প্রশ্নঃ সাবিলিল্লাহ তো একটি ব্যাপক বিষয় আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের জন্য করা প্রত্যেক কাজই তো সাবিলিল্লাহের অন্তর্ভুক্ত তাহলে এখানে শুধু জিহাদকে ফি সাবিলিল্লাহ উদ্দেশ্য নেওয়ার কি প্রয়োজন?
- উত্তর: শাব্দিক অর্থে দ্বীনের জন্য করা প্রতিটি কাজই সাবিলিল্লাহ তবে ইসলাম তো শাব্দিক অর্থে নয় পরিভাষায় বিশ্বাসী।আর পরিভাষায় সাবিলিল্লাহ কাকে বলা হয় আর সে হিসেবে এখানে আয়াতে উদ্দেশ্য কোনটি হবে, সেটির জন্য পূর্ব উল্লেখিত দলিল গুলো যথেষ্ট মনে করছি। ভালোভাবে বুঝতে দলিল গুলোতে পুনরায় দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে।
হজ্জ,জুমা, দ্বীন শিক্ষাও তো সাবীলিল্লাহ?
প্রশ্নঃযদি কোন ভাই মনে করেন এই উত্তর মেনে নিতে পারছিনা। কারণ সব ধরনের দ্বীনি প্রচেষ্টা ফি সাবিলিল্লাহ দ্বারা উদ্দেশ্য বললেন সেটা যদি মেনেও নেই তারপরও তো হাদিসে হজ্জ,জুমা, দ্বীন শিক্ষার জন্য বের হওয়াকেও তো সাবীলিল্লাহ বলা হয়েছে যেমন জিহাদের ক্ষেত্রে সাবিলিল্লাহর বলা হয়েছে। সুতরাং এটা ব্যাপকতার দাবি রাখে ,এবং সকল দ্বীনি প্রচেষ্টা যে সাবিলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত সেটাই বোঝা যায়।
উত্তর: এখানে উত্তর দুভাবে দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
- একটি হচ্ছে ইনকারি (অস্বীকার মূলক)
- প্রথম উত্তর:সাবিলিল্লাহ দ্বারা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ উদ্দেশ্য না হয়ে ব্যাপক অর্থ হওয়ার দাবি যারা করেন তাদের প্রথমত সে বিষয়ে দলিল উপস্থাপন করে প্রমাণ করা জরুরী। কারণ ফিকহের অন্যতম প্রসিদ্ধ কায়দা:
البينة على المدعى : অর্থাৎ: "দাবি যে করবে তাকে দলিল উপস্থাপন করতে হবে।" তাই দলিল উপস্থাপন করে বিষয়টি প্রমাণ করা পর্যন্ত সেসকল ভাইদের কথা গ্রহণ করার মতো কোনো কারণ আপাতত পাচ্ছিনা।
বাকি কথা হলো যদি এক্ষেত্রে আমাদের দলিলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে উপরোক্ত দলিল গুলো দেখে নেওয়ার পাশাপাশি গত ২০২১ এর জুন মাসে গবেষণামূলক দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ এর মূখপত্র মাসিক আল কাউসারে বিস্তারিতভাবে দলিলের আলোকে মাওলানা মুহাম্মাদ আনওয়ার হুসাইন দাঃবাঃ লিখিত প্রবন্ধ "যাকাতের সপ্তম খাত 'ফি সাবিলিল্লাহ' অর্থ উদ্দেশ্য: একটি পর্যালোচনা" শিরোনামে,যা দীর্ঘ ৫-১২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। সেটা দেখে নেওয়ার অনুরোধ করছি। সেটা আমার জন্য কেমন যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি অবস্থা। সেখানে চার মাযহাবের দলিল গুলোত সহ আলোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাই নিজের থেকে কিছু বলার চেয়ে সেটা দেখে নেওয়াই যথেষ্ট মনে করছি। তবে সহায়ক হিসেবে উপরোক্ত দলিল গুলো উল্লেখ করেছি যাতে করে বুযু্র্গানে দ্বীনের সাথে সওয়াবে শরীক হওয়া থেকে বঞ্চিতের অন্তর্ভুক্ত না হই।
- দ্বিতীয় উত্তর
তাসলিমী): যদিও সাবিলিল্লাহ ব্যাপক অর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে সেসকল ভাই ও বন্ধুদের কথা মেনে নেই তাহলে বলবো: প্রিয় ভাই,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সেগুলো কে "সাবিলিল্লাহ" বলেছেন তখন আমি সেটাকে মেনে না নেয়ার কে! তবে ভাই সেগুলো আসলে কোন ক্ষেত্রে সেটা একটু দলিলের আলোকে জেনে নেই।কারণ ভাই শাশুড়ির শাড়ি স্ত্রী পড়লেই কি স্ত্রী শাশুড়ি হয়ে যায়? কখনোই না। তেমনি সাবিলিল্লাহ শব্দটি কোন কারণে হজ্জ, জুমা ও দ্বীনি শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার হলেই দুটো এক হয়? কখনোই না! তাই আমরা নির্ভরযোগ্য দলিলের আলোকে এখন জানবো যে, এগুলো প্রকৃতপক্ষে কোন দিক বিবেচনায় সাবিলিল্লাহ বলা হয়েছে।
এখন আসা যাক হাদীস শরীফে বর্ণিত যে, হজ্ব, জুমা, ইলেম শিক্ষার জন্য বের হওয়াকেও সাবিলিল্লাহ বলা হয়েছে সে আলোচনায়।
হজ্জ সাবীলিল্লাহ হওয়ার ব্যাখ্যা প্রথমে হজ্জ সাবীলিল্লাহ কখন তার উত্তর জেনে নেয়া যাক।
যেসকল ভাইগন হজ্জকে সাবিলিল্লাহ বলেন তাদের দলিল শক্তিশালী করতে হেদায়া কিতাবের হাশিয়ার(টিকার) সারাংশের আলোকে হয়তো এভাবে বলা যেতে পারে যে,
إن الحج من"فى سبيل الله"كما قال الأمام محمد واحمد والحسن واسحاق (رح)فلذا لما تختص فى سبيل الله بالجهاد؟
অর্থাৎ:ইমাম মুহাম্মাদ, আহমদ, হাসান ও ইমাম ইসহাক রহঃ গনও তো হজ্জকে সাবিলিল্লাহ বলেছেন তাহলে সাবিলিল্লাহ জিহাদের সাথে খাছ কেন হবে।(ভাবার্থ)।
সেটার ব্যাখ্যা হলো।
সাবিলিল্লাহ উত্তম খাত হওয়ার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুফতী আযম পাকিস্তান মুফতী শফি রহঃ বলেন:
یہ ہی کہ اسمیں دو فاءدے ہیں،ایک توغریب مفلس کی امداد دوسرے:ایک دینی خدمت میں اعانت،کیونکہ سبيل الله سے مراد وہ غازی اور مجاہد ہے جس کے پاس اسلحہ اور جنگ کا ضروری سامان خریدنے کے لئے مال نہ ہو،یا وہ سخص جسکے ذمہ حج فرض ہوچکا ہو مگر اسکے پاس اب مال نہیں رہا جس سے وہ حج فرض ادا کرے،یہ دونوں کام خالص دینی خدمت اور عبادت ہیں،اسلے مال زکوٰۃ کو پر خرچ کرنے میں ایک مفلس کی امداد بھی ہے،اور ایک عبادت کی ادائیگی میں تعاون بھی،
- কারণ এই যে, উহার মধ্যে দুটি উপকার রয়েছে এক.গরীব এবং অসহায়দের সাহায্য করা। দুই. দ্বীনি খেদমতের সাহায্য। কেননা "সাবিলিল্লাহ" উদ্দেশ্য ঐ গাজী এবং মুজাহিদ যার কাছে অস্ত্র এবং যুদ্ধের জরুরী সামগ্রী ক্রয় করার মতো কোনো সম্পদ নেই। অথবা ঐ ব্যক্তি যার জিম্মায় হজ্জ ফরয হয়েছে কিন্তু তার কাছে এখন সম্পদ বাকি নেই যার দ্বারা সে হজের ফরয আদায় করতে পারে। এই দুটি খালেছ দ্বীনি কাজ এবং ইবাদত। এজন্য যাকাতের সম্পদ তাদের উপর খরচ করলে একজন অসহায়ের সাহায্য ও হয় এবং একটি ইবাদত আদায়ের ক্ষেত্রে সাহায্য ও হয়।
- এই আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে,হজ্বের বিষয়টি যখন কোন ব্যক্তির উপর এমন হয়েছে যে তার উপর হজ্জ ফরয হওয়ার পর এখন কোন কারণে হজ্জ আদায় করার মতো অর্থ তার নেই। তখন এই ফরয আদায় করতে যাকাতের অর্থ তাকে দেয়া যাবে এবং হজ্বের ক্ষেত্রে এমন অবস্থা তৈরি হলে শুধু ফি সাবিলিল্লাহ এর উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে অন্যথায় নয়।
দ্বীন শিক্ষা ও জুমা সাবীলিল্লাহ হওয়ার ব্যাখ্যা
এখন আসুন জুমা এবং ইলেম শিক্ষার জন্য বের হওয়াকেও সাবিলিল্লাহ বলা হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা জেনে নেই।
দারুল উলুম দেওবন্দের দীর্ঘদিনের শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী(রহঃ)তুহফাতুল আলমায়ী শরহুত তিরমিযীতে কিতাবুল জিহাদের একদম প্রথম পৃষ্ঠায় বলেন:
- ....ليكن جہاں لفظ جہاد آیا ہے یا مجاہدہ کے مادہ کے ساتھ فی سبیل اللہ آیا ہے یا صرف فی سبیل اللہ آیا ہے جیسے مصارف زکات کے بیان میں اور انفاق کی فضیلت میں ان سب جگہوں میں خاص اصطلاحی معنی مراد ہیں ،سورہ التوبہ میں جہا بھی اس قسم کی آیات ائ ہیں :شاہ عبد القادر صاحب دہلوی قدس سرہ نے اور ان کی اتباع میں شیخ الہند قدس سرہ نے "لڑنا" ترجمہ کیا ہے، اور حدیث کی کتابوں میں جو ابواب الجہاد اور ابواب فضائل الجہاد آئے ہیں وہا بھی یہی خاص اصطلاحی معنی مراد ہیں،-
- ..... কিন্তু যেখান جهادশব্দ এসেছে অথবা مجاهده এর মাদ্দা এর সাথে ফি সাবিলিল্লাহ শব্দ আসে অথবা শুধু সাবিলিল্লাহ শব্দ আসে যেমন যাকাতের খাতসমূহের এবং ইনফাক তথা আল্লাহর রাস্তায় খরচের ফজিলতের ব্যাপারে। ঐ সমস্ত জায়গায় মধ্যে বিশেষ পারিভাষিক অর্থ উদ্দেশ্য।সূরা তাওবার মধ্যে যেখানেই এজাতীয় শব্দ এসেছে শাহ্ আব্দুল কাদের রহঃ এবং তেনার অনুসরণে শাইখুল হিন্দ রহঃ "লড়াই করা" তরজমা করেছেন, এবং হাদিসের কিতাব সমূহে যে,আবওয়াবুল জিহাদ (জিহাদ সম্পর্কে অধ্যায়) এবং আবওয়াবু ফাজায়িলিল জিহাদ (জিহাদের ফজিলত সম্পর্কিত অধ্যায় সমূহে) এসেছে সেখানেও এই বিশেষ পারিভাষিক অর্থ (অর্থাৎ: জিহাদ)উদ্দেশ্য।
কিছুদূর গিয়ে বলেন:
- ،پہلے ابواب البیوع کے شروع میں میں بتا چکا ہوں کہ جہاد ایک اسلامی اصطلاح ہے، اور جب قرآن و حریث یہ لفظ بولا جاتا ہے تو اس سے قتال فی سبیل اللہ مراد ہوتا ہے،البتہ بعض کاموں کو جہاد کے ساتھ لاحق کیا گیا ہے،ان کےلئے یہ الحاق ہی فضیلت ہے،جيسےحدیث ہے: من خرج في طلب العلم فهو في سبيل الله حتي يرجع،اس میی نبی صلی اللہ علیہ و سلم نے طلب علم کو في سبيل الله قرار ديا ہے،یہ الحاق ہی طلب علم کیلئے فضیلت ہے،اسى طرح دعوت و تبلیغ کے کام کا فى سبيل الله کے ساتھ الحاق کیا جاسکتا ہے، اور یہ الحاق ہی اس کیلئے فضیلت ہوگی،قرآن و حدیث میں فضائل جہاد کی جو آیتیں اور حدیثیں ہیں وہ سب فضیلتیں نہ طالب علم پر منطبق کی جا سکتی ہیں نہ تبلیغ والوں پر، یہ خاص بات یاد رکھنی چاہیئے
- "পূর্বে ক্রয় বিক্রয়ের অধ্যায়ের শুরুতে আমি আলোচনা করেছি যে, জিহাদ একটি ইসলামী পরিভাষা এবং যখন কুরআন হাদীসের মধ্যে এই শব্দ উল্লেখ করা হয় তখন তার দ্বারা "কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ" উদ্দেশ্য হয়। সুতরাং কিছু কাজ সমূহকে জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ওগুলোর এই সম্পূক্ত করণই উহার ফজিলত। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে: من خرج لطلب العلم فهو فى سبيل الله حتى يرجع উহার মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলেম তলব করাকে ফি সাবিলিল্লাহ সাব্যস্ত করেছেন। এই সম্পূক্ত করণই তালিবে ইলমের জন্য ফজিলত। এরকম ভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজকে ফি সাবিলিল্লাহ এর সাথে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এই সম্পূক্ত করণই তার জন্য ফজিলত সাব্যস্ত হবে। কুরআন ও হাদীসের মধ্যে জিহাদের ফজিলত সম্পর্কিত যে আয়াত সমূহ এবং হাদীস সমূহ এসেছে ঐসমস্ত ফজিলত সমূহ না তালিবে ইলমের জন্য সাব্যস্ত করা যাবে না তাবলীগের লোকদের উপর,এই বিশেষ কথাটি স্বরণ রাখা উচিত।"
চলবে ইনশাআল্লাহ।....
Comment