সুশৃঙ্খল ও টেকসই সমাজ বিনির্মাণে যাকাত-ভিত্তিক ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্ব
বর্তমান জামানা হচ্ছে অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ফিতনার জামানা। বর্তমান জামানা হচ্ছে এমন এক ফিতনাময় জামানা যেখানে সমাজের সর্বত্রই বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা, অন্যায়-অনাচার আর জুলুম-নির্যাতন। মানুষ আল্লাহ্ প্রদত্ত ইসলাম থেকে এতটাই দূরে সরে গেছে যে, তারা কোনো কিছুর ভালো-মন্দ যাচাই-বাছাই করছে না এবং প্রয়োজনও বোধ করছে না। যেহেতু মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি সুশৃঙ্খল ও টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার, কিন্তু সেই অর্থনৈতিক কাঠামোই যদি ত্রুটিপূর্ণ হয়, তবে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। এমনিতেই মানুষ দুনিয়ার সম্পদের প্রতি প্রচণ্ড আসক্ত। মানুষ দুনিয়ার সম্পদ উপার্জনের জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা করছে, এমন কি দুনিয়ার সম্পদ উপার্জনের জন্য মানুষ মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে। একদিকে সম্পদের প্রতি প্রচণ্ড আসক্তি ও উপার্জনের অসম প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে অর্থনৈতিক কাঠামোর ত্রুটি, সবমিলিয়ে সমাজে এক ভয়াবহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবক্ষয় বিরাজ করছে। এ থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে খুব অচিরেই পৃথিবীতে এক ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিবে।
এখানে অর্থনৈতিক কাঠামোর ত্রুটির বিভিন্ন দিক ও কারণ অতি সংক্ষেপে আলোচনা করছি যা আমাদের পরবর্তী বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করবে ইনশা আল্লাহ্।
অর্থনৈতিক কাঠামোর ত্রুটির সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সুদ-ভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কুফর ও শিরকের উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূল-চালিকা শক্তিই হচ্ছে সুদ-ভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যা সমাজকে এক ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই সুদ-ভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদের সুষম বণ্টন নেই বললেই চলে। ফলে সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য প্রতিনিয়ত আরও প্রকট হচ্ছে। সুদ-ভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল কথা হচ্ছে শোষণ করো। অর্থাৎ ধনীকে আরও ধনী বানাও, আর গরিবকে আরও গরিব বানাও। ফলে সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে অসম নীতির কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। আপনাদের সামনেই এর অহরহ দৃষ্টান্ত রয়েছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতা। পৃথিবীর ধনী রাষ্ট্রগুলো সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে এক ধরণের অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। ফলে সারা পৃথিবীতে এক মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে সারা পৃথিবীতে ধীরে ধীরে যুদ্ধবিগ্রহ ছড়িয়ে পড়ছে। সুশৃঙ্খল ও টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো না থাকার কারণেই এমনটা হচ্ছে।
এ থেকে পরিত্রাণের উপায়, পথ ও পদ্ধতিঃ
এ কথা ধ্রুব সত্য যে ইসলামই একমাত্র শাশ্বত ধর্ম, যেখানে সবকিছুর সমাধান রয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একমাত্র ইসলামী জীবন-বিধান প্রয়োগের মাধ্যমেই সুশৃঙ্খল ও টেকসই সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব। একমাত্র ইসলামই পারে বর্তমান পৃথিবীর অর্থনৈতিক কাঠামোর ত্রুটিগুলো দূর করে একটি সমৃদ্ধশালী, সুশৃঙ্খল ও টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো নির্মাণ করতে। একমাত্র ইসলামই মানবজাতিকে ধৈর্য ও সবরের শিক্ষা দেয়। তাই সম্পদ উপার্জনের অসম প্রতিযোগিতা নয়, বরং সুষম ও পরিমিত সম্পদ উপার্জনের মাধ্যমেই একটি গতিশীল, সুশৃঙ্খল ও টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো বিনির্মাণ করা সম্ভব, যার শিক্ষা ইসলাম আমাদেরকে বহু আগেই দিয়েছে। ইসলামের এই শিক্ষা যদি আমরা গ্রহণ করতে পারি, তবে সমাজে সম্পদ উপার্জনের যে অসম প্রতিযোগিতা তা কমে আসবে। ফলশ্রুতিতে সমাজের বিশৃঙ্খলা, মারামারি-হানাহানি কমে আসবে এবং পৃথিবীর অর্থনীতি হবে সুশৃঙ্খল ও টেকসই। একমাত্র যাকাত-ভিত্তি ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই পারে সমাজের সমস্ত অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে। ধনীর সম্পদে যে গরিবের হক রয়েছে, সেই শিক্ষা আমরা ইসলামই থেকে পাই। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ধনীরা গরিবদের এই হক আদায়ের মাধ্যমে তাদেরকে সম্পদের মালিক বানিয়ে দিবে। ফলশ্রুতিতে সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীভূত হবে। এতে করে ধনীদের সম্পদের কোনো কমতি হবে না, বরং আল্লাহ্ তা’আলা তাদের সম্পদে আরও বরকত দান করবেন এবং গরিবদের আরও গরিব হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সমাজে এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করবে যা অন্য কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে করা সম্ভব নয়। এজন্য সুদ-ভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নয় বরং যাকাত-ভিত্তিক ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই সুশৃঙ্খল ও টেকসই সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব।
পরিশেষে আল্লাহ্ তা’আলার কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদেরকে কথাগুলো বোঝার তাওফিক দান করেন। আমিন
Comment