আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।শাইখ
আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ২য় পর্ব
=======================================
================
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।শাইখ
আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ২য় পর্ব
=======================================
================
প্রথম অনুচ্ছেদ: ইসলামে আল-ওয়ালা ওয়াল-বারার রোকনসমূহ
০১. কাফেরদের বন্ধুত্ব গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা:
মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
لَّا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَن تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ ﴿آلعمران: ٢٨﴾
“মু’মিনগন যেন অন্য মু’মিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।” (সূরা আলে-ইমরান: ২৮)
ইমাম ত্ববারী রহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
ومعنى ذلك لا تتخذوا أيها المؤمنون الكفار ظهراً وأنصاراً، توالونهم على دينهم، وتظاهرونهم على المسلمين من دون المؤمنين، وتدلونهم على عوراتهم، فإنه من يفعل ذلك فليس من الله في شيء، يعني بذلك فقد برىء من الله وبرىء الله منه بارتداده عن دينه ودخوله في الكفر
.
.
“এর অর্থ হচ্ছে, হে মু’মিনগণ! তোমরা কাফেরদেরকে সাহায্য ও সহায়তাকারীরূপে গ্রহণ করো না; এভাবে যে তোমরা মু’মিনদের ব্যতিরেকে তাদেরকে তাদের দ্বীনের ক্ষেত্রে ভালোবাসবে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহায্য করবে, মু’মিনদের দুর্বলতা তাদের নিকট প্রকাশ করবে। কেননা যে এ ধরনের কাজ করবে, সে আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত। অর্থাৎ উপরোক্ত কর্মের কারণে তার সাথে আল্লাহ তা‘আলার এবং আল্লাহ তা‘আলার সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। কেননা সে দ্বীন থেকে রিদ্দাহ করেছে (মুরতাদ হয়ে গেছে) এবং কুফরে প্রবেশ করেছে।” (তাফসীরে ত্ববারী, ৩/২৭৭)
মহান আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেছেন-
بَشِّرِ الْمُنَافِقِينَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا ﴿النساء: ١٣٨﴾ الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَيَبْتَغُونَ عِندَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ﴿النساء: ١٣٩﴾
“সে সব মুনাফেককে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য।” (সূরা নিসা: ১৩৮-১৩৯)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَتُرِيدُونَ أَن تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُّبِينًا ﴿النساء: ١٤٤﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে?” (সূরা নিসা: ১৪৪)
ইমাম ত্ববারী রহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
يقول لهم جل ثناؤه يا أيها الذين آمنوا بالله ورسوله لا توالوا الكفار فتوازروهم من دون أهل ملتكم ودينكم من المؤمنين فتكونوا كمن أوجب له النار من المنافقين.
‘আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলেন, ওহে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়নকারী লোকসকল! কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তোমাদের স্বজাতি ও দ্বীনি ভাই মু’মিনদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহায্য করো না। যদি কর, তবে মুনাফিকদের মতো তোমাদের জন্যও জাহান্নাম অবধারিত হবে।’(তাফসীরে ত্ববারী, ৫/৩৩৭)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ ﴿المائدة: ٥١﴾ فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَن تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ فَعَسَى اللَّهُ أَن يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي أَنفُسِهِمْ نَادِمِينَ ﴿المائدة: ٥٢﴾ وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُوا أَهَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ إِنَّهُمْ لَمَعَكُمْ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَأَصْبَحُوا خَاسِرِينَ ﴿المائدة: ٥٣﴾ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿المائدة: ٥٤﴾ إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ ﴿المائدة: ٥٥﴾ وَمَن يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ ﴿المائدة: ٥٦﴾ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿المائدة: ٥٧﴾ وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُونَ ﴿المائدة: ٥٨﴾
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। বস্তুতঃ যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখবেন, দৌড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলেঃ আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হই। অতএব, সেদিন দুরে নয়, যেদিন আল্লাহ তা’আলা বিজয় প্রকাশ করবেন অথবা নিজের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ দেবেন-ফলে তারা স্বীয় গোপন মনোভাবের জন্যে অনুতপ্ত হবে।মুসলমানরা বলবেঃ এরাই কি সে সব লোক, যারা আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করত যে, আমরা তোমাদের সাথে আছি? তাদের কৃতকর্মসমূহ বিফল হয়ে গেছে, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে।হে মু’মিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মু’মিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র।আর যারা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী।হে মু’মিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও।আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ, তারা নিবোর্ধ।” (সূরা মায়িদা: ৫১-৫৮)
ইমাম ত্ববারী রহ. বলেন- ‘আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ [আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত] অর্থাৎ
ومن يتول اليهود والنصارى دون المؤمنين {فإنه منهم}، يقول: فإن من تولاهم ونصرهم على المؤمنين فهو من أهل دينهم وملتهم، فإنه لا يتولى متول أحداً إلا وهو به وبدينه وما هو عليه راض، وإذا رضيه ورضي دينه فقد عادى ما خالفه وسخطه وصار حكمه حكمه
.
“যে মুসলমানদের ব্যতিরেকে ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, মু’মিনদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহায্য করবে, সে তাদের দ্বীন ও মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ, কেউ কাউকে ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে পারে না; যতক্ষণ না সে উক্ত ব্যক্তির দ্বীন ও অবস্থার উপর সন্তুষ্ট হয়। যখন সে তার উপর ও তার দ্বীনের উপর সন্তুষ্ট হবে, তখন তার বিপরীত সবকিছুর ব্যাপারে বিরোধিতা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবে এবং দু’জনের হুকুম একই হবে।” (তাফসীরে ত্ববারী, ৬/২৭৭)
হাদীস শরীফে হযরত ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِقَوْمٍ عَذَابًا أَصَابَ الْعَذَابُ مَنْ كَانَ فِيهِمْ ثُمَّ بُعِثُوا عَلَى أَعْمَالِهِمْ.
“আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন জাতির উপর আযাব অবতীর্ণ করেন, তখনসেখানেবসবাসরতসকলেরউপরইসেইআযাবনিপতিতহয়।অবশ্যপরে (কিয়ামতেরদিন) প্রত্যেককেতার আমল অনুসারে উঠানো হবে।”(সহীহবুখারী, হাদীসনং-৬৬২৩, ই.ফা.)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন-
ويستفاد من هذا مشروعية الهرب من الكفار ومن الظلمة لأن الإقامة معهم من إلقاء النفس إلى التهلكة، هذا إن لم يعنهم ولم يرض بأفعالهم، فإن أعان أو رضي فهو منهم.
“এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, কাফের ও জালিমদের কাছ থেকে পালানো বৈধ। কারণ, তাদের সাথে বসবাস করা মানে নিজেকে ধ্বংসের মাঝে নিক্ষেপ করা। যদি তাদেরকে সাহায্য না করা হয় এবং তাদের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট না হয়, তখন এ কথা প্রযোজ্য হবে। যদি তাদেরকে সাহায্য করা হয় অথবা তাদের প্রতি সন্তুষ্টি পাওয়া যায়; তবে সে তাদেরই একজন (বলে গণ্য হবে)।”(ফাতহুল বারী, ৩১/৬১)
তাই তো আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নাম অবধারিত করে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
تَرَىٰ كَثِيرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنفُسُهُمْ أَن سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ ﴿المائدة: ٨٠﴾ وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَٰكِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ ﴿المائدة: ٨١﴾
“আপনি তাদের অনেককে দেখবেন, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে। যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও রসূলের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচার।” (মায়িদা: ৮০-৮১)
মহান আল্লাহ তা‘আলা আরও ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ﴿التوبة: ٢٣﴾ قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ ﴿التوبة: ٢٤﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী। বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (সূরা তাওবা: ২৩-২৪)
ইবনে কাসীর রহ বলেন, ইমাম বায়হাকী রহ. আব্দুল্লাহ ইবনে শাওযাব রাযি. এর রেওয়ায়াতে বর্ণনা করেন, আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রাযি. এর পিতা বদর যুদ্ধের দিন প্রতিমাসমূহের গুণকীর্তন করতে লাগল। আবু উবায়দা রাযি. বারবার সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে লাগলেন। যখন পিতা জাররাহ মাত্রাতিরিক্ত করে ফেলল, তখন সন্তান আবু উবায়দা পিতাকে লক্ষ্যস্থল বানালেন এবং হত্যা করলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সকল আয়াত অবতীর্ণ করেন।
সহীহ হাদীসে হযরত আবু হুরাইরাহ রাযি. থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ.
“সেইপবিত্রসত্তারকসম, যারহাতেআমারপ্রাণ, তোমাদেরকেউপ্রকৃতমু’মিনহতেপারবেনা, যতক্ষণনাআমিতারকাছেতারপিতা-মাতাওসন্তানেরচেয়েবেশীপ্রিয়হই।” (সহীহবুখারী, হাদীসনং-১৩)
অনুরূপভাবে হযরত আনাস ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
“তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত (পরিপূর্ণ) মু’মিন হতে পারবেনা, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান এবং সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় হব।” (সহীহবুখারী, হাদীসনং-১৫; সহীহমুসলিম, হাদীসনং-৪৪)
আরও পড়ুন
Comment