বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
" একাকী বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই তোমরা কখনো একা থেকো না, কখনো দলছুট হয়ে যেও না। শেয়ালকে দেখেছো? সে কিন্তু দলছুট ভেড়াটিকেই নিজের খাদ্য বানায়। শয়তানও সেরকম, যে দু'জন লোক একসাথে থাকে, তাদের তুলনায় সে একাকী ব্যক্তির অধিক কাছাকাছি থাকে। তাই তুমি যেখানেই থাকো, অন্তত একজন লোককে নিজের সঙ্গী বানিয়ে নাও আর খেয়াল রেখো এই ব্যক্তিটি যেন অবশ্যই পরহেজগার হয়।
অনেকগুলো টেস্টটিউবকে একসাথে জুড়ে দিলে দেখবে, একটি ভরে যাবার পর পরেরটিও পানিতে ভরে উঠছে। এভাবে একটি একটি করে একসময় সবগুলো টিউব-ই পানিতে ভরে যাবে। যতক্ষণ না প্রত্যেকটির পানির পরিমাণ সমান হয়ে যায়, ততোক্ষণ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। বন্ধুদের বিষয়টিও এমন। তুমি যদি বাজে লোকের সঙ্গে মেশো, তাহলে তারা তোমার বহু ভালো স্বভাবকে নষ্ট করে দেবে। একটা সময় আসবে যখন তোমার আর তাদের মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে না। ঠিক সেই টিউবগুলোর মত! এক দল বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দেখবে, সবাই একই রকম। যত দিন যাবে, বন্ধুত্ব যত গাঢ় হবে, তাদের প্রত্যেকের আচার-আচরণ আর চরিত্র ততোই একরকম হতে থাকবে। একজন ভালো লোক বেশিদিন একটা মন্দ লোকের সাথে মিশতে পারে না। যদি মন্দ লোকটা তার দেখাদেখি নিজেকে শুধরে নেয়, তাহলেই কেবল সে বন্ধুত্ব টিকে থাকা সম্ভব।
এ জন্যেই পরহেজগারলোকের খোঁজ করো। বন্ধুত্ব বাঁধনের মত: হয় তা শেকল বেঁধে তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে অথবা তোমাকে টেনে নিয়ে যাবে জান্নাতে! বন্ধুরা হয় তোমার জীবনে সমস্যা বাড়াবে কিংবা জীবনের সমস্যা মেটাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।
আর ভালো বন্ধু নির্বাচনের পর আরেকটি কাজে খেয়াল রেখো- নিজের জবানকে কাবুকে আনো। কেননা জাহান্নামের বেশিরভাগ শাস্তির কারণ হলো এই জিহবা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেছেন: "And will people be dragged on their faces into Hell because of anything other than what their tongues have brought forth?"
এরপর কি করবে? সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগাও। সময় নষ্ট করো না। যখনই কোন আড্ডায় বসবে কিংবা লোকের সাথে আলাপচারিতায় যোগ দেবে, চেষ্টা করো তা থেকে ফায়দা নেয়ার। যদি দেখো লোকেরা খাবার-রেস্টুরেন্ট-শপিং এর কথা বলছে, নাটক-গান-সিনেমা নিয়ে পড়ে আছে, বা ফালতু ঠাট্টা-মশকরায় মত্ত, তাদেরকে বলো: "দোস্ত, আমি একটা কাহিনী পড়েছি, সিরিয়াতে কি হয়েছে শুনেছিস" কিংবা বলো,"আফগানেরা কী করেছিলো জানেন কি?" অথবা বলো: "তুমি এই হাদীসটি সম্পর্কে কি মনে করো? আমি একটি আয়াতের তাফসীর পড়েছি, অসাধারণ, তুমি শুনবে?" ইত্যাদি। তাদের সাথে আলোচনায় বসে তাদেরকে উপকৃত করো। তাদেরকে এমন আলোচনায় ব্যস্ত রাখো যা তাদের জন্য ভালো। একসাথে সবাই বসে কুর'আন পড়ো, রাসূলুল্লাহ(সা) এর সীরাত পড়ো, সাহাবীদের জীবনী পাঠ করো। কয়েকজন মিলে কুর'আনের কোন সহজ-সরল তাফসীর পড়ে দেখো - যেমন, তাফসীর আল জালালাইন। সাধারণ কোন ফিক্বহের বইও পড়তে পারো - কীভাবে সালাহ আদায় করে, সুষ্ঠুভাবে ওযুর নিয়ম, সুন্নাতের ফিক্বহ ইত্যাদি। কেউ হয়তো তিরিশ বছর যাবৎ নামাজ-রোজা আদায় করে আসছে, কিন্তু এগুলোর সঠিক নিয়ম জানে না! নফল রোজা কবে রাখতে সে সম্পর্কে কোন ধারণা নাই। তাই অহেতুক কথা না বলে এগুলো কল্যাণকর আলোচনা করো। সহীহ নিয়ত সহকারে ভালো বন্ধুদের সাহচর্যে এসব করে নিজের সময়কে কাজে লাগাও।
নারীদের থেকে দূরে থাকো। আর নারীরাও পুরুষদের থেকে নিজেকে দূরে রাখো। কেননা এটাই হলো তোমাদের বয়সীদের জন্য সব ফিতনার কারণ। তবে সত্যি বলতে, এটা সব বয়সেই ফিতনা তৈরি করতে পারে। তাই যে নারীরা তোমার জন্য অবৈধ, তাদের থেকে দূরে থাকো। তাদের থেকে নিজেকে বিরত রাখা তোমার ওপর দায়িত্ব। এই দুনিয়ার সব নারী তোমার জন্য নিষিদ্ধ। তাদের দিকে তাকানো তোমার জন্য নিষিদ্দ্ব, তাদের সাথে বসা, কথা বলা, চ্যাট করা, একাকী সময় কাটানো - সবকিছুই তোমার জন্য নিষিদ্ধ। অন্তর এগুলো সহ্য করতে পারেনা, কারণ এক একটি নজর যেন শয়তানের এক একটি বিষাক্ত তীর। যে বান্দা নিষিদ্ধ বস্তু থেকে নিজের নজরকে হেফাজত করে, আল্লাহ তা'আলা তাকে অন্তরের মিষ্টতা অনুভব করার তাওফিক দেন। কিন্তু যদি কেউ একবার নিষিদ্ধ বস্তুর দিকে তাকায়, এবং তা দেখতেই থাকে-দেখতেই থাকে, তাহলে সে তার হৃদয়ে এমন এক তীর বিদ্ধ হতে দিলো, যা দিনের পর দিন বিঁধতেই থাকে। এ তো সামান্য তীর নয়, বরং এর গায়ে মিশে আছে মারাত্মক বিষ। ফলে হৃদয় বিষাক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে আস্তে আস্তে অন্তর এতোই দুর্বল হয়ে যায় যে জীবনের বাধা-বিপত্তি-ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট সবকিছু বইবার শক্তি সে হারিয়ে ফেলে। এজন্যই তুমি দেখবে, যে ব্যক্তি নিজের নফসের প্ররোচনায় ভেসে যায়, সে খুবই দুর্বল-মানসিকতার অধিকারী হয়। ঈমানদারের অন্তর তো এমন ইস্পাতদৃঢ়, যাকে কিছুই স্পর্শ করতে পারে না। কেননা তার হৃদয় মজবুত হয়েছে আল্লাহকে ইবাদতের মধ্য দিয়ে, তাই না সে হর্দয় ভয় পায়, আর না কম্পিত হয়। আর গুনাহগারদের অবস্থা দেখো। তাদের ভেতরটা সবসময় যেন অস্থির হয়ে আছে! কেন? কারণ শয়তানের তীর তাদের অন্তরকে মেরে ফেলেছে। তাদের অবস্থা হয়েছে পেটে ঘা-ভর্তি ব্যক্তির মত, যে কিনা ঘায়ের ব্যথায় খেতে পারে না।
তাই আল্লাহর জন্য কাজ করো এবং সবাই একসাথে থাকো। তুমি আল্লাহর জন্য যত বেশি কাজ করবে, ততোই তোমার মন দৃঢ় হবে, তোমার অন্তর ক্রমশ ওপরে উঠতে থাকবে। আর ওপরে উঠতে শুরু করলেই তুমি খুঁজে পাবে তাদের পথ, যারা আল্লাহর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। আমি তোমাদের নাসীহা দেবো দৈনিক কুর'আন পড়ার ব্যাপারে, কারণ কুর'আন হলো হৃদয়-কাননে বর্ষার জল। অন্তরের অমৃতসুধা। কুর'আনের মাঝেই হৃদয়ের প্রাণ নিহিত।
["আত-তারবিয়াহ আল জিহাদিয়াহ ওয়াল বিনা", ৫/৩৫-৩৬]
" একাকী বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই তোমরা কখনো একা থেকো না, কখনো দলছুট হয়ে যেও না। শেয়ালকে দেখেছো? সে কিন্তু দলছুট ভেড়াটিকেই নিজের খাদ্য বানায়। শয়তানও সেরকম, যে দু'জন লোক একসাথে থাকে, তাদের তুলনায় সে একাকী ব্যক্তির অধিক কাছাকাছি থাকে। তাই তুমি যেখানেই থাকো, অন্তত একজন লোককে নিজের সঙ্গী বানিয়ে নাও আর খেয়াল রেখো এই ব্যক্তিটি যেন অবশ্যই পরহেজগার হয়।
অনেকগুলো টেস্টটিউবকে একসাথে জুড়ে দিলে দেখবে, একটি ভরে যাবার পর পরেরটিও পানিতে ভরে উঠছে। এভাবে একটি একটি করে একসময় সবগুলো টিউব-ই পানিতে ভরে যাবে। যতক্ষণ না প্রত্যেকটির পানির পরিমাণ সমান হয়ে যায়, ততোক্ষণ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। বন্ধুদের বিষয়টিও এমন। তুমি যদি বাজে লোকের সঙ্গে মেশো, তাহলে তারা তোমার বহু ভালো স্বভাবকে নষ্ট করে দেবে। একটা সময় আসবে যখন তোমার আর তাদের মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে না। ঠিক সেই টিউবগুলোর মত! এক দল বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দেখবে, সবাই একই রকম। যত দিন যাবে, বন্ধুত্ব যত গাঢ় হবে, তাদের প্রত্যেকের আচার-আচরণ আর চরিত্র ততোই একরকম হতে থাকবে। একজন ভালো লোক বেশিদিন একটা মন্দ লোকের সাথে মিশতে পারে না। যদি মন্দ লোকটা তার দেখাদেখি নিজেকে শুধরে নেয়, তাহলেই কেবল সে বন্ধুত্ব টিকে থাকা সম্ভব।
এ জন্যেই পরহেজগারলোকের খোঁজ করো। বন্ধুত্ব বাঁধনের মত: হয় তা শেকল বেঁধে তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে অথবা তোমাকে টেনে নিয়ে যাবে জান্নাতে! বন্ধুরা হয় তোমার জীবনে সমস্যা বাড়াবে কিংবা জীবনের সমস্যা মেটাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।
আর ভালো বন্ধু নির্বাচনের পর আরেকটি কাজে খেয়াল রেখো- নিজের জবানকে কাবুকে আনো। কেননা জাহান্নামের বেশিরভাগ শাস্তির কারণ হলো এই জিহবা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেছেন: "And will people be dragged on their faces into Hell because of anything other than what their tongues have brought forth?"
এরপর কি করবে? সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগাও। সময় নষ্ট করো না। যখনই কোন আড্ডায় বসবে কিংবা লোকের সাথে আলাপচারিতায় যোগ দেবে, চেষ্টা করো তা থেকে ফায়দা নেয়ার। যদি দেখো লোকেরা খাবার-রেস্টুরেন্ট-শপিং এর কথা বলছে, নাটক-গান-সিনেমা নিয়ে পড়ে আছে, বা ফালতু ঠাট্টা-মশকরায় মত্ত, তাদেরকে বলো: "দোস্ত, আমি একটা কাহিনী পড়েছি, সিরিয়াতে কি হয়েছে শুনেছিস" কিংবা বলো,"আফগানেরা কী করেছিলো জানেন কি?" অথবা বলো: "তুমি এই হাদীসটি সম্পর্কে কি মনে করো? আমি একটি আয়াতের তাফসীর পড়েছি, অসাধারণ, তুমি শুনবে?" ইত্যাদি। তাদের সাথে আলোচনায় বসে তাদেরকে উপকৃত করো। তাদেরকে এমন আলোচনায় ব্যস্ত রাখো যা তাদের জন্য ভালো। একসাথে সবাই বসে কুর'আন পড়ো, রাসূলুল্লাহ(সা) এর সীরাত পড়ো, সাহাবীদের জীবনী পাঠ করো। কয়েকজন মিলে কুর'আনের কোন সহজ-সরল তাফসীর পড়ে দেখো - যেমন, তাফসীর আল জালালাইন। সাধারণ কোন ফিক্বহের বইও পড়তে পারো - কীভাবে সালাহ আদায় করে, সুষ্ঠুভাবে ওযুর নিয়ম, সুন্নাতের ফিক্বহ ইত্যাদি। কেউ হয়তো তিরিশ বছর যাবৎ নামাজ-রোজা আদায় করে আসছে, কিন্তু এগুলোর সঠিক নিয়ম জানে না! নফল রোজা কবে রাখতে সে সম্পর্কে কোন ধারণা নাই। তাই অহেতুক কথা না বলে এগুলো কল্যাণকর আলোচনা করো। সহীহ নিয়ত সহকারে ভালো বন্ধুদের সাহচর্যে এসব করে নিজের সময়কে কাজে লাগাও।
নারীদের থেকে দূরে থাকো। আর নারীরাও পুরুষদের থেকে নিজেকে দূরে রাখো। কেননা এটাই হলো তোমাদের বয়সীদের জন্য সব ফিতনার কারণ। তবে সত্যি বলতে, এটা সব বয়সেই ফিতনা তৈরি করতে পারে। তাই যে নারীরা তোমার জন্য অবৈধ, তাদের থেকে দূরে থাকো। তাদের থেকে নিজেকে বিরত রাখা তোমার ওপর দায়িত্ব। এই দুনিয়ার সব নারী তোমার জন্য নিষিদ্ধ। তাদের দিকে তাকানো তোমার জন্য নিষিদ্দ্ব, তাদের সাথে বসা, কথা বলা, চ্যাট করা, একাকী সময় কাটানো - সবকিছুই তোমার জন্য নিষিদ্ধ। অন্তর এগুলো সহ্য করতে পারেনা, কারণ এক একটি নজর যেন শয়তানের এক একটি বিষাক্ত তীর। যে বান্দা নিষিদ্ধ বস্তু থেকে নিজের নজরকে হেফাজত করে, আল্লাহ তা'আলা তাকে অন্তরের মিষ্টতা অনুভব করার তাওফিক দেন। কিন্তু যদি কেউ একবার নিষিদ্ধ বস্তুর দিকে তাকায়, এবং তা দেখতেই থাকে-দেখতেই থাকে, তাহলে সে তার হৃদয়ে এমন এক তীর বিদ্ধ হতে দিলো, যা দিনের পর দিন বিঁধতেই থাকে। এ তো সামান্য তীর নয়, বরং এর গায়ে মিশে আছে মারাত্মক বিষ। ফলে হৃদয় বিষাক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে আস্তে আস্তে অন্তর এতোই দুর্বল হয়ে যায় যে জীবনের বাধা-বিপত্তি-ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট সবকিছু বইবার শক্তি সে হারিয়ে ফেলে। এজন্যই তুমি দেখবে, যে ব্যক্তি নিজের নফসের প্ররোচনায় ভেসে যায়, সে খুবই দুর্বল-মানসিকতার অধিকারী হয়। ঈমানদারের অন্তর তো এমন ইস্পাতদৃঢ়, যাকে কিছুই স্পর্শ করতে পারে না। কেননা তার হৃদয় মজবুত হয়েছে আল্লাহকে ইবাদতের মধ্য দিয়ে, তাই না সে হর্দয় ভয় পায়, আর না কম্পিত হয়। আর গুনাহগারদের অবস্থা দেখো। তাদের ভেতরটা সবসময় যেন অস্থির হয়ে আছে! কেন? কারণ শয়তানের তীর তাদের অন্তরকে মেরে ফেলেছে। তাদের অবস্থা হয়েছে পেটে ঘা-ভর্তি ব্যক্তির মত, যে কিনা ঘায়ের ব্যথায় খেতে পারে না।
তাই আল্লাহর জন্য কাজ করো এবং সবাই একসাথে থাকো। তুমি আল্লাহর জন্য যত বেশি কাজ করবে, ততোই তোমার মন দৃঢ় হবে, তোমার অন্তর ক্রমশ ওপরে উঠতে থাকবে। আর ওপরে উঠতে শুরু করলেই তুমি খুঁজে পাবে তাদের পথ, যারা আল্লাহর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। আমি তোমাদের নাসীহা দেবো দৈনিক কুর'আন পড়ার ব্যাপারে, কারণ কুর'আন হলো হৃদয়-কাননে বর্ষার জল। অন্তরের অমৃতসুধা। কুর'আনের মাঝেই হৃদয়ের প্রাণ নিহিত।
["আত-তারবিয়াহ আল জিহাদিয়াহ ওয়াল বিনা", ৫/৩৫-৩৬]
Comment