Announcement

Collapse
No announcement yet.

যাকাতের শ্রেষ্ঠ মাছরাফ ও বর্তমানে করণীয়-৪

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যাকাতের শ্রেষ্ঠ মাছরাফ ও বর্তমানে করণীয়-৪

    মাদ্রাসার ছাত্র এবং তাবলীগ জামাতের মুবাল্লিগীন সাবিলিল্লাহ আখ্যা দেয়া সম্পর্কে।
    খাইরুল ফতোয়া ৩/৩৮৩,(মাকতাবায়ে ইমদাদিয়া মুলতান,পাকিস্তান)কিতাবুয যাকাতে বলা হয়েছে যে,
    • ফি সাবিলিল্লাহ:ফি সাবিলিল্লাহ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর নিকট উহার দ্বারা উদ্দেশ্য: দরিদ্র গাজি মুজাহিদ। কেননা শরয়ী উরফ এর মধ্যে সাবিলিল্লাহ মতলক ভাবে যেখানেই এসেছে উহার দ্বারা ইহাই উদ্দেশ্য হয়েছে। এবং ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ এর নিকট ঐ ব্যক্তি যে হজ্জ করতে গিয়ে অধিক খরচের কারণে রাস্তার পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। উনার দলিল হচ্ছে যে, এক ব্যক্তি নিজের উট আল্লাহর রাস্তায় দান করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেন: যে, উহার উপর হাজিকে আরোহণ করাও।
    • কিন্তু বাদায়ে কিতাবের মুসান্নিফ বলেন যে, উহা ব্যাপক রাখাই উপযুক্ত। প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যে দ্বীনের জন্য চেষ্টা করে এবং ইবাদতের মধ্যে লিপ্ত থাকে যেমন: দ্বীনি শিক্ষা অর্জন কারি ছাত্রগন, দ্বীনের দাওয়াত দানকারীগন। যদি উনারা মুহতাজ/মুখাপেক্ষী হন তাহলে তাদেরকে দেয়া সাবিলিল্লাহ হবে।" (খাইরুল ফতোয়া)।
    এখানে উপরোক্ত আলোচনায় বাদায়েউস সানায়ে কিতাবের মুসান্নিফের কথা থেকে তো একথা সুস্পষ্ট যে, দ্বীনি সকল প্রচেষ্টা সাবিলিল্লাহ এর অন্তর্ভুক্ত এবং ব্যাপক রাখাটাই উচিত। আর তিনি সুস্পষ্টভাবে সাবিলিল্লাহ এর মধ্যে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন কারি ছাত্রগন, দ্বীনের দাওয়াত দানকারী মুবাল্লিগীনদেরকে শামিল করেছেন। সুতরাং তালেবে ইলম ও মুবাল্লিগীনে দ্বীন সাবিলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত।
    • উত্তর: মুফতী আযম পাকিস্তান মুফতী শফী রহঃ তাফসিরে মারেফুল কুরআনের সূরা তওবার ৬০ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বাদায়েউস সানায়ে কিতাবের মুসান্নিফের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, "উল্লেখিত আলোচনার দ্বারা জানা গেল যে,যা সাবিলিল্লাহ এর মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে তা হাজতমন্দ ও দরিদ্র হওয়ার শর্তের সাথে শর্ত যুক্ত।"
    (তাফসিরে মারেফুল কুরআন:৪/৪০৭)
    একটু পরে গিয়ে সাবিলিল্লাহ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন যে:
    • "তাম্বীহ(সতর্কতা):ফি সাবিলিল্লাহ শব্দটি শাব্দিক অর্থ বিবেচনায় অত্যন্ত ব্যাপক।যে যে কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয় ঐ সবগুলো এই ব্যাপক অর্থের দিক থেকে ফি সাবিলিল্লাহ এর অন্তর্ভুক্ত।যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাফসির এবং বয়ান, এবং তাফসিরের ইমামগনের দিক থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে শুধু শাব্দিক অর্থের মাধ্যমে কুরআন বুঝতে চায় এখানে তারা এই ভুলে লিপ্ত রয়েছেন যে, ফি সাবিলিল্লাহ শব্দটি দেখেই যাকাতের ক্ষেত্রগুলোতে ঐসকল কাজগুলো প্রবেশ করে দিয়েছে যেগুলো কোন দিক বিবেচনায় নেকি বা ইবাদত। মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, মুসাফির খানা ইত্যাদি বানানো,কূপ,পুল(ব্রীজ) সড়ক বানানো এবং এসকল সামাজিক কাজের প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের বেতন এবং সমস্ত অফিসিয়াল প্রয়োজন সমূহ এসকল কিছুকে তারা সাবিলিল্লাহ এর অন্তর্ভুক্ত করে যাকাতের ক্ষেত্র হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। যা সম্পূর্ণ ভুল এবং উম্মাহর ইজমার বিপরীত।
    • সাহাবায়ে কেরাম রাঃ গন যেনারা সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ কুরআনে কারীম পড়েছেন এবং বুঝেছেন এবং তাবেয়ীন ইমামগনের যত তাফসির এই শব্দ (ফি সাবিলিল্লাহ) সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে সেখানে এই শব্দটি হাজিগন এবং মুজাহিদের জন্য খাছ করে দেয়া হয়েছে।
    এক হাদীসে এসেছে যে,এক ব্যক্তি নিজের একটি উটকে ফি সাবিলিল্লাহ তে ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেনাকে বললেন যে, তুমি এই উটকে হাজিদের সফরের জন্য ব্যবহার করো।(আল মাবসুত লিস সারাখসি: ১০ পৃষ্ঠা, খন্ড ৩)।
    • ইমাম ইবনে জারির ও ইমাম ইবনে কাসির রহঃ এর কুরআনের তাফসির তো হাদীসের বর্ণনা সমূহের আলোকে করতে বদ্ধপরিকর তেনারা সকলে ফি সাবিলিল্লাহ শব্দটি এমন মুজাহিদ ও হাজিদের জন্য খাছ করেছেন যে, যাদের কাছে জিহাদ অথবা হজের আসবাবপত্র বিদ্যমান নেই।
    এবং সেসকল ফুকাহাগন তালেবে ইলম এবং অন্যান্য দ্বীনি কাজকারিদের ইহার মধ্যে শামিল করেছেন তাহলে সেটা এই শর্তে করেছেন যে,সে হাজতমন্দ ও দরিদ্র হতে হবে।আর এটা তো প্রকাশ আছে যে,হাজতমন্দ দরিদ্র হওয়া তো স্বয়ং নিজেই যাকাতের ক্ষেত্রগুলোর প্রথম ক্ষেত্র। তাহলে উহাকে সাবিলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত না করা হলেও তো সেটা যাকাতের উপযুক্ত ছিল।
    • কিন্তু চার ইমাম এবং উম্মাহর ফকীহগনের মধ্যে হতে কেউ এটা বলেলনি যে, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসার নির্মাণ কাজ এবং উহার সমস্ত প্রয়োজন সমূহ যাকাতের ক্ষেত্রগুলোর অন্তর্ভুক্ত। বরং উহার বিপরীত একথা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, যাকাতের টাকা এসকল জিনিস সমূহে খরচ করা জায়েয নেই।
    হানাফী ফকীহদের মধ্যে শামসুল আইম্মা সারাখসি রহঃ মাবসুত এবং শরহে সিয়ারে কিতাবের মধ্যে এবং শাফেয়ি ফকীহগনের মধ্যে আবু উবাইদা রহঃ কিতাবুল আওয়ালের মধ্যে,মালেকী ফকীহগনের মধ্যে ইমাম দরদরির রহঃ শরহে মুখতাসার খলিলের মধ্যে এবং হাম্বলি ফকীহগনের মধ্যে ইমাম মুয়াফ্ফেকুদ্দীন ইবনে কুদামা রহঃ তেনার মুগনি কিতাবের মধ্যে উহার ব্যাপারে পূর্ণ বিস্তারিত লিখেছেন।
    • তাফসিরের ইমামগন এবং উম্মাহর ফকীহগনের উল্লেখিত সুস্পষ্ট আলোচনা ব্যতিত যদি একটি বিষয় নিয়েও ফিকির করা হয় তাহলে তা এই মাসআলা বুঝতে সম্পূর্ণ যথেষ্ট বলে প্রমাণিত হবে।উহা এই যে, যদি যাকাতের মাসআলায় এতটাই ব্যাপকতা থাকে যে, সমস্ত আনুগত্য,ইবাদাত সমূহ এবং প্রত্যেক প্রকারের নেক কাজে খরচ করা উহার অন্তর্ভুক্ত তাহলে তো কুরআনের এই‌ ৮টি ক্ষেত্র বর্ণনা করা (মাআযাল্লাহ/আল্লাহর কাছে পানাহ চাই) সম্পূর্ণ অনার্থক হয়ে যায় এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণনা সমূহ যা এই ব্যাপারে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা সদকাতের ক্ষেত্র সমূহ নির্দিষ্ট করার কাজ নবিদেরকে অর্পণ করেননি বরং তিনি নিজেই উহার ৮ ক্ষেত্র নির্ধারণ করে দিয়েছেন।"
    তাহলে যদি সাবিলিল্লাহ এর অর্থের মধ্যে সমস্ত আনুগত্য ও নেকির কাজ সমূহ অন্তর্ভুক্ত হয় এবং উহার মধ্যে হতে প্রতিটি ক্ষেত্রে রাখা সম্পদ খরচ করা যায় তাহলে মাআযাল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বর্ণনা সম্পূর্ণ ভুল বলতে হবে।
    বিধায় জানা গেল যে,সাবিলিল্লাহ এর শাব্দিক অর্থ দ্বারা অজ্ঞ লোকেদের যে ব্যাপকতা বুঝে আসে উহা আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য উহা যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণনা, সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এবং তাবেয়ি রহঃ গনের সুস্পষ্ট আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত।
    (তাফসিরে মারেফুল কুরআন, সূরা তওবার ৬০ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়,৪/৪০৭-৪০৮)।

    উপরোক্ত আলোচনায় একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে,সাবিলিল্লাহ বলতে যাকাতের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে হাজি এবং মুজাহিদ গনই উদ্দেশ্য।আর হাজিগন কখন উদ্দেশ্য হবেন সেটা নিয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

    সংশয় সম্পর্কিত আলোচনা এপর্যন্ত শেষ করা হলো। এরপর যাকাতের ক্ষেত্রগুলোর ব্যাপারে বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে আর করবো ইনশাআল্লাহ।​


    চলবে ইনশাআল্লাহ.......

  • #2
    জাযাকাল্লাহ খাইরান মুহতারাম ভাই
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment

    Working...
    X