শাতেমে রাসূল (ﷺ) এর হত্যা নিয়ে একটি সংশয় নিরসন!
বর্তমান যুগে এমন অনেক তথাকথিত মুসলিম আর তথাকথিত উলামাদের উদ্ভব ঘটেছে যারা শাতেমে রাসূলের শাস্তি কার্যকরের ব্যাপারে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়। এর দ্বারা তাদের রাসূল প্রেমের অভাব, তাদের আকিদা-বিশ্বাসে যে মারাত্মক পর্যায়ের ত্রুটি রয়েছে -সেটা ই পরিলক্ষিত হয়। যদিও শরীয়াহর দৃষ্টিতে সেগুলার কোনো যুক্তিকতা নেই, আমাদের পূর্ববর্তী উলামায়ে হক্বরা এই ‘Settled’ বিষয়ে এরকম কোনো শর্ত জুড়ে দেন নি।
এরকম একটি খোড়া যুক্তি- “ শাসকের অনুমতি না নিয়ে বা শাসক ছাড়া শাতেমে রাসূলকে হত্যা বৈধ নয় বা কেউ হত্যা করতে পারবে না।” — এই অভিযোগকারীরা আল্লাহ্* ও তাঁর রাসূলকে সাহায্যকারী উম্মাহ র এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এজন্য তিরষ্কার করে, তাঁদের নামে কুৎসা রটায়, তাঁদের শাস্তি দাবি করে।
অথচ আমরা রাসূলের সিরাত থেকে দেখি মদীনায় ইসলামী শরীয়াহ থাকা সত্ত্বেও, ইসলামী শরীয়াহ রাস্ট্রের প্রধান স্বয়ং রাসূল (ﷺ) বিদ্যমান থাকা সত্ত্বে ও অনেক সাহাবী তাঁর অনুমতি না নিয়ে, তাঁকে না জানিয়ে ই, এমনকি অনেক চুক্তিবদ্ধ (যাদের জান ও মালের হেফাজতের অঙ্গীকার ছিলো) শাতেমে-রাসূলকে ও স্ব-প্রণোদিত হয়ে হত্যা করেছেন।
কই রাসূল কি সেটাকে অবৈধ বলেছেন বা যাঁরা এটা করেছে তাঁদেরকে কি তিনি তিরষ্কার করেছেন কিংবা তাঁদের শাস্তি দিয়েছেন?? মিথ্যুকদের উপর আল্লাহ্* ও তাঁর রাসূলের লানত।
তারপরো তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই শাসকের বিচার ছাড়া কেউ শাতেমে রাসূলকে হত্যা করতে পারবে না, করলে তা হারাম হবে। তাহলে এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় আপনারা কোন শাসকের কাছে শাতেমে রাসূলদের বিচার চাইবেন??
বর্তমানের আল্লাহর আইন পরিবর্তনকারী,শাতেমে রাসূলদের রক্ষাকারী ‘তাগূত’ শাসকদের কাছে?!!
অথচ আল্লাহ্* আযযা ওয়া জাল বলেন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا
“আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে।কিন্তু তারা বিরোধীয় বিষয়ে তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়,অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাগূতকে মান্য না করে।” (সূরা-নিসা:৬০)
নিঃসন্দেহে আজো মুসলিম উম্মাহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ভালোবাসে। তাঁরা বিভিন্নভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সম্মান সমুন্নত রাখার চেস্টা করে। আমরা দেখেছি বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা রাস্তায় নেমে এসে এসব অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিভিন্ন ধরণের বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। তাঁরা পতাকা এবং কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে। কিছু কিছু দেশের পণ্য বর্জনের কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এসবই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অবমাননার বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ-র ঐক্যের প্রতিফলন। আবার একই সাথে আমরা পুরোপুরিভাবে গোমরাহীতে নিমজ্জিত এবং বিভ্রান্ত কিছু দা’ঈ-কেও দেখেছি যারা মুসলিম ছেলেমেয়েদের ডেনমার্ক নিয়ে গিয়েছে রাসূল (ﷺ)-অবমাননাকারী কাফিরদের সাথে মতবিনিময় এবং সেতুবন্ধনের জন্য! আল্লাহ্* ও তাঁর রাসূল (ﷺ)- এর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক এই কুলাঙ্গারদের উপর।
অথচ আমরা দেখতে পাই যখন সাহাবা (রাঃ)–দের একটি ছোট দল, কোনো এক শাতেমে রাসূল-কে হত্যা করে ফেরত আসছিলেন তখন তাঁদেরকে (রাঃ) অভিনন্দন জানিয়ে হাস্যোজ্জল মুখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছিলেন –“তোমাদের মুখমন্ডলসমূহ উজ্জ্বল হোক, তোমরা আল্লাহ্* ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করেছো”।
তাছাড়া রাসূল (ﷺ) এর অবমাননা করার পর যদি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও শাতেমে রাসূল-কে শাস্তি দেয়া না হয় তবে এর কারণে গোটা জাতিকেই আল্লাহর গযবে পতিত হতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল বলেন: “অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।” [সূরা আন-নুর:৫৭]
তাই, আপনাদের মধ্যে কে আছেন যে এই মহান কাজের জন্য এগিয়ে আসবেন?
হে আমার মুসলিম ভাইয়েরা ! আপনাদের মধ্যে কে আছেন যে ঐসব মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হতে চান, যে কিয়ামতের দিনে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে আপনার দেখা হবে তখন তিনি (ﷺ) হাসি মুখে আপনার দিকে তাকাবেন এবং আপনাকে আল কাউসার থেকে পান করতে দেবেন কারণ আপনি এগিয়ে এসেছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সম্মান রক্ষার্থে?
হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! কে আছেন আপনাদের মধ্যে যে এই সম্মানের জন্য, এই মহৎ কাজের জন্য এগিয়ে আসবেন??? মুসলিম জাতিকে ধবংসের হাত থেকে রক্ষা করবেন???
পরিশেষে বলতে চাই……
“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য আমাদের জান কুরবান হোক”।
হে কুফফার!
“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে নিয়ে কটূক্তি করা যদি তোমাদের অধিকার হয়ে থাকে তাহলে মনে রেখো, আমাদেরও অধিকার আছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সম্মান রক্ষা করার। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) — এর অবমাননা করা যদি তোমাদের বাকস্বাধীনতার অংশ হয় তাহলে জেনে রাখ, তোমাদেরকে হত্যা করা, তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও আমাদের দ্বীনের অংশ”।
-ইমাম আনোয়ার-আল-আওলাকি (আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করুক, আমীন)
মহাপবিত্র কুরআনের ভাষায় রাসূল (ﷺ) অবমাননার শাস্তিঃ
কুরআনে কারীমে শাতিমে রাসূলের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হবে মর্মে ঘোষণা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّـهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا ﴿٥٧
'যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।' (সূরা আহযাব:৫৭)
তারপর তাদের হত্যার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
مَّلْعُونِينَ ۖ أَيْنَمَا ثُقِفُوا أُخِذُوا وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا ﴿٦١﴾ سُنَّةَ اللَّـهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلُ ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّـهِ تَبْدِيلًا ﴿٦٢
'অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে। যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।' (সূরা আহযাব: ৬১-৬২)
কুরআন কারীমের অন্যত্র ঘোষণা হচ্ছে-
فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ ۗ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ ﴿١١﴾ وَإِن نَّكَثُوا أَيْمَانَهُم مِّن بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوا فِي دِينِكُمْ فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ ۙ إِنَّهُمْ لَا أَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنتَهُونَ ﴿١٢﴾ أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَّكَثُوا أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِإِخْرَاجِ الرَّسُولِ وَهُم بَدَءُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ أَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ فَاللَّـهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَوْهُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٣
'অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে র্বণনা করে থাকি। আর যদি ভঙ্গ করে তারা তাদের শপথ প্রতিশ্রুতির পর এবং বিদ্রুপ করে তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে, তবে কুফর প্রধানদের সাথে যুদ্ধ কর। কারণ, এদের কেন শপথ নেই যাতে তারা ফিরে আসে। তোমরা কি সেই দলের সাথে যুদ্ধ করবে না; যারা ভঙ্গ করেছে নিজেদের শপথ এবং সঙ্কল্প নিয়েছে রসূলকে বহিস্কারের? আর এরাই প্রথম তোমাদের সাথে বিবাদের সূত্রপাত করেছে। তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ, যদি তোমরা মুমিন হও।' (সূরা তওবা:১১-১৩)
হাদীসের ভাষ্যমতেঃ
ﻣﻦ ﺳﺐ ﻧﺒﻴًّﺎ ﻓﺎﻗﺘﻠﻮﻩ ﻭﻣﻦ ﺳﺐ ﺃﺻﺤﺎﺑﻰ ﻓﺎﺿﺮﺑﻮﻩ
হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন-
“ যে ব্যক্তি আমাকে গালি দেয়, তাকে হত্যা কর। আর যে আমার সাহাবীকে গালি দেয়, তাকে প্রহার কর।”(জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জামেউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২)
— আরবী অভিধানে ছব্ব (গালি) বলা হয়- কোন বিষয়ে এমন কথা বলা, যার দ্বারা উক্ত বিষয়ে দোষ ও দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। (মেরকাত)
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন- “যে কথা সমাজে খারাপ ও দোষ এবং ত্রু’টি হিসেবে বলা হয় তা’ই ‘ছব্ব’ তথা গালি।” (আস সারেমূল মাসলূল-৫৩৪)
সাহাবা (রাঃ)-দের জীবন থেকেঃ
‘গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী’ নামের একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি এমন ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। যার সাথে এ চুক্তি ছিল যে, তার জান-মালের হিফাজতের দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানে (খলীফাহ)-র। বিনিময়ে সে ইসলামী রাষ্ট্রে কোষাগারে কর জমা দিত।
হযরত গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী লোকটিকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। লোকটি জবাবে রাসূল (ﷺ) কে গালি দিল। তখন হযরত গুরফা লোকটিকে সেখানেই হত্যা করে ফেলেন। এ সংবাদ হযরত আমর বিন আস (রাঃ) এর কাছে পৌঁছলে তিনি হযরত গুরফাকে বললেন, “এ লোকের সাথে তো আমাদের অঙ্গীকার আছে। সে হিসেবে সে তো নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য। তুমি তাকে হত্যা করলে কেনো?” হযরত গুরফা জবাব দিলেন- “তার সাথে আমাদের অঙ্গীকার একথার উপর নয় যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)- কে গালাগাল দিবে আর আমরা তার হিফাজত করবো।” (হায়াতুস সাহাবা-২/৩৫১, উর্দু এডিশন)
শাতেমে রাসূল সম্পর্কে চার মাযহাব এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ফতোয়াঃ
ইমাম আবু হানিফা (রহিঃ) এর মাযহাব:
আল্লামা খাইরুদ্দীন রামালী (রহিঃ) ফতোয়ায়ে বাযযাযিয়ায় লিখেছেন:
“রাসূলের কটূক্তিকারীদের সর্বাবস্থায় হত্যা করা জরুরী। তার তওবা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। চাই সে গ্রেফতারের পরে তওবা করুক বা নিজ থেকেই তওবা করুক। কারণ এমন ব্যক্তির তওবার কোনো পরোয়াই করা যায় না এবং এই মাস’আলায় কোনো মুসলমানের মতভেদ কল্পনাও করা যায় না। এটিই ইমামে আযম আবু হানিফা (রহিঃ), আহলে কুফী ও ইমাম মালেক (রহিঃ) এর মাযহাব।” (তাম্বিহুল উলাতি ওয়াল হুক্কাম, পৃষ্ঠা ৩২৮)
আল্লামা শামী (রহিঃ) তাঁর ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ করেন:
“সকল উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, রাসূলের কটূক্তিকারীকে হত্যা করা ওয়াজিব। ইমাম মালেক (রহিঃ), ইমাম আবুল লাইস (রহিঃ), ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (রহিঃ), ইমাম ইসহাক (রহিঃ), ইমাম শাফেঈ (রহিঃ), এমনকি হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রহিঃ) সহ সকলের মতেই রাসূলের কটূক্তিকারীর তওবা কবুল করা হবে না।”
ফিকহে হানাফির অন্যতম বড় ফকীহ ইমাম ইবনে হুমাম (রহিঃ) বলেন:
“রাসূল (ﷺ) এর প্রতি বিদ্বেষপোষণকারী ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে যায়। সুতরাং যে কটূক্তিকারী, সে তো আরো আগেই মুরতাদ হয়ে যাবে। আমাদের মতে, এমন ব্যক্তিকে হদ হিসেবে হত্যা করা জরুরী। তওবা গ্রহণ করে তার হত্যা মাফ করা যাবে না।” (ফাতহুল কাদীর, চতুর্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৪০৭)
ইমাম মালেক (রহিঃ) এর মাযহাব:
ইমাম মালেক (রহিঃ) একাধিকবার বলেছেন:
“রাসূলের কটূক্তিকারীর শুধু গর্দানই উড়িয়ে দেওয়া নয়, তার লাশও যেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ইবনে কাসেম (রহিঃ), ইমাম মালেক (রহিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যে রাসূল (ﷺ) কে গালি দিবে, বদনাম করবে, দোষ-ত্রুটি বের করবে। তাকে হত্যা করা হবে, চাই সে কাফের হোক বা মুসলমান, তার কাছে তওবা তলব করা হবে না।” (আস সারিমুল মাসলুল ‘আলা শাতিমির রাসূল)
ইবনে কাসেম (রহিঃ) বলেন যে:
ইমাম মালেক বলেছেন: শাতিমির রাসূল তথা রাসূল (ﷺ)-এর কটূক্তিকারীর গর্দান উড়িয়ে দিতে হবে। ইবনে কাসেম (রহিঃ) ইমাম মালেক (রহিঃ) কে জিজ্ঞেস করেন, 'আপনার অনুমতি চাই যাতে মৃত্যুর পর তার লাশও জ্বালিয়ে দিতে হবে। এই কথা শুনে তিনি বললেন, অবশ্যই রাসূলের কটূক্তিকারী এই শাস্তিরই উপযুক্ত।' (কিতাব আশ শিফা বিত-তারিফি হুকুকুল মুস্তাফা, খন্ড-২)
ইমাম শাফেঈ (রহিঃ) এর মাযহাব:
ইমাম খাত্তাবী (রহিঃ) বলেন:
“আমার জানা মতে, কোনো একজন মুসলমানও রাসূলের কটূক্তিকারীদের হত্যা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত করেননি।” (ফাতহুল কাদীর, আস সারিমুল মাসলুল, ফাতহুল বারী)
ইসহাক ইবনে রাহবিয়াহ (রহিঃ) বলেন: "এ বিষয়ের উপর মুসলমানদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ অথবা রাসূল (ﷺ) কে গালি দিবে কিংবা আল্লাহর নাযিলকৃত কোনো হুকুমকে প্রত্যাখ্যান করবে সে কাফের হয়ে যাবে। যদিও সে আল্লাহর সকল বিধি-বিধান মানুক না কেন।” (আস সারিমুল মাসলুল)
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহিঃ) এর মাযহাব:
শাইখুল ইসলাম ইমাম আহমদ (রহিঃ) বলেন,
“আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি গালির ইঙ্গিত করাও ইরতেদাদের শামিল, যা হত্যাকে অবধারিত করে। ” তিনি আরো বলেন, “চাই সে কাফের হোক বা মুসলিম, রাসূলের কটূক্তিকারীদের হত্যা করতে হবে। আমার মতে তাদের হত্যা করতে হবে এবং তার তওবা কবুল হবে না।” (আস সারিমুল মাসলুল ‘আলা শাতিমির রাসূল)
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিঃ) এর মত:
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিঃ) বলেন, “কোনো মুসলিম যদি নবীকে গালি দেয়, তাহলে সে কাফের ও মুরতাদ হয়ে যায়। এই বিষয়ে সবাই একমত যে, কোনো নবীকে গালি দিলেই সে কাফের এবং তাকে হত্যা করা জায়েয হয়ে যায়।” (আস সারিমুল মাসলুল ‘আলা শাতিমির রাসূল)
তিনি আরো বলেন: “যদি কোনো জিম্মি বা জিযিয়া প্রদানকারী কাফির ও রাসূলকে অবমাননা করে তাহলে ও তাকে হত্যা করা হবে।কারণ তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবমাননা করার কারণে তার সাথে কৃত অঙ্গীকার নামা বাতিল হয়ে যাবে। (আস সারিমুল মাসলুল ‘আলা শাতিমির রাসূল)
…. (এক্ষেত্রে হাদিস থেকে- 'যুদ্ধবন্দী মুশরিক নাদার ইবনে আবী হারিছ ও উকবা ইবন আবী মুয়িদের ঘটনা দ্রষ্টব্য। তারা যুদ্ধবন্দী অবস্থায় ছিলো কিন্তু রাসূলকে অবমাননা করার কারণে তাদের হত্যা করা হয়।')
আরো কিছু দলীলঃ
ইমামে খাতিমাতুল মুজতাহিদীন তাক্বীউদ্দীন আবুল হাসান আলী বিন আব্দুল কাফী আস সুবকী (রহিঃ) তাঁর “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার রাসূল (ﷺ) গ্রন্থে লিখেন যে:
“শাইখুল ইসলাম ইমাম কাজী ইয়াজ বলেন: উম্মতের ইজমা একথার উপর যে, মুসলমানদের মাঝে যে ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-এর শানে বেয়াদবী করবে, গালাগাল করবে তাকে হত্যা করা আবশ্যক।”
ইমাম আবু বকর ইবনুল মুনজির বলেন, “সমস্ত আহলে ইলম একথার উপর একমত যে যে ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-কে গালাগাল করবে, বা মন্দ বলবে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব।”
ইমাম মালেক বিন আনাস, ইমাম আবুল লাইস, ইমাম আহমাদ এবং ইমাম ইসহাক ও এ বক্তব্যের প্রবক্তা। আর এটাই ইমাম শাফেয়ী (রহিঃ) এর মাজহাব।
ইমাম কাজী ইয়াজ (রহিঃ) বলেন, “এমনিভাবে একই মত ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) হানাফী ফুক্বাহাদের, এবং ইমাম সাওরী, আহলে কুফা ও ইমাম আওজায়ী থেকে শাতেমে রাসূল (ﷺ) এর ব্যাপারে এমনটিই বর্ণিত (তাদের হত্যা করা হবে)।” (সুবুলু হুদা ওয়ার রাশাদ-১২/২১, আশ শিফা-২/২১১)
ইমাম মুহাম্মদ বিন সুহনুন (রহিঃ) বলেন, “ওলামায়ে কেরাম রাসূল (ﷺ) কে গালাগালকারী ও তাঁর নামে কুৎসাকারীদের কাফের হওয়ার উপর ইজমা তথা ঐক্যমত্ব হয়েছেন। আর এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহর শাস্তি ও ধমক রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এমন ব্যক্তির কাফের হওয়া ও শাস্তির অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করবে,তার পক্ষে কথা বলবে সেও কাফের।
ইমাম আবু সুলাইমান খাত্তাবী (রহিঃ) বলেন যে: “আমি এমন কোন মুসলমানের ব্যাপারে জানি না যে, এমন ব্যক্তির হত্যার আবশ্যকতার ব্যাপারে মতবিরোধ করে।” (রাসায়েলে ইবনে আবেদীন-১/৩১৬)
আল্লামা ইবনে হাজার আশকালানী (রহিঃ) বলেন, “ নবীজী (ﷺ)-কে মন্দ মন্তব্যকারীকে হত্যা করে দেয়া হবে। আর মুসলমান হলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর তার থেকে তওবা করার আবেদন করার দরকার নেই।” (বুলুগুল মারাম ফি আহাদীসিল আহকাম-১৩৩)
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রহিঃ) বলেন: “যে ব্যক্তি ইসলাম বা কুরআনের বিরুদ্ধে খারাপ মন্তব্য করে, অথবা রাসূল (ﷺ)- এর ব্যাপারে মন্দ কথা বলে ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে।” (মাহাসিনুত তাওয়ীল-৫/১৪২)
শাতেমে রাসূলের শাস্তি কার্যকর করবে কে,কিভাবেঃ
রাসূল (ﷺ)-এর সিরাত ও উলামায়ে হক্বদের মত থেকে তিনটি পদ্ধতি বা কার্যক্ষেত্র পাওয়া যায়। যথা-
মুসলিম শাসক/খলীফাহঃ
ইমাম আবু হানীফা (রহিঃ) এবং ইমাম শাফেয়ী (রহিঃ) এর মতানুসারে তাকে হত্যা বা তার বিচার করবে ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলিম শাসক/খলিফাহ। (বাদাউস সানায়ে)
গুপ্তহত্যাঃ
গুপ্তহত্যা তথা Assassination কে ইসলামী পরিভাষায় ‘ইগতিয়াল’ বলা হয়। বাংলা ভাষায়-এর শাব্দিক অর্থ হলো : অপ্রস্তুত অবস্থায় অতর্কিত আক্রমন করে কিংবা গোপন কোন কৌশলে কাউকে হত্যা করা।
শাতেমে রাসূলকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে গুপ্তহত্যা বৈধ।
শাতেমে রাসূল, ইহুদী কাব বিন আশরাফ (তার ঘটনার বিস্তারিত উপরে বর্ণিত হয়েছে) এবং আবু রাফের (তার ঘটনার বিস্তারিত উপরে বর্ণিত হয়েছে) গুপ্তহত্যা যার প্রমাণ। এক্ষেত্রে সে কাফির হোক আর মুসলিম হোক, তার সাথে কোনো চুক্তি থাকুক আর নাই থাকুক। যেমনটি ফতহুল বারী গ্রন্থে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহিঃ) ইকরামা (রাঃ) এর সুত্রে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “এ হত্যাকাণ্ড (কাব বিন আশরাফের) সংঘটিত হওয়ার পর গোটা ইহুদী সম্প্রদায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে তাদের নেতার গুপ্তহত্যার শিকার এবং এর সাথে মুসলিমদের জড়িত থাকার ঘটনা তাঁকে জানায়।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তার রক্ত পণের ব্যপারে কোন কথা না বলে বরং তাদেরকে তিনি মনে করিয়ে দিতে লাগলেন যে, সে আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (ﷺ) সম্পর্কে কি সব আপত্তিকর কথাবার্তা বলে বেড়াতো।
এতটুকুতেই রাসূল ক্ষান্ত হননি, বরং তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে ভবিষ্যতে ও যদি কেউ তার মতো আচরণ করে তাহলে তার পরিণতিও একই রকম হবে।
আবু রাফে-এর গুপ্তহত্যার ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহিঃ) ফতহুল বারী গ্রন্থে বলেন: "ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গিয়েছে এমন মুশরিকদেরকে হত্যার বৈধতা সহ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করে শক্তি সম্পদ কিংবা জবান দ্বারা; কেউ যদি তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে তাদেরকে যে কোন উপায়ে হত্যা করার কিংবা গুপ্তচরবৃত্তি করার ব্যাপারে এ ঘটনা থেকে বৈধতা পাওয়া যায়।"
এই গুপ্তহত্যা করা হবে মুসলিম শাসকের/খলিফাহর লোকদের দ্বারা বা কোনো রাসূল প্রেমী মুসলিমরা যদি সংঘবদ্ধ হয়ে খলিফাহর অনুমতি ছাড়া ও এ কার্য সম্পাদন করে তাহলে ও তা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে তাদের প্রতি কোনো হদ কায়েম করা যাবে না। কারণ শাতেমে রাসূলের রক্ত সর্বাবস্থায় হালাল। (আশ-শিফা)
ব্যক্তিগতভাবে:
যদি কোনো সাধারণ মানুষ শাতিমির রাসূলকে হত্যা করে ফেলে তাহলে তা বৈধ হবে এবং তার উপর শরীয়াহ র কোন শাস্তি বা হদ আসবে না। কেননা রাসূল (ﷺ) কে অবমাননা করার কারণে লোকটি প্রথমেই তার রক্তকে অন্যের জন্য হালাল করে দিয়েছে।
বাদায়েউস সানায়েতে বলা হয়েছে-
ﺇﻥ ﻗﺘﻠﻪ ﺇﻧﺴﺎﻥ ﻗﺒﻞ ﺍﻻﺳﺘﺘﺎﺑﺔ ﻳﻜﺮﻩ ﻟﻪ ﺫﻟﻚ ﻭﻻ ﺷﻲﺀ ﻋﻠﻴﻪ ﻟﺰﻭﺍﻝ ﻋﺼﻤﺘﻪ ﺑﺎﻟﺮﺩﺓ (ﺑﺪﺍﺋﻊ ﺍﻟﺼﻨﺎﺋﻊ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺴﻴﺮ، ﻓﺼﻞ ﻭﺃﻣﺎ ﺑﻴﺎﻥ ﺃﺣﻜﺎﻡ ﺍﻟﻤﺮﺗﺪﻳﻦ )
"যদি তাকে কেউ হত্যা করে তাহলে হত্যাকারীর উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না।" (বাদায়েউস সানায়ে-৭/১৩৪) আর এটাই ইমাম আবু হানাফী এবং ইমাম শাফেয়ীর মত।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর বিখ্যাত কিতাব আস সারিমুল মাসলুল ‘আলা শাতিমির রাসূল' কিতাবে কিছু ক্ষেত্র উল্লেখ করেন যেখানে দোষীকে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে খলিফাহর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই; যার মাঝে শাতেমে রাসূলের হত্যাকান্ড অন্যতম।
এর প্রমাণ রাসূল (ﷺ)-এর সিরাত থেকে পাওয়া যায়। রাসূলের অনুমতি ব্যতিরেকে এক অন্ধ সাহাবী কর্তৃক তার দাসী উম্মু ওয়ালাদ নাম্নী (তার ঘটনার বিস্তারিত উপরে বর্ণিত হয়েছে) এবং আরেক অন্ধ সাহাবী উমায়ের বিন আদি (রাঃ) কর্তৃক আসমা বিনতে মারওয়ান নাম্নী নামক এক মহিলার হত্যাকান্ড দ্রষ্টব্য। যখন ঐ অন্ধ সাহাবী মারওয়ান নাম্নীকে হত্যা করেন তখন সে তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দুগ্ধ পান করানো অবস্থায় ছিলো এবং পরবর্তীতে রাসূলকে এ বিষয়ে জানানো হলে তিনি এর বিপক্ষে কোনোরূপ প্রক্রিয়া দেখানোর বদলা উল্টো বলেন,” এ বিষয়ে দুটো ছাগল ও বিরোধ করবে না।”
অতঃপর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর আশপাশে যারা ছিল তাদেরকে লক্ষ করে বললেন: “তোমাদের যখন মন চাইবে এমন কোন ব্যক্তির দিকে তাকাতে যে আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর রাসুলকে সাহায্য করেছে, তখন তোমরা উমায়র বিন আদি এর দিকে তাকাবে।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
সাধারণ বিষয়, স্বাভাবিক প্রেক্ষাপটের সাথে উক্ত বিশেষ বিষয়, প্রেক্ষাপটের তুলনা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
আল্লাহ্* ও তাঁর রাসূলকে মান্য না করা এক জিনিস আর আল্লাহ্* ও তাঁর রাসূলকে কটাক্ষ করা অন্য জিনিস।
কোনো চুক্তিবদ্ধ কাফির যদি আল্লাহ্* ও তাঁর রাসূলকে না মানে তাহলে তার পরিণতি আল্লাহ্* কর্তৃক নির্ধারিত হবে এবং আমরা তাকে তার অবস্থায় ছেড়ে দিবো। এক্ষেত্রে যার যার ব্যক্তিগত দুনিয়াবী স্বাধীনতা আছে। এটা হলো স্বাভাবিক প্রেক্ষাপট বা ক্ষেত্র বিশেষ।
কিন্তু কোনো কাফির বা কোনো মুসলিম যদি আল্লাহ্* ও তাঁর অপমান করে বা কুৎসা রটায় তাহলে তার প্রতি কোনো চুক্তি, কোন অধিকার কার্যকর হবে না, বরঞ্চ তা রহিত হয়ে যাবে এবং তার রক্ত সর্বাবস্থায় হালাল হয়ে যাবে, এটা হলো আল্লাহ্* আযযা ওয়া জালের বিধান এবং তাঁর রাসূলের ফায়সালা। কারণ আল্লাহ্* ও তাঁর রাসূলকে অবমাননা করার কোনো অধিকার তার নেই। এটা সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে বড় অন্যায় কাজ। আর এটা হচ্ছে অস্বাভাবিক ক্ষেত্র বা বিশেষ প্রেক্ষাপট।
এক্ষেত্রে এমন অনেক জিনিস জায়েয হয়ে যায়, যা স্বাভাবিক ক্ষেত্রে জায়েয নয়-
যেমন: শাতেমে রাসূলের সাথে যদি কোনো চুক্তি থাকে বা সে যদি যুদ্ধবন্দী হয় কিংবা সে যদি কোনো নারী ও হয় কিংবা সে যেই হোক না কেনো তাকে সর্বাবস্থায়, যেকোনো ভাবে হত্যা করতে হবে। এবিষয়ে ইমামদের ইজমা রয়েছে। চুক্তিবদ্ধ কাফির ও নারী শাতেমে রাসূল সম্পর্কে উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে আরো কিছু ঘটনার উদ্ধৃতি দেয়া হলো-
১। ইবনে খাতালের দুই বাদি ছিল, যারা রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে কুৎসামূলক গান গাইতো। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (ﷺ) তাদেরও হত্যা করার নির্দেশ দেন। (আসাহহুর সিয়ার-২৬৬, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৪/৪৯৮) গান যদিও অন্যের বানানো, তবু ও কেবল গাওয়ার কারণে তাদের হত্যা করা হয়।
২। রাসূল (ﷺ) যখন মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় প্রবেশ করেন,তখন রাসূল (ﷺ) এর মাথায় ছিল শিরস্ত্রাণ। তিনি মাথা থেকে তা খুললেন। সেসময় একজন এসে বললেন যে, ইবনে খাতাল কাবার গিলাফ ধরে বসে আছে। রাসূল (ﷺ) বললেন-তাকে হত্যা কর এবং তাকে সেরূপ অবস্থায় ই হত্যা করা হলো। কারণ সে রাসূলের নামে কুৎসা রটাতো। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৭৪৯, হাদিসের সনদ: সহিহ)
৩। এক ইহুদী মহিলা রাসূল (ﷺ) কে গালাগাল করত, মন্দ কথা বলত। তখন এক ব্যক্তি তার গলা চেপে ধরে, ফলে সে মারা যায়। তখন রাসূল (ﷺ) তার হত্যার বদলে উক্ত সাহাবীর হত্যাকে অগ্রহণীয় সাব্যস্ত করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৬৪, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৫৪, সনদঃ সহিহ)
অথচ আমরা সবাই জানি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যোদ্ধা নয় এমন সব নারীর হত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন। তাহলে কেন এই ক্ষেত্রে এই মহিলাদের বিরুদ্ধে নিয়মের ব্যতিক্রম করা হয়েছিল??
— এর কারণ হল,*তাদের এই অপরাধ (ﷺ) এতোই গুরুতর একটি অপরাধ যে এক্ষেত্রে শরীয়াহ-এর সাধারণ হুকুমেরও ব্যতিক্রম করা হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অবমাননা করা এতোই জঘন্য অপরাধ ও তীব্র সীমালঙ্ঘন।
তাছাড়া শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘আস সারিমুল মাসলুল ‘আলা শাতিমির রাসূল’- গ্রন্থে বলেন:
“সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) দের মাঝে এটা একটি সাধারণ প্রচলন ছিল যে,*আল্লাহর রাসুলকে কেউ কষ্ট দিয়েছে একথা তারা জানতে পারলে তারা তাকে নির্দ্বিধায় হত্যা করে ফেলতেন, কেননা তার এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে এটাই তার প্রাপ্য। (‘আস সারিমুল মাসলুল ‘আলা শাতিমির রাসূল)
কেবল আল্লাহর রাসূলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা সাপেক্ষে তিনি যদি কাউকে ক্ষমা করে দিতেন তবেই কেউ হত্যার হাত থেকে বাচতে পারতো। তবে এ ধরণের অপরাধী কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রার্থনার আগেই যদি কেউ হত্যা করে ফেলত তাহলে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) হত্যাকারীকে কোনো দোষারোপ করতেন না, বরং তাকে বাহবা দিতেন এবং তার প্রশংসা করতেন।
কেননা সে তো আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর রাসুলকে সাহায্য করেছে। যেমন: ওমর (রাঃ) এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলেন এ কারণে যে, সে আল্লাহ্ র রাসূলের বিচারে সন্তুষ্ট হয়ে ছিলো না। আসমা বিনতে মারওয়ান ও অন্য এক ইহুদী নারীকে হত্যার দৃষ্টান্তও একই রকম।
আল্লাহ্*র রাসূলের ইন্তেকালের সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে আর বাকি রয়ে গেছে কেবল শাস্তি প্রয়োগের বিধান।”
তবে এর কারণে গোটা জাতিকেই আল্লাহর গযবে পতিত হতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল বলেন: “অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।” [সূরা আন-নুর:৫৭]
Comment