জিহাদের জন্য যুদ্ধোপকরণ ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরী করা ফরয
-মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ.
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه ومن والاه، أما بعد-
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন-
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ ﴿الأنفال: ٦٠﴾
“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।”
(সূরা আনফাল [৮]: ৬০)
“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।”
(সূরা আনফাল [৮]: ৬০)
এই আয়াতের ব্যাখায় তাফসীরে মারেফুল কুরআনে মুফতি শফী রহ. বলেন-
এই আয়াতে ইসলামের শত্রুকে প্রতিরোধ ও কাফিরদের সাথে মুকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতির বিধান বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে- وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم অর্থাৎ কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধোপকরণ তৈরী করে নাও, যতটা তোমাদের পক্ষে সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে যুদ্ধোপকরণ তৈরী করার সাথে مَّا اسْتَطَعْتُم এর শর্ত আরোপ করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তোমাদের সফলতা লাভের জন্য এটা অপরিহার্য নয় যে, তোমাদের প্রতিপক্ষের নিকট যে ধরনের এবং যে পরিমাণ উপকরণ রয়েছে, তোমাদেরও ততটাই অর্জন করতে হবে। বরং সামর্থ অনুযায়ী যা কিছু উপকরণ যোগাড় করতে পার, তাই সংগ্রহ করে নাও।, তবে সেটুকুই যথেষ্ট। আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা তোমাদের সঙ্গে থাকবে।
অতঃপর সে উপকরণের কিছুটা বিশ্লেষণ এভাবে করা হয়েছে مِّن قُوَّةٍ অর্থাৎ মুকাবিলা করার শক্তি সঞ্চয় কর। এতে সমস্ত যুদ্ধেপকরণ, অস্ত্রশস্ত্র, যানবাহন প্রভৃতিও অন্তর্ভুক্ত এবং শরীরচর্চা ও সমর বিদ্যা শিক্ষা করাও অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআন এখানে তৎকালে প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্রের কোন উল্লেখ করেনি, বরং ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ‘শক্তি’ ব্যবহার করে ইঙ্গিত করে দিয়েছে যে, ‘শক্তি’ প্রত্যেক যুগ, দেশ ও স্থান অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হতে পারে। তৎকালীন সময়ের অস্ত্র ছিল তীর-তলোয়ার, বর্শা প্রভৃতি। তারপরে বন্দুক-তোপের যুগ এসেছে। তারপর এখন চলছে বোমা, রকেটের যুগ। ‘শক্তি’ শব্দটি এ সবকিছুতেই ব্যাপক। সুতরাং যেকোন বিদ্যা ও কৌশল শিক্ষা করার প্রয়োজন হয়; যদি তা এ নিয়্যতে হয় যে, তার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদের শক্রকে প্রতিহত করা এবং কাফিরদের মুকাবিলা করা হবে, তাহলে তাও জিহাদের শামিল।
وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ অর্থাৎ জিহাদের নিয়মে ঘোড়া পালা ও সেগুলোকে বাঁধা কিংবা পালিত ঘোড়াগুলোকে এক জায়গায় এনে সমবেত করা।
যুদ্ধেপকরণের মধ্যে বিশেষ করে ঘোড়ার উল্লেখ এজন্য করা হয়েছে যে, তখনকার যুগে কোন দেশ ও জাতিকে জয় করার জন্য ঘোড়াই ছিল সবচেয়ে কার্যকর ও উপকারী। তাছাড়া এ যুগেও বহু জায়গা রয়েছে, যা ঘোড়া ছাড়া জয় করা যাবে না। সে কারণেই রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঘোড়ার ললাটদেশে আল্লাহ তা‘আলা বরকত দিয়েছেন। (তাফসীরে মারেফুল কুরআন, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
এবার আসুন! উক্ত আয়াতে উল্লিখিত ঘোড়ার ফযীলত সংক্রান্ত কিছু হাদীস ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা অবলোকন করি।
عن ابن عمر -رضي الله عنهما-: أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال: «الخَيْل مَعقُودٌ في نَوَاصِيهَا الخَيْر إلى يوم القِيامة». وعن عروة البارقي -رضي الله عنه-: أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: «الخيل مَعقُودٌ في نَوَاصِيهَا الخَيْر إلى يوم القيامة: الأجر، والمَغْنَم».
[صحيح.] - [حديث ابن عمر متفق عليه. وهذا لفظ البخاري. حديث عروة البارقي متفق عليه.]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ বাঁধা থাকবে। উরওয়াহ বারেকী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঘোড়ার ললাটে কিয়ামত অবধি কল্যাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সাওয়াব ও গনীমত।”
সহীহ - উভয় বর্ণনা মুত্তাফাকুন আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।
ব্যাখ্যা
কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ঘোড়ার সাথে কল্যাণ সংশ্লিষ্ট থাকবে। (যুদ্ধের জন্য) ঘোড়া বাঁধার উপর যে সাওয়াব লাভ হয়, তা হলো (পরকালে অর্জিত হবে এমন) বাকী কল্যাণ। আর মুজাহিদ (ঘোড়ার দ্বারা) শত্রুদের সম্পদ থেকে যে গণীমত লাভ করে তা হলো নগদ কল্যাণ।
-
عن أبي هريرة -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: «مَنْ احْتَبَسَ فَرَسًا في سَبِيل الله، إيمانًا بالله، وتَصْدِيقًا بِوَعْدِه، فإن شِبَعَهُ وريَّه ورَوْثَهُ وبَوْلَه في مِيْزَانه يوم القيامة».
[صحيح.] - [رواه البخاري.]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান ও তার প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস রেখে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ঘোড়া প্রস্তুত রাখে, কিয়ামতের দিন তার আমেলের পাল্লায় ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাব ওজন করা হবে।”
সহীহ - এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।
ব্যাখ্যা
হাদীসের অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান ও তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস রেখে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় ঘোড়া ওয়াকফ করে রাখে, যাতে তার উপর আরোহন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় মুজাহিদগণ যুদ্ধ করতে পারে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাবের বিনিময়ে সাওয়াব প্রদান করবেন। এমনকি কিয়ামতের দিন এগুলো তার নেক আমলের পাল্লায় রাখবেন। কেননা আল্লাহ বলেছেন, “আর তোমরা যা আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ দেওয়া হবে।” (সূরা আল- আনফাল, আয়াত: ৬০)
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে এসেছে, “ঘোড়া তিন প্রকার: ঘোড়া কারো জন্য পাপ অর্জনের কারণ হয়। আবার কারো জন্য হয় আবরণ। আর কারো জন্য তা হয় সাওয়াবের কারণ। অতঃপর তিনি বললেন, যে ঘোড়া মালিকের জন্য সাওয়াবস্বরূপ হয় তা ঐ ব্যক্তির ঘোড়া, যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর পথে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে বাগান বা সবুজ তৃণভূমিতে বেঁধে রাখে। ঘোড়াটি ঐ চারণভূমি কিংবা বাগান থেকে যে পরিমাপ ভক্ষণ করে এর বিনিময়ে তাকে সাওয়াব দেওয়া হয়। এমনকি এর মল-মূত্রের বিনিময়েও তাকে সমপরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হয়। আর ঘোড়াটি যদি তার রশি ছিড়ে এক বা দু’টি টিলা অতিক্রম করে তবে তার প্রতিটি পদচিহ্ন ও গোবরের বিনিময়েও তাকে সাওয়াব দেওয়া হয়। মালিক ঘোড়াটি নিয়ে কোন নদী অতিক্রম করলে মালিকের অনিচ্ছা সত্বেও সেসময় ঘোড়াটিকে যদি নদী থেকে পানি পান করে ফেললে, তাহলে যে পরিমাণ পানি পান করে তাকে সে পরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
-
عن أبي هريرة -رضي الله عنه- عن رسولِ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أنه قالَ: "مِن خَيرِ مَعَاشِ النّاسِ لهم رَجُلٌ مُمْسِكٌ عِنَانَ فَرسِهِ في سبيلِ اللهِ، يَطيرُ على مَتنِهِ كُلَّما سَمِعَ هَيْعَةً أو فَزعَةً، طَارَ عَليه يَبْتَغِي القَتْلَ، أو المَوتَ مَظانَّه، أو رَجلٌ في غُنَيمَةٍ في رأسِ شَعفَةٍ من هذه الشَّعَفِ، أو بطنِ وادٍ من هذه الأوديةِ، يُقيمُ الصلاةَ، ويُؤتِي الزكاةَ، ويَعبدُ ربَّهُ حتى يَأتِيَه اليقينُ، ليسَ من النَّاسِ إلا في خيرٍ".
[صحيح.] - [رواه مسلم.]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মানুষের জন্যে সর্বোত্তম জীবন হলো ঐ ব্যক্তির জীবন যে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্যে ঘোড়ার লাগাম ধরে থাকে। যখন সে যুদ্ধের আওয়াজ অথবা অস্ত্রের ঝনঝানি শুনে অমনি তার পিঠে চড়ে উড়ে যায় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে শত্রুকে বা শাহাদতকে অনুসন্ধান করে অথবা ঐ লোকের জীবনই উত্তম যে ছাগলপাল নিয়ে পাহাড়ের এসব চূড়াগুলোর মধ্য থেকে কোনো চূড়ায় বা এসব উপত্যকাসমূহ থেকে কোনো উপত্যকায় জীবন-যাপন করে আর যথাযথভাবে সালাত আদায় করে, যাকাত প্রদান করে এবং আমৃত্যু তার প্রভূর ইবাদতে নিমগ্ন থাকে। সে মানুষের মাঝে কেবল কল্যাণমূলক কাজেই মেলা-মেশা করে থাকে।
সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
ব্যাখ্যা
হাদীসটিতে মানুষের সেই জীবনকে সর্বোত্তম জীবন বলা হয়েছে যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ঘোড়ার লাগাম ধরে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, “যখন সে যুদ্ধের আওয়াজ অথবা অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনে অমনি তার পিঠে চড়ে উড়ে যায় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে শত্রুকে অথবা শাহাদতকে অনুসন্ধান করে।” অর্থাৎ সে যখনই শত্রুর আগমনের আওয়াজ শুনে তখনই ঘোড়ার পিঠে দ্রুত বেড়িয়ে পড়ে। ‘হাইআহ’ বলা হয়, শত্রুর উপস্থিত হওয়ার শব্দকে। আর ‘ফায‘আহ’ বলা হয় শত্রুর বিরুদ্ধে দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়াকে। ‘শাহাদাতের স্থানসমূহে শাহাদাত তালাশ করে’ এর অর্থ, শাহাদাতের প্রবল আকাঙ্খার কারণে সে শাহাদাতকে এমনসব স্থানে তালাশ করে যেখানে সেটা পাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এ হাদীসে আরেকটি ব্যাপার সাব্যস্ত হয় যে, নির্জনে বাসবাস করাও উত্তম। যে ব্যক্তি জন-মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্জনে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করে, মানুষের মাঝে কেবল কল্যাণমূলক কাজেই মেলা-মেশা করে থাকে সে ব্যক্তিও উত্তম।
-عن أبي هريرة -رضي الله عنه- مرفوعاً: «من احْتَبَسَ فرسًا في سبيل الله، إيمانًا بالله، وتصديقًا بوعده، فَإِنَّ شِبَعَهُ وَرِيَّهُ وَرَوْثَهُ وَبَوْلَه في ميزانه يوم القيامة».
[صحيح.] - [رواه البخاري.]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান ও তাঁর ওয়াদার প্রতি বিশ্বাস রেখে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ঘোড়া প্রস্তুত রাখে, কিয়ামতের দিন সে তার মীযানের পাল্লায় ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাব দেখতে পাবে।”
সহীহ - এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।
ব্যাখ্যা
এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য, তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কেউ যদি কোনো একটি ঘোড়া ওয়াক্বফ করে, আর তা করে কেবল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও তাঁর ওয়াদার প্রতি বিশ্বাস রেখে, যে ওয়াদার কথা ঘোষণা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আর তোমরা যা আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ দেয়া হবে” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬০] তাহলে আল্লাহ তা‘আলা সে ব্যক্তির ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাবের বিনিময়ে সাওয়াব দান করবেন, এমনকি তিনি সেটাকে কিয়ামতের দিন তার জন্য তার মীযানের পাল্লায় রেখে দিবেন । অনুরূপ তামীম আদ-দারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের জন্য ঘোড়া প্রস্তুত করে রাখবে, অতঃপর সেটিকে সে ঘাস খাওয়াবে, তার প্রতিটি দানা-পানির জন্য একটি করে হাসানাহ বা নেকি তার আমলনামায় যুক্ত হবে।” হাদীসটি ইবন মাজাহ বর্ণনা করেছেন।
মুহতারাম পাঠকবৃন্দ, আশা করি ঘোড়ার ফযীলত বুঝার জন্য উল্লিখিত হাদীসগুলোই যথেষ্ট।
এবার আসুন! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার রাস্তায় জিহাদরত মুজাহিদদের সাথে সম্পৃক্ত ঘোড়া; যা জিহাদের অন্যতম সাওয়ারী ও বাহন, সেই ঘোড়ার মর্যাদা শরীয়াতে কী পরিমাণ রয়েছে, তা একনজর দেখে নিই।
# জিহাদের জন্য ঘোড়া পালনের নির্দেশ কুরআনুল কারীম দিয়েছে।
# ঘোড়া রাখা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত।
# ঘোড়ার খাদ্য-পানি এমনকি পেশাব-পায়খানাও কিয়ামতের দিন মুজাহিদের আমলনামায় নেক আমলের সাথে মাপা হবে।
# কুরআনে ঘোড়ার পায়ের কসম খাওয়া হয়েছে।
# ঘোড়ার কপালে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ রেখে দেওয়া হয়েছে।
# ঘোড়া উত্তম বস্তু হওয়ার নিদর্শন স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন।
# জিহাদের জন্য যে ঘরে ঘোড়া থাকে, সে ঘর জিনদের আশ্রয় থেকে নিরাপদ থাকে।
# ঘোড়ার জন্য খরচ করাকে সদকার সমতুল্য আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
# রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু কুরাইযা এবং বনু নাযীর এর গণীমতের মাল দিয়ে ঘোড়া ক্রয় করেছেন।
# রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের পরে ঘোড়াকে সবচেয়ে পছন্দনীয় বস্তু বলে আখ্যা দিয়েছেন।
# বদর যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দু’টি ঘোড়া ছিল।
# বনু কুরাইযা যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ছয়টি ঘোড়া ছিল।
# বনু মুসতালিক যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট (৩০) ত্রিশটি ঘোড়া ছিল।
# খাইবার যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দুইশত ঘোড়া ছিল।
# তাবুক যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দশ হাজার ঘোড়া ছিল।
# ঘোড়ায় আরোহী মুজাহিদ পদাতিক মুজাহিদের চেয়ে দ্বিগুণ গণীমত লাভ করে।
# অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সত্ত্বেও আজো সারা বিশ্বে সকল যুদ্ধে ঘোড়ার গুরুত্ব অনুধাবন করা হয়।
পুনশ্চ: অতি সম্প্রতি মুরতাদ তাগুত প্রশাসনের র*্যাব আমাদের এক নিরীহ মুসলিম ভাইকে শুধু এই জন্যই গ্রেফতার করেছে যে, সে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের ডাকে পালিত হরতাল চলাকালে ঘোড়ায় চড়ে পিকেটিং করেছিল। আর তা অনলাইনে ভাইরাল হতেই তাগুত প্রশাসন নড়েচেড়ে বসে এবং রাতের আধাঁরে প্রথমে তাকে গুম করে ও পরে গ্রেফতার দেখায়।
এখানে আমি দু’টি কথা বলতে চাই-
১. ই‘দাদ গ্রহনের মাঝে যে শক্তি রয়েছে, তা আবারো দ্বিবালোকের ন্যায় পরিস্কার হয়েছে। শুধু একজন ভাইয়ের কারণেই তাগুত প্রশাসন ও মন্ত্রী-এমপিরা ভীত-বিহবল হয়ে পড়েছে, যা তাদের বক্তব্য থেকে ঝড়ে পড়েছে। অবস্থা দৃষ্টি মনে হচ্ছে যেন, তাদের মসনদ নড়ে উঠেছে, যার কারণে তাদের অস্থিরতা ও পাগলামীর সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মিথ্যাচারের বাধঁহীন বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। আলিম-উলামা, তালিবুল ইলম, দ্বীনদার শ্রেণী ও বিপ্লবী মানুষদের খুন,গুম ও গ্রেফতার করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। যার সাথে তাদের আরো বহু অনৈতিক কর্মকাণ্ড জড়িয়ে আছে। মসজিদ-মাদরাসা বন্ধের পায়তারা করছে। আর হলুদ মিডিয়ার প্রোপাগাণ্ডার মাত্র কি পরিমাণ বেড়ে গেছে, তা সচেতন মহলের নিকট অস্পষ্ট নয়। রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষমতা ব্যবহার করে পাগলা কুকুরের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে ও কোন ন্যায়-নীতির তোয়াক্কা করছে না। নির্লজ্জতার উলঙ্গপনা জনসম্মুখে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে......প্রভৃতি।
২. ই‘দাদ গ্রহনের কোন বিকল্প নেই। তাই সাধ্যানুযায়ী সকলেই ই‘দাদ গ্রহন করতে থাকুন। কারণ, ই‘দাদ ব্যতীত আসন্ন প্রলয়ঙ্কর যে ঝড় আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে, তা কিছুতেই প্রতিরোধ করা যাবে না। হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন ও তাদের এ দেশীয় এজেন্ট আওয়ামী প্রশাসন ও তাদের পোষা কুকুরদের থেকে আমরা আমাদের মসজিদ-মাদরাসাকে হিফাযত করতে পারবো না।
তাই হে সম্মানিত উলামায়ে কেরাম! আপনারা আমাদের মাথার তাজ। আপনাদের দিকে পুরো জাতি তাকিয়ে আছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আপনারা তাদেরকে শরীয়তের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা জানিয়ে দিন। ইদাদ ও জিহাদের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিন। খিলাফাহব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব ফুটিয়ে তুলুন। দিকভ্রান্ত উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়ানো তালিবুল ইলম ও দ্বীনদার শ্রেণীকে সঠিক পথের দিশা দিন। তাদেরকে শরীয়তের দেখানো পথে পরিচালিত করুন। তাগুতের সকল ভয়কে জয় করে একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে গাযওয়াতুল হিন্দের জন্য সকলকে প্রস্তুতি নেওয়ার দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিন। গণতান্ত্রিক সিস্টেমের আন্দোলন ইত্যাদি থেকে বেড়িয়ে আসুন! তাগুতের সাথে সমঝোতার পথ পরিহার করুন ও নববী মানহাজে ফিরে আসুন!
আল্লাহ আপনাদের ও আমাদের সকলকে তাওফকী দিন। আর তিনিই একমাত্র তাওফীকদাতা।
পরিশেষে মহান রবের দরবারে মিনতি- ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন এবং আপনার শত্রু ও আমাদের শক্রদের বিরুদ্ধে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফীক দান করুন। সকল মুসলিম বন্দী ভাইদের সম্মানজনক আশু মুক্তিকে ত্বরান্বিত করুন।
ইয়া রব্ব! আমাদেরকে তাওফীক দিন, যেন আমরা তাদের সকলকে মুক্ত করতে পারি।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله على نبينا محمد.
************
************
Comment