মুনাফিকের পরিচয়ঃ
শাব্দিক অর্থঃ দ্বিমুখী, কপট।
পারিভাষিক অর্থঃ এটা তার প্রকারভেদের পরিচয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট।
প্রকারভেদঃ এটা দুই প্রকার।
১.আকিদাগত মুনাফিক।
২.আমলগত মুনাফিক।
১.আকিদাগত মুনাফিকঃ
অন্তরে কুফুর লুকিয়ে রেখে বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশকারী।
হুকুমঃ এদের হুকুম দুইটি।
ক.এদের আযাব কাফিরদের চেয়ে ভয়াবহ।
খ.চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
ক.এদের আযাব কাফিরদের চেয়ে ভয়াবহ।
📖 কুরানুল কারিম থেকে দলিল
إِنَّ المُنافِقينَ فِي الدَّركِ الأَسفَلِ مِنَ النّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُم نَصيرًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না। [১]
এই আয়াতের ব্যাখ্যার এক পর্যায়ে তাফসিরুন নাসাফিতে এসেছে
وإنما كان المنافق أشد عذابا لأنه امن السيف في الدنيا فاستحق الدرك الأسفل في العقبي تعديلا
ولأنه مثله في الكفر، وضم إلي كفره الإستهزاء بالإسلام..
.. নিশ্চয় মুনাফিকের শাস্তি কাফিরের তুলনায় কঠিনতম। এটা এই জন্য যে দুনিয়ার জীবনে বাহ্যত মুসলিম থাকায় কুফররের শাস্তি থেকে নিরাপদ থেকেছে ফলে আখিরাতে জাহান্নামের অতল গহব্বরে কঠিন আযাবের উপযুক্ত হওয়াতে তাদের জন্য ন্যায়সংগত হয়েছে। আর এটাও একটি কারণ যে, (আকিদাগত) মুনাফিক হুকুমের ক্ষেত্রে কাফিরের সমান যা ইসলামকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করায় কাফিরের হুকুমে যুক্ত হয়েছে। [২]
খ.চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
কুরানুল কারিম থেকে দলিল
وَعَدَ اللَّهُ المُنافِقينَ وَالمُنافِقاتِ وَالكُفّارَ نارَ جَهَنَّمَ خالِدينَ فيها هِيَ حَسبُهُم وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ وَلَهُم عَذابٌ مُقيمٌ
আল্লাহ তায়ালা আকিদাগত মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে, এটি তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের লা‘নত করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।[৩]
আলামতঃ এটা মূলত ছয় প্রকার। যথা
ক. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করা।
খ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কিছুমাত্র অস্বীকার করা করা।
গ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘৃণা করা।
ঘ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন তার কিছু অংশও ঘৃণা করা।
এগুলোর দলিল এই সিরিজে ৫ম পর্বে আছে।
২.আমলগত মুনাফিকঃ সুনির্দিষ্ট কিছু কবিরাহ গুনাহকারী মুসলিম।
হুকুমঃ এর হুকুম তিনটি।
ক.দুনিয়ায় গুনাহগার মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে।
খ. আখিরাতে আল্লাহ তায়ালা চাইলে ক্ষমা দিতে পারেন অন্যথায় নির্দিষ্ট সময় আযাব ভোগ চিরস্থায়ী জান্নাতি হবে।
গ.আখিরাতে তারা শাফায়াতের উপযুক্ত হবে।
ক.দুনিয়ায় গুনাহগার মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে।
📖 কুরানুল কারিম থেকে দলিল
يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنوا إِن جاءَكُم فاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنوا أَن تُصيبوا قَومًا بِجَهالَةٍ فَتُصبِحوا عَلى ما فَعَلتُم نادِمينَ
হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।[৪]
শরিয়াতে কবিরাহ গুনাহগারীকে ফাসিক বলা হয়।
সুতরাং এই আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা মিথ্যুক ফাসিককে মুমিনদের থেকে বের করে দেন নি এবং তাকে কাফিরও বলেন নি।
খ. আখিরাতে আল্লাহ তায়ালা চাইলে ক্ষমা দিতে পারেন অন্যথায় নির্দিষ্ট সময় আযাব ভোগ চিরস্থায়ী জান্নাতি হবে।
📖 কুরানুল কারিম থেকে দলিল
إِنَّ اللَّهَ لا يَغفِرُ أَن يُشرَكَ بِهِ وَيَغفِرُ ما دونَ ذلِكَ لِمَن يَشاءُ وَمَن يُشرِك بِاللَّهِ فَقَدِ افتَرى إِثمًا عَظيمًا
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে। [৫]
গ.আখিরাতে তারা শাফায়াতের উপযুক্ত হবে।
📝 গ. সুন্নাহ থেকে দলিল
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " شَفَاعَتِي لأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ . وَفِي الْبَابِ عَنْ جَابِرٍ .
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে আমার শাফা’আত রয়েছে কাবীরা গুনাহের অপরাধীদের জন্য।[৬]
হাদিসের মান: হাসান।
আলামতঃ এটা মূলত ৪ প্রকার। যথাঃ-
১.কথা বলার সময় মিথ্যা বলা
২.ওয়াদার খিলাফ করা।
৩.আমানতের খিয়ানত করা।
৪.বিবাদের সময় গালমন্দ করা।
এসকল আলামতের দলিল
📝 সুন্নাহ থেকে দলিল
وَعَنْ عَبْدِ الله ابْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْ النِّفَاقِ حَتّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্*র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক্ব এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিক্বের একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে- (১) যখন তার নিকট কোন আমানাত রাখা হয় সে তা খিয়ানাত করে, (২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, (৩) যখন ওয়া’দা করে, ভঙ্গ করে এবং (৪) যখন কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে, তখন সে অশ্লীলভাষী হয়। [৭]
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
......
গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞাতব্যঃ-
১.কুরানুল কারিমে আকিদাগত মুনাফিকের আলামত বর্ণিত হয়েছে ।
২.সুন্নাহে আমলগত মুনাফিকের আলামত বর্ণিত হয়েছে।
----------
সহায়িকা
১ | তরজমাতুল কুরান।
২ | مدارك التنزيل وحقائق التأويل ،مفيد جدا
للتحميل 📥
৩ | বিবিধ।
————————
নোট
[১] সুরা নিসা ১৪৫ নং আয়াত।
[২] তাফসিরুন নাফাফি ১/৪০৮।
[৩] সুরা তাওবাহ ৬৮ নং আয়াত।
[৪] সুরা হুযরাত ৪৯ নং আয়াত।
[৫] সুরা নিসা ৪৮ নং আয়াত।
[৬] তিরমিজি ২৪৩৫, ২৪৩৬ আবু দাউদ ৪৭৪৯।
[৭] বুখারী ৩৪, মুসলিম ৫৮, আবূ দাঊদ ৪৬৮৮, তিরমিযী ২৬৩২, আবূ দাঊদ ৬৭৬৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৩৭, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৫৬।
<=>=>=>=>
যাস্টপেস্ট লিংক 🔗
বিগত পর্বের লিংক 🔗
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট -১ | তাওহিদের পরিচয় ও প্রকারভেদ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ২ | তাওহিদের শর্তসমূহ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ০৩ | তাওহিদের রুকন সমূহ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ৪ | তাগুতের পরিচয় ও প্রকারভেদ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ৫ | ঈমান ভংগের কারণ সমূহ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ৬ | শিরকের পরিচয় ও প্রকারভেদ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট - ৭ | কুফরের পরিচয় ও প্রকারভেদ
সংক্ষিপ্ত তাওহিদ প্রজেক্ট ০৮ || কাফিরের পরিচয় ও প্রকারভেদ || ঈদুল আজহার হাদিয়া
চলবে ইনশাআল্লাহ..
আপনার নেক দোয়ায় ভাইদেরকে স্বরণ রাখুন
=_=_=_=_=_==_=_=
Comment