Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিহাদের প্রয়োজনে মিথ্যা বলার ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের তাহকীক

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিহাদের প্রয়োজনে মিথ্যা বলার ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের তাহকীক



    হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী জিহাদের প্রয়োজনে সুস্পষ্ট মিথ্যা বলা জায়েয নেই। বরং তাওরিয়া বা দ্ব্যর্থবোধক বাক্য ব্যবহার বৈধ। কিন্তু একাধিক হাদিসে জিহাদের প্রয়োজনে সুস্পষ্ট মিথ্যা বলারও অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেমন আসমা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে,


    لا يحل الكذب إلا في ثلاث: ... والكذب في الحرب، والكذب .... رواه الترمذي، (1939) ؛وقال: هذا حديث حسن.

    “তিনটি ক্ষেত্র ছাড়া মিথ্যা বলা বৈধ নয়... (তার মধ্যে একটি হল) যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যা বলা...” -সুনানে তিরমিযি: ১৯৩৯ [ইমাম তিরমিযি রহ. হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

    এজন্য মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, আল্লামা যফর আহমদ উসমানী ও আল্লামা তাকী উসমানী হাফি. মতে যদি তাওরিয়া করা সম্ভব না হয় তবে জিহাদের প্রয়োজনে সুস্পষ্ট মিথ্যা বলারও অবকাশ রয়েছে।

    আল্লামা তাকী উসমানী হাফি. বলেন,

    ولم أجد في فقهاء الحنفية القدامى من جوَّز صريح الكذب في حالةٍ ما، إلا في حالة الاضطرار، ولكن حكى الشيخ ظفر أحمد العثماني عن الإمام الشيخ أشرف علي التهانوي رحمه الله أنه قال: والحق جواز الكذب الصريح إذا لم يقدر على التعريض في المواضع الثلاثة المذكورة في حديث أسماء، وعدم جوازه إذا قُدر عليه، وأما ما ذكره في شرح السير أن الكذب المحض لا رخصة فيه، فمبني على الاحتياط.
    ويؤيد الشيخ ما روي عن بعض الصحابة: إن في معاريض الكلام مندوحة من الكذب. أخرجه البخاري في الأدب المفرد، وترجم به بابا في كتاب الأدب من صحيحه، وأخرجه الطبري في التهذيب، والطبراني في الكبير، ورجاله ثقات، وأخرجه ابن عدي من وجه آخر عن قتادة مرفوعا ووهاه، وأخرجه أبو بكر بن كامل في فوائده والبيهقي في الشعب من طريقه كذلك، وأخرجه ابن عدي أيضا من حديث علي مرفوعا بسند واه أيضا، وأخرج البخاري في الأدب المفرد من طريق أبي عثمان النهدي، عن عمر، قال: أما في المعاريض ما يكفي المسلم من الكذب، ذكر هذه الروايات الحافظ في الفتح (10/594) وإنها تدل على أن الكذب إنما يحرم إذا كان عنه مندوحة بالمعاريض. وظاهر مفهومها أنه إن لم يكن عنه مندوحة فالكذب لا يحرم عند حاجة معتبرة شرعا، وهي التي وقع ذكرها في حديث أسماء من الأمور الثلاثة.
    ويؤيده أيضا قصة الحجاج بن علاط التي أخرجها النسائي والحاكم في استئذانه النبي صلى الله عليه وسلم أن يقول عنه ما شاء لمصلحة في استخلاص ماله من أهل مكة، وأذن له النبي صلى الله عليه وسلم، فأخبر أهلَ مكة أن أهل خيبر هزموا المسلمين، ... فإنه لا يحتمل التعريض ....

    আমি পূর্ববর্তী কোন হানাফি ফকিহকে একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত সুস্পষ্ট মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে দেখেনি। তবে আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রহ. শায়েখ আশরাফ আলী থানভী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, “আসমা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে যে তিন ক্ষেত্রে মিথ্যা বলার অবকাশ দেয়া হয়েছে সে তিন ক্ষেত্রে তাওরিয়া সম্ভব না হলে সুস্পষ্ট মিথ্যা বলাও জায়েয হবে। কিন্তু তাওরিয়া সম্ভব হলে মিথ্যা বলা বৈধ হবে না। আর শরহুস সিয়ারে যে নিরেট মিথ্যা বলার অবকাশ নেই বলা হয়েছে এটা হলো সতর্কতা।”

    কতক সাহাবী থেকে বর্ণিত ‘আসার’ শায়েখ আশরাফ আলী থানভীর মতকে সমর্থন করে। তারা বলেন, ‘তাওরিয়ার মধ্যে মিথ্যা থেকে মুক্তির উপায় রয়েছে।’ ইমাম বুখারী আলআদাবুল মুফরাদে এই আসারটি বর্ণনা করেছেন …. এবং এর রাবীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য। … এটা প্রমাণ করে মিথ্যা বলা তখনই হারাম হবে যখন তাওরিয়ার মাধ্যমে তা থেকে বাঁচা যাবে। কিন্তু যদি তাওরিয়ার মাধ্যমে মিথ্যা থেকে বাঁচা সম্ভব না হয় আর মিথ্যা বলার শরিয়তসম্মত প্রয়োজনও থাকে তবে সেক্ষেত্রে মিথ্যা বলা হারাম হবে না। …

    সুনানে নাসায়ী ও মুসতাদরাকে হাকেমে বর্ণিত হাজ্জাজ বিন ইলাতের হাদিসটিও একে সমর্থন করে। তাতে এসেছে, তিনি মক্কার কাফেরদের থেকে নিজ সম্পত্তি উদ্ধার করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে যা ইচ্ছা বলার অনুমতি প্রার্থনা করেন। নবীজি তাকে অনুমতি দিলে তিনি মক্কা গিয়ে তাদেরকে সংবাদ দেন খায়বারের ইহুদিরা মুসলিমদের পরাজিত করেছে (আমি তাদের গনিমত ক্রয় করার জন্য আমার সম্পদ নিতে এসেছি। হাফেয হাইসামী ও শায়েখ শুয়াইব আরনাউত রহ. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, দেখুন: মুসনাদে আহমদ: ১২৪০৯; মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৬/১৫৫) তো এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা কথা ছিল যাতে কোন প্রকার তাওরিয়ার সম্ভাবনা নেই। -তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম: ৩/৩০
    এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে, তাঁদের মতটি তো মাযহাবের বিপরীত, তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু বাস্তবে তাদের মতটি মাযহাবের বিপরীত নয়, বরং তা মাযহাবেরই ব্যাখ্যা। এজন্যই তো তারা বলছেন, তাওরিয়া সম্ভব না হলেই শুধু সুস্পষ্ট মিথ্যা বলা যাবে, অন্যথায় নয়। মাযহাবের বিপরীত তো তখনই হতো যদি তারা নি:র্শতভাবে মিথ্যা বলার অনুমতি দিতেন, যেমনটা ইমাম শাফেয়ী ও অন্যান্য ইমামরা দিয়েছেন।

    আর যদি এটাকে মাযহাবের ব্যাখ্যা মানা নাও হয় তবুও কোন সমস্যা নেই। কেননা ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেছেন, إذا صح الحديث فهو مذهبي ‘হাদিস সহিহ প্রমাণিত হলে সেটাই আমার মাযহাব’। এরই ভিত্তিতে আল্লামা শামী রহ. বলেছেন, যদি মাযহাবের কোন মাসয়ালা হাদিসের বিপরীত হয় তবে মুতাবাহহির (গভীর জ্ঞানের অধিকারী) ও আহলুন নযর (দলিল বিশ্লেষণ করার যোগ্যতাসম্পন্ন) আলেমদের জন্য তখন মাযহাবের বিপরীত হাদিসের অনুসরণ করা বৈধ। বরং আকাবিরে দেওবন্দ আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, সাধারণ মানুষের জন্যও কোন মুতাবাহহির আলেমের নির্দেশনা অনুযায়ী মাযহাবের পরিবর্তে হাদিস অনুসরণের সুযোগ রয়েছে। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: ফতোয়া শামী: ১/৬৮; উসুলুল ইফতা, আল্লামা তাকী উসমানী: ৬৯-৮৪)

    বস্তুত এটাই হলো মাযহাব অনুসরণের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থা, যাতে হাদিস ও মাযহাবের মাঝে সুসমন্বয় করা যায়। এতে না মাযহাবের অন্ধ অনুসরণ করে হাদিস অনুসরণের পথ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয় আর না হাদিস অনুসরণের নামে মাযহাবকে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা হয় এবং দুয়েকটি হাদিসের কিতাবের অনুবাদ পড়ুয়া ব্যক্তিরাও সরাসরি হাদিস থেকে মাসয়ালা বের করার দু:সাহস শুরু করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের প্রকৃত বুঝ দান করুন। আমিন।


    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    জিহাদের প্রয়োজনে মিথ্যা বলার ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের তাহকীক

    অনেক সুন্দর একটি বিশ্লেষণ আমাদের উপহার দিয়েছেন। মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে।
    ভাইযের কাছে আবেদন থাকবে,মাঝে মাঝে কিছু লেখা উপহার দিয়ে আমাদের উপকৃত করবেন।
    আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে রাখুন। আপনার জন্য সবকিছু আসান করুন। আমিন
    গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন ভাইজান!
      আল্লাহ আপনার হায়াতে বারাকা দান করুন। আ-মীন
      আপনাকে সুস্থতা দান করুন।, আ-মীন
      হে আল্লাহ! আপনি ভাইয়ের কাজকে কবুল করুন এবং আমাদের মন্দ কর্ম থেকে হেফাজত করুন। আ-মীন ইয়া রব্বাল আলামিন

      Comment


      • #4
        আলহামদুলিল্লাহ খুবই উত্তম পোষ্ট আল্লাহ তায়া'লা ভাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন, আমিন।

        Comment


        • #5
          মহান রাব্বুল আ'লামিন আমার ভাইয়ের ইলম ও আমলে ভরপুর বারাকাহ দান করুন । আমিন।
          এসো জিহাদ শিখি

          Comment


          • #6
            আল্লাহ আপনার ইলমে ও আমলে বরকত দান করুন। আমীন
            ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

            Comment


            • #7
              এখানে মূল নীতি হল যদি সম্মুখে দুইটি বাতিল বিষয় বিপরীত ভাবে আসে অর্থাৎ একটি অবলম্বন করলে আরেকটি থেকে বাঁচা যায় এবং এই দুইটির কোন টি থেকে পরিত্রাণের কোন জায়েজ পথ অবলম্বন করা সম্ভব না হয় তাহলে দুইটি বাতিল বিষয়ের মধ্যে তুলনা মূলক যেটি হালকা তা অবলম্বন করা জায়েয আছে। বরং কঠিন টি থেকে বাঁচার জন্য হালকা দিকটি অবলম্বন করা ওয়াজিব

              Comment

              Working...
              X