Announcement

Collapse
No announcement yet.

প্রশ্নোত্তর || আল্লাহ তাআলা কি এই ওয়াদা করেছেন যে, মুমিনরা সকল যুদ্ধক্ষেত্রে কাফেরদের উপর বিজয় লাভ করবে?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • প্রশ্নোত্তর || আল্লাহ তাআলা কি এই ওয়াদা করেছেন যে, মুমিনরা সকল যুদ্ধক্ষেত্রে কাফেরদের উপর বিজয় লাভ করবে?

    আল্লাহ তাআলা কি এই ওয়াদা করেছেন যে, মুমিনরা সকল যুদ্ধক্ষেত্রে কাফেরদের উপর বিজয় লাভ করবে?



    প্রশ্ন:
    সূরা ফাতহের ২২ ও ২৩ নং আয়াত তিলাওয়াত করলে আমার মনে একটি প্রশ্ন উদিত হয় যে, আয়াতে বলা হচ্ছে মুসলিমরা কাফেরদের বিরুদ্ধে কখনো কোন যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয় বরণ করবে না। কারণ এটা হলো আল্লাহর রাস্তা। আমি তাফসীরে ইবনে কাসীর খুলে দেখলাম। সেখানেও এমনই বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তো এমন নয়। আমরা উম্মাহর ইতিহাস ঘেটে দেখি মুসলিমরা সকল যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় লাভ করেনিঅনেক ময়দানে পরাজিতও হয়েছে। তাহলে এ আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা কি হবে। সঠিক তাফসীরটি জানালে উপকৃত হতাম।


    উত্তর :
    আলহামদুলিল্লাহ, আমরা কয়েক ধাপে এ প্রশ্নের জবাব পেশ করছি।

    প্রথম জবাব:

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

    وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوَلَّوُا الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا﴿٢٢﴾‏ سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلُ ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا﴿٢٣﴾‏ الفتح/22-23.

    অর্থ: “যদি কাফেররা তোমাদের মোকাবেলা করত, তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করত। তখন তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পেত না। এটাই আল্লাহর রীতি, যা পূর্ব থেকে চালু আছে। তুমি আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না।” [সূরা ফাতহ (৪৮): ২২-২৩]

    আয়াতদ্বয় সূরা ফাতহের ২২ ও ২৩ নং আয়াত। এ সূরাটি হুদায়বিয়ার সন্ধি ও বাইয়াতে রেজওয়ানের পর নাযিল হয়েছে।

    এ মোবারক বাইয়াতের পর আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলকে এ মহা সুসংবাদটি দিলেন যে, এখন থেকে আর কোন যু্দ্ধে কাফেররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাদের সামনে স্থির থাকতে পারবে না। বরং যখনই কাফেরররা তাদের মোকাবেলায় আসবে তখনই পলায়ন করবে এবং পিছু হটতে বাধ্য হবে। এটা হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথে থাকা সাহাবীদের প্রতি আল্লাহর তাআলার সাহায্যের সুস্পষ্ট ঘোষণা। যেমনটা আল্লাহ তাআলা তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের সাহায্য করেছিলেন; তাদের দুশমনদের ও মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের বিরুদ্ধে

    অর্থাৎ এ আয়াতে যদিও মুখাতাব আম কিন্তু উদ্দেশ্য খাস। তথা আয়াতে (তোমরা) দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথে থাকা সাহাবীগণ উদ্দেশ্য।
    আয়াতে যেহেতু মুখাতাব খাস, তাই অনেক মুফাসসির আয়াতে বর্ণিত {وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا } দ্বারা কাফেরদের খাস জামাতই উদ্দেশ্য নিয়েছেন। যেমন-
    কাযী বাইযাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন- এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আহলে মক্বা। অর্থাৎ তারা যদি হুদাইবিয়ার দিন সন্ধি না করে যুদ্ধ করতো, তাহলে অবশ্যই পরাজিত হতো এবং পালাতে বাধ্য হতো। -তাফসীরে বাইযাবী: ৫/১৩০

    আর কেউ কেউ ওই ঘটনার কারণকে উদ্দেশ্য নিয়েছেন, যে ঘটনার প্রেক্ষিতে ওয়াদা এসেছে।

    ইমাম জালালুদ্দীন মহল্লী রহিমাহুল্লাহ বলেন- {وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا } এর দ্বারা হুদাইবিয়ার প্রান্তরের কথা বলা হয়েছে। -তাফসীরে জালালাইন: পৃ: ৬৮২
    মোটকথা: আয়াতে বর্ণিত وَلَوْ قَاتَلَكُم দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথে থাকা সাহাবীগণ উদ্দেশ্য। যারা বাইয়াতে রেজওয়ানে উপস্থিত ছিল। আরالَّذِينَ كَفَرُوا দ্বারা মক্কার কুরাইশ ও তাদের সাথী সঙ্গীরা উদ্দেশ্য। তাফসীরের প্রায় সকল ইমামের মত এটাই। পূর্ববর্তীদের তাফসীর গ্রন্থে আমরা এর ব্যাতিক্রম দেখতে পাই না।
    ইমাম আবু উবাইদ কাসেম বিন সাল্লাম রহিমাহুল্লাহ এর “আল-আমওয়াল” (২০৬) গ্রন্থে উরওয়া রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত- মুসলমানরা যখন হুদাইবিয়া প্রান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বাইয়াত করলো, তখন কাফেররা এই সংবাদ শুনে ঘাবড়ে গেলতখনই তারা সন্ধি ও শান্তি চুক্তির প্রস্তাব পেশ করলো । তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাযিল করলেন:

    وَهُوَ الَّذِي كَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ عَنْهُم بِبَطْنِ مَكَّةَ مِن بَعْدِ أَنْ أَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا ﴿٢٤﴾ [الفتح: 24].

    অর্থ: “তিনি মক্কা শহরে তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে নিবারিত করেছেন তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর। তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা দেখেন।” [সূরা ফাতহ (৪৮): ২৪]

    উরওয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, এরপর আল্লাহ তাআলা কিতালের প্রসঙ্গ টেনে বলেন:

    وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوَلَّوُا الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا﴿٢٢﴾ الفتح/22.

    অর্থ: “যদি কাফেররা তোমাদের মোকাবেলা করত, তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করত। তখন তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পেত না।” [সূরা ফাতহ (৪৮): ২২]
    উরওয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, তখন কুরাইশরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হলো। চার বছর মেয়াদে কয়েকটি বিষয়ে সন্ধি চুক্তি হলো-
    ১- একে অপরকে নিরাপত্তা প্রদান করবে।
    ২- কেউ কাউকে বন্দি করবে না।
    ৩- কেউ যদি হজ্জে আসে বা ওমরায় আসে, বা ইয়েমেন বা তায়েফ যেতে চায় তাহলে সে নিরাপদ ।
    ৪- কোন মুশরিক যদি শাম বা পূর্ব দিকের কোন অঞ্চলে যাবার জন্য মদীনা দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে সেও নিরাপদ।
    উরওয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই চুক্তিতে বনী কাব কে যুক্ত করে নিলেন। আর কুরাইশরা তাদের মিত্র বনী কিনানা কে যুক্ত করলো।
    আরেকটি শর্ত হয়েছিল, কেউ যদি মক্কা থেকে মুসলিম হয়ে মদীনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চলে আসে, তাহলে তাকে তাদের কাছে ফেরত দিতে হবে। পক্ষান্তরে মুসলিমদের কেউ যদি মক্কায় যায়, তাহলে তাকে তাঁর কাছে ফেরত দেওয়া হবে না।

    }وَلَوْ ‌قَاتِلَكُمُ ‌الَّذِينَ ‌كَفَرُوا لَوَلَّوُا ‌الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا{
    অত্র আয়াতের তাফসীর ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত-তাবারী রহিমাল্লাহ তাঁর তাফসীর গ্রন্থে (২২/২৩৫) এভাবে করেছেন-
    -আল্লাহ তাআলা বাইয়াতে রেজওয়ানের ঈমানদারদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতেছেন:
    {وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا } হে মুমিনগণ, যদি মক্কার কাফেররা তোমাদের সাথে মোকাবেলা করত, {لَوَلَّوُا الأدْبَارَ }তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করত।
    তিনি বলেন, তাহলে তারা পরাজিত হয়ে যেত। তারা তোমাদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন করতো। পরাজিতরা তো যুদ্ধের ময়দানে এমনই করে থাকে।
    {ثُمَّ لا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلا نَصِيرًا }এরপর এই পরাজিত কাফেররা, যারা তোমাদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে, তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা তোমাদের সাথে রয়েছেন। যেই দলের সাহায্যকারী স্বয়ং আল্লাহ সেই দল কখনো পরাজিত হতে পারে না।
    অন্যান্য তাফসীরকারকগণ এমনটাই বলেছেন।

    উদাহরণস্বরুপ-
    হযরত কাতাদা রাযি. থেকে বর্ণিত, {وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوَلَّوُا الأدْبَارَ} “যদি মক্কার কাফেররা তোমাদের সাথে মোকাবেলা করত, তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করত।” অর্থাৎ মক্কার কুরাইশরা। আল্লাহ তাআলা বলেন- {ثُمَّ لا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلا نَصِيرًا } তখন তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পেত না।” যিনি আল্লাহর হাত থেকে তাদেরকে সাহায্য করবেন।
    আল্লাহর বাণী - {سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُ} “এটাই আল্লাহর রীতি, যা পূর্ব থেকে চালু আছে। তুমি আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না।” আল্লাহ তাআলা বলেন- যদি কুরাইশের এই কাফেররা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো তাহলে তিনি লাঞ্ছনার সাথে তাদেরকে পরাজিত করতেন। যেমনটা তিনি পূর্ববর্তী কাফেরদেরকে করেছেন; যারা পূর্বে তাঁর মুমিন বান্দাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।
    আল্লাহ তাআলার বাণী - {سُنَّةَ اللَّهِ}“আল্লাহর রীতি” এখানে নসব হয়েছে তার মূল لفظ ভিন্ন অন্য কিছু (মর্মার্থ معنى) থেকে। মূল لفظ হলো {لَوَلَّوُا الأدْبَارَ ثُمَّ لا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلا نَصِيرًا} “তবে তারা অবশ্যই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করত অতঃপর তারা কোন অভিভাবক বা সাহায্যকারী পেত না
    এখন উপরোক্ত বাক্য থেকে {سُنَّةَ اللَّهِ}এভাবে নসব হয়েছে যে, এখানে নিম্নোক্ত বাক্য উহ্য রয়েছে: سننت فيهم الهزيمة والخذلانঅর্থাৎ “আমি তাদের জন্য পরাজয় ও ব্যর্থতার নিয়ম এঁকে দিয়েছি; আমি আমার এই সুন্নত অবধারিত করেছি” এ কারণেই বলা হয়েছে {سُنَّةَ اللَّهِ}
    এখানে সুন্নাহ কথাটা মাসদার হিসেবে মাফউলে মুতলাক হয়েছে। কিন্তু এখানে পূর্বোক্ত বাক্যের জাহের বা শাব্দিক অংশ থেকে নয় বরং পূর্বোক্ত বাক্যের সারমর্ম থেকে মাফউলে মুতলাক হয়েছে (বিধায় নসব বা জবর হয়েছে)
    আবার এমনও ধরা যেতে পারে, {سُنَّةَ اللَّهِ} কথাটা পূর্বের তাফসীর হিসেবে এসেছে।
    আল্লাহর বাণী - {وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا} “তুমি আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না।” অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতেছেন: হে মুহাম্মদ! আপনি আল্লাহর সুন্নতের মাঝে -যে সুন্নতের ধারা তিনি তাঁর মাখলুকের মাঝে জারি রেখেছেন- কোন রকম পরিবর্তন পাবেন না বরং মুমিন সৎকর্মশীলদের প্রতি সদা অনুগ্রহ আর কাফির পাপিষ্ঠদের জন্য সদা শাস্তি ও লাঞ্ছনা

    ইমাম আবু মুহাম্মদ ইবনে আতিয়া রহিমাহুল্লাহ তাঁর তাফসীর গ্রন্থে (৫/১৩৫) বলেন-
    আল্লাহর বাণী - {وَلَوْ ‌قاتَلَكُمُ ‌الَّذِينَ ‌كَفَرُوا لَوَلَّوُا ‌الْأَدْبارَ}“যদি কাফেররা তোমাদের মোকাবেলা করত, তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করত।”এই আয়াতে কুরাইশ ও হুদাইবিয়ার বছর তাদের সমর্থকদের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। কাতাদা এমনটাই বলেছেন।
    এই আয়াতে মুমিনদের মানসিক শক্তি যোগানো হয়েছে।

    কোন কোন মুফাসসির বলেন- এর দ্বারা রোম পারস্যের কাফেরদের বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কাযী আবু মুহাম্মদ বলেন, এটা দুর্বল অভিমত। বরং নিকটতম শত্রুকেই বোঝানো হয়েছে।
    আল্লাহর বাণী - {سُنَّةَ اللَّهِ}“আল্লাহর রীতি” এর দ্বারা বদরের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
    আবার কেউ বলেন, পূর্ববর্তী নবীদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে আল্লাহর যে রীতি তার দিকে ইশারা করা হয়েছে।
    আরো দেখা যেতে পারে: যাদুল মাসীর, লি ইবনিল জাওযী, ৪/১৩৪ , মাফাতিহুল গাইব, লি ফখরুদ্দিন রাযী, ২৮/৮০

    আমরা এতক্ষণ যাবত তাফসীর বিশারদদের যেই মতামত উল্লেখ করলাম, তা অনুযায়ী আয়াতে আর কোন প্রশ্ন বাকী থাকে না। কারণ আল্লাহ তাআলার এই ওয়াদা বাস্তবায়ন হয়েছে। হুদাইবিয়ার পর আর কোন যুদ্ধে কুরাইশরা ও তাদের সহযোগী আরবের অন্যান্য মুশরিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথে থাকা সাহাবীদের মোকাবেলায় টিকতে পারেনি। বরং সকল যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে বিজয় দিয়েছেন এবং সবশেষে মুসলমানরা মক্কা বিজয় করেআর মানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করে

    ফখরুদ্দীন রাযী রহিমাহুল্লাহ বলেন-

    }وَلَوْ ‌قَاتِلَكُمُ ‌الَّذِينَ ‌كَفَرُوا لَوَلَّوُا ‌الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا{

    এই আয়াতটি একটি সংশয়ের জবাবে বলা হয়েছে। সংশয়টি হলো- কেউ বলতে পারে, 'কাফেরদেরকে মুমিনদের থেকে ফিরিয়ে রাখা' এটা আল্লাহর তাআলার বিশেষ কোন অনুগ্রহ বা সাহায্য নয়। বরং এটা ঘটনাক্রমে ঘটে যাওয়া একটি বিষয় মাত্রযে কাফেররা এমনিতেই যুদ্ধে জড়ায়নি। অন্যথায় যদি সকল আরব একত্রিত হয়ে হামলে পড়তো, তাহলে মুসলমানরা কোথাও টিকতে পারতো না। খাইবারও বিজয় করতে পারতো না। আর গণীমতও পেতো না।
    এই সংশয়ের জবাবে আল্লাহ তাআলা বলে দিলেন, না না, বিষয়টি এমন নয়। বরং বাস্তবতা হলো, কাফেররা যুদ্ধে আসুক বা না আসুক তারা আর কখনো বিজয়ী হতে পারবে না। এখন থেকে বিজয় মুসলিমদের জন্য অবধারিত হয়ে গিয়েছে। সুতরাং বিষয়টি ঘটনাক্রমে ঘটে যাওয়া কোন ব্যাপার নয়, বরং এটি আল্লাহর হুকুম; যা আল্লাহ তাআলা অবধারিত করে ফেলেছেন। -মাফাতিহুল গাইব: ২৮/৮০

    শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন-
    আল্লাহ তাআলার এই প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছিল। তাইতো এই আয়াত নাযিল হবার পর কোন যুদ্ধেই মক্কার কাফেরররা বিজয়ী হতে পারেনি। ইসলাম প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছিল
    , এলাকার পর এলাকা বিজিত হচ্ছিল। পূর্ব থেকে পশ্চিমে ইসলাম ছড়িয়ে যাচ্ছিল। -আল জাওয়াবুস সহীহ লিমান বাদ্দালা দ্বীনাল মাসীহ ৬/৭৫

    শাইখুল ইসলাম রহিমাহুল্লাহ আরো বলেন, যে সকল সাহাবা কুফ্ফার ও মুরতাদদের বিরুদ্ধে কিতাল করেছে, তারা অনেক বড় বড় বিজয় অর্জন করেছে। এটা যেন আল্লাহ তাআলার সেই প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন, যা আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন,

    إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ﴿٥١﴾[سورة غافر: 51]

    অর্থ: “আমি সাহায্য করব রসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে।” [সূরা গাফির (৪০) : ৫১]

    সুতরাং আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশে কুফফার, মুরতাদ ও খারেজীদের বিরুদ্ধে যতটা যুদ্ধই হয়েছে, সকল যুদ্ধে মুমিনরা আল্লাহর বিশাল সাহায্য লাভ করেছে। ‍যখন মুমিনরা তাকওয়া ও সবরের গুনে গুনান্বিত ছিল। কারণ তাকওয়া ও সবরই ঈমানের পরিচায়ক, যার সাথে আল্লাহর সাহায্যের ওয়াদা রাখা হয়েছে। -মিনহাজুস সুন্নাহ আন-নাবাবিয়্যাহ: ৭/২১

    দ্বিতীয় জবাব:

    ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ এর যেই কথার উপর প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, তিনি বলেছেন এই আয়াতে সকল যুদ্ধেই মুমিনরা কাফেরদের উপর বিজয় লাভ করবে , এটা তো বাস্তবতা বিবর্জিত। কারণ, পূর্ববর্তী নবী ও তাদের অনুসারীদের সাথে এমনটি হয়নি। আর ইমাম ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ একজন মুফাসসির ও ঐতিহাসিক। পূর্ববর্তী উম্মতের সকল যুদ্ধের ঘটনাবলী তাঁর সামনে দিবালোকের ন্যায় দেদীপ্যমান। তাই এই বিষয়টি তার সামনে অষ্পষ্ট থাকার কথা নয়।
    তাই আমরা বলতে পারি যে, তিনি এই কথার দ্বারা ব্যাপকভাবে সকল যুদ্ধের কথা বোঝাননিবরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সেই যুদ্ধ যেখানে ঈমান ও কুফরের মাঝে চূড়ান্ত ফায়সালা হয়।
    তিনি বলেন, ঈমান ও কুফর যদি চূড়ান্ত ফায়সালার জন্য কোন ময়দানে মুখোমুখি হয়, সেখানে অবশ্যই ঈমান, কুফরের উপর গালেব হবে। হক্ব বিজয়ী হবেআর বাতিল মিটে যাবে। যেমনটা আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদের সাথে বদরের দিন করেছেন। সেদিন আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের বিপরীতে মুমিনদেরকে সাহায্য করেছিলেন এবং গুটিকতেক মুমিনদের দুর্বল জামাতকে শক্তিশালী বিশাল মুশরিকদের জামাতের উপর বিজয় দান করেছিলেন। -তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৭/৩৪১
    পূর্ববর্তী জাতির সাথে আল্লাহ তাআলার আচরণ এমনই ছিল। শেষ পরিণতিতে বিজয় রাসূল ও মুমিনদেরই হয়েছে। আর দুশমনরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
    আল্লামা তাহের ইবনে আশুর রহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ সাহায্য আসে মুমিনদের অবস্থা অনুযায়ী। তাদের ঈমান ও তাকওয়ার স্তর অনুযায়ী। এ কারণেই এই জাতীয় ওয়াদা সাধারণত রাসূল ও তাঁর সাথে থাকা মুমিনদের সাথেই বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। তাই মুমিনদের পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ হয়, আল্লাহর সাহায্য তখনই সঙ্গ দেয়। যেমনটা দেখা গিয়েছিল বদরের ময়দানে। এছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় যুদ্ধ তার আপন গতিতে চলে। কখনো এই পক্ষ, কখনো ঐ পক্ষ। যেমন আমরা দেখেছি উহুদের প্রান্তরে।
    এর স্বপক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাই আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই ঐতিহাসিক দুয়ার শব্দগুলো আমরা সামনে আনতে পারি। বদরের ময়দানে যুদ্ধের আগ মুহুর্তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুয়ায় বলেছিলেন,

    اللَّهُمَّ إِنْ تُهْلَكْ هَذِهِ العِصَابَةُ لاَ تُعْبد في الأرْضِ

    হে আল্লাহ! আজ যদি এই ক্ষুদ্র দলটি হেরে যায়, তাহলে ভূপৃষ্ঠে আপনার ইবাদত করার কেউ থাকবে না।”

    কুরআনুল কারীমে মুসা আলাইহিস সালাম এর কথা বর্ণিত হয়েছে-

    قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللَّهِ وَاصْبِرُوا ۖ إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۖ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ﴿١٢٨﴾ [الأعراف: 128]

    অর্থ: মূসা বললেন তাঁর কওমকে, সাহায্য প্রার্থনা কর আল্লাহর নিকট এবং ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।” [সূরা আরাফ (৭): ১২৮] –আত-তাহরীর ওয়াত তানভীর: ২৬/১৮৩

    তৃতীয় জবাব:

    আহলে ইলমদের কেউ এই কথা বলেনি যে, এই আয়াতে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, সব মুমিনরা সকল যুদ্ধক্ষেত্রেই কাফেরদের বিপক্ষে জয়লাভ করবে। আর কারো পক্ষে এমনটা বলাও সম্ভব না। কারণ, এমনটা বলা তো বাস্তবতার পরিপন্থি। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগেও তো এমন দেখা যায়নি। তাঁর পরবর্তী যুগের কথা তো অনেক দূরে। বাস্তবে কিয়ামত অবধি তা সম্ভবও নয়। যেমনটি আমরা প্রত্যক্ষ করছি এবং জ্ঞাত আছি।

    বরং আমরা তো ইতিহাসে দেখতে পাই আল্লাহর বান্দাদের সাথে এবং যুগে যুগে নবী-রাসূল ও তাদের ঈমানদার উম্মতের সাথে আল্লাহর আচরণ একেক সময় একেক রকম ছিল। সবখানেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিজয় দিয়েছেন, এমনটা দেখা যায় না। বরং যু্দ্ধে ছিল জয় পরাজয় ও পালা বদল। কখনো আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদের বিজয়ী বানিয়েছেন। আবার কখনো বাহ্যিকভাবে তাদেরকে পরাজিত করেছেন। তাদের দুশমনরা বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু শেষ পরিণতি সদা মুমিনদের পক্ষেই ছিল।

    এই বাস্তব ও সুপ্রমাণিত বিষয়টি সামনে রেখেই রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য নবী হবার প্রমাণ দিয়েছিলেন। বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে-

    "وَسَأَلْتُكَ: هَلْ قَاتَلْتُمُوهُ؟ فَزَعَمْتَ أَنَّكُمْ قَدْ قَاتَلْتُمُوهُ، فَتَكُونُ الْحَرْبُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ سِجَالًا، يَنَالُ مِنْكُمْ وَتَنَالُونَ مِنْهُ، وَكَذَلِكَ ‌الرُّسُلُ ‌تُبْتَلَى ثُمَّ تَكُونُ لَهُمُ الْعَاقِبَةُ ".

    “সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে বললেন- আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তোমরা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছ কি? তুমি বলেছ যে, যুদ্ধ করেছ এবং তাঁর ফলাফল হচ্ছে পানি তোলার বালতির মত। কখনো তোমাদের বিরুদ্ধে তারা জয়লাভ করে আবার কখনো তাদের বিরুদ্ধে তোমরা জয়লাভ কর। এমনিভাবেই রাসূলদের পরীক্ষা করা হয়, তারপর চূড়ান্ত বিজয় তাদেরই হয়ে থাকে।” –বুখারী: ২৮০৪, মুসলিম: ১৭৭৩

    ইবনে বাত্তাল রহিমাহুল্লাহ সহীহ বুখারীর অধ্যায়
    قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ ۖ ﴿٥٢﴾ [التوبة 52]

    অর্থ: “আপনি বলুন, তোমরা তো তোমাদের জন্যে দুটি কল্যাণের একটি প্রত্যাশা কর” [সূরা তাওবা (9): ৫২]

    এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, মুহাল্লাব রহিমাহুল্লাহ বলেন, দুই কল্যাণের কোন একটি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বিজয় ও গনীমত অথবা শাহাদাত ও জান্নাত।

    লেখক বলেন, তাফসীরকারদের এক জামাতের ব্যাখ্যা এটাই। ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় এই তাফসীর উল্লেখ না করে, ইবনে আব্বাস রাযি. এর হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, যুদ্ধ হলো পালাবদল। এই হাদীস উল্লেখ করে মূলত তিনি এই ব্যাখ্যার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। অর্থাৎ যখন মুমিনরা বিজয়ী হবে, তখন তারা গণীমত লাভ করবে। আর যদি কাফেররা বিজয়ী হয়, তাহলে মুমিনরা শাহাদাত ও জান্নাত লাভ করবে। এটাই হলো দুই কল্যাণের যেকোন এক কল্যাণের ব্যাখ্যা।

    মুহাল্লাব রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‍কিয়ামত পর্যন্ত যত বিজয় অর্জন হবে এবং মুসলিমরা যত গনীমত লাভ করবে, সব এই দুই কল্যাণের এক কল্যাণের অন্তর্ভূক্ত হবে। আর আল্লাহ তাআলা কখনো কখনো তাঁর নবীগণ ও তাদের অনুসারীদের পরীক্ষার সম্মুখীন করেন, যাতে তাদের মর্যাদা ও সাওয়াব বৃদ্ধি পায় এবং ‍দুনিয়াবী নেযাম ঠিক থাকে। আল্লাহ তাআলা যদি নেযামের উর্ধ্বে গিয়ে ‍কিছু করতেন, তাহলে যুদ্ধ ছাড়াই সমস্ত কাফেরদের ধ্বংস করে দিতেন এবং তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই হ্রাস করে দিতেনফলে তারা কোন ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই মুমিনদের হাতে বন্দি হয়ে যেতোকিন্তু আল্লাহ তাআলা এসব না করে মুমিনদেরকেও কখনো বাহ্যিক পরাজয় দান করেন, যাতে তাদের সাওয়াব বৃদ্ধি পায় এবং পৃথিবীর নেযাম নষ্ট না হয়। মুমিনরা কেয়ামতের ময়দানে আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় উপস্থিত হয়। শাহাদাতের মাকাম নিয়ে উপস্থিত হয়। -শরহে সহীহ বুখারী: ৫/২১

    গাযওয়ায়ে উহুদে মুমিনদের পরাজয় সংক্রান্ত আল্লাহ তাআলার হিকমত আলোচনা করতে গিয়ে হাফেজ ইবনুল কাইয়ুম রহিমাহুল্লাহ বলেন-
    “আরেকটি হিকমত হলো, আল্লাহ তাআলার সুন্নাহ হলো যে, নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীগণ কখনো বিজয়ী হবে, আবার কখনো পরাজয়ের সম্মুখীন হবে। কারণ যদি তারা সকল যুদ্ধক্ষেত্রেই বিজয়ী হয়, তাহলে তাদের জামাতে মুমিন মুনাফিক সবাই একত্রিত হয়ে যাবে। সত্যবাদী ও মিথ্যুক সব এক প্লাটফর্মে জমা হবে। ফলে রাসূল পাঠানোর যে মূল উদ্দেশ্য তা আর অর্জন হবে না।
    তাই আল্লাহ তাআলার হিকমতের দাবী হলো, তিনি উভয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন; যাতে মুখলিস মুনাফিকের মাঝে পার্থক্য হয়ে যায়। আর কে সুসময়ের অতিথি আর কে স্থায়ী মুমিন তা পরীক্ষা হয়ে যায়।
    আরেকটি বিষয় হলো, এটা সত্য রাসূল হবার আলামতও বটে। সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তোমরা কি তাঁর (মুহাম্মদের) (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে যুদ্ধ করেছো? বলল, হ্যাঁ। বললেন যু্দ্ধের ফলাফল কি হয়েছিল? বললেন, পালাবন্টন ছিল, কখনো তিনি বিজয়ী হতেন, কখনো আমরা বিজয়ী হতাম। বললেন, এমনিভাবেই রাসূলদের পরীক্ষা করা হয়, তারপর চূড়ান্ত বিজয় তাদেরই হয়ে থাকে।”- যাদুল মাআদ: ৩/২৫৩, মাজমুঊল ফাতাওয়া: ৩৫/৩৭৪-৩৭৬

    চতুর্থ জবাব:

    আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সাথে সাহায্যের ওয়াদা করেছেন, এই ওয়াদাটা ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ﴿٧﴾‏ وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ﴿٨﴾محمد/7-8

    অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, তাহলে আল্লাহ তাআলাও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। আর তোমাদের পা দৃঢ় করবেন। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে ধ্বংস। আল্লাহ তাআলা তাদের আমলগুলো ধ্বংস করে দিবেন।” [সূরা মুহাম্মদ (৪৭): ৭-৮]

    শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, “আর যে রাসূলের সাথে প্রেরিত অহীর অনুসরণ করে সে হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, দুনিয়া আখেরাতে সে আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হয়। যেমনটা আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

    إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ﴿٥١﴾

    অর্থ: “আর আমি অবশ্যই সাহায্য করবো আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে। তাদেরকে সাহায্য করবো দুনিয়ার জীবনে আর যেদিন সাক্ষ্যদাতারা উপস্থিত হবে।” [সূরা গাফির (৪০): ৫১]

    আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

    وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِينَ﴿١٧١﴾إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنصُورُونَ ﴿١٧٢﴾‏ وَإِنَّ جُندَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ ﴿١٧٣

    অর্থ: “আর আমার রাসূলদের জন্য এ বিষয়টি অবধারিত হয়ে গেছে যে, নিশ্চই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। আর আমার বাহিনী অবশ্যই বিজয়ী হবে।” [সূরা সাফফাত (৩৭): ১৭১-১৭৩] -মাজমুউল ফাতাওয়া লি ইবনি তাইমিয়া, ৩৫/৩৭৪

    ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, “সাহায্য এবং পরিপূর্ণ সহযোগিতা শুধুই কামেল ঈমানদারদের জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

    إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ﴿٥١﴾

    অর্থ: “আর আমি অবশ্যই সাহায্য করবো আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে। তাদেরকে সাহায্য করবো দুনিয়ার জীবনে আর যেদিন সাক্ষ্যদাতারা উপস্থিত হবে।” [সূরা গাফির (৪০): ৫১]

    আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

    فَأَيَّدْنَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَىٰ عَدُوِّهِمْ فَأَصْبَحُوا ظَاهِرِينَ﴿١٤﴾‏

    অর্থ: “অতঃপর আমি সাহায্য করলাম মুমিনদেরকে তাদের দুশমনদের বিরুদ্ধে; ফলে তারা বিজয়ী হয়ে গেল।” [সূরা সফ(৬১) : ১৪]

    সুতরাং যার ঈমান যতটুকু কমবে, তার প্রতি আল্লাহর সাহায্যও ততটুকু কমবে। এ কারণেই বান্দা যদি কোন বিপদে আক্রান্ত হয়; তার জীবনে, কিংবা সম্পদে, কিংবা শত্রুর মাধ্যমে, তাহলে এই বিপদ তার গুনাহের কারণেই এসে থাকে। হয়তো কোন ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার কারণে। অথবা কোন হারামে লিপ্ত হওয়ার কারণে। যার মাধ্যমে তার ঈমান দুর্বল হয়ে গিয়েছে।
    এর মাধ্যমে এই সংশয়টিও দূর হয়ে যায়; যা অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী সম্পর্কে বলে থাকে যে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

    وَلَن يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا﴿١٤١﴾‏

    অর্থ: “কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না।” [সূরা নিসা (৪): ১৪১]
    অথচ অনেক সময় আমরা দেখি যে, কাফেররা মুমিনদের উপর বিজয় লাভ করছে?

    এই প্রশ্নের জবাবে কেউ কেউ বলে থাকেন যে, এই আয়াত আখেরাতের সাথে সম্পৃক্ত। আখেরাতে আল্লাহ তাআলা কাফেরদেরকে মুমিনদের উপর বিজয় দিবেন না। আবার কেউ কেউ বলেন, এটা দলীলের সাথে সম্পৃক্ত। দলীলগতভাবে কাফেররা মুমিনদের উপর কখনো বিজয়ী হতে পারবে না।

    অথচ প্রকৃত কথা হলো: এই আয়াত এবং এই জাতীয় অন্যান্য আয়াত, এগুলোর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- কামেল ঈমানদারদেরকে সাহায্য করা হবে। সুতরাং যখন ঈমান দুর্বল হয়ে যাবে, তখন ঈমানের দুর্বলতা অনুযায়ী সাহায্যও কমে যাবে। যে পরিমাণ আল্লাহর আনুগত্য তারা ছেড়ে দেবে, সেই পরিমাণ তাদের থেকে সাহায্য তুলে নেওয়া হবে।
    সুতরাং মুমিন যদি ঈমানের জাহেরী বাতেনী হাকীকত এবং তার দাবিসমূহ পূর্ণ করে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর কাছে অনেক সম্মানিত অনেক দামি, আল্লাহ তাআলার সাহায্যের উপযুক্ত এবং কাফেরের আক্রমণ থেকে নিরাপদ। আল্লাহ তাআলা বলেন –

    فَلَا تَهِنُوا وَتَدْعُوا إِلَى السَّلْمِ وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَن يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ﴿٣٥﴾

    অর্থ: “আর তোমরা হীনমন্য হয়ো না এবং সন্ধির দিকে আহ্বান করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি তোমাদের আমলকে নষ্ট করবেন না।” [সূরা মুহাম্মদ (৪৭): ৩৫]

    এটা হল আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মুমিনদের দায়িত্ব গ্রহণ। আর এর ভিত্তি হল ঈমান এবং আমলের উপরে‌। যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলার বাহিনীসমূহের মধ্য থেকে একটি শক্তিশালী বাহিনী। আল্লাহ তাআলা ঈমান এবং আমলের ভিত্তিতে তাদেরকে সুরক্ষিত রাখেন। এবং এই আমলের পর আল্লাহ তাদেরকে ছেড়ে দেন না এবং তাদের আমলগুলোকে অর্থহীন বানিয়ে দেন না। যেমনটা কাফের এবং মুনাফিকদের আমলের সাথে করে থাকেন। কারণ তাদের আমলগুলো তো কোনটাই আল্লাহর জন্য নয়। তাই আল্লাহ তাআলা তাদের আমলগুলোকে ব্যর্থ ও অর্থহীন বানিয়ে দেন। -এগাছাতুল্লুহফান: ২/৯২৬-৯২৮

    আরেকটি বিষয় সামনে রাখতে হবে তা হলো, আল্লাহ তাআলার সাহায্য সর্বদা যে কাফেরদের উপর বাহ্যিক বিজয় দ্বারাই প্রকাশিত হবে তা নয়। যুদ্ধের ময়দানে শত্রুরা পরাজিত হবে, আর মুমিনরা বিজয়ী হবে, আল্লাহ তাআলার সাহায্য শুধু এতটুকুর সাথে সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা এর চেয়েও ব্যাপক। বাহ্যিক বিজয় অর্জন, এটি তো একটি সুরত মাত্র। আল্লাহর সাহায্যের রয়েছে অনেক সূরত, অনেক ধরন, অনেক প্রকৃতি।

    বস্তুত সবচেয়ে বড় সাহায্য হলো, আল্লাহ তাআলার দ্বীনের উপরে অটল থাকতে পারা। যেমন আল্লাহ তাআলা আসহাবুল উখদূদের ঘটনায় উল্লেখ করেছেন। যেখানে তাদের সকলকেই আগুনের গর্তে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের একজনও বাঁচতে পারেনি। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন-

    إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيرُ﴿١١﴾

    অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে ঝর্ণা ধারা। এটা একটি মহাসাফল্য।” [সূরা বুরুজ (৮৫): ১১]

    আল্লাহ তাআলার ভাষ্য অনুযায়ী তারা মহা সাফল্য লাভ করেছে। অথচ তাদের মধ্য থেকে একজন ব্যক্তিও বেঁচে থাকতে পারেনি। তাহলে তাদের সফলতাটা কী? মূলত সফলতাটা হলো, তাদের ইসতেকামাত। তারা সবাই তাওহীদের উপর শাহাদাত বরণ করেছে। এটাই হল আল্লাহ তাআলার সাহায্যের সর্বোচ্চ দিক।

    আল্লাহ তাআলার সাহায্যের আরেকটি দিক হল, আল্লাহ তাআলার সেই মানহাজ প্রতিষ্ঠিত থাকা, যার উপর ভিত্তি করে তাওহীদবাদীরা জীবন যাপন করে। এমনকি যদি তার জন্য অসংখ্য মানুষকে শহীদ হয়ে যেতে হয়। অসংখ্য মানুষকে কারাবরণ করতে হয়। কত মহামনীষী এমন আছে যে, তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে তাঁর আকীদা এবং দাওয়াতকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন যে, তিনি যদি ১০০০ বছর বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই দীর্ঘ সময়ের মেহনতে তাঁর আকীদা এবং দাওয়াত এভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন না।
    এক্ষেত্রে আমরা আসহাবুল উখদূদের সেই বালকের ঘটনা স্মরণ করতে পারি। যাকে তৎকালীন মুশরিক বাদশা বিভিন্ন পন্থায় হত্যা করতে চেয়েছে। যেন ঈমানের মশাল ছড়িয়ে না যায়। কিন্তু সে কোনভাবেই সক্ষম হয়নি। সফল হতে পারেনি।

    শেষ পর্যন্ত বালক তাকে বলে, তুমি আমাকে কোনোভাবেই হত্যা করতে পারবে না। তবে যদি হত্যা করতে চাও, তাহলে আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি পদ্ধতি।
    মুশরিক বাদশা বলল, কি সেটা?
    বালক বলল, তুমি একটি বিশাল ময়দানে দেশের সকল মানুষকে একত্রিত করবে এবং সবার সম্মুখে আমাকে শূলে চড়াবে। এরপর আমার তীরদান থেকে একটি তীর নেবে। এরপর ধনুকের মধ্যে তীরটি স্থাপন করবে। তারপর বলবে, বিসমিল্লাহি রাব্বি হাজাল গোলাম অর্থাৎ ‘আমি এই এই বালকের রব, আল্লাহর নামে শুরু করছি’ একথা বলে তুমি আমার দিকে তীর ছুঁড়বে। যদি এভাবে করো, তাহলে তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে।
    নির্বোধ শাসক তাঁর কথামতো এই কাজগুলো আঞ্জাম দিল। বালক মারা গেল। আর এই বালকের মৃত্যুতে কি হকের (ঈমানের) দাওয়াতের মৃত্য ঘটেছে? (না, বরং বেড়েছে) আর এখানে কে সাহায্য করলো?! (অবশ্যই আল্লাহ তাআলা)
    উপস্থিত সকল মানুষ এই ঘটনায় বুঝতে পারল যে, বালক যেই রবের দাওয়াত দিত, তিনিই সত্য রব। এরপর সবাই এক বাক্যে বলে উঠল-

    آمَنَّا بِرَبِّ الْغُلَامِ، آمَنَّا بِرَبِّ الْغُلَامِ، آمَنَّا بِرَبِّ الْغُلَامِ
    আমরা এই বালকের রবের উপর ঈমান আনলাম।
    আমরা এই বালকের রবের উপর ঈমান আনলাম।
    আমরা এই বালকের রবের উপর ঈমান আনলাম।



    বাদশা এবং তার অনুসারীরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকলো। এতদিন তারা যেই জিনিসের আশঙ্কা করছিল, আজকে সামগ্রিকভাবে সেটাই বাস্তবায়িত হয়ে গেল। দেশের সকল মানুষ এক ময়দানে এক মুহূর্তে শিরিক থেকে বের হয়ে ঈমানদার হয়ে গেল। -সহীহ মুসলিম: ৩০০৫

    পঞ্চম জবাব:

    আল্লাহ তাআলার নবীদের ব্যাপারে আল্লাহর সুন্নত হল যে, শেষ পরিণতিতে তারাই চূড়ান্তরূপে বিজয়ী হবেআল্লাহ তাআলা কুরআনের মধ্যে বলেন –

    وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَىٰ ﴿١٣٢﴾‏

    অর্থ: “আর শেষ পরিণতি মুত্তাকিদের জন্যই।” [সূরা ত্বহা (২০):১৩২]

    অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

    فَاصْبِرْ ۖ إِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِينَ﴿٤٩﴾

    অর্থ: “অতঃপর আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই শেষ পরিণাম মুত্তাকীনদের জন্যই।” [সূরা হুদ (১১):৪৯]

    এই জাতীয় আরো অনেক আয়াতে এই বিষয়টিকে সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সুতরাং অবশ্যই এটা বাস্তবায়িত হবে, ইনশাআল্লাহ। তবে তার সুনিশ্চিত সময় একমাত্র আল্লাহই জানেন।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক হাদীসে আল্লাহ তাআলার এই সুসংবাদের (সাহায্য ও বিজয়ের) কথা উম্মতের সামনে ব্যক্ত করে গেছেন। মুমিনরা তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে শেষ পরিণতিতে বিজয়ী হবেই। (ইনশাআল্লাহ)

    তার মধ্যে কিছু হাদীস নিচে পেশ করা হলো-

    হযরত উবাই ইবনে কা'ব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

    بَشِّرْ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِالسَّنَاءِ وَالرِّفْعَةِ وَالتَّمْكِينِ فِي الْأَرْضِ فَمَنْ عَمِلَ عَمَلَ الْآخِرَةِ لِلدُّنْيَا لَمْ يَكُنْ لَهُ فِي الْآخِرَةِ نَصِيبٌ

    অর্থ: “তোমরা এই উম্মতকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তারা সমুন্নত হবে, মর্যাদাবান হবে এবং পৃথিবীতে তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং কেউ যদি দুনিয়ার উদ্দেশ্যে আখেরাতের কাজ আঞ্জাম দেয়, আখেরাতে সে কিছুই পাবে না।” -মুসনাদে আহমদ: ৫/১৩৪, হাকেম: ৪/৩১১

    হাদীসের মান: সহীহ। শাইখ আলবানী রহিমাহুল্লাহও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

    হযরত তামিম দারী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,

    لَيَبْلُغَنَّ هَذَا الْأَمْرُ مَا بَلَغَ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَلَا يَتْرُكُ اللَّهُ بَيْتَ مَدَرٍ وَلَا وَبَرٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللَّهُ هَذَا الدِّينَ بِعِزِّ عَزِيزٍ أَوْ بِذُلِّ ذَلِيلٍ عِزًّا يُعِزُّ اللَّهُ بِهِ الْإِسْلَامَ وَذُلًّا يُذِلُّ اللَّهُ بِهِ الْكُفْرَ

    অর্থ: “পৃথিবীর যেখানেই দিন রাত হয়, সেখান পর্যন্ত এই দ্বীন পৌঁছে যাবে। আল্লাহ তাআলা কাঁচা-পাকা কোন ঘর বাকি রাখবেন না। সবখানেই এই দ্বীন প্রবেশ করাবেন। হয় সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানের সাথে, অথবা অপদস্থ ব্যক্তির অপদস্থতার সাথে।”
    হযরত তামিম দারী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন- “আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ভবিষ্যৎবাণীটি আমার পরিবারের মাঝেই বাস্তব দেখেছি। আমার বংশের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারা ইজ্জত-সম্মান ও প্রভূত কল্যাণের অধিকারী হয়েছে। আর তাদের মধ্যে যারা কুফরি অবলম্বন করেছে, লাঞ্ছনা-অপদস্থতা এবং করের বোঝা তাদের উপর চেপে বসেছে।” -মুসনাদে আহমদ: ৪/১০৩, সিলসিলাতুস সহীহাহ:

    হাদীসের মান: সহীহ। শাইখ আলবানী রহিমাহুল্লাহও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

    হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

    إِنَّ اللهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ، فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا، وَإِنَّ أُمَّتِي سَيَبْلُغُ مُلْكُهَا مَا زُوِيَ لِي مِنْهَا، وَأُعْطِيتُ الْكَنْزَيْنِ الْأَحْمَرَ وَالْأَبْيَضَ، وَإِنِّي سَأَلْتُ رَبِّي لِأُمَّتِي أَنْ لَا يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ عَامَّةٍ، وَأَنْ لَا يُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ، فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ، وَإِنَّ رَبِّي قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي إِذَا قَضَيْتُ قَضَاءً فَإِنَّهُ لَا يُرَدُّ، وَإِنِّي أَعْطَيْتُكَ لِأُمَّتِكَ أَنْ لَا أُهْلِكَهُمْ بِسَنَةٍ عَامَّةٍ، وَأَنْ لَا أُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ، يَسْتَبِيحُ بَيْضَتَهُمْ، وَلَوِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِمْ مَنْ بِأَقْطَارِهَا - أَوْ قَالَ مَنْ بَيْنَ أَقْطَارِهَا - حَتَّى يَكُونَ بَعْضُهُمْ يُهْلِكُ بَعْضًا، وَيَسْبِي بَعْضُهُمْ بَعْضًا

    অর্থ: “আল্লাহ তাআলা পূর্ব থেকে পশ্চিম পুরো পৃথিবী আমার সামনে তুলে ধরেছেন। আমার উম্মতের রাজত্ব তার শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। আমাকে লাল এবং সাদা দুইটি ধনভাণ্ডার দান করা হয়েছে। আমি আমার রবের কাছে দোয়া করেছি, তিনি যেন আমার উম্মতকে দুর্ভিক্ষ দিয়ে সমূলে ধ্বংস করে না দেন। এবং তাদের উপর তাদের বাহিরের কোন দুশমনকে এমনভাবে চাপিয়ে না দেন, যে তাদের সমূলে নিঃশেষ করে ফেলবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুহাম্মদ! আমি যখন কোন বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা করে ফেলি, তখন তা আর পরিবর্তন করা হয় না। আপনি আপনার উম্মতের ব্যাপারে চেয়েছেন, আমি যেন তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দিয়ে ধ্বংস না করি এবং আমি যেন তাদের উপর তাদের বাহিরের দুশমনকে চাপিয়ে না দেই, যে তাদের সমূলে উৎপাটন করবে। সুতরাং তাদের উপর যদি সমগ্র বিশ্বের মানুষ একত্রিত হয়ে হামলা চালায়, তাহলে তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা পরস্পর পরস্পরকে ধ্বংস না করে এবং পরস্পর পরস্পরকে বন্দি না করে।” – সহীহ মুসলিম: ২৮৮৯

    হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

    لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ، فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى يَخْتَبِئَ الْيَهُودِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْحَجَرِ وَالشَّجَرِ، فَيَقُولُ الْحَجَرُ أَوِ الشَّجَرُ: يَا مُسْلِمُ يَا عَبْدَ اللهِ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي، فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ، إِلَّا الْغَرْقَدَ، فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ الْيَهُودِ

    অর্থ: “কেয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত কায়েম হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমরা ইহুদিদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়। মুসলমানরা তাদেরকে হত্যা করতে থাকবে। ইয়াহুদীরা গাছ এবং পাথরের আড়ালে লুকাবে। এরপর পাথর এবং গাছ বলে দিবে, হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! এগিয়ে আসো এবং তাকে হত্যা করো। শুধু গারকাদ গাছ বাদে। গারকাদ গাছ এটা বলবে না। কারণ সেটা হল ইয়াহুদীদের গাছ।” -সহীহ বুখারী: ২৯২৫, মুসলিম: ২৯২২

    যাইহোক, আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদের সাথে একটি আম ওয়াদা করেছেন, নুসরাতের ওয়াদা। এই পৃথিবীতে মুসলিমরা বিজয়ী হবে তাদের শত্রুদের উপরে। আর আখেরাতেও বিজয়ী হবে, যখন তারা তাদের রবের সামনে দন্ডায়মান হবে; তখন তিনি তাদেরকে মর্যাদা দান করবেন এবং তাদের দুশমনদেরকে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করবেন।
    আল্লাহ তাআলা বলেন-

    إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ﴿٥١﴾ وْمَ لَا يَنفَعُ الظَّالِمِينَ مَعْذِرَتُهُمْ ۖ وَلَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ ﴿٥٢﴾

    অর্থ: “আর আমি অবশ্যই সাহায্য করবো আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে। তাদেরকে সাহায্য করবো দুনিয়ার জীবনে আর যেদিন সাক্ষ্যদাতারা উপস্থিত হবে। যেদিন জালেমদের কোনই কাজে আসবে না তাদের ওজর আপত্তি। তাদের জন্য রয়েছে লানত এবং নিকৃষ্ট আবাসস্থল।” [সূরা গাফির (৪০): ৫১-৫২]

    শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন–
    “আল্লাহ তাআলা খাতামুন্নাবীঈন মুহাম্মদে আরবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে এই দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন। তিনি এই উম্মতের কাছে তাঁর দ্বীনকে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করে গেছেন এবং পূর্ণাঙ্গরূপে পৌঁছে দিয়ে গেছেন। সুতরাং তারপরে তাঁর উম্মতের আর এমন কারো প্রয়োজন নেই, যে এসে এই দ্বীনের কোন কিছুর মাঝে পরিবর্তন আনতে হবে। তাদের প্রয়োজন শুধু সেই দ্বীন বুঝা, যা তিনি তাদের মাঝে রেখে গেছেন। তাঁর উম্মত কখনোই সম্মিলিতভাবে গোমরাহির উপর ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না। কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর উম্মতের মাঝে একটি দল সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তিনি তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়েত দিয়ে। সত্য দ্বীন দিয়ে। যাতে তিনি তা সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করতে পারেন। তিনি তার দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে, অস্ত্র ও যুদ্ধের মাধ্যমে। কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর উম্মত এই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” -আলজাওয়াবুস সহীহ: ১/৩৬২

    সর্বশেষ কথা হলো: আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন –

    وَقُل لِّلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ اعْمَلُوا عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنَّا عَامِلُونَ﴿١٢١﴾‏ وَانتَظِرُوا إِنَّا مُنتَظِرُونَ﴿١٢٢﴾‏ وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الْأَمْرُ كُلُّهُ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ ۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ﴿١٢٣﴾

    অর্থ: “আর যারা ঈমান আনে না তাদেরকে বলে দিন, তোমরা তোমাদের জায়গায় তোমাদের কাজ করতে থাকো। আমরাও আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। তোমরা অপেক্ষা করতে থাকো, আমরাও অপেক্ষায় আছি। আসমান জমিনের অদৃশ্য জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। সবকিছু তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। সুতরাং তাঁরই ইবাদত করুন, তাঁর উপর ভরসা করুন। তারা যা কিছু করছে আপনার রব কোন কিছু সম্পর্কে বেখবর নন।” [সূরা হুদ (১১): ১২১-১২৩]

    *****

    আল্লাহ তাআলা এই লেখার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে জাযায়ে খাইর দান করুন। আমীন

    মূল সোর্স: https://islamqa.info/ar/answers/4173...83%D9%87%D9%85
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

  • #2
    হযরত উবাই ইবনে কা'ব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

    بَشِّرْ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِالسَّنَاءِ وَالرِّفْعَةِ وَالتَّمْكِينِ فِي الْأَرْضِ فَمَنْ عَمِلَ عَمَلَ الْآخِرَةِ لِلدُّنْيَا لَمْ يَكُنْ لَهُ فِي الْآخِرَةِ نَصِيبٌ

    অর্থ: “তোমরা এই উম্মতকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তারা সমুন্নত হবে, মর্যাদাবান হবে এবং পৃথিবীতে তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবেসুতরাং কেউ যদি দুনিয়ার উদ্দেশ্যে আখেরাতের কাজ আঞ্জাম দেয়, আখেরাতে সে কিছুই পাবে না।” -মুসনাদে আহমদ: ৫/১৩৪, হাকেম: ৪/৩১১
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      আল্লাহর ওয়াদা পরিপূর্ণ সঠিক। মুমিনরা কোন যুদ্ধেই পরাজিত হবার নয়। যতক্ষন পর্যন্ত এই উম্মাহ নিজের পরাজয়ের কারণ নিজেরাই না হয়। যেটা আমরা ওহুদের যুদ্ধে এবং হুনাইনের যুদ্ধে দেখতে পেয়েছি। সেই যুদ্ধে হেরে যাওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেই তিরস্কার করেছেন। এবং তিনি বলেছেন এই হেরে যাওয়ার পিছনে দায় ছিল আমাদের। সুতরাং আমরা নিজেরাই যদি ইচ্ছে করে হেরে যাই। তাহলে আল্লাহ তায়ালা জোর করে আমাদেরকে বিজয় দিয়ে যাবেন নাকি?
      পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

      Comment


      • #4
        Originally posted by mahmud123 View Post
        আল্লাহর ওয়াদা পরিপূর্ণ সঠিক। মুমিনরা কোন যুদ্ধেই পরাজিত হবার নয়। যতক্ষন পর্যন্ত এই উম্মাহ নিজের পরাজয়ের কারণ নিজেরাই না হয়। যেটা আমরা ওহুদের যুদ্ধে এবং হুনাইনের যুদ্ধে দেখতে পেয়েছি। সেই যুদ্ধে হেরে যাওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেই তিরস্কার করেছেন। এবং তিনি বলেছেন এই হেরে যাওয়ার পিছনে দায় ছিল আমাদের। সুতরাং আমরা নিজেরাই যদি ইচ্ছে করে হেরে যাই। তাহলে আল্লাহ তায়ালা জোর করে আমাদেরকে বিজয় দিয়ে যাবেন নাকি?
        ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِّعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۙ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ‎﴿٥٣﴾‏
        অর্থাৎ তার কারণ এই যে, আল্লাহ কখনও পরিবর্তন করেন না, সে সব নেয়ামত, যা তিনি কোন জাতিকে দান করেছিলেন, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেই পরিবর্তিত করে দেয় নিজের জন্য নির্ধারিত বিষয়। বস্তুতঃ আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। -সূরা আনফাল,(53)
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment


        • #5
          فَاصْبِرْ ۖ إِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِينَ‎
          অর্থ: “অতঃপর আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই শেষ পরিণাম মুত্তাকীনদের জন্যই।” [সূরা হুদ (১১):৪৯]

          আল্লাহ তাআলা আমাদের মুত্তাকীনদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমীন

          Comment


          • #6
            Originally posted by Sabbir Ahmed View Post

            আল্লাহ তাআলা আমাদের মুত্তাকীনদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমীন
            ছুম্মা আমীন। জাযাকাল্লাহু খাইরান ভাই
            ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

            Comment

            Working...
            X