Announcement

Collapse
No announcement yet.

দুর্যোগ, মহামারি ও বদদোয়া প্রসঙ্গে দুটি ভুল ধারণা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দুর্যোগ, মহামারি ও বদদোয়া প্রসঙ্গে দুটি ভুল ধারণা

    দুটি ভুল ধারণাঃ


    এক: "দুর্যোগ ও মহামারিকে আল্লাহর গজব হিসেবে দেখানোকে নাকোচ করা।" ইসলাম কখনোই এই নাকোচকে সমর্থন করে না। মহান আল্লাহ তা'য়ালা এসব আযাব দিয়ে থাকেন যেন মানুষ আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আল্লাহ কার উপর কখন দেবেন, কাকে বেশি ছাড় দিবেন, কাকে কম সুযোগ দিবেন- সেটা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এটা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি না।কিন্তু যখন কোন বিপর্যয় এসে পড়ে এবং সেগুলোর একাধিক বাহ্যত কারণ উপস্থিত থাকে তখন সেগুলোকে আযাব বলা দোষের কিছু না। আবার এর পিছনে সম্ভাব্য কারণ দর্শানোও শরীয়তে নিষিদ্ধ না। যখন শরীয়ত বিপর্যয় আসার বেসিক কিছু কারণ স্পষ্ট করে দিয়েছে তখন বিপর্যয়কে সেদিকে সম্পৃক্ত করা দোষের নয়। বরং আযাব আসার খোদায়ী দর্শন এটাই যে, আমরা কারণগুলো চিহ্নিত করে নিজেরা সতর্ক হতে পারি এবং অন্যকে ভয় দেখাতে পারি। যেন তারাও নিজেদের অপকর্ম ছেড়ে দেয়।আল্লাহ তা'য়ালা বলছেন,“স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসে।” (সূরা রুম :৪১)

    হাদীসে স্পষ্ট এসেছে, যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লিলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভভ হয় যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। ( সুনানে ইবনে মাজাহ-৪০১৯)

    রোগবালাই, দুর্যোগ, মহামারির সাথে আল্লাহ আযাব-গজবের নিবিড় সম্পর্ক আছে। এই নিবিড় সম্পর্ক বুঝতে না পারাই বস্তুবাদী চিন্তা। এটা বুঝতে না পারার দরুন আজকে দেখা যাচ্ছে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের বস্তুগত প্রস্তুতি আর সাবধানতার কোন শেষ নেই। কিন্তু আমলী সংশোধনের কোন চিন্তা নেই। আল্লাহ তা'য়ালা কেন এগুলো দেন? আযাব- গজবের খোদায়ী দর্শনকে যদি আমরা বুঝতে না পারি, তাহলে আমরা সামরিক রক্ষা পেলেও স্থায়ী সমাধান ও চূড়ান্ত লক্ষ্যএ পৌঁছতে পারব না।

    দুর্যোগ, মহামারি ও রোগব্যাধিকে পাত্রভেদে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কারো জন্য এগুলো গজব, কারো জন্য পরীক্ষা, কারো জন্য রহমত। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মহামারীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি আমাকে বললেন, এটা এক রকম ‘আযাব। আল্লাহ যার উপর চান এ ‘আযাব পাঠান। কিন্তু মু’মিনদের জন্য তা তিনি রহমাত গণ্য করেছেন। তোমাদের যে কোন লোক মহামারী কবলিত এলাকায় সাওয়াবের আশায় সবরের সাথে অবস্থান করে এবং আস্থা রাখে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই হবে, তাছাড়া আর কিছু হবে না, তার জন্য রয়েছে শাহীদের সাওয়াব।
    (সহীহ : বুখারী ৩৪৭৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৬০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৪২)

    দুর্যোগ কিংবা মহামারিতে একজন মুমিন মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। এটা তার জন্য রহমত। আর মুমিনদের মধ্যে যারা জীবিত তাদের জন্য পরীক্ষা ও গোনাহ মাফ হওয়ার মাধ্যম। ঈমানের বদৌলতে সে আল্লাহর গজব থেকে মুক্ত। ঈমানের কারণেই এই গজব রহমত কিংবা পরীক্ষায় রূপান্তরিত হয়। আরেকটা ব্যাপার হল, কারো ঈমান জাতিগত আযাব থেকে মুক্তির নিশ্চিয়তা দেয় না।ফলে সে এই আযাবে আক্রান্ত হতেই পারে। কিন্তু এটা তার জন্য কাফেরদের মত গজব বলে বিবেচিত হবে না।

    কোন কাফের মারা গেলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি। এটা তার জন্য আযাব। আর কাফেরদের জন্য যারা জীবিত তাদের জন্যও এটা গজব। সে এই কষ্টে ভুগছে কিন্তু মুসলিমদের মত তার কোন গোনাহ মাফ হচ্ছে না। তার এই ভোগান্তির কোন বেনিফিট নেই। পৃথিবীতে কুফর আর শিরকের মত কোন গোনাহ নেই। এটা সবচেয়ে বড় পাপ। কোন পাপের সাথেই এর তুলনা হয় না। একমাত্র কুফুরের কারণেই এটা কাফেরের জন্য গজব বলে বিবেচিত হবে। একজন শুধু কাফের, এটাই অপরাধ হিসেবে যথেষ্ট। ফলে অবস্থাভেদে ইসলামের এমন বিবেচনাকে অমানবিক হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এরকম মুহূর্তে যোগ্য কাফেরকে দ্বীনের স্বার্থে আমরা সেবা-সাহায্য করতে পারি। উপযুক্ত কাফেরের জন্য সহানুভূতিও প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু এই সেবা কিংবা সহানুভূতি কখনোই দুর্যোগ কিংবা মহামারিকে গজব হিসেবে চিহ্নিত করার পরিপন্থী নয়। এটা অমুসলিমদের দূরে সড়ানোরও বিষয় নয়। বরং আল্লাহর সুন্নাহতে এটাও আছে, জাহান্নাম ও গজবের ভয় দেখিয়ে কাফেরদের ঈমানের দিকে ধাপিত করার চেষ্টা করা। পবিত্র কুরআনে এর অসংখ্য নজীর পাওয়া যায়।

    আর সার্বিকভাবে এগুলো সবার জন্যই রবের দিকে ফিরে আসার বার্তা। কাফেররা যেন কুফুর ছেড়ে দেয় আর মুমিনরা যেন পাপাচার ছেড়ে দেয়। মুসলমান হিসেবে বস্তুবাদী প্রস্তুতির পাশাপাশি গজব ও পরীক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুমিন জমিনের সমস্ত বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেই খোদায়ী ব্যাখ্যা খুঁজবে। সতর্কতা অবলম্বন ও চিকিৎসা গ্রহণ সুন্নত। কিন্তু সেগুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপন কুফুর। আল্লাহর গজব ও পরীক্ষাকে উপলদ্ধি করতে না পারাটাও আরেক গজব।

    দুই: কাফেরদের জন্য বদদোয়া কিংবা ধ্বংস কামনাকে সুন্নাহর বিপরীত হিসেবে দেখানো। এটি চরম ভ্রান্তি। হেদায়েতের দোয়ার মত কাফেরদের জন্য বদদোয়ার ব্যাপারটিও স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম এবং সালাফদের থেকে প্রমাণিত। বিশেষ করে যদি সেই কাফেররা মুসলমানদে ব্যাপারে জালিম হয়। পূর্ববতী নবীদের থেকেও এই আমল প্রমাণিত। (সূরা ইউনুস-৮৯, সূরা নূহ-২৭)

    খন্দকের যুদ্ধের দিন আল্লাহর রাসূল কাফেরদের জন্য বদদোয়া করে বলেছিলেন, আল্লাহ তাদের ঘরবাড়ি ও কবরকে আগুন দিয়ে ভরে দিক যেভাবে তারা আমাদের নামাজ থেকে বিরত রেখেছে। (বুখারী-৪১১১)
    আহযাবের যুদ্ধের দিনও তিনি শত্রু কাফেরের জন্য ধ্বংসের বদদোয়া করেছেন। (মুসলিম)
    মুসনাদে আহমাদের এক বর্ণনায় এসেছে আল্লাহর রাসূল তাঁর দোয়ায় বলতেন, আপনি কাফেরদের হত্যা করুন, যারা আপনার নবীকে অস্বীকার করে, আপনার পথে বাঁধা দেয়। তাদের উপর আপনার কঠিন আযাব চাপিয়ে দিন।

    ইবুনল মুলকিন রহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় কাফেরদের জন্য এই ধরণের বদদোয়া করা যাবে। সাথে সাথে বদদোয়ার কারণও উল্লেখ করা যাবে। যেন উজর স্পষ্ট হয়। ( আল ই'লাম বিওয়ায়িদি উমদাতিল আহকাম-২/২৮০)
    বুখারীর আরেক রেওয়ায়েতে এসেছে, আল্লাহর রাসূল এভাবে বদদোয়া করেছেন যে, হে আল্লাহ! মক্কার মত মদীনাকেও আমাদের কাছে প্রিয় করে দিন। আর এখানকার জ্বরকে জুহফায় স্থানান্তর করুন। (বুখারী-৬৩৭২)

    ইমাম নববী রহঃ বলেন, খাত্তাবী সহ প্রমুখদের বক্তব্য হল জুহফায় তখন ইহুদিরা বাস করত। এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, কাফেরদের অন্য রোগবালাই ও ধ্বংসের দোয়া করা যায়। (৯/১৫০)

    ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, জালেম কাফেরদের জন্য বদদোয়া করা শরীয়ত সম্মত। ( মাজমুঊল ফাতাওয়া-৮/৩৩৫)
    বদরুদ্দীন আইনী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, কাফেররা দ্বীনের অবমাননা করলে তাদের জন্য বদদোয়া বৈধ। (২/২৯)

    এমনকি জালেম কাফেরদের এলাকায় মুসলিম থাকলেও তাদের জন্য বদদোয়া করা বৈধ। যেমন আল্লাহর রাসূল কুরাইশদের মাঝে মুসলিম থাকা সত্ত্বেও তাদের জন্য দুর্ভিক্ষ এবং ধ্বংসের দোয়া করেছেন। (বুখারী-২৯৩২) আর এমতাবস্থায় যদি সেই অঞ্চলে বদদোয়া কার্যকর হয়, তাহলে সেটা কাফেরদের জন্য গজব আর মুমিনদের জন্য রহমত। ইসলামী শরীয়তে এরকম আরো দৃষ্টান্ত ও দলিল পাওয়া যাবে। ইসলামে কুনুতে নাযেলা পাঠের প্রচলন এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

    তবে বদদোয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল কাফেরদের ধ্বংসের কামনা করা যাবে না। কারণ এটি অসম্ভব। আল্লাহর সুন্নাহ এবং নির্ধারিত সিদ্ধান্তের বিপরীত। ঈসা আঃ এর আগমনের পূর্বে এমনটি হবে না। পৃথিবীর বুকে তখন পর্যন্ত কাফেরদের অবস্থান থাকবেই। তাই বিষয়টি অসম্ভব এবং আল্লাহর সুন্নাহের পরিপন্থী। আল্লাহর সুন্নাহ কখনোই পরিবর্তন হওয়ার নয়। আর দোয়ার ক্ষেত্রে অসম্ভব কিছু চাওয়া বৈধ নয়। এটাকে বলে, দোয়ায় বাড়াবাড়ি করা। এর বিভিন্ন ধরণ আছে। এর মধ্যে একটি হল, এমন কিছু চাওয়া যেটা আল্লাহ করেননা।

    সুতরাং জালেম কাফেরদের জন্য বদদোয়া করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত। ইসলাম কাফেরদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করার যেমন বৈধতা দিয়েছে তেমন বদদোয়া করার অনুমোদনও দিয়েছে। শুধু তায়েফের ঘটনাই আমাদের জন্য শরীয়ত না, খন্দক, আহযাব ও কুরাইশদের ঘটনাও আমাদের শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত। কিসরার রাজত্ব ধ্বংসের বদদোয়াও আমাদের জন্য অনুসরণীয়। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন ব্যবস্থা। তাই খণ্ডিতভাবে ইসলামকে দেখলে তার সার্বজনীনতায় ব্যাঘাত ঘটবে। আমরা সার্বজনীন ইসলামের জন্য আদিষ্ট, খণ্ডিত ইসলামের জনা না। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন, "তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তারা পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া অন্য কিছু পাবে না এবং পুনরুত্থান বা কিয়ামতের দিনে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা কিছু করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে উদাসীন নন।" (সুরা বাকারা :৮৫)

    --সংগৃহীত
    আল্লাহ লেখককে উত্তম বিনিময় দান করুন।
    সত্য ন্যায়ের গান, গেয়ে মোরা সবে
    উড়াবো বিজয় নিশান...


  • #2
    আল্লাহ তায়ালা আপনাকেও উওম প্রতিদান দান করুন। আমীন

    Comment


    • #3
      অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাই।
      আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন
      গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

      Comment


      • #4
        মাশাআল্লাহ, খুব সুন্দর পোস্ট। জাযাকাল্লাহ
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment

        Working...
        X