‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’!!
প্রথমত এই কথাই তো ঠিক নয় যে, সংস্কৃতি দ্বীন, দ্বীনের আকীদা-বিশ্বাস, বিধি-বিধান ও চিন্তা-চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন বিষয়। আর একথাও ঠিক নয় যে, কোনো জাতির ধর্মীয় উৎসব অপরাপর সব জাতির জন্যই উৎসব। এটা না সে জাতির ধর্মে গ্রহণযোগ্য হবে, না অন্যান্য জাতির ধর্মে। এটা তো না জেনে বলা সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা।
দ্বিতীয়ত এই কথা মুসলিম উম্মাহর ক্ষেত্রে সঠিক হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কারণ এই উম্মত একমাত্র সত্য ধর্মের অনুসারী, যা পূর্ণাঙ্গ দ্বীন এবং যার রয়েছে নিজস্ব আকীদা-বিশ্বাস ও শরীয়ত এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। এ দ্বীনের শরীয়তে পানাহার থেকে নিয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধের নিজস্ব বিধি-বিধান রয়েছে।
এটা তো একমাত্র দ্বীন, যার যাবতীয় প্রমাণ ও উৎস হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং যার প্রথম যুগের মহামনীষীদের আমল ও কর্মপদ্ধতি সূত্রসহ বিদ্যমান রয়েছে। এই ধর্মে ঈদ ও উৎসবের বিষয়টি অনেক নাযুক। এ ধর্মে কঠিনভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার অনুসারীরা যেন নিজেদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে এবং নিজেদের ঈদ-উৎসবের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আর বিধর্মীদের সংস্কৃতি ও উৎসব-পার্বণ থেকে দূরে থাকে।
তৃতীয়ত যে উৎসবের নামই হল ‘দুর্গাপূজা’ সেটা ধর্ম ও বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন নিছক উৎসব হয় কীভাবে? আর ‘পূজা’-ই যদি তাদের ধর্মের অংশ না হয়, তাহলে তাদের ধর্ম আর কোন্ জিনিসের নাম?!
মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সদস্যের জানা থাকা উচিত, আমাদের ধর্ম-
১. পূর্ণাঙ্গ।
২. জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে তার বিধি-বিধান ও দিকনিদের্শনা বিদ্যমান।
৩. এর দাওয়াত সবার জন্য বিস্তৃত। বংশ, বর্ণ, অঞ্চল ও ভাষা নির্বিশেষে সবধরনের মানুষের জন্য এর দাওয়াত সুবিস্তৃত।
যে-ই তা কবুল করবে, সফলতা লাভ করবে এবং আখেরাতে মুক্তি পাবে। আর কবুল না করলে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। তবে বিধর্মীদের প্রতি সদ্ভাব বজায় রাখার নির্দেশের কারণে ইসলাম কাউকে (আল্লাহ তাআলার নিকট তা একমাত্র সত্য ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও) তা গ্রহণে বাধ্য করে না। অবশ্য তা যে একমাত্র সত্য ধর্ম আর অন্যসব যে বাতিল ও মিথ্যা ধর্ম সে সম্পর্কে ওহীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি পেশ করে ‘হুজ্জত তাম’ করে দেওয়া হয়েছে এবং অজুহাত দাঁড় করানোর সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
৪. চিরস্থায়ী ও চিরকালীন ধর্ম। এই ধর্ম রহিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ধর্মের শরীয়ত ও হেদায়েতগ্রন্থ তো নাযিলই হয়েছে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।
৫. এর যাবতীয় শিক্ষা ও বিধি-বিধান এবং সেগুলোর সকল উৎস ও প্রমাণ হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। এই দ্বীনের মাঝে সামান্যতম বিকৃতি বা পরিবর্তন ঘটিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবে এবং তা দ্বীন হিসাবে চালিয়ে দেবেÑ এটা সম্ভবই নয়।
দ্বীন ও শরীয়ত সম্পর্কে অবগত এমন যে কারো জানা আছে, এই দ্বীনের মূল ভিত্তি দুটি জিনিসের উপর-
ক. তাওহীদের আকীদা এবং একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত।
খ. আল্লাহপ্রদত্ত শরীয়তের অনুসরণ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও উত্তম আদর্শের অনুকরণ।
তাওহীদ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন মানুষ সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকবে। শরীয়তের অনুসরণ তখনই বোঝা যাবে, যখন শরীয়ত পরিপন্থী সবধরনের নিয়ম-নীতি ও আইন-কানুন থেকে বেঁচে থাকবে। আর সুন্নাহর অনুসরণ তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন সবধরনের বিদআত ও নতুন-পুরাতন জাহেলী রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি থেকে বিরত থাকবে।
আল্লাহ তাআলা যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন সকলের মৌলিক দাওয়াত এটাই ছিল যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা, যিনি এক, যার কোনো শরীক নেই। পাশাপাশি সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহকে ভয় করা। আর রাসূলের আনুগত্য করা, রাসূলের মাধ্যমে প্রদত্ত শরীয়তকে নিজের উপর অত্যাবশ্যকীয় মেনে নেয়া এবং তাঁর উত্তম আদর্শের অনুসরণ করা।
সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ হেদায়েতগ্রন্থ কুরআন মাজীদ নাযিল করেছেন, তাঁকে সর্বশেষ শরীয়ত দান করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে সর্বশেষ উম্মত বানিয়েছেন। আর ঘোষণা করেছেন, দ্বীনে তাওহীদ (যা চিরকালীন দ্বীন) আর শরীয়তে মুহাম্মাদী (যা কুরআন নাযিলের সময় থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত পুরো মানবজাতির জন্য একমাত্র শরীয়ত ও জীবনবিধান) হল এখন মুক্তি ও সফলতার একমাত্র মাধ্যম।
কুরআনে কারীমে বারবার উল্লেখিত হয়েছে, প্রত্যেক নবী-রাসূলের দাওয়াত এটাই ছিল যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর; তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।
ইরশাদ হয়েছে-
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِیْۤ اِلَیْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدُوْن.
আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত করা।’ -সূরা আম্বিয়া (২১) : ২৫
وَ لَقَدْ بَعَثْنَا فِیْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ، فَمِنْهُمْ مَّنْ هَدَی اللهُ وَ مِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَیْهِ الضَّلٰلَةُ.
নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝে কোনো না কোনো রাসূল পাঠিয়েছি এই পথ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূতকে১ পরিহার কর। তারপর তাদের মধ্যে কতক তো এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন আর কতক ছিল এমন, যাদের উপর বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে। -সূরা নাহ্ল (১৬) : ৩৬
কুরআনে কারীমের বিভিন্ন সূরায় অনেক নবী-রাসূলের দাওয়াতের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বিশেষত সূরা হূদ (সূরা নং ১১) এবং সূরা শুআরায় (সূরা নং ২৬) একেকজন রাসূলের নাম নিয়ে নিয়ে তাঁদের দাওয়াতের বর্ণনা বিবৃত হয়েছে। তাঁদের সবার দাওয়াত একই ছিল-
قَالَ یٰقَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَیْرُهٗ.
হে আমার কওম! আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো মাবুদ নেই। -সূরা হূদ (১১) : ৫০, ৬১, ৮৪
اَنْ لَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّا اللهَ.
তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না। -সূরা হূদ (১১) : ২৬
فَاتَّقُوا اللهَ وَ اَطِیْعُوْنِ.
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। -সূরা শুআরা (২৬) : ১০৮, ১২৬, ১৩১, ১৪৪, ১৫০, ১৬৩, ১৭৯
সূরা আনকাবূতে আছে-
وَ اِبْرٰهِیْمَ اِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللهَ وَ اتَّقُوْهُ، ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَوْثَانًا وَّ تَخْلُقُوْنَ اِفْكًا، اِنَّ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَا یَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللهِ الرِّزْقَ وَ اعْبُدُوْهُ وَ اشْكُرُوْا لَهٗ، اِلَیْهِ تُرْجَعُوْنَ.
এবং আমি ইবরাহীমকে পাঠালাম, যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের পক্ষে শ্রেয়, যদি তোমরা জ্ঞান রাখ। তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমাদেরই পূজা করছ এবং রচনা করছ মিথ্যা। তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর, তারা তোমাদেরকে রিযিক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং আল্লাহর কাছে রিযিক সন্ধান কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় কর। তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। -সূরা আনকাবূত (২৯) : ১৬-১৭
আর সূরা শুআরায় আছে-
وَ اتْلُ عَلَیْهِمْ نَبَاَ اِبْرٰهِیْمَ، اِذْ قَالَ لِاَبِیْهِ وَ قَوْمِهٖ مَا تَعْبُدُوْنَ، قَالُوْا نَعْبُدُ اَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عٰكِفِیْنَ، قَالَ هَلْ یَسْمَعُوْنَكُمْ اِذْ تَدْعُوْنَ، اَوْ یَنْفَعُوْنَكُمْ اَوْ یَضُرُّوْنَ، قَالُوْا بَلْ وَجَدْنَاۤ اٰبَآءَنَا كَذٰلِكَ یَفْعَلُوْنَ، قَالَ اَفَرَءَیْتُمْ مَّا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ، اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمُ الْاَقْدَمُوْنَ، فَاِنَّهُمْ عَدُوّ لِّیْۤ اِلَّا رَبَّ الْعٰلَمِیْنَ، الَّذِیْ خَلَقَنِیْ فَهُوَ یَهْدِیْنِ، وَ الَّذِیْ هُوَ یُطْعِمُنِیْ وَ یَسْقِیْنِ، وَ اِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ یَشْفِیْنِ، وَ الَّذِیْ یُمِیْتُنِیْ ثُمَّ یُحْیِیْنِ، وَ الَّذِیْۤ اَطْمَعُ اَنْ یَّغْفِرَ لِیْ خَطِیْٓـَٔتِیْ یَوْمَ الدِّیْنِ.
(হে নবী!) তাদেরকে শোনাও ইবরাহীমের বৃত্তান্ত। যখন সে তার পিতা ও সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কিসের ইবাদত কর। তারা বলল, আমরা প্রতিমাদের পূজা করি এবং তাদেরই সামনে ধরনা দিয়ে থাকি। ইবরাহীম বলল, তোমরা যখন তাদেরকে ডাক, তখন তারা কি তোমাদের কথা শোনে? কিংবা তারা কি তোমাদের কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে? তারা বলল, আসল কথা হল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এমনই করতে দেখেছি। ইবরাহীম বলল, তোমরা কি কখনও গভীরভাবে লক্ষ করে দেখেছ তোমরা কিসের পূজা করছ? তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ? এরা সব আমার শত্রুÑ এক রাব্বুল আলামীন ছাড়া, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনিই আমার পথপ্রদর্শন করেন। এবং আমাকে খাওয়ান ও পান করান। এবং আমি যখন পীড়িত হই, আমাকে শেফা দান করেন। এবং যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, ফের আমাকে জীবিত করবেন। এবং যাঁর কাছে আমি আশা রাখি, হিসাব-নিকাশের দিন তিনি আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। -সূরা শুআরা (২৬) : ৬৯-৮২
সূরা ইউনুসের শেষে বর্ণিত হয়েছে-
قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنْ كُنْتُمْ فِیْ شَكٍّ مِّنْ دِیْنِیْ فَلَاۤ اَعْبُدُ الَّذِیْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَ لٰكِنْ اَعْبُدُ اللهَ الَّذِیْ یَتَوَفّٰىكُمْ، وَ اُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ، وَ اَنْ اَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّیْنِ حَنِیْفًا، وَ لَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ، وَ لَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا یَنْفَعُكَ وَ لَا یَضُرُّكَ، فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیْنَ، وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ، وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ، یُصِیْبُ بِهٖ مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ، وَ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ، قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَكُمُ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ، فَمَنِ اهْتَدٰی فَاِنَّمَا یَهْتَدِیْ لِنَفْسِهٖ، وَ مَنْ ضَلَّ فَاِنَّمَا یَضِلُّ عَلَیْهَا، وَ مَاۤ اَنَا عَلَیْكُمْ بِوَكِیْلٍ.
(হে নবী) তাদেরকে বল, হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দ্বীন সম্পর্কে কোনও সন্দেহে থাক, তবে (শুনে রাখ) তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং আমি সেই আল্লাহর ইবাদত করি, যিনি তোমাদের প্রাণ সংহার করেন। আর আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে, আমি যেন মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত থাকি। এবং (আমাকে) এই (বলা হয়েছে) যে, তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজ চেহারাকে এই দ্বীনের দিকেই কায়েম রাখবে এবং কিছুতেই নিজেকে সেইসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত করবে না, যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক মানে। আল্লাহকে ছেড়ে এমন কাউকে (অর্থাৎ মনগড়া মাবুদকে) ডাকবে না, যা তোমার কোনও উপকারও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না। তারপরও যদি তুমি এরূপ কর (যদিও তোমার পক্ষে তা করা অসম্ভব), তবে তুমি জালেমদের মধ্যে গণ্য হবে। আল্লাহ যদি তোমাকে কোনও কষ্ট দান করেন, তবে তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই, যে তা দূর করবে এবং তিনি যদি তোমার কোনও মঙ্গল করার ইচ্ছা করেন, তবে এমন কেউ নেই, যে তার অনুগ্রহ রদ করবে। তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ দান করেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (হে নবী!) বলে দাও, হে লোকসকল! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথ অবলম্বন করবে, সে তা অবলম্বন করবে নিজেরই মঙ্গলের জন্য আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতা অবলম্বন করবে, তার পথভ্রষ্টতার ক্ষতি তার নিজেরই ভোগ করতে হবে। আমি তোমাদের কার্যাবলীর যিম্মাদার নই। -সূরা ইউনুস (১০) : ১০৪-১০৮
কুরআনে কারীম ও হাদীস শরীফে এই বাস্তবতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, আসল দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। প্রথমে সব মানুষ এই দ্বীনের অনুসারীই ছিল। সবাই দ্বীনে তাওহীদের উম্মত ছিল। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাই আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলগণকে আদেশ করেন, তাঁরা যেন মানুষকে শিরক ছেড়ে তাওহীদের দিকে ফিরে আসার দাওয়াত দেন। এজন্য প্রাচীন দ্বীন হল তাওহীদের দ্বীন। আর প্রাচীন উম্মত হল তাওহীদের উম্মত । দেখুন, সূরা আম্বিয়া (২১) : ৯২, সূরা মুমিনূন (২৩) : ৫২, সূরা ইউনুস (১০) : ১৯।
আর প্রসিদ্ধ হাদীসে কুদসীতে আছে-
وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلّهُمْ، وَإِنّهُمْ أَتَتْهُمُ الشّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا.
আমি আমার সকল বান্দাকে সৃষ্টি করেছি দ্বীনে হানীফের (তাওহীদের) উপর। শয়তান এসে তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আর তাদের জন্য আমি যা হালাল করেছি সে তা হারাম করেছে এবং তাদেরকে আমার সঙ্গে এমন সব জিনিস শরীক করার আদেশ করেছে, যার স্বপক্ষে আমি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করিনি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৬৫
আরব মুশরিক হোক বা অনারব, অতীতের মুশরিক হোক বা বর্তমানের- সবার সব ধরনের শিরকী ধ্যান-ধারণার ব্যাপারে তাওহীদের অনুসারী একজন মুমিনের বক্তব্য সেটাই, যা কুরআন মাজীদে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের যবানীতে বিবৃত হয়েছে-
اِنِّیْ تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا یُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ هُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كٰفِرُوْنَ، وَ اتَّبَعْتُ مِلَّةَ اٰبَآءِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ مَا كَانَ لَنَاۤ اَنْ نُّشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَیْء ذٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللهِ عَلَیْنَا وَ عَلَی النَّاسِ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَشْكُرُوْنَ، یٰصَاحِبَیِ السِّجْنِ ءَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَیْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ، ماَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِله اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاه ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْن.
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না ও যারা আখেরাতে অবিশ্বাসী, আমি তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করেছি। আমি আমার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের দ্বীন অনুসরণ করেছি। আমাদের এ অধিকার নেই যে, আল্লাহর সঙ্গে কোনও জিনিসকে শরীক করব। এটা (অর্থাৎ তাওহীদের আকীদা) আমাদের প্রতি ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহেরই অংশ। কিন্তু অধিকাংশ লোক (এ নিআমতের) শোকর আদায় করে না। হে আমার কারা-সংগীদ্বয়! ভিন্ন-ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না সেই এক আল্লাহ, যাঁর ক্ষমতা সর্বব্যাপী? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামেরই ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা রেখেছে। আল্লাহ তার পক্ষে কোনও দলীল নাযিল করেননি। হুকুম দানের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নেই। তিনিই এ হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ভিন্ন অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল-সোজা পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৩৭-৪০
মুশরিকদের সকল কাল্পনিক মাবুদের ব্যাপারে তাওহীদে বিশ্বাসী একজন মুমিন কুরআনের ভাষায় বলে-
اِنْ هِیَ اِلَّاۤ اَسْمَآءٌ سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ مَا تَهْوَی الْاَنْفُسُ وَ لَقَدْ جَآءَهُمْ مِّنْ رَّبِّهِمُ الْهُدٰی.
(এদের স্বরূপ এর বেশি কিছু নয় যে,) এগুলি কতক নাম মাত্র, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ রেখেছ। আল্লাহ এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি। প্রকৃতপক্ষে তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) কেবল ধারণা এবং মনের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। অথচ তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদের কাছে এসে গেছে পথনির্দেশ। -সূরা নাজ্ম (৫৩) : ২৩
মুশরিকদের খুব ভালোভাবে বোঝা উচিত, তাদের কাল্পনিক উপাস্যদের কাছে কিছুই নেই যে, দুনিয়া-আখেরাতে তারা তাদের কোনো সাহায্য করবে। ইরশাদ হয়েছে-
قُلِ ادْعُوا الَّذِیْنَ زَعَمْتُمْ مِّنْ دُوْنِ الله لَا یَمْلِكُوْنَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الْاَرْضِ وَ مَا لَهُمْ فِیْهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَّ مَا لَهٗ مِنْهُمْ مِّنْ ظَهِیْر.
(হে রাসূল! ওই কাফেরদেরকে) বলে দাও, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্য মনে করতে তাদেরকে ডাক। আকাশম-লী ও পৃথিবীতে তারা অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয় এবং আকাশম-লী ও পৃথিবীতে (কোনও বিষয়ে আল্লাহর সাথে) তাদের কোনো অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্যে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। -সূরা সাবা (৩৪) : ২২
অন্যত্র আল্লাহ তাআলার কুদরত ও নিআমতরাজির আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَ الَّذِیْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ مَا یَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِیْرٍؕ، اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا یَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْ وَ لَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَ لَا یُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِیْرٍ.
তিনি আল্লাহ তোমাদের প্রতিপালক। সকল রাজত্ব তাঁরই। তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেসব অলীক প্রভুকে) তোমরা ডাক, তারা খেজুর বীচির আবরণের সমানও কিছুর অধিকার রাখে না। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তেমাদের ডাক শুনবেই না আর শুনলেও তোমাদেরকে কোনো সাড়া দিতে পারবে না। কিয়ামতের দিন তারা নিজেরাই তোমাদের শিরককে অস্বীকার করবে। যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত সত্তার মত সঠিক সংবাদ তোমাকে আর কেউ দিতে পারবে না। -সূরা ফাতির (৩৫) : ১৩-১৪
এজন্য রিযিকের প্রার্থনা হোক বা নিরাপত্তার, রহমতের প্রার্থনা হোক বা যুলুম থেকে নিষ্কৃতিরÑ সর্বাবস্থায় সেই একমাত্র মাবুদের নিকটই ফিরে আসতে হবে এবং তাঁর কাছেই সকল আশা-প্রত্যাশা নিবেদন করতে হবে। শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র মালিক তো তিনিই। এজন্য শুধু তাঁরই ইবাদত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে-
فَلْیَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَیْتِ الَّذِیْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ، وَّ اٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ.
তারা যেন এই ঘরের মালিকের ইবাদত করে, যিনি তাদেরকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করেছেন এবং ভয়-ভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন। -সূরা কুরাইশ (১০৬) : ৩-৪)
তাছাড়া শিরকের মাধ্যমে কীভাবে যুলুম-ফাসাদ দূর হয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে? শিরক তো নিজেই অনেক বড় যুলুমÑ
اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
নিশ্চয়ই শিরক চরম যুলুম। -সূরা লুকমান (৩১) : ১৩
শান্তি ও নিরাপত্তা তো সেই যুলুম থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই। আপন যুগের তাওহীদী মিল্লাতের ইমাম আল্লাহর রাসূল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বক্তব্য কুরআন মাজীদে বিবৃত হয়েছে-
وَ كَیْفَ اَخَافُ مَاۤ اَشْرَكْتُمْ وَ لَا تَخَافُوْنَ اَنَّكُمْ اَشْرَكْتُمْ بِاللهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِهٖ عَلَیْكُمْ سُلْطٰنًا فَاَیُّ الْفَرِیْقَیْنِ اَحَقُّ بِالْاَمْنِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَۘ اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ لَمْ یَلْبِسُوْۤا اِیْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَ هُمْ مُّهْتَدُوْنَ۠.
তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর) শরীক বানিয়েছ, আমি কীভাবেইবা তাদেরকে ভয় করতে পারি, যখন তোমরা ওইসকল জিনিসকে আল্লাহর শরীক বানাতে ভয় করছ না, যাদের বিষয়ে তিনি তোমাদের প্রতি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি? সুতরাং তোমাদের কাছে যদি কিছু জ্ঞান থাকে, তবে (বল) দুই দলের মধ্যে কোন্ দল নির্ভয়ে থাকার বেশি উপযুক্ত? (প্রকৃতপক্ষে) যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে যুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি তো কেবল তাদেরই অধিকার এবং তারাই সঠিক পথে পৌঁছে গেছে। -সূরা আনআম (৬) : ৮১-৮২
দুআ ও প্রার্থনার একমাত্র হকদার তিনিই, যিনি সবকিছুর খালিক ও মালিক। আর কেবল সে দুআই যথার্থ ও কার্যকর হবে, যা শুধু তাঁরই দরবারে পেশ করা হবে। এর বাইরে সকল প্রার্থনা বেকার ও অর্থহীন। কারণ সেগুলো করা হয়েছে ভুল স্থানে। ইরশাদ হয়েছে-
لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا یَسْتَجِیْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّیْهِ اِلَی الْمَآءِ لِیَبْلُغَ فَاهُ وَ مَا هُوَ بِبَالِغِهٖ وَ مَا دُعَآءُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ.
তিনিই সেই সত্তা, যার কাছে দুআ করা সঠিক। তারা তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেই দেব-দেবীদেরকে) ডাকে তারা তাদের দুআর কোনো জবাব দেয় না। তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে পানির দিকে দু’হাত বাড়িয়ে আশা করেÑ তা আপনিই তার মুখে পৌঁছে যাবে, অথচ তা কখনো নিজে নিজে তার মুখে পৌঁছাতে পারে না। আর (দেব-দেবীদের কাছে) কাফেরদের দুআ করার ফল এছাড়া আর কিছুই নয় যে, তা শুধু বৃথাই যাবে। -সূরা রাআদ (১৩) : ১৪
এককথায়-
ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ هُوَ الْبَاطِلُ وَ اَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِیُّ الْكَبِیْرُ.
অর্থাৎ, আল্লাহই সত্য। আর তারা তাঁকে ছেড়ে যেসব জিনিসের ইবাদত করে তা সবই মিথ্যা। আর আল্লাহই সেই সত্তা, যার মহিমা সমুচ্চ, মর্যাদা বিপুল। -সূরা হাজ্জ (২২) : ৬২
মোটকথা, তাওহীদের অনুসারী মুমিনের ঘোষণাই এটা-
এক.
اَغَیْرَ اللهِ اَتَّخِذُ وَلِیًّا فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ هُوَ یُطْعِمُ وَ لَا یُطْعَم.
আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করব? যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর স্রষ্টা এবং যিনি (সকলকে) খাদ্য দান করেন, কারো থেকে খাদ্য গ্রহণ করেন না? -সূরা আনআম (৬) : ১৪
দুই.
یٰقَوْمِ اِنِّیْ بَرِیْٓء مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ، اِنِّیْ وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِیْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ حَنِیْفًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ.
হে আমার কওম! তোমরা যেসকল জিনিসকে (আল্লাহর সঙ্গে) শরীক কর, তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সম্পূর্ণ একনিষ্ঠভাবে সেই সত্তার দিকে নিজের মুখ ফেরালাম, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই। -সূরা আনআম (৬) : ৭৮-৭৯
তিন.
اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ لَا شَرِیْكَ لَهٗ وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْن ، ...اَغَیْرَ اللهِ اَبْغِیْ رَبًّا وَّ هُوَ رَبُّ كُلِّ شَیْءٍ وَ لَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَیْهَا وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰی ثُمَّ اِلٰی رَبِّكُمْ مَّرْجِعُكُمْ فَیُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِیْهِ تَخْتَلِفُوْن.
নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার ইবাদত ও আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। তাঁর কোনও শরীক নেই। আমাকে এরই হুকুম দেওয়া হয়েছে। এবং আনুগত্য স্বীকারকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।
...আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও প্রতিপালক সন্ধান করব, অথচ তিনি প্রতিটি জিনিসের মালিক? প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার-বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না। পরিশেষে তোমাদের প্রতিপালকের কাছেই তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে। তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ করতে, তখন তিনি সে সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করবেন। -সূরা আনআম (৬) : ১৬২-১৬৪
তাওহীদের অনুসারী মুমিন সর্বদা এই প্রার্থনা করে-
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَیْتَنَا وَ هَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَة اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّاب.
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে যখন হেদায়েত দান করেছ তারপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করো না এবং একান্তভাবে নিজের পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান কর। নিশ্চয়ই তুমিই মহা দাতা। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮
رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجْنُبْنِیْ وَ بَنِیَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ.
হে আমার প্রতিপালক! এ নগরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা করা হতে রক্ষা করুন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩৫
মনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলার নিকট শিরক সবচে বড় কবীরা গুনাহ। অন্যান্য গুনাহ তো আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন, তবে শিরকের ব্যাপারে তিনি ঘোষণা করেছেন, এই গুনাহ তিনি মাফ করবেনই না, যতক্ষণ না শিরককারী ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে তওবা করে সব ধরনের শিরক থেকে ফিরে আসে এবং তাওহীদের দ্বীন ইসলাম কবুল করে মনে-প্রাণে শুধু এবং শুধু তাওহীদের উপর অবিচল থাকে। ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا.
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এর নিচের যে কোনো গুনাহ যার ক্ষেত্রে চান ক্ষমা করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, সে (সঠিক পথ থেকে) বহু দূরে সরে যায়। -সূরা নিসা (৪) : ১১৬
আরো ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ وَ مَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ اَنْصَار.
নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। -সূরা মায়িদা (৫) : ৭২
মোটকথা, দ্বীনে তাওহীদের অনুসারী এবং কালিমায়ে তাওহীদের সাক্ষ্যদানকারী মুমিন-মুসলিমকে সতর্ক থাকতে হবে। এমন যেন না হয় যে, উদারতার নামে স্পষ্ট শিরকী কর্মকা-গুলোকে ভুল ব্যাখ্যা করতে শুরু করল, নিছক উৎসব নাম দিয়ে সেগুলোর পক্ষে সাফাই এবং সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে লাগল। এমনটা করলে এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতা আল্লাহর সঙ্গে আর কী হতে পারে? এবং ঈমান ও তাওহীদের নিআমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার এর চেয়ে বড় কারণ আর কী হতে পারে?
অমুসলিমদের উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণের বিধান
বর্তমানে কিছু মানুষ কেবল অজ্ঞতার কারণে এমন মনে করছে যে, মুসলমানদের জন্য যেন অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা বৈধ! এই ভাইদের খুব ভালো করে বোঝা উচিত, এমন ধারণা একেবারে ভুল।
ইসলাম ও ইসলামী শরীয়ত এসব বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইসলাম তার অনুসারীদের জীবনের কোনো অঙ্গনকে ‘ফকির’ ছেড়ে দেয়নি; বরং জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ও ক্ষেত্রে তাদেরকে বিধান দান করেছে এবং তাদেরকে আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি জাতি হিসাবে পুরো পৃথিবীর জন্য আদর্শ বানিয়েছে। মুমিনদের লক্ষ করে ইরশাদ হয়েছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِی السِّلْمِ كَآفَّةً وَّ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّیْطٰنِ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوّ مُّبِیْنٌ.
হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮
আর পুরো দুনিয়ার প্রতি ইসলামের ঘোষণা-
اٰمِنُوْا كَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ.
যেসকল লোক ঈমান এনেছে তোমরাও তাদের মত ঈমান আন। -সূরা বাকারা (২) : ১৩
এবং
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِمِثْلِ مَاۤ اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا.
তারা যদি সেরকম ঈমান আনে, যেমন তোমরা ঈমান এনেছ, তবে তারা সঠিক পথ পেয়ে যাবে। -সূরা বাকারা (২) : ১৩৭
জীবনের অন্যসব বিষয়ের মত উৎসবের ক্ষেত্রেও মুসলিম উম্মাহকে স্বতন্ত্র বিধি-বিধান দান করা হয়েছে। তাদেরকে ঈদের বিধান দেয়াই হয়েছে এ কথা বলে-
“প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব থাকে। হে মুসলিম জাতি! তোমাদের উৎসব হল ‘ঈদ’।” অর্থাৎ সব জাহেলী উৎসব থেকে অমুখাপেক্ষী করে মুসলিম উম্মাহকে ‘ঈদ’ দান করা হয়েছে। তাই তাদের জন্য এটা বৈধই নয় যে, তারা নিজেরা কোনো জাহেলী উৎসব উদ্যাপন করবে বা তাতে অংশগ্রহণ করবে।
হাদীস শরীফে আছে, মদীনায় আগমনের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেন, এখানকার অধিবাসীরা বছরে দু’দিন উৎসব পালন করে। তখন আল্লাহর রাসূল তাদের বললেন-
إِنّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ.
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে সেসবের পরিবর্তে দুটি উত্তম দিন দান করেছেনÑ আযহা এবং ফিতর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৪
এছাড়া একাধিক হাদীসে বলা হয়েছে-
إِنّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا، وَهَذَا عِيدُنَا.
অর্থাৎ নিশ্চয়ই প্রত্যেক কওমের আপন আপন উৎসব আছে। আমাদের (অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর) উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৯২
এজন্য কুরআনে কারীমে [সূরা ফুরকান (২৫) : ৭২] আল্লাহর নেক বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এ কথাও বলা হয়েছে-
وَ الَّذِیْنَ لَا یَشْهَدُوْنَ الزُّوْر.
অর্থাৎ তারা এমন মানুষ, যারা মিথ্যা ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে উদ্যাপিত কাফের-মুশরিকদের উৎসবে অংশগ্রহণ করে না।
(উল্লেখিত আয়াতাংশের তাফসীর জানার জন্য দেখুন- তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ৬ পৃ. ১৪০ ও আদ্দুররুল মানসূর খ. ৫ পৃ. ৮০-৮১ এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর কিতাব ‘ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম মুখালাফাতা আসহাবিল জাহীম’ খ. ১ পৃ. ৪২৭-৪৩২)
আরেক হাদীসে এই ঘটনা বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় একজন মান্নত করল, অমুক জায়গায় সে উট জবাই করবে। সে আল্লাহর রাসূলের নিকট মাসআলা জানতে চাইলে আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করলেন-
هَلْ كَانَ فِيهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيّةِ يُعْبَدُ؟
সেখানে কি জাহেলী যুগের কোনো মূর্তি ছিল, যার পূজা করা হত? লোকেরা বলল, না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন-
هَلْ كَانَ فِيهَا عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟
সেখানে কি অমুসলিমদের কোনো উৎসব হত? লোকেরা বলল, না। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
أَوْفِ بِنَذْرِكَ، فَإِنّهُ لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ...
তুমি তোমার মান্নত পুরা কর। (এরপর বললেন, এসব প্রশ্ন এজন্য করা হয়েছে) কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে কোনো মান্নত গ্রহণযোগ্য নয়; এ ধরনের মান্নত পূরণ করা জায়েয নয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩১৩, অধ্যায় : মা ইয়ু’মারু বিওয়াফাইহী মিনান নাযরি
সাহাবায়ে কেরাম কুরআন-হাদীসের হেদায়েত ও নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। এজন্য তাঁরা মানুষকে অমুসলিমদের উৎসবে যেতে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। হযরত উমর রা. বলেন-
اجْتَنِبُوا أَعْدَاءَ اللهِ فِي عِيدِهِمْ.
তোমরা আল্লাহর শত্রুদের উৎসব থেকে দূরে থাক। -আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী, বর্ণনা ১৮৮৬২; ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, খ. ১ পৃ. ৪৫৬-৪৫৭
অবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুটি মৌলিক হেদায়েত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ تَشَبّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
যে যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই বলে গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১
কোনো জাতির উৎসব হচ্ছে সে জাতির শিআর বা নিদর্শন। অতএব বিজাতির নিদর্শনাবলীর ক্ষেত্রে যে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে যে হাদীসে উল্লেখিত ধমকির অন্তর্ভুক্ত- এ বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে?
আরেক হাদীসে এসেছে-
مَنْ كَثّرَ سَوَادَ قَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ وَمَنْ رَضِيَ عَمَلَ قَوْمٍ كَانَ شَرِيكًا لِمَنْ عَمِلَهُ.
যে ব্যক্তি কোনো কওমের দল ভারী করবে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। আর যে কোনো সম্প্রদায়ের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে সে সে কাজের অংশীদার বলে ধতর্ব্য হবে। -(মুসনাদে আবু ইয়ালা) আলমাতালিবুল ‘আলিয়া খ. ৪ পৃ. ৩১৫; কিতাবুয যুহদি ওর্য়ারাকাইক, ইবনুল মুবারক পৃ. ৪৪৭, অধ্যায় : বাবু ইসতিমায়িল লাহ্বি; নাসবুর রায়াহ, খ. ৪ পৃ. ৩৪৬-৩৪৭; আদ্দিরায়াহ ফী তাখরীজি আহাদিসিল হিদায়া (দ্র. হিদায়া খ. ৪ পৃ. ৫৬৭, হিন্দুস্তানী সংস্করণ) ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার খ. ১৩, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮, হাদীস ৭০৮৫ باب من كره أن يكثر سواد الفتن والظلم; আলমাকাসিদুল হাসানা খ. ৫ পৃ. ১৮১
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈমানী গায়রত দান করুন। সকল শিরক থেকে রক্ষা করুন এবং বিজাতীয় সকল আচার-অনুষ্ঠান ও পর্ব-উৎসব থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন।
هذا، وصلى الله تعالى وبارك وسلم على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين، لا نبي بعده، وعلى آله وأزواجه وأهل بيته أجمعين.
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين
✍️
Collected
Comment