আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৪র্থ পর্ব
===================
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৪র্থ পর্ব
===================
০২. কাফেরদের সাথে শত্রুতা পোষণ এবং তাদের বন্ধুত্ব বর্জন:
ক. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতাকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা:
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
لَّا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿المجادلة: ٢٢﴾
“যাঁরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাঁদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাঁদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাঁদের অন্তরে আল্লাহ ঈমানকে সুদৃঢ় করে দিয়েছেন এবং তাঁদেরকে তাঁর পক্ষ হতে রূহ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাঁদেরকে জান্নাতে দাখিল করাবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তাঁরা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তাঁরাই আল্লাহর দল। জেনে রেখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।”(সূরামুজাদালা: ২২)
ইবনে কাসীর রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর বাণী وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ “যদিও তারা তাঁদের পিতা হয়” এ ব্যাপারে বলা হয়, এ আয়াতের এ অংশটি নাযিল হয়েছে সাহাবী আবু উবায়দা রাযি. এর ব্যাপারে, যিনি বদর যুদ্ধে তাঁর পিতাকে হত্যা করেছিলেন। أَوْ أَبْنَاءَهُمْ“অথবা তাঁদের পুত্র হয়” নাযিল হয়েছে আবু বকর সিদ্দীক রাযি. এর ব্যাপারে, যিনি সেদিন তাঁর পুত্র আব্দুর রহমানকে হত্যা করতে মনস্থ করেছিলেন। أَوْ إِخْوَانَهُمْ “অথবা তাঁদের ভ্রাতা হয়” নাযিল হয়েছে মুসআব ইবনে উমাইর রাযি. এর ব্যাপারে, যিনি সেদিন তাঁর ভাই উবাইদ ইবনে উমাইরকে হত্যা করেছিলেন। أَوْ عَشِيرَتَهُمْ “অথবা তাঁদের গোষ্ঠী হয়” নাযিল হয়েছে উমর রাযি. এর ব্যাপারে, যিনি সেদিন তাঁর এক আত্মীয়কে হত্যা করেছিলেন। এবং হামযা, আলী ও উবায়দা ইবনে হারিস রাযি. এর ব্যাপারে, যারা সেদিন উতবা, শায়বা ও ওয়ালীদ ইবনে উতবাকে হত্যা করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বজ্ঞ।
(ইবনে কাসীর রহ. বলেন) আমার মতে, বদর যুদ্ধের বন্দীদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের সাথে যে পরামর্শ করেছিলেন, সেই পরামর্শও এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। তখন আবু বকর রাযি. মুক্তিপণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন; যেন সম্পদের মাধ্যমে মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। বন্দীরা ছিল তাঁদের ভাই-বেরাদার ও আত্মীয়স্বজন। হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হিদায়াত দিয়ে দেবেন। উমর রাযি. বললেন, “আবু বকর যে মত ব্যক্ত করেছেন, তার সাথে আমি একমত নই। আপনি অমুককে (উমর রাযি. এর আত্মীয়) আমার হাতে উঠিয়ে দিন, আমি তাকে হত্যা করি। আর আলীর হাতে আকীলকে দিন। অমুকের হাতে অমুককে দিন। যাতে আল্লাহ তা‘আলা জানতে পারেন যে, আমাদের অন্তরে মুশরিকদের জন্য কোনো সহানুভূতি নেই।...” এভাবে পুরো ঘটনা।
ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, আল্লাহ তাঁদেরকে জিবরাঈল এর মাধ্যমে সাহায্য করেছেন। অর্থাৎ তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন। আল্লাহর বাণী- رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ “আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট, তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট” এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এটির গূঢ় রহস্য হলো, তারা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আত্মীয়স্বজনের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন, আল্লাহ তা‘আলাও তার বিনিময়ে তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন এবং তাঁদেরকেও সন্তুষ্ট করলেন।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/৩৩০-৩৩১)
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُم مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَن تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِن كُنتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنتُمْ وَمَن يَفْعَلْهُ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ ﴿الممتحنة: ١﴾ إِن يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا لَكُمْ أَعْدَاءً وَيَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُم بِالسُّوءِ وَوَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ ﴿الممتحنة: ٢﴾ لَن تَنفَعَكُمْ أَرْحَامُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿الممتحنة: ٣﴾ قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ ﴿الممتحنة: ٤﴾ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُوا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَا إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿الممتحنة: ٥﴾ لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَمَن يَتَوَلَّ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ ﴿الممتحنة: ٦﴾ عَسَى اللَّهُ أَن يَجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ الَّذِينَ عَادَيْتُم مِّنْهُم مَّوَدَّةً وَاللَّهُ قَدِيرٌ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴿الممتحنة: ٧﴾ لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ ﴿الممتحنة: ٨﴾ إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَىٰ إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ﴿الممتحنة: ٩﴾
“হে মু’মিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও; অথচ যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তারা তা অস্বীকার করেছে। তারা রাসূলকে ও তোমাদেরকে বহিষ্কার করেছে এ কারণে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং আমার পথে জিহাদ করার জন্য বের হয়ে থাক; তবে কেন তাদের সাথে গোপনে বন্ধুত্ব করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, তা আমি সম্যক অবগত। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরলপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। তোমাদেরকে করতলগত করতে পারলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে, কোনোরূপে তোমরাও কাফের হয়ে যাও। তোমাদের আত্মীয়-স্বজন ও সন্তান-সন্তুতি কিয়ামতের দিন কোনো উপকারে আসবে না। তিনি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁরা তাঁদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে। কিন্তু ইবরাহীমের উক্তি তাঁর পিতার উদ্দেশ্যে এর ব্যতিক্রম, তিনি বলেছিলেন, আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। তোমার উপকারের জন্য আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু করার নেই। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন। হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে কাফেরদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ। যারা তোমাদের শত্রু, সম্ভবত আল্লাহ তাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং বহিষ্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালিম।” (সূরা মুমতাহিনা: ১-৯)
ইবনে কাসীর রহ. বলেন, পবিত্র এ সূরার প্রথমাংশ অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট ছিল হাতিব ইবনে আবী বালতাআ রাযি. এর ঘটনা। ইমাম আহমাদ রহ. বলেন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে আবী রাফি তাঁকে জানিয়েছেন যে, তিনি আলী রাযি. কে বলতে শুনেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে, জুবাইর ও মিকদাদকে পাঠালেন এবং বললেন- “এখনই রওয়ানা হয়ে রওজায়ে খাখে পৌঁছে যাও। সেখানে একজন উষ্ট্রারোহী নারীকে পাবে, যার কাছে একটি চিঠি আছে। তার কাছ থেকে তা নিয়ে এস।”
আমরা ঘোড়ায় চড়ে দ্রুত বেগে রওয়ানা হলাম এবং রওজায়ে খাখে পৌঁছলাম। সেখানে সেই উষ্ট্রারোহী নারীকে পেয়ে গেলাম।
আমরা বললাম, “চিঠি বের কর।”
সে বলল, “আমার কাছে কোনো চিঠি নেই।”
আমরা বললাম, “হয় চিঠি বের কর, নয়তো আমরা কাপড় খুলে তল্লাশি করব।”
আলী রাযি. বলেন, তখন সে তার মাথার ঝুঁটি থেকে চিঠিটি বের করে দিল। আমরা চিঠি নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ফিরে এলাম। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, “হাতিব ইবনে আবী বালতাআ এর পক্ষ থেকে মক্কার কয়েকজন মুশরিকের প্রতি।” তাতে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু ব্যাপার তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, “হাতিব এটি কী?”
তিনি বললেন, “আমার ব্যাপারে জলদি কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি কুরাইশ বংশের ঘনিষ্ঠ ছিলাম; তবে আসল কুরাইশ ছিলাম না। আপনার সাথে যে সকল মুহাজির আছেন, মক্কায় তাঁদের অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে, যারা তাঁদের পরিবার পরিজনকে সুরক্ষা দেয়। যেহেতু তাদের সাথে আমার কোনো বংশীয় সম্পর্ক নেই, তাই আমি চাইছিলাম যে, পরিবার পরিজনকে বাঁচানোর জন্য তাদের সাথে এমন সম্পর্ক করি। আমি কুফরী কিংবা আমার দ্বীন পরিত্যাগ করে এ কাজ করিনি আর ইসলাম গ্রহণের পর কুফরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েও করিনি।”
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “নিশ্চয়ই সে তোমাদেরকে সত্য বলেছে।”
উমর রাযি. বললেন, “আমাকে অনুমতি দিন। এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দিই।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সে নিশ্চয়ই বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ বদরী সাহাবীদের ব্যাপারে অবগত রয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলে দিয়েছেন, তোমরা যা-ই ইচ্ছা কর। কারণ আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”
এভাবেই ইবনে মাজাহ ব্যতীত মুহাদ্দিসীনে কেরাম বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনে মাজাহ রহ. সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা ব্যতীত অন্য সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩০০৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৪৯৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৬৫০, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৩০৫, সুনানে কুবরা, হাদীস নং-১১৫৮৫
ইমাম বুখারী রহ. মাগাযী অধ্যায়ে বৃদ্ধি করেছেন যে, এ (ঘটনার) প্রেক্ষিতে সূরাটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪২৭৪)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ
“হে মু’মিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।”
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মু’মিন বান্দাদেরকে কাফেরদের বয়কট করা, শত্রুতা পোষণ করা, তাদের সাথে বৈরী হওয়া ও তাদের থেকে মুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন; তিনি বলেছেন-
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنكُمْ
“তোমাদের জন্য রয়েছে ইবরাহীম ও তাঁর সঙ্গীদের মাঝে উত্তম আদর্শ। যখন তাঁরা স্বীয় জাতিকে বললেন, আমরা তোমাদের থেকে পবিত্র।”
অর্থাৎ আমরা তোমাদের থেকে পবিত্রতা ঘোষণা করছি।
وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ
“এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাদের উপাসনা কর, তাদের থেকেও। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি।” অর্থাৎতোমাদের ধর্ম ও মতবাদকে।
وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا
“আর আমাদের ও তোমাদের মাঝে চিরকাল শত্রুতা ও বিদ্বেষ থাকবে।”
অর্থাৎ, এখন থেকে তোমাদের ও আমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ শুরু হয়েছে, যতদিন তোমরা কুফরীর উপর অটল থাকবে, ততদিন এ শত্রুতা ও বিদ্বেষ থাকবে। আমরা সর্বদা তোমাদের থেকে মুক্ত থাকব এবং তোমাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করব।
حَتَّىٰ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
“যতদিন পর্যন্ত এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করবে।”
অর্থাৎ যতদিন তোমরা একত্ববাদী হয়ে এক আল্লাহর ইবাদত না করবে, যাঁর কোনো শরীক নেই এবং যতদিন আল্লাহর সাথে মূর্তি-প্রতিমা যাদের ইবাদত কর, তাদের থেকে পৃথক না হবে।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৪/৩৪৫-৩৪৯ পৃ.)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ قَدْ يَئِسُوا مِنَ الْآخِرَةِ كَمَا يَئِسَ الْكُفَّارُ مِنْ أَصْحَابِ الْقُبُورِ
“হে মু’মিনগণ! আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে, যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে।
ইমাম কুরতুবী রহ বলেন, আল্লাহর বাণী-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ
“হে মু’মিনগণ! আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না।”
অর্থাৎ ইয়াহুদীদের সাথে তোমরা বন্ধুত্ব করো না।
মূল ব্যাপারটি হলো, কিছু গরীব মুসলমান ইয়াহুদীদেরকে মুসলমানদের তথ্য জানিয়ে তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখত। বিনিময়ে তারা কিছু শস্য পেত। এখানে তাদেরকে এ কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
বলা হয়, আল্লাহ তা‘আলা উক্ত সূরা একই বিষয় দিয়ে শুরু করে সে বিষয় দিয়েই শেষ করেছেন। আর তা হলো কাফেরদের বন্ধুত্ব বর্জন করা। এখানে হাতিব ইবনে আবী বালতাআ এবং অন্যদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন-
} يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَوَلَّوْا } أي لا توالوهم ولا تناصحوهم، رجع تعالى بطوله وفضله على حاطب بن أبي بلتعة
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَوَلَّوْا “হে মু’মিনগণ! তোমরা বন্ধুত্ব করো না।” অর্থাৎ, তাদের সাথে অন্তরঙ্গ হয়ো না এবং তাদের কল্যাণকামী হয়ো না। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে হাতিব ইবনে আবী বালতাআকে ক্ষমা করেছেন।” (তাফসীরে কুরতুবী, ১৮/৭৬)
আরও পড়ুন
Comment