Announcement

Collapse
No announcement yet.

শাতিমের ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্ত ০২

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শাতিমের ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্ত ০২

    শাতিমের ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্ত ০২

    গত পর্বে এ ব্যাপারে কিছুটা আলোচনা করেছিলাম। আজ আরও একটু পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ।


    মুসলিম কখনও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিতে পারে না
    একজন মুসলিম তখনই মুসলিম হতে পারে, যখন আল্লাহ ও রাসূলের মুহাব্বাত ও তা’জিম তার অন্তরে এ পরিমাণ হবে যে, আল্লাহ ও রাসূলকে নিয়ে সমালোচনা করার মতো দুঃসাহস তার হবে না। এতটুকু মুহাব্বাত ও তা’জিম না থাকলে কেউ মুসলিম হতে পারে না।

    ইবনে আবিদিন রহ. (১২৫২ হি.) বলেন,
    وقد حقق في المسايرة أنه لا بد في حقيقة الإيمان من عدم ما يدل على الاستخفاف من قول أو فعل. –رد المحتار: 6\355
    (মুহাক্কিক ইবনুল হুমাম রহ. তাঁর) ‘আল-মুসায়ারাহ্’ কিতাবে বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করেছেন যে, ঈমান সহীহ হওয়ার জন্য অবমাননা বুঝায় মতো কোনো কথা বা কাজ না পাওয়া যাওয়া অত্যাবশ্যক। -ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৫৫

    আরও বলেন,
    قال في المسايرة : ... ولاعتبار التعظيم المنافي للاستخفاف كفر الحنفية بألفاظ كثيرة ، وأفعال تصدر من المنتهكين لدلالتها على الاستخفاف بالدين. –رد المحتار: 6\356
    ‘আল-মুসায়ারাহ্’ কিতাবে (ইবনুল হুমাম রহ.) বলেন, ... তা’জীম; যেটি অবমাননার বিপরীত, ঈমান সহীহ হওয়ার জন্য এটি শর্ত করার কারণে হানাফিরা তা’জীম বিনষ্টকারীদের থেকে প্রকাশিত অনেক কথা ও কাজের দ্বারা তাকফির করে থাকেন। কেননা, সেগুলো দ্বীনের অবমাননা বুঝায়। -ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৫৬

    যখন ঈমান সহীহ হওয়ার জন্য এ পরিমাণ তা’জিম শর্ত, তখন কোনো ব্যক্তি মুসলিম হয়ে থাকলে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটুক্তি করতে পারে না।


    মুসলিম থেকে কখন অবমাননাকর কিছু প্রকাশ পেতে পারে?
    হাঁ,
    ক. কারো কারো ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় ঝগড়া বিবাদের হালতে ভারসাম্য ঠিক থাকে না। অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখ দিয়ে অনাকাঙ্খিত কথা বেরিয়ে আসে। এ ধরনের ক্ষেত্রে কোনো মুসলিম থেকে অবমাননাকর কিছু প্রকাশ পেয়ে যাওয়া সম্ভব। অবশ্য এটাও তার ঈমানের দুর্বলতারই পরিচায়ক।

    খ. তদ্রূপ কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৌতুক করতে করতে কথাচ্ছলে এমন কিছু চলে আসে।


    রাগেই হোক আর কথাচ্ছলেই হোক, এ ধরনের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননাকর কোনো কথা এসে যাওয়ার পর মুসলিম আসমান থেকে পড়ে। মনে হয় যেন কেয়ামত ঘটে গেছে। এ সে কি করলো!? কাঁদতে থাকে। পেরেশান হয়ে উলামাদের কাছে দৌঁড়তে থাকে, হুজুর এখন আমার কি হবে?


    এ ধরনের শাতিমের তাওবা কবুল করার কথা বলা হয়েছে
    হানাফি মাযহাবে এ ধরনের শাতিমের তাওবা কবুল হবে বলা হয়েছে। যেহেতু অবমাননা আর ঈমান এক সাথে হতে পারে না, তাই তার ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে। সে মুরতাদ হয়ে গেছে। নতুন করে ঈমান আনতে হবে। ঈমান নিয়ে আসলে আর হত্যা করা হবে না।


    পক্ষান্তরে অবমাননা যদি মিশন হয়
    পক্ষান্তরে শাতিম যদি এমন যে, রাসূলের প্রতি তার মোটেই বিশ্বাস নেই। উপরে উপরে নিজেকে মুসলিম দাবি করতো আর ভিতরে ভিতরে রাসূলকে নিয়ে কটুক্তি করতো। রাসূলকে নিয়ে কটুক্তি করে সে মজা পেত। অন্যকেও এ কুফরির প্রতি দাওয়াত দিতো। অনেক সময় গোপনে অনেক সময় প্রকাশ্যে। পরে মুসলিমদের সামনে তার আসল চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়ে। তার তাওবা কি কবুল হবে বলা হয়েছে?

    এটি বুঝতে হলে আপনাকে সামনের মাসআলাটি বুঝতে হবে-

    শাতিম যদি যিম্মি হয়
    কোনো যিম্মি যদি রাসূলকে নিয়ে কটুক্তি করে, তাহলে কি বিধান?

    স্পষ্ট যে, যিম্মি রাসূলের উপর ঈমান রাখে না। সে আল্লাহ ও রাসূলের দুশমন। সে যদি কটুক্তি করে, তাহলে তার কটুক্তি ঐ মুসলিমের মতো নয়, যে কথাচ্ছলে বা ঝগড়া বিবাদে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোনো কিছু বলে ফেলেছিল। বরং স্পষ্ট এটাই যে, সে রাসূলের প্রতি দুশমনিবশত কটুক্তি করেছে। বিশেষত দারুল ইসলামে মুসলিমদের তরবারি যখন সর্বদা তার মাথার উপর ঝুলন্ত, এতদসত্বেও সে কটুক্তি করেছে। বুঝা গেল, সে রাসূলের এমনই কট্টর দুশমন যে, তরবারি ঝুলন্ত বুঝেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি।

    অতএব, তার হুকুম যিন্দিকের হুকুমে। ধরার পর তাওবা করলেও মাফ হবে না। তাওবা করে মুসলিম হয়ে গেলেও হত্যা করা হবে। কারণ, তার হালত সাক্ষ দেয় যে, সে আসলে মন থেকে ঈমান আনেনি। শুধু হত্যা থেকে বাঁচতে ঈমান আনার দাবি করছে।

    হাঁ, যদি আসলেই মন থেকে ঈমান এনে থাকে, তাহলে আখেরাতে মাফ পেয়ে যাবে। কিন্তু দুনিয়াতে মুহাম্মাদি তরবারি তার গর্দান উড়াবেই।

    কাযি শায়খি যাদাহ রহ. (১০৭৮ হি.) বলেন,
    أما إذا أعلن بشتمه أو اعتاد فالحق أنه يقتل لأن المرأة التي كانت تعلن بشتمه – عليه الصلاة والسلام – قتلت وهو مذهب الأئمة الثلاثة وبه يفتى اليوم. مجمع الأنهر في شرح ملتقى الأبحر (1/ 677)
    যিম্মি যদি প্রকাশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (এক বার) গালি দেয়, কিংবা (জানা যায় যে, গোপনে গোপনে সে) রাসূলকে অনেক সময়ই গালি দিয়ে থাকে, তাহলে হত্যা করে দেয়া হবে। কারণ, প্রকাশ্যে যে মহিলাটি রাসূলকে গালি দিয়েছিল তাকে হত্যা করে দেয়া হয়েছিল। বাকি তিন ইমামের মাযহাবও এটিই। বর্তমানে এর উপরই ফতোয়া। -মাজমাউল আনহুর: ১/৬৭৭

    ইবনে আবিদিন রহ. বলেন,
    ورأيت في كتاب الصارم المسلول لشيخ الإسلام ابن تيمية الحنبلي ما نصه: ... أفتى أكثرهم بقتل من أكثر من سب النبي - صلى الله عليه وسلم - من أهل الذمة وإن أسلم بعد أخذه، وقالوا يقتل سياسة، وهذا متوجه على أصولهم. اهـ. فقد أفاد أنه يجوز عندنا قتله إذا تكرر منه ذلك وأظهره وقوله وإن أسلم بعد أخذه لم أر من صرح به عندنا لكنه نقله عن مذهبنا وهو ثبت فيقبل. –رد المحتار: 4\214-215
    শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর কিতাব ‘আসসারিমুল মাসলুল’ –এ দেখেছি তিনি বলেছেন, ‘(আমাদের যামানার) অধিকাংশ হানাফি ইমাম ফতোয়া দিয়েছেন, কোনো যিম্মি (গোপনে গোপনে) বার বার রাসূলকে গালি দেয় জানা গেলে, ধরার পর তাওবা করে মুসলমান হয়ে গেলেও তাকে হত্যা করে দেয়া হবে। হানাফি ইমামগণ বলেন, এ হত্যা হলো সিয়াসতরূপে (হদরূপে নয়)। হানাফিদের উসূল অনুযায়ী মাসআলাটি এমন হওয়া যথার্থ’।

    (ইবনে আবিদিন রহ. বলেন,) ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য থেকে বুঝা গেল, যিম্মি যদি একাধিকবার (গোপনে গোপনে) গালি দেয়, কিংবা প্রকাশ্যে (একবার) গালি দেয়, আমাদের হানাফি মাযহাব মতে তাকে হত্যা করা জায়েয।

    অবশ্য তিনি যে বলেছেন, ‘ধরার পর মুসলমান হয়ে গেলেও হত্যা করা হবে’ –আমাদের কোনো ইমাম পরিষ্কার এমন বলেছেন দেখিনি। তবে তিনি আমাদের মাযহাব থেকেই কথাটি বর্ণনা করেছেন। আর তিনি নির্ভরযোগ্য মানুষ। তার কথা গ্রহণযোগ্য। -রদ্দুল মুহতার: ৪/২১৪-২১৫


    বুঝা গেল, যিম্মি যদি প্রকাশ্যে একবারও রাসূলকে নিয়ে কটুক্তি করে, তাহলে ধরার পর হত্যা করে দেয়া হবে। এমনকি তাওবা করে মুসলিম হয়ে গেলেও হত্যা করা হবে। কারণ, সে মুফসিদ ফিল আরদ। সে রাসূলের উপর আঘাত করে গোটা দ্বীনকেই বরবাদ করে দিতে চাইছে। যে উম্মাহর নবীকে নিয়ে সমালোচনা হয়, সে উম্মাহর ইজ্জত সম্মান আর কি বাকি আছে, যা দেখে মানুষ এ দ্বীনকে সঠিক ভাবতে পারে?!

    তবে বেশকম এতটুকু, অন্যরা বলেছেন এ হত্যা হদরূপে, আর হানাফিরা বলেছেন, এ হত্যা তা’যির ও সিয়াসতরূপে। এর ফলাফল দাঁড়াবে, কোনো যিম্মি যদি আসলেই খালেস দিলে তাওবা করে পূর্ণ ইয়াকিনের সাথে সত্য বুঝে দ্বীন কবুল করেছে বুঝা যায়, তাহলে তাকে ছেড়ে দেয়ারও অবকাশ আছে। কিন্তু যারা বলেন হদ, তাদের মতে ছেড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওয়াল্লাহু আ’লাম।

    এবার আমাদের আগের মাসআলায় ফিরে যাই,

    অবমাননা যদি মিশন হয়: অভিজিত–ওয়াশিকদের মতো ব্লগারদের বিধান
    আমরা দেখেছি, মুসলিম ব্যক্তি; যে রাসূলের মুহাব্বাত ও তা’জিম রাখে, তবে ঘটনাবশত হঠাৎ তার মুখ থেকে অবমাননাকর কিছু বেরিয়ে গেছে, সে তাওবা করলে হত্যা করা হবে না।

    পক্ষান্তরে যিম্মি যদি একবারও প্রকাশ্যে কটুক্তি করে, তাহলে হত্যা করে দেয়া হবে।

    এ দুয়ের ব্যবধান এখানে যে, একজন রাসূলের উপর বিশ্বাস রাখে, কোনো দুশমনি রাখে না। অপরজন রাসূলের প্রকাশ্য দুশমন। দুশমনি থেকেই সে কটুক্তি করেছে। সে মুফসিদ ফিল আরদ। তাওবা করে মুসলিম হলেও তাকে হত্যা করা হবে।

    এ থেকে অভিজিত-ওয়াশিকদের মতো ব্লগারদের হুকুম বের হবে। এরা আসলে গোড়া থেকেই রাসূলের উপর ঈমান রাখে না। মুসলিম ঘরে ওয়াশিকদের জন্ম হলেও আসলে তারা বে-ঈমান।

    শুধু তাই নয়, মুহাম্মাদে আরাবির কট্টর দুশমন। তারা নিজেরা দুশমনি-অবমাননা করেই ক্ষান্ত থাকেনি, ব্লগ খুলে গোটা দেশবাসীকে এজঘন্য কুফরের দাওয়াত দিয়েছে। এরা সে যিম্মি শাতিম থেকেও হাজারো গুণ কট্টর দুশমন। এদের দ্বারা দ্বীনে ইসলাম ও উম্মাতে মুহাম্মাদির ক্ষতি সে যিম্মির চেয়েও লাখো কোটি গুণ বেশি। যখন যিম্মি প্রকাশ্যে কটুক্তি করলে সে মুসলিম হয়ে গেলেও ছাড় নেই, তখন কি আপনি মনে করেছেন ওয়াশিকদের ছেড়ে দেয়া হবে?

    তারা তো আগে থেকেই ইসলামের দাবিদার। কিন্তু তাদের দাবি কাদিয়ানিদের দাবির মতো। আর রাসূল অবমাননা করে কুফরের মাত্রা হাজারো গুণ বৃদ্ধি করেছে। এদের কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না।

    ইবনে আবিদিন রহ. বলেন,
    نعم لو قيل إذ تكرر السب من هذا الشقي الخبيث بحيث أنه كلما أخذ تاب يقتل، وكذا لو ظهر أن ذلك معتاده وتجاهر به كان ذلك قولا وجيها كما ذكروا مثله في الذمي ويكون حينئذ بمنزلة الزنديق. اهـ تنبيه الولاة والحكام على أحكام شاتم خير الأنام ، ج1، ص335
    (মুসলিম নামধারী) এ হতাভাগা খবিস যদি বার বার রাসূলকে নিয়ে কটুক্তি করে, যখনই ধরা হয় তাওবা করে ফেলে; তদ্রূপ যদি জানা যায় যে, সে (গোপনে গোপনে) প্রায়ই অবমাননা করে থাকে এবং (এখন) প্রকাশ্যেও করেছে, তাহলে যদি বলা হয় যে, তাওবার পরও তাকে হত্যা করা হবে- তাহলে একে যথার্থ বলা যায়। যেমনটা আইম্মায়ে কেরাম যিম্মির ক্ষেত্রে বলেছেন। এমন ক্ষেত্রে তার বিধান যিন্দিকের মতো হবে। -রাসায়িলে ইবনে আবিদিন: ১/৩৩৫, রিসালা: তাম্বিহুল উলাত

    আরও বলেন,
    فإن قلت: ما الفرق بينه وبين المسلم حيث جزمت بأن مذهب أبي حنيفة وأصحابه أن الساب المسلم إذا تاب وأسلم لا يقتل؟ قلت: المسلم ظاهر حاله أن السب إنما صدر منه عن غيظ وحمق وسبق لسان لا عن إعتقاد جازم، فإذا تاب وأناب وأسلم قبلنا إسلامه. بخلاف الكافر فإن ظاهر حاله يدل على إعتقاد ما يقول وأنه أراد الطعن في الدين، ولذلك قلنا فيما مر أن المسلم أيضا إذا تكرر منه ذلك وصار معروفا بهذا الإعتقاد داعيا إليه يقتل ولا تقبل توبته وإسلامه كالزنديق فلا فرق حينئذ بين المسلم والذمي. اهـ تنبيه الولاة والحكام على أحكام شاتم خير الأنام ، ج1، ص355
    যদি আপত্তি করা হয় যে, যিম্মি ও মুসলিমের মধ্যে কি ব্যবধান আছে যে কারণে আপনি দৃঢ়তার সাথে বলছেন, আবু হানিফা ও তার অনুসারিদের মাযহাব হলো, মুসলিম শাতিম তাওবা করে মুসলমান হয়ে গেলে করা হবে না (পক্ষান্তরে যিম্মি মুসলমান হলেও মাফ পাবে না)?

    উত্তরে বলবো, মুসলিমের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক এটাই যে, তার থেকে কটুক্তি প্রকাশ পেয়েছে রাগের হালতে এবং মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। এটা তার আকিদা ও বিশ্বাস নয়। যখন সে তাওবা করবে, নত হয়ে রুজু করবে এবং মুসলমান হয়ে যাবে, তার ইসলাম আমরা কবুল করবো।

    পক্ষান্তরে কাফেরের বিষয়টা ব্যতিক্রম। তার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক এটাই যে, সে বদ আকিদার কারণেই এ কটুক্তি করেছে এবং এর দ্বারা দ্বীনে ইসলামের গোড়ায় আঘাত করা তার উদ্দেশ্য (কাজেই সে তরবারির মুখে ঈমান এনেছে দাবি করলে আমরা তাকে বিশ্বাস করতে পারি না)।

    এ কারণে আমরা আগে বলে এসেছে, মুসলিমও যদি বার বার এ কাজ করে, এ কাজে প্রসিদ্ধ হয়ে পড়ে এবং এর দাওয়াত দেয়, তাহলে তাকেও হত্যা করা হবে। তার তাওবা ও ইসলাম কবুল করা হবে না, যেমনটা যিন্দিকের বেলায়।

    অতএব, এ হিসেবে মুসলিম ও যিম্মি শাতিমের মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকছে না। -রাসায়িলে ইবনে আবিদিন: ১/৩৫৫, রিসালা: তাম্বিহুল উলাত


    অর্থাৎ মুফসিদ ফিল আরদ পর্যায়ে চলে গেলে উভয়কেই হত্যা করা হবে।

    হাঁ, কোনো শাতিম যদি ভুল বুঝতে পেরে নিজে থেকেই স্বেচ্ছায় তাওবা করে মুসলমান হয়ে যায় এবং মুহাম্মাদে আরাবির সানা সিফাত ও প্রশংসা এ পরিমাণ গাইতে থাকে, যা থেকে অনুমান হয় যে, সে আসলে ভুল বুঝেছে, তাহলে তাকে হত্যা করে হবে না। কিন্তু যতক্ষণ নিজে থেকে তাওবা করছে না, ততক্ষণ তার কোনো ছাড় নেই।


    ধরার পরের মাসআলা দারুল ইসলামে
    উল্লেখ্য, বার বার যে বলা হচ্ছে: ধরা পড়ার পরে, ধরা পড়ার পরে- এ মাসআলা মূলত দারুল ইসলামে। ধরার পর কাযির দরবারে উপস্থিত করে বিচার করা সম্ভব।

    কিন্তু আমাদের হালত এমন নয়। ধরে বিচার করার শক্তি আমাদের নেই। এখনকার যত শাতিমকে হত্যা করা হচ্ছে, এগুলো মূলত ধরার পড়ার আগের মাসআলা। সে অবমাননার পর দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। মুসলিম সিংহরা সুযোগ পেয়ে হত্যা করে দিচ্ছে। এখানে ধরা পড়ার কোনো মাসআলা নেই।

    এখানে মাসআলা সে প্রথমটাই যে, সে শাতিম। তাওবাও করেনি। এসব শাতিম তো মুফসিদ ফিল আরদ হওয়ার কারণে দারুল ইসলাম থাকলে ধরা পড়ার পর তাওবা করে মুসলিম হয়ে গেছে দাবি করলেও মাফ পেতো না।

    এ হিসেবে এখনকার মুসলিম নামধারী এসব অ্যাকটিভ শাতিম দুই দিক থেকে হত্যার উপযুক্ত-
    ক. তারা মুরতাদ হয়ে গেছে কিন্তু তাওবা করছে না।
    খ. তারা মুফসিদ ফিল আরদ।
    ***

    সারমর্ম

    পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় কথাগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। একটু সারমর্ম টানার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ।


    শাতিম যদি যিম্মি হয়

    শাতিম যদি যিম্মি হয়, ঘটনাবশত রাগের হালতে কোনো একবার গোপনে কোনো কটু কথা বলে ফেলে, দেখে ফেলার পর সে থতমত খেয়ে যায় এবং লজ্জিত হয়ে স্বীকার করে যে, আর কখনও এমন কাজ করবে না- তাহলে হানাফি মাযহাব মতে তাকে হত্যা করা হবে না। অন্য শাস্তি দেয়া হবে।

    পক্ষান্তরে যদি প্রকাশ্যে কোনো একবারও কটুক্তি করে, কিংবা জানা যায় যে, সে গোপনে গোপনে প্রায়ই এ কাজ করে, তাহলে ধরার পর সিয়াসতরূপে হত্যা করা হবে। এমনকি ধরার পর তাওবা করে মুসলমান হয়ে গেলেও যদি ইমামুল মুসলিমিন মনে করেন যে, সে আসলে তাওবা করেনি, তরবারির মুখে জীবন বাঁচানোর জন্য শুধু ঈমানের দাবি করছে, ছেড়ে দিলে আগের মতোই এ কাজ সে আবার করবে এবং ফিতনা সৃষ্টি করবে, তাহলে তাকে হত্যা করে দেবে। মুসলমান হলেও মাফ পাবে না।


    শাতিম যদি মুসলিম হয়
    শাতিম যদি মুসলিম হয়, রাগের হালতে বা কথায় কথায় মুখ ফসকে কোনো অবমাননাকর কথা বেড়িয়ে যায়, তাহলে তাওবা করে মুসলমান হয়ে গেলে ছেড়ে দেয়া হবে, হত্যা করা হবে না। তাওবা না করলে হত্যা করে দিতে হবে।

    পক্ষান্তরে যদি অবমাননা তার মিশন হয়, যখনই সুযোগ পায় গোপনে প্রকাশ্যে সে এ কাজ করে, এ কাজে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে তাওবা না করলে তো হত্যা করা হবেই, এমনকি তাওবা করে মুসলমান হলেও হত্যা করা হবে। তার ইসলাম দুনিয়াতে কোনো কাজে আসবে না। ওয়াশিকের মতো ব্লগাররা এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। হাঁ, প্রকৃত অর্থেই মুখলিস হয়ে থাকলে আখেরাতে মাফ পাবে।


    শাতিম যদি হারবি হয়
    হারবিকে তো এমনিতেই হত্যা করা জায়েয। শাতিম হলে তো এর আগেই জায়েয। অতএব, কোনো হারবি কাফের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটুক্তি করার পর যদি তাওবা করে মুসলিম না হয়, তাহলে তার জান মাল হালাল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

    এখন রইল যদি তাওবা করে মুসলিম হয়ে যায় তাহলে কি বিধান?
    যদি সাধারণ কাফের হয় আর অবমাননাকে মিশন না বানায়, মুফসিদ ফিল আরদের পর্যায়ে না পৌঁছে, তাহলে মুসলমান হলে মাফ পেয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশেষত যখন হাদিসে এসেছে, মুসলমান হলে পূর্বেকার সকল অপরাধ মাফ হয়ে যায়।

    আর যদি মুফসিদ ফির আরদ হয়, অবমাননা তার মিশন হয় (যেমন ব্লগ খোলে), তাহলে তাওবা করলে মাফ পাবে কি’না? এ বিষয়টা আমি পরিষ্কার দেখিনি।

    মুসলিম ও যিম্মির ক্ষেত্রে দেখেছি, মুফসিদ ফিল আরদ হলে তাওবা করে মুসলমান হলেও মাফ পাবে না। এ হিসেবে কি একথা বলা যায়, হারবি কাফেরও মুফসিদ ফিল আরদে পৌঁছার পর তাওবা করে মুসলমান হলেও মাফ পাবে না?

    কিন্তু যিম্মি ও মুসলিমের সাথে হারবির একটা ব্যবধান আছে। সেটা হলো, মুসলিম তো ঈমানের দাবিদার। সে রাসূলের সমালোচনার বিশ্বাস রাখে না দাবি করে। এতদসত্বেও যখন তার থেকে বার বার অবমাননা প্রকাশ পাচ্ছে, তখন আমরা তাকে আর বিশ্বাস করতে পারছি না।

    এমননিভাবে যিম্মি দারুল ইসলামে মুসলিমদের তরবারির নিচে থাকে। তাকে তো যিম্মি এ জন্যই বানানো হয়েছে, যাতে সে মুসলিমদের বা মুসলিমদের দ্বীনের কোনো সমালোচনা না করে। সে এটা মেনেই তো যিম্মি হয়েছে। এরপরও যখন সে এমন কাজ করেছে, তখন আমরা তাকে বিশ্বাস করতে পারছি না।

    পক্ষান্তরে হারবি কাফের মুসলিমদের আওতামুক্ত। সে মুসলিমদের প্রকাশ্য দুশমন। সে তো সমালোচনা করা স্বাভাবিক। সবাই জানে যে, এটাই তার আকিদা বিশ্বাস। সে তার আকিদা বিশ্বাস মতেই কাজ করছে।
    অধিকন্তু সে মুসলিমদের থেকে দূরে থাকে। ইসলাম সম্পর্কে জানাশুনা নেই। মুসলিমদের নবী সম্পর্কেও জানাশুনা নেই। তার থেকে এ কাজ প্রকাশ পাওয়া যিম্মি ও মুসলিমের তুলনায় স্বাভাবিক। এ হিসেবে তাকে যিম্মি ও মুসলিম শাতিমের পর্যায়ে ফেলা যায় না।

    যাহোক, হারবি শাতিমের এ সূরতটা আমার কাছে অস্পষ্ট। কোনো ভাইয়ের তাহকিকে ধরা পড়লে আমাকে জানানোর অনুরোধ।


    বিশেষ আবেদন

    হানাফি মাযহাবের ব্যাপারে উপরোক্ত তাহকিক আমার ব্যক্তিগত। যদি কোনো ভাইয়ের কাছে আমার তাহকিকের কোনো অংশ ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে আমাকে শুধরে দেয়ার অনুরোধ। বিশেষ করে হারবি মুফসিদ শাতিম মুসলমান হয়ে গেলে হত্যা করা হবে কি’না বিষয়টাতে আমি সন্দিহান। কোনো ভাইয়ের তাহকিকে ধরা পড়লে অবশ্যই আমাকে অবগত করবেন। পাশাপাশি দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ তাআলা ভুলত্রুটিমুক্ত সহীহ তাহকিকের তাওফিক দান করেন।
    والحمد لله رب العالمين. وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه أجمعين.







  • #2
    দিল থেকে মুহতারাম ভাইয়েরা জন্য দু‘আ রইল- আল্লাহ তাআলা যেন ভাইকে ভুলত্রুটিমুক্ত সহীহ তাহকিকের তাওফিক দান করেন!
    ভাইয়ের ইলম ও আমল এবং ফাহমে বারাকাহ নসীব করেন এবং তার দ্বারা উম্মাহকে সার্বিকভাবে উপকৃত করেন!
    আল্লাহ তা‘আলা যেন ভাইয়ের সকল খেদমতকে কবুল করে নেন ও উত্তম থেকে উত্তম জাযা দান করেন।
    পরিশেষে শাহাদাতের অমীয় সুধা পানের তাওফীক দেন ও জান্নাতের সবুজ পাখি হিসাবে কবুল করে নেন।


    যদি আপত্তি করা হয় যে, যিম্মি ও মুসলিমের মধ্যে কি ব্যবধান আছে যে কারণে আপনি দৃঢ়তার সাথে বলছেন, আবু হানিফা ও তার অনুসারিদের মাযহাব হলো, মুসলিম শাতিম তাওবা করে মুসলমান হয়ে গেলে করা হবে না (পক্ষান্তরে যিম্মি মুসলমান হলেও মাফ পাবে না)?
    এখানে একটি শব্দ ছুটে গেছে মনে হয়; তা হলো- হত্যা। অর্থাৎ মুসলিম শাতিম তাওবা করে মুসলমান হয়ে গেলে হত্যা করা হবে না।
    এ কারণে আমরা আগে বলে এসেছে, মুসলিমও যদি বার বার এ কাজ করে, এ কাজে প্রসিদ্ধ হয়ে পড়ে এবং এর দাওয়াত দেয়, তাহলে তাকেও হত্যা করা হবে।
    এখানে “এ কারণে আমরা বলে এসেছি” হবে সম্ভবত।
    এডিট করে নিলে ভাল হয়।
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      আল্লাহ্ তায়া-লা সম্মানিত শায়েখকে উত্তম বিনিময় দান করুন আমিন।

      Comment


      • #4
        মাশা-আল্লাহ,, আল্লাহ আপনাদের কাজগুলো কবুল করুন আমীন।
        ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

        Comment


        • #5
          আল্লাহ্ তায়া-লা সম্মানিত শায়েখকে উত্তম বিনিময় দান করুন আমিন।
          Last edited by হাবিবুল্লাহ000; 02-25-2021, 07:11 AM.

          Comment


          • #6
            আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
            ভাই এ মাসআলাগুলি আমিও জানতাম ।কিন্তু এখন জানার বিষয়টি হচ্ছে শাতেমে রাসূলকে হত্যা করা এটা কি শুধু ইমামের দায়িত্ব না সকল মুসলিমের?
            (হাওয়ালাসহ দিলে বেশি উপকৃত হব)

            Comment


            • #7
              প্রিয় ভাই- আপনার পোস্টের শেষে প্রথম পর্বের লিংকটা এড করে দিলে ভাল হবে মনে হয়।
              শাতিমের ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্ত-১ এর লিংক-
              https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232468%3B
              ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

              Comment


              • #8
                মাশা-আল্লাহ! বারাকাল্লাহু ফী ইলমিক ওয়া আমালিক!
                জাযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ্দারাঈন!
                আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
                জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
                বিইযনিল্লাহ!

                Comment


                • #9
                  মাশাল্লাহ, উপকৃত হলাম,আল্লাহ তালা তাদের ইলমকে আরো বাড়িয়ে দিন!
                  “দ্বীনের জন্য রক্ত দিতে দৌড়ে বেড়ায় যারা,সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর উত্তরসূরী তারা”–TBangla

                  Comment


                  • #10
                    Originally posted by বদর মানসুর View Post
                    মাশা-আল্লাহ! বারাকাল্লাহু ফী ইলমিক ওয়া আমালিক!
                    জাযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ্দারাঈন!
                    আমীন! ইয়া রাব্বাল আলামীন!
                    লিল্লাহি তাকবির! আল্লাহু আকবার!!

                    Comment


                    • #11
                      আল্লাহ ভাইয়ের এলেমে বরকত দান করুক!
                      দাওয়াত ও জিহাদের সফরে কলব যখন ইনসাফ থেকে সরে যায় তখন বিনয় অহংকারে, ভাষার শালীনতা অশালীনতায় রূপান্তরিত হয় এবং অন্তরের নম্রতা কাঠিন্যের রূপ ধারণ করে। তারপর সে ব্যক্তি নিজেও গোমরাহির পথে চলে এবং অন্যকেও গোমরাহির পথ প্রদর্শন করে।

                      Comment

                      Working...
                      X