Announcement

Collapse
No announcement yet.

মানব জীবনে ইসলামী শরীয়াহর প্রয়োজনীয়তা!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মানব জীবনে ইসলামী শরীয়াহর প্রয়োজনীয়তা!

    মানব জীবনে ইসলামী শরীয়াহর প্রয়োজনীয়তা।



    الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد الأنبياء والمرسلين سيدنا محمد وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين، أمّا بعد
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মানব সমাজ নানা বিপদাপদে জর্জরিত। যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো বিভিন্ন জায়গায় চলমান রক্তক্ষয়ী লড়াই সমূহ। এর সবগুলোর মূলে রয়েছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাই আজ পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যারা পাঁচটি জরুরত(যেমন আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা,) পূর্ণ করতে দিন রাত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাটুনি করে। আর এই পুঁজিবাদীরা তাদের এই আয়টুকুও শেষ করে দিচ্ছে।
    আর ফুলে মোটা হচ্ছে কিছু আত্মসাৎকারী। যাদের পরিমাণ ১% এর বেশি হবে না(তারা হলো বিভিন্ন রাজ পরিবারের সদস্য এবং উন্নত বিশ্বের সমস্ত রাজা বাদশাহরা)। আর বাকি ৯৯% হলো দরিদ্র। অফ্রফম নামীয় একটি দাতব্য সংগঠন ও সুইস ক্রেডিট ব্যাংক এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬২( বাষট্টি) জন ব্যক্তি পৃথিবীর অর্ধেক জনগণের (৩.৬ বিলিয়ন) সম্পদের সমপরিমাণ সম্পদের মালিক। আর বিভিন্ন কোটিপতি যাদের পরিমাণ ০.৭ এর বেশি হবেনা তারা দখল করে আছে ৪৫% সম্পদ। বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি এই পুঁজিবাদী ব্যক্তি ও ব্যাংক গুলোর কল্যাণই হয়ে থাকে।
    এখানেই শেষ নয়। পৃথিবীর সবগুলো দেশের উপর এই পুঁজিবাদী ব্যক্তি ও ব্যাংক গুলোর বিশাল বিশাল ঋণের বোঝা রয়েছে। ফলশ্রুতিতে সবগুলো দেশ হারিয়েছে নিজের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। পরিণত হয়েছে গুটিকয়েক পুঁজিবাদীর জিম্মিতে।
    আর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধঃপতন এই বস্তুবাদী পুঁজিবাদেরই ফসল, যার নেই কোন নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি।
    একটু চিন্তা করুন, জা'ফর ইবনে আবী তালিব (রাঃ) হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশিকে (রাঃ) কী বলেছিলেন? তিনি বলেছেন, "হে বাদশাহ, আমরা ছিলাম এক মুর্খ জাতি। আমরা মূর্তি পূজা করতাম। আমরা বিভিন্ন অপকর্ম করতাম। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতাম। প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করতাম। শক্তিশালীরা দুর্বলদের প্রতি অবিচার করতো।"
    বর্তমান নব্য জাহিলিয়াত কি এই বিবরণ থেকে এক চুল পরিমাণ সরেছে? এই বস্তুবাদী ব্যবস্থা কি একটু পরিবর্তন হয়েছে?
    তিনি আরো বলেন," আমাদের এমন অবস্থায় আল্লাহ তা'আলা একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন যার সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা ও নিষ্কলুষতা সম্পর্কে আমরা জানি। তিনি আমাদের এক আল্লাহতে বিশ্বাস করতে এবং তারই উপাসনার দিকে আহ্বান করেছেন। আমরা এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা তাঁর পরিবর্তে যে সকল পাথর ও মূর্তির পূজা করতাম সেগুলো পরিত্যাগ করতে আহ্বান করেছেন।
    তিনি আমাদের সত্য কথা বলতে, আমানত আদায় করে দিতে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখতে, প্রতিবেশীর সদাচরণ করতে, অন্যায় ভাবে রক্ত প্রবাহিত করা থেকে বিরত থাকতে আদেশ করেছেন।
    তিনি আমাদের বিভিন্ন খারাপ কাজ, মিথ্যা বলা, এতিমের সম্পদ খাওয়া, সতী নারীকে অপবাদ দেওয়া থেকে নিষেধ করেছেন।
    তিনি আমাদের এক আল্লাহ্*র ইবাদাত করতে এবং তার সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত না করতে আদেশ করেছেন। তিনি আমাদের সালাম, সওম ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন।
    আর আমরা তাকে সত্যায়ন করেছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি। তিনি আমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন আমরা তার অনুসরণ করি। আমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করি, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করিনা। আল্লাহ আমাদের জন্য যা হারাম করেছেন আমরা তাকে হারাম বলি। আর তিনি যা হালাল করেছেন আমরা তাকে হালাল বলি। এর ফলে আমাদের ক্বওম আমাদের উপর অন্যায় করেছে। আমাদের শাস্তি দিয়েছে। আমাদের বিভিন্ন কষ্ট দিয়েছে যাতে করে আমরা আবার মূর্তি পূজা এবং দুষ্কর্মে ফিরে যাই। "
    নব্য জাহিলিয়্যাতের ধ্বজাধারীরা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে সামান্য পরিবর্তন এনেছে? তাদের লক্ষ্য সমূহ কোনো পরিবর্তন ঘটিয়েছে? চৌদ্দ শত বছর পরেও শরীয়তে রাব্বানী কি তার লক্ষ্য সমূহ পরিবর্তন করেছে? তার যে একত্ববাদ তাতে কি বিন্দু পরিমাণ ফাটল ধরেছে? শরীয়তে ইসলামী কি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অক্ষম হয়ে পড়েছে? শরীয়ত কি মানব সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা গুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে? যেমনটি আজ নিন্দুকের দল বলে বেড়াচ্ছে। তারা মনে করে শরীয়ত একটা সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা অকার্যকর। অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
    اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينا
    আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করেছি। আর তোমাদের জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
    সুতরাং ইসলামের পরে কোন দ্বীন, কোনো মতবাদ গ্রহনযোগ্য নয়।
    আমরা যদি ইসলাম পূর্ববর্তী যুগ গুলোতে তাকাই যেগুলো নৈতিক ভাবে, সামাজিক ভাবে পশুকেও হার মানিয়েছে এবং ইসলাম পরবর্তী সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর যুগ থেকে নিয়ে শেষ খেলাফত পর্যন্ত যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো কীভাবে মুসলিমরা এই জাহেলী সমাজকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। কীভাবে মানুষের দাসত্ব থেকে বের করে এনেছেন। কীভাবে তারা তৎকালীন পরাশক্তিগুলোর গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্ত করেছেন, যারা বহু জাতি শেষ করে দিয়েছে।
    কিন্তু মুসলিমদের প্রবল প্রতাপ সত্ত্বেও তারা তাদের বিরোধীদের খুব সামান্য রক্ত প্রবাহিত করেছেন। বরং অধিকাংশের সাথে ক্ষমার আচরণ করেছেন। যেমন মুসলিমরা তাদের মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, পুরোহিত, পোপ ইত্যাদির সাথে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন, তবে যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে তাদের ছাড়া।
    মুসলিমরা ক্ষমতা লাভের পর আল্লাহ তা'লাকে ভয় করতেন। এবং তার বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন।
    মুসলিমরা তাদের শাসনামলে বিভিন্ন জ্ঞান বিজ্ঞানের আবিষ্কার করেছেন। বিশেষ করে হিজরি তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম শতাব্দীতে মুসলিম উম্মাহ জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান উলামায়ে কেরামগণ জ্ঞানের প্রত্যেকটি শাখায় পান্ডিত্য অর্জন করেছেন। তাদের এই অভূতপূর্ব যোগ্যতা ফুটে উঠে তাদের রেখে যাওয়া রচনাবলীতে। মুসলিম উম্মাহর পাঠাগার অনেক সমৃদ্ধ। তাদের এই রচনাবলী দেখলে হতবুদ্ধি হয়ে যেতে হয়। যেমন ইবনু আকীলের ৮০০ খন্ডে "কিতাবুল ফুনূন", ইবনে জাওযীর স্বহস্তে রচিত ২০০০ রচনা। এগুলো সবই উম্মাহর ধন। আর সবই উলামায়ে কেরাম আহরণ করেছেন কুরআন ও সুন্নাতে নববী থেকে।
    একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
    মুসলিম শাসনামলে পাশ্চাত্যের পাদরীরা জ্ঞান অর্জন করতে আন্দালুসে সফর করতো। তারা ফিরে এসে নিজের দেশে তার চর্চা করতো। এবং মুসলিমদের কিতাবগুলোকে তাদের জ্ঞান চর্চার ভাষা ল্যাটিনে রূপান্তর করতো।
    মধ্য যুগে মানবতার এতো উন্নতি অগ্রগতি এবং এখন পর্যন্ত এত অগ্রযাত্রার পরো মানুষ বিভিন্ন মূর্তি ও পাথরের উপাসনা করে।
    আর ইসলামের সত্যতার জন্য যুগ যুগ ধরে আল্লাহর কুরআনের নির্ভুল সংরক্ষণের চেয়ে কী প্রমাণ লাগে।
    অবশেষে বলবো মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামী শরীয়াহ ব্যবস্থার বিকল্প নেই। যা আজ সূর্যের ন্যায় উদ্ভাসিত।


    উম্মাতুন ওয়াহিদা পত্রিকার প্রবন্ধ حاجة البشرية"
    " للشريعة الإسلامية অবলম্বনে। সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
    শাইখ হুসাম আব্দুর রউফ

  • #2
    মাশা আল্লাহ, উপকারী পোস্ট। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উম্মাহর মুজাহিদীনদের ভরপুর নুসরহ ও ফাত্হ দান করুন ও আল্লাহর জমিনে তাঁদের পরিপূর্ণ তামকিন অর্জনকে তরান্বিত করুন। যেনো এই কুফরি শিরকি জাহিলি বিধানের নিচে আর বেশীদিন আমাদেরকে থাকতে না হয়।
    সাহসিকতা আয়ু কমায় না আর কাপুরুষতা আয়ু বৃদ্ধি করে না। জিহাদের মাধ্যমেই উম্মাহ জীবন লাভ করে।

    Comment

    Working...
    X