Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইমামের ডাক এবং একটি হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইমামের ডাক এবং একটি হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যা

    ইমামের ডাক এবং একটি হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যা

    এক হাদিসে এসেছে,

    عن ابن عباس رضي الله عنهما : أن النبي صلى الله عليه و سلم قال يوم الفتح: لا هجرة بعد الفتح ولكن جهاد ونية وإذا استنفرتم فانفروا. –صحيح البخاري: 2670

    ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতহে মক্কার দিন ইরশাদ করেন, (মক্কা) বিজয় হয়ে যাওয়ার পর আর (মক্কা ছেড়ে মদীনায় বা দারুল হরব ছেড়ে দারুল ইসলামে) হিজরতের আবশ্যকীয়তা বাকি নেই (যদি দারুল হরবে দ্বীন পালন করা যায়)। তবে জিহাদ (-এর উদ্দেশ্যে) ও (অন্যান্য) নেক (আমলের) নিয়ত (করে হিজরত) বাকি রয়ে গেছে। অতএব, যখন (জিহাদ বা অন্য কোনো নেক উদ্দেশ্যে) বেরিয়ে পড়তে আহ্বান জানানো হয়, বেরিয়ে পড়ো। -সহীহ বুখারি: ২৬৭০


    হাদিসের তরজমায় ব্র্যাকেটের কথাগুলো ফাতহুল বারিসহ অন্যান্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।


    হাদিসে বলা হয়েছে, وإذا استنفرتم فانفروا – বেড়িয়ে পড়ার আহ্বান আসলে বেড়িয়ে পড়ো।


    হাদিসের বেড়িয়ে পড়াটা শুধু জিহাদের সাথে খাস না, দ্বীনের যেকোনো প্রয়োজনই এখানে অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য অন্যান্য প্রয়োজনটা সুস্পষ্ট না হলেও জিহাদ উদ্দেশ্য হওয়াটা অনেকটা সুস্পষ্ট। অর্থাৎ জিহাদের জন্য বেড়িয়ে পড়ার আহ্বান আসলে বেড়িয়ে পড়ো।


    আহ্বান কার পক্ষ থেকে আসবে সেটাও সুস্পষ্ট করে বলা হয়নি। আহ্বান ইমামেরও হতে পারে, শরীয়তেরও হতে পারে। তাহলে হাদিসের অর্থ হবে,

    ‘ইমামের পক্ষ থেকে জিহাদে বেড়িয়ে পড়ার আহ্বান আসলে বেড়িয়ে পড়ো। তেমনি শরীয়তের পক্ষ থেকে জিহাদের আহ্বান আসলেও বেড়িয়ে পড়ো।’


    এ হিসেবে সরাসরি এ হাদিসটিই দলীল হয়ে যাবে যে, ইমাম না থাকলেও বা ইমাম আহ্বান না করলেও যখন শরীয়তের তাগাদা আসবে জিহাদে বেড়িয়ে পড়তে হবে।


    অবশ্য উলামায়ে কেরাম সাধারণত এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলে থাকেন, যখন ইমামুল মুসলিমিনের আহ্বান আসে জিহাদে বেড়িয়ে পড়ো।


    যদি আমরা মেনে নিই হাদিসে ইমামের আহ্বান উদ্দেশ্য, তাহলে কি হাদিসের উদ্দেশ্য এই যে, ইমামের আহ্বান না আসলে জিহাদ করা যাবে না?

    সুবিধাপন্থীরা এমনটাই বলতে চান। অথচ এটি সম্পূর্ণ গলদ। হাদিসে এতটুকু বলা হয়েছে যে, ইমাম জিহাদের জন্য আহ্বান করলে জিহাদে বেড়িয়ে পড়তে হবে, গড়িমসি করা যাবে না।

    স্বাভাবিক অবস্থায় জিহাদ ফরযে কিফায়া। প্রয়োজন পরিমাণ লোক জিহাদে গেলে বাকিরা না গেলেও হবে। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এ হালতেও যদি মাসলাহাতের বিবেচনায় ইমামুল মুসলিমিন কিছু মানুষকে জিহাদের জন্য নির্ধারণ করে দেন, তাহলে তারা যেন ইমামের আনুগত্য করে জিহাদে বেড়িয়ে পড়ে। যেন বাহানা পেশ না করে যে, জিহাদ ফরযে কিফায়া, আমি না গেলে কি সমস্যা?

    হাদিসে এ কথা কোথায় আছে যে, ইমাম না থাকলে বা না ডাকলে জিহাদে যাওয়া যাবে না বা যেতে হবে না?

    একটি উসূল
    আপনারা হয়তো অনেকে জানেন, কোনো হুকুম কোনো শর্তের সাথে যুক্ত করার অর্থ, শর্ত পাওয়া গেলে হুকুম পাওয়া যাবে।

    শর্ত না পাওয়া গেলে হুকুম পাওয়া যাবে কি’না- সেটা ভিন্ন দলীলে খোঁজতে হবে।

    বিষয়টা আরেকটু সহজে বুঝার চেষ্টা করি। একটা হুকুমের কয়েকটা সবব থাকতে পারে। একটা সবব না পাওয়া গেলে অন্য সববের কারণে হুকুমটি আবশ্যক হতে পারে।

    যেমন ধরুন অজু। অজু ফরয হওয়ার একটা সবব হলো সালাত পড়তে যাওয়া।

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

    يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ [المائدة: 6]

    “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন সালাতের জন্য দাঁড়াবে, তোমাদের চেহারাসমূহ ধুয়ে নিবে ….।” –মায়েদা ৬


    সালাত পড়তে চাইলে অজু না থাকলে অজু করতে হবে আয়াতের নির্দেশ। কিন্তু এর অর্থ কি এই, সালাত ছাড়া অন্য কোথায় অজু লাগবে না? এটা কি আয়াতে আছে?


    আয়াতে শুধু এতটুকু আছে, সালাত পড়তে গেলে অজু লাগবে। সালাত ছাড়া অন্য কাজে অজু লাগবে কি’না সেটা আয়াতে নেই। সেটা ভিন্ন দলীলে খোঁজতে হবে। ভিন্ন দলীল দ্বারা প্রমাণিত: বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করতে অজু লাগবে, কুরআনে কারীম ধরতে গেলে অজু লাগবে।


    অজু ফরয হওয়ার কয়েকটি সবব: সালাত পড়তে যাওয়া, তাওয়াফ করতে যাওয়া, কুরআনে কারীম ধরতে যাওয়া।

    একটা সবব না পাওয়া গেলে অন্য সববে অজু ফরয হতে পারে।


    এমনিভাবে হাদিসে জিহাদ ফরয হওয়ার একটা সবব বলা হয়েছে ইমামের ডাক। ইমামের ডাক জিহাদ ফরয হওয়ার একটা সবব। জিহাদ ফরয হওয়ার আরও সবব আছে। ইমামের ডাক না পাওয়া গেলে সেসব সববের কারণে জিহাদ ফরয হবে।


    হাদিসের এই সুন্দর অর্থটি সফিউর রহমান মোবারকপুরি রহ. (১৪২৭ হি.) তুলে ধরেছেন।

    মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে তিনি বলেন,

    (وإذا استنفرتم فانفروا) أي إذا طلب منكم الأمير الخروج إلى الجهاد فاخرجوا، وفيه دليل على أن الخروج إلى جهاد الكفار يجب إذا طلب الإمام، وليس معناه أنه إذا لم يطلب لا يجب، بل فيه تفاصيل عند الفقهاء. –منة المنعم في شرح صحيح مسلم (3/ 269)

    ‘যখন বেড়িয়ে পড়তে আহ্বান আসে বেড়িয়ে পড়ো’ অর্থাৎ আমীর যখন তোমাদেরকে জিহাদে বের হতে বলেন বেড়িয়ে পড়ো। এ হাদিস দলীল যে, ইমামের আহ্বান আসলে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদে বেরিয়ে পড়া ফরয। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, ইমামের আহ্বান না আসলে ফরয হবে না। বরং ফুকাহায়ে কেরামের নিকট এক্ষেত্রে তাফসিল রয়েছে। -মিন্নাতুল মুনয়িম ৩/২৬৯

    অর্থাৎ হাদিসে এ কথা নেই যে, ইমামের ডাক না আসলে জিহাদ ফরয নয়। বরং এক্ষেত্রে তাফসিল রয়েছে। ফুকাহায়ে কেরাম সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। সে তাফসিল অনুযায়ী কোনো কোনো পরিস্থিতি এমন আসবে যে, ইমাম না থাকলে বা ডাক না আসলেও জিহাদ ফরয।

    এ হচ্ছে হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যা। এ ব্যাপারে আগেও আলোচনা হয়েছে। এখানে শুধু ইবনে কুদামা মাকদিসি রহ. (৬২০ হি.) এর দু’টি উদ্ধৃতি দিচ্ছি। তিনি বলেন,

    ক.
    فان عدم الامام لم يؤخر الجهاد لان مصلحته تفوت بتأخيره.-المغني 9\202

    “যদি ইমাম না থাকে তাহলে এ কারণে জিহাদ পিছিয়ে দেয়া যাবে না। কেননা, পিছিয়ে দেয়ার দ্বারা জিহাদে নিহিত মাসলাহাত ও কল্যাণসমূহ হাতছাড়া হয়ে।” -আলমুগনি ৯/২০২

    খ.
    لا يخرجون إلا بإذن الأمير؛ لأن أمر الحرب موكول إليه، وهو أعلم بكثرة العدو وقلتهم، ومكامن العدو وكيدهم، فينبغي أن يرجع إلى رأيه، لأنه أحوط للمسلمين؛ إلا أن يتعذر استئذانه لمفاجأة عدوهم لهم، فلا يجب استئذانه، لأن المصلحة تتعين في قتالهم والخروج إليه، لتعين الفساد في تركهم. –المغني 9\213

    “আমীরের অনুমতি ছাড়া জিহাদে বের হবে না। কারণ, যুদ্ধের দায়-দায়িত্ব তারই উপর ন্যস্ত। শত্রুর সংখ্যা কম না বেশি এবং শত্রুর গোপন ঘাঁটি ও কৌশল-ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তিনিই ভাল অবগত। তাই তার মতামতই মেনে নেয়া চাই। এটাই মুসলামনদের জন্য অধিক কল্যাণ। তবে শত্রু যদি আকস্মিক আক্রমণ করে বসে, যার ফলে অনুমতি নেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে তখন অনুমতি নেয়া আবশ্যক নয়। কেননা, তখন শত্রুর সাথে কিতাল করা এবং তার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার মাঝেই *সুনিশ্চিত কল্যাণ আর তাদেরকে ছেড়ে রাখার মাঝেই সুনিশ্চিত ক্ষতি।” -আলমুগনি ৯/২১৩

    ***


  • #2
    ইয়া রব্ব! আমাদেরকে সহীহ ইলমের আলোকে দ্বীনের পথে, বিশেষ করে জিাহদের পথে চলার তাওফীক দান করুন।
    মুহতারাম পোস্টকারী ভাইকে ইলমে নাফে‘ দান করুন এবং উম্মাহকে উপকৃত করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      মাশাল্লাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট।
      আল্লাহ আপনার জ্ঞানের পরিধি আরো বাড়িয়ে দিক।

      Comment


      • #4
        যে সকল বিষয় শরিয়তের পক্ষ থেকে ফরজ করে দেওয়া হয়েছে তা ফরজ হওয়া কখনো কারো সিদ্ধান্তের উপর স্থগিত নয় এবং এমন কোন উদাহরণ শরিয়তের কোথাও নেই। বরং এটি ফরজ হবার জন্য শরিয়তেরই আদেশই যথেষ্ট। কারণ সর্বাদা আল্লাহর আদেশ মাকলুকের আদেশের অগ্রগামী থাকে। তবে যেহেতু জিহাদ একটি এমন ইবাদত যেটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পরিবর্তনশীল। এবং এর কৌশল বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পরিবর্তনে আবর্তিত, তখন এর সঠিক এবং উত্তম সমাধান হল ইমামের অধিনে জিহাদ করা। কারণ এটিই হল জিহাদ আদায় করার সর্ব উৎকৃষ্ট এবং যথাযথ পদ্ধতি। কিন্তু যখন ইমাম এতে অবহেলা করে তখন কিন্তু অধিনস্তদের উপর থেকে এই ফরজিয়াত অকার্যকর হয়ে যাবে না। বরং তাদের উপর আবশ্যক হবে এর পরবর্তী স্টেপের সর্ব উৎকৃষ্ট পথ অবলম্বন করা অর্থাৎ তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে হয়ে তাদের একজন আমির নির্ধারণ করে তার অধিনে জিহাদ করা। এভাবে পর পর স্টেপের অনুকরন করতে হবে বিষয়টি এমন হবে- যেমন কোন অঞ্চলের উপর শত্রুরা চড়াও হলে তাদের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায়। তারা যদি এতে অক্ষম হয়ে যায় বা অবহেলা করে তাহলে তার নিকটতম অঞ্চলের মুসলিমদের জন্য জিহাদ আবশ্যক হয়ে যায়। এভাবে তারা যদি অক্ষম হয়ে যায় বা দায়িত্ব পালন না করে তাহলে এর পরবর্তি নিকটতম মুসলিম অধিবাসীদের জন্য তা আবশ্যক হয়ে যায়। এভাবে স্টেপ বাই স্টেপ যেভাবে এর ফরজিয়াত ঘুরতে থাকে। তেমনিভাবে ইমাম জিহাদের দায়িত্ব পালন না করলে তখনো স্টেপ বাই স্টেপ এই দায়িত্বের ফরজিয়াত ঘুরতে থাকবে।

        Comment


        • #5
          مَا شَاءَ اللهُ

          হে আল্লাহ! আপনি ইলম ও জিহাদ ভাইকে সিদ্দিক হিসেবে কবুল করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
          হে আল্লাহ! আপনি ইলম ও জিহাদ ভাইয়ের নেক ছায়াকে উম্মতের উপর দীর্ঘস্থায়ী করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
          মুহতারাম ভাইদের কাছে আমি আমার পূর্ণ হেদায়াতের জন্য দোয়া চাই। দয়া করে আপনাদের দোয়ায় এই নাফরমান আফ্রিদিকে মনে রাখবেন বলে আশা রাখি।
          আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
          হে পরাক্রমশালী শক্তিধর! কৃপণতা আর কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় চাই সর্বক্ষণ।

          Comment


          • #6
            Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
            ইয়া রব্ব! আমাদেরকে সহীহ ইলমের আলোকে দ্বীনের পথে, বিশেষ করে জিাহদের পথে চলার তাওফীক দান করুন।
            মুহতারাম পোস্টকারী ভাইকে ইলমে নাফে‘ দান করুন এবং উম্মাহকে উপকৃত করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামিন ।
            আ-মীন ইয়া রব্বাল আলামিন

            Comment


            • #7
              মাশাল্লাহ ভাই - আপনার প্রতিটি লেখা তাফাক্কুহ এর একেক টা দরজা খুলে দেয়।
              বারাকাল্লাহ
              জিহাদই হলো মুমিন ও মুনাফিকের মাঝে
              পার্থক্যকারী একটি ইবাদাহ

              Comment


              • #8
                মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর আলোচনা সবাইকে আল্লাহ কবুল করুন

                Comment


                • #9
                  মাশাল্লাহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট।

                  Comment


                  • #10
                    মাশাআল্লাহ, অসাধারণ আলোচনা ছিল।

                    Comment


                    • #11
                      আলহামদুলিল্লাহ। উপকৃত হলাম
                      জাযাকাল্লাহ ভাই

                      Comment

                      Working...
                      X