Announcement

Collapse
No announcement yet.

মর্যাদার মানদণ্ডঃ একটি সারগর্ভ বিশ্লেষণ!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মর্যাদার মানদণ্ডঃ একটি সারগর্ভ বিশ্লেষণ!

    আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی
    "নি:সন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।" (সূরা বাকারা, ২:১৯৭)

    اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ اَتۡقٰکُمۡ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ
    "নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান তোমাদের মধ্য তহে,যে অধিক তাক্বওয়াবান। নিশ্চয় আল্লাহ্* সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।" (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১৩)


    اِنۡ اَوۡلِیَآؤُہٗۤ اِلَّا الۡمُتَّقُوۡنَ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۴﴾
    "তাক্বওয়াবান ছাড়া কেউ তাঁর ওলী হতে পারে না,কিন্ত তাদের অধিকাংশই এসম্পর্কে অবগত নয়।" (৮:৩৪)

    ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ: বলেন,
    "মানুষের সম্মান ও পরিপূর্নতা তিনটি বস্তুতে নিহিত:- ১. অর্জিত ইলম, ২. পালনীয় আমল, ৩. ইলম ও আমলের প্রভাবে সৃষ্ট অন্তরের অবস্থা।

    অন্তরে যে অবস্থানের ফলে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে কেউ যত বেশী সচেতন হবে, সেটি অন্যান্য অবস্থা হতে তত উন্নত হবে।
    আমলের ক্ষেত্রেও একই কথা। যে আমল মানবজীবনের এই পরম লক্ষ্য (অর্থাৎ, তাক্বওয়া) অর্জনে যত বেশী কার্যকর ভূমিকা রাখবে, তার গুরুত্ব তত বেশি হবে।
    আর এজন্যই সালাত ও জিহাদ দ্বীনের সর্বশ্রেষ্ট আমলের মর্যাদায় অভিষিক্ত।

    এমনটি হওয়াই যৌক্তিক, কেননা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের নিকটবর্তী বস্তু দূরবর্তী বস্তুর চেয়ে উত্তম হয়। সুতরাং, যে আমল অন্তরে আল্লাহর সত্তা, নাম ও গুনাবলীর অনুভুতি সৃষ্ট করে এবং হ্নদয়ে আল্লাহর ভয়, আশা ও ভালোবাসা সঞ্চার করে,এটা অন্যান্য আমল হতে নি:সন্দেহে উত্তম হবে।

    যদি একাধিক আমল এই লক্ষ্যে পৌছার (অর্থাৎ তাক্বওয়া হাসিল এবং অন্তরে আল্লাহ তা আলার ভয়, আশা ও ভালোবাসা সঞ্চারনের) মাধ্যম হয়, তবে সর্বাধিক কার্যকর মাধ্যমটিই শ্রেষ্ঠ আমল বলে বিবেচিত হবে।
    এ লক্ষ্য অর্জনের উপায় হওয়ার কারণেই আল্লাহ তা আলা ইবাদতসমূহ পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর যেসব কাজ এই লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়, তা হারাম ঘোষনা করা হয়েছে। ইবাদত ও গুনাহের স্তরবিন্যাস এই পরম লক্ষ্য অর্জনের মাপকাঠিতে হবে।

    এখানে একটি বিষয় বোঝার আছে, কখনো কোনো সহায়ক আমল কোনো ব্যাক্তির জন্য উত্তম হয়; আবার অপর ব্যাক্তির জন্য ভিন্ন কোনো আমল উত্তম হয়।

    সুতরাং, যার ধনসম্পদ আছে কিন্তু তার অন্তর ব্যয় করতে কুন্ঠিত হয়, তার জন্য রাতের তাহাজ্জুদ বা দিনের নফল সাওমের তুলনায় দান-সদকা করা অনেক উত্তম।

    শক্তিশালী বাহাদুর ব্যাক্তি, যাকে দুশমনরা যমের মতো ভয় পায়, যুদ্ধের ময়দানে সৈনিকদের কাতারে কিছু সময় দাড়ানো এবং আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা তার জন্য অনেক উত্তম হবে নফল হজ্জ, সাওম, সাদাকা ও সালাতের চেয়ে।

    যেসব আলেম সুন্নাত-বিদআত, হালাল-হারাম এবং কল্যান-অকল্যান সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান রাখেন, তাদের জন্য জনসাধারনের সাথে মেলামেশা করা, তাদেরকে দ্বীন শেখানো, দ্বীনের ব্যাপারে নাসীহা করা অনেক উত্তম সালাত, তিলাওয়াত, তাসবিহ ইত্যাদির জন্য সময় ব্যায় করার চেয়ে।

    মুসলিমদের শাসক, যাকে আল্লাহ তাআলা শাসন ও বিচারের দায়ভার সোপর্দ করেছেন,তার জন্য জুলুমের প্রতিবিধান, মজলুমের প্রতি ইনসাফ, হক্ক কায়েম, ন্যায়প্রতিষ্ঠা, অন্যায় নির্মূল ইত্যাদি কাজে সময় ব্যয় করা, সারা বছর ইবাদতে মশগুল থাকার চেয়েও উত্তম।

    যার অন্তরে নারীসংগমের আকাঙ্খা তীব্র হয়েছে, তার জন্য যিকর ও সদকার চেয়ে সওম পালন উত্তম।

    একটু ভেবে দেখুন তো, রাসুলুল্লাহ সা: আমর ইবনে আস রা:, খলিদ ইবনে ওয়ালিদ রা: প্রমুখকে বিভিন্ন অঞ্চলের শাসনভার অর্পন করেছেন, কিন্তু আকাঙ্খা করা সত্বেও কেন আবু জর গিফারী (রা) কে কোনো দ্বায়িত্ব দিলেন না?
    বরং তাকে বললেন, "আমি জানি তুমি (প্রশাসনিক কাজে) দুর্বল। তোমার জন্য আমি তাই পছন্দ করি,যা নিজের জন্য করি। তুমি দুই ব্যাক্তির মাঝে বিচারক হবে না, এতিমের সম্পদের অভিভাবকও হবে না।"
    (সহীহ মুসলিম ১৮২৬)

    রাসুলুল্লাহ সা: এক ব্যাক্তিকে নির্দেশ দিলেন, "তুমি সাওমকে আকড়ে ধরো, কেননা সাওমের সমকক্ষ কোনো আমল নেই।"(নাসায়ী-২২২২)

    আরেক ব্যাক্তিকে বললেন, "ক্রোধান্বিত হয়ো না।"
    (বুখারী-৬১১৬)

    অন্য ব্যাক্তিকে বললেন, "তোমার জিহবা যেন সর্বদা আল্লাহর যিকিরে সজীব থাকে।" (তিরমিজি-৩৩৭৫)


    আল্লাহ তা আলা যখন কোন বিষয়ে বান্দাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করতে চান, তখন তাকে সে কাজে শক্তি ব্যায় করার তাওফিক দেন। আর বান্দা সে কাজটি করে অন্যদের ছাড়িয়ে যায় এবং মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে।

    (উদ্দাতুস সবিরীন ওয়া যাখিরাতুশ শাকিরীন, পৃ: ২৫৩-২৫৪)


    ইবনুল কাইয়্যিম রহ: সবরকারী দরিদ্র ও শোকরকারী ধনাঢ্যের মধ্যে কে অধিকতর মর্যাদাবান এ সংক্রান্ত আলোচনার পর বলেন,

    "বিশুদ্ধ বক্তব্য বলে, উভয়ের মধ্যে সে ই অধিক উত্তম হবে, যে অধিক মুত্তাকি ও পরহেজগার। যদি উভয়কে তাকওয়ার ক্ষেত্রে সমান ধরা হয়, তবে তাদের মর্যাদাও সমান হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা দারিদ্র্য ও প্রাচুর্য্যের মর্যাদার মাপকাঠি সাব্যস্ত করেন নি। অনুরুপভাবে দুঃখ-দুর্দশা ও আরাম-আয়েশের বিচারেও কারও মর্যাদা নির্ধারিত হতে পারে না। আল্লাহ তা আলা তাকওয়ার বিচারেই মানুষকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

    আল্লাহ তা আলা বলেন,
    "তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যাক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন,তোমাদের মধ্যে যে অধিক তাকওয়াবান।"
    (সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩)

    রাসুলুল্লাহ সা: বলেন,
    "আরবের কোনো মর্যাদা নেই অনারবের উপর, অনারবের কোনো মর্যাদা নেই আরবের উপর। মর্যাদা লাভের মাপকাঠি একমাত্র তাক্বওয়া।"
    (মুসনাদ আহমাদ ৫/৪১১)


    তাকওয়ার ভিত্তি দুটি বস্তুর উপর: সবর ও শোকর। যার সবর ও শোকর যত বেশী পরিপূর্ন হবে, সে তত বেশি মর্যাদাবান হবে।

    তাকওয়া ব্যাতিত অন্য কাউকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না।কেননা,অনেক সময় ধনী তার শোকর আদায়ে এত বেশি তাকওয়ার পরিচয় দেয় যে, তা গরীবের সবরকেও ছাড়িয়ে যায়।
    আবার অনেক সময় গরিব তার সবরে এত বেশি সবর রাখে যে, তা ধনীর শোকরকেও হারিয়ে দেয়।

    এরুপ বলা ঠিক হবে না- এ ব্যাক্তির শোকর ঐ ব্যাক্তির সবরের চেয়ে উত্তম কিংবা এর বিপরীতটিও বলা যাবেনা।সবর ও শোকর ইমানের দুটি বাহন।
    বরং বলতে হবে যে বান্দা (আত্মিক ও বাহ্যিক) ফরজ ও নফল ভালোভাবে আদায় করে, সে ই অধিক উত্তম।

    যদি আপত্তি তোলা হয় যে, রাসুলুল্লাহ সা: তো বলেছেন "আমার উম্মতের ফকিরগন ধনীদের অর্ধ দিবস পূর্বে জন্নাতে প্রবেশ করবে। আর এই অর্ধ দিবস পাঁচশ বছরের সমান।" (তিরমিজি ২৩৫৩)

    এর উত্তরে বলা হবে হাদিসের বিষয়বস্তু থেকে গরীবের মর্যাদা ও অবস্থান ধনীদের চেয়ে উচ্চতর হওয়া প্রমানিত হচ্ছে না; যদিও তারা ধনীদের পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
    ধনী ব্যাক্তি ও ন্যায়পরায়ন শাসকরা জান্নাতে প্রবেশ করবেন হিসাবের কারনে। আর তারা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তাদের মর্যাদা ও অবস্থান অনেক উচুতে হবে।"
    (প্রাগুক্ত)

    ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ অগ্রসর হয়ে বলেন,
    "আলেমদের এক দল বলেন, শোকরকারী ধনী ও সবরকারী গরিবের মধ্যে কারও মর্যাদা কম বা বেশী নয়।

    মর্যাদার মাপকাঠি কেবল তাক্বওয়া। সুতরাং উভয়ের মধ্যে যার ইমান ও তাক্বওয়া বেশি হবে, সে ই উত্তম বলে বিবেচিত হবে। আর যদি উভয়ে তাক্বওয়ার বিচারে সমান হয়, তবে তাদের মর্যাদাও সমান হবে।

    ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ: বলেন, "এটিই বিশুদ্ধতম সত্য। কেননা কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কেবল তাকওয়াই মর্যাদার মাপকাঠি।"

    আল্লাহ বলেন,
    اِنۡ یَّکُنۡ غَنِیًّا اَوۡ فَقِیۡرًا فَاللّٰہُ اَوۡلٰی بِہِمَا
    "সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন, আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর।" (সূরা নিসা ৪:১৩৫)

    তবে কখনো কখনো কারও জন্য দারিদ্র*্য উত্তম হয়, আবার অন্য কারো জন্য প্রচুর্য উত্তম হয়। অনুরূপভাবে কারো জন্য সুস্থতা আবার কারো জন্য অসুস্থতা কল্যানকর।

    বিশুদ্ধতম বক্তব্য হলো, মানুষের পরিভাষার দিকে ভ্রুক্ষেপ করা হবে না, বরং কুরআন ও সুন্নাহতে যে লক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে, কেবল তা ই ধর্তব্য হবে। আল্লাহ তা আলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে ঈমান ও তাকওয়ার কথা বলেছেন।
    যে ব্যাক্তি এই দুই গুনে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হবে, সে ই উত্তম বলে বিবেচিত হবে। অন্য কোন গুন বা বৈশিষ্ট্য এখানে ধর্তব্য হবে না। ওয়াল্লাহু আলাম।"
    (প্রাগুক্ত)


    ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ অন্যত্র আরো বলেন,
    "জিহাদ হলো নেক আমলের মধ্যে চূড়ান্ত। এটি ২ ভাবে হয়ে থাকে ১. জিহাদ বিন নফস বা সশরীরে জিহাদ। ২. জিহাদ বিন মাল বা সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ।

    কখনো কখনো (পরিস্থিতির দাবিতে) জিহাদ বিন মাল অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। ভেবে দেখুন উসমান রাঃ কোন আমলের কারণে আলী রাঃ এর চেয়ে অধিক মর্যাদা লাভ করেছেন। অথচ আলী রাঃ অনেক বেশি জিহাদ বিন নাফস করেছেন, এবং ইসলাম গ্রহণেও তিনি উসমান রাঃ এর অগ্রগামী।

    সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও জুবায়ের ইবনে আওয়াম রাঃ ও আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাঃ অন্যান্য সাহাবিদের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান, এবং দ্বীনে ইসলামে তাদের প্রভাব আসহাবে সুফফার চেয়েও বেশি।"
    (প্রাগুক্ত)

    ইমাম কাইয়্যিম রহঃ বলেন,
    "বাহ্যিক আমলে হুকুম আহকাম জানার চেয়ে অন্তরের আমলের হুকুম আহকাম জানা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা,অন্তরের আমলই তো মূল। আর বাহ্যিক আমল শাখা প্রশাখা।
    (বাদাইউস সানায়ি :৩/১১৪০)

    সাহাবাগণ কিসের ভিত্তিতে উত্তম?' এ প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এভাবে বলেছেন -
    "মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাহাবাগণ হচ্ছেন এ উম্মাহর সেরা।অন্তরের দিক থেকে তাঁরা ছিলেন উম্মাহর মাঝে শ্রেষ্ঠ। "
    (শারহুল আকিদাতিত ত্বহাবিয়া, ৫৪৬)


    আবু বকর আল মুজনি রহঃ বলেন,
    "আবু বকর রাঃ সাহাবাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।" তাঁর এই শ্রেষ্ঠত্ব সলাত বা সিয়ামের কারণে নয়; বরং এ শ্রেষ্ঠত্ব অন্তরে বিদ্যমান বিজয়ের কারণে।"


    উমার রাঃ আশারায়ে মুবাশশরা (জান্নাাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ সাহাবী) এর মধ্যে সর্বশেষে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
    তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন নবুওতের ষষ্ঠ বছরে।
    তা সত্বেও তিনি আবু বকর রাঃ ব্যতীত অন্য সকল সাহাবীর শ্রেষ্ঠতম। কি কারণে?
    এ প্রশ্নের জবাবে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন,
    "কারণ উমার রাঃ ছিলেন ঈমান, ইখলাস, সত্যবাদিতা, ইলম, দূরদর্শিতা ও আলোকময়তার দিক থেকে অধিক পূর্ণ। তিনি ছিলেন প্রবৃত্তি থেকে অধিক সংযমশীল, দ্বীন প্রতিষ্ঠায় অধিক হিম্মতের অধিকারী।
    অন্তরের এ বিষয়গুলোই তাঁকে মুসলিম উম্মাহর মাঝে দ্বিতীয় সর্বশেষ্ঠ বানিয়ে দিয়েছে, আবু বকর রাঃ এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ বানিয়ে দিয়েছে।
    (মাজমুউল ফাতওয়া, ১০/১০৪)


    ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ মুজাহিদ, আলেম, জাহেদ, আবেদ, আদিল শাসক, বিনয়ী ও উত্তম আখলাকধারী, ক্ষমাশীল, আল্লাহর জন্য প্রতিশোধগ্রহন কারী, সবরকারী বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষদের আলোচনা করে বলেন,
    "জেনে রাখুন যত সুন্দর গুন আছে এবং যত মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হতে পারে, আল্লাহ তা আলা তাঁর রাসূল সা: কে সব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহন করিয়েছেন।
    তাই উম্মতের কোনো দল যদি রাসুলুল্লাহ সা: সীরাত থেকে নিজেদের কোনো বিশেষ গুনের পক্ষে দলীল পেশ করে, তাহলে তাদের গুনের পক্ষে সীরাত থেকে দলীল পেশ করতে পারবে। কেননা নবী সা: এর চরিত্রে সব ধরনের গুনাবলীর অনুপম সমাবেশ ঘটেছিল।

    (নির্দিষ্ট কোনো গোষ্টী নয়),বরং উম্মতের মধ্যে রাসূল সা: এর সবচেয়ে কাছের হলো সেই সব মানুষ, যারা রাসূল সা: এর (সামগ্রিক) সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখেন এবং তাঁকে সবচেয়ে বেশি অনুসরন করেন।"

    (উদ্দাতুস সবিরীন ওয়া যাখিরাতুশ শাকিরীন)

    অর্থাৎ, সামগ্রিক ভাবে সকল ফরয আদায় ব্যতীত নির্দিষ্ট কোনো আমলে বিশেষত্ব অর্জনকারী ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব কখনোই সকল ফরয আদায়কারীর উপর সাব্যস্ত হবে না যদিও পরবর্তী ব্যক্তির তেমন কোনো বিশেষায়িত বৈশিষ্ট্য না থাকে।
    ফরয আদায় ব্যতীত আল্লাহ তা আলার নৈকট্য হাসিলের আশা করা বৃথা, যদিও বিশেষ কোনো নফল আমলে উক্ত ব্যক্তির দখল থাকে।

    একইভাবে প্রচুর পরিমাণে নফল জিহাদে মশগুল ব্যক্তি মাত্রই কোনো আলিম বা দা'ই অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এমনটা বলাও সমীচীন নয়।
    বরং যে ব্যক্তি সকল ফরয আমল আদায়ের পাশাপাশি স্বীয় তবিয়ত ও সামর্থ্যানুপাতে বিশেষ কোনো আমলকে আঁকড়ে ধরে তাক্বওয়া হাসিলে অগ্রগামী হয় সেই মর্যাদায় অগ্রগামী।

    আরও বলা যায় যে, মুজাহিদীন জামায়াতের অন্তর্গত (উলামায়ে কেরাম, দা'ইগন, সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণকারীগণ, ফিদায়ী হামলাকারীগণ, মিডিয়া কর্মীগণ, নেতৃবৃন্দ বা বিভিন্ন খেদমত আঞ্জাম দানকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে তিনিই মর্যাদায় অগ্রগামী সাব্যস্ত হবেন, যিনি আল্লাহ তা আলার পরিচয় লাভকরত তাক্বওয়া অধিক পরিমাণ অর্জন করতে পেরেছেন।
    তবে বাস্তবতা এটাও যে, আল্লাহ তা আলার জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর কাজে তাক্বওয়া ও তাওয়াক্কুল অন্তরে দ্রুত সঞ্চারিত হয়।


    একটি মারাত্মক ভুলঃ

    সব শেষে একটি কথা না বললেই নয়। বর্তমানে এমন অনেককেই পাওয়া যায়, যারা যায়েদ বিন সাবিতের ইলমি ময়দানে শ্রেষ্ঠত্ব, হাসসান বিন সাবিতের কাব্যচর্চা, মুসআব ইবনে উমায়েরের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) দাওয়াতি খেদমত, উসমান ইবনে আফফানের সম্পদ ব্যায় প্রভৃতি বিষয়কে সামনে এনে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হওয়াকে এড়িয়ে যেতে চান এই যুক্তি দিয়ে যে "রাসুলুল্লাহ সা. সাহাবীদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন খেদমতে লাগিয়েছেন।"

    অথচ বাস্তবতা হলো সাহাবিদের কেউ-ই ফরয জিহাদ করা থেকে বিরত ছিলেন না। রাদিয়াল্লাহু আনহুম।

    অথচ পশ্চাদপসরণকারীগণ এবিষয়টি এড়িয়ে যান। বিষয়টি অনেকটা 'ইলম অর্জন করলে সালাতের প্রয়োজন নেই' বা 'রমযানের সিয়াম রাখলে যাকাত আদায়ের প্রয়োজন নেই' (নাউযুবিল্লাহ) এমন যুক্তির মতোই। আল্লাহ তা আলা আমাদের সকলকেই বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতারণা থেকে হিফাজত করুন।
    আল্লাহ তাআলা আমাদের অন্তরে তাক্বওয়া দান করুন যা সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয়।

    আল্লাহ তাআলা আমদের অন্তরকে পরিস্কার করে দিন বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা পানি দ্বারা, যেন আমাদের অন্তর ও গুনাহসমুহের মধ্যে দূরত্ব থাকে পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের ন্যায়। আমিন।

  • #2
    মাশাআল্লাহ
    তাকওয়া নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেছেন ৷
    সকল মুজাহিদ ভাইয়ের ভালো করে পড়া দরকার ৷
    আল্লাহ আমাদেরকে তাকওয়া দান করুন ৷ আমিন
    গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

    Comment


    • #3
      আহকায়ে শরয়িয়া অনুযায়ী আমল করা শরিয়তের চাহিদা।
      ফরজ, ওয়াজিব,সুন্নত,মুস্তাহাত,হালাল, হারাম, মুবাহ, মাকরুহ।
      ===================================
      শরিয়তের যেই বিধানগুলো ফরজ, তা অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। কেউ ফরজ ছেড়ে দিলে যত বড় আস্তিই হোক সে ফরজ তরকের গোনাহগার হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে আসবে।
      اللهم انی اسلک الهدی والتفی والعفافی والغناء

      Comment


      • #4
        আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকেই বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতারণা থেকে হিফাজত করুন। আমাদের অন্তরে তাক্বওয়া দান করুন! যা সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয়।
        আমদের অন্তরকে পরিস্কার করে দিন বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা পানি দ্বারা, যেন আমাদের অন্তর ও গুনাহসমুহের মধ্যে দূরত্ব থাকে পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের ন্যায়।
        আমীন! আমীন!! আমীন!!!
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লক্ষ্য করা যায়, মর্যাদার মানদণ্ড সংক্রান্ত মাসয়ালার ব্যাপারে অজ্ঞতা ও গাফিলতি আমাদের প্রায়ই দুনিয়াবি বিষয়াদিকে মাধ্যম করে নোংরামিতে লিপ্ত করে ফেলে।। তাকওয়ার পরিবর্তে দুনিয়াবি বিভিন্ন বিষয়কে লক্ষ্যমাত্রা সাব্যস্ত করে ফেলার মাধ্যমে শয়তানের ফাঁদে পা দেই, যদিও আমাদের ইলম ও বিচক্ষণতা অন্যান্য ক্ষেত্রেই অনেক হয়তো।।

          وَ زَیَّنَ لَہُمُ الشَّیۡطٰنُ اَعۡمَالَہُمۡ فَصَدَّہُمۡ عَنِ السَّبِیۡلِ وَ کَانُوۡا مُسۡتَبۡصِرِیۡنَ

          "আর শয়তান তাদের কাজকে তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল এবং তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল, যদিও তারা ছিল বিচক্ষণ।"

          Comment


          • #6
            আলহামদুলিল্লাহ, খুব-ই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।

            ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ: বলেন, "এটিই বিশুদ্ধতম সত্য। কেননা কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কেবল তাকওয়াই মর্যাদার মাপকাঠি।"

            এই পোস্টটি পড়ে কি পরিমাণ উপকৃত হয়েছি, তা লেখার মাধ্যমে বুঝানো কঠিন।
            আসলেই এর দ্বারা আমাদের চিন্তা-বুঝের পরিধি বৃদ্ধি হবে, ইনশা আল্লাহ।
            সকল ভাইকে পড়ার বিনীত অনুরোধ করছি।
            আল্লাহ পোস্টকারী ভাইকে জাযায়ে খাইর দান করুন ও এমন পোস্টের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমীন
            ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

            Comment


            • #7
              এখানে একটি বিষয় বোঝার আছে, কখনো কোনো সহায়ক আমল কোনো ব্যাক্তির জন্য উত্তম হয়; আবার অপর ব্যাক্তির জন্য ভিন্ন কোনো আমল উত্তম হয়।...

              মাশা আল্লাহ, খুবই গুরুত্বপূর্ণ উসূলী কথা। যা মনে রাখার মত।
              আল্লাহ আমাদের বুঝার ও মেনে চলার তাওফীক দিন। আমীন।
              “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

              Comment

              Working...
              X