوثن من عنقك فطرحته فانتهيت إليه وهو يقرأ في سورة براءة اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابا من دون الله فقلت إنا لسنا نعبدهم قال النبي صلى الله عليه وسلم يحرمون ما أحل الله فتحرمون ويحلون ما حرم الله فتستحلون قلت بلى قال فتلك عبادتهم.اهـ
আদী ইবনে হাতিম রাদি: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসলাম , তখন আমার গলায় একটা ক্রুশ ঝুলছিলো। আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন হে আদী মূর্তিটি তোমার গলা থেকে ছুঁড়ে ফেলো। মূর্তিটি ফেলে দিয়ে আমি আল্লাহর রাসুলের নিকট আসলাম। তখন তিনি সুরা তাওবার এ আয়াতাংশ পড়ছিলেন "তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পাদ্রী ও সংসারবিরাগীদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। আমি আরজ করলাম: আমরা তো তাদের ইবাদাত করিনা । উত্তরে আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বললেন : তারা আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত হালালকে হারাম সাব্যস্ত করে অত:পর তোমরা তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করতে; এবং আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত হারামকে হালাল সাব্যস্ত করে তোমরাও তাকে হালাল হিসেবে মেনে নাও এমনটি কি নয়? আমি বললাম-হ্যাঁ। আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- এটিই তাদের ইবাদাত।
মূল্যায়ন :
উপরোক্ত হাদিসে আমাদের আলোচ্য ফতোয়ার সুস্পষ্ট সমর্থণ পাওয়া যায়। পাদ্রী ও সংসার বিরাগীরা আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত হালালকে হারাম , আর হারামকে হালাল করতো। ফলশ্রুতিতে তারা মিথ্যা রবের স্থানে সমাসীন হয়েছে। আর যারা এ ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করেছে, তারা বাস্তবে তাদেরকেই রব হিসাবে মেনে নিয়েছে। তারা যদিও আল্লাহ্ তায়ালারই ইবাদাত করত, কিন্তু জীবনে নানা ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানকে বাদ দিয়ে পাদ্রী-সংসারবিরাগীদের বিধান গ্রহণ করেছিলো। তাই আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষণা করেছেন: তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করেছে।
আমাদের ব্যাখ্যার সমর্থনে নিম্নে বিশিষ্ট দু জন সাহাবি রা: এর বাণী তুলে ধরলাম:
হুযায়ফা রাদি: এর ব্যাখ্যা-
عن أبي البختري قال: قيل لحذيفة أرأيت قول الله اتخذوا أحبارهم؟ قال: أما إنهم لم يكونوا يصومون لهم ولا يصلون لهم، ولكنهم كانوا إذا أحلوا لهم شيئاً استحلوه، وإذا حرموا عليهم شيئاً أحله الله لهم حرموه، فتلك كانت ربوبيتهم.اهـ
আবুল বুখতারি রহঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- হুজাইফা রাদি: কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর বাণী-তারা তাদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে - সম্পর্কে আপনার মতামত কী? তিনি উত্তর দিলেন- তারা তো পাদ্রী ও ধর্ম যাজকদের উদ্দেশ্যে নামাজ-রোজা করত না, কিন্তু পাদ্রীরা যখন তাদের জন্য কোন কিছু হালাল করতো তারা তাকে হালাল হিসেবে মেনে নিত। আল্লাহ্* কর্তৃক কোন হালালকে যদি হারাম করত ,তারাও তা হারাম হিসেবে মেনে নিত। এটাই ছিল তাদের রব হিসাবে মেনে নেয়া ।
ইবনে আব্বাস রাদি : এর ব্যাখ্যা:
﴿اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ﴾
قال عبد الله بن عباس: لم يأمروهم أن يسجدوا لهم، ولكن أمروهم بمعصية الله فأطاعوهم، فسماهم الله بذلك أرباباً.اهـ
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদি: বলেন- পাদ্রীরা তাদেরকে নিজেদের সিজদা করতে আদেশ করতো না; বরং তাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ দিত, আর তারা তাদের আনুগত্য করত। এ কারণেই আল্লাহ্ তাদেরকে রব হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইজমা থেকে দলিল:
এ বিষয়ে সকল মাজহাব-মাসলাকের আয়িম্মায়ে কেরামের ইজমা আছে আমরা সংক্ষিপ্ততার দিকে তাকিয়ে এখানে শুধু চার মাজহাবের আয়িম্মায়ে কেরামের ফতোয়া উল্লেখ করবো ইনশা আল্লাহ্* । বিস্তারিত জানার জন্য মূল শীটটি পড়া যেতে পারে ।
ফিকহে হানাফি:
আল্লামা জাসসাস রহঃ এর ফতোয়া:
আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বলেন:
فلا وربك لأ يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم حرجا مما فضيت و يسلموا تسليما
না , তোমার রবের শপথ তারা মুমিন হতে পারবে না যে যাবত না তারা তোমাকে তাদের মধ্যকার উদ্ভূত বিষয়ে বিচারক নির্ধারণ করে । অতঃপর তুমি যে ফয়সালা দিবে সে বিষয়ে নিজেদের অন্তরে কোন দ্বিধা- সংকোচ অনুভব না করে এবং পূর্ণরুপে আত্মসমর্পণ করে । (সুরা নিসাঃ৬৫)
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা জাসসাস (রহঃ) বলেন:
وفي هذه الأية دلالة على أن من رد شيئا من أوامر الله تعالى أو أوامر الرسول صلى الله عليه و سلم فهو خارج من الإسلام سواء رده من جهة الشك فيه أو من جهة ترك القبول و الامتناع عن التسليم و ذلك يوجب صحة ما ذهب إليه الصحابة في حكمهم بارتداد من امتنع من أداء الزكاة و قتلهم و سبي ذراريهم لأن الله تعالى حكم بأن من لم يسلم للنبي صلى الله عليه و سلم قضاءه و حكمه فليس من أهل الإيمان أحكام القرآن للجصاص
19
এই আয়াত প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তায়ালা অথবা তাঁর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ-নিষেধসমূহ থেকে কোন একটি বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। চাই সে সন্দেহ বশত প্রত্যাখ্যান করুক; বা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাক ও মেনে নেয়া থেকে বিরত থাকুক। আয়াতটি সাহাবায়ে কেরামগণের মতামতকে সঠিক বলে সাব্যস্ত কর। তারা সে সকল ব্যক্তিকে মুরতাদ আখ্যায়িত করেছেন যারা যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেছিল। তাদের হত্যা ও তাদের পরিবার পরিজনকে বন্দীর বিধান দিয়েছিলেন। কেননা যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধান ও ফয়সালাকে মেনে নিবে না তারা ঈমানদারদের দলভুক্ত নয়।
(আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস: ৩/১৮১)
ফিকহে মালেকি:
আল্লামা শানক্বিতী রহ: (মৃত্যু:১৩৯৩ হিঃ)
তাফসিরুল কুরআন বিল কুরআনের অন্যতম গ্রন্থ আদওয়াউল বয়ান প্রণেতা প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা শানক্বিতী রহ: স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সম্পূর্ণ স্পষ্টরুপে এ সমস্ত শাসকদের হুকুম বর্ণনা করেছেন।
তিনি আল্লাহ্ তায়ালার বাণী-
﴿إِنَّ هذا القرآن يِهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ﴾
নিশ্চয়ই এই কুরআন হিদায়াত করে সেই আদর্শের দিকে যা সুদৃঢ় ।
এর ব্যাখ্যায় বলেন-
ومن هدي القرآن للتي هي أقْوَم: بيانه أنه كل من اتبع تشريعاً غير التشريع الذي جاء به سيد ولد آدم محمد بن عبد الله صلوات الله وسلامه عليه. فاتباعه لذلك التشريع المخالف كفر بواح، مخرج عن الملة الإسلامية. اهـ
কুরআনের নির্দেশিত সুদৃঢ় আদর্শ সমূহের একটি হল- কুরআন বর্ণনা করে দিয়েছে, যে ব্যক্তি আদম সন্তানদের সর্দার মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত বিধান ব্যতিরেকে অন্য কোন বিধান অনুসরণ করে তার এই বিপরীত বিধানের অনুসরণ কুফরে বাওয়াহ- সুস্পষ্ট কুফর, যা মিল্লাতে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় ।
ফিকহে শাফেয়ি:
ইবনে কাসীর রহঃ (মৃত্যু:৭৭৪)
তিনি আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়াতে চেঙ্গিস খানের জীবনী আলোচনায় নমুনাস্বরুপ ইয়াসিকের কতগুলো শরিয়ত বিরোধী আইন উল্লেখ করার পর বলেন-
وفي كله مخالفة لشرائع الله المنزلة على عباده الأنبياء عليهم الصلاة والسلام، فمن ترك الشرع المحكم المنزل على محمد بن عبد الله خاتم الأنبياء وتحاكم إلى غيره من الشرائع المنسوخة كفر، فكيف بمن تحاكم إلى الياسق وقدمها عليه؟ من فعل ذلك كفر بإجماع المسلمين. اهـ
এ সবগুলোর মধ্যেই রয়েছে আল্লাহ্ তায়ালার বান্দা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালামের উপর আল্লাহ্ তায়ালার অবতীর্ণ শরিয়তের বিরোধিতা।যে ব্যক্তি সর্বশেষ নবি মুহাম্মাদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অবতীর্ণ সুদৃঢ় শরিয়ত ছেড়ে অন্য কোন রহিত শরিয়তের নিকট বিচার প্রার্থী হবে, সে কাফের হয়ে যাবে; তাহলে ওই ব্যক্তির বিধান কী হতে পারে,যে ইয়াসিকের নিকট বিচারপ্রার্থী হয়। তাকে শরিয়তের উপর প্রাধান্য দেয়??!!
যে ব্যক্তি এমনটি করবে সে মুসলমানদের ইজমা-ঐক্যমতে কাফের হয়ে যাবে।
(আল-বেদায়া ওয়ান- নেহায়া)
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, তাতারদের ইয়াসিক নামক সংবিধানের চেয়ে বর্তমান সংবিধানগুলো আরো নিকৃষ্ট ও জঘন্য। কারণ ইয়াসিকে অপরাধকে অপরাধ বলে স্বীকার করা হয়েছে এবং তার জন্য শাস্তি বিধান করা হয়েছে; যদিও তা ছিলো কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী। কিন্তু বর্তমান গণতান্ত্রিক সংবিধানগুলো তো অপরাধকে অপরাধ বলেই স্বীকার করেনি। বরং অপরাধকে ভাল ও উত্তম কাজ এবং অনেক ফরজ ,ওয়াজিব ও ভাল কাজকে অপরাধ ও অন্যায় সাব্যস্ত করেছে ।
দ্বিতীয়ত তাতাররা ইয়াসিক দ্বারা নিজেদের মাঝে বিচারাচার করত। নিজেরা ইয়াসিক অনুযায়ী চলত, কিন্তু মুসলমানদের উপর ইয়াসিকের বিধান চাপিয়ে দিত না। মুসলমানদের আলাদা আদালত ছিলো। মুসলমানরা সেগুলোতে নিজেদের বিচারাচার করত। আজ যারা নব্য ইয়াসিক প্রবর্তন করেছে, তারা তা যে শুধু নিজেদেরই জীবন বিধান বানিয়ে নিয়েছে তা নয় বরং সকল মুসলমানকে তা মানতে বাধ্য করছে। শুধু তাই নয়, ইসলামি শরিয়তকে একেবারেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সুতরাং তারা শুধু তাতারদের মতোই কাফের নয় বরং তাদের চেয়েও জঘন্য কাফের ।
ফিকহে হাম্বলিঃ
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহি: (মৃত্যু: ৭৫১) এর ফতোয়া:
وقد جاء القرآن، وصحّ الإجماع بأن دين الإسلام نسخ كل دين كان قبله، وأن من التزم ما جاءت به التوراة والإنجيل، ولم يتبع القرآن، فإنه كافر، وقد أبطل الله كل شريعة كانت في التوراة والإنجيل وسائر الملل، وافترض على الجن والإنس شرائع الإسلام، فلا حرام إلا ما حرمه الإسلام، ولا فرض إلا ما أوجبه الإسلام. اهـ
কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, এবং উম্মাহর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দ্বীনে ইসলাম পূর্ববর্তী সকল দ্বীনকে রহিত করে দিয়েছে এবং যে ব্যক্তি তাওরাত, ইঞ্জিলের বিধি-বিধানকে জীবনবিধান বানিয়ে নিবে আর কুরআনের অনুসরণ ছেড়ে দিবে, সে কাফের। তাওরাত, ইঞ্জিল ও অন্যান্য সকল ধর্মের প্রতিটি বিধান আল্লাহ্ তায়ালা বাতিল করে দিয়েছেন এবং মানুষ ও জ্বীন জাতির উপর ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধানকে ফরজ করেছেন। সুতরাং হারাম শুধু তা-ই যা ইসলাম হারাম করেছে। ফরজ শুধু তা-ই যা ইসলাম করেছে।(আহকামু আহলিয যিম্মাহ: খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৫৩৩)
কিয়াস থেকে দলিল:
সাহাবায়ে কেরামের ইজমার উপর কিয়াস:
সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমতে জাকাত প্রদানে যারা আস্বীকৃতি জানিয়েছিল তাদেরকে মুরতাদ গণ্য করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছিল , তাদের সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজনকে দাস-দাসি বানানো হয়েছিলো অথচ তারা নামাজ পড়ত , রোজা রাখত , তাহাজ্জুদ আদায়সহ ইসলামের অন্যান্য সকল বিধি-বিধান পালন করত ।
তাহলে যারা এক দুইটি নয় পুরা শরিয়তে ইসলামকেই অকার্যকর করেছে রাষ্টীয়ভাবে ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করছে তাদের বিধান কী হতে পারে!?
ফুকাহায়ে কেরামের ইজমার উপর কিয়াস:
আমাদের শরিয়ত নাজিল হওয়ার পর পূর্ববর্তী সকল শরিয়ত রহিত হয়ে গেছে। তবে পূর্ববর্তী শরিয়তের কোন বিধান যদি আমাদের শরিয়তে বহাল রাখা হয়,তার উপরে আমাদের শরিয়তের বিধান হিসাবে আমল করতে হবে। পূর্ববর্তী শরিয়তের বিধান হিসেবে না।
আমাদের শরিয়ত নাজিল হওয়ার পর কেউ যদি আমাদের শরিয়ত ছেড়ে অন্য কোন শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিচারাচার করে, তাহলে আইয়িম্মায়ে কেরাম সকলে একমত, সেই ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।
ক্বিয়াস:
পূর্ববর্তী আসমানি কিতাব দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করলে যদি কাফের হয়ে যায় তাহলে মানব রচিত আইন দ্বরা রাষ্ট্র পরিচালনা করলে কি কাফের হবে না??!!
ইতিহাসে কুফরি শাসন
এক:
ইয়াহুদ-নাসারা কর্তৃক কুফরি শাসন
ইয়াহুদ নাসারার আলেমরা শরিয়তের হালালকে হারাম আর হারামকে হালাল করতো এবং শরিয়তের বিধি-বিধানে রদ-বদল করত। সাধারণ জনগণ আল্লাহর আইন ছেড়ে তাদের বানানো আইন কানুন গ্রহণ করে নিত। আল্লাহ্ তায়ালা এদেরকে কাফের ঘোষণা করেছেন। ইতিপূর্বে বিষয়টি গত হয়েছে।
দুই:
আরবের মুশরিক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক কুফরি শাসন
আরবীয় মুশরিক নেতারা হারাম মাসকে হালাল আর হালাল মাসকে হারাম করত। আল্লাহ্ তায়ালা তাদের এ কাজকে কুফরের উপর কুফর আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-" إنما النسيئ زيادة في الكفر "
আর কুফরের উপর কুফর তখনই হতে পারে যখন উভয় কাজই কুফর হয় ।
তিন:
তাতারদের কুফরি শাসন:
৬০০ হিজরির পরে তাতাররা অনেক মুসলিম ভূ-খন্ড দখল করে নেয়। অতঃপর তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পূর্ণরুপে ইসলামি শরিয়ার অনুসরণ করে না । তাদের প্রণীত ইয়াসিক দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে থাকে।ফলশ্রুতিতে তৎকালীন বিশিষ্ট আলেম দ্বীন আল্লামা ইবনে কাসীর রা: তাদের রিদ্দার ব্যাপারে ফতোয়া জারি করেন।
★সংগৃহীত
Comment