সরকারি আইন মানা কি জরুরী?
বিটকয়েন নিয়ে মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম সাহেবের ‘বিটকয়েন — পরিচিতি ও শরঈ পর্যালোচনা’ নামক একটি প্রবন্ধ সপ্তাহ খানেক হলো ফোরামে পোস্ট হয়েছে। প্রবন্ধটি তাহকিকি। আমি তাহকিক নিয়ে কোনো আপত্তি করছি না। তবে প্রবন্ধের শেষে তিনি যে কথাটি বলেছেন, সেটাতে একটু আপত্তি আছে। তিনি বলেন,
“আলোচিত বিটকয়েনে-অন্তত আমাদের দেশে-দ্বিতীয় গুণটি নেই। কারণ এটি ব্যাপকভাবে গৃহিত নয়। সরকারীভাবেও অনুমোদিত নয়। সুতরাং একে আমাদের দেশে শরঈ ও অর্থনীতি কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই কারেন্সি বা মুদ্রা বলা যায় না।
বিশেষত সরকারীভাবে এর লেনদেন আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। শরীয়তের মাসয়ালা হল, বৈধ বিষয়ে রাষ্ট্রের আনুগত্য করা ওয়াজিব। এর জন্য রাষ্ট্র ইসলামী হওয়া জরুরী নয়। এছাড়া দেশের প্রতিটি নাগরিকই বক্তব্য বা কর্মে একথার স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, সে বৈধ বিষয়ে সরকারের আইন মানবে।
অতএব উপরোক্ত দুই কারণে, যতক্ষণ অবৈধ কাজে বাধ্য না করা হবে ততক্ষণ সরকারী আইন মানা জরুরী।”
বিশেষত সরকারীভাবে এর লেনদেন আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। শরীয়তের মাসয়ালা হল, বৈধ বিষয়ে রাষ্ট্রের আনুগত্য করা ওয়াজিব। এর জন্য রাষ্ট্র ইসলামী হওয়া জরুরী নয়। এছাড়া দেশের প্রতিটি নাগরিকই বক্তব্য বা কর্মে একথার স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, সে বৈধ বিষয়ে সরকারের আইন মানবে।
অতএব উপরোক্ত দুই কারণে, যতক্ষণ অবৈধ কাজে বাধ্য না করা হবে ততক্ষণ সরকারী আইন মানা জরুরী।”
আপত্তির বিষয় এ দু’টি কথা-
ক. শরীয়তের মাসয়ালা হল, বৈধ বিষয়ে রাষ্ট্রের আনুগত্য করা ওয়াজিব। এর জন্য রাষ্ট্র ইসলামী হওয়া জরুরী নয়।
খ. এছাড়া দেশের প্রতিটি নাগরিকই বক্তব্য বা কর্মে একথার স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, সে বৈধ বিষয়ে সরকারের আইন মানবে।
ক. শরীয়তের মাসয়ালা হল, বৈধ বিষয়ে রাষ্ট্রের আনুগত্য করা ওয়াজিব। এর জন্য রাষ্ট্র ইসলামী হওয়া জরুরী নয়।
খ. এছাড়া দেশের প্রতিটি নাগরিকই বক্তব্য বা কর্মে একথার স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, সে বৈধ বিষয়ে সরকারের আইন মানবে।
ক- বৈধ বিষয়ে রাষ্ট্রের আনুগত্য
বর্তমান তাগুত শাসকদের ব্যাপারে মুফতি সাহেবের কি ধারণা আমার জানা নেই। স্বাভাবিক হয়তো এমনটাই হবে যে, কাফের মনে করেন না। এ হিসেবেই হয়তো আনুগত্যের কথা বলেছেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
আর শরহুস সিয়ারের হাওয়ালা যেটা দিয়েছেন, সেটা মূলত মুসলিম বাহিনি জিহাদে বের হলে আমীরের আনুগত্যের ব্যাপারে। বর্তমান তাগুত শাসকদের ব্যাপারে না।
যাহোক, মুফতি সাহেবের বক্তব্যটা আম। মুমিন-কাফের সব ধরনের শাসক এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। দারুল ইসলাম-দারুল কুফর সব অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। মনে হচ্ছে, বিষয়টা বৈধ হলেই তাতে রাষ্ট্রের আনুগত্য ওয়াজিব। চাই তা দারুল হরবই হোক না কেন। শাসক কাফের বা মুরতাদ যাই হোক না কেন।
এমনটা হলে অবশ্যই তা ভুল। আল্লাহ তাআলা কাফেরের জান মাল হালাল করেছেন। হত্যা করা বৈধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয করেছেন। তার সাথে বন্ধুত্ব হারাম করেছেন। তার আনুগত্য নিষেধ করেছেন। মুসলিমদের উপর তার কোনো কর্তৃত্ব নেই। সে মুসলিমদের উলুল আমর হতে পারে না। এমনকি ইসলামী রাষ্ট্রের সামান্য কাতেবও হতে পারে না। এমনকি কাফের বাবা তার আপন মুসলিম সন্তানের অলি (অভিবাবক) পর্যন্ত হতে পারে না। তাহলে আনুগত্য বৈধ কিভাবে? এটি কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার খেলাফ কথা।
বেশির চেয়ে বেশি এটা হতে পারে যে, যখন তারা মুসলিমদের উপর চেপে বসেছে, তখন মুসলিমরা নিজেদের জান মাল ও ইজ্জত আব্রু বাঁচানোর স্বার্থে তাকিয়া অবলম্বন করতে পারে, যেমনটা আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন। অর্থাৎ একান্ত প্রয়োজন মুহূর্তে তাদের সাথে মৌখিক ও জাহিরি ভাল আচরণ করতে পারে। কিন্তু আনুগত্যের কথা কোথাও নেই। বরং আনুগত্য হারাম করা হয়েছে কুরআনের অসংখ্য আয়াতে। এটি ইজমা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
খ- আনুগত্যের স্বীকারোক্তি
মুফতি সাহেব বলেছেন, ‘এছাড়া দেশের প্রতিটি নাগরিকই বক্তব্য বা কর্মে একথার স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, সে বৈধ বিষয়ে সরকারের আইন মানবে’।
প্রথমত: আনুগত্য সব সময় বৈধ বিষয়েই হয়ে থাকে। নাজায়েয বিষয়ে কখনও আনুগত্য হয় না। স্বয়ং ইমামুল মুসলিমিনের আনুগত্যের নির্দেশ যেখানে এসেছে, সেখানে বৈধ বিষয়ে আনুগত্যের কথাই এসেছে। নাজায়েয বিষয়ে আনুগত্য নিষেধ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: আনুগত্যের স্বীকারোক্তির প্রয়োজন পড়লো কেন? স্বীকারোক্তি না দিলে কি আনুগত্য করতে হতো? না হতো না?
ইমামুল মুসলিমিনের আনুগত্য তো কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। এমনকি জালেম হলেও জায়েয বিষয়ে তার আনুগত্য জরুরী। জুলুমের কারণে আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেয়া যাবে না। এ আনুগত্য ব্যক্তির স্বীকারোক্তির উপর নির্ভর করে না। এ আনুগত্য শরীয়ত নির্ধারিত। ব্যক্তি চাইলেও, না চাইলেও এ আনুগত্য করতে হবে। তাহলে এসব শাসকের আনুগত্যের জন্য স্বীকারোক্তির প্রয়োজন পড়লো কেন? তাহলে কি মুফতি সাহেব বলতে চাচ্ছেন, এরা আসলে শরয়ী শাসক নয়, তাই স্বীকারোক্তির প্রয়োজন পড়লো?
যদি মুফতি সাহেব মেনে নেন, এরা শরয়ী শাসক নয়, তাহলে তারা কি ধরনের শাসক? শরয়ী না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জরুরী। আনুগত্য কেন করতে হবে?
তৃতীয়ত: অনেকেই কথাটা বলে থাকেন যে, বর্তমান শাসকদের সাথে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না।
প্রশ্ন হলো, চুক্তি তো পরস্পর বিপরীত দুই পক্ষের মাঝে হয়। কাফের ও মুমিনদের মাঝে চুক্তি হয়। বাগি ও আহলে আদলের মাঝে চুক্তি হয়। এখন এ দেশের আলেম উলামা ও জনগণ যদি চুক্তির এক পক্ষ হন, তাহলে অপর পক্ষ সরকার। এখন সরকারের অবস্থান কি?
- সরকার কি কাফের? আমাদের উপর চেপে বসেছে বলে আমরা তার সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছি- এমন?
- না’কি সরকারের সাথে আমাদের চুক্তিটা বাগি ও আহলে আদলের মাঝে যে চুক্তি হয় সেটা?
তাহলে প্রশ্ন- বাগি কারা আর আহলে আদল কারা?
এদেশের আলেম উলামা ও আম মুসলিম জনসাধারণ বাগি? না’কি সরকার বাগি?
যেটাই ধরবেন সমস্যা। কারণ, আহলে আদল বলা হয় ইমামুল মুসলিমিনের দলকে, যারা আগে থেকে ক্ষমতায় আছে, কিছু লোক তাদের বিরুদ্ধে বাগাওয়াত করেছে। ইমাম তাদের সাথে মাসলাহাতের বিবেচনায় সাময়িক চুক্তি করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ অর্থে এদেশের আলেম উলামা ও মুসলিম জনসাধারণকে আহলে আদল ধরা যাচ্ছে না। কারণ, এটি ধরতে হলে প্রথমত সরকারকে বাগি ধরতে হবে। তারা কি স্বীকার করবেন যে, সরকার বাগি?
দ্বিতীয়ত তারা কোনো সময় ক্ষমতায় ছিলেন না। সরকার তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ক্ষমতা দখল করেছে এমনও না। অধিকন্তু এখন তারা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন না। তাদের আলাদা কোনো ইমাম নেই।
যখন সরকারকে বাগি ধরছেন না, নিজেরা আহলে আদল হতে পারছেন না, তাহলে এর বিপরীতটাই রয়ে গেল। অর্থাৎ সরকার আহলে আদল আর আলেম উলামা ও দেশের জনগণ বাগি। তারা কি এটা স্বীকার করবেন?
যখন চুক্তিটা বাগি-আদলের মাঝে হচ্ছে না, তখন মুমিন-কাফেরই ধরতে হবে। এর অর্থ, সরকার কাফের, আম জনতা নিজেদের জান মালের নিরাপত্তার জন্য চুক্তি করেছে। বলি, তারা কি এটা মানেন?
চতুর্থত: চুক্তি কে করলো? কখন করলো?
চুক্তির জন্য দু’টি পক্ষ লাগে। এক পক্ষ তো সরকার। অপর পক্ষ বলা হচ্ছে দেশের জনগণ। কিন্তু এ চুক্তি কখন হলো? জনগণের পক্ষ থেকে কারা কারা সই করেছে? চুক্তির দফাগুলো কি কি? করে থাকলে সে চুক্তি কি বহাল আছে না ভেঙে গেছে?
যখন কোনো কিছুরই হদিস নেই, তখন চুক্তি একটা ফাঁপা বেলুন ছাড়া কিছুই নয়।
অধিকন্তু চুক্তির কথাটা আসলে পক্ষ বিপক্ষের সেই প্রশ্নটা চলে আসবে, তাহলে কি সরকারপক্ষ কাফের, যার কারণে আমরা চুক্তি করতে বাধ্য হচ্ছি? নইলে চুক্তির দরকার কি?
পঞ্চমত: একের চুক্তি অন্যের উপর বর্তাবে কি?
মুসলিমরা যদি রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী হয়, আর ইমামুল মুসলিমিন রাষ্ট্রীয়ভাবে চুক্তি করেন, তাহলে তার অধীনস্থ সকলকে সে চুক্তি মানতে হবে। অটোমেটিক মানার বিধান চলে আসবে। এ কথা বলা যাবে না যে, ইমাম চুক্তি করেছেন ইমাম মেনে চলুন, আমরা মানবো না। এ কথা বলার সুযোগ নেই। অধীনস্থ সকলকেই মানতে হবে।
এমনিভাবে এমন রাষ্ট্রের যেকোনো একজন মুসলিম কোনো কাফের রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি করে ফেললে ঐ মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিটি মুসলিমকে সে চুক্তি মেনে চলতে হবে। এ কথা বলা যাবে না যে, চুক্তি করেছে সে, আমরা কেনো মানবো? এ কথা বলার সুযোগ নেই। সকলকে মানতে হবে।
হাঁ, চুক্তি যদি মাসলাহাতের খেলাফ হয়, তাহলে ইমামুল মুসলিমিন ঘোষণা দিয়ে তা ভেঙে দিতে পারেন এবং ঐ মুসলিমকে প্রয়োজনীয় শাস্তিও দিতে পারেন; কেন সে অনুমতি ছাড়া চুক্তি করলো? যতক্ষণ ইমাম ঘোষণা দিয়ে চুক্তি না ভাঙছেন, ততক্ষণ সকলকে তা মেনে চলতে হবে। কারও জন্য চুক্তির ব্যতিক্রম করা জায়েয হবে না।
এ বিধান হল যখন, চুক্তিকারী মুসলিম কাহের হয়। অর্থাৎ ইমামুল মুসলিমিনের অধীনে থেকে ভিন্ন কাফের রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি করে। পক্ষান্তরে মুসলিম যদি কাহের না হয়ে মাকহুর হয়, তাহলে তার চুক্তি শুধু তার নিজের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে, অন্যের উপর বর্তাবে না। যেমন,
ক. কোনো মুসলিম আমান নিয়ে ব্যবসায়ের জন্য দারুল হরবে গমন করেছে। এখন সে কাফেরদের অধীন। এখন যদি সে দারুল হরবের সাথে কোনো চুক্তি করে, তাহলে এ চুক্তি তার নিজের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে, অন্যের উপর বর্তাবে না। কারণ, সে এখন অন্যের অধীন। মুসলিমদের ক্ষমতায় শক্তিধর নয়। কাফেররা তাকে ভয় করে না। বরং সে নিজেই কাফেরদের ভয় করে। তার চুক্তি তখন শুধু তার নিজের জান মালের স্বার্থে হচ্ছে বলে বিবেচিত। এ চুক্তি অন্যের উপর বর্তাবে না। এজন্য এমন ব্যক্তি দারুল হরবে থাকাবস্থায়ও মুসলিমরা ইচ্ছে করলে দারুল হরবে আক্রমণ চালাতে পারে। পক্ষান্তরে ইমামুল মুসলিমিন যদি চুক্তি করতেন –নিজেই করুন বা কাউকে পাঠিয়েই করুন- তাহলে তার অধীনস্থ কোনো মুসলিমের জন্য দারুল হরবে আক্রমণ করা জায়েয হতো না।
খ. কোনো মুসলিম কাফেরদের হাতে বন্দী হলে তার চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সে কাহের নয়, মাকহুর। তার চুক্তি তার নিজের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে, অন্যের উপর বর্তাবে না। তার চুক্তি সত্বেও মুসলিমরা দারুল হরবে আক্রমণ করতে পারবে। নইলে তো ভালই হতো! কাফেররা কোনো মুসলিমকে ধরে জোরপূর্বক তার সাথে চুক্তি করে নিতো আর অমনি সকল মুসলমানের জন্য ঐ দারুল হরবে আক্রমণ হারাম হয়ে যেতো। এমন বোকার সিদ্ধান্ত শরীয়ত দেয় না। হাঁ, ঐ বন্দীর জন্য তখন ঐ দারুল হরবের কোনো কাফেরের উপর আক্রমণ করা জায়েয হবে না। এটা তার নিজের চুক্তির কারণে। অন্য সকল মুসলিমের জন্য জায়েয। তার চুক্তি অন্যদের উপর বর্তাবে না।
দেখলাম, মুসলিম যখন ইমামুল মুসলিমিনের অধীনে থাকে এবং কাহের অবস্থায় থাকে, যখন কাফেররা তাকে ভয় পায়, এ সময় চুক্তি করলে তার চুক্তি সকলে মানতে বাধ্য। পক্ষান্তরে সে যখন কাফেরের অধীনে, তখন তার চুক্তি কারও উপর বর্তাবে না, নিজ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে।
এখন প্রশ্ন, এ দেশের জনগণ কি কাহের না মাকহুর? পরিষ্কার যে, মাকহুর। তারা সরকারের অধীনে। নিজেদের কোনো রাষ্ট্রক্ষমতা নেই যে, ঐ রাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে চুক্তি করবে। যখন দশা এই, তখন যার যার চুক্তি তার নিজের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে, অন্যের উপর বর্তাবে না। অতএব, চুক্তি যদি কিছু মুসলিম করেও থাকে, তাহলে তা তাদের নিজেদের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। অন্য সকল মুসলিমের জন্য সরকারের জান মাল হালাল।
অধিকন্তু আমরা দেখেছি, চুক্তি একটা ফাঁপা বেলুন মাত্র। আসলে কোনো চুক্তি কেউ কোনো সময় করেনি। করলে নথিপত্র হাজির করা হোক যে, অমুক তারিখে অমুক অমুকে এই এই শর্তে এত দিনের জন্য চুক্তি করেছে।
তাছাড়া চুক্তির কথা আসলেই সে প্রসঙ্গটা চলে আসবে, তাহলে কি সরকারপক্ষ কাফের? যদি মুমিন হয় তাহলে চুক্তি কেন হবে? চুক্তির দরকার কেন পড়বে? মুমিন হলে তো শরীয়তের পক্ষ থেকেই আনুগত্য জরুরী হতো।
আসলে চুক্তির কথাটা সরকারের মাথায়ও কোনো দিন আসেনি। আমরাই ঘেঁটেঘুটে এই ঐ উজর বের করতে থাকি। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন।
যখন আনুগত্য নেই
যখন সরকারের আনুগত্যের কোনো মাসআলা নেই, প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো?
উত্তর: না। সরকারের আনুগত্য না থাকলেও আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য আছে। এখন আপনাকে দেখতে হবে আল্লাহ ও রাসূল কি বলেছেন। সেভাবে চলবেন। যেখানেই থাকুন শরীয়ত মতে চলতে হবে। মুসলিমের জান মাল শরীয়তে হারাম, যেখানেই থাকুক। অতএব, মুসলিমদের জান মালের কোনো ক্ষতি কোথাও করা যাবে না।
হাঁ, জিহাদি কাজের কারণে সরকার যদি কাউকে পেরেশান করে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। সেটা মুজাহিদরা নিজেরা করছে না। মুজাহিদরা তো মুসলিমদের জান মালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে চেষ্টা করে। যেখানে সামর্থ্য নেই, সেখানে তারা অপারগ। সেখানে সরকার যা করছে সেটা তাদের উপর বর্তাবে না। এতটুকু ক্ষতি অবশ্যই বরদাশত করতে হবে। নইলে জিহাদ করা যাবে না। জিহাদ মানেই তো জীবন দেয়া নেয়া। আরামে আরামে তো আর জিহাদ হয় না। তাতাররুসের মাসআলা এর খায়রে দলীল। অবশ্য মুসলিমদের জান মালের সবচে’ কম ক্ষতি হয় এমন তরিকাই মুজাহিদদের অবলম্বন করা চাই। আলহামদুলিল্লাহ আলকায়েদা এ নীতি মেনেই কাজ করে। এজন্য তাদের কাজের গতি ধীর। তা দেখে অনেকে মনে করেন, তারা কোনো কাজই করছেন না। আসলে ভিতরে ভিতরে তারা যে কতটুকু এগিয়ে গেছেন সেটার খবর অনেকের নেই। ওয়াল্লাহু তাআলা আ’লাম।
Comment