Announcement

Collapse
No announcement yet.

কারো প্রশংসার ক্ষেত্রে ইসলাম যে দিকনির্দেশনা দেয়:

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কারো প্রশংসার ক্ষেত্রে ইসলাম যে দিকনির্দেশনা দেয়:

    কারো প্রশংসার ক্ষেত্রে ইসলাম যে দিকনির্দেশনা দেয়:



    কর্মগুণে মানুষ পার্থিব জীবনে প্রশংসিত বা নিন্দিত হয়। ইসলাম মানুষের প্রশংসা বা সমালোচনা উভয় ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে; বিশেষত ব্যক্তিপ্রশংসার ব্যাপারে সীমা রক্ষা করার এবং শরিয়তের মূলনীতি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে।

    সব প্রশংসা আল্লাহর :
    ইসলামী মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের আলোকে সব প্রশংসার প্রকৃত মালিক আল্লাহ। মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) লেখেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো স্থানে যেকোনো বস্তুর প্রশংসা করা হয়, বাস্তবে তা আল্লাহরই প্রশংসা। কেননা এই বিশ্ব চরাচরে অসংখ্য মনোরম দৃশ্য, অসংখ্য মনোমুগ্ধকর সৃষ্টি আর সীমাহীন উপকারী বস্তু সর্বদা মানবমনকে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট করতে থাকে এবং তাঁর প্রশংসায় উদ্বুদ্ধ করতে থাকে।’ (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, সুরা : ফাতিহা)

    ব্যক্তির প্রশংসা বৈধ :
    শরিয়তের মূলনীতির মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তির প্রশংসা করা বৈধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ একাধিক নবীর প্রশংসা করেছেন। যেমন ইয়াহইয়া (আ.)-এর ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে হবে আল্লাহর বাণীর সমর্থক, নেতা, স্ত্রী বিরাগী এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৯)

    রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও তাঁর সাহাবিদের প্রশংসা করেছেন। ওমর (রা.)-কে তিনি বলেন, ‘তুমি যে পথে চলো শয়তান কখনো সে পথে চলে না, বরং সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৯৪)

    প্রশংসায় সীমা রক্ষা করা জরুরি :
    ইসলামে ব্যক্তি প্রশংসা বৈধ, তবে তা অবশ্যই সীমা রক্ষা করে করতে হবে। এমনকি নবী-রাসুলের প্রশংসার ক্ষেত্রে ইসলাম সীমা লঙ্ঘন অনুমোদন করে না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না, যেমন ঈসা ইবনে মারইয়ামের ব্যাপারে খ্রিস্টানরা বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি আল্লাহর বান্দা। তাই বোলো—আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪৪৫)

    যাদের প্রশংসা করা বৈধ :
    সদুদ্দেশ্যে সীমার মধ্যে থেকে একজন মুমিন অপর মুমিনের প্রশংসা করতে পারে। যেমন—

    ১. অনুগ্রহকারীর কৃতজ্ঞতা আদায় : ইসলাম অনুগ্রহকারীর কৃতজ্ঞতা আদায়ে উৎসাহিত করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে (যথাযথভাবে) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৩৩১)

    ২. ভালো কাজে উৎস দেওয়া : ব্যক্তিকে ভালো কাজে উৎসাহিত করতে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘আবদুল্লাহ কতই না উত্তম ব্যক্তি যদি সে তাহাজ্জুদ আদায় করত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৫৬)

    ৩. প্রাপ্য অধিকার লাভ : মানুষ যেন তার প্রাপ্য অধিকার, মর্যাদা ও অবস্থান লাভ করে এ জন্য প্রশংসা করা। যেমন মুসা (আ.)-এর ব্যাপারে শোয়াইব (আ.)-এর এক কন্যা বলেছিলেন, ‘হে পিতা! আপনি একে মজুর নিযুক্ত করুন। কেননা আপনার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৬)

    যেসব প্রশংসা নিষিদ্ধ :

    শরিয়ত বৃহত্তর সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে কখনো কখনো ব্যক্তি প্রশংসা নিষিদ্ধ করেছে। যেমন—

    ১. আত্মপ্রশংসা : আত্মপ্রশংসা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা কোরো না, তিনিই সম্যক জানেন কে আল্লাহভীরু।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩২)

    ২. অতি প্রশংসা : কারো অতি প্রশংসা করা ইসলামে নিন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আমাকে যে মর্যাদা দান করেছেন তার চেয়ে উঁচু মর্যাদা আমাকে দান করো, সেটা আমি পছন্দ করি না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২১৪১)

    ৩. পাপিষ্ঠ ব্যক্তির প্রশংসা : যে ব্যক্তি প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত, যে মানুষের ওপর অত্যাচার করে তার প্রশংসা করা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "তোমরা মুনাফিককে ‘আমাদের নেতা’ বলে সম্বোধন কোরো না। কেননা সে যদি নেতা হয়, তবে তোমরা তোমাদের মহামহিম আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করলে।” (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৭৭)

    ৪. সামনে প্রশংসা করা : আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনে বলেন, ‘তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে বা তোমরা লোকটার মেরুদণ্ড ভেঙে ফেললে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৬৩)

    ৫. তোষামোদ ও চাটুকারিতা : কোনো ব্যক্তির ভালো-মন্দ বিবেচনা না করে শুধু তার প্রশংসা করা বা কারো চাটুকারিতায় লিপ্ত হওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরের অতি প্রশংসা (তোষামোদ ও চাটুকারিতা) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা হত্যাতুল্য।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭৪৩)

    ৬. প্রশংসাপ্রত্যাশীদের প্রশংসা : পবিত্র কোরআনে প্রশংসাপ্রত্যাশীদের নিন্দা করে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে—এমন তুমি কখনো মনে কোরো না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৮)

    ভারসাম্যহীন প্রশংসার শাস্তি :
    পবিত্র কোরআনে ভারসাম্যহীন নিষিদ্ধ প্রশংসার ব্যাপারে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘যারা সীমা লঙ্ঘন করেছে, তোমরা তাদের প্রতি (প্রশংসায় আমোদিত হয়ে) ঝুঁকে পোড়ো না; পড়লে আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে। এ অবস্থায় আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদের সাহায্য করা হবে না।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৩)

    অতি প্রশংসার মুখোমুখি হলে করণীয় :
    কোনো ব্যক্তি যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অতি প্রশংসার মুখোমুখি হয়, তবে তার জন্য করণীয় হলো—

    ১. প্রতারিত না হওয়া : প্রশংসামূলক কথায় মুগ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোরআনের সতর্ক বাণী হলো, ‘আর মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে, পার্থিব জীবন সম্বন্ধে যার কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করে এবং তার অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে সে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে। প্রকৃতপক্ষে সে ভীষণ কলহপ্রিয়।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৪)

    ২. প্রশংসাকারীকে সতর্ক করা : মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা কোনো অতি প্রশংসাকারীর মুখোমুখি হবে, তখন তার মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩০০২)

    ৩. আল্লাহর প্রশংসা করা : অতি প্রশংসার মুখোমুখি হলে মুমিন আল্লাহমুখী হয় এবং তার প্রশংসায় লিপ্ত হয়।

    ৪. আল্লাহর কাছে দোয়া করা : মুমিন মানুষের প্রশংসাকে দোয়া হিসেবে গ্রহণ করে। কেউ সাহাবিদের প্রশংসা করলে তাঁরা বলতেন, হে আল্লাহ! তারা যা জানে না সে বিষয়ে আমাকে ক্ষমা করুন, তারা যা বলেছে সে ব্যাপারে আমাকে পাকড়াও করবেন না এবং তারা যেমন ধারণা করে আমাকে তার চেয়ে উত্তম বানিয়ে দিন।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৭৬১)

    আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপনের তাওফিক দিন। আমীন।


    Collected‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

  • #2
    মা শা আল্লাহ, অতি উত্তম পোস্ট। যা আমাদের সবার পড়া ও আমল করা উচিত।
    ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে ভারসাম্য রক্ষা করে প্রশংসা করার ও অতিরঞ্জন থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দিন।
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 09-17-2021, 05:24 AM.
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
      মা শা আল্লাহ, অতি উত্তম পোস্ট। যা আমাদের সবার পড়া ও আমল করা উচিত।
      ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে ভারসাম্য রক্ষা করে প্রশংসা করার ও অতিরঞ্জন থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দিন।
      আল্লাহুম্মা আমীন
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment


      • #4
        ২. প্রশংসাকারীকে সতর্ক করা : মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা কোনো অতি প্রশংসাকারীর মুখোমুখি হবে, তখন তার মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩০০২)। মুহতারম ভাই এই হাদীসের রেফারেন্সে আমি মনে করি ভুল হয়েছে।

        Comment


        • #5
          Originally posted by tawhidjamil View Post
          ২. প্রশংসাকারীকে সতর্ক করা : মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা কোনো অতি প্রশংসাকারীর মুখোমুখি হবে, তখন তার মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩০০২)। মুহতারম ভাই এই হাদীসের রেফারেন্সে আমি মনে করি ভুল হয়েছে।
          তাহলে সঠিক রেফারেন্স কি হবে ভাই?
          ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

          Comment

          Working...
          X