Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইখতিলাফ : পরিচিতি, প্রকার, শরয়ী অবস্থান, কারণ ও করণীয়

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইখতিলাফ : পরিচিতি, প্রকার, শরয়ী অবস্থান, কারণ ও করণীয়

    ইখতিলাফ : পরিচিতি, প্রকার, শরয়ী অবস্থান, কারণ ও করণীয়



    بسم الله الرحمن الرحيم
    إن الحمد لله، نحمده ونستعينه ونستغفره ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا من يهديه الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده ورسوله
    يا أيها الذين آمنوا اتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم مسلمون
    يا أيها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس واحدة وخلق منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونساء واتقوا الله الذي تسائلون به والأرحام إن الله كان عليكم رقيبا
    يا أيها الذين آمنوا اتقوا الله وقولوا قولا سديدا يصلح لكم أعمالكم ويغفر لكم ذنوبكم ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما

    পর কথা,
    নতুন দ্বীনদার ভাইগণ দ্বীনী কিছু বিষয় নিয়ে সংশয়ে ভোগেন। ফলশ্রুতিতে অনেকে দ্বীনের ব্যাপারে আস্থা হারিয়ে ফেলেন। আবার কেউ সংশয় গুলোর সঠিক সমাধান বের করতে না পেরে নিজের মত করে একটি অনুসরণ করেন। যা দ্বীনের ক্ষেত্রে আরো বহু সংশয় সৃষ্টি করে। তাই আজ আমরা কিছু সংশয়ের ব্যাপারে প্রিয় ভাইদের সাথে মুযাকারাহ করবো ইনশাআল্লাহ। এই মুযাকরার উদ্দেশ্য হলো আমরা যেন আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে পরিপূর্ণ আস্থা লাভ করতে পারি। আর আল্লাহ তা'আলা দ্বিধা সংশয়ে নিপতিত ব্যক্তির আমল কবুল করেন না।
    প্রিয় ভাইয়েরা, অনেক নতুন দ্বীনদার ভাই যখন দেখেন মুসলমানদের কেউ হানাফী, কেউ শাফেয়ী ইত্যাদি তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে যে, এতো দল কেন? বিশেষ করে এই ধরনের সংশয় গুলো ছড়ায় হলো উপনিবেশবাদীরা।
    আমরা সামান্য চিন্তা করলে দেখবো ইমামগণের মাঝে এই ইখতিলাফ অল্প কিছু মাসআলায়। একটি পরিসংখ্যান দেখুন,
    দ্বীনের বিষয়গুলো তিন ধরনের হয়ে থাকে। এর বাইরে কোনো বিষয় থাকে না। ১. আকীদা সংক্রান্ত বিষয়। ২. আখলাক, তাযকিয়া, আদাব ইত্যাদি বিষয়। ৩. আহকাম সংক্রান্ত বিধিবিধান যেগুলো আমরা ফিকহের কিতাব সমূহে পড়ে থাকি। তো প্রথম দুইটি বিষয়ের ক্ষেত্রে ইমামগণের মাঝে কোনো ইখতিলাফ হয়নি। আর তৃতীয়টির স্বল্প সংখ্যক মাসআলায় ইখতিলাফ হয়েছে। মৌলিক বিষয়ের ক্ষেত্রে সকলে একমত। আর এর ফলাফল হলো আইম্মায়ে কেরামের মাযহাব। আবার এই ইখতিলাফ ছিলো শরীয়াহ সম্মত। তাই এই বিষয়ে আরেকটু দৃঢ়তা অর্জনের জন্য সামান্য আলোচনা।


    تعارف الاختلاف (ইখতিলাফ পরিচিতি : )


    ইমাম রাগেব আসফাহানী রহিঃ (মৃঃ ৫০৩ হিঃ) বলেন, ইখতিলাফ হলো, কোনো অবস্থা কিংবা কথার ক্ষেত্রে প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করা ।
    তিনি আরো বলেন, ইখতিলাফ যেহেতু পরস্পর ঝগড়া বিবাদের দিকে নিয়ে যায় তাই ঝগড়া বিবাদকেও ইখতিলাফ বলা হয়ে থাকে। (মুফরদাত ফী গরীবিল কুরআন : ১৭২)
    তবে মৌলিক ভাবে ইখতিলাফের মাঝে ঝগড়া বিবাদের অর্থ নেই।
    আর খিলাফের মাঝে ঝগড়া বিবাদের অর্থ রয়েছে।
    আর ইখতিলাফ ও খিলাফের মাঝে পার্থক্য:

    ইমাম আবুল বাক্বা আল কাফাওয়ী রহিঃ (মৃত্যু ১০৯৩/১০৯৪/১০৯৫ হিঃ) বলেন,
    ১. ইখতিলাফ শব্দটি ব্যবহার হয় যেখানে সকল মতবিরোধকারীর গন্তব্য এক হয় তবে পথ ভিন্ন হয়। আর খিলাফ যেখানে গন্তব্য ও পথ উভয়টি ভিন্ন হয়।
    ২. ইখতিলাফ হলো দলীল সমৃদ্ধ। আর খেলাফ হলো দলীল বিহীন।
    ৩. ইখতিলাফ হলো রহমাহ। আর খেলাফ হলো বিদআহ। (কুল্লিয়্যাত:১/৭৯-৮০)

    সুতরাং ইখতিলাফ হলো একই গন্তব্য পৌঁছতে ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করা। এবং প্রত্যেকে দলীল সমৃদ্ধ হওয়া।
    আর খেলাফ হলো ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছতে ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করা। এবং দলীল বিহীন হওয়া।
    তাই আমাদের সম্মানিত ইমামদের মধ্যকার মতানৈক্যকে ইখতিলাফ বলা হয়। খেলাফ বলা হয়না। কারণ খেলাফ হলো ঝগড়া বিবাদকে বুঝায় যেখানে দলীলের কোনো চিহ্ন থাকে না।


    [مجالات الاختلاف (ইখতিলাফের প্রকার : )


    ইমাম খত্তাবী রহিঃ বলেন, ইখতিলাফ তিন প্রকার:
    ১. اختلاف الأديان ( অর্থাৎ ধর্মভিত্তিক ইখতিলাফ। যেমন: ইসলাম, সনাতন, খ্রিষ্ট, ইয়াহুদ, বৌদ্ধ ইত্যাদি।) এধরনের ইখতিলাফের বিধান পরিপূর্ণ হারাম।
    ২. اختلاف في أمور العقائد ( অর্থাৎ আক্বীদাহ সংক্রান্ত বিষয়ে ইখতিলাফ। যেমন: মু'তাযিলা, মুশাব্বিহা, মুআত্তিলাহ, জাহমিয়্যা ইত্যাদি।) এধরনের ইখতিলাফও হারাম।
    ৩. اختلاف في الفروع الفقهية ( অর্থাৎ ফিকহের শাখাগত বিধানাবলীতে মতানৈক্য। যেমন: চার মাযহাব, জাহীরী ইত্যাদি।) এই ধরনের মতভেদ বৈধ এবং উম্মাহর জন্য রহমাহ। আমরা এই প্রকারটি নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।
    উল্লেখ্য যে, আকীদাহ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দুই ধরনের হয়ে থাকে।
    ১. মৌলিক কিছু বিষয় যেমন : আল্লাহর প্রতি ঈমান, রাসূলের প্রতি ঈমান, আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস ইত্যাদি। এগুলোতে ইখতিলাফের কোনো সুযোগ নেই। যে করবে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কার।
    ২. শাখাগত কিছু বিষয় যেমন : মে'রাজের রজনীতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলাকে দেখেছেন কি না? এই ধরনের বিষয়গুলোতে সাহাবায়ে কেরামের যমানা থেকে ইখতিলাফ হয়ে আসছে। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, সরাসরি দেখেছেন। আয়েশা রাঃ বলেন, দেখেননি।
    ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিঃ (মৃঃ ৭২৮ হিঃ) বলেন, এধরনের ক্ষেত্রে মুজাহিদ সঠিক হলে দুই সাওয়াব পাবে। ভুল হলে ক্ষমা এবং এক সাওয়াব পাবে। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ২০/৩৩ পৃঃ)




    مكانة الاختلاف في الشريعة (ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে সংঘটিত ইখতিলাফের শরয়ী অবস্থান : )


    ১.কুরআনের দৃষ্টিতে ইখতিলাফ:
    কুরআনের দৃষ্টিতে ইখতিলাফ ফিল ফুরূ' বৈধ। এখন আমরা দেখবো কীভাবে বৈধ? আল্লাহ তা'আলার ইরশাদ,
    والمطلقات يتربصن بأنفسهن ثلاثة قروء
    তালাক প্রাপ্তা মহিলারা যেন তিন হায়েয অপেক্ষা করে।
    এখানে قروء শব্দটি দুইটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। এক. হায়েয। দুই. পবিত্রতা। তাই যায়েদ বিন সাবিত রাঃ বলেন, এখানে পবিত্রতা উদ্দেশ্য হবে। আর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন, এখানে হায়েয উদ্দেশ্য।
    সুতরাং এখানে আল্লাহ তা'আলা যদি কুরূ শব্দটি না বলে হায়েয কিংবা তহারত উল্লেখ করতেন তাহলে আর ইখতিলাফ হতো না। সুতরাং এর থেকে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ তা'আলাই এই ইখতিলাফের সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই আমরা বলতে পারি কুরআনের দৃষ্টিতে ইখতিলাফুল আইম্মা বৈধ।
    আরো অনেক উদাহরণ আছে যা লেখা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এরিয়ে যাওয়া হলো। তবে বুদ্ধিমানের জন্য এটুকুই যথেষ্ট।


    ২.সুন্নাহর দৃষ্টিতে ইখতিলাফ :
    একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের একটি দলকে বনু কুরায়যার দিকে প্রেরণ করলেন। সাথে সাথে বলে দিলেন,
    لا يصلين أحدكم العصر إلا في بني قريظة
    অর্থাৎ তোমাদের প্রত্যেকে যেন বনু কুরায়যায় গিয়ে আসরের সালাত আদায় করে।
    তো পথিমধ্যে আসরের সময় হয়ে গেল। তখন সাহাবাগণ দুই ভাগ হয়ে গেলেন। একদল বললেন আমরা এখনই আদায় করবো ; কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কথা দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, আমরা যেন দ্রুত পৌঁছে যাই। আরেকদল বললেন আমরা সেখানে গিয়েই নামাজ আদায় করবো। পরবর্তীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উভয় পক্ষ নিজেদের মত পেশ করলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সকলের নামাজ হয়েছে। কাউকে কোনো তিরস্কার করেননি।
    সুতরাং এই হাদীস থেকে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট ভাবে বুঝে আসে যে, এই শাখাগত ইখতিলাফ বৈধ। অবৈধ হলে অবশ্যই তাদের তিরস্কার করা হতো।


    ৩.ইজমায়ে উম্মাহের দৃষ্টিতে ইখতিলাফ :

    সাহাবা, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, আইম্মাহ মুজতাহিদীন এবং উম্মাহের সমস্ত উলামাগণ একমত যে, এই মতানৈক্য বৈধ।
    আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি সাহাবাগণ রাঃ কীভাবে ইখতিলাফ করতেন।
    এখানে কয়েকজন বিশিষ্ট উলামাগণের মত তুলে ধরছি।
    ১. ওমার ইবনু আব্দিল আযিয রহিঃ বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আসহাবদের মাঝে ইখতিলাফ না হওয়াকে অপছন্দ করি। কারণ তারা সকলে যদি এক কথার উপর একমত হয়ে যায় তাহলে উম্মাত সংকীর্ণতায় পড়বে। এবং তারা হলেন অনুসরণীয় ইমাম। সুতরাং কেউ যদি তাদের কোনো একজনের মত গ্রহণ করে তবেই যথেষ্ট। (জামেয়ু বয়ানিল ইলম ওয়া ফাদলিহ : ২/৮০ পৃঃ)
    ২. ইমাম ইবনু কুদামাহ আল হান্বলী রহিঃ (মৃত্যু ৬২০ হিঃ) তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ আল মুগনির ভূমিকায় লিখেন, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় অপার দয়ায়...... উম্মাহর মাঝে সৃষ্টি করেছেন যুগ শ্রেষ্ঠ মহামনীষী অনেক ইমাম। যারা ইসলামের মৌলিক নীতিমালা সাজিয়েছেন। দুর্বোধ্য বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করেছেন। যাদের একমত হওয়া অকাট্য দলীল। যাদের ইখতিলাফ প্রশস্ত রহমাহ। যাদের ঘটনাবলী হৃদয় গুলোকে জীবন্ত করে। যাদের অনুসরণে সৌভাগ্য লাভ হয়। (আল মুগনী : ১/৪ পৃঃ)
    ৩. ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিঃ বলেন, উলামায়ে কেরামের ইজমা (ঐক্যমত্য) অকাট্য প্রমাণ। আর তাদের ইখতিলাফ সুবিশাল রহমাহ। (মাজমুউল ফাতাওয়া :৩০/৮০ পৃঃ)
    মোট কথা ইমামদের মাঝে এই ইখতিলাফ উম্মাহর জন্য রহমাতে ওয়াসিআহ। কারণ ইমামগণ যদি প্রত্যেক কথায় এক হয়ে যেতো উম্মাহর জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ হয়ে দেখা দিতো। সব কিছু ফরজ হয়ে যেতো। কোনো ছাড় থাকতো না।


    ৪. কিয়াসের দৃষ্টিতে ইখতিলাফ :

    দুজন মানুষের বুঝ, মেধা, যোগ্যতা যেমন এক হতে পারে না তেমন মতের অমিল হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।
    সুতরাং শরয়ী দৃষ্টিতে এই ইখতিলাফ বৈধ। আর এটা ইমামগণের থেকে সূচনা নয় বরং নববী যুগ থেকে এর সূত্রপাত।


    أسباب الاختلاف ( ইখতিলাফের কারণ):


    ( ইখতিলাফের কারণ)
    আল্লাহ এক, কুরআন এক, নবী এক। তারপরও ইমামগণের মাঝে কেন মতানৈক্য হলো? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এই অংশ। ইমামগণের মাঝে এই ইখতিলাফ সংঘটিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এই বিষয়ে ইমামগণ স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন। তো আমরা এখানে মৌলিক কিছু কারণ তুলে ধরবো যাতে বিষয়টি বুঝতে সহজ হয়।
    ১.طبيعة اللغة العربية ( আরবী ভাষার স্বভাব) অর্থাৎ আরবী ভাষার কারণেই ইখতিলাফ হয়। কারণ আরবী ভাষার এমন বহু শব্দ আছে যেগুলো বিপরীতমুখী দুই বা ততোধিক অর্থ বুঝায়। যেমন ইতিপূর্বে قروء শব্দটি অতিবাহিত হয়েছে। যা হায়েযও বুঝায়, পবিত্রতাও বুঝায়। তখন একজন এক অর্থ উদ্দেশ্য নেন। আরেকজন ভিন্ন অর্থ উদ্দেশ্য নেন। ফলশ্রুতিতে ইখতিলাফ সৃষ্টি হয়। আরেকটি উদাহরণ,
    والليل إذا عسعس
    এখানে عسعس শব্দটির অর্থ আগমন করা এবং গমন করা। একটি অর্থ আরেকটির বিপরীত। তখন এক ইমাম একটি উদ্দেশ্য নেন। আরেক ইমাম আরেকটি উদ্দেশ্য নেন। আর ইখতিলাফ হয়।
    ২.. اختلاف في فهم النصوص (কুরআন ও সুন্নাহর বাণী বুঝার ক্ষেত্রে ভিন্নতা) অর্থাৎ একজন ইমাম একটি নস একভাবে বুঝেন। আরেকজন ভিন্ন ভাবে বুঝেন। যার ফলে ইখতিলাফ সৃষ্টি হয়। এর উদাহরণ হিসেবে বনু কুরায়যার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
    ৩.اختلاف في أصول الاستنباط (কুরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা আহরণ করার উসূলের ক্ষেত্রে ভিন্নতা) অর্থাৎ একজন ইমাম মাসআলা আহরণ করার ক্ষেত্রে এক নীতি অবলম্বন করেন। অন্য ইমাম ভিন্ন নীতি অবলম্বন করেন। যেমন عام (ব্যাপক শব্দ) একটি পরিভাষা। তার সংজ্ঞা হলো, যে শব্দ একই অর্থবোধক বহু সত্তা বুঝায়। 'মুসলমানগণ' শব্দটি আম যা সমস্ত ইসলাম ধর্ম গ্রহনকারীকে বুঝায়। তো এখন এক ইমাম বলেন, এই শব্দ যা বুঝাবে তা অকাট্য ভাবে সাব্যস্ত হবে। অন্য ইমাম বলেন, না অকাট্য ভাবে সাব্যস্ত করে না। তারপর যখন এক ইমাম কুরআনে আম শব্দ পান তখন তিনি বলেন, তা অকাট্য ভাবে সাব্যস্ত। আরেক জন বলেন, না অকাট্য ভাবে নয়। ফলশ্রুতিতে ইখতিলাফ দেখা দেয়।
    ৪.اختلاف في ثبوت النص ( নস প্রমাণিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইখতিলাফ) অর্থাৎ এক ইমামের কাছে একটি হাদীস সহীহ। অন্য ইমামের কাছে যয়ীফ। যার নিকট সহীহ তিনি বলেন, তা আমলযোগ্য। যার নিকট দুর্বল তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। আর ইখতিলাফ দেখা দেয়। এর উদাহরণ অহরহ।
    ৫.اختلاف في الترجيح والتوافق عند تعارض النص (বিপরীতমুখী দুইটি নসের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করা কিংবা একটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে ইখতিলাফ) অর্থাৎ যখন দুইটি আয়াত কিংবা হাদীস পরস্পর বিরোধিতা করে তখন কোনো ইমাম উভয়টির মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করেন। আরেক জন একটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে অপরটিকে রহিত বলেন। ফলশ্রুতিতে ইখতিলাফ সৃষ্টি হয়। উদাহরণ স্বরূপ, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিবলামুখী হয়ে ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন। আবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ বয়সে কিবলামুখী হয়ে জরুরত সেরেছেন। তো এখন কোনো কোনো সাহাবা বলেন, কিবলামুখী হয়ে ইস্তিঞ্জার নিষেধাজ্ঞা এটা শুধু মরুভূমির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাকি টয়লেটে কিবলা মুখী হয়ে করার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আর কিছু কিছু সাহাবী বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। মরুভূমি হোক বা টয়লেট হোক। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ বয়সে যা করেছেন তা শুধু তার সাথে খাস। (আল ইনসাফ ফী বয়ানি আসবাবিল ইখতিলাফ : ৩০)
    বিস্তারিত জানতে নিম্নোক্ত কিতাব সমূহ দেখতে পারি।
    أسباب اختلاف الفقهاء ت د. علي الخفيف
    الإنصاف في بيان أسباب الاختلاف للشيخ شاه ولي الله الدهلوي
    أسباب اختلاف الفقهاء للشيخ عبد الله بن عبد المحسن التركي
    أثر الحديث الشريف في اختلاف الفقهاء للشيخ محمد عوامة


    আমাদের করণীয় :


    ক. এই শাখাগত ইখতিলাফ যেন ওয়াহদাতুল উম্মাহ বা তাওহীদুল উম্মাহ তথা উম্মাহর এক ও অভিন্নতাকে বিঘ্নিত না করে।
    খ. এই ইখতিলাফের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি পরিহার করা। মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা।
    গ. এই ইখতিলাফের ক্ষেত্রে কোনো মত গ্রহণ করলে বিপরীত মতের ইমামের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রাখা। মোট কথা সকল ইমামকে সম্মান করা।
    ঘ. মাযহাবী ইখতিলাফকে পরিচিতির মধ্যে সীমাবদ্ধ করা। এটাকে ঝগড়া বিবাদের কারণ না বানানো। যেমন আমি হানাফী তথা ফিকহের মতামতের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফাকে অনুসরণ করি। এটা যেন শুধু পরিচয়ের মধ্যেই ক্ষান্ত হয়।
    ঙ. এই ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য আলেমগণ তো বুঝে শুনে আমল করবেন। আর সাধারণ মানুষ মুত্তাকী নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমকে জিজ্ঞেস করে আমল করবেন। নিজের মন মতো নয়।
    চ. এই ধরনের ক্ষেত্রে তা'আস্সুব তথা গোঁড়ামি পরিহার করা। অর্থাৎ আমার নিকট আমার মতের বিপরীত সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণিত হয়েছে তারপরও নিজ মতের উপর ঘাপটি মেরে বসে থাকা।
    আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে উত্তম বুঝ দান করুন। ইতকান (দৃঢ়তা) ও ইখলাসের সাথে আমল করার তাওফীক দান করুন।

  • #2
    আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উত্তম বুঝ দান করুন এবং ইখলাসের সাথে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমিন

    Comment


    • #3
      আলহামদুলিল্লাহ,ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। অনেক সুন্দর ভাবে মুহতারাম ভাই ইখতিলাফের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন। সকলের পড়া উচিত এবং বেশি বেশি শেয়ার করা দরকার। যাতে উম্মাহ উপকৃত হতে পারেন।

      আসলে ইখতিলাফ উম্মাহর জন্য রহমত স্বরূপ। কিন্তু আমরা এ ইখতিলাফকে কেমন গজব বানিয়ে ফেলেছি।

      আমার মতের বিপরীত কেউ আমল করলে সে বাতিল। তাঁকে সালাম দেওয়া যাবে না,তাঁর প্রতি বিদ্বেষ রাখতে হবে। নাউযুবিল্লাহ
      এরকম ঘটনা আমরা অহরহ দেখতে পাই। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন এবং সহিহ বুঝ দান করুন।


      মুহতারাম ভাইয়ের কাছে নিবেদন থাকবে-এরকম ইলমি লেখা ফোরামে পেশ করে আমাদের উপকৃত করবেন। আশা করি এরকম লেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। আল্লাহ আপনাকে তাউফিক দান করুন এবং ইলমে ও আমলে বারাকাহ দান করুন। আমিন
      গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

      Comment


      • #4
        মাশাআল্লাহ!
        অনেক সুন্দরভাবে কথাগুলো ফুটিয়ে তুলছে ভাই। আল্লাহ তা'আলা ভাইয়ের কলমে বারাকা দান করুন। আমিন ইয়া রব্বাল আলামিন
        ভাই এমন ইলমি লেখার মাধ্যমে উম্মা'কে উপকৃত করুন।

        Comment


        • #5
          আমীন! সুম্মা আমীন। মুহতারাম ভাই, আপনাদের নেক দোয়ায় শরীক রাখার একান্ত নিবেদন। আল্লাহ তা'আলা সকল ভাইকে উত্তম জাঝা দান করুন। এবং পরপারে একসাথে মিলিত করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ, আপনার ইলমী পোস্টটি পড়ে খুব ভাল লাগল ভাই। জাযাকাল্লাহ
            নিয়মিত এমন পোস্টের ধারাবাহিকতা রক্ষা করলে ভাল হয় ভাই...
            আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দিন। আমীন
            ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

            Comment

            Working...
            X