শাতিম হত্যা
এবং
ইমামের অনুমতি
এবং
ইমামের অনুমতি
শাতিমকে হত্যা করবো হারবি হিসেবে, হদ হিসেবে নয়
শাতিম যদি আসলি কাফের হয়- যেমন ধরুন হিন্দু, খৃস্টান- তাহলে, তার জান মাল আগে থেকেই মুসলিমদের জন্য হালাল। সে হারবি। হারবিকে যেকোনো মুসলিম হত্যা করতে পারে।
আর যদি আগে মুসলিম থেকে থাকে তাহলে এখন সে মুরতাদ হয়ে গেছে এবং হালালুদদাম হয়ে গেছে। হারবি হয়ে গেছে। হারবি কাফের হিসেবে যে কেউ তাকে হত্যা করতে পারে।
অতএব, আমরা যে শাতিমকে হত্যার কথা বলছি, তা এ হিসেবেই যে, শাতিম হারবি কাফের এবং হালালুদদাম। আমরা তাকে হারবি হিসেবে হত্যা করছি, হদ হিসেবে নয়। অতএব, আপত্তির সুযোগ নেই যে, হদ কায়েমের দায়িত্ব ইমামের।
হদ কায়েম ইমামের দায়িত্ব তা আপন জায়গায় বহাল আছে। এ কারণে আমরা যিনাকারকে রজম করছি না, চোরের হাত কাটছি না, মদ্যপানকারীকে দোররা লাগাচ্ছি না। কারণ, এগুলো খালেস হদ। এগুলো কায়েম করতে দারুল ইসলাম ও ইমাম বা সুলতানের প্রয়োজন আছে।
পক্ষান্তরে শাতিম হারবি কাফের। হারবিকে যেকোনো মুসলিম হত্যা করতে পারে। সে হিসেবেই আমরা এ খবিসকে হত্যা করছি। বিষয়টি একটু ভাল করে বুঝা উচিৎ।
সাহাবায়ে কেরাম অনুমতি ছাড়াই হত্যা করেছেন
আমরা যদি সিরাতের দিকে তাকাই, দেখতে পাবো, শাতিম মহিলা হোক পুরুষ হোক- সাহাবায়ে হত্যা করে দিয়েছেন। অনুমতি নেয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হয়েছেন। হত্যাকারী সাহাবিদের প্রশংসা করেছেন। বুঝা গেল, শাতিম এমনই এক জঘন্য কীট, যাকে সরানোর জন্য ইমামের অনুমতি নিষ্প্রয়োজন।
অনুমতির অপেক্ষায় বসে থাকা গাইরত পরিপন্থী
গাইরত ও রাসূলের মুহাব্বাতের দাবিও এটাই যে, রাসূল অবমাননাকারীদের যেখানে যখন পাওয়া যায় হত্যা করে দেয়া। অনুমতির অপেক্ষায় বসে থাকা গাইরত ও মুহাব্বাতের পরিপন্থী। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম তৎক্ষণাৎ হত্যা করে দিয়েছেন।
রাসূলের তো মাফ করে দেয়ার অধিকারও ছিল, এতদসত্বেও ...
অথচ আপনারা জানেন, রাসূলের জীবদ্দশায় যেকোনো শাতিমকে মাফ করে দেয়ার অধিকার রাসূলের ছিল। কোনো কোনো শাতিমকে তিনি তাওবার পর মাফ করেও দিয়েছেন। এতদসত্বেও সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেননি যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি একে মাফ করে দেবেন, না’কি হত্যা করে দেবো?
আর বর্তমানে তো উম্মতের এ অধিকার নেই যে, কোনো শাতিমকে নিজে থেকে মাফ করে দেবে। তখন কি করে দাবি করা যায় যে, সাধারণের জন্য শাতিম হত্যা নাজায়েয?!! রাসূল নিজে উপস্থিত থাকা সত্বেও যদি সাহাবায়ে কেরামের জন্য জায়েয বরং প্রশংসনীয় হয়, সেখানে আমাদের উপর হারাম করে ফেলবে এমন বুকের পাটা কার আছে?! হাঁ, গায়ের জোরে তো অনেক কিছুই বলা যায়।
সরকারি আলেমদের প্রতি আহ্বান
সরকারি আলেমদের কাছে আবদার থাকবে, আপনারা এমন দু’চারটি দলীল বা দু’চারজন ইমামের বক্তব্য পেশ করুন, যারা বলেছেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া শাতিম হত্যা নাজায়েয। এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সত্য গোপনের পায়তারা করবেন না।
অনুমতির কথা থাকলে মুরতাদের ক্ষেত্রে; শাতিমের ক্ষেত্রে নয়
হাঁ, ফিকহের কিতাবে স্বাভাবিক মুরতাদ, যে কোনো সন্দেহে পতিত হয়ে মুরতাদ হয়ে গেছে, তার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ইমামের উপর আগে বেড়ে নিজে থেকে কেউ হত্যা করবে না।
কারণ, ইমাম নিযুক্তই করা হয়েছে এসব হদ কায়েমের জন্য। ইমাম তার বাহিনিসমেত সর্বদা ইসলামের পাহারায় নিয়োজিত। কোনো লোক মুরতাদ হওয়ার পর ইমামের হাত থেকে ছাড় পেয়ে যাবে এর কল্পনাও করা যায় না দারুল ইসলামে।
এ ধরনের ক্ষেত্রে দায়িত্ব ইমামের হাতে ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। এটাও স্বাভাবিক মুরতাদের ক্ষেত্রে, শাতিমের ক্ষেত্রে না। শাতিমের বেলায় তো আমরা দেখেছি, সাহাবায়ে কেরাম উপস্থিত মজলিসে হত্যা করে দিয়েছেন। অনুমতির অপেক্ষায় বসে থাকেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজে খুশী হয়েছেন। সাহাবিদের প্রশংসা করেছেন।
দারুল ইসলামে অনুমতি ছাড়া মুরতাদ হত্যা ইমামের অপমান
ধরুন, দেশের নামীদামী কোনো মাদ্রাসার প্রধান মুফতি সাহেবকে আপনাদের এলাকার জামে মসজিদের খতীব নিয়োগ দিলেন। তিনি জুমা পড়ান। নিয়মিত পড়ান। আজও তিনি উপস্থিত। বয়ানও করেছেন। খুতবাও দিয়েছেন। এখন নামায পড়াবেন। এ মূহুর্তে সাধারণ কেউ যদি হাজারো মুসল্লির সামনে কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই খতীব সাহেবকে পেছনে রেখে নিজেই নামায পড়াতে শুরু করে দেয়, তাহলে কেমন দেখাবে বিষয়টা?
এখানেও বিষয়টা এমনই। ইমামুল মুসলিমিন মুরতাদ হত্যার জন্য প্রস্তুত। এবং তিনি তা খুব ভালভাবে আঞ্জামও দিয়ে থাকেন। এখনও দেবেন। এমন মূহুর্তে যদি কেউ ইমামের অনুমতি ছাড়া নিজেই কোনো মুরতাদকে পেয়ে হত্যা করে দেয়, তাহলে এটা ইমামের অপমান। এজন্যই ইমামের হাতে ন্যস্ত করতে বলা হয়েছে।
আরেকটা বিষয় হলো, এতদিন যে ব্যক্তি মুসলিম ছিল, নামাযী ছিল, আজ হঠাৎ যদি সে মুরতাদ হয়ে যায়, বুঝা যাবে যে, সে কোনো সংশয়ে পতিত। এমন ব্যক্তিকে প্রথমে হত্যা না করে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিৎ। আর ইমামুল মুসলিমিন এ কাজটি করতে পারবেন ভাল মতো। তাই মুরতাদ হত্যার দায়িত্ব ইমামের হাতে ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। কেউ স্বেচ্ছারিতা দেখালে প্রয়োজনমাফিক শাস্তিও দিতে বলা হয়েছে।
ইবনে আবিদিন রহ. বলেন,
فإن أسلم وإلا قتل لحديث «من بدل دينه فاقتلوه» قوله وإلا قتل قال في المنح: وأطلق فشمل الإمام وغيره، لكن إن قتله غيره أو قطع عضوا منه بلا إذن الإمام أدبه الإمام. اهـ. الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 226)
গ্রন্থকার বলেন, ‘মুসলমান হলে ভাল, অন্যথায় হত্যা করে দেয়া হবে’।হত্যা কে করবে- এ বিষয়টা তিনি ব্যাপক রেখেছেন। অতএব, ইমাম এবং সাধারণ সকলেই এতে অন্তর্ভুক্ত। তবে সাধারণ কেউ ইমামের অনুমতি ছাড়া হত্যা করে ফেললে বা অঙ্গ কেটে ফেললে, (ইমামের হক নষ্ট এবং স্বেচ্ছাচারিতা দেখানোর কারণে) ইমামুল মুসলিমিন তাকে (মুনাসিবমতো) শাসন করবেন। -রদ্দুল মুহতার: ৪/২২৬
ইমামের উপর আগে বেড়ে কাজ করা প্রসঙ্গে অন্যত্র বলেন,
إذا أدخل الحربي بغير إذنه يصح أمانه ويعزر لافتياته. الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 204)
কোনো মুসলিম যদি (ইমামের অনুমতি ছাড়া) কোনো হারবিকে আমান দিয়ে দারুল ইসলামে নিয়ে আসে, তাহলে আমান সহীহ হবে। তবে ইমামের উপর আগে বেড়ে যাওয়ার কারণে (মুনাসিব মনে করলে) তাকে শাস্তি দেবেন। -রদ্দুল মুহতার: ৪/২০৪ইবনুল হুমাম রহ. বলেন,
فإن قتله قاتل قبل عرض الإسلام عليه أو قطع عضوا منه كره ذلك، ولا شيء على القاتل والقاطع لأن الكفر مبيح وكل جناية على المرتد هدر ومعنى الكراهة هنا ترك المستحب فهي كراهة تنزيه. فتح القدير للكمال ابن الهمام (6/ 71)
মুসলমান হওয়ার দাওয়াত পেশ করার আগেই যদি কেউ মুরতাদকে হত্যা করে ফেলে বা অঙ্গ কেটে ফেলে তাহলে তা মাকরুহ হবে। তবে হত্যাকারী বা কর্তনকারীর উপর কোনো জরিমানা বর্তাবে না। কেননা, কুফর এমন অপরাধ যা তার রক্ত হালাল করে দিয়েছে। মুরতাদের উপর (হত্যা-কর্তন) যা যাবে, কোনোটার কোনো জরিমানা নেই। উল্লেখ্য, এখানে মাকরুহ দ্বারা উদ্দেশ্য তা মুস্তাহাবের পরিপন্থী। অতএব, তা মাকরুহে তানযিহি। -ফাতহুল কাদির, ইবনুল হুমাম: ৬/৭১
মুরতাদের রক্ত মূলত হালাল। তবে দাওয়াত পেশ করার আগেই এবং ইমামের আগে বেড়ে নিজে থেকে হত্যা করে দুইটি মন্দ করলো,
এক. দাওয়াত দেয়া হলো না। হতে পারে তার কোনো সংশয় ছিল, যা দলীল প্রমাণ পেশ করলে হয়তো দূর হয়ে যেতো এবং সে মুসলমান হয়ে যেতো। অবশ্য এটা বড় কোনো মন্দ নয়। মুস্তাহাবের পরিপন্থী। (সামনের পর্বে ইনশাআল্লাহ কথা বলবো যে, কোন ধরনের মুরতাদকে দাওয়াত দেয়া হবে আর কাকে দেয়া হবে না।)
দুই. ইমামের হক নষ্ট করলো। ইমামের আগে বেড়ে স্বেচ্ছাচারিতা দেখাল।
আর দাওয়াতের পর মুসলমান না হলে যদি হত্যা করে, তাহলে শুধু ইমামের হক নষ্ট হলো। এ কারণে ইমাম তাকে শাসন করবেন।
অতএব, মূলত মুরতাদ হত্যা কোনো অন্যায় না। অন্যায় হলো ইমামের আগে বেড়ে যাওয়া। আর এটাও অনেক বড় কোনো অন্যায় নয়। অনেক সময় ব্যক্তি গাইরতের কারণেও হত্যা করে ফেলতে পারে। অবশ্য ইমামের আগে বেড়ে যাওয়া হল। এজন্য ইমাম ব্যক্তিভেদে যতটুকু শাসনের দরকার করবেন। যেন কেউ ইমামের হাতে ন্যস্ত বিষয়াশয়ে ইমামের আগে বেড়ে না যায়।
উল্লেখ্য, আগেও বলা হয়েছে, ইমামের হক নষ্টের এ মাসআলা মুরতাদের ক্ষেত্রে। শাতিমের ক্ষেত্রে না। শাতিমের ক্ষেত্রে তো সাহাবায়ে কেরাম অনুমতি ছাড়াই হত্যা করেছেন।
ইমাম নেই, ইমামের হকও নেই
ইমামের হকের এ বিধান ঐ সময় যখন ইমাম থাকবে এবং ইমাম বিচার করবে নিশ্চিত। যেমন আফগানিস্তান ইসলামি ইমারা এই কয়েক দিন হলো ফরমান জারি করেছে, আদালতের ফায়সালা ছাড়া যেন কেউ কোনো অপরাধীকে শাস্তি না দেয় এবং শাস্তির ভিডিও না করে। কারণ, সারা দেশে তাদের বাহিনি আছে। কাযি আছে। আদালত আছে। সাধারণ মানুষ নিজেরা শাস্তি দেয়ার দরকার নেই।
অধিকন্তু সাধারণ মানুষ অনেক সময় সীমালংঘনও করে। যতটুকু শাস্তি প্রাপ্য এর চেয়ে বেশি মারপিট করে। তাই এ ফরমান। সেখানে বলা যাবে, মুরতাদকে নিজেরা হত্যা না করে কাযির দরবারে সোপর্দ করবে।
কিন্তু আমাদের দেশগুলোর মতো যেখানে ইমাম নেই, সেখানে এ বিধানও নেই। ইমাম নেই, ইমামের হকও নেই। বরং সরকার নিজেই মুরতাদ। দেশের মুসলমান তো সরকারকে হত্যা করার জন্যই ওঁৎপেতে আছে।
আমাদের অবস্থা হলো, কোনো লোক মুরতাদ হয়ে আমেরিকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আমেরিকা তার নিরাপত্তা দিচ্ছে। যেকোনো মুসলমান সুযোগ পেলে ঐ মুরতাদকে তো হত্যা করবেই, আমেরিকার যে কাফেরকে বাগে পাবে তাকেও হত্যা করবে।
আমাদের সরকারগুলো তো আরও নিকৃষ্ট কাফের। এদের হত্যার অপেক্ষায়ই তো আমরা আছি। এদের অনুমতি নেবো আমরা?! পাগলামি ছাড়া আর কি!
***
সামনের পর্বে ইনশাআল্লাহ দাওয়াত নিয়ে আলোচনা করবো।
০১- শাতিমের ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্ত ০১
https://82.221.139.217/showthread.php?22296
০২- শাতিমের ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্ত ০২
https://82.221.139.217/showthread.php?22303
০৩- শাতিমকে হত্যা করবে কে?
Comment